আজকেও যেতে যেতে দেরি হয়ে গেলো। মরার কাজ আর শেষ হয় না। ততক্ষণে মেলা জমে গেছে। সচলদেরও অনেকেই জমায়েত। মূল দরজা পর্যন্ত যেতেই দেখা পলাশ রঞ্জন স্যানাল আর মনামীর সঙ্গে। ওপাশে ছিলেন অনিন্দ্য রহমান, পরিচয় হলো। আমার ধারণা ছিলো মনামী বিদেশে থাকে, এখন দেখি লোকাল।
নিবিড় আর সুহান রিজওয়ান আগে থেকেই ছিলো। ছিলো জুয়েরিযাহ মউ [বানান ভুল হইলে আমি দায়ী না]। ব্যাস, মেলায় আর ঢুকতেই পারলাম না। সবাই মিলে বেরিয়ে গেলাম চা খেতে। মেলা থেকে বের হয়ে একটু এগিয়ে রাস্তাটা পার হলেই একটা চায়ের দোকান। কাটাবন মসজিদ সংলগ্ন। সেখানে বসার সুবন্দোবস্ত আছে। আমরা বইমেলার ক্যাফেটরিয়া বানিয়ে ফেলেছি এটাকে। মামাও বেশ আমুদে আছে, আমাদের জন্য খাবার দাবার রেডি করে বসে থাকে।
সিঙ্গারা পুরি খেতে খেতেই অদ্রোহ এলো। প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুল ভাই আমাদের সামনে দিয়ে চলে গেলেন, হাজার ডাকও কানে গেলো না, মিস করলো গরম গরম সিঙ্গারা... আমার কী?
আমরা খেলাম, আড্ডা দিলাম, ছবি তুললাম। ওদিকে মেলা তো শেষ হয় হয় অবস্থা! দৌড় দৌড় দৌড়। প্রকাশক লেখক সরসিজ আলীম এর সঙ্গে দেখা। গত কয়দিন পোস্টে তাঁর তোলা ছবি ব্যবহার করেছি। আজ তিনি জানালেন ক্যামেরা আনেননি, আমি বললাম কোনো চিন্তা নাই, আমি আজকে আপনাকে ছবি তুলে দিচ্ছি।
বলে ক্যামেরা অন করে ছবি তুলতে শুরু করলাম। শামসুর রাহমান মঞ্চে তখন চলছে আলোচনা সভা। তার একটা ছবি তুলে যেই না পুরো মেলার একটা ছবি তুলতে যাবো, অমনি দেখি ব্যাটারির চার্জ শেষ! কাহিনী কী? আমি না সারারাত চার্জ দিলাম? বেখেয়ালে হয়তো চার্জ হয় নাই। মন খারাপ করে বসে থাকলাম।
কিন্তু মনটা ভালো হয়ে গেলো একটা খবর শুনে। অরুণদা জানালেন সচল সংকলন, হিমু, তারেক, মাশীদের বইয়ের কাটতি ভালো। দোকানে যে কটা ছিলো, শেষ। কাল আরো লাগবে। বৃহস্পতিবারে একটা ভীড় হবে জানতাম, বিকিকিনিও হবে, তাও জানতাম। তাই বলে এতোটা আশা করিনি। মনটা সত্যিই ভালো হয়ে গেলো।
মেলায় প্রতিদিনই আলোচনা অনুষ্ঠান হয়, বিকেলের দিকে ঘন্টাখানেক চলে। তারপর গান কবিতা। কিন্তু আজকের আলোচনা অনুষ্ঠানের যেন কোনো শেষ নেই। আলোচনার বিষয় লিটল ম্যাগাজিন। মাত্র তিনজন আলোচক, কিন্তু ঘন্টার পর ঘন্টা উচ্চকণ্ঠে বলেই গেলেন বলেই গেলেন। শব্দতরঙ্গ প্রতিদিনই উচ্চ জোড়ালো হয়। আজ যেন খুব বেশি কানে বাজছিলো। এক পর্যায়ে আয়োজকদের অনুরোধ করে ভল্যুম কমালাম, কিন্তু তবু যেন সহনীয় নয়!
আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি একটা ব্যাপার দেখে, বর্ষার বইমেলায় এখন প্রতিদিনই নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হচ্ছে। আজকেও দুটো বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হলো আমি থাকতে থাকতেই! যাক, এখন থেকে শুধু ফেব্রুয়ারি মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না আমাদের।
এরই মধ্যে মেলায় এসেছে সবজান্তা আর তারেক। সবজান্তা বিদেশ যাচ্ছে, ভোরবেলা ফ্লাইট। শেষবারের মতো মেলায় ঢুঁ দিতে এলো।
আড্ডা আড্ডা আর আড্ডা মারতে মারতে আজকে মেলাটাই ঘোরা হলো না আজকে। ভেবেছিলাম একটা দুটো বই কিনবো, হলো না। টুটুল ভাই আবার ধরলো চা খেতে, গেলাম। সেখানে আবার আড্ডা। সেই আড্ডায় এসে হাজির হলো ওডিন। মেলা ততক্ষণে শেষ, কিন্তু আড্ডা চলতেই থাকলো।
আগামীকাল শুক্রবার। আশা করা যাচ্ছে মেলা আরো জমজমাট হবে। বিক্রিও হবে আরো বেশি। আরো একটা বিশেষ দিক, মেলার ষষ্ঠ দিবসটি রবীন্দ্রনাথের। বিশ্বকবির প্রয়াণ দিবসে মেলার অনুষ্ঠানসূচি পুরোটাই রাবীন্দ্রিক। আছে রবীন্দ্র রচনা থেকে পাঠ, রবীন্দ্র সঙ্গীত এবং আলোচনা।
মেলা যথারীতি চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। সবাইকে আমন্ত্রণ। মেলা চলবে ১০ আগষ্ট পর্যন্ত। এরমধ্যে শুক্রবার আর পাবেন না। যারা অফিসের কাজে এতদিন আসতে পারেননি এবং পরেও আসতে পারবেন না, তাদের জন্য সুবর্ণ সুযোগ... চলে আসুন।
মেলার ছবি দিবো ভেবেছিলাম, কিন্তু তুলতে পারলাম না। আড্ডা আর খাবার দাবারের কয়টা ছবিই নাহয় দিই। [ইশ্, স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি প্রবাসীদের দীর্ঘশ্বাস ]
[বইমেলার আড্ডাবাজ: পলাশ স্যানাল, অনিন্দ্য, মনামী, মউ]
[বইমেলার আড্ডাবাজ: সুহান, অদ্রোহ, নিবিড়]
[চা মামা খালি চা বানায় আর আমরা খাই]
[সিঙ্গারাটা কিন্তু খাইতে দারুণ]
[শুধু কি সিঙ্গারা? ভেজিটেবল রোল, আলুপুরি, আলুরচপ, বেগুনি, পেঁয়াজু... কী নেই?]
[বইমেলায় তোলা একমাত্র ছবি: নিরস আলোচনা অনুষ্ঠান]
[বইমেলায় বইয়ের ছবি না দিলে চলে? তাই এই ছবিটা সরসিজ ভাইয়ের কাছ থেকে ধার নিলাম]
মন্তব্য
বর্ষায় বইমেলার আয়োজন করা হয় ব্যাপারটাই তো অজানা ছিলো ভাই!
ব্যানারে দেখা যাচ্ছে এটা দ্বিতীয় আয়োজন। প্রতি বছরই হয় বা হচ্ছে? বেশ তো!
নাহ্! খাবার-দাবারের ফটুক দেখে মোটেও দীর্ঘশ্বাস ফেলিনি বরং এমন একটা মেলায় উপস্হিত হতে না পারার ব্যর্থতাই বুকে বাজলো ভীষণ! কী আর করা, করেন ভাই ধুমাইয়া মজা করেন। তবে সেসব মজার ঘটনা এরকম মজাদারভাবে পরিবেশন করতে ভুলবেন না যেনো! বাকী দিনগুলোর মেলাড্ডা আনন্দময় হোক। শুভেচ্ছা থাকলো।
অফটপিক: আচ্ছা 'বই উপহার দিবস' হিসেবে কোন তারিখকে বেছে নেয়া হলো
শেষ পর্যন্ত? আমি কিন্তু ইতিমধ্যেই বই উপহার পর্ব সেরে ফেলেছি। তবে আফসোস যারেই দিলাম সে বা তারা খালি শুকনা ধন্যবাদ দিয়ে বই বগলদাবা করে বাড়ি চলে গেলো...আমার জন্য ঘোড়ার ডিমটাও না...কান্দন আর কান্দন...
হ্যাঁ, বর্ষার বইমেলার এটা দ্বিতীয় আয়োজন। আশা করা যাচ্ছে এখন থেকে প্রতিবছর হবে। আপনি নিজে জানলেন, এখন অন্যদেরকে জানান।
আরো ৫ পর্ব পর্যন্ত মজার ঘটনা পাঠকদের সহ্য করতে হবে বলে আগাম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। লেখা চলবে।
বই উপহার দিবস নিয়ে বিস্তারিত চিন্তা চলছে। বইকেন্দ্রিক একটি উৎসব হয়ে ওঠে যাতে, সেই চেষ্টা চলছে। অচিরেই জানাতে পারবো আশা করি। তবে হচ্ছে এটা নিশ্চিত।
আর ইয়ে মানে... বই উপহার পর্ব সেরে ফেললেন? আমার বইটা...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
একটাবার আমাকে সিঙ্গারা খেতে ডাকলেন্না?? নাহয় বই কয়দিন পরেই উপহার দিলেন, কিন্তু সিঙ্গারা তো এখনি খাওয়াতে পার্ত্তেন?
যারা ফোন ধরে না, পরবর্তীতে কলব্যাকও করে না, তাদের সঙ্গে কোনো কথা নাই।
অবশ্য আপনি বিদেশ থেকে যা যা নিয়ে আসছেন, সেগুলো উপহার নিতে আসবো, কোথায় কখন আসতে হবে বলেন।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ধারাবাহিক ভালো চলছে। চলুক।
ধন্যবাদ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
এইসব ভুজুং-ভাজুং দিলে চল্বো? মেলা প্রাঙ্গনে যে একটা বৌদ্ধ মুর্তি আছে সেইটার লগে...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
হা হা হা ... বুদ্ধমূর্তি-- সেটা তো কাপড়ে ঢাকা থাকার কথা।
এটা একটা ভালো কথা বলছেন, নিশ্চয়ই এই ৫টা পর্ব লিখে প্রমাণ করতে পারি নাই যে আমি সত্যিই প্রতিদিন মেলায় যাই?
ফটোগ্রাফার আর ভিডিওগ্রাফার নিয়া যাইতে হবে লগে কইরা। তারা সঠিক এ্যাঙ্গেল থেকে সঠিক সঠিক ছবি তুলবে। তাইলেই না হবে... খাড়ান, মুস্তাফিজ ভাইয়ের হাতে পায়ে ধরে দেখি আমার একটা ছবি তুলে দেয় কী না
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ছবি দিলাম (কোথায় তোলা কমুনা)। লাগলে একটা সার্টিফিকেট দিমু।
...........................
Every Picture Tells a Story
আরে, এইটা কবে তুললেন? দারুণ হইছে তো... এইটা বড় সাইজ মেইল করেন না... বড় করে বান্ধামু...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আর এইসব সিঙ্গাডার ছবি দেওয়ার অর্থ কী? এমন অভিশাপ দিমু। সুচিত্রাসেনরে দিয়ে ১০ বছর সেবা করাইয়াও 'শাপমোচন' করতে পারবেন্না!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
খাড়ান, সিঙ্গারার ছবি আরো বেশি করে দিবো
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
লক্ষণ দেইখা মনে হইতাছে নজরুল ভাই ক্যামেরাঝাইটিস রোগে আক্রান্ত; আগামীবার হয়তো দেখুম ব্যাটারির চার্জ আছে তয় মেমোরী খালি নাই
যাউগ্গা সিঙ্গারার ছবিডা ব্যাপক হইছে আর তার পরের ছবিডা দেইখা জবাব বন হইয়া গ্যাছে! আরও কিছু নতুন ছবি পোষ্ট কইরা জবাব খোলার লিখিত আবেদন জানাইতেছি
তারাপ কোয়াস
ঠিকাছে
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
খাড়ান, আইতাছি দেশে। আইসা সব খামু। সিঙ্গারা, সমুচা, বেগুনী, আলুর চপ, পিয়াজু কিচ্ছু বাদ দিমু না।
খালি আফসুস একটাই বই মেলাটা পামু না।
পাগল মন
পড়লাম। আপনার ছবিগুলা ফকফকা।
গম চুরির টাকা বাঁচিয়ে বর্ষার বইমেলার দশ পর্বের জন্য দশটা পাঁচভুট বরাদ্দ করার প্রতিশ্রুতি দিলাম। আজ নাগাদ অগ্রীম বাবদ পাঁচ পর্বে পাঁচভুট দেবার কথা জানিয়ে গেলাম। প্রাপ্তি স্বীকার করে বাধিত করবেন জনাব।
কি মাঝি, ডরাইলা?
আপ্নেরা তো চইলা গ্যালেন,আমরা অবশ্য আরো বেশ কিছুক্ষণ আড্ডাবাজি করলাম।আর,চা- বিড়ি- সিঙ্গারার জন্য আপ্নেরে ধইন্যাপাতা দিয়া আর ছুট করুমনা ।
অদ্রোহ।
হেহ্, সচলাড্ডা, বইমেলা-- এসব পোস্ট আমি পড়িই না...
হিংসেয় ইচ্ছে করে পোঁটলা- পুঁটলি বেঁধে ঢাকার বাসে উঠে পড়ি!
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
আহা গরম গরম সিঙ্গারা খাইতে মন চায়!
মানি না, মানবো না। মেলার সবচেয়ে নিয়মিত দর্শকের নাম দেয়া হয় নাই এই পর্বে।
আর সিমন ভাইও আসছিলো। সব শেষ হবার পরে।
---- মনজুর এলাহী ----
এইবার দিলাম। আর দেরি করার অপরাধে সিমনের নাম আগামী কয়েক আড্ডা থেকে বাদ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
বইমেলা হোক প্রতিদিন, কেবল বৃষ্টিতে ভিজে নয়; কিংবা বসন্তে উড়ে নয়।
শেখ নজরুল
শেখ নজরুল
প্রতিদিন হলে কী আর মজাটা থাকবে?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আজ অন্য অনুষ্ঠান থাকায় শুক্রবারের মেলা ঘোরা মিস হল...
"ছিলো জুয়েরিযাহ মউ [বানান ভুল হইলে আমি দায়ী না]।" - এইসব কথায় হবেনা নজু ভাই... বানান ভুলের জন্য এক্সট্রা সিঙ্গাড়া- আলুর চপ- পিঁয়াজু পাওনা রইলো...
ভালো লাগে সত্যি বইমেলা জমে উঠতে দেখে...
পোস্টগুলোও বেশ হচ্ছে ভাইয়া...
---------------------------------------------------------------
নির্জলা নৈবেদ্য
-----------------------------------------------------------------------------------------------------
" ছেলেবেলা থেকেই আমি নিজেকে শুধু নষ্ট হতে দিয়েছি, ভেসে যেতে দিয়েছি, উড়িয়ে-পুড়িয়ে দিতে চেয়েছি নিজেকে। দ্বিধা আর শঙ্কা, এই নিয়েই আমি এক বিতিকিচ্ছিরি
আজকে একটা ফটোগ্রাফি এক্সিবিশনও ছিলো, সেখানেও যেতে পারি নাই
নাচের অনুষ্ঠানেও না...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
নজু ভাই, ৭ তারিখে শেষ হওয়ার কথা ছিল না?
বিভিন্ন কারণে যাওয়া হয়নি বলে খুব মন খারাপ হয়েছিল... ভালই হলো, এখন একবার অন্তত ঢুঁ মেরে আসতে পারব...
''চৈত্রী''
নতুন মন্তব্য করুন