১৯৮৩ সাল থেকেই এরশাদ বিরোধী আন্দোলন দানা বেঁধে উঠতে থাকে। বিশেষ করে ৮৩ সালের ফেব্রুয়ারি হত্যাকান্ডের পর ছাত্র আন্দোলন তীব্রতর হয়। সারা দেশে ছাত্র জনতা সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
বার বার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়েও এরশাদ শাহী এই আন্দোলন দমাতে পারে না। তখন এরশাদ সরকার নির্বাচনের ছল চাতুরীতে মেতে ওঠে। তারা ভাবে নির্বাচন দিলেই রাজনৈতিক জোটগুলো তা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাবে, আন্দোলন স্থিমিত হয়ে যাবে!
তাই উপজেলা নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হয়। ১৯৮৪ সালে উপজেলা নির্বাচনের ডাক দেয় এরশাদ সরকার।
কিন্তু আওয়ামীলীগ নেতৃত্বে ১৫ দল ও বিএনপি নেতৃত্বে ৭ দল=২২ দল এবং ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ উল্টো কর্মসূচী গ্রহণ করে। তারা নির্বাচন বিরোধী আন্দোলন শুরু করে। তারা ৪ মার্চ পর্যন্ত উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময়সীমা বেঁধে দেয়। ৮ থেকে ২৩ মার্চ উপজেলা নির্বাচন প্রতিরোধ পক্ষ পালন এবং ২৪ মার্চ [এরশাদের ক্ষমতা আরোহণের দিন] 'কালো দিবস' পালনের আহ্বান জানায় সম্মিলিত বিরোধী দল।
এই কর্মসূচী সফল করতে সারাদেশেই মিছিল সমাবেশ চলতে থাকে। নির্বাচনের বিরুদ্ধে ১ মার্চ হরতাল কর্মসূচীর ডাক দেয় বিরোধী দলগুলো। এই কর্মসূচীর অংশ হিসেবে এবং হরতালের সমর্থনে ২৮ ফেব্রুয়ারি একটি শান্তিপূর্ণ মিছিল আয়োজন করে সংগ্রামী ছাত্র পরিষদ।
২৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হয়ে গুলিস্থানের দিকে যাচ্ছিলো। সামনে পেছনে ছিলো পুলিশের ব্যারিকেড। কিন্তু ছাত্ররা সেসব তুচ্ছ করে মিছিল এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো। মিছিলটি যখন ফুলবাড়িয়ার কাছে পৌঁছায়, তখন পেছন থেকে অনুসরণকারী এক ট্রাক পুলিশ মিছিলে ধাওয়া করে এবং হায়েনার মতো ছাত্রদের মিছিলের ওপর পুলিশ বহনকারী ট্রাকটি তুলে দেয়।
সেই মিছিলের নেতৃস্থানীয় ছিলেন তৎকালীন আওয়ামী লীগপন্থী বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা ইব্রাহীম সেলিম ও কাজী দেলোয়ার হোসেন। ট্রাকের চাপায় পিষ্ট হয়ে দুজনেই রাজপথে তৎক্ষনাত শহীদ হন। সেলিম ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইহিতাস শেষ বর্ষের ছাত্র এবং দেলোয়ার রাষ্টবিজ্ঞান তৃতীয় বর্ষের।
স্বৈরাচার এরশাদ ভেবেছিলো মানুষ মেরে আন্দোলন থামানো যাবে। কিন্তু তা হয় না। সেলিম দেলোয়ারের লাশ আন্দোলনে নতুন মাত্র যোগ করে।
এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এবং পূর্ব নির্ধারিত হরতাল কর্মসূচীর সফল বাস্তবায়নে সারাদেশেই আন্দোলন আরো তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। ছাত্র জনতা শ্রমিক কৃষক আন্দোলনের এক কাতারে এসে দাঁড়ায়। পয়লা মার্চে যে হরতাল কর্মসূচী ছিলো, তা সফলভাবে পালিত হয়। এবং এই হরতাল কর্মসূচী পালনের সময় আদমজীতে শ্রমিকদের কর্মসূচিতে নৃশংস আক্রমণ করে কুখ্যাত শ্রমিক গুণ্ডা সায়েদুল হক সাদু। নিহত হন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের প্রাক্তন নেতা ও আদমজীর ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের নেতা তাজুল ইসলাম।
তথ্যসূত্র:
বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস- ড. মোহাম্মদ হান্নান
গণআন্দোলন ১৯৮২-৯০- সম্পাদনা সৈয়দ আবুল মকসুদ
গণআন্দোলনের নয় বছর- অজয় রায়
মন্তব্য
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
- দিগন্ত বাহার
ভিতরে নাড়া খেলাম।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
- আয়নামতি
১. হাতিরপুল বাজারের চৌরাস্তা থেকে সেন্ট্রাল রোডের দিকে যেতে হাতের ডান পাশে সেলিম-দেলোয়ার স্মারক স্তম্ভ ছিল। সেটা কি এখনো আছে? নাকি ভূমিদস্যুরা সেটা ভেঙে মার্কেট তুলে ফেলেছে?
২. বাংলাদেশে সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন ও এতে শহীদদের কথা কবে আমাদের পাঠ্যপুস্তকে ঠাঁই হবে? যারা "বাংলাদেশের ইতিহাস" লেখেন তারাই বা কবে এই অধ্যায়গুলো যথোপযুক্ত গুরুত্ব দিয়ে লিখবেন?
৩. কবে নাগাদ আমাদের গণতান্ত্রিক সরকাররা তাদের অনুষ্ঠান-আয়োজন-বক্তৃতা-কর্মসূচিতে কবে সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন ও এতে শহীদদের অন্তর্ভূক্ত করতে পারবেন?
৪. পতিত সামরিক স্বৈরাচারকে যারা পংক্তিতে তুলে দিল জনগণ কবে তাদেরকেও ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলতে শিখবেন?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
১) জানা নাই, খবর নিতে হবে
২) হবে না মনে হয় কোনোকালে
৩) জোট সরকার ক্ষমতায়
৪) এইটা জরুরী
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
এই গণজোয়ারের উত্তাল ব্রক্ষ্মপূত্রের বিশালতায় শিল্পী-কবি-সাহিত্যিক-সংস্কৃতিসেবীরাও অগ্রণী ভুমিকা নিয়েছিলেন। রচিত হয়েছিলো অনেক অগ্নিঝরা কবিতা। 'একটি মোনাজাতের খসড়া', 'বুক তাঁর বাংলাদেশের হৃদয়', 'কফিন, দোলনচাঁপা ও একটি কোকিল', 'খাকী পোশাকের সাথে কবিতার যুদ্ধ চিরকাল', 'বেশ্যাকে তবু বিশ্বাস করা চলে', 'ফিরে চাই সেই স্টেনগান', 'রাষ্ট্রপতির কাছে খোলা চিঠি' আরো আরো অজস্র। ময়লা জমেছে স্মৃতির পাতায়, ঠিক মনে করতে পারছি না। যারা তেমন ওতপ্রোত সম্পৃক্ততায় রাজপথে নামতে পারেনি, মিছিলে হতে পারেনি উচ্চকণ্ঠ, তাদেরও মনের বিজন কোণে জমেছিল বিশ্ববেহায়ার জন্য নির্জলা ঘৃণার থুথু। সেসব কবিতার সান্দ্র উচ্চারণে শিহরিত হয়েছে তারাও, কামনা করেছে শ্বেত পায়রার বন্ধনমুক্তি, প্রত্যাশা করেছে নতুন সোনালি দিনের।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
সম্ভবত ১৯৮৮, এক বিয়ে বাড়ি থেকে ফেরার পথে খুলনার চালনা বাজারের এক দোকানে বসে চালনা থানার একজন কনস্টেবল জয়দেবের সাথে আমার কয়েকজন বন্ধুর কথাকাটাকাটি এবং প্রায় হাতাহাতি হয়। পরিষ্কার মনে আছে, জয়দেব খুব দম্ভভরে বলছিলো যে সে'ই সেলিম-দেলোয়ারের ঘাতক ট্রাকের ড্রাইভার ছিলো। সে আরও বলছিলো যে আজ তার সাথে পরিবার না থাকলে সে আমাদের সব কয়টারে থানায় নিয়ে যেয়ে 'বাটাম' দিতো। একথার পরে উপস্থিত একজন নৌবাহিনির সাবেক কর্মকর্তা জয়দেবকে তার পরিবারের সামনেই ঘাড়ধাক্কা দিয়ে ওই দোকান থেকে বের করে দেয়।
সেলিম আর দেলোয়ারের আত্মা চিরশান্তিতে থাকুক।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
!!!
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ফাঁকা আওয়াজ দিছিলো কি না তা জানিনা। তবে ব্যাটার দাম্ভিক আচরণ এখনও মনে ভাসে।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
-----------------------
সবুজ পাহাড়ের রাজা
নজরুল, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের ইতিহাস লেখা খুব জরুরী । কত সহজেই বিস্মৃতির ধূলো পড়ে ...
যাকগে, লেখায় পাঁচ তারা ।
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
চেষ্টা অব্যাহত আছে
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
শুনে ভাল লাগল ।
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
শুধু আবছা মনে আছে নব্বইএর দশকের শুরুতে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তাল ছিল, সবকিছু ছিল অস্থির। কিন্তু পেছনের ঘটনাগুলো পরপর জানা নাই। কোথাও উল্লেখ পাই না। এই ঘটনাগুলো লেখার জন্যে ধন্যবাদ। ১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৩ লেখাটা পড়ার পরে আমি এবারের একুশের বইমেলা থেকে গণআন্দোলন ১৯৮২-৯০ বইটা যোগাড় করেছি (দুষ্ট বালিকাকে অনেক ধন্যবাদ)। সামনে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন নিয়ে আরো লিখবেন সেই আশা রাখি।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
নতুন মন্তব্য করুন