আজকে সারাদিন কম্পিউটারের সামনে থেকে ওঠার সুযোগ ছিলো না। মুখ গুঁজে লিখেছি, দম বন্ধ হয়ে গেলে একটু ফেসবুক।
ভেবেছিলাম সন্ধ্যার মধ্যে হাতের কাজ শেষ করেই মেলায় যাবো। কিন্তু হলো না, পারলাম না। আজকে তাই মেলায় যাওয়াই হলো না। :(
তাহলে আজকে কী নিয়ে লিখবো? আমার মনে হয় ভালোই হয়েছে। মেলায় যাই আর আড্ডার কথা লিখি, আজকে বরং মেলাটা নিয়ে কিছু লিখি।
আগামীকাল মেলার শেষদিন। দশদিনব্যাপী মেলা শেষ হচ্ছে বলে। মেলার জন্য প্রথমেই ধন্যবাদ দেওয়া উচিত কনকর্ড এম্পোরিয়াম কর্তৃপক্ষকে। তাঁরা কম টাকায় বইয়ের দোকান দিতে দিচ্ছেন, প্রতি শুক্রবারে মার্কেটের সামনের চত্বরে বইয়ের হাট বসানোর সুযোগ দিচ্ছেন। আর বিশাল ভবনের অন্যদের অসুবিধা করে হলেও দশ দিনব্যাপী বইমেলা করার সুযোগটা দিচ্ছেন।
আমি আশাবাদী মানুষ, মেলাটাকে সফলই বলবো। তো এই সফলতার জন্য কাকে ধন্যবাদ দেওয়া যায়? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া মুশকিল। পোস্টার ব্যানার কিছুতেই লেখা নেই এই মেলার আয়োজক কারা। সফলতা বা ব্যর্থতার দায় কে নেবে? কনকর্ড এম্পোরিয়ামে যেসব বইয়ের দোকান আছে, তারা সবাই মিলেই এই মেলার আয়োজক। মূল দায়িত্বে আছেন নিশাত জাহান রানা। তাঁকে ধন্যবাদ।
এই মেলা শুরু হবার কথা ছিলো আরো দুদিন আগেই। এবং মূল আয়োজক হিসেবে ছিলেন শ্রাবণ প্রকাশনীর রবিন আহসান। মূলত আজীজ থেকে বের হয়ে বইগুলোর জন্য নতুন ঠাঁই খোঁজা, মেলার আয়োজন... এই সবকিছুই হয়েছে মূলত রবিন আহসানের উদ্যোগ আর নেতৃত্বে। একথা অস্বীকার করার কিছু নেই। রবিন আহসান আন্দোলনের মানুষ, বিপ্লবের মানুষ। বাণিজ্যের চেয়ে চেতনার পেছনে বেশি ছোটেন সবসময়। কিন্তু অন্য অনেকের বাণিজ্যে তাতে সমস্যাই হয়। যাহোক, মেলার কয়দিন আগে রবিন আহসানের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ তোলা হয়। এবং আয়োজক কমিটি থেকে রবিন আহসান বেরিয়ে যান। শ্রাবণ প্রকাশনীও সরে যায় মেলা এবং কনকর্ড থেকে।
একসময় মেলা আয়োজন নিয়েই সংশয় দেখা দেয়। কনকর্ড কর্তৃপক্ষও মেলার অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানায়। মেলার জন্য একটা স্পন্সর পাওয়া গিয়েছিলো বেশ ভালো অঙ্কের, রবিন আহসানের সঙ্গে সঙ্গে স্পন্সরও চলে যায় বলে জানা গেছে। যাহোক, তবু এসব ঝামেলা পেরিয়ে দুদিন পরে হলেও মেলা শুরু হয়। ফলে বর্তমান কমিটি মেলা আয়োজনের জন্য সামান্যই সময় পেয়েছেন। প্রচার করার সময় তো পাননি বললেই চলে।
আমি এই মেলায় দর্শক ছাড়া আর কিছু না, ভেতরের কথা জানতেও চাই না। ভেবেছিলাম রবিন ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলবো, কথা বলবো রানা আপার সঙ্গেও। কিন্তু ইচ্ছে করলো না। সাধারণ দর্শকের চোখেই মেলাটা দেখতে চাই।
রবিন ভাই চলে যাওয়ায় প্রকাশকেদর মেধ্যও দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। বেশ কয়েকজন মেলা থেকে নাম প্রত্যাহার করেছেন বলে শুনেছি। কয়েকজন রাজী না থাকলেও শেষ মুহূর্তে মেলায় স্টল দিতে রাজী হয়েছেন অনুরোধে। প্রকাশক লেখক লিটলম্যাগকর্মী অনেকেই মেলায় অনুপস্থিত থেকেছেন শুধু এই কারণেই।
তাড়াহুড়ার ছাপ গোটা মেলাতেই ছিলো। মেলায় বাংলাবাজারের ঐতিহ্যবাহী প্রকাশকরা স্টল দিয়েছেন। স্টল দিয়েছেন আজীজ মার্কেট কেন্দ্রিক প্রকাশকরাও। আবার আছেন যারা শুধুই বিক্রেতা। মেলায় ভারসাম্য থাকতে হবে এমন কথা নেই। কিন্তু বিক্রেতারা যখন ভারতীয় থেকে শুরু করে দেশি বাজারের জনপ্রিয় লেখকদের বই বিক্রি করছে, তার পাশের স্টলে বসে পাঠসূত্র বা ভাষাচিত্রর মতো প্রকাশনীগুলো বড়ই বেমানান। একুশের বইমেলাতেও লিটল ম্যাগের জন্য আলাদা জায়গা বরাদ্দ থাকে, এখানে নেই। নেই লিটলম্যাগ কর্মীদের পদচারণাও। কেন? বর্তমান নেতৃত্ব, ব্যবস্থাপনা, নীতির সঙ্গে অনেকেই একাত্ম না। অনেকেই এড়িয়ে চলছেন বলে জানা গেছে।
এসব দলাদলি আর সঙ্কীর্ণতার উর্ধ্বে উঠতে না পারলে বর্ষার বইমেলার ভবিষ্যত নিয়ে আশাবাদী হওয়া মুশকিল।
সারাদিন কাজ করে মাথা পুরা আউলা। গুছায়ে কিছুই লিখতে পারছি না। তারচেয়ে বাদ দেই। বর্ষার বইমেলা দীর্ঘজীবী হোক, আগামীবছর আরো সুন্দর আয়োজনে আর বড় পরিসরে হোক। এই আশা করি। মার্কেটের প্রচার আগামী এক বছরে হয়ে যাবে। এখনি বেশ রমরমা। ইতোমধ্যে ৩৫টি দোকান হয়ে গেছে বই আর প্রকাশনা সংশ্লিষ্ট। অনেক প্রকাশকই এখন দোকান নিতে চাইলেও পারছেন না, দোকান খালি নাই। কনকর্ড হয়ে উঠুক বইয়ের আর পাঠকের নতুন ঠিকানা।
বর্ষার বইমেলা স্বতন্ত্র চেহারা নিয়ে একটি বইমেলা হয়ে উঠুক, সমৃদ্ধ হোক। সেই কামনা করি। আর সম্ভাবনা নিয়েই কথা বলি।
আজকে না গেলেও খবর পেলাম লোকজন ভালোই হয়েছে। বেচা বিক্রিও ভালোই। আগামীকাল মেলার শেষ দিন। তবে চেষ্টা চলছে সময় বাড়াবার। ডেকোরেটরের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা যদি কম পয়সায় রাজী হয়, তাহলে হয়তো মেলার সময় বাড়বে আরো।
আগামীকাল মেলা উপলক্ষ্যে একটি সুভ্যেনির প্রকাশিত হবে। সেটার অপেক্ষায় থাকলাম। আর একটা ঘোষণা দেওয়া জরুরী। আগামীকাল শামসুর রাহমান মঞ্চে স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। এখনো পর্যন্ত ষাটজন কবি কবিতা পাঠ করবেন বলে জানতে পেরেছি। আগ্রহীরা যোগাযোগ করতে পারেন।
আর ধরে নিচ্ছি আগামীকাল মেলার শেষ। একটা জম্পেশ আড্ডা হবে নাকি?
মন্তব্য
প্রকাশকদের এই দ্বন্দ্বের সুষ্ঠু সুরাহা খুব শীঘ্রই না হলে সামনের বার এই মেলাকে নিয়ে উচ্চকিত হওয়ার মত কিছু থাকবেনা। আর তাতে আমাদের মত আমাদের মত আমপাঠকদেরই ক্ষতি। এরই মধ্যে নিজের দুবারের সফর থেকে মনে হয়েছে,মেলা নিয়ে আশাবাদের এন্তার উপকরণ আছে। অন্তত আমি নিজে যাদেরকে সাক্ষাতে-অসাক্ষাতে মেলার খবর জানান দিয়েছি তারা একবার না একবার ঢুঁ মেরেছেনই। আর সবাই-ই কিছু না কিছু কিনেছেন। মোদ্দা কথা হল, আইডিয়াটাই নতুন, মানুষ লুফে না নেওয়ার কোন কারণই নেই। এখন সব হ্যাপা ঠিকমত মিটলেই হয়।
অদ্রোহ।
তুমি পারো বন্ধু। সব কটি লেখাই পড়লাম এই সিরিজের। দেশে না থেকেও বর্ষার বই মেলার আমেজটা পেলাম এই সিরিজ থেকে। ধন্যবাদ রইল।
----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
নজরুল ভাই, মেলায় না এসেও লেখা দিয়ে দিয়েছেন? আমি তো এই শিরোনামেই মেলার আপডেট আপলোড করলাম কিছুক্ষণ আগে।
একুন কী হুবে?
---- মনজুর এলাহী ----
সেই জন্য আপনাকে বিশেষভাবে পুরস্কৃত করা উচিত।
”একুশের বইমেলাতেও লিটল ম্যাগের জন্য আলাদা জায়গা বরাদ্দ থাকে, এখানে নেই। নেই লিটলম্যাগ কর্মীদের পদচারণাও। কেন? বর্তমান নেতৃত্ব, ব্যবস্থাপনা, নীতির সঙ্গে অনেকেই একাত্ম না।”
আমাদের দেশের বর্তমান নেতৃত্ব ও নীতির সঙ্গে অনেকই একাত্ম নয়, তারা কি দেশ ছেড়ে দিয়েছেন?
ধন্যবাদ উচিত কনকর্ড এম্পোরিয়াম কর্তৃপকে। ধন্যবাদ নিশাত জাহান রানা আপাকে। ধন্যবাদ আপনাকেও।
সুবীর কর
আজকে মেলায় যাননি দেখেই দরকারী কথাগুলো বললেন। এতদিন হুদাই খালি বেশরিয়তি, বেদাতি আড্ডাবাজির আলাপ করতেন! আপনার জন্য মেলায় না যাওয়াই উত্তম কাজ। কাম নাই কাজ নাই খালি আড্ডাবাজি।
দিলাম নবম পাঁচভুট!
এই সিরিজ শেষ হইলে আগামী একবছর আপনের লেখায় টানা একভুট দিতে থাকমু।
কি মাঝি, ডরাইলা?
সবই ঠিক। তবে আড্ডা আগামীকাল হলে ভালয়। আর মেলা একদিন বাড়ানো যায় তো- রমজান তো বেস্পতিবার থেকে...
_________________________________________
সেরিওজা
আগে যাওয়া হয়ে উঠেনি, তাই আপনার ব্লগ পড়েই চলছিল। অনেক ধন্যবাদ প্রতিদিন সময় করে এই আপডেট দিবার জন্য। গতকালই প্রথম যাওয়া হল বর্ষার বই মেলায়। ঘন্টাখানেকের কিছু বেশি সময় ছিলাম – কিছু বই কেনা এবং সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর আলোচনা কিছুটা শোনা হল। পরিসর বেশ ছোট দেখেই হয়ত, পছন্দমত খুব বেশি বই পেলাম না।
কৃতিত্ব সম্ভবত বিরোধী দলের কর্মসূচির, সন্ধ্যা সোয়া ছয়টায় মহাখালী থেকে রওয়ানা দিয়ে ২০ মিনিটেরও কম সময়ে বই মেলায় পৌছেছি। জানিনা কর্মসূচিরই প্রভাব কিনা, লোকজন কম ছিল, বেশ কম।
ভাল লাগল। কিন্তু নজরুল ভাইয়ের মত আশাবাদী হতে পারছি কই। কেন যেন বইয়ের বাজার দিন দিন খারাপ হইয়ে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। আজিজ মার্কেটকে ঘিরে যে বইয়ের বাজার গড়ে উঠেছিল, ধীরে ধীরে দখল হয়ে গেল কাপড়-চোপড়ের দোকানে। বইয়ের বাজারের এই নতুন ঠিকানাকে ঘিরে যতটুকু উৎসাহের কথা ছিল, দেখলাম না। তারপরও ভাল।
আয়োজকের জন্য রইল অভিনন্দন, সাফল্য কামনা এই নতুন বই বাজারের।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
নতুন মন্তব্য করুন