এতবছর ধরে একুশের বইমেলা হয়... সফলভাবেই হয়, কোনোদিন এর জন্য কোনো থিম সঙ লাগে নাই, এবার প্রথমবারের মতো একটা থিম সঙ বানানো হয়েছে, সারাদিন সেটা পুরো মেলা জুড়ে বাজে ত্রাহি স্বরে। একেবারে পুরো মেলা কাঁপিয়ে। গানটা শুনলেই মনে পড়ে বিটিভির ছায়াছন্দ অনুষ্ঠানের টাইটেল গানটার কথা। আর সঙ্গে সঙ্গে মনে হয় মেলা ছেড়ে দৌড়ে পালায়ে বাঁচি। "অমর একুশে গ্রন্থমেলা, লেখক পাঠকের মিলন মেলা, প্রাণের মেলা গ্রন্থমেলা"- এই হলো গান। গানটি লিখেছেন নুরুল ইসলাম মানিক, সুর করেছেন লোকমান হাকিম আর গেয়েছেন বাংলা একাডেমীর উপপরিচালক মুর্শিদ আনোয়ার স্বয়ং!! এই গান না বাজায়ে উপায় আছে? তিনি আবার সন্ধ্যার পর হেঁটে হেঁটে মেলায় ঘুরে ঘুরে বই দেখেন আর গান শোনেন।
বিকেলে মেলায় ঢুকতেই দেখি ভাষ্কর্যর পাশে একটা জটলা। জনৈক লেখক লেখক লেখক ভাব নিয়ে অটোগ্রাফ দিচ্ছেন, লোকজন লাইন ধরে অটোগ্রাফ দিচ্ছে... পাতানো নাটক দেখতে মজাই লাগে। এই পদ্ধতিতে আগে বেশ কজন বেশ সফল হইছে। পদ্ধতিটা খারাপ না। হাঁটতে হাঁটতে এক দোকানে দেখি মেজর জলিলের রচনাসমগ্র। মুক্তিযুদ্ধ আর তার পরের কার্যক্রম নিয়া লোকটার ব্যাপারে আগ্রহ বাড়ছে, কিনবো কী না ভাবতেছিলাম, দোকানদার কমদামে দিয়ে দিলো। কাঁধে ক্যামেরা থাকায় সাংবাদিক মনে করছে। ক্যামেরার ফজিলত। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বইমেলায় কেন দোকান দিছে এটা দেখতেই তাদের দোকানে যাওয়া। দেখি গোটা পাঁচেক বই তাদের আছে। তার মধ্যে "চিত্রনাট্য" বইটা পছন্দ হইলো। ভালো কিছু সিনেমার চিত্রনাট্য আছে বইতে, সঙ্গে চিত্রনাট্য বিষয়ে সত্যজিত রায়ের লেখা। কিনে নিলাম, কাজে লাগবে। হুমায়ুন আজাদ- এর বাক্যতত্ত্ব বইটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশ করছিলো আশির দশকে। এখন এটা আগামী প্রকাশনীর সম্পত্তি। দুইটার মধ্যে দামের তফাত ম্যালা। ঢাবিরটা দুইশ টাকা আর আগামীরটা এক হাজার টাকা। ঢাবিরটার সর্বশেষ কপিটা দোকানে ছিলো, এরপর আর এই জিনিস এই দামে পাওয়া যাবে না। হেলায় এই সুবর্ণ সুযোগ হারানো উচিত না। পকেটে টাকা ছিলো না, এটিএম বুথ পর্যন্ত যাওয়ার রিস্কও নিলাম না, হাসিবের কাছ থেকে ধার করে কিনে ফেললাম। আর তখনই জানলাম আরিফ জেবতিক- এর বইটা জাগৃতিতে পাওয়া যাচ্ছে। ওদিকে গেলে কিনবো ভেবে রেখেছি, পরে দেখি নূপুর সেটা গিফট পাইছে, বাহ্... আরো টাকা বাঁচলো।
রিটন ভাই আর মাযহার ভাইয়ের সঙ্গে দেখা... আড্ডা চলছে, এরই মধ্যে দেখি একজনকে চেনা চেনা লাগে... পরে দেখি মনিকাদি... নাহার মনিকা। শুধু বইমেলার জন্য কানাডা থেকে চলে এসেছেন। তারপর সবাই মিলে বাইরে গিয়ে চা পুরি... আহ্...
বইমেলায় ব্লগারদের আলাদা একটা জগৎ আছে। ব্লগারদের আড্ডা হয়। লিটলম্যাগ চত্বরে এখন আর লিটলম্যাগিরা বসে না, ব্লগারদেরই আড্ডা হয়। নানান ব্লগের নানান মতের লোকজন আড্ডা চলে অফুরান...
সকালে একবার বিশাল এক ব্লগ লিখে পোস্ট করতে যাবো আর তখন ফেসবুকে একজন নক করলো, লেখা কোথায় যেন হাওয়া হয়ে গেলো। হাতে সময় বেশি নাই, তাড়াহুড়া করে আবার লিখতে হলো। সিরিজ চালানোর কথা নিবিড়ের, সে ব্যাটা জ্বর বাঁধিয়ে বসে আছে। আবার মেলায় যাওয়ার প্রস্তুতি নেই, ছবি দেখেন...
এত বছর ধরে বইমেলায় যাই, অন্য প্রকাশের স্টলে কখনো উঁকি মারা হয় নাই। এখানে থাকে হুমায়ুন আহমেদের বই, এখানে যান অন্য পাঠকরা। সারাক্ষণ ভীড় লেগেই থাকে।
বইমেলা ও মানুষ
আমাদের আড্ডা
একটা বই পাঁচশো কপি বিক্রি হইলে সেইটা বিরাট ব্যাপার। সেই জামানায় মোহিত কামালের মোটা মোটা দামী দামী বইগুলো বিক্রি হয় হরদম। দোকানে স্তুপ করে রাখা থাকে, তিনি অটোগ্রাফ দেন... তার বই আমার কোনোদিন পড়া হয় নাই, এবার একটা পড়ে দেখবো ভাবছি।
আরেক জনপ্রিয় লেখক সুমন্ত আসলাম। সেদিন কথা হলো, বললেন এবারে ৯টা আসছে।
আনিসুল হক বিদেশে ডিগ্রি নিতে ব্যস্ত... এবার তার আয়োজন সম্ভবত কম।
মিলন ভাইয়ের উপন্যাসও এবার কম... তিনি নূরজাহান থার্ড পার্ট লিখতেই ব্যস্ত ছিলেন।
বাংলা একাডেমীর জীবনী গ্রন্থ সিরিজের একটা বই "আবুল হাসান" পুরনো বই, দাম মাত্র দশ টাকা। সবজান্তা সেটা কিনবে কী না ভাবছে, তারেক মন্ত্রণা দিলো এটা একটা বাজে বই, কেনার দরকার নাই। সবজান্তা রেখে দিতেই তারেক ছোঁ মেরে বইটা নিয়ে কিনলো। কারণ বইটার একটা কপিই ছিলো অবশিষ্ট। তারপর থেকে বই খুলে খুলে সবজান্তার কানের কাছে পড়ে পড়ে শোনায় বেচারার জান পেরেশান।
ভাগ্যিস বইটা আমি বহু আগেই কিনে রাখছিলাম
শেষবেলার মেলা
প্রতিদিন মেলায় আসা নতুন বইয়ের প্রচ্ছদ এখানে টানানো হয়...
বইমেলায় আঁকিয়েদের রমরমা। একদল ঘোরে তুলি হাতে। গাল হাত কপালে এঁকে দেয়। আর রাতে টেবিলে বসে পোট্রেট আঁকিয়েরা। দশ মিনিটে আপনার খোমা এঁকে দিবে...
মন্তব্য
একুশের বইমেলায় যাই না অনেকদিন, এই নিয়ে চার বছর। হাজার মাইল দূর থেকে আপনাদের লেখা আর ছবির মধ্যে দিয়ে ফেলে আসা বইমেলাকে খুঁজে ফিরি। জানি না কবে, কোন ফেব্রুয়ারিতে আবারো ঐ চত্ত্বরে যাবো।
লেখা আর ছবির জন্য অনেক ধন্যবাদ, নজরুল ভাই।
বি
আপনাকেও ধন্যবাদ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ইয়ে...ভাই, নকটা কি আমি দিছিলাম????
অলস সময়
না
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
হেহেহে নজু ভাই, গান্টা গাইতে হবে এইভাবে...
গ্রো-ন-থো-মে-লা... গ্রো-ন-থো-মে-লা... গ্রো-ন-থো-মে-লা... গ্রো-ন-থো-মে-লা
কালকে বেশ মজা হইসে সব্জান্তা আর তারেকের বই কিনা নিয়া। আর ২ দিন ধইরা ওদের তুমুল মারামারি চলতেসে।
বইমেলা, আড্ডা, চা-পুরি-চপ, মেলা শেষ করে এক সাথে সবাই হইচই করে বাড়ি ফেরা...আহ ! দারুণ লাগে।
গ্রো-ন-থো-মে-লা... গ্রো-ন-থো-মে-লা... গ্রো-ন-থো-মে-লা... গ্রো-ন-থো-মে-লা
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
কালকে মেলায় যাইতে পারি নাই আজকেও যাইতে পারব বলে মনে হয় না
তারেক ভাই বইটা কিনে ফেলার পর সবজান্তা ভাইয়ের কী অবস্থা করছে চিন্তা করে দারুণ হাসি পাচ্ছে
মেলার থিম সংটা আসলেই বিরক্তিকর, একদিন শুনছি তাতেই দারুণ বিরক্ত লাগছে।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
ঐ... আর প্রক্সি দিতারুম না, জলদি আয়
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
সুমন্ত আসলামের মার্কেটিং পলিসি কী সেটা পরিস্কার। কিন্তু মোহিত কামালের মার্কেটিং পলিসি কী ছিলো?
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
সে সফল ভাবে প্রথম আলোর কান্ধে চড়তে পারছে...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
হ!
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
এইটা হালকা ফাঁকিবাজি লেখা হইছে নজুভাই
রাত্রেই "প্রাণের মেলায় ২(খ)" না লিখলে হরতাল ডাকমু
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
কেমনে লেখুম? এই যে তিননম্বর পর্ব লেখলাম, ঘাড়ের পিছনে খাড়ায়া আছে বণিক, কদু, তারেক, কাউয়া... এরপর আর কিছু কইতে হইবো?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
এই পোলাগুলারে আপনি আবার বাসায় ঢুকতে দিছেন!!! বোতল কাইড়া নিয়া বাইর কইরা দেন
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
তারেক আর সবজান্তার মারামারির ছবি কোথায়?
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
ফেসবুকে
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ফেসবুকে
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
নিবিড়ের জন্য শুভ কামনা রইল ।
---------------------------------------------
বইমেলার রোজনামচাটা দারুন হইছে ।
হ... ধন্যবাদ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ইশ কি ধুম আড্ডা দিচ্ছেন আপনারা! বড় লোভ হয় আপনাদের সাথে আড্ডা দিতে! কিন্তু কি করবো? আপনাদের কারুর সাথেই যে জানাশোনা নেই। হায়, কাউকে কখনোই যে চেনা হলো না আমার!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
নজরুল ভাই আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনার লেখা পড়ে ঘরে বসেই মেলার আমেজ পাই। আপনার লেখা পড়লে কখনই মনে হয় না আমি মেলায় যাই নাই। ধন্যবাদ নজরুভ ভাই। চালিয়ে যান,,,,, আমি পড়ে পড়ে মেলার না যেতে পারার অভাবটা মিটাই।
কামরুজ্জামান স্বাধীন।
দুধের সাধ ঘোলের ছবি দেখে মিটাই। আপনার কল্যাণে এতটুকু সম্ভব হয়েছে, ধন্যবাদ। -রু
নতুন মন্তব্য করুন