মুক্তিযুদ্ধ চলছে, নিচতলার ক্লিনিকটায় কোনো রোগী নেই। ২৯/১ পুরনো পল্টনের এই বাড়ির দোতলায় থাকেন সপরিবারে চক্ষু বিশেষজ্ঞ আব্দুল আলীম চৌধুরী।
জুলাই মাসের মাঝামাঝি কোনো একটা সকাল, টিপটিপ বৃষ্টির মধ্যে পিডিপির মতিন সাহেব একজন মাওলানাকে নিয়ে এলেন। পূর্ব পাকিস্তান মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সভাপতি মাওলানা মান্নান। জানালেন খুব বিপদে পড়েছেন, পরিবার পরিজন নিয়ে নিরাশ্রয় হয়ে আছেন। আশ্রয়টা খুব দরকার।
আলীম চৌধুরী স্ত্রীর কাছে প্রসঙ্গটা তুলতেই দৃঢ়কণ্ঠ শুনলেন ‘না’। কিন্তু নিচে গিয়ে তিনি দৃঢ়কণ্ঠে ‘না’ বলতে পারলেন না, বরঞ্চ অনেক কাকুতি মিনতির কাছে হেরে আবার ফিরে এলেন উপরে। এবার মা’কে দিয়ে অনুরোধ করিয়ে রাজী করালেন স্ত্রীকে। কয়েক দিনের জন্য ‘অসহায়’ এই মাওলানাকে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলো। নিচের ক্লিনিকের জায়গাটায় সপরিবারে উঠে এলো মাওলানা। কিন্তু ঐ যে প্রবাদ, ‘বইতে দিলে খাইতে চায়, খাইতে দিলে শুইতে চায়’। অসহায়ের আব্দারে আলীম চৌধুরী এবর খাবার দাবারের বন্দোবস্ত করলেন। কয়েকদিনের অন্ন বস্ত্র বাসস্থানের ব্যবস্থা হলো। মাত্র তো কয়দিনের ব্যাপার।
দিন যায় রাত যায়, কিন্তু মাওলানা আর যায় না। উল্টো ‘অসহায়’ এই মাওলানার কাছে আসতে থাকে দামী ফার্নিচার। আসতে থাকে পাকিস্তানী বড় অফিসার, আসতে থাকে রাজাকার আল বদর! আলীম চৌধুরীর কিছুই করার থাকে না। মাওলানা সাহেব ইতোমধ্যে বাড়ির দখল নিয়েছে। না বুঝে মাওলানাকে আশ্রয় দিয়ে নিজেরই এখন নিরাশ্রয় হওয়ার জোগাড়। পালিয়ে যাওয়ার কথা ভাবেন, উপায় পান না। মাওলানা সাহেব বলেন ‘ডাক্তার সাহেব, আপনার উপকার আমি জীবনে ভুলব না। আপনার কোনো ভয় নাই। আপনার কোনো বিপদ হবে না। যদি কখনো কোনো অসুবিধায় পড়েন, সোজা আমার কাছে চলে আসবেন। আমি আপনাকে রক্ষা করবো। আমার জীবন থাকতে আপনার কোনো ক্ষতি কেউ করতে পারবে না।‘
১৫ ডিসেম্বর বিকেল। পুরনো পল্টনের সেই বাড়ির দোতলার বারান্দায় স্ত্রী ও শ্বাশুড়িকে নিয়ে বসে বসে ভারতীয় বোমারু বিমানগুলোর উড়াউড়ি দেখছেন আলীম চৌধুরী। মনে উল্লাস ‘এদেশের পাকিস্তানীরা বোকার স্বর্গে বাস করছে। ভারতীয় বিমানগুলোকে বাধা দেওয়ার কোনো ক্ষমতাই তাদের নেই। দেখো দেখো বিমানগুলো ইচ্ছেমতো বোমা ফেলছে। আর এখনো মাওলানা মান্নানের মতো পাকিস্তানীরা বলে কি না আমেরিকা তাদের রক্ষা করবে, সপ্তম নৌ বিহার আসবে, হা হা হা হা...’ হাসতে হাসতেই স্ত্রীকে বলেন ‘দেখো, আর দুএকদিনের মধ্যেই আমরা স্বাধীন হয়ে যাবো’।
ঠিক তখন, শহরের কারফিউ ভেদ করে একটা কাদালেপা মাইক্রোবাস এসে দাঁড়ায় তাঁর বাড়ির সামনে। কিছুক্ষণ পরেই তার দরোজায় কড়াঘাত। দরোজার ওপাশে অস্ত্রহাতে আলবদর সেপাই। আলীম চৌধুরী দৌড়ে যান মাওলানা মান্নানের দরোজায়। কড়া নাড়েন তো নাড়েন, কোনো সাড়া নেই। অনেক ডাকাডাকির পরে শুধু ভেতর থেকে শব্দ আসে, ‘ভয় পাবেন না, আপনি যান, আমি আছি’।
আলীম চৌধুরী যান। মাওলানা মান্নান এবার বের হয়ে আসেন। শ্যামলী নাসরিন চৌধুরীকে আশ্বাস দেয়, ‘অস্থির হবেন না, ওরা আমার ছাত্র, ওরাই ওনাকে নিয়ে গেছে, ডাক্তার রাব্বিকেও নিয়ে গেছে। ভাবি সাহেব, এত উতলা হওয়ার কিছু নাই। বললাম তো, চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেছে। কাজ শেষ হলেই দিয়ে যাবে। ক্যাপ্টেন কাইয়ুমের সাথে আমার কথা হয়েছে’।
রাত পেরোয়, সকাল হয়, আলীম চৌধুরী ফেরেন না। ১৬ ডিসেম্বর পাকিরা আত্মসমর্পন করে, মুক্তিযোদ্ধারা বিজয়ী হয়ে আসে। মাওলানা মান্নান এবার আবারো লুকিয়ে আশ্রয় নেয় আলীম চৌধুরীরই রান্নাঘরে! তারপর সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
মরণবিপদে যাঁর কাছে আশ্রয় এবং নিরাপত্তা পেয়েছিলো, তাঁকেই হত্যা করা, বাংলাদেশবিরোধী খুনী মাওলানা মান্নান পরবর্তীতে এই বাংলাদেশের মন্ত্রী হয়েছিলো। কিন্তু দেশকে ভালোবেসে, দেশের সকল আন্দোলন সংগ্রামের প্রত্যক্ষকর্মী চক্ষু বিশেষজ্ঞ আব্দুল আলীম চৌধুরী এই স্বাধীন দেশের মাটিতে লাশ হয়ে গিয়েছিলেন।
শুধু যদি প্রথম আব্দারে দৃঢ়কণ্ঠে ‘না’ বলতে পারতেন, তাহলে হয়তো গল্পটা অন্যরকম হতো। সময়মতো 'না' বলতে না পারলে বিপদ কিন্তু সামনে আরো অনেক আসতে পারে। বুঝতে হবে, বুঝে না বলতে হবে।
মন্তব্য
বিপদ আরেকভাবে আসতে পারে। অন্যের না-এর চাপে পিষ্ট হয়ে নিজের হ্যাঁ-গুলো না হয়ে যেতে পারে অথবা ভাইস ভার্সা।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
বাসর রাতে বিড়াল না মারলেও বিপদ আসতে পারে, মোট কথা হইলো যথাসময়ে যথাকাজটা করতে হবে। লাই দিলে মাথায় উঠবেই।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
হেফাজতীরা বাংলাদেশ দখল করতে চাইছিল ৫ মে। সেটা করতে না পেরে মনে হয় আওয়ামী লীগ দখল করার দিকে এগোচ্ছে।
কারো কাছ থেকে 'হ্যাঁ' বলার পেছনের অজুহাতগুলি শোনার অপেক্ষায় আছি।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
তারা যদি এখন বাংলাদেশ দখল করতে চায়, জনগন তাদের পক্ষে থাকবে... আমি নিশ্চিত
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ঘেটিমোটা রাজাকারটার পরিচয় আরেকটু বিস্তারিত দিয়ে যাই।
আবদুল মান্নান ওরফে মাওলানা মান্নান ওরফে রাজাকার মান্নান সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের আমলে আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষকদের সংগঠন 'জমিয়েতুল মোদার্রেসীন' দখল করে আমৃত্যু এর সভাপতি থাকে। রাজাকার মান্নানের মৃত্যুর পর তার বড় ছেলে এ এম এম বাহাউদ্দীন এই সংগঠনটি দখল করে রেখেছে।
রাজাকার মান্নান জমিয়েতুল মোদার্রেসীনের মুখপত্র বের করার কথা বলে মাদ্রাসার দরিদ্র শিক্ষকদের কাছ থেকে জোর করে চাঁদা আদায় করে দৈনিক ইনকিলাব ও সাপ্তাহিক পূর্ণিমা পত্রিকা বের করে মাদ্রাসাগুলোকে সেগুলোর সাবস্ক্রাইবার হতে বাধ্য করে। পরে আবিষ্কৃত হয় ইনকিলাব-পূর্ণিমার মালিক জমিয়ত নয়, রাজাকার মান্নান আর তার ছানাপোনারা। ওই চাঁদার টাকা থেকে রাজাকার মান্নান জুতার ফ্যাকটরি, কোল্ড স্টোরেজ ইত্যাদি ব্যবসাও করেছিল।
১৯৮৬ সালের তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে পতিত সামরিক স্বৈরাচার এরশাদ চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ আসন থেকে রাজাকার মান্নানকে জাতীয় পার্টি থেকে জিতিয়ে আনে। ঐ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে প্রার্থী হতে চেয়েছিল ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল (একজন মুক্তিযোদ্ধা)। কিন্তু এরশাদ বেঙ্গলকে রমনা-তেজগাঁ আসনে দাঁড় করিয়ে দেয় যাতে সে জিততে না পারে। ফরিদগঞ্জের ঐ আসনে রাজাকার মান্নানের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন বাসদের কমরেড খালেকুজ্জামান।
পতিত সামরিক স্বৈরাচার এরশাদ রাজাকার মান্নানকে প্রথমে ধর্মমন্ত্রী ও পরে ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী করেছিল। রাজাকার মান্নানের কথ্য আরবীতে দক্ষতার দরুণ ইরাকের স্বৈরাচারী শাসক সাদ্দাম হোসেনের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তুলতে পেরেছিল। সেই সম্পর্ক ভাঙিয়ে সাদ্দামের কাছ থেকে মহাখালীর গাওসুল আজম কমপ্লেক্স বানানোর নামে টাকা-পয়সা ও এরশাদের কাছ থেকে মন্ত্রিত্ব আদায় করে। সাদ্দামের টাকা হজম করতে পারলেও রাজাকার মান্নান এরশাদ সরকারের মন্ত্রী হিসেবে শেষ তক টিকে থাকতে পারেনি, এরশাদ তাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল। ১৯৯১-এর পর এর পুত্র এ এম এম বাহাউদ্দীন ধানের শীষের ছায়া পাবার অনেক চেষ্টা করেছিল, কিন্তু আলমগীর হায়দারদের দাপটে আর হালে পানি পায়নি।
রাজাকার মান্নান বড় কপালওয়ালা। এইজন্য কোন প্রকার বিচার, সাজার প্রক্রিয়া শুরু হবার আগে আরামে মারা গেছে।
**************************
যাদের নামে রাষ্ট্রদ্রোহিতা, হত্যা, জখম, লুটপাট, ধ্বংসসাধন, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি কঠিন কঠিন ফৌজদারী বিষয়ে মামলা হবার কথা ছিল; এবং দ্রুত বিচার আদালতে এই চার বছরে বিচার হয়ে সাজা কার্যকর হয়ে যাবার কথা ছিল তাদের আসলে কিছু হয়নি। বরং তাদেরকে জমিজিরাত দিয়ে খুশি রাখা হয়েছে। চার বছরে তারা গোকুলে বেড়েছে, সামনে আরও বাড়বে, এবং যথাসময়ে মরণ ছোবল হানবে। সবকিছুকে জায়েজ করতে পারার যুক্তি দেবার আশ্চর্য ক্ষমতাসম্পন্ন কুবুদ্ধিজীবির দল সেদিন তেঁতুলরঙা হয়ে যাবে।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
কোন আলমগীর হায়দার?
...........................
Every Picture Tells a Story
ঐ যে সংসদ সদস্য থাকাকালে সংসদ এলাকায় তার গাড়িতে দুই যৌনকর্মীসহ পুলিশের কাছে ধরা খেয়েছিল!
ও আচ্ছা চিনলাম। মারা যাবার আগেই যার নামে খালেদা পত্রিকায় শোকবার্তা পাঠিয়েছিল।
...........................
Every Picture Tells a Story
ইরাকী টেকাটুকায় ইত্তেফাককে ডিফিট দিতে ইনকিলাব নামে একটা পত্রিকাও তখন বের হয়। সাথে একটা ম্যাগাজিন। পূর্ণিমা নামে।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
ইনকিলাব আর পূর্ণিমা শুরু হয়েছিল জমিয়েতুল মোদার্রেসীনের মুখপত্র বের করার কথা বলে মাদ্রাসার দরিদ্র শিক্ষকদের কাছ থেকে জোর করে চাঁদা আদায় করে। পরে সাদ্দামের দালালী করার জন্য ইনকিলাব-পূর্ণিমা ইরাকের কাছ থেকে টেকাটুকা খেয়েছিল। ইনকিলাব আর পূর্ণিমা জমিয়েতুল মোদার্রেসীনের মুখপত্র হয়নি, ঘেটিমোটা রাজাকারটা পত্রিকা দুটো আত্মসাৎ করেছিল।
ইয়ে মানে, #আস্থারাখুন?
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
সব বেদনা মুছে যাক স্থিরতায়
হৃদয় ভরে যাক অস্তিত্বের আনন্দে...
হ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
হেফাজত যে বেলা আওয়ামীলীগকে পুরোই খেয়ে দিবে, তখন তার আক্রোশের প্রধান শিকার হবে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্ররা। যে ধূর্ত আওয়ামীলীগাররা সারাজীবন স্বার্থের কারণে রাজনীতি করে গেল, তারা তখন হাওয়ায় মিশে যাবে। যে অভাগারা বিবেকের তাড়নায় সেই ২০১৩ থেকে এই ধূর্ত দলের পিছনে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে, তাদের তখন নত মস্তকে নিয়তির এই নিষ্ঠুর পরিহাসের বলি হওয়া ছাড়া কিছুই করার থাকবেনা। যেমনটা হয়েছে অভিজিৎ, রাজীব আর ওয়াসিকুররা।
হেফাজতের সাথে প্রকাশ্য প্রেমের সাম্প্রতিক ঘটনায় এখনকার গণজাগরণ মঞ্চ মাঠে নামেনি কেন?
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
এখন কি আর মঞ্চ আছে?!! আর মঞ্চ কি কখনও এমন কিছু করতে পেরেছে যা আওয়ামীলীগ চায় নি?
গণজাগরণ মঞ্চের আমীর "হাকিম আল্লামা ইমরান এইচ সরকার ইবনে নাহিদ আল শাহবাগী" সম্প্রতি উগ্রনাস্তিকমুক্ত এবং উগ্রজঙ্গিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে শান্তশিষ্ট এবং কিউট তৌহিদী জনতার কাতারে শামিল হয়েছেন, উনি আজকাল উগ্রজঙ্গিবাদ আর উগ্রনাস্তিকতাবাদ নিয়ে প্রচুর স্ট্যটাস দিয়েছেন, উনি বলছেন উগ্রজঙ্গিবাদের মত উগ্রনাস্তিকতাবাদও সর্বদা পরিত্যাজ্য। সুতরাং উনার আক্রোশের শিকার হওয়ার কোন সম্ভাবনা আপাতত আর দেখা যাচ্ছেনা।
কে জানে তারা হয়তো বুঝেই হ্যাঁ বলেছেন।
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
কিছু 'না' কিন্তু চুয়িংগাম দিয়া বানানো বেলুনের মতো; বড়ো হইয়া মুখের বাইরে আসলেও চুপ কইরা আবার ভিত্রে ঢুকে যায়
স্বচ্ছ বর্ণনা, শীলিত ও পরিমিত।
‘সপরিবারে’ শব্দটি ‘থাকেন’ শব্দটির পূর্বে বসিয়ে দিলে বাক্যটি অধিকতর শুদ্ধতা পেত।
নৌবিহার (cruise) > নৌবহর (fleet)
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
নতুন মন্তব্য করুন