১.
২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় একটি বাড়িতে একটি পরিবার। এই ছিলো একটি নাটকের প্লট। যুদ্ধ দেখাবো না, কোনো বন্দুক পিস্তল কামান শহর কিছুই দেখাবো না... শুধু একটি বাড়ির ইন্টেরিয়রে একটি পরিবারের সেই দুঃসহ রাতটা যাপনের গল্প বলবো ভেবেছিলাম, ভোরে ছাদে উড়তে থাকা লাল সবুজ পতাকাটা নামিয়ে বুকে চেপে ধরে কান্নার গল্পটা বলতে চেয়েছিলাম, ভোররাতে ঢাবির হল থেকে পালিয়ে আসা দুই যুবকের আতঙ্কটা দেখাতে চেয়েছিলাম, অথচ এই বাড়ির ছেলেটি এখনো ফেরেনি... মা অপেক্ষায়, উৎকণ্ঠায়...
অনেক যত্ন নিয়ে লিখেছিলাম। তারপর একজন মুক্তিযোদ্ধা, যিনি ২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, এখনো মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রচুর কাজ করছেন এরকম একজনকে পড়তে দিযেছিলাম স্ক্রিপ্টটা। পড়ে উনি বলেছিলেন, একটা কথা কি জানো? শহরে সেনাবাহিনী ট্যাঙ্ক নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, দিগ্বিদিক গুলি করছে, শহর জ্বালিয়ে দিচ্ছে, দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে সবাইকে মারছে...
পরদিন একটা শহরজুড়ে শুধু লাশ আর রক্ত। বাবার লাশের সামনে নির্বিকার বসে আছে সন্তান... সন্তানের লাশের সামনে স্তব্ধ বসে আছে পিতা...
এই যে অনুভূতি, এটা পৃথিবীর কারো পক্ষেই অনুভব করা সম্ভব না। কল্পনায় অনেক আতঙ্ক ফুটিয়ে তোলা যাবে হয়তো, কিন্তু ঐ সময়টা আসলেই তোমরা কল্পনা করতে পারবে না... প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ছাড়া এই বীভৎসতা অনুমান করা সম্ভব না।
রাইফেল রোটি আওরাত বইটি পড়তে পড়তে আমি এর সময়টা চিন্তা করি... ২৫ মার্চ রাত থেকে ২৮ মার্চ রাত পর্যন্ত... ঢাকা শহরের বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সময়টার প্রত্যক্ষদর্শী একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, যিনি চোখের সামনে সেই রাতে হাজার হাজার ছাত্রকে মরতে দেখেছেন গুলি খেয়ে, মরতে দেখেছেন প্রতিবেশি শিক্ষকদেরকে, নিজে বেঁচেছেন স্রেফ ভাগ্যগুনে... তারপরে এই লাশের শহরে, লুটের শহরে, আতঙ্কের শহরে, কিংকর্তব্যবিমূঢ় একটা সময় কাটিয়েছেন... তাঁর বয়ানে আমরা সেই শহরটার গল্প শুনি। চিরকালের প্রিয় ঢাকা শহরের সেই রূপটা আমাদের সম্পূর্ণ অচেনা। যে শহরে আমরা আড্ডা মারি, চা খাই, চুমু খাই, সিনেমা দেখি, হ্যাং আউট করি... সেই শহরটা... সেই ঢাকা শহরটা...
রাইফেল রোটি আওরাত আমাকে নিয়ে যায় অন্য এক শহরে...
২.
মাত্র তিনদিনের পটভূমিতে আনোয়ার পাশা ফুটিয়ে তোলেন পাকিস্তান কনসেপ্টটা কতোটা অকার্যকর ছিলো, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ কনসেপ্টটা কতোটা অপরিহার্য ছিলো।
তিনদিনের অভিজ্ঞতায় রচিত হয় একটি জাতির সমস্ত বঞ্চনার ইতিহাস, স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের গোটা প্রেক্ষাপট।
সাদা কালো লাল নীল হলুদ সবুজ সব রঙের মানুষগুলো এই উপন্যাসের চরিত্রগুলোর মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কোনো গ্রে এরিয়া থাকে না। কপালে যখন বন্দুক এসে ঠেকেছে, তখন পক্ষ দু'টোই... বাঁচা অথবা মরা, হারা অথবা লড়া, সাদা অথবা কালো...
এতো বছর পরেও যখন কেউ কেউ কনফিউশনের দোহাই দিয়ে ৭১ এ কিছু স্বাধীনতাবিরোধীর কর্মকাণ্ড জায়েজ করার চেষ্টা করে তখন বুঝতে পারি 'রাইফেল, রোটি, আওরাত' বইটির প্রয়োজনীয়তা।
যুদ্ধের ফল কী হবে, ক্ষমতা কার থাকবে এসব ভাবনায় রেখে আনোয়ার পাশাকে পক্ষ নিতে হয়নি। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও নিজের পক্ষ বেছে নিতে তাঁকে একটুও ভাবতে হয়নি।
'রাইফেল, রোটি, আওরাত আমার কাছে তাই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অনন্য একটি দলীল, অন্যতম জরুরীপাঠ্য একটি উপন্যাস। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে হাজার হাজার বই লেখা হয়েছে। গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, কবিতা অনেক লেখা হয়েছে... কিন্তু এই উপন্যাসের মতো এতোটা স্পষ্টভাবে সেই কালরাত্রি এবং তৎপরবর্তী সময়ের বীভৎসতা আর কোথাও ফুটে ওঠেনি। বাংলাদেশের পক্ষে বিপক্ষের চরিত্রগুলো এতো স্পষ্টভাবে সমকালীন আর কোনো সাহিত্যে আসেনি।
ঐ আমলের এমনকি দিনপঞ্জীগুলোও পরবর্তীকালে ব্যক্তির অবস্থান অনুযায়ী অনেক পরিমার্জন করে ছাপা হয়েছে, এমনকি বহুল পঠিত জাহানারা ইমামের বিখ্যাত 'একাত্তরের দিনগুলি'ও। কিন্তু 'রাইফেল, রোটি, আওরাত' এই দোষ থেকে মুক্ত অনেকটা। পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের দালালেরা বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে মেতে ওঠে, আনোয়ার পাশাও শহীদ হন। আর বইটি প্রকাশিত হয় ১৯৭৩ সালে, ৭৫ পরবর্তী মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি শুরুর আগে। সেই হিসেবেও এই বইটি গুরুত্বপূর্ণ।
৩.
বইটির ভূমিকায় লেখা আছে 'মানুষ এবং পশুর মধ্যে বড় একটা পার্থক্য হচ্ছে পশু একমাত্র বর্তমানকেই দেখে, মানুষ দেখে অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতকে একসঙ্গে বিবেচনা করে।'
'রাইফেল, রোটি, আওরাত' পড়তে পড়তে আমি অবাক হই... ধ্বংসস্তুপ, মৃত্যুগহ্বর, লাশের আর অনিশ্চয়তার শহরে বসে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর সবগুলো প্রেক্ষাপট কিভাবে তুলে ধরেন ছোট একটি উপন্যাসে?
উপন্যাসের মূল চরিত্র সুদীপ্ত শাহিন, যাঁর মাতৃকুল অবাঙ্গালী, পৈত্রিক সূত্রে মুসলমান হলেও যিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ। আশেপাশের সব ঘরে পাকিরা ঢুকে সবাইকে গুলি করে মারলেও সুদীপ্ত শাহিনের ঘরে বই ছাড়া আর কিছু নেই দেখে যারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। কী চমৎকারভাবে জ্ঞান আর অস্ত্রের লড়াইটা তুলে আনেন আনোয়ার পাশা!
পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম বীভৎস হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী হলেও যে সুদীপ্ত শাহিন কী ভীষন মানবিক... ওয়াজেদ যখন বলে 'সময় এলে এবার দেখবেন স্যার, দেশকে বিহারিশূন্য করে ছাড়ব।' তখন সুদীপ্ত বলেন 'কাজটা সেই পাঞ্জাবিদের মতো হবে, আমরা এখন যাদেরকে প্রবলভাবে ঘৃণা করছি। আমরা চাইছি নির্ভেজাল গণতন্ত্র! তার অন্যতম মূল কথাটি হচ্ছে বিনা বিচারে অন্যায়ভাবে কাউকে শাস্তি দেওয়া হবে না। এবং মতামতের স্বাধীনতার সঙ্গে তার দায়-দায়িত্বটাও হবে প্রত্যেকের ব্যক্তিগত।'
সুদীপ্তর বন্ধু আওয়ামী লীগার ফিরোজকে দেখি আমরা। দেখি দালাল খালেক মালেককে। স্বজনকে হত্যার পরেও যাদের পাকিপ্রেমে কোনো ঘাটতি হয় না! উল্টো সাফাই গায় 'আর্মির জেনারসিটি দেখুন, মেয়েদের ফেরৎ পাঠাবার সময় চিকিৎসার জন্য তিন শো টাকাও দিয়েছে। দে আর কোয়াইট সেন্সিবল ফেলো।'
স্বামী মনিরুজ্জামানের লাশের পাশে আহত জ্যোতির্ময়গুহ ঠাকুর্দাকে পেয়ে যখন মনিরুজ্জামানের স্ত্রী বাসন্তী গুহঠাকুর্দার দরজায় আঘাত করে বলেন 'দিদি, বের হন। আপনার সাহেবকে ঘরে নিন। আমার সাহেব মারা গেছেন। আপনার সাহেব এখনও বেঁচে আছেন।'
এই একটা মুহূর্তই আসলে মুক্তিযুদ্ধের অনেক কিছু বলে দেয়। এরকম আরো অসংখ্য মুহূর্ত আনোয়ার পাশা তৈরি করে গেছেন ছোট্ট এক উপন্যাসে।
সেই অষ্টাদশী জননীর কথা মনে পড়ে, যে আশ্রয় দিয়েছিলো হাসিম সেখকে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক থেকে জগন্নাথ হলের ছাত্র, রাজারবাগ পুলিশ লাইনে যুদ্ধ করা হাসিম শেখ থেকে রোকেয়া হলের হামিদা, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেরানী থেকে যুদ্ধের ডামাডোলে ব্যবসায়ী হয়ে যাওয়া হাশমতের বদলে যাওয়া, ফিরোজের প্রতিবেশী আফরোজা সাবীর... এরকম অসংখ্য চরিত্র দিয়ে পূর্বাপর মুক্তিযুদ্ধের নির্ভেজাল ক্যানভাস পাঠকের সামনে তুলে ধরেন আনোয়ার পাশা।
৪.
ফিরোজের চাচা গাজী সাহেব, জামায়াতে ইসলামীর নেতা... দেশের সঙ্গে তার গাদ্দারী... গোলাম আজম গংদের গাদ্দারীর ইতিহাস স্পষ্ট হয়ে থাকে রাইফেল, রোটি আওরাতে।
অথচ মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তীকালে লেখা অনেক বইতেই এই দালালদের কথা দায়সারাভাবে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা লক্ষনীয়।
আর সবশেষে বুলা... আর জামাল সাহেব। এই মৃত্যু উপত্যকার বিভীষিকা পাঠকের মনে গেঁথে দিয়ে আনোয়ার পাশা বুনে দেন নতুন স্বপ্নের বীজ। সবাই যখন কীংকর্তব্যবিমূঢ়, পালাচ্ছে তখন বুলা আর জামালরা জীবন বাজী রেখে যুদ্ধ শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
২৫ মার্চ রাতে যে ভয়ঙ্কর মৃত্যু আতঙ্ক দিয়ে সুদীপ্ত শাহিনের রাত শুরু হয়েছিলো। মাত্র তিনদিন পরেই ২৮ মার্চ রাতেই "সুদীপ্ত শুতে গেলেন। মেঝেতে ঢালাও বিছানা। সারি সারি তাঁরা শুয়েছেন যতো জনের শোয়া সম্ভব। আর এদের একজনকেও তিনি চেনেন না। সব থেকে বেশি চেনেন জামাল সাহেবকে, কিন্তু সে পরিচয়েই সূত্রপাত হয়েছে মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে। হ্যাঁ, ঠিকই তো হয়েছে। নব পরিচয়ের সূত্রপাত হয়েছে। পুরনো জীবনটা সেই পঁচিশের রাতেই লয় পেয়েছে। আহা তাই সত্য হোক। নতুন মানুষ, নতুন পরিচয় এবং নতুন একটি প্রভাত। সে আর কতো দূরে। বেশি দূরে হ'তে পারে না। মাত্র এই রাতটুকু তো! মা ভৈঃ। কেটে যাবে।"
যুদ্ধ যখনো পুরোদমে শুরু হয়নি, যখনো দেশের মাত্র লাখ খানেক পাগল বোকা মানুষ ছাড়া বাকী কোটি কোটি মানুষ 'কী হয় কী হয়' চিন্তায় মশগুল... তখন এতোটা কনফিডেন্টলি এই কথাগুলো আর কোনো লেখক লিখতে পেরেছেন বলে আমার জানা নাই।
শুধু লেখক হইলেই হয় না, কইলজা লাগে...
৫.
এই উপন্যাসের সাহিত্যমূল্য? আমি আলাদা করে কখনো খুঁজতে যাইনি। এই উপন্যাসটা রক্তের মূল্যে লেখা। সাহিত্য বা কাব্যিক উপমা দিয়ে একে কোমল করলে সেটা অপ্রয়োজনীয় হতো মনে করি।
পাশাপাশি বর্ণনায় একটা নিরাসক্ত নির্বিকার ব্যাপার আছে পুরো উপন্যাস জুড়ে। আমার কাছে মনে হয়েছে এই ভয়াবহ নৃশংসতার নিজস্ব একটা এক্সপ্রেসন আছে, এটা ধরে রাখাটাই সবচেয়ে জরুরী ছিলো। বাড়তি কিছু যোগ না করাটাই ভালো হয়েছে।
আর ঐ সময়টাও খুব গুরুত্বপূর্ণ।
"প্রায় সারা রাত না ঘুমিয়ে ভোরের দিকে গুলি-গোলার আওয়াজ কিছুটা কম হতেই ছেলে মেয়েরা একটু ঘুমিয়েছে। এখনো ঘুমিয়েই আছে তারা। কিন্তু স্বামী স্ত্রী কেউ ঘুমোন নি। কেউ কাউকে কথাও খুব একটা বলেননি। স্ত্রী আমিনার চোখে কেমন একটা নির্বিকার ভাব। স্বামী এখন কোথায় যেতে চায়, এখনি বেরুতে গেলে কোন বিপদ হতে পারে কি না, একান্তই যদি বেরুতে চায়, কতক্ষণে তবে ফিরতে পারবে- ইত্যাদি বহু প্রশ্নই তো এখন আমিনার থাকার কথা। কিন্তু কোন প্রশ্নই স্ত্রীর চোখে সুদীপ্ত দেখলেন না। এখন সুদীপ্তও যেন কেমন হয়ে গেছেন। তা না হলে এমন নিরুৎসুক, যেন প্রাণহীন স্ত্রীকে রেখে কি বেরিয়ে পড়তে পারতেন? মেয়েটার হল কি- এমন একটা প্রশ্ন অন্ততঃ একবারও তো মনে জাগতে পারত। কিন্তু জাগেনি। বিশ্বাস, বিস্ময়, উৎসাহ এবং কৌতূহলের যে সকল গ্রন্থি জীবনকে নানা জগৎ-ব্যাপারের সঙ্গে গ্রথিত রাখে তার সব কটি কি মরে গেছে সুদীপ্তর মধ্যে? তা হলে এখন বাইরে বেরুনোর ঝোঁকটাই বা মাথায় চাপে কেন?"
সময়টা যে এরকম নির্বিকার, নিরুৎসুক, প্রাণহীনই ছিলো।
৬.
এরকম একটা দুঃসহ সময়ে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও, একেবারে শূন্য হাতেও সুদীপ্ত শাহিনরা স্বাধীন একটি দেশের স্বপ্ন দেখতে পেরেছিলেন। হতাশায় মুষড়ে পরেননি। যে অল্পকিছু পাগল বোকা মানুষ এই স্বপ্নটা দেখতে পেরেছিলেন, তাদের জন্যই দেশটা পাকিস্তানের বগলমুক্ত হতে পেরেছে।
যুদ্ধের পরে যারা মুক্তিযুদ্ধের বিজয়গাঁথা লিখেছেন, তাঁরাও কয়জন যুদ্ধের মাঝখানে বসে এই কথাগুলো লিখতে পারতেন তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। মনে রাখতে হবে আনোয়ার পাশা কোনো বিজয়ীর গল্প লেখেন নাই। ভয়ঙ্কর অসম্ভব এক স্বপ্নই গেঁথেছেন শুধু। এমনকি সেই স্বপ্নের সাফল্যটুকুও দেখে যেতে পারেননি তিনি। এই স্বপ্ন, এই স্বপ্নভাষা, এই বক্তব্যটা একেবারে সলিড... স্যালুট।
এখন যখন ট্রাফিক জ্যামে বসে 'এই দেশটার কিসসু হইবো না বাল' বলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতে ইচ্ছে হয় আমাদের... কোনো একটা বিপ্লবী ইস্যু পেলেই ফেসবুকে দেশকে 'ভালোবাসার' নামে কষে গালি দেই দুটো, তারপর পপকর্ণ খেতে খেতে সিনেমা দেখি সিনেপ্লেক্সে, দেশের বিরুদ্ধে অপশক্তির উত্থান দেখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে বাঁচতে চাই... তখন এই উপন্যাসটা আমাকে স্বপ্ন দেখায়... আমাকে হতাশ হতে দেয় না।
"রাইফেল, রোটি, আওরাত" এর শক্তি এখানেই
৭.
বই: রাইফেল, রোটি, আওরাত
লেখক: আনোয়ার পাশা
ধরণ: উপন্যাস
প্রথম প্রকাশ: জুন, ১৯৭৩
প্রকাশনী: স্টুডেন্ট ওয়েজ
প্রচ্ছদ ও অলংকরণ: কাইয়ুম চৌধুরী
মূল্য: একশত পঁচিশ টাকা
গুডরিডস লিঙ্ক
মন্তব্য
শহীদ আনোয়ার পাশাকে
নজরুল ইসলামকে।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
চমৎকার রিভিউ
দেবদ্যুতি
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
অনেক আগে এক বর্ষণমুখর রাতে বাংলাদেশের জন্মলগ্নের এই যন্ত্রণাক্লিষ্ট বইটি পড়েছিলাম। একটি অবশ্যপাঠ্য বই। রিভিউ পড়ে বইটি আরো একবার পড়ব বলে ঠিক করলাম।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
এই বইটা নিয়ে অনেকদিন ধরেই লিখবো লিখবো করছিলাম, কিন্তু লেখা হচ্ছিলো না। এতো কঠিন সব সত্য বইয়ের ভাঁজে ভাঁজে...
অনেকদিন পর বইটি আবার পড়লাম, লিখে ফেললাম তাৎক্ষণিক।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
গোলাম আজমকে নিয়ে অংশটা ভাল লেগেছিল খুব।
"মাদ্রাসায় তালিবুল আলিম পড়িয়েছেন আর সেইটা বিএর সমতুল্য বলে নিজেকে অধ্যাপক দাবী করেন।"
রিভিউ সাংঘাতিক ভাল হয়েছে।
আনোয়ার পাশা দুর্ধর্ষ। চিপা দিয়ে অনেক কুতুবরেই সাইজ করে দিয়ে গেছে এক বইতে
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ঠিক এই কারণে আমার কত গল্প যে অর্ধেক পড়ে আছে। খালি মনে হয়, যদি ভুল করে ফেলি, যদি পুরো অনুভূতিটা না ছুঁতে পারি।
পাঁচতারা
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
যা থাকে কপালে, লিখে ফেলেন।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
দারুণ লিখেছেন নজু ভাই। আবার পড়তে ইচ্ছা হচ্ছে।
ঘাতক দালালের কদ্দুর কি করলেন ভাই?
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
হবে, আস্তে ধীরে সব হবে
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
জানতাম, 'রাইফেল, রোটি, আওরাত' পড়তে হবে। লিস্টে ছিল। পার্থক্য হল, রিভিউটি পড়ার পর বইটি অবশ্য-পাঠ্য লিস্টে উঠে এসেছে। আর আশ্চর্য বা আফসোস হল, মুক্তিযুদ্ধকে আরও ভাল করে জানতে যখন নতুন বই খুঁজে ফিরছি, তখন পর্যন্ত ১৯৭১ সনে প্রকাশিত অসামান্য বইটিই অপঠিত রয়ে গেছে!
রিভিউর জন্য ধন্যবাদ, নজরুল ভাই।
।।।।।।।।।।
অনিত্র
আপনাকেও ধন্যবাদ অনিত্র। বইটা পড়ে ফেলুন। এই বইটি না পড়লে মুক্তিযুদ্ধ পাঠ অসম্পূর্ণই থাকবে
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
চমৎকার রিভিউ!
একদম চোখ বুঁজে পাঁচতারা!
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
হ
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
হ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
এই পুস্তকটা সবার পড়া উচিত।
রিভিউ ভালো লেগেছে নজুভাই। ধন্যবাদ
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
অনেক ধন্যবাদ বস্...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
এই বইতো বই না, একটা দলিল। রিভিউ খুব ভালো হয়েছে নজু ভাই।
এই জিনিসটা নিয়ে আমার অস্বস্তি আছে, খুব ভালো পড়াশোনা না থাকায় লিখতে পারিনি। আর কেউ হয়তো নির্মোহ দৃষ্টিতে লিখবেন।
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
অস্বস্তিকর হলেও কথাটা সত্যি। সব বই-ই পরে সম্পাদনা করা হয়েছে। সম্পাদনা হতেই পারে, কিন্তু এই বইটা এজন্যই অনন্য যে এখানে সম্পাদনার সুযোগ খুব সীমিত ছিলো।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
চমৎকার রিভিউ। রানা মেহের উপরে যেমনটি বলল, পরিমার্জনার ব্যাপারটা অস্বস্তিকর।
ধন্যবাদ নৈষাদ দা
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
শিশিরকণার মতনই বলি -
শহীদ আনোয়ার পাশাকে
নজরুল ইসলামকে।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
অসাধারণ একটা রিভিউ স্যার
০২
কোনো অদ্ভুত কারণে বইটা সম্পর্কে প্রচুর শুনেও বইটা পড়া হয়নি; এখন মনে হচ্ছে পরবর্তীতে প্রথম যে বইটা পড়ব; সেটা হবে এটাই
থ্যাঙ্কিউ স্যার
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
বইটা ানেকদিন পড়বো পড়বো করেও পড়া হয়ে উঠছে না।
ঢাকায় হোম ডেলিভারি দেয় (রকমারি ছাড়া) এমন কোনো দোকান আছে?
কারিগর ডট কম
বইমেলা ডট কম
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
উনিশশো চুয়াত্তর সাল থেকে দু-চার বছর রাজশাহী বোর্ডের উচ্চ-মাধ্যমিক স্তরে বাংলায় এ বইটি পাঠ্য ছিল। তারপর আবার যখন পাকিস্তানী ভুত আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা হল, তখন নির্বাসিত হয়ে গেল সুদূরে।
সবাইকে অনুরোধ জানাই বইটি পড়তে, কিনতে খুব অসুবিধা হলে নেটে পিডিএফ খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। একেবারেই কোথাও না পেলে পিডিএফ ভার্সনের জন্য আমাকে বলতে পারেন।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
এই বইটি আসলেই পাঠ্য হওয়া উচিত। তাহলে আর কনফিউজড প্রজন্ম বড় হইতো না।
আমি অনেকদিন ধরে চেষ্টা করতেছি স্বাধীনতার পরের স্কুল কলেজের পাঠ্য পুস্তকগুলো সংগ্রহ করতে... ধারাবাহিকতাটা বুঝার জন্য। কিন্তু কোথাউ কেউ নাই
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে এই বইটি যে কোথাও পাঠ্যপুস্তকের অন্তর্ভুক্ত ছিল তথ্যটি জানা ছিল না। আবদুল্লাহ এ এম ভাইকে ধন্যবাদ ব্যাপারটি জানাবার জন্য। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়টি নতুন প্রজন্মের কাছে আলোকিত করার জন্য এরকম বইগুলো(অন্তত ক্লাস এইট থেকে) আবারো পাঠ্যপুস্তকের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য উদ্যোগ নেয়া উচিত। এই বইটি এবং এরকম আরো দুয়েকটি বইকে অতিরিক্ত পাঠ্যপুস্তক হিসেবে যোগ করা যায়। পাশ ফেলের জন্য না, এটি শুধুমাত্র অতিরিক্ত বই হিসেবে থাকতে পারে, যারা এই বিষয়ে ৪০% এর অধিক নাম্বার পাবে তাদের সেই নাম্বারকে ফাইনালে যুক্ত করার ব্যবস্থা করা যায়। যেমনটি হয়ে থাকে অবজেকটিভ টাইপ বইএর ক্ষেত্রে যেটায় ফেল করলে তা রেজাল্টের ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে না। সরকারের শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নজরে আনার জন্য প্রচারণার কাজটা ব্লগ থেকেই শুরু করা যায়।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
একটা পোস্ট দেন
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
দারুণ রিভিউ বস।
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পড়া আমার সেরা উপন্যাস। যুদ্ধকালীন রাজনীতি, স্বাধীনতার মহানায়ক শেখ মুজিবুরের সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধে তার অবদানের নির্মোহ বর্ণনা রয়েছে উপন্যাসে। আজও যারা প্রোপাগান্ডা চালায় ৭১ এ শেখ মুজিবুরের নানান সিদ্ধান্ত নিয়ে তাদের জন্যে এ বই অবশ্যই পাঠ্য। রাইফেল রোটি আওরাত থেকে কিছু অংশ তুলে দেই চোখে টিনের চশমা পরে থাকা মানুষদের জন্যে। গল্পের জামাল(যিনি মুক্তিযু্দ্ধাদের সংগঠক) বলছেন-
”মুজিব ভাই ধরা না দিলে ভালো করতেন। তিনি যে ভেবেছিলেন তাকে পেলে ওরা আর সাধারণ মানুষকে মারবে না সেটা এই দুই দিনে মিথ্যে প্রমাণিত হয়েছে, তাছাড়া তিনি আজ বাইরে থাকেল আমাদের কাজ সহজ হতো”।
--কিন্তু ভবিষ্যতে প্রমাণিত হবে তার রাজনৈতিক দর্শন অনুসারে তিনি ধরা দিয়েই সর্বপেক্ষা বুদ্ধিমানের কাজ করেছেন-বলে উঠেন বুলা ( বাম ধারার রাজনীতির সাথে জড়িত গেরিলা যোদ্ধা)
অন্যদিকে সুদীপ্তর বন্ধু ফিরোজের ভাষায় “মুজিব ভাই কারো কথা শুনেননি, ঢাকা ছেড়ে যেতে রাজী হননি, আমার দেশের মানুষকে বিপদের মুখে ফেলে আমি নিরাপত্তার সন্ধানে বেরুব, অসম্ভব। এমন মানসিকতা বহন করতে পারেন একমাত্র বোধহয় ঐ লোকটিই। অন্তত: পাকিস্তানে আর কেউ তা পারেনি।
সুদীপ্তর ভাষায়,
লেখার শেষদিকের বাক্যগুলো আমার মাথায় এখনো গেঁথে আছে, জানি থাকবে চিরকাল। সেখানে বলেছেন আনোয়ার পাশা
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
সমস্যা হলো বুলার মতো বামপন্থীদের দেশে খুব অভাব। তাঁরা কিন্তু সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেনি তখন। এবং আনোয়ার পাশারে স্যালুট, আওয়ামী লীগার না, একজন বুলার বয়ানেই বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শীতার কথা জানিয়েছেন
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
'মানুষ এবং পশুর মধ্যে বড় একটা পার্থক্য হচ্ছে পশু একমাত্র বর্তমানকেই দেখে, মানুষ দেখে অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতকে একসঙ্গে বিবেচনা করে।'
পুরো লেখাটা- খুব ভাল লাগলো পড়ে- ভাল হয়েছে লেখাটা।
আবার পড়লাম। সম্ভবত আবারও পড়বো- আবার অনেকদিন পর=
নতুন মন্তব্য করুন