অনিঃশেষ ৭১

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি
লিখেছেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর (তারিখ: বুধ, ১৮/০৯/২০১৩ - ১২:৩৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

স্কুলগুলোতে ডিবেট সোসাইটি আছে, কুইজ ক্লাব আছে, সাইন্স ক্লাব আছে, আছে স্কাউট গার্লস গাইডও... তাহলে স্কুলগুলোতে এমন একটা ক্লাব বা প্রতিষ্ঠান কেন থাকবে না, যেখানে স্কুলের শিশুরা মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানবে?
এমন একটা ভাবনা থেকেই শুরু 'অবিনাশী সত্তা'র।
চন্দ্রমা তখন ভিকারুন্নেসা নুন স্কুলের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। তিনি এবং কয়েকজন বন্ধু মিলে ২০০৮ সালে শুরু করেন 'অবিনাশী সত্তা'র কার্যক্রম। উদ্দেশ্য স্কুলের বাচ্চাদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক চেতনার জাগরণ। ২০০৮ সালে ভিকারুন্নেসা স্কুলে এই কার্যক্রম শুরু হয়, ওয়ার্কশপ শুরু হয়।
বলাই বাহুল্য... প্রথম থেকেই এই কার্যকলাপের বিরোধীতা শুরু। পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা থেকে শুরু করে কার্যক্রমে বাঁধা দেওয়া সবই চলছিলো। কিন্তু চন্দ্রমারা হাল ছাড়েননি। আর সহায়ক ছিলেন ভিকারুন্নেসার তৎকালীন প্রিন্সিপাল রোকেয়া আপা। নানাবিধ প্রতিকুলতার মধ্যেও তিনি 'অবিনাশী সত্তা'র সবরকম কার্যক্রমকে সাপোর্ট দিয়ে আসছিলেন।
২০০৮ সাল থেকেই 'অবিনাশী সত্তা' মূলত ওয়ার্কশপ পরিচালনা করে আসছিলো। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় ইত্যাদি কার্যক্রম চলছিলো। ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর... এই দিবসগুলো পালন করা এবং এই অনুষ্ঠানগুলোতে বাচ্চাদের সংযোগ ঘটানোই ছিলো প্রধান উদ্দেশ্য।
দীর্ঘ সংগ্রামের পর ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠানটি ভিকারুন্নেসা স্কুলে একটি ঘর পায়, অফিস রুম হিসেবে। কিন্তু চন্দ্রমারা সেটাকে অফিস না বানিয়ে জাদুঘর বানিয়ে ফেলে। এমন একটা ঘর, যেখানে বাচ্চারা ঢুকলে মুক্তিযুদ্ধের উপর একটা সত্যিকারের ধারণা পাবে, জানতে পারবে। স্থায়ীভাবে ক্লাবটার যাত্রা শুরু হয় ২০১২ সালের ১ জানুয়ারী।
সেবছরই ২৬ মার্চ 'অবিনাশী সত্তা' ভিকারুন্নেসা স্কুলের বাচ্চাদের নিয়ে সারাদিনব্যাপী মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক একটি উৎসব আয়োজন করে। চিত্রাঙ্কন, কুইজ, ডকুমেন্টরি প্রদর্শনীসহ আরো কিছু আয়োজনে প্রায় হাজার খানেক ছাত্রী অংশ নেয়।

এবছর তাঁরা এই উদ্যোগটাকে আরো একটু বড় পরিসরে চিন্তা করেছেন। শুধু নিজেদের স্কুলে আবদ্ধ না রেখে চেতনাটা ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন অন্য স্কুলগুলোতেও। নটরডেম, গভর্মেন্ট ল্যাব, হলিক্রস ইত্যাদি স্কুলগুলোতেও তাঁরা আমন্ত্রণ পাঠিয়েছেন। উদ্দেশ্য, প্রতিটি স্কুলেই এরকম একটা ক্লাব গড়ে উঠুক। যেখানে স্কুলের শিশু কিশোররা মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে পারবে এবং নিয়মিত চর্চায় অংশ নেবে।

আর দুদিন পর, অর্থাৎ ২০ সেপ্টেম্বর ভিকারুন্নেসা নুন স্কুলের বেইলি রোড ক্যাম্পাসে হবে 'অনিঃশেষ ৭১' নামের এই উৎসব। চন্দ্রমাদের ধারণা ছিলো এই উৎসবে ১০০০ এর বেশি ছাত্র অংশ নেবে না। কিন্তু খুব একটা প্রচার প্রচারনা ছাড়াই ইতোমধ্যে এই উৎসবে রেজিস্ট্রেশন করেছেন দুই হাজারের বেশি! অনস্পট রেজিষ্ট্রেশন থাকছে, ফলে এই সংখ্যা অন্তত তিন হাজার হবে, এটুকু ধরেই নেওয়া যায়।

সারাদিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানে বয়সভিত্তিক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, দেয়ালিকা, কুইজ, মুক্তিযুদ্ধের ডকুমেন্টরি দেখা, মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় ইত্যাদি থাকছে।

এই বিপুল আয়োজনে চন্দ্রমার নেতৃত্বে বিশাল একটা দল দিনরাত খেটে চলছে। তাঁদের একটা সিদ্ধান্তকে আমি সম্মান করি, তাঁরা এই আয়োজনের টাইটেল স্পন্সর বিক্রি করতে রাজী হয়নি। ইনডিভিজুয়াল স্পন্সরের মাধ্যমে এই ব্যায়বহুল আয়োজনটার প্রায় পুরোটাই সম্পন্ন করে ফেলেছে!

আমি দু'টো উদাহরণ বলি... এই আয়োজনের যে পোস্টার, সেটা স্পন্সর করেছে সচল নজমুল আলবাবের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান শস্যপর্ব, অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকের হাতে এক বোতল বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের দায়িত্ব নিয়েছেন সচল পরিবারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন।

সবকিছুই হচ্ছে। কিন্তু দু'টো সমস্যা এখনো রয়ে গেছে।
১) সারাদিনব্যাপী এই যজ্ঞে অংশগ্রহনকারী সবাইকে দুপুরে একটা ন্যূনতম খাবার পরিবেশন করার একটা ইচ্ছে ছিলো। কিন্তু এখনো এজন্য কোনো স্পন্সর পাওয়া যায়নি। ৩০০০ বাচ্চাকে দুপুরে অন্তত নীলক্ষেতের তেহারী দিলেও খরচ এক লাখ বিশ হাজার টাকা। এটা এখনো পাওয়া যায়নি।
২) ইচ্ছে ছিলো অংশগ্রহণকারী প্রত্যেককে একটা শুভেচ্ছা উপহার দেওয়া। এবং সেটা অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের বই। কিন্তু ৩০০০০ বই স্পন্সর পাওয়া একটা কঠিন ব্যাপার। তাম্রলিপি প্রকাশনী বলেছে ১০০ বই দেবে, রকমারী দেবে গিফট ভাউচার..., পাঠক সমাবেশ কিছু বই দেবে।

এখানেই আমার অনুরোধ, আমি মনে করছি এটা একটা অসাধারণ উদ্যোগ। এখন আর কর্পোরেট স্পন্সরের কাছে যাওয়ার সময় নেই। আমরা ব্যাক্তি উদ্যোগে যদি তাঁদের এই উদ্যোগের পাশে দাঁড়াতে পারি... আমাদের ছোট ছোট কনট্রিবিউশন মিলে এই উদ্যোগটাকে সফল করতে পারে। ত্রিশজন মানুষ ৫ হাজার করে টাকা কন্ট্রিবিউট করলে বাচ্চাগুলোর মুখে খাবার তুলে দিতে পারতে তারা..

ওদের একটা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আছে, ৭১ অবিনাশী সত্তা, সঞ্চয়ী হিসাব নাম্বার : 002059778 (সোনালী ব্যাঙ্ক ভিকারুননিসা নূন স্কুল শাখা)
পারলে ওদের পাশে একটু দাঁড়ান, এটুকুই অনুরোধ।
আর কোনো প্রকাশনী সংস্থা যদি বই স্পন্সর করতে চান, তাহলে দয়া করে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করুন, ০১৭১৩০৪১৭৬৭ এই নাম্বারে।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

পাশে আছি...
হাসি

------------------------
সুবোধ অবোধ

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

কিভাবে আছেন বা কিভাবে থাকতে চান একটু বলুন

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সুবোধ অবোধ এর ছবি

ফোন দিবোনে আপনারে ওস্তাদ! বিস্তারিত কথা হবে। হাসি

শিশিরকণা এর ছবি

সময় এত কম! বিদেশে বসে কিভাবে সাহায্য করব? আপাতত খোমাখাতায় খবরটা ছড়িয়ে দিচ্ছি। বাচ্চাদের বই দিতে সাহায্য করতে পারলে ভালো লাগত।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

স্যাম এর ছবি

দারুণ। আছি সাথে, আপাতত ৩০ জনের ১ জন হওয়াটাই সহজ মনে হচ্ছে...

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

এক লহমা এর ছবি

চলুক

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

নজু ভাই, সাথে আছি। বিদেশে কিছু ফান্ড-রেইজিং করার যায় কি না সেই চেষ্টা করে দেখবো। কিছুদিন সময় লাগবে। সপ্তাহ দুয়েক হয়তো।

মলয় অধিকারী এর ছবি

এরকম অসাধারণ একটা উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসার দাবী রাখে। অর্থ দিয়ে সাহায্য করতে না পারলেও আত্মিকভাবে পাশে আছি। অসাধারণ অবিনাশী সত্তা!

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

সাথে আছি।

____________________________

ঘুমকুমার এর ছবি

সাথে আছি। হাসি

Ripon Majumder এর ছবি

লেখক পোষ্টে মোবাইল ফোন নম্বর দিয়েছেন। ঐ নাম্বারে বিকাশ একাউন্ট খুলে এ পোষ্টে জানিয়ে দেয়ার জন্য সবিনয়ে অনুরোধ করছি।

শারফিন এর ছবি

৪২ বছর পর এটা নিয়ে বেশী লাফালাফি করে শাহবাগী তৈরী করাই হবে শুধু। কেন বইয়ে ৭১ সম্পর্কে লেখা নেই? আকামের একশেষ। পোলাপানগুলারে বলেন পড়াশুনা করতে। এক্সট্রা কারিকুলারে গরিব লোকজনকে কিভাবে সাহায্য করা যায় তা বের করতে। এইগুলা করলে আমলীগ ছাড়া আর কিছু তৈরী হবে না।

সত্যপীর এর ছবি

৪২ বছর পর এটা নিয়ে বেশী লাফালাফি...

কুত্তার বাচ্চাদের ৪২ বছর পরেও জ্বলে এইটাই আসল কথা।

..................................................................
#Banshibir.

Joltorongo এর ছবি

চলুক

এক লহমা এর ছবি

এটা কী জাতীয় কথা হল, শারফিন জনাব? মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে জাগ্রত রেখে যাওয়ার প্রচেষ্টাকে বলেন লাফালাফি! সেই তালে শাহবাগ-এর লড়াই-টাকেও, মনে লয়, গাল পাড়লেন। আমলীগ বিদ্বেষের আর গরীবের উপকারের ছল করে আসলে কোন গান শোনাতে চাচ্ছেন?

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

areefin  এর ছবি

এইগুলা করলে আমলীগ ছাড়া আর কিছু তৈরী হবে না।
আমলীগ তৈরী না কইরা কি তৈরী করবে দেশ?ফালু,তরকারি,হেফাজত,যেয়াফত না জামাত?
জবাব দিয়েন।

ঘুমকুমার এর ছবি

৪২ বছর কেউ "লাফালাফি" করে নাই দেখেই দেশে তোর মত একটা বোকাচোদা তৈরী হয়েছে। আগামী প্রজন্মে আর যেন কোনও ছাগু কিংবা পাকি জারজ তৈরী না হয় সেজন্যই এরকম ইভেন্টের দরকার আছে।

তানিম এহসান এর ছবি

১) সবাই কি আর লাফায়, কিংবা পারে? চাইরটা ঠ্যাঙ আর একটা ঝুলঝুলা জন্মনিরোধক লালাগ্রন্থি থাকতে হয় তার জন্য। ভাগ্য ভাল মানুষের পা দুইটা।

২) বইয়ে ৭১ সম্পর্কে এত-বেশি লেখা আছে যে কতিপয় আন্ধা ছাড়া সেটা সবাই পড়ার চেষ্টা করে। আর কিছু বন্য-বরাহ আছে যারা বাপের গুয়া দিয়ে বের হয় তিনবার-- একবার বাপের আগে, দ্বিতীয়বার বাপের সাথে আর তৃতীয়বার বাপের উপ্রে দিয়া! বিচি-ছাড়া দেশী কলা যেমন!

৩) হ, আকাম-ই করে পোলাপানগুলা, নিজের পকেটের টাকা দিয়া জন্মভূমি’র সেবা করে। তা, শারফিন মিয়া, আপনে কোন চুল কোথায় কতটা ফেলছেন সেইটা একটু বইলা যান। ল্যাজ দেখায়ে আবার ঘাপটি মারা দেখে শিং এর বাড়ী খুঁজতে হয়-না।

৪) এক্সট্রা কারিকুলারে গরীব লোকজনকে কিভাবে সাহায্য করা যায়? গরীব’রে সাহায্য করা কোন এক্সট্রা কারিকুলার না, যার করার সে ঠিকই করে। এইটা কি আর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল যে সুদের টাকায় রমরমা ব্যবসার টাকা ট্যাক্স ফাকি দিতে যেয়ে ব্যয় করবে? আবার মানুষের চিকিৎসা করার ফাকে দলীয় কর্মী সংগ্রহ করবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে? এক্সট্রা কারিকুলাম এর ভাগ্য খারাপ, তা নাইলে কি আর গরীবের উপরে ইসলাম ব্যাংক হয়া সওয়ার হয়!!!

৪২ বছর পর কেন, ৪২,০০০ বছর পরেও মানুষ শুধুমাত্র ১৯৭১ বলবে-না, সাথে এখন যেমন মুক্তিযুদ্ধ গর্বভরে যোগ করে তেমনি তখনও করে যাবে। এইটার নাম আত্মপরিচয়, যার আছে সে বলে, সবাই বলতে পারে না! আত্মপরিচয় না থাকার যে কষ্ট তার আরেক নাম ঘাপটি!

মুক্তিযুদ্ধ’কে শুধুমাত্র দলীয় পরিচয়ে ফেলে দিতে পারলে আওয়ামী লীগের যতটা লাভ তারচাইতে বেশি লাভ মনে হয় জামাত করে ফেলেছে গত ৪২ বছরে, এইটা একটা বাস্তবতা। আরেকভাবে দেখলে জামাতের এই লেবু কচলে খেতে খেতে দেশের মানুষ হুট করে যেদিন বুঝে নেবে তিতা লাগে সেদিন কিন্তু খবর আছে!

Joltorongo এর ছবি

অফ যা

সত্যপীর এর ছবি

ঘ্যাচাং!

..................................................................
#Banshibir.

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।