হও সামিল

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি
লিখেছেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর (তারিখ: মঙ্গল, ২১/০৪/২০১৫ - ১:২০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


ব্যানার: স্যাম

১.

বুকে শ্বাপদ মুখে তোদের অহিংসা অছিলা
এবার তবে করবি তো আয়
আমার মোকাবিলা

[শপথ, সলিল চৌধুরী]

অনেক আনন্দ আর উচ্ছ্বাস নিয়ে যে মেয়েটি এসেছিলো, কাঁদতে কাঁদতে তাকে ফিরে যেতে হয়েছে।
রঙে আর গানে নতুন বছরকে রাঙাবে বলে যে মেয়েটি এসেছিলো, তাকে ফিরতে হয়েছে অসহনীয় অভিজ্ঞতা নিয়ে।
বাঙালি জাতির প্রাণের উৎসবে সামিল হতে যে মেয়েটি এসেছিলো, তাকেও ফিরতে হয়েছে তিক্ততা নিয়ে।

ফিরতে হয়েছে বাঙালি জাতির সবচেয়ে প্রাণের উৎসব বর্ষবরণ উদযাপন থেকে।
ফিরতে হয়েছে বাংলাদেশের প্রগতিশীল আন্দোলনের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বর থেকে।
ফিরতে হয়েছে কয়েকটা নরপশুর হিংস্রতার শিকার হয়ে।

কিন্তু এমনটা তো হওয়ার কথা ছিলো না! হতে পারে না!

আমাদের প্রাণের উৎসবকে কলঙ্কিত করতে পারে কোন সে শক্তি? রুখতে পারে সাধ্য কার?
পাকিস্তানীরা পারেনি, এরশাদের সামরিক শাসন পারেনি, রমণা বটমূলে জঙ্গী হামলা চালিয়েও পারেনি।
এবং পারবেও না।
তাই... উৎসব চলবে, চলবেই।
যাবতীয় অপশক্তিকে রুখে দিয়ে বাঙালির এই সার্বজনীন উৎসব চলবেই।

সেরকমই একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী ১১ই বৈশাখ ১৪২২, ২৪ এপ্রিল ২০১৫ তারিখ শুক্রবার বিকেল ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি (রাজু ভাস্কর্য পাদদেশে) এই উৎসব হবে। উৎসব করেই প্রতিবাদ হবে। এবার প্রতিবাদ হবে গল্পে গানে কবিতায় উৎসবে। শেকল দিয়েই শেকল তোদের করবো রে বিকল, এই শেকল পরা ছল মোদের এই শেকল পরা ছল...

এই উৎসবের আয়োজকদের আমি কেউ না, সহযাত্রী মাত্র। তবু সবাইকে ডাক দিয়ে যাই, সলিল চৌধুরীর কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে চাই 'হও সামিল'

যুদ্ধাপরাধীর সহমর্মী এবং সাম্প্রদায়িক চেতনাধারী ছাড়া বাকি সবাই আমরা সামিল হতে পারি এই উৎসবে। সামিল হতে পারি ধর্ম বর্ণ লিঙ্গ জাতীয়তা নির্বিশেষে।

টিএসসি প্রাঙ্গন আমাদের তারুণ্যের বর্ণিল ইতিহাসের সাক্ষী, বাঙালি সার্বজনীন উৎসবের উঠোন। সেখানে প্রকাশ্যে নারীদের উপর যৌন আক্রমণ? রেখেঢেকে লজ্জানিবারণের পথ কিন্তু আর নেই এখন। দানবদের জন্য উৎসবের সন্ধ্যা ছেড়ে দেবো না আমরা। নারীকে দেয়ালবন্দি করার, দৃশ্যপট থেকে অদৃশ্য করে দেওয়ার এই প্রাচীন কৌশলের প্রতিবাদ এবার মেয়েরা করবে উৎসব দিয়েই।
সেদিন বৈশাখ কেঁদে ফিরে গেছিলো। তাকে ভালোবেসে বরণ করা হয়নি। এবার তাকে বরণ করব আরেক বৈশাখ উদযাপন করে। ১১ই বৈশাখ (২৪শে এপ্রিল), শুক্রবারে ওই একই জায়গায়, একই রঙে, একই ঢঙে। বাংলার মেয়েরা টিএসসি ছাড়বে না, বর্ষবরণ ছাড়বে না, শাড়ি ছাড়বে না। এবার প্রতিবাদ হবে গল্পে গানে কবিতায় উৎসবে।

সার্বজনীন এ উৎসবে চলে আসুন ধর্ম বর্ণ লিঙ্গ জাতীয়তা নির্বিশেষে সকলে!

উৎসবের ফেসবুক লিঙ্ক

২.
এরকম বিভিন্ন উদ্যোগ গত এক সপ্তাহ ধরেই নেওয়া হয়েছে, হচ্ছে। আলাদা আলাদা সংগঠন উদ্যোগ নিচ্ছে, প্রতিবাদ জানাচ্ছে। হয়তো আরো হবে। কিন্তু এখন সম্ভবত আরো শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলার সময়। সম্মিলিত প্রচেষ্ঠা প্রয়োজন, সংঘবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন।

অসাম্প্রদায়িক চেতনার সংগঠনগুলোর মিলিত একটি প্লাটফর্ম গড়ে তোলা জরুরী। বাঙালি সংস্কৃতির চেতনাসমৃদ্ধ সবগুলো সংগঠন এক হয়ে জোট গড়ে তোলা যেতে পারে। সবগুলো সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি জাতীয় সমন্বয় কমিটি গঠিত হতে পারে। সবগুলো সংগঠনের প্রতিনিধি আলোচনা করে সর্বজন শ্রদ্ধেয় একজনকে নেতৃত্ব দেওয়া যেতে পারে। যেমনটা হয়েছিলো '৭১ এর ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি' গঠনের সময়।

তারপর সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ শুরু হতে পারে। যৌন নিপীড়কদের বিচার ও শাস্তির দাবী তুলতে পারি। সবাই মিলে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি যে আগামী নববর্ষের উৎসবে আর কোনো নারী যৌন হয়রানির শিকার হবেন না। ওরা যদি ১০০ জন আসে, আমরা ১০০০ জন মিলে তাদের প্রতিহত করবো। শুধু পহেলা বৈশাখেই না, যৌন নিপীড়নবিরোধী একটি শক্তিশালী প্লাটফর্ম হয়ে উঠতে পারে এটা। সবার আগে প্রয়োজন সমমনা সবগুলো সংগঠনের একত্র হওয়া।

তাই সবাইকে বলছি... হও সামিল।

[লেখার শিরোনামটি সলিল চৌধুরীর 'শপথ' কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে]


মন্তব্য

নাশতারান এর ছবি

সমন্বিত শক্তি প্রয়োজন আমাদের। এখানে ব্যক্তি, সংগঠনের থেকে বিশ্বাসের একাত্মতা বড়। সব ব্যক্তি, সব সংগঠন, সব প্রচেষ্টা একত্রিত হলেই প্রতিবাদ সার্বজনীন হওয়া সম্ভব।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

সামিল। হাসি

মরুদ্যান এর ছবি

চলুক

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

বাদুর পাগল  এর ছবি

পাকিস্তানীরা পারে নাই, এরশাদের সামরিক শাসন পারে নাই, রমণা বটমূলে জঙ্গী হামলা চালিয়ে পারে নাই ।।

ভালাল্গসে কথাটা ভাইজান ! ^_^

এই শুক্রবার বিকেল আবার টি এস সি রাঙ্গাবে বৈশাখী রঙে !! ^_^

কোপাও মামা...

অতিথি লেখক এর ছবি

এইসব ঘটনা ঘটার পরে সভা সমাবেশ প্রতিনিয়তই হচ্ছে। লাভ হচ্ছে কার? লাভ হচ্ছে ঐ সব বখাটাদের। তারা নিজ নিজ দল থেকে পুরস্কারস্বরূপ ভাল পদ পাচ্ছে। মানিক কে দেখেন নাই? সেই সময়ে তার দল যদি তাকে ধরে সাইজ করতো, পরে বাকি কেউ এত সাহস পেতো না। যারা আসলেই ঐ ঘটনার সাথে জড়িত বা যারা এই সব ঘটনা ঘটায়, তাদেরকেও আপনি পরোক্ষভাবে আহবান করলেন এই সমাবেশে যোগ দিতে। কারন তারাও ''যুদ্ধাপরাধীর সহমর্মী এবং সাম্প্রদায়িক চেতনাধারী'' এর বিপক্ষে। তারা কারা এটা আমি আপনি সবাই জানি। এই সব বিষয় নিয়ে রাজনীতি করা হয় বলেই এরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়, আর আমরা সভা সমাবেশের ভিতরেই থাকি।

আমি নিজে সাক্ষী এই রকম একটা ঘটনার। ১৯৯৩ এর বইমেলা, সম্ভবত ২১শে ফেব্রুয়ারীর দিনে। । সেটাই ছিল শেষ বইমেলা, যখন টিএসসি হতে শুরু করে দোয়েল চত্বর এর ঐ রাস্তাতে খাবার স্টল, গানের স্টল বসতো। আমাদের খাবারের স্টল ছিল। ২১শে ফেব্রুয়ারীতে ঐ রাস্তাতেই সবার সামনেই কয়েকজন ছেলে মিলে ২টা মেয়ের শাড়ী টান দিয়ে প্রায় খুলে ফেলার উপক্রম, বুকে হাত দিয়ে ছেলেগুলো দিলো দৌড়। আমাদের স্টলের কাছেই ঘটেছিল, আমাদের স্টলের আমরা ৩ জন দৌড় দিয়ে ধরে ফেললাম ছেলেগুলোকে, মুহূর্তেই দেখলাম কোথা হতে দল বেঁধে ২০/২৫ জন ছেলে চলে এসেছে আমাদের মারার জন্য। অনেক স্টল ছিলো ছাত্র নেতাদের, তারা এসে আমরা সবাই মিলে ঐ ছেলেগুলোদের যে কয়টাকে পারলাম, ভালোই সাইজ করেছিলাম। তাদের মূল হোতাকে পরে হাসপাতালে নিতে হয়েছিল। আমরা ঐদিন ঐ রকম সাইজ না করলে ঐ ছেলেগুলো হয়তো আবার সাহস পেতো। দল বেঁধে এই সব বদদের পোঁদে ছ্যাকা না দিলে তারা শান্ত হবে না।

আসুন, যেখানেই এই রকম দেখবো, একজন হলেও সাথে সাথেই প্রতিরোধ ও প্রতিহত করবো, আপনাকে সহায়তা করতে ১/২ জনতো আসবেই। বাংগালীরা সবাই কাপুরুষ না, কিছু সত্যিকার সাহসী মানুষ আছে, তারাই এগিয়ে আসবে। কিন্তু প্রথমে একজনকে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করতে হবেই। আমার সেই সাহস আছে, আপনাদের কার কার সেই সাহস আছে, হাত উঠান।

সাজ্জাদূর রহমান

অতিথি লেখক এর ছবি

একদিন অন্ধকার ঘুচবেই।

রাসিক রেজা নাহিয়েন

অতিথি লেখক এর ছবি

এখানে আলো অন্ধকারের বিষয়তো না। যারা এসব বখাটেপনা করে, তারাতো অন্ধকার জগতের কেউ না। আধার অন্ধকার এই সব বললে বিষয়টা ভিন্ন দিকে চলে যাবে। এই সব বখাটেরা মেয়েদের উত্তক্ত করে মজা পায়, তারাই আবার অসাম্প্রদায়িক সমাজ গড়ার ঝান্ডা নিয়ে মিছিল করে, সমাবেশ করে। এই সব বখাটেপন সেই ৯০ এর দশক থেকেই চলে আসছে। যারা করে তারা বড় দলের ছত্রছায়াতেই ছাড় পেয়ে যায়। তাদের ধরবেন, সাইজ করবেন, এভাবেই আস্তে আস্তে কমে যাবে। যখন তারা দেখবে, এসব করতে গেলেই পিঠের চামড়া থাকে না, এমনিতেই কমে যাবে।

সাজ্জাদূর রহমান

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনি ভিন্নভাবে দেখছেন।

রাসিক রেজা নাহিয়েন

আয়নামতি এর ছবি

মনে মনেই সামিল হলাম চলুক ব্যানারটা দারুণ! উৎসব সফল হোক হাসি

নীলকমলিনী এর ছবি

মনে মনে আছি। সাথে থাকতে পারলে আরও ভাল লাগতো। এখনকার মেয়েদের থেকে তিন দশক আগে আমরা আরও নিরাপদে ছিলাম মনে হয়। ভোর পাঁচটায় দল বেঁধে সাদা লাল শাড়ী পরে উদ্যান পার হয়ে রমনায় চলে গেছি বিন্দু মাত্র ভয় না করে। কোথায় গেলো সেই সব দিন। দিনে দিনেই আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি যেনো।ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে যদি আমরা পথে নামি তাহলে এই অবস্থার পরিবরতন হতে বাধ্য। কষ্ট হয় আমরা আমাদের মেয়েদের জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ দিতে পারিনি বলে। প্রধানমন্ত্রীর চুপ করে থাকাটা মেনে নেয়া যায় না।

ইয়ামেন এর ছবি

মনেপ্রানে সামিল। দুঃখ যে শারীরিকভাবে হতে পারছি না, কিন্তু বিদেশ থেকে যদি কিছু করতে পারি অবশ্যই জানাবেন নজরুল ভাই।

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

সব বেদনা মুছে যাক স্থিরতায়
হৃদয় ভরে যাক অস্তিত্বের আনন্দে...

এক লহমা এর ছবি

চলুক উৎসব সফল হোক

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

সামিল আছি থাকবো। আর বাকিদের বলে যাই- হও সামিল

স্বয়ম

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

চলুক

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

মনে-প্রাণে-দেহে সামিল হবো।

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।