আর ঘন্টাকয়েক বাদেই সুন্দর মন নিয়ে রওনা দিবো সুন্দরবনের উদ্দেশ্যে। মূলত কয়েকজন ওস্তাদ ফটোগ্রাফার যাবেন সুন্দরবনের ছবি তুলতে। তাদেরই একজন মুস্তাফিজ ভাই। মুস্তাফিজ ভাইয়ের কৃপায় আমিও সেই দলের সঙ্গী হয়ে গেলাম আমার ভাঙ্গাচোরা OLYMPUS SP-570UZ নিয়া। সেসব কথা আগেই রচিত হইছে পূর্বতন ব্লগে।
আজকের নতুন এবং চমক খবর হইলো, এই দলে যোগ দিয়েছেন মহামতি মাহবুব লীলেন... অতএব ব্যাপারটা দাঁড়াইলো তিন সচলে হলো মেলা টাইপের...
সুন্দরবনের প্রতি ঝোঁকটা আমার তৈরি হয় ছোটবেলাতেই। আব্বার খুব পুঁথির বাতিক ছিলো (সেই বাতিক কিছুটা আমার মধ্যেও আছে)। তো গাজী কালু চম্পাবতী, ছয়ফুল মূলক বদীউজ্জামান, সোনাভান... এসব বহু পুঁথি ছোটবেলায় শুনতাম। তখনই গাজীপীরকে ভালো লেগে যায়।
বৈরাট রাজ সেকান্দারের বড়পুত্র জুলহাস পাতালপুরে চলে গেলে ভবিষ্যত রাজা কে হবে তাই নিয়ে জটিলতা দেখা দিলো। রাজা রানীর আরো এক পুত্র হলো গাজী নাম। আর একই সময়ে কুড়িয়ে পাওয়া গেলো কালুকে। দুই ভাই বড় হতে লাগলো। রাজা গাজীকে আদেশ দিলেন রাজ্যভার বুঝে নিতে। কিন্তু গাজীর মনে গৌতম বুদ্ধের বৈরাগ্য। তিনি রাজতন্ত্র চান না। বাপে দিলো হত্যাদেশ। অলৌকিক উপায়ে বেঁচে গেলো গাজী। নদীমধ্যে সুঁচ ফেলে খুঁজে দিতে বললো সেকান্দার বাদশা। খোয়াজ খিজিরের সাহায্যে তাও খুঁজে দিলো বালক গাজী। পুত্রের কারিশমায় বাপে লা জবাব। গাজী ভাই কাম শিষ্য কালুকে নিয়ে রাজ্যলোভ ত্যাগ করে বনবাসে গেলো সাধনা করতে। উপস্থিত হইলো সুন্দরবনে। বনের সকল পশু পক্ষী তারে পীর মানলো। পরীরা এক রাতে গাজীর রূপমুগ্ধ হয়ে ব্রাহ্মণ্য নগরের মুকুট রাজার কন্যা চম্পাবতীর খাটে নিয়া শোয়ায়া দেখলো দুইজনরে মানায় ভালো। সেই রাতে তাদের এনগেজমেন্ট হইলো। কিন্তু সকালে উইঠা দেখে সকলি ভ্রম।
কিন্তু গাজীর পীরের মনে তখন প্রেম উথলায়। বিরহে কাতর। কালুরে পাঠাইলো মুকুট রাজের কাছে, কিন্তু কালুরে বন্দী করলো মুকুট রাজ। তা শুইনা গাজী গেলো ক্ষেপে। সুন্দরবনের সকল রয়েল বেঙ্গল টাইগার নিয়ে হানা দিয়ে যুদ্ধ করে জিতে নিলো চম্পাবতীকে। তারপর চম্পাবতীকে বনে গাছরূপে খাড়া করায়ে রেখে পাতালাভিজানে বড় ভাই জুলহাসকে উদ্ধার করে রাজা বানাইলো।
চম্পাবতীরে গাছ বানায়া রাখছিলো। কিন্তু সেইটা কী গাছ তা আমার জানা নাই। সুন্দরী গাছ?
বাংলায় যে বোকা বানানোরে 'ভেড়া বানানো' বলে সেই গল্প আসছে গাজী কালু চম্পাবতী উপাখ্যান থেকে। এখনো সুন্দরবনে গাজী পীরের মাজার আছে। সেখানে গাজী হইলো বাঘের দেবতা। বনের মধ্যে মৌয়ালরা যায় গাজী গাজী ডাক পারতে পারতে।
আমাদের ঐতিহ্যের অংশ গাজীর পট, গাজীর গান... সবই গাজী কালু চম্পাবতী উপাখ্যানকে কেন্দ্র করে। কিন্তু এখন দেখি অনেকেই জানে না গাজী কালু চম্পাবতীর গল্প, সোনাভানের গল্প। তাই ধান ভানতে শীবের গীত হইলেও... গল্পটা বলে ফেললাম চান্স পেয়ে।
যা হোক। সুন্দরবন আমাদের জাতীয় গর্ব। বিশ্বের সর্ববৃতৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট এই সুন্দরবন। ইতোমধ্যে প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য তালিকার বাছাইয়ে স্থান করে নিয়েছে।
রয়েল বেঙ্গল টাইগার দিনে দিনে বিলুপ্ত হলেও, বাঘের জগতে এর কদর আকাশ সমান উঁচু। জরিপমতে এখন সুন্দরবনে বাঘ আছে শ'পাঁচেক। দিনে দিনেই এর পরিমান কমছে। কমছে সুন্দরবনের আয়তনও। এক দেড়শো বছর আগেও সুন্দরবন আয়তনে এখনকার চেয়ে দ্বিগুন ছিলো।
সুন্দরবনের বেশিরভাগটাই বাংলাদেশে, ভারতে আছে কিছু অংশ।
সুন্দরবন শুধু সুন্দর আর প্রাকৃতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণই না। অর্থনৈতিক কারনেও সুন্দরবনের গুরুত্ব অপরিসীম। আর সত্যি বলতে সুন্দরবন আমাদের নিরাপত্তা প্রহরী। অসংখ্য ঝড় জলোচ্ছাস নিজের বুকে পেতে নিয়ে আমাদেরকে রক্ষা করে চলেছে এই সুন্দরবন। কিন্তু আমাদের মতোই কিছু মানুষ নামধারী পশু একে ক্রমাগত উলঙ্গ করে দিচ্ছি, ধর্ষন করে যাচ্ছি, ধ্বংশ করে দিচ্ছি নিজেদের লোভে।
সুন্দরবনে যাচ্ছি। একটু পরেই রওনা হবো। জানি কেউ এসব পাত্তা দিবে না, তবু আবেদনটা জারী রাখি... নিজেদের স্বার্থেই সুন্দরবনকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। রাষ্ট্রের অবশ্য কর্তব্য...
ভালো থাকবেন সকলে...
পোস্টার ডিজাইন: মুস্তাফিজ ভাই
ইংরেজী নাম কৃতজ্ঞতা: সন্ন্যাসীদা
মন্তব্য
ঘুরে আসেন। সময়টা ভালো কাটুক। এসে ছবি দিয়েন।
বোঝাই যাচ্ছে সামনে একগাদা ভালু ভালু ছবি দেখতে পাওয়া যাবে
যান, ঘুরে আসেন। অনেক অনেক ফোটু তুইলেন, পরে সেইগুলা পোস্ট কইরেন।
নজুদা, এমন হইলে না কয় পোস্টার!!, জটিলস্য জটিল। ক্রেডিট দেইখা হাসতে হাসতে জান শেষ হয়ে গেল বস।
সঙ্গীত : কোকিল্কন্ঠা কাউয়া!!
এইটা পইড়া হাস্তে হাস্তে খাবি খাইতে লাগ্লাম বস। আপনে নমস্য
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
সুন্দর মনে সুন্দর বনে
কার জন্য লিখো তুমি জলবিবরণ : আমার পাতার নৌকা ঝড়জলে ভাসে...
____________________________________________________________________
"জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক;
আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো
এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।"
ছবি আর লেখার জন্য মুখিয়ে রইলাম।
সুন্দরবন যাওয়াটা স্বপ্নই থেকে গেলো আমার!
যাক, এক গাদা সবুজ ছবির অপেক্ষায় থাকলাম আমরা!
নজু ভাই, পোস্টার চরম হয়েছে।
গাজী কালু চম্পাবতী নামটি শুনেছিলাম কিন্তু গল্পটি জানতাম না, আপনার কল্যানে জানা হলো। যদিও এলিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড জানতাম আপনি যদি এগুলো লিখে ফেলেন, তবে আমাদের মতো মূর্খরা চরম উপকৃত হবে।
শেষের প্যারাটা পড়ে মনে হলো হক - রহমানের লেখা বাংলাদেশের অর্থনীতি পড়তেছি
ছবির অপেক্ষায় রইলাম
---------------------------------------------------------
রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা
সূর্য নাহি ফেরে শুধু ব্যর্থ হয় তারা
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
সুন্দরবন থেকে তোমার সুন্দর লেখা আর ছবির প্রত্যাশায়।
আমি এ মাসের শেষে সুন্দরবন যেতে পারি।
আগে গেলে বাঘে খায়!!!
ঝিনুক নীরবে সহো, নীরবে সয়ে যাও
ঝিনুক নীরবে সহো, মুখ বুঁজে মুক্তো ফলাও।
তাতাপু'র মতো আমারো শেষের দিকে এসে হক-রহমানের বই পড়ার কথা মনে পড়ে গেল!
..................................................................
ঐ যে হাঁটছি মুদ্রা দোষে নাকটা ঘষে
আড্ডা মানেই সেকেণ্ড হাফে খেলছি সোলো
গুজবো না শার্ট আমার পাড়া স্মার্ট পেরিয়ে
সে রোদ্দুরের স্মরণ সভাও লিখতে হল
সুন্দরবন থেকে লাইভ ব্লগিং হলে আমরা ও আপনাদের সাথে ঘুরে আসতে পারতাম।
হেভি গল্প হইছে!
বেড়ানিও হেভি হবে লিচ্চয়।
আর, মুস্তাফিজ ভাইয়ের পুস্টারও সিরাম- বলা বাহুল্য।
বাঘের বাগে না পইড়া, আর গাছের সাথে প্রেম-পিরিতিতে না ফাঁইস্যা (নজরুল বস, কিচ্ছা যতোই থাউক, ওইগুলার খালি নামই সুন্দরী, আসোলে কিন্তু গাছই, নারী মোটেও লয়! ) ভালায় ভালায় ঘুইরা আসেন। লীলেন ভাইরে একটু দেইখা রাইখেন সত্যি সত্যি। উনি তো আমার টাইপের ভদ্রলুক বস, উনারে জানি বাঘে বেজ্জতি না করে, হ। ছবিদি'দেরকে নিয়া আইসেন অনেক ক'রে। দেখবার মঞ্চায়। এই গরিবের তো আর ওইসব জা'গায় যাওন হৈবো না মানুষ জনমে।
___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
নতুন মন্তব্য করুন