আজ (১০ নভেম্বর ২০১৭, শুক্রবার) প্রথম আলোর সাহিত্য সাময়িকী শিল্প সাহিত্য পাতায় অদিতি ফাল্গুনীর যে ছোটগল্পটি ছাপা হয়েছে "পদার্থবিদের হাতে থ্রি নট থ্রি" নামে, সেই গল্পের প্রধান চরিত্র ড. সুজেয় কুমার চৌধুরী একজন পদার্থবিদ। যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যার কৃতী ছাত্র ছিলেন, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে পদার্থবিদ্যা পড়িয়েছেন, ষাটের দশকে ব্রিটেন থেকে পদার্থবিদ্যায় পিএইচডি আর পোস্ট ডক করেছিলেন। তারপর লাট সাহেবদের দেশে স্থায়ী হবার সুযোগ পায়ে দলে দেশে ফিরে এসে যোগ দিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের আবাসিক ভবনে আতঙ্কে কাটিয়ে তারপর কুমিল্লা সীমান্ত অতিক্রম করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়ে অস্ত্রহাতে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় হয়েছেন।
মুক্তমনা ও বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায় এর পিতা অজয় রায়ও সুজেয় চৌধুরীর মতো একজন পদার্থবিদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে যিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে যোগ দিয়েছিলেন, তারপর পিএইচডি এবং পোস্ট ডক করেছেন ব্রিটেনে। দেশে ফিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছিলেন পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক হিসেবে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসে আতঙ্কে রাত কাটিয়ে কুমিল্লার সোনামুড়া বর্ডারে যুদ্ধের ট্রেনিং নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু তবু নিশ্চয়ই বাংলাদেশের খ্যাতনামা পদার্থ বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞান লেখক এবং মানবাধিকার কর্মী অজয় রায়ের সঙ্গে অদিতি ফাল্গুনীর গল্পের সুজেয় চৌধুরীর কোনো মিল নেই!
সুজেয় চৌধুরীর স্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে পক্ষাঘাতগ্রস্ত, অজয় রায়ের স্ত্রীও। কিন্তু তবু গল্পের চরিত্ররা নিশ্চয়ই কাল্পনিক। জীবিত বা মৃত ব্যক্তির সঙ্গে কোনো মিল নেই।
যেমন মিল নেই গল্পের সুজেয় চৌধুরীর সন্তান শুভ্রজিত চৌধুরী আর বাস্তবের অজয় রায়-এর সন্তান অভিজিৎ রায়-এর মধ্যে। যদিও শুভ্রজিৎ জন্ম নিয়েছেন ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বরে আর অভিজিৎও তা-ই (যদিও সার্টিফিকেট অনুযায়ী তারিখটি ১৯৭২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর)। যদিও অভিজিৎ রায়ের পারিবারিক আদরের নাম গুল্লু আর শুভ্রজিৎ-এর পারিবারিক আদরের নাম লাড্ডু। যদিও অভিজিৎ রায় মার্কিন নাগরিক, মাঝে মধ্যে দেশে আসতেন এবং শুভ্রজিৎও বিদেশ থাকেন, মাঝে মাঝে দেশে আসে বাবা-মাকে দেখতে। যদিও অভিজিৎ রায় মুক্তমনা, বিজ্ঞান লেখক আর শুভ্রজিৎ যুক্তিবাদী কল্পবিজ্ঞান লেখক। যদিও শুভ্রজিৎ রায়ের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট অনুযায়ী তিনি ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি লম্বা, গায়ের রং ফরসা, মুখমণ্ডল লম্বাটে, মাথার চুল কালো, দেড় ইঞ্চি লম্বা চুল, দাঁড়ি গোঁফ নাই। যদিও শুভ্রজিৎ এর কপালের বাম পাশে ভ্রুতে ছিলা জখম। মাথার ডান পাশে অনুন ৬ ইঞ্চি লম্বা কাটা রক্তাক্ত জখম, যার গভীরতা ২ ইঞ্চি। উক্ত জখমের পাশাপাশি ২টি গভীর কাটা রক্তাক্ত জখম। পিঠের বাম পাশে ১টি কাটা জখম। তবুও নিশ্চয়ই শুভ্রজিৎ আর অভিজিৎ এক না। যদিও শুভ্রজিৎ ২০১৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার পর বইমেলা থেকে বের হওয়ার পথে টিএসসির সড়কদ্বীপ থেকে চারুকলা হয়ে শাহবাগের দিকে যাওয়ার হাঁটা রাস্তায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ল গ্রন্থাগারের সামনের রাস্তায় আক্রান্ত হয়ে গুরুতরভাবে আহত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন, তবুও নিশ্চয়ই শুভ্রজিৎ আর অভিজিৎ-এর মধ্যে কোনো মিল নেই। কারণ শুভ্রজিৎকে কোনো সাম্প্রদায়িক জঙ্গী গোষ্ঠী হত্যা করেনি, হত্যা করেছে "জনা কয়েক আততায়ী"!
এবং প্রথম আলোয় প্রকাশিত অদিতি ফাল্গুনী রচিত "পদার্থবিদের হাতে থ্রি নট থ্রি" গল্পের কোথাও মৌলবাদ জঙ্গীবাদ ইত্যাদি নেই। আততায়ীর হাতে নিহত একজন সন্তানের পিতার যাপনের খুব সাধারণ একটি গল্প লিখেছেন অদিতি ফাল্গুনী।
সেই গল্পেই একটা জায়গায় "বাকিটা আজকের ডিজিটাল পৃথিবীতে সামাজিক যোগাযোগের কল্যাণে গোটা পৃথিবীই জানে। যখন রাস্তার ওপর খুন হয়ে যাওয়া মানুষের তাজা রক্ত ছলকে আসে আপনার পিসিতে, ল্যাপটপ বা মুঠোফোনের স্ক্রিনে; আপনি অনলাইনে সেই রক্তের বৈভব দেখতে দেখতে মৃদু উদ্বেগে কফি পান করে চলেন।" বলে অসচেতন আম পাবলিককে ধুয়ে দেন গল্প লেখক। আর সচেতন গল্প লেখক হয়ে তিনি সচেতনভাবে পুরো ঘটনা থেকে মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গীবাদ ইত্যাদি সযত্নে মুছে দেন গভীর মমতায়।
নিশ্চয়ই অদিতি ফাল্গুনী এবং প্রথম আলোর সাধুবাদ প্রাপ্য!
মন্তব্য
নিশ্চয়ই অদিতি ফাল্গুনী এবং প্রথম আলোর সাধুবাদ প্রাপ্য! তবে অসচেতন আম পাবলিককে আদৌ কি ধুয়ে দেয়া গেছে? এমনকি তথাকথিত সচেতন পাবলিকের গায়েও কি মৃদু আঁচড়টুকুও সম্ভব হয়েছে?
সব সম্ভবের দেশে আপনি অসম্ভব খোঁজেন?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
প্রথম আলো একটা "মাল", আর কিছু বলার নাই।
অনন্যা
এবং অদিতি ফাল্গুনী একের পর এক এরকম গল্প লিখেই যাবে। মুক্তিযোদ্ধাদের অপৌরুষেয় বানানো, শাহবাগ গণজাগরণকে নিয়ে 'গপ' বানানোর পর এখন অভিজিৎ রায়। শুনেছি একটা উপন্যাসও নাকি লিখেছেন শুভ্রজিৎ চৌধুরীকে নিয়ে, যিনি আদতে অভিজিৎ রায়। সেই উপন্যাসটা খুঁজছি পড়ার জন্য
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
হাসনাত আব্দুল হাইয়ের মতই আরেক ভাড়াটে সাহিত্যিক আততায়ী মনে হচ্ছে!
তবে আব্দুল যেখানে তার এসাসিনেশনের কাজটা দু'কানকাটার মতো পাড়াসুদ্ধ লোকের ঘুম না ভাঙিয়ে সারতে পারে না, ইনি মনে হচ্ছে সেখানে অনেক সুক্ষভাবে আর নিঃশব্দে সেটা সারেন। স্মুদ অপারেটরের মতোই কলম-রূপী মিছরির ছুরি হাতে স্মুদ এসাসিন!
****************************************
সেটাই, বাংলাদেশে বুদ্ধিবৃত্তিক দুবৃত্ততা কোথায় গিয়ে ঠেকেছে!
অনন্যা
সাহিত্য হইতে সাহিত্য সমালোচনার সাহিত্যমান উন্নত হইছে...
০২
সকল ঘটনা কাল্পনিক...
অভিজিৎ রায় নামে কেউ কখনো ছিলো না... সব মিছাকথা
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
সেই প্রথমআলোতে অদিতি ফাল্গুণী "উম্মাদিনী কাল" লিখেছিল শাহবাগ মঞ্চে জড়ো হওয়াদের চরিত্র বিকৃত করে, জাহানারা ইমামকেও হেয় করে (যতদূর মনে পরে)। আরেক প্রথমআলো গৃহপালিত হাসনাত আব্দুল হাই লিখিত তার লেখা বিতর্কিত লেখাটা জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে তা প্রত্যাহার করে নিয়েছিল, অদিতি ফাল্গুণী লেখা রয়েই গিয়েছিল।
এবং আবার নতুন করে…।
প্রথম আলো সম্ভবত চিপা দিয়ে ফাল্গুনীর গল্পটাও সরিয়ে দিয়েছে। খুঁজে পেলাম না। অন্য একখান থেকে কপি পেস্ট করে রাখলাম
উন্মাদিনী কাল-অদিতি ফাল্গুনী | তারিখ: ১৩-০৪-২০১৩ -দৈনিক প্রথমআলো
‘একটা সিগারেট দে। সিগারেট দে কইলাম। লক্ষ্মী ভাই আমার!’ পরনের জামাটাকে কি কামিজ বলা যায়? হয়তো ছেলেদের শার্ট ছিল অথবা মেয়েদের কামিজ? ঠিক কি ছিল তা এত দিন পর কে বলবে। মূল রংটা কি অফ হোয়াইট টাইপের কিছু একটা ছিল? এখন সেই সাদার ওপর অনেকটা ময়লা কালচে ও থিকথিকে আভা ধারণ করে গোটা জামাটাকে একটা কোঁচকানো বিন্যাস দিয়েছে। না, হাঁটুর নিচে সালোয়ার বা সায়া টাইপের কিছু নেই। একটি গোটা জামাই শুধু পরনে। স্তন না অতি ভারী, না অতি শীর্ণ। চুলগুলো একটা আরেকটার ওপর জটা পাকিয়ে। স্নান করেনি কত বছর?
‘দিবি না সিগারেট? আমি কইলাম সব স্লোগান কইতে পারি! ক-তে কাদের মোল্লা, তুই রাজাকার/ তুই রাজাকার! ন-তে নিজামী, তুই রাজাকার/ তুই রাজাকার! জ্বালো-জ্বালো-আগুন জ্বালো! তোমার আমার ঠিকানা/ পদ্মা-মেঘনা-যমুনা...কি রে ভাইয়ারা, পারতাছি না? এইবার দে...এই পাগলিডারে একটা সিগারেট দে।’
জাদুঘরের সামনেই পুলিশ আর কালো পুলিশের (র্যাব) কাঁটার তার দেওয়া এই ঘেরের ভেতরেই এখন সবাই আসে। স্লোগান দেয়। শুরুতে তা ছিল বারডেম হাসপাতালের উল্টা দিকে। মাথায় ঘোমটা দেওয়া এক চাচির ছবি বড় করে টাঙানো। লম্বা একটা পতাকা ঝুলত বাতাসে আসমান বরাবর। আর লোক আর লোক। গাড়িতে করে মানুষ আসছে। আসছে টিভির লোকজন। কাঁধে তাঁদের বিশাল সব ক্যামেরা। টিএসসি থেকে পাবলিক লাইব্রেরি জাদুঘর হয়ে ওপারে ফুলের দোকান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান আর এদিকে বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের মোড় পর্যন্ত শুধু লোক আর লোক। সকাল থেকেই থাকে। দুপুরের পর বিকেল থেকে আরও মানুষ। ক্যামেরাম্যান। লম্বা লম্বা ট্রলিতে উঠে ছবি তুলছেন সবাই। মুখে পতাকা আঁকা, মাথায় পতাকা বাঁধা ভাইয়েরা, আপারা। আর শুধু স্লোগান। শুধু স্লোগান। শাহবাগে সত্যি বলতে এমন আজব ব্যাপার সে কখনোই দেখেনি। দেখতে দেখতে কত কী হলো! আগে শাহবাগে তার সকালটা শুরু হতো ফুলের দোকানের সামনে ফুলের পাপড়ি ঝাড়ু দিয়ে। ভিক্ষা চেয়ে। সেখান থেকেই সে হেঁটে হেঁটে চলে যেত কখনো টিএসসি, দোয়েল চত্বর হয়ে হাইকোর্ট। রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। তা গত দুই মাস সে শাহবাগেই ঠাঁই নাড়া। কত ফুল, গান-বাজনা, মাইক হাতে আপাদের স্লোগান, মোমবাতিতে ম্যাচের ঘষায় ম্যাজিকের আলোতে সারা শহরে তারাবাতি জ্বলল। এই ভাই-আপাদের অনেকে একটা মাস রাস্তাতেই থাকল আর রাস্তাতেই ঘুমাল...ভ্যানগাড়ির মতো কী একটা নাকি ভাতরুমে (বাথরুমে) যায়। তারপর ধীরে ধীরে মানুষ কমতে থাকে। আবার মাঝেমধ্যে বাড়ে। তখন মনটা কেমন করে। গত একটা মাস খুব ভালো গেছে। মাইকে গানের সঙ্গে সে-ও গান গেয়েছে। মাঝরাতে গান। ভোররাতে গান। তারপর মাঝখানে কদিন লোক একদম কমে গেল। আজ আবার মানুষ আসছে।
‘কি রে ভাইয়া, সিগারেট দিলি না?’
‘দিচ্ছি-দিচ্ছি!’ সদ্যই ধরানো একটা ৫৫৫ টান না দিয়েই সাদি বাড়িয়ে দেয় পাগলির দিকে।
লম্বা, শ্যামলা আর এক মাথা ঝাঁকড়া চুলের সাদিকে দেখতে কঠোর পুরুষ মনে হলেও আদতে নরম। রক্ত-সংঘর্ষ-ভাঙচুরকে তার ভয়। গিটারে অব্যর্থ হাত। জর্জ হ্যারিসন হওয়ার স্বপ্নে বিয়ে করা হয়নি। বিজনেসম্যান বাবা সফল পুত্র-কন্যাদের ভেতর সাদিকেই ‘সিস্টেম লস’ হিসেবে মেনে নিয়েছেন। এদিকে লালচে ফরসা, প্রায়ই পাঞ্জাবি পরা, স্নিগ্ধ চেহারার অনুপমকে দেখলে মনে হয় জীবনেও গীতবিতান আর রজনীগন্ধা ছাড়া দুই হাতে কিছু ধরেনি। বাস্তবের অনুপম এক-এগারোর সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আর্মির হাতে ছাত্র পেটানোর প্রতিবাদে হাতে আধলা ইট নিয়ে আর্মি ট্রাকের পেছনে ছুটেছিল। এখন বিজ্ঞাপনী এজেন্সির কপিরাইটার। সঙ্গে মোস্তাফিজও ছিলেন। বেঁটে-খাটো, শীর্ণ মোস্তাফিজ মুঠোফোন কোম্পানিতে কাজ করলেও সুযোগ পেলেই ক্যামেরা হাতে দেশের সব বন-বাদাড়ে ছুটে বেড়ান।
সাদির হাত থেকে সিগারেট নিয়ে আনন্দে দুটো সুখ টান দেয় পাগলি। মাথার ওপর চাঁদ ঝকঝক করছে।
‘অই আপারা! আইজ ইমরান ভাই কই? ইমরান ভাই আসব না? লাকি আপা কুনখানে? আমি লাকি আপার মতো স্লোগান দিতে পারি। তোরা শোন্। শুইনা আমারে ১০টা টাকা দে।’
পাগলি সিগারেট হাতে এদিক-সেদিক কোথাও গেছিল! কাঁটাতারের এপারে ফুটপাতের ডিভাইডারের সামনে আবার এসে দাঁড়ায় সে, ওদের ছোট গ্রুপটার সামনে। হাসি হাসি মুখে গলা তুলে প্রচণ্ড জোরে চিৎকার করে, ‘জ্বালো জ্বালো-আগুন জ্বালো! গ-তে গোলাম আযম/ তুই রাজাকার, তুই রাজাকার! নিজামী গেলি কই? আইতাছি তর বাপেরা! সাকা গেলি কই? আইতাছি তর বাপেরা! সাঈদী তর কবর হবে/ পাকিস্তানের মাটিতে! জামাতের বিবির/ বাচ্চারা শিবির! দে-১০টা টাকা দে!’
শ্রাবস্তী ব্যাগ খোলে। বন্ধুদের হট্টগোলের আড়ালে এক কোনায় বসে ১০টা টাকা দেয় সে পাগলিকে।
‘তোর মনটা খুব নরম রে আপু। তুই আর একদিন আমাকে টাকা দিছিলি না?’
হ্যাঁ, একেই টাকা দিয়েছিল বৈকি শ্রাবস্তী। গত পরশু বিকেলে।
‘আইজ রাতের খাওয়া হবে রে আপু। কি কিনমু জানিস? একখান বনরুটি, একটা কলা আর এক কাপ চা।’ পাগলি এবার শ্রাবস্তীর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে।
‘তুই কী সুন্দর সাজছিস রে আপু!’
‘কী নাম তোমার?’
‘আমার নাম...’ পাগলি তার জটা আর উকুনভরা চুলে হাত চুলকায়।
‘নাম একটা ছিল মনে কয়। অহন মনে নাই। আমি এই শাহবাগের পাগলি। শাহবাগেই থাকি। আমারে তোর মতো সাজায় দিবি আপু?’
শ্রাবস্তী অবাক হয়, ‘কি সাজবে তুমি?’
‘তোর মতো কাজল আর লিপস্টিক দিয়া দে আমারে। আছে না তোর ব্যাগে?’
‘না-নেই তো!’
‘তাইলে তোর চিরুনিটা দিবি? আমার মাথায় ময়লা নাই।’
‘আমার কাছে ত’ চিরুনিও নাই!’ মিথ্যা বলে শ্রাবস্তী।
‘ওহ্...’ পাগলি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, ‘থাক। একদিনে বেশি চাইতে নাই। তুই ত’ ১০টা টাকা দিলিই। আসি রে আপু...আসসালামু আলাইকুম!’
শেষ মুহূর্তে হাসিমুখে কপালের কাছে সালামের ভঙ্গিতে হাত জড়ো করে পাগলি তার কাঁধে বেশ কিছু টুকরো কাগজভরা পলিথিনের ব্যাগটি নিয়ে শাহবাগ জাদুঘরের সামনে থেকে রাস্তার ওপারে ফুলের দোকানের পাশ হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যেতে থাকে। মুঠোফোনে বাসা থেকে মেসেজ আসছে। রাত প্রায় সাড়ে নয়টা। আলিয়ঁস ফ্রঁসেস থেকে রাত আটটায় পরীক্ষা শেষ করে এখানে চলে এসেছিল আজ। ২৫ মার্চের রাত বলে কথা! এখন রিকশা নিয়ে বাসায় যেতে সাড়ে নয়টা বাজবে।
পাগলি বিদায় নিতে না-নিতে আলোচনা ততক্ষণে নানাদিকে বিসর্পিল মোড় নিয়েছে। ব্লগারেরা কি আসলেই নাস্তিক ছিল, সাঈদীকে চাঁদে দেখা নিয়ে দাঙ্গা, ধুমধাম মন্দির ভাঙা হচ্ছে প্রতিদিন, আওয়ামী লীগ-বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী বনাম হেফাজতে ইসলাম, রুশি বাম বনাম পিকিং বাম, পিকিং বামদের কার্যক্রম অতিবিপ্লবের ঝোঁকে বিএনপি-জামায়াতের পক্ষে চলে যায় না তো, শুধুই যুদ্ধাপরাধের বিচার কি জাতীয়তাবাদী আবেগ নাকি তেল-গ্যাস, বিদ্যুৎ-বন্দরের দাবিও থাকা প্রয়োজন? শাহবাগ বসন্ত কী বিপ্লব না বিপ্লবের পূর্ব লক্ষণ?
‘আচ্ছা-একটা ব্যাপার...’ ইতস্তত নরম গলায় শ্রাবস্তী বলে, ‘যুদ্ধাপরাধের বিচার না হয় আমাদের করতেই হবে। নাহলে বাংলাদেশ পাপমুক্ত হবে না। আমার পিসি ফোন করেছিলেন। ওনাদের উপজেলায় আজও দুইটা মন্দির ভেঙেছে। তা-ও না হয় মানলাম। লাশ পড়ছে। মানলাম। কিন্তু বিচারের পরে...ধরো, এই পাগলি...ও কি খেতে পাবে?’
‘এটা তোর খুব রাজাকার মার্কা কথা হইল। এটা তো পিকিং বাম মার্কা কথা।’ মোস্তাফিজ খেপে উঠল। সাদির মুখ অকারণে লাল হলো। সাদি পিকিংপন্থী। সে কারণেই একই বন্ধু গ্রুপে থেকেও রুশপন্থী শ্রাবস্তীর সঙ্গে তার কথা নেই আজ কয়েক বছর। এদিকে জিনস-ট্রাউজার পরা, সিগারেট খাওয়া ‘টমবয়’ মোহসীনাও কিন্তু পিকিং বাম। বন্ধুরা একসময় মস্কাইট-রাবীন্দ্রিক-পাঞ্জাবি পরা অনুপমের সঙ্গে অপর মস্কাইট-রাবীন্দ্রিক-শাড়ি আর টিপের শ্রাবস্তীকে কল্পনা করে কলাভবনের সামনের গাছে অনুপম+শ্রাবস্তী এবং আপাত রুক্ষ ও পিকিং বাম সাদির সঙ্গে আপাত কঠিনা ও পিকিং বাম মোহসীনার নাম অর্থাৎ সাদি+মোহসীনা লিখে দুষ্টুমি করেছিল। অনুপমের সঙ্গে পরিচয়ের আগে মোহসীনার প্রেম ছিল তার কাজিনের সঙ্গে। সেখানেই বিয়ে। একটি বাচ্চা নিয়ে আপাতত ব্রেকআপ। ডিভোর্সের মামলা চলছে। ইতিমধ্যে অনুপমও বিয়ে করেছে যথারীতি। তবু আজ রাতে বউকে বাসায় রেখে ক্যাম্পাসের পুরোনো বান্ধবীকে বাসায় পৌঁছে দেবে না কি সে? মনের দুঃখে মোস্তাফিজ একাই অর্থাৎ বউকে ছাড়াই সর্বত্র ঘুরে বেড়ায় বাউল বাউল মুখে। সাদি জর্জ হ্যারিসন হওয়ার স্বপ্নে কোনো দিন চাকরি করবে না। তাই কোনো দিন কোনো মেয়েকেই সে বিয়ে করবে না। বিয়ে না করলেও প্রেম করেছে বেশ কিছু গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে। সব কয়টাই ব্রেকআপ। শ্রাবস্তীর সঙ্গে যত দিন তার কথা হতো, তত দিন রুশ আর পিকিং বাম পন্থার মতাদর্শিক ঝগড়া চলত। একপর্যায়ে তাদের কথা বন্ধ হলো। অথচ আজও ক্যাম্পাসে হঠাৎ দেখা হলে দুজনেরই বোধ করি অবস্থা হয় সেই এর্নেস্তো কার্দেনালের কবিতার পঙিক্তর মতো। ‘কেঁপে উঠি তোমার ক্ষণিক দৃষ্টিতেই!’ সাদি তার একটিও স্বীকৃত গার্লফ্রেন্ডকে অন্য ছেলেদের সঙ্গে কথা বলতে দেখলে রাগ করে না। অথচ বাক্যালাপ বন্ধ শ্রাবস্তী আজও কোন্ ছেলের সঙ্গে কথা বলে, সেটা সে পর্যবেক্ষণ করে শ্যেন দৃষ্টিতে। আবার সাদি যেমন জর্জ হ্যারিসন হওয়ার স্বপ্নে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয় না, শ্রাবস্তীও মহাশ্বেতা দেবী হওয়ার স্বপ্নে শেষ পর্যন্ত বিবাহ ইচ্ছুক কোনো যুবককে ভালোবাসে না। সচেতন অবচেতনে বেছে বেছে তাদের জন্যই সে দুঃখবিলাস করে যারা বেকার, ভবঘুরে বা অন্য কোনো সঙ্গিনীর সঙ্গে দায়বদ্ধ। দূর থেকে হালকা বিরহবোধ, উদাসীন রবীন্দ্রসংগীতের সুর আর মনের ছটফটে ইচ্ছা একদিন ঢাকার বাইরে গিয়ে বিশাল কোনো উপন্যাস তথা অশ্বডিম্ব সে প্রসব করবেই! কাজেই বিয়ে করা চলবে না। ওরে মধ্যবিত্ত সুবিধাবাদী, গত বছর তবে এক নির্জন মফস্বলে গিয়ে দিনে গড়ে ২০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ আর পানির অভাবে পালিয়ে এলি কেন? এখন বুড়ো বয়সে শৈশবের সংগীতচর্চার অভ্যাস পুনরুদ্ধার করাই শুধু আর তোমাকে দিয়ে হবে।
‘আহ মোস্তাফিজ...ঝগড়া করিস না! শ্রাবস্তী, অর্থনৈতিক মুক্তি বা সমাজতন্ত্রের প্রশ্ন পরে। এখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারই বড় প্রশ্ন। আমরা অঙ্ক পরীক্ষার দিনে অঙ্ক আর বাংলা পরীক্ষার দিনে বাংলা পরীক্ষা দিই।’ অনুপম রেফারির রায় দেয়।
লোকেন বোসের জার্নাল ২০১৩ (শ্রাবস্তীর ডায়েরি থেকে):
‘অমিতা সেনকে সুবল কী ভালোবাসে?
অমিতা নিজে কী তাকে?
অবসরমতো কথা ভাবা যাবে,
ঢের অবসর চাই;
দূর ব্রহ্মাণ্ডকে তিলে টেনে এনে
সমাহিত হওয়া চাই;’
আজ সকালে একটা মারাত্মক দুঃস্বপ্নে ঘুম ভেঙে গেল। তেল-গ্যাস, বিদ্যুৎ-বন্দরের দাবিতে একটি লংমার্চে আমিও ছুটছি। বন্দরে বন্দরে থামছি। নদীমাতৃক দক্ষিণ বাংলার সব বন্দর। মংলা-হুলারহাট-শিকারপুর। মংলায় গেছিলাম বটে ২০০৩-এ লংমার্চের সময়। শৈশবে হুলারহাট আর শিকারপুরে। স্টিমারের ভ্যাঁপো আর যে বন্দরেই থামছি সেখানেই অনেক মানুষ স্লোগান দিতে দিতে ছুটে আসছে। হাতে তালি দিয়ে তারা স্লোগান দিচ্ছে, ‘ফাঁসি- ফাঁসি-সবাই বলো ফাঁসি-আরও জোরে ফাঁসি!’ তারপর ঘুম ভাঙল রক্ত দেখতে দেখতে। আমার দুই হাতে রক্ত...আমার দুই ঊরুর ভেতরে রক্ত...সব রক্তে মাখামাখি...ঋতুচক্রের সময় প্রতিটি মেয়ের যেমন হয়... আমার মাথাটা ঘুরছিল। আর খুব শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। আমি আমার মৃত মা-বাবা আর জীবিত ভাইবোনদের সেই মিছিলের ভেতর খুঁজতে চাইলাম। কিন্তু কাউকেই পেলাম না। তারপর টের পেলাম, আমার গায়ে একটি জামা আছে বটে কিন্তু আমার পা ও ঊরু অনাবৃত। আমার দুই পা থেকে রক্ত গড়িয়ে নামছে আর আমার দুই হাত কারা বেঁধে রেখেছে শিকলে। আমার গায়ে একটি ছেঁড়া জামা অবশ্য আছে। জামাটা...জামাটা খানিকটা কাল রাতের পাগলিটার মতো না? আমি কি আমিই? নাকি অনেক রাত অবধি ফেসবুকে বন্ধুদের শেয়ার করা একাত্তরের সেই যে বীরাঙ্গনা...পাগলির মতো দেখতে...দুই হাত ওর শিকলে বেঁধে রেখেছিল পাকিস্তানি বাহিনী আর রাজাকাররা.. ছেঁড়া, ময়লা জামার নিচ থেকে বের হয়ে আসছিল তার অনিন্দ্য কোমল নারীমাংসই বটে...আমি কি সেই বীরাঙ্গনা? দূর...তখন তো জন্মই হয়নি আমার...তবে আমি কী করে সে হব? আমাদের ধমনিতে শহীদের রক্ত...কানের কাছে কেউ ফিসফিস করে বলছিল এখন নতুন স্লোগান দিতে হবে...আমাদের ধমনিতে বীরাঙ্গনার রক্ত...না, আমি বীরাঙ্গনা না...আমি ধর্ষিতা হইনি...এই রক্ত কোনো দিন বৃথা যেতে পারে না! আমি আজও অক্ষত আছি...ভালো মেয়ে আছি...এই রক্ত কোনোদিন পরাভব মানে না...দ্যাখো, তোমরা...বিশ্বাস না হলে পরীক্ষা করো আমার শরীর! এই রক্ত কোনো দিন চোরাবালিতে হারায় না! আমার শরীরে তীব্র সার্চলাইট ফেলে তোমরা দেখতে পারো মেডিকেলি আমি আজও অক্ষত কি না...আমাদের ধমনিতে বীরাঙ্গনার রক্ত...না, আমি বীরাঙ্গনা নই...যে আমি অনার্য বাংলার ধানসিঁড়ি শ্যামলিমা...বেতফলের অরণ্যে লক্ষ্মীপ্যাঁচার ডানা ঝাপটানি, জলাঙ্গির কুয়াশাকীর্ণ নীলাভ সকাল...সেই আমার যোনি ও জরায়ুর ভেতর দিয়ে ছিঁড়ে-ফেড়ে মার্চপাস্ট করে যায়নি আর্যাবর্তের ৯০ হাজার পাঞ্জাবি-পাঠান-বালুচ সেনা...অথবা গেছে?...নাকি আমি সিটি করপোরেশনের সোডিয়াম লাইটের নিচে ঘুমিয়ে থাকা সেই পাগলিটা, যাকে যখন-তখন তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে পুলিশ, র্যাব কিংবা মাস্তান? সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সবুজ ঘাসের ওপর নিরুপায় শুয়ে আর সারা দেহে পুলিশের তীক্ষ্ন দাঁত-নখ বিঁধতে বিঁধতে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর থেকে ভেসে আসা গান শুনি বুঝি আমি: ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে, রক্ত লাল রক্ত লাল রক্ত লাল?’ নাকি এটা বাঁশখালী? হুম্...আমি ঢাকার সুবিধাপ্রাপ্ত হিন্দু নারী। চাইলেই আমাকে ধর্ষণ করা যাবে না। তবে আমি যুদ্ধাপরাধের বিচার চাই...হত্যা ও ধর্ষণের বিচার চাই...অর্ডার-অর্ডার-নোট দ্য পয়েন্ট...একুশ শতকের মানবাধিকার ফাঁসির বিরোধী... আহ্...কী রক্ত! রক্তের ঘ্রাণ চারপাশে! আমার ঘুম ভেঙে গেল...জেগে দেখলাম সালোয়ার মাখামাখি রক্তে। বিছানার চাদরে রক্ত।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ইতিহাসভিত্তিক গল্প/উপন্যাস লেখার একটা সুবিধা হচ্ছে এখানে মূল প্লট, প্রধান চরিত্রগুলো, অনেকগুলো ঘটনা একেবারে রেডিমেড পাওয়া যায়। তারপর নিজের ইচ্ছেমতো, পরিকল্পনামাফিক সেটাকে আকার আকৃতি দিলেই চলে, ইচ্ছে মতো পাগল/ছাগল/সেয়ানা/খুনী/ধর্ষক/ফুটোকলস/হামবাগ আমদানী করা যায়, যার খুশি লুঙি/ধুতি/প্যান্ট/সালোয়ার খুলে নেয়া যায়। এসব নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুললে, "আঁপনি সাঁহিত্যিকের সৃঁষ্টিশীল চিঁন্তার স্বাঁধীনতায় হঁস্তক্ষেপ কঁরছেন" বলে নাঁকি কান্না কাঁদা যায়। লাভটা হচ্ছে এই - বই পড়তে বা ইতিহাস জানার কষ্ট স্বীকার করতে অনাগ্রহী, কেবল লিংক চায় এমন আবালগোষ্ঠী এটাকেই ইতিহাস বলে ধরে নেয়। ইচ্ছামাফিক ইতিহাস বানানেওয়ালা 'অন্তমা' গোষ্ঠীরা ইতিহাসের অন্ত ঘটাতে যেসব জ্ঞানগর্ভ, গবেষণাসমৃদ্ধ বই বের করে এগুলো হচ্ছে তার ম্যারিনেট করার মশলা। শুধু 'অন্তমা' কেন, এমন ইতিহাস সৃষ্টিকারী এনজিওগোষ্ঠীও আছে। সেসব গোষ্ঠীর পেইড ঔপন্যাসিক, ঐতিহাসিক আছে যারা থান ইটের সাইজের ফিকশন-ননফিকশন ইতিহাসের বই লেখে, যেগুলো বইমেলা ছাড়া বাজারে বিশেষ পাওয়া যায় না কিন্তু রেফারেন্স হিসেবে হরহামেশা উল্লেখিত হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
এই পোস্টের দায়ে অদিতি ফাল্গুনী আমাকে বোকা বলেছেন, অশিক্ষিত বলেছেন, বিদ্যার দৌড় যে সামান্যও নাই সেকথাও বলেছেন।
তিনি বলেছেন এই গল্প আসলে গল্প না, ২০১৫ সালে ইত্তেফাকের ঈদসংখ্যায় প্রকাশিত একটা উপন্যাসের অংশ বা ধারাবাহিক কিছু একটা। এই গল্প পড়ে আসল মর্তবা বুঝা যাবে না, বুঝতে হলে অপেক্ষা করতে হবে। ২০১৫ সালের ঈদসংখ্যায় যে উপন্যাস প্রকাশিত, সেই উপন্যাস কোনো এক কালে পুস্তক আকারে বাজারে আসবে, সে বেলা সেটা পড়ে আমরা জানতে পারবো উনি আসলে জঙ্গীদেরকে জনাকয়েক আততায়ী বলেন নাই আসলে!
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
প্রথম আলোতে প্রকাশিত গল্পের আগে বা পরে কি এই ধরনের কোন ব্যাখ্যা দেয়া আছে? যদি দেয়া থাকে তাহলে বইয়ের জন্য অপেক্ষার দোহাই গ্রহনযোগ্য। যদি না দেয়া থাকে তাহলে পাঠকের কোন ঠ্যাকা যে প্রকাশিত লেখার পূর্বাপর খোঁজ নেবেন? সেক্ষেত্রে প্রকাশিত অংশটিকেই কি সম্পূর্ণ বলে বিবেচনা করা হবে না?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
না, সেরকম কোনো ফুটনোট দেওয়া নেই। কিন্তু চালাক বা বিদগ্ধ পাঠক হলে নিশ্চয়ই আমি বুঝে নিতে পারতাম, বোকা বলে পারলাম না আরকি।
এরপর তিনি বিশাল বিশাল মন্তব্যে তাঁর ব্যক্তিগত নানাবিধ ইতিহাস হাজির করে দেখিয়েছেন যে তিনি ৭১ এর চেতনা কতো ভালোভাবে ধারণ করেন। ব্লগারদের পক্ষে থাকায় তাঁকে কতো হুমকি সহ্য করতে হয়েছে। ইত্যাদি ইত্যাদি নানাবিধ ব্যক্তিগত করচা। যদিও তারপর আর তাকে ফেসবুকেই খুঁজে পাচ্ছি না।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
বিদ্যার পিটি উশা অদিতি খালামনির মত আরও দুই চারটা ভাংতি সাহিত্যিকরে দিয়া শ্রদ্ধেয় মতিউর রহমান সাহিত্যের দুধেও দুই চাইর ফোটা চোনা মিশান। কিন্তু পাবলিক লৌড়ানি দিলে ফেসবুক বুজাইতে হয় বিদ্যার পিটি উশাদের।
কয়দিন আগে দেখলাম ডুব সিনেমার জন্য শ্রদ্ধেয় আনিসুল হকরে শ্রদ্ধেয় হুমায়ুন আহমেদের ফেনরা লৌড়ানি দিতেছেন। আনিসুল ডুবের হকারি করতেছিলেন, লৌড়ানি খায়া ইজ্জত ও খ্যাতি বাচাইতে তিনি ফেসবুক বুজাইয়া কই জানি গেছেন। বইমেলার আগে আগে আবার নিজের বইয়ের হকারি করতে ফিরবেন মনে হয়। বিদ্যার পিটি উশা অদিতি খালামনিও হয়ত তখন ফিরবেন।
অদিতি ফাল্গুনী একটা ফালতু। ঐ উন্মাদিনী কাল লেখার পরে পাব্লিকের সোদনে আগের ফেসবুক বন্ধ করে নতুন ফেসবুল বানাইছে। সেই লেখা নাকি সাজ্জাদ শরীফ তারে দিয়া লেখায়া নিছে। আপনারে বোকা আর অশিক্ষিত বলছে? হ্যাঁ, উনি খুবই (কু)শিক্ষিত আর অতি চালাক। ফাউল একটা।
অদিতি ফাল্গুনীর এই জাতীয় সাহিত্যচর্চাগুলো এক ধরণের ফরমায়েশী কাজ বলে মনে হয়। অর্ডার নিলাম, মাল সাপ্লাই দিলাম। শুধু তিনি না, সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে এরকম সাহিত্য সরবরাহের কাজে আছে আরো অনেকেই। লেনদেনের ব্যাপার থাকাও বিচিত্র না।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
প্রাচীন আমলে এক কোচিং সেন্টারে নানা দামের নোট বিক্রি হতো। যেমন, দুই টাকা দামের বিলাসী/হৈমন্তী/মজিদ/আবদুল্লাহ্র চরিত্র, আবার পাঁচ টাকা দামের বিলাসী/হৈমন্তী/মজিদ/আবদুল্লাহ্র চরিত্র। পরীক্ষায় দুই টাকা দামের চরিত্র লিখলে দশে সাড়ে তিন পাওয়া যেতো, আর পাঁচ টাকা দামের চরিত্র লিখলে সাড়ে পাঁচ/ছয় পাওয়া যেতো।
সব আমলেই বাজারে কোন না কোন চরিত্র বিকায় - কোনটা দুই টাকা, কোনটা পাঁচ টাকা।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আপনারা না পাওয়ার বেদনা থেকে এইসব লিখেন। সুযোগ দিলে আপনারাও পান্ডুলিপি নিয়ে প্রথম আলোতে গিয়ে হাত কচলাবেন। কয়েকটা বছর পর যখন আপনাদের কচি সাহিত্যিক বন্ধুরা বয়সে বাড়বে, তখন দেখবেন তারা আরও বড় অদিতি ফালগুনী হয়ে দুই চারটা এওয়ার্ডের মুলার পিছনে ধোপার গাধার মত দৌড়াবে। তখন ব্লগের এইসব লেখা পড়ে নিজেরাই লজ্জা পাবেন।
কী আশ্চর্য! প্রথম আলোতে গিয়ে হাত কচলাতে হবে কেন? লিখতে ইচ্ছে করে বলেই না লেখা! প্রথম আলোতে ছাপতে হবে এই ভেবে কেউ লেখে নাকি?
--মোখলেস হোসেন।
য়্যাকদম ঠিক বলেছেন! এই যে 'নজরুল ইসলাম' লোকটা য়্যাত্তো বছর ধরে ব্লগে য়্যাত্তো য়্যাত্তো লেখা লিখে যাচ্ছেন; অথচ তাকে কেউ 'কাজী নজরুল ইসলাম' বলছেন না; মতিউর রহমান - সাজ্জাদ শরীফ - মাহফুজ আনাম তাকে দাওয়াত দিচ্ছেন না এগুলো নিয়ে তার রাতের ঘুম হারাম হয়ে যাচ্ছে, চুলদাড়ি পেকে সাদা হয়ে যাচ্ছে। এইসব লেখা তারই প্রতিক্রিয়া।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
যথার্থ।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
এই লেখিকাকে আমার মানসিক ভাবে ইমব্যালান্সড মনে হয়েছে। উনি যেসব আবর্জনা উৎপাদন করেন সেগুলো সেসব ইম্ব্যালান্সের প্রতিচ্ছবি।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
নতুন মন্তব্য করুন