কিন্তু...
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কী পরিমান বহিরাগত মানুষ যায় সে সম্পর্কে কি কোনো পরিসংখ্যান আছে বা করা হয়েছে? বিপুল পরিমান মানুষের ঢলের মধ্য থেকে কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আর কে অছাত্র তা যাচাই করার মতো জনবল কি প্রস্তুতি কমিটি বা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর আছে? পারবে আমজনতার ঢল ঠেকাতে?
একজন ছাত্র যদি তাঁর বান্ধবীকে নিয়ে যেতে চায় কিংবা কোনো ছাত্রী তাঁর বন্ধুকে, যাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া না, তাহলে কী বিধান? যদি কোনো ছাত্র/ছাত্রী তাঁর ভাই বোন নিয়ে যেতে চান, বহিরাগত বলে তাঁকে ঢুকতে দেবে না?
গত কয়েক বছর ধরেই পহেলা বৈশাখের পরিবেশ নষ্ট করার অন্যতম উপাদান ভুভুজেলা নামে অদ্ভুত এক শব্দ-উৎপীড়ক-যন্ত্র। প্রতিদিন সড়কে অসংখ্য গাড়ির বিভৎস শব্দউৎসবে অভ্যস্ত নাগরিকও পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অঞ্চলে ভুভুজেলার কারনে তৈরি হওয়া শব্দ দূষণের অত্যাচারে অতিষ্ট থাকেন। গত কয়েক বছরের পহেলা বৈশাখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিক্রিয়া দেখলেই বিষয়টি আন্দাজ করা যাবে।
গোটা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ভুভুজেলার শব্দ-হুঙ্কারে ভয়ঙ্কর এক পরিস্থিতিতে পরে। যে পরিস্থিতিতে দশ হাত দূরের মানুষটি যদি চিৎকার করে মরেও যায় তবু কেউ টের পাবে না, তাঁর চিৎকার আর্তনাদ সব হারিয়ে যাবে ভুভুজেলার শব্দসন্ত্রাসে। আর এই ভুভুজেলা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয় ইভটিজিংয়ের ক্ষেত্রে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় তরুণদের দল বিশ-ত্রিশটি ভুভুজেলা নিয়ে রাস্তায় নেমেছে এবং কোনো তরুণী দেখলেই তার দিকে ভুভুজেলার শব্দসন্ত্রাস ছুঁড়ে দিচ্ছে প্রবল বিক্রমে। যা তাদের কাছে বেশ একটা মজার কাণ্ড, পুরুষালী কাজ বা 'ব্যাটাগিরি'। এই অত্যাচার গত কয়েক বছর ধরেই প্রবলভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় হয়ে আসছে, প্রশাসন নিরব থেকেছে।
আর এরই সর্বোচ্চ প্রকাশ ঘটেছে গতবছর। ভুভুজেলার শব্দ-কুহক তৈরি করে নারীর চিৎকার আড়াল করে চলেছে নারী নির্যাতন, ভীড় আর ভুভুজেলার শব্দের ভীড়ে নারীর আর্তনাদ শুনতে পায়নি কেউ। সেই সুযোগে নারীর ওপর চলেছে উৎপীড়ন। ভুভুজেলার শব্দ-কুহক তৈরি করে এরচেয়ে বড় কোনো অঘটন আগামীতে ঘটবে না, তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারবে না।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে গেছে! নারী নির্যাতন আর নিরাপত্তা বাদ দিলেও এমনিতেই পহেলা বৈশাখের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গেও ভুভুজেলা মারাত্মক বেমানান। আর কিছু উছৃঙ্খলতার জন্য আনন্দের হলেও এই শব্দ সন্ত্রাস গোটা উৎসব আবহটাকেই ধ্বংস করে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আর বাংলা নববর্ষ প্রস্তুতি কমিটি কি তা কখনো খেয়াল করেনি?
তাই পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা নিরাপদ রাখতে সবচেয়ে জরুরী মনে করি ভুভুজেলা ঠেকানো। আর এটা ঠেকানো খুব বেশি কঠিন না। প্রথমত ভুভুজেলা বিক্রেতাদের গোটা অঞ্চলের আশেপাশেও ঘেঁষতে না দেওয়া। আর কাউকে এই অঞ্চলে ভুভুজেলা নিয়ে ঢুকতে দেখলে সঙ্গে সঙ্গে তা ঠেকানো। তবু যদি কিছু দুষ্কৃতকারী লুকিয়ে ভুভুজেলা নিয়ে ঢুকেও যায়, সেক্ষেত্রে সেটাও থামানো সম্ভব।
মানুষ ঠেকানোর চেয়ে ভুভুজেলা আর এই অসহনীয় শব্দ-সন্ত্রাস থামানো সহজ। প্রশাসন... দয়া করে জায়গামতো নজর দিন।
মন্তব্য
সহমত ।। ধন্যবাদ নজরুল ভাই, খুবই গুছিয়ে সুন্দর করে বলেছেন। পহেলা বৈশাখে আমরা ঢাবি'র ছাত্র-ছাত্রীরাই নিজেদের ক্যাম্পাসে কেমন জানি অসহায় বোধ করি। নিজেদের উতসব, নিজেদের ক্যাম্পাসে একটা জাতীয় উতসবে নিজেরাই কিভাবে যেন পর হয়ে যাই। ব্যার্থতাটা আমাদেরই । গতবারের যৌন হয়রানির ঘৃণ্য ঘটনার জন্যে ঢাবি'র একজন বর্তমান ছাত্র হিসেবে আমি লজ্জিত এবং সকলের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী ।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের টনক নড়েছে কিন্তু এর মাঝেও অনেকগুলো বিষয় তাঁরা হয়ত খেয়াল করেন নাই অথবা এড়িয়ে গেছেন। ভুভুজেলার উতপাতে আমরা ঢাবি'র ছাত্ররাই অতিষ্ট । আবার আমাদেরই অনেক বন্ধু-জুনিয়র-সিনিয়র এই শব্দ উতপাদনকারী বিরক্তিকর যন্ত্র দিয়ে তাদের ব্যাটাগিরি প্রদশন করে। সবার স্বার্থেই একটি শব্দদূষণহীন পহেলা বৈশাখের জন্যে এই যন্ত্রটা নিষিদ্ধ করার দাবী আমাদের প্রায়ই সবারই ।
আশা করছি গতবারের মতন এবার কোন প্রকার অনভিপ্রেত অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে নাহ। সবাইকে নববর্ষের আগাম শুভেচ্ছা।
গতবারের ঘটনায় আমি নিজেই লজ্জিত। সারাদেশে যে অসংখ্য নারী নির্যাতন আর ধর্ষন হচ্ছে... নিজের পুরুষ পরিচয়টার জন্য সত্যি খুব লজ্জা হয়।
ভুভুজেলার অত্যাচারে আমি গত কয়েক বছর ধরেই পহেলা বৈশাখে ঐ এলাকার ধারে কাছে যাই না। এই যন্ত্রণাটা বন্ধ করা খুব দরকার। কিন্তু অদ্ভুতভাবে দেখলাম ঢাবি প্রশাসন এই ব্যাপারটায় একেবারেই নজর দিলো না!
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
শুধু ঢাকাই নয় সব খানেই ভুভুজেলার উতপাত বন্ধ হওয়া দরকার। রাশাহীতে বিভিন্ন জাতীয় দিবসেও দেখি ভুভুজেলা নিয়ে বেরিয়েছে কিছু ছেলে। কখনও খোলা ছোট সাইজের ট্রাকে চড়ে ভুভুজেলার শব্দে শহর ফাটিয়ে উৎসব করে বেড়াচ্ছে এরা। নজরুল ভাই পহেলা বৈশাখ সামনে রেখে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়ের দিকে দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন। বন্ধ হোক ভুভুজেলা শব্দসন্ত্রাস।
সোহেল ইমাম
ধন্যবাদ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
সাউথ আফ্রিকায় বিশ্বকাপ ফুটবলটা এই একটা জঘন্য জিনিস দিয়ে গেল দুনিয়াকে!
****************************************
হ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
পরামর্শগুলোর সাথে সহমত জানাইয়া গেলাম।
ধন্যবাদ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ভুভুজেলা নিষিদ্ধ হোক।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
হোক
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
নারী নির্যাতনের ঘটনা ঠেকাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নেয়া পদক্ষেপগুলো অবাস্তব ও অকার্যকর। গত বছরের ঘটনায় বা তার আগে ঘটা অন্য ঘটনাগুলোতে যথাযথ ব্যবস্থা নিলে এমন একুশে আইনের দরকার হতো না। গত বছরের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতিক্রিয়া আমাদের মনে আছে। সুতরাং চোরের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য যে গৃহস্থকে তালাবদ্ধ করে রাখার বিধান করা হবে এটা স্বাভাবিক।
শুধু পহেলা বৈশাখে বা শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নয়, সবসময়ে সর্বত্র ভুভুজেলার ব্যবহার বন্ধ করা উচিত। আইন করে এটার ব্যবহার কিঞ্চিৎ কমানো যাবে, কিন্তু বন্ধ করা যাবে না। ভুভুজেলার ব্যবহার বন্ধ করার জন্য মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন – এবং সেটা সহসা হবে বলে মনে হয় না। যেমন, পহেলা বৈশাখে বা অন্য কোন উৎসবে নারী নির্যাতন বন্ধ হবে বলে মনে হয় না। বাংলাদেশে যে কোন লোকসমাগমস্থল, যে কোন নির্জন স্থান নারীর জন্য নিরাপদ নয়। তাদের কাছে বছরের প্রতিটা দিন পহেলা বৈশাখের নিপীড়নের মতো নিপীড়নের হুমকি নিয়ে হাজির হয়। বাংলাদেশে এই অবস্থা অনাদিকাল আগে থেকে ছিল, ভবিষ্যতেও এর বিশেষ পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না। সর্ববিষয়েআশাবাদীদের মতো এখানে আশাবাদ ব্যক্ত করতে পারলাম না বলে ক্ষমাপ্রার্থী।
ধন্যবাদ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
খুবই প্রাসঙ্গিক এবং সময়পযোগী লেখা নজু ভাই। ভুভুজেলা শুধু নারীদের উত্যক্ত করা রোধ করতেই নয়, শব্দ দূষণ এবং শ্রবণশক্তির জন্যও ক্ষতিকর। সবকিছু বিবেচনা করেই ভুভুজেলা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা উচিত!
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
সব বেদনা মুছে যাক স্থিরতায়
হৃদয় ভরে যাক অস্তিত্বের আনন্দে...
কিন্তু কে শোনে কার কথা?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
না জানি এবার কি হবে ! দেশের নিরাপত্তাহাল - রাত হলে গরূ লাঙ্গল জোয়াল সব তৈরী আছে ,কোন চিন্তা নাই ভাব। আর মুরগী ডাকলে আমার গরু কই,লাঙ্গল কাই অবস্থা।
এ্যানি মাসুদ
"ভুভুজেলার শব্দ-কুহক তৈরি করে নারীর চিৎকার আড়াল করে চলেছে নারী নির্যাতন, ভীড় আর ভুভুজেলার শব্দের ভীড়ে নারীর আর্তনাদ শুনতে পায়নি কেউ। সেই সুযোগে নারীর ওপর চলেছে উৎপীড়ন। ভুভুজেলার শব্দ-কুহক তৈরি করে এরচেয়ে বড় কোনো অঘটন আগামীতে ঘটবে না, তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারবে না। "
বৈশাখে ভুভুজেলা বন্ধ হোক।
এ্যানি মাসুদ
আবার সেই একই আতংক
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
জয় বাংলা
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
এই খবরটা এখানে জমা থাক। কিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে বুঝতাছি না যদিও।
আপাতত, 'কিচ্ছু হয়না ক্যান' পার্টির হাতে ধরায় দেয়া যাবে।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
নতুন মন্তব্য করুন