মরিচঝাঁপি: ধর্মের বলি বিচ্ছিন্ন বাঙালির করুণ পরিণতির ইতিহাস

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি
লিখেছেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর (তারিখ: শুক্র, ২৩/০৭/২০১০ - ৪:৩৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১.

খুব গ্লানি নিয়েই বলছি, কিছুদিন আগে পর্যন্ত মরিচঝাঁপির নামটা পর্যন্ত জানতাম না। ধর্মের কারণে দেশভাগ, নির্যাতন, তারপর লাখে লাখে বাঙালির দেশত্যাগ, পশ্চিমবাংলায় উদ্বাস্তু জীবন... এগুলো জানতাম। যারা অবস্থাপন্ন, তারা বাড়ি বদল করেছেন। কিন্তু দেশভাগের বলি হওয়া সিংহভাগই তো নিচু[!]জাতের, তারা আবার মানুষ নাকি[!]? তারা তো নমশূদ্র...

তাই পশ্চিমবঙ্গের পথে ঘাটে, রেল স্টেশনে শুরু হয় তাদের উদ্বাস্তু জীবন। সরকারের কৃপায়। আরো বেশি কৃপা করতে ভারত সরকার তাদের পাঠিয়ে দেন কালাদরিয়া পার করে আন্দামানে আর দণ্ডকারণ্যে। 

এই পর্যন্ত জানা ছিলো। ধরেই নিয়েছিলাম অতঃপর তাহারা সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিলো।

কিন্তু জানা ছিলো না, দণ্ডকারণ্যে প্রায় দুই যুগের অমানবিক অসহনীয় জীবন থেকে বাঙালিরা আবার পশ্চিমবঙ্গে এসেছিলেন, এসেছিলেন নতুন সরকার বামফ্রন্টের আমন্ত্রণে।

আর তারপর মরিচঝাঁপি ট্র্যাজেডি। বাংলাদেশ সংলগ্ন সুন্দরবনের দ্বীপ মরিচঝাঁপিতে উদ্বাস্তুদের তাড়াতে জ্যোতিবসুর সরকারের নির্মম অভিযান। রাতের আঁধারে গোটা দ্বীপে নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, আগুন, হত্যাকাণ্ড... সেই অভিযানে কতজন অসহায় বাঙালির মৃত্যু হয়েছিলো আজো পর্যন্ত কেউ তা জানে না!

এসবের কিছুই জানা ছিলো না। 

জানা হতোও না, যদি মধুময় পাল সম্পাদিত, গাঙচিল প্রকাশিত বই "মরিচঝাঁপি, ছিন্ন দেশ ছিন্ন ইতিহাস" না পড়তাম। 

২.

অন্য বই খুঁজতে গিয়েছিলাম আজীজে। চোখে পড়লো 'মরিচঝাঁপি' নামে এই বইটি। ভাবলাম উপন্যাস। ফ্ল্যাপ পড়ে বুঝলাম উদ্বাস্তু সমস্যা নিয়ে বই। তখনো কিছুই বুঝতে পারিনি। ভারতীয় বইয়ের দাম এখন গায়ের মূল্যের দ্বিগুন। তাই পারতপক্ষে কিনি না। কিন্তু বইটার গেটাপ মেকাপ দেখে খুব ভালো লাগলো। কিনে নিলাম। তারপর অন্য অনেক বইয়ের মতো এটাও জমে থাকলো।

সেদিন কী মনে করে পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে স্তব্ধ হয়ে গেলাম। তারপর গোগ্রাসে গিলতে লাগলাম বইটা। বহুদিন পরে কাজ আর ইন্টারনেট বন্ধ রেখে শুধু বই পড়েই কাটালাম দুটো দিন।

৩.

দুই যুগের উদ্বাস্তু জীবন শেষে এপার বাংলা থেকে যাওয়া সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বাংলাদেশ লাগোয়া সুন্দরবনের মরিচঝাঁপিতে শেষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। নির্বাচনে জেতার জন্য উদ্বাস্তু বান্ধব জ্যোতি বসুর দলই তাদের ডেকে এনেছিলো। কিন্তু ক্ষমতায় গিয়েই তারা ভুলে গেলো প্রতিশ্রুতি। লাখ খানেক উদ্বাস্তুকে ফেরত পাঠালো দণ্ডকারণ্যে। কিন্তু হাজার চল্লিশেক তবু রয়ে গেলো মাটি কামড়ে। বাঘের কামড় খাবে, তবু দণ্ডকারণ্যে ফিরে যাবে না। দুর্গম দ্বীপ মরিচঝাঁপিতে বসতি গাড়লো তারা। সরকারকে সাফ জানিয়ে দিলো, কোনো সাহায্য লাগবে না, শুধু বাধা না দিলেই খুশি। 

নিজেরাই সেখানে গড়ে তুললো জনপদ। রাস্তা তৈরি করলো, নদী থেকে মাছ ধরে খায়, বড় মাছ পেলে পাশের বাজারে বিক্রি করে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চিন্তায় নিজেরাই স্কুল বসালো। স্বপ্ন দেখলো নতুন করে।

কিন্তু জ্যোতি বসুর সইলো না, চালালো নারকীয় তাণ্ডব। বামফ্রন্টের শরীকদলের নেতাই যাকে বর্ণনা করেছেন 'জালিয়ানওয়ালাবাগকেও হার মানানো তাণ্ডব' বলে!

বাঘ নয়, বামফ্রন্ট সরকারই খেলো তাদের। রাতের আঁধারে তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হলো মরিচঝাঁপি থেকে। পাঠিয়ে দেওয়া হলো দণ্ডকারণ্যে আবার। আর সেই রাতের আঁধারে কতো লোক মারা পড়লো তা কেউ জানে না। অভিযোগ আছে বস্তায় করে লাশ নিয়ে যাওয়া হয় টাইগার প্রজেক্টে, বাঘের খাদ্য হিসেবে। আর বাকীগুলো ফেলে দেওযা হয় গভীর সমুদ্রে।

"মরিচঝাঁপি, ছিন্ন দেশ ছিন্ন ইতিহাস" সেই নৃশংসতার প্রামাণ্য দলিল।

৪.

উদ্বাস্তুরা যখন মরিচঝাঁপিতে আশ্রয় নিয়েছিলো, তখন পশ্চিমবঙ্গের বাবুরা অনেকেই জানতেন না এসব খবর। কিন্তু অনেকেই জানতেন, খবর রাখতেন। শঙ্খ ঘোষ একাধিক কবিতা লিখেছেন, সুভাষ মুখোপাধ্যায়ও। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় একাধিকবার সশরীরে গিয়েছেন মরিচঝাঁপিতে, আনন্দবাজারে লিখেছেন তাদের দুর্দশার কথা। অনেক সাংবাদিক, রাজনৈতিক কর্মী, মানবাধিকার কর্মীও ছিলেন উদ্বাস্তুদের পাশে।

কিন্তু জ্যোতি বসু সরকার একাই বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেলেন।

সম্পাদক মধুময় পাল কিছুই করেননি, কিন্তু অসাধারণ কাজটাই করেছেন। ঐ আমলে এবং পরে মরিচঝাঁপি নিয়ে যা যা লেখা প্রকাশ হয়েছিলো, সবগুলো জড়ো করে তুলে দিয়েছেন ৩৫৯ পাতার এই বইতে। যেখানে সরকারী প্রেসনোট, জ্যোতিবসুর ততোধিক সরকারী ভাষণ, পুলিশ কমিশনারের মিথ্যাচার থেকে শুরু করে সব লেখাই অবিকল ঠাঁই পেয়েছে। পাঠককে সত্যটুকু খুঁজে বের করতে বিন্দুমাত্র বেগ পেতে হয় না। 

৫.

৭০ দশকের পরে পশ্চিমবঙ্গ থেকেও মরিচঝাঁপির কথা হারিয়ে যাচ্ছিলো। চলতি দশকে আবার মরিচঝাঁপি চলে আসে সামনে। জ্যোতিবসু সরকারের দীর্ঘ ইতিহাসে প্রথম ম্যাসাকার মরিচঝাঁপি। ১৯৯৯ সালে এশিয়ান স্টাডিজের জর্নালে রস মণ্ডলের লেখা 'Refugee Resettlement in Forest Reserves: West Bengal Policy Reversal and the Marichjhapi Massacre' আর নিরঞ্জন হালদারের 'মরিচঝাঁপি: নৈঃশব্দ্যের অন্তরালে' বইটিই মরিচঝাঁপিকে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে আসে।

আর নজর কাড়ে জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক অমিতাভ ঘোষ যখন ২০০৪ সালে প্রকাশিত উপন্যাস 'The Hungray Tide' এ পটভূমি হিসেবে সুন্দরবন ও মরিচঝাঁপির কথা তুলে ধরেন। 

৬.

ধর্মের বলি হওয়া লাখো বাঙালির কান্নার বই মরিচঝাঁপি, জ্যোতিবসু সরকারের বিশ্বাসঘাতকতা আর নৃশংসতার বই মরিচঝাঁপি, বাঘের মতো মনোবল নিয়ে তবু বেঁচে থাকা বাঙালির বার বার মাথা উঁচিয়ে দাঁড়াবার বই মরিচঝাঁপি, আমাদের খুব অন্তর্গত বেদনা, কান্না আর লজ্জার বই মরিচঝাঁপি।

ধর্মের বিচারে আমরাই তো আমাদের প্রায় দশ বারো লাখ মা ভাই বোন পিতাকে তাড়িয়ে দিয়েছিলাম পাশের দেশে। সেই দেশ যে তাদের জন্য তাসের দেশ হয়ে উঠলো, সে খবর আমরা কতটুকু রেখেছি? তাড়িয়ে দিয়েই কি কর্তব্য শেষ করিনি?

৭.

মরিচঝাঁপি ছিন্ন দেশ, ছিন্ন ইতিহাস

সম্পাদক: মধুময় পাল

প্রথম প্রকাশ: ডিসেম্বর ২০০৯

প্রকাশক: গাঙচিল

মূল্য: ২৭৫ [ভারতীয় মূদ্রা]


মন্তব্য

স্নিগ্ধা এর ছবি

জানতাম না আমিও। জানার পরেও কীই বা বলবো ......

লেখা ভালো লাগলো!

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ধন্যবাদ স্নিগ্ধাদি

বলার কিছু না থাকলেও অন্তত জানার প্রয়োজন আছে। জ্যোতি বসুর ইমেজ তো এদেশে মহামানব পর্যায়ের। তাদের জানার দরকার আছে।
বছর ত্রিশেক পরে এই সত্য উদঘাটনের পথ খুলেছে। সুপ্রীমকোর্টে নাকি নতুন করে বিচার শুরু হচ্ছে। এটারও প্রয়োজন আছে
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

হাসান মোরশেদ এর ছবি

সুনীলের পূর্ব-পশ্চিমের হারিত মন্ডল(নামটা তাইতো?) কে মনে আছে?
মরিচঝাঁপির কথা আছে।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

তাসনীম এর ছবি

হ্যাঁ এই নামটা ঘুরঘুর করছিল কিন্তু মনে পড়ছিল না।

নজরুল ভাই লেখাটার জন্য ধন্যবাদ। সুনীলের লেখার বাইরে মরিচঝাঁপির কোন কিছু জানা ছিল না।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

পূর্ব পশ্চিম পড়েছিলাম সেই ছোটবেলায়। অনেক কিছুই মনে নেই। আবার পড়বো পড়বো করেও সময়াভাবে পড়া হচ্ছে না। ধন্যবাদ মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য। এবার মনে পড়েছে।
তখন মরিচঝাঁপি নামটা আলাদা করে নজরে পড়েনি।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

আয়নামতি [অতিথি] এর ছবি

ইতিহাসের এমন কত শত অধ্যায় জলভরা শব্দে জেগে থাকে, আমাদের ঘুমচোখে লজ্জা দেখবে বলে। লজ্জা কী পাই? পেলেই কি যায় আসে... এই ব্লগটা পড়তে পড়তে যতখানি গ্লানি এসে আঁকড়ে ধরলো...পরবর্তী ব্লগে গিয়েই খসে পড়বে সেসব..ভুলে যাবো এইসব দীর্ঘশ্বাসের কথা...........নজরুলভাই, লজ্জার মাথা খেয়ে বলি, আজই প্রথম জানলাম 'মরিচঝাঁপির' কথা। এমন কি, এ নামটাও আগে কোনোদিন শুনিনি। এভাবে বইটার রিভিউ না দিলে কোনোদিনও জানা সম্ভব ছিলো কিনা জানিনা! পুরোমাত্রায়
আপ্লুত হলাম, লজ্জা পেলাম। আপনার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ধন্যবাদ আয়নামতি
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ইশতিয়াক  এর ছবি

জ্যোতি বাবুর সরকার এদের প্রতি কেন খড়গহস্ত হল এটা বুঝলাম না। এদের অপরাধ কি ছিলো?

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এদের তো ম্যালা অপরাধ ছিলো। তারা নাকি সেখানে স্বতন্ত্র রাজ্য কায়েম করতে চাচ্ছিলো। তাগো পিছনে ছিলো বিদেশী ষড়যন্ত্র। মরিচঝাঁপিতে তারা অস্ত্রের কারখানা বানাচ্ছিলো...
আর কী লাগে?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

দময়ন্তী এর ছবি

এইটা একটা ফাটাফাটি বই৷ এবার বইমেলায় হুড়মুড়িয়ে বিক্রী হয়েছে৷ খুব পরিশ্রম করে তথ্য সংগ্রহ করে বের করা হয়েছে বইটা৷ সবচেয়ে ইন্টরেস্টিং হল, সেইসময়কার বিভিন্ন লোকজনের বক্তব্য, বিধানসভায় জ্যোতি বসুর বক্তব্য ইত্যাদি৷ 'হাংরি টাইড'এর আগেও বিভিন্ন ছোট পত্রিকায় 'মরিচঝাঁপি' মাঝেমাঝে এসেছে৷ তবে নন্দীগ্রামের সময় ও পরে 'মরিচঝাঁপি' আবার সামনে চলে আসে৷

রিভিউ চমত্কার৷

অফ টপিক: আপনি কলকাতায় কবে আসছেন?
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আসলেই এটা একটা ফাটাফাটি বই। শুধু এই বইটা পড়লেই হয়, মরিচঝাঁপি নিয়ে আর কিছুই পড়তে হয় না জানার জন্য। সবকিছু আছে।
এরকম একটা বই সম্পাদনা যে কতোটা খাটনির কাজ, সেটুকু বুঝতেই পারি। মধুময় পালকে সামনে পেলে একটা ব্যাপক ধন্যবাদ দিতাম।

অফটপিক: ভিসা হাতে চলে এসেছে, আগস্টের মাঝামাঝিতে চলে আসবো আশা করছি।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

আমিও জানতাম না মরিদঝাঁপির কথা। এই লেখা পড়ার পরই উইকিতে সার্চ দিলাম। ওখানে মরিচঝাঁপির কথা থাকলেও এই ম্যাসাকার নিয়ে মাত্র একটি বাক্য লেখা আছে। দুঃখজনক যে, হত্যাকান্ড ছিল চরম প্রতারণামুলক আর ঘটিয়েছে নিজের স্বজাতিই।

অনন্ত

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

উইকিতে দেখি আমি যোগ করবো কিছু
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

সবার জানা দরকার। মরিচঝাঁপি নিয়ে লেখার জন্য ধন্যবাদ।
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ধন্যবাদ... আসলেই সবার জানা দরকার
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নীড় সন্ধানী এর ছবি

আশ্চর্য! এত বড় একটা নৃশংসতার কথা আমরা শুনলাম না কেন? বইটা আজিজে আরো আছে? বিস্তারিত পড়ার ইচ্ছে।

সুনীলের উপন্যাসের হারীত মন্ডলের কথা মনে আছে, কিন্তু মরিচঝাঁপির কথা মনে পড়ছে না।

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
এ ভ্রমণ, কেবলই একটা ভ্রমণ- এ ভ্রমণের কোন গন্তব্য নেই,
এ ভ্রমণ মানে কোথাও যাওয়া নয়।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

তাসনীম এর ছবি

গুগল সার্চ করে এই লেখাটা পেলাম, পড়ে দেখতে পারেন।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আজীজে পাবেন, আমি 'বিদিত' থেকে কিনেছিলাম।

মরিচঝাঁপি বিষয়ে জানার জন্য এই বইটা পড়লেই চলে। আর কিছুর প্রয়োজন নাই। আমার ইচ্ছা আছে এই বইটাকে কেন্দ্র করে মরিচঝাঁপি নিয়ে আলাদা করে একটা লেখার।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

দ্রোহী এর ছবি

মরিচঝাঁপির নামই শুনিনি আগে। মন খারাপ

বেশ গোছানো, যত্ন নিয়ে লেখা রিভিউ।


কি মাঝি, ডরাইলা?

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ধন্যবাদ দ্রোহীদা
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

রণদীপম বসু এর ছবি

রিভিউটা খুব ভালো হয়েছে।
বইটা সংগ্রহ করতে হবে।
ধন্যবাদ নজু ভাই।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ধন্যবাদ রণদা...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

রায়হান আবীর এর ছবি

পূর্ব পশ্চিমে পড়েছিলাম- ভুলেও গিয়েছিলাম। ধন্যবাদ এই বইটার খোঁজ দেওয়ার জন্য। পড়তেই হবে...

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

পড়েন আবীর...
অনেক তফাত, তবু এই বইটা পড়ার সময় আমার আরেকটা বইয়ের কথা খুব মনে হচ্ছিলো- 'আমারে কবর দিও হাঁটুভাঙার বাঁকে' [ইংরেজি নামটা মনে নাই]
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

স্নিগ্ধা এর ছবি
মাহবুব লীলেন এর ছবি

বিষয়টা একেবারেই জানা ছিল না আমার

০২

গত কয়েক মাস ধরে আমি ভারত ভাগ বিষয়ক বই পড়ছি
এই বইটাও তা হলে যুক্ত হলো তালিকায়
অন্য কোথাও খুঁজে না পেলে আপনি তো আছেনই

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ঠিকাছে
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

বোহেমিয়ান এর ছবি

কিছুই জানতাম না মন খারাপ

খোঁজ দেবার জন্য ধন্যবাদ
লেখায় চলুক
_________________________________________

_________________________________________
ওরে! কত কথা বলে রে!

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আমাদের জানাশোনাগুলো শেয়ার করার জন্যই তো ব্লগ।
ধন্যবাদ বোহেমিয়ান
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নিবিড় এর ছবি
সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

পড়েন, কিন্তু একটা উপন্যাস আমারে আপনার পড়তে দেওনের কথা, ভুলে গেছেন? ভাইরে, সেটা তো ঢাকায় আর কোনো কপি নাই, আপনিই ভরসা আমার...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

গীতিকবি এর ছবি

ধন্যবাদ লেখাটির জন্য।
ইউটিউবে এই ঘটনার উপর একটি ভিডিও চিত্র পেলাম।
http://www.youtube.com/watch?v=kQfTilDOj-E&feature=related

____________________________
শেখ ফেরদৌস শামস ভাস্কর
"আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি।"

____________________________
শেখ ফেরদৌস শামস ভাস্কর
"আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি।"

গীতিকবি এর ছবি

ধন্যবাদ লেখাটির জন্য।
ইউটিউবে এই ঘটনার উপর একটি ভিডিও চিত্র পেলাম।
http://www.youtube.com/watch?v=kQfTilDOj-E&feature=related

____________________________
শেখ ফেরদৌস শামস ভাস্কর
"আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি।"

____________________________
শেখ ফেরদৌস শামস ভাস্কর
"আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি।"

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ধন্যবাদ গীতিকবি। এই প্রামাণ্যচিত্রটির কথা জানতাম। এটা যে ইউটিউবে পাওয়া যায় তা জানতাম না। অনেক ধন্যবাদ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অনিন্দিতা চৌধুরী এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ মরিচঝাঁপির কথা জানানোর জন্য। পূর্ব-পশ্চিম পড়লেও কেন যেন এটার কথা মনে নেই।
চমৎকার আলোচনা।অনেক ভাল লাগল।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ধন্যবাদ অনিন্দিতা
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

এমনিতেই আমার জানার জ্ঞান সীমিত, সচলায়তনে এসে অনেক কিছু জানাতে পারছি। আজ নজরুল ভাইয়ের এই লেখার মাধ্যমে আরেক ইতিহাস জানলাম। ধন্যবাদ নজরুল ভাই। সচলায়তন এর জন্যই ভাল লাগে।

কামরুজ্জামান স্বাধীন।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ধন্যবাদ স্বাধীন।
আপনি সম্ভবত 'জানতে' লিখতে গিয়ে 'জানাতে' লিখে ফেলেছেন। তাতে বাক্যের অর্থটা একেবারে আপাদমস্তক পাল্টে গেছে।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

তানভীর এর ছবি

লেখাটার জন্য ধন্যবাদ।

মরিচঝাঁপি থেকে তাদের খেদানোর কারণটা ঠিক বুঝতে পারলাম না। জায়গাটা তো মনে হয় বেশ দুর্গম এলাকাই। এখান থেকে তাদের আবার জোর করে আগের জায়গায় পাঠানোর জন্য জ্যোতি বসু সরকারের এত মাথাব্যথার কারণ কী?

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

মোট উদ্বাস্তুর সংখ্যা ১২ লাখ। তারা সবাই-ই মানবেতর জীবন যাপন করতেছিলো। মরিচঝাঁপিতে বসতি গাড়ছিলো ৪০ হাজারের মতো। তারা সুখে আছে এই খবর একবার রটে গেলে বাকী সবাই দলে দলে সুন্দরবনে চলে আসবে। সম্ভবত এরকম একটা ভয় থেকেই এদের উৎখাত করা হয়। বলা বাহুল্য প্রথম কিস্তিতে হাজার চল্লিশেক আসার পরেই আর কাউকে আসতে দেওয়া হয় নাই, লাখখানেক উদ্বাস্তুরে হাওড়া স্টেশন থেকেই ফিরতি ট্রেনে আবার দণ্ডকারণ্যে পাঠানো হইছিলো জোর করে।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

আপনার বাসাতেই তো নেড়েচেড়ে বইটা দেখলাম সেদিন...

মরিচঝাঁপি'র কথা যেটুকু পড়া তা বিক্ষিপ্ত সুনীল গাঙ্গুলী বা অন্যান্য কলকাতার উপন্যাস জাতীয় বইগুলোতে। এতো ডিটেইলসে কিছু ছিলো না সেগুলোয়, অবশ্যি...

সংগ্রহ করতে হবে- বোঝা গেলো।

_________________________________________

সেরিওজা

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আমি বইটা সম্পর্কে যতটুকু লিখেছি, তা খুবই সামান্য। বিস্তারিত লিখতে হলে কয়েক কিস্তি করতে হতো।
আশাকরি এই প্রয়োজনীয় বইটা সবাই পড়বে
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

চমৎকার রিভিউ। বইটা পড়তে ইচ্ছা করছে, যদি আরো একটা/ দুইটা লেখায় আরো বিস্তারিত লিখতেন, খুব ভাল হত।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আগামী মাসে কোলকাতা যাচ্ছি, আরো কিছু তথ্য সংগ্রহ করার ইচ্ছা আছে। বিস্তারিত একটা লেখা অবশ্যই তৈরি করবো
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অমিত এর ছবি

চলুক

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ধন্যবাদ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সিরাত এর ছবি

আহা! পূর্ব-পশ্চিমের কথা মনে করিয়ে দিলেন ভাই।

এদের নিয়ে আমরা আসলে বলতে পারি না আমাদের নিজেদের ট্র্যাজেডিগুলির কারণে হয়তো।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ধন্যবাদ সিরাত
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

দিগন্ত এর ছবি

আমি মরিচঝাঁপি সম্পর্কে ভাঙা-ভাঙা জানি। কিন্তু এবারেই এই বইটা অনেক কিছু একসাথে সামনে এনে দিয়েছে। আসলে নন্দীগ্রামের পরেই এই বস্তু নিয়ে আবার লোকে উঠেপড়ে লেখা শুরু করে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ম্যাসাকারের আগ পর্যন্ত অনেকেই সরব ছিলেন, কিন্তু ১৬ মে ১৯৭৯ এর সেই কালরাত্রির পর পশ্চিমবঙ্গের সব বুদ্ধিজীবী কেন চুপ মেরে গেলেন?
মাদার তেরেসা মরিচঝাঁপির উদ্বাস্তুদের সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েও কেন প্রত্যাহার করলেন?
সেই রাতে মরিচঝাঁপিতে কত লোক মারা গেছিলো, কতোজন ধর্ষিত হয়েছিলো তা হয়তো কোনোদিন জানা যাবে না।
কিন্তু এখন ত্রিশ বছর পরে হলেও এর বিচার জরুরি।
আরো লোকজন উঠেপড়ে লাগুক এই ইস্যু নিয়ে। এটাই কামনা।

সত্যিই এই বইটা অনেক কিছু সামনে এনে দিয়েছে। এই বইটা শুধু মরিচঝাঁপি সম্পর্কে জানার জন্য না, পড়তে হবে কীভাবে একটা সময়কে দুই মলাটে আপাদমস্তক ধারণ করা যায় তা জানতেও।

ধন্যবাদ আপনাকে
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার সেই বিস্তারিত লেখাটা পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।

সুমিমা ইয়াসমিন

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

একটু সময় লাগবে। অনেক কিছুই নতুন করে জানছি
ধন্যবাদ আপনাকে
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

উজানগাঁ এর ছবি

অমিতাভ ঘোষের "ভাটির দেশ" (The Hungray Tide) পড়েছিলাম মাস তিনেক আগে অচিন্ত্যরূপ রায়ের অনুবাদে।অমিতাভ ঘোষ আমার প্রিয় লেখকদের মধ্যে অন্যতম বলেই হয়ত পড়েছিলাম বইটি। সেখানে ১৯৭৯ সালে মরিচঝাঁপির উদ্বাস্ত্ত বিতাড়নের ব্যাপারটা ছিল। কিন্তু এর ভয়াবহতা এরকমটা আশা করিনি।

মধুময় পাল সম্পাদিত এই বইটি পড়ার ইচ্ছা থাকল।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ভাটির দেশ পড়া হয় নাই, পড়ার জন্য উদগ্রীব।
মরিচঝাঁপি নিয়ে ফিকশনে লেখা হইছে, কিন্তু আমার জানামতে এটাই সবচেয়ে তথ্যবহুল বই।
দুর্দান্ত একটা বই... সম্পাদকরে আবারো স্যালুট
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

তুমি আর নেই সে তুমি
শঙ্খ ঘোষ

তুমি বললে মানবতা
আমি বললে পাপ
বন্ধ করে দিয়েছে দেশ
সমস্ত তার ঝাঁপ।
তুমি বললে হিটলারি-ও
জনপ্রেমে ভরা
আমি বললে গজদন্ত
তুমি বললে ছড়া।

তুমি বললে বাঁচার দাবি
আমি বললে ছুতো
হামলে কেন এল সবাই
দিব্যি খেত শুত।
হোক না জীবন শুকনো খরা
বন্ধ্যা বা নিষ্ফলা।
আমি বললে সেপাই দিয়ে
উপড়ে নেবে গলা।

তুমি বললে দণ্ডকে নয়
আপন ভূমিই চাই
আমি বললে ভণ্ড, কেবল
লোখ খেপাবার চাঁই।
চোখের সামলে ধুঁকলে মানুষ
উড়িয়ে দেবে টিয়া
তুমি বললে বিপ্লব, আর
আমি প্রতিক্রিয়া।

****************************
মরিচঝাপিঁর উদ্বাস্তু সমস্যা নিয়ে বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে লেখা শঙ্খ ঘোষের কবিতা "তুমি আর নেই সে তুমি"
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

উল্টোরথ
শঙ্খ ঘোষ

ট্রেনের থেকে ঝাঁপ দিয়েছে ধানশিয়রে
গলার কাছে পাথরাঁধা বস্তামানুষ

মাটির থেকে উঠছিল তার মাতৃভূমি
বুকের নিচে রইল বিধেঁ বৃহস্পতি

ইচ্ছে ছিল তমালছোঁয়া দুঃখ ছিল
কিন্তু হঠাৎ টান দিয়েছে উলটোরথে

এসেছিলাম আমরা সবাই এসেছিলাম
বলতে বলতে ঝাঁপ দিল তাই অন্ধকারে

কামরাজোড়া অন্য সবাই চমকে উঠে
অল্পমুখের কৌতুপলে দেখল শুধু

ছন্দ আছে আসাযাওয়ার ছন্দ আছে
আর তা ছাড়া ধ্বংস তো নয় বরং এ যে

সবার কাছে লাথি খাবার পদ্মবুকে
দেশ নেই যার এইভাবে দেশ খুঁজে বেড়ায়
গলায় পাথর বুকের নিচে বৃহস্পতি।
[১৯৭৮]
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ঠাকুরমার ঝুলি
সুভাষ মুখোপাধ্যায়

এ দুয়োরে যায়: দূর-দূর!
ও দূয়োরে যায়: ছেই-ছেই!
সুয়োরানী লো সুয়োরানী তোর
রাজ্যে দিল হানা
পাথরচাপা কপাল যার সেই
ঘুঁটেকুড়ুনির ছানা
ঘেন্নায় মরি, ছি!
মন্ত্রী বলল, দেখছি
কোটাল বলল, দেখছি
ঢোল ডগরে পড়ে কাঠি
রক্তে হয় রাঙা মাটি
কাড়ে না কেউ রা
ভালোমানুষের ছা
সাতটি চাঁপা সাতটি গাছে
পারুল বোন রইল কাছে
দণ্ডকে যায় ধর্মরাজার
কলের ডুলি
এই গল্পে ভর্তি ক'রে
ঠাকুরমার ঝুল॥
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

হিমু এর ছবি

এই বইটাও নিশ্চয়ই কোনো বইদোকানি ভারবাহী বলদের মতো বয়ে এনে ঢাকায় বিক্রি করেছেন? এই বই তো চোরাচালানের মাল। ওনাকে বিএসএফ দিয়ে পুটকিতে গুলি করে ফেলে রাখা উচিত ছিলো সীমান্তে।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

হিমু এর ছবি

এই বইটার সাথে যে কাসাবের ছোটোভাইকেও স্যুটকেসে ভরে সীমান্ত পার করা হয়নি, তার কী প্রমাণ??



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

গীতিকবি এর ছবি

ধন্যবাদ লেখাটির জন্য।
ইউটিউবে এই ঘটনার উপর একটি ভিডিও চিত্র পেলাম।
http://www.youtube.com/watch?v=kQfTilDOj-E&feature=related

____________________________
শেখ ফেরদৌস শামস ভাস্কর
"আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি।"

____________________________
শেখ ফেরদৌস শামস ভাস্কর
"আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি।"

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

পূর্ব-পশ্চিম পড়েছি বহু আগে। কিছুই মনে নাই।

লেখাটার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

-----------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আমারও কিছুই মনে ছিলো না...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় একাধিকবার সশরীরে গিয়েছেন মরিচঝাঁপিতে, আনন্দবাজারে লিখেছেন তাদের দুর্দশার কথা। অনেক সাংবাদিক, রাজনৈতিক কর্মী, মানবাধিকার কর্মীও ছিলেন উদ্বাস্তুদের পাশে।

আমি জ্যোতি বসুর সাফাই গাইছি না। জ্যোতিবসু এবং তার পার্টি এরকম অপরাধ করে থাকলে তা অবশ্যই নিন্দার এবং ঘৃণার এবং সেই ঘৃণা কোনদিন শেষ হবার নয়। এ নিয়ে আমার কোন বিরোধ নেই। কিন্তু আনন্দবাজার পত্রিকা আর সুনীলের প্রসঙ্গ আসায় মন্তব্যটা করতেই হল।
আনন্দবাজার হচ্ছে একটি হারামজাদা পত্রিকা যে জন্ম থেকে নানাবিধ পাপকাজে সমর্থন যুগিয়ে আসছে আর সুনীল সেই পত্রিকার সাহায্যে আজ মহালেখক।
বর্তমান ঝাড়খন্ড নিয়ে আনন্দবাজার গ্রুপ কী বলে?

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতি আমার কোনো দরদ নাই, সুনীলের প্রতিও নাই। কিন্তু মরিচঝাঁপির কথা সবার আগে তিনিই প্রচার করছেন। নিজে একাধিকবার সেখানে গেছেন। এই সত্য অস্বীকার করাটাও তো কোনো ভালো কাজ হবে না তাই না?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

কুলদা রায় এর ছবি

আমি নমশুদ্র মানুষ। আমি জানি ছিন্নমূল-বেদনা আমাদের জন্মসঙ্গী।

কবি বিনয় মজুমদার আমাদের এলাকার লোক। তার জন্ম বার্মায়। সেখান থেকে প্রাণ হাতে পশ্চিম বঙ্গে চলে এসছিলেন তার পিতামাতা।
পশ্চিম বঙ্গে তিনি যখন প্রবাদ প্রতীম ছাত্র--ইঞ্জিনিয়ার--গণিতবিদ, তখন তিনি কবি হয়ে গেলেন। সুনীল-শক্তিরা তাকে বললেন, তুই বেটা কবি, চাকরী ছেড়ে দে। কবিরা চাকরী করে না।
বিনয় চাকরী ছেড়ে দিলেন। দারিদ্র্য হতাশা বর্ণ বিদ্বেষ তাঁকে ডিপ্রেসড করে দিয়েছিল। সারা জীবনের জন্য আর তিনি স্বাভাবিক হতে পারেন নি।

তিনি পূর্ব পাকিস্তানে একবার পশ্চিমবঙ্গ থেকে পালিয়ে এসেছিলেন। তখনতো পূর্ব পাকিস্তানে তার কেউ নেই। সবাই ঐ পারে। ফলে গোপালগঞ্জ মহকুমা জেলখানায় তাকে যেতে হয়েছিল। পুলিশ তার আত্মীয়-স্বজন বা সন্দেহজনক কিছুই খুঁজে পায় নি। তারা দেখল, এই লোকটি একজন নমশুদ্র--ছিন্নমুল। তাকে জেলখানায় রেখে কী হবে। পাকিস্তানের পুলিশ তাকে ছেড়ে দিয়েছিল।
এই তো নমশুদ্র।
সাতচল্লিশে ভারতে নমশুদ্ররা যায় নি। অধিকাংশই থেকে গিয়েছিল পাকিস্তানে। কী নির্মম নির্যাতন সহ্য করে থেকেছে--মারা গেছে--শেষ মেষ চলে গেছে ভারতে--মরিচঝাঁপির মত এলাকায়। একাত্তরে লবণহ্রদে এই নমশুদ্ররা পশুর চেয়েও অধম জীবন যাপন করেছে। তখন মৃত্যু ছিল নিত্যসঙ্গী। আমার মেঝ মামা কোন দিন সুস্থ হতে পারেন নি।
নমশুদ্রদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে--সবাই। বৃটেন, পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ-- কে করে নি তাদের সঙ্গে অমানবিক ব্যবহার! ধনী বর্ণহিন্দুরা এদেশের গরীব মুসলমানদের শোষণ করেছে--একই সঙ্গে তারা গরীব হিন্দুদেরকেও শোষণ করেছে। তবে এর সঙ্গে শুদ্রদের জন্য হৃদয় বিদারক হল--একই ধর্মের অন্তর্ভক্ত হয়েও শুদ্ররা হয়েছে বর্ণবিদ্বেষের শিকার--আরও শোষিত। এখনও শেষ হয় নি। আছে। এরকম মরিচঝাঁপির ঘটনা রয়েছ অসংখ্য--অপ্রকাশিত।
বাম রাজনীতিক জ্যোতি বসুতো ঐ বর্ণহিন্দুদেরই রক্তবাহিত নেতা। তিনি কমিউনিস্ট হলেও উচ্চ বর্ণের। আর শুদ্ররা নিম্ন বর্ণের--অন্তঃজ। ব্রহ্মার পা থেকে শুদ্রদের সৃষ্টি। সুতরাং পদাঘাত ছাড়া আর কী প্রাপ্য তাদের জন্য।

এ রকম একজন জ্যোতি বসুর অনুসারী পশ্চিম বঙ্গের বাম বিপ্লবী কাম কবি জয়দেব বসু যখন আবিষ্কার করলেন--কুলদা রায় লোকটি শুদ্রমানুষ, তখন তাকে গালি দিলেন কুত্তার বাচ্চা, অশিক্ষিত, মুর্খ এবং সাহিত্যের অনধিকারী, তখন আমি আশ্চর্য হই নি। এই তো স্বাভাবিক। মরিচঝাঁপিই তো আমার গন্তব্য--আর কোথায়!

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

স্তম্ভিত হয়ে গেলাম আপনার কথা পড়ে। এসব জাতপাতের বিচার মনে করি সব দেশে আছে। চামড়ার ভেতরেও মানুষের চামড়া থাকে। রক্তের ভেতরে রক্ত।

বাংলাদেশ নমশুদ্রদের স্বর্গভূমি হতে পারত, হওয়া উচিত। কারণ এখানের আমরা সবাই, সব মানুষ, হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মূলত নমশুদ্র। বাংলাদেশের মানুষের মাঝে তাই বর্ণ-বৈষম্য সম্ভব হওয়া উচিত ছিল না।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

মন খারাপ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

ধন্যবাদ খুব জরুরী তথ্যগুলো জানানোর জন্য। বইটা পড়তেই হবে, একটা ডকু দেখলাম ফেসবুকে, আপনার এই লেখার সূত্রধরেই শেয়ার করা হয়েছে।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ধন্যবাদ মাসকাওয়াথ ভাই
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

বইখাতা এর ছবি

ভাল রিভিউ। পূর্ব-পশ্চিম পড়েছি অনেক আগে। মরিচঝাঁপির কথা কিছুই মনে পড়ছে না। খারাপ লাগছে, নামটা পর্যন্ত জানতাম না। বইটা কিনতে হবে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

হাসি-ঠাট্টার মোড়কের ভেতরে সিরিয়াস নজরুল, তোমাকে তাই তো পছন্দ করি।

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ধন্যবাদ রিটন ভাই
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

রিশাদ ময়ূখ এর ছবি

দরকারি কথা, দরকারি পোস্ট। পড়ব, অবশ্যই পড়ব। মন খারাপ হয়ে যায়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।