সম্পূর্ণ সেনানিবাসটাই আসলে তখন অনেকটা অন্ধকারে। একদিকে কিছু অফিসার শুধু মিটিং করছেন, কখনো সেনানিবাসে কখনো বঙ্গভবনে। অফিসাররা আসছেন যাচ্ছেন, নিজেদের মধ্যে কী কী সব আলাপ আলোচনা হচ্ছে। সাধারণ সৈনিকরা এমনকি অনেক জুনিয়র অফিসারও তখন এসবের কিছুই জানেন না, আছেন ভীষণ অন্ধকারে। কী ঘটছে বা কী ঘটতে যাচ্ছে কিছুই কারো জানা নেই। জিয়াউর রহমান গৃহবন্দী, সেনাবাহিনী চলছে খালেদ মোশাররফের নির্দেশে। অথবা ঠিক খালেদ মোশাররফের নির্দেশেও না, শাফায়াত জামিলের নির্দেশে। যদিও ততোক্ষণে খালেদ মোশাররফকে সেনাপ্রধান হিসেবে ঘোষণা করা হয়ে গেছে, কিন্তু সাধারণ সৈনিকেরা সবাই তখনো কী এক দ্বিধায়।
পুরো দেশটাও তখন আসলে ঠিক সেনানিবাসের মতোই অন্ধকারে, দ্বিধায়। ৩ তারিখের পর থেকে রেডিও টিভি নির্বাক। পত্রিকা পড়েও বোঝা যাচ্ছে না তেমন কিছু। দেশে কী হচ্ছে কেউ জানে না, জানতে পারছে না। তবে ভীষণ উলোট পালোট কিছু একটা যে ঘটছে তা সবাই আন্দাজ করে নিয়েছে, আর তাই নিয়ে সারাদেশে গুজগুজ ফিসফিস, নানাবিধ তৎপরতা চলছে। সমস্তটা দেশ এই নিরবতায় ভীষণ উত্কণ্ঠিত। ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর থেকেই দেশের সাধারণ মানুষ আসলে রাষ্ট্রের কেন্দ্রের খোঁজ তেমন একটা জানতে পারছিলো না, ছিলো শঙ্কায়। সেই অজানার শূন্যতা আর শঙ্কা ঘিরে জন্ম নিচ্ছিলো অসংখ্য উৎকণ্ঠা, তৈরি হচ্ছিলো নানান গুঞ্জন। গোটা দেশ, দেশের মানুষ ও সেনাবাহিনীর বেশিরভাগকে এরকম একটা অন্ধকারে রেখে খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে কয়েকজন অফিসার তখন বঙ্গভবনে বসে মিটিং করছেন।
নায়েব সুবেদারের বাড়ির পাশেই ইরি ক্ষেত, তার মাঝ দিয়ে এক চিলতে রাস্তা। সেই রাস্তা ধরে নায়েব সুবেদার এগিয়ে চলছেন সিওডি (সেন্ট্রাল অর্ডন্যান্স ডিপো)র দিকে। কিছুটা পথ পায়ে হাঁটার পর একটা রিকশা পাওয়া গেলো, কিন্তু নায়েব সুবেদারের পকেটে রিকশা ভাড়া দেওয়ার মতো কোনো টাকা নেই। টাকার অভাব শুধু যে তাঁর পকেটে ব্যাপারটা তা না, ভীষণ অভাব তার জীবনেও। টাকার অভাবেই ঘরে বাজার নেই, এইতো একটু আগেই খেয়ে বের হয়েছেন স্ত্রীর দেওয়া মোটা রুটি, এর বেশি আর সাধ্য নাই। যাহোক, এদিকে তার ভীষণ তাড়া, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই পৌঁছাতে হবে সিওডি’তে। নইলে এতোদিনের প্ল্যান পরিকল্পনা সব মাঠে মারা যাবে। তাই রিকশাওয়ালাকে অনুরোধ করলেন বিনা ভাড়াতেই একটু এগিয়ে দিতে। হয়তো ইউনিফর্মড সৈনিককে দেখে ভয়ে বা পয়সা নেই শুনে দয়া করেই রিকশাওয়ালা রাজী হলেন।
অন্ধকার স্টাফ রোড দিয়ে রিকশা এগিয়ে চলে। এখানেই ৫৬ নম্বর বাড়িটিতে থাকেন খালেদ মোশাররফ। সে বাড়িতেও তখন ভীষণ অন্ধকার। ৩ তারিখের অভ্যুত্থানের আগেই খালেদ নিজের পরিবারকে সরিয়ে নিয়েছিলেন গুলশানে নিজের শ্বশুড়বাড়িতে। তারপর থেকে স্ত্রী সন্তানদের সঙ্গে একেবারেই কোনো যোগাযোগ ছিলো না খালেদের, সেনাপ্রধান হওয়ার খবরও পরিবারকে জানতে হয়েছিলো পত্রিকায় ছবি দেখে। কী হচ্ছে না হচ্ছে জানতে ৬ নভেম্বর সকালে উদ্বিগ্ন স্ত্রী তাই ক্যান্টনমেন্টের বাড়িতে হাজির হন। মাত্র কয়েক ঘন্টা আগেই এই বাড়িতে ছিলো উৎসবের আনন্দ। খালেদ যখন পরম নিশ্চিন্তে হায়দারের সঙ্গে বসে ডিনার করছিলেন এখানে, তখনও তিনি আন্দাজ করতে পারেননি গোটা সেনানিবাসে কী হচ্ছে, তলে তলে তল্লাটে কী রটছে, কী ঘটছে। ডিনার শেষে তাঁরা আবার চলে যান বঙ্গভবনে, শেষ প্রস্থান! আর খালেদের স্ত্রী ফিরে যান গুলশানে মায়ের বাড়িতে। সেই থেকে এবাড়িতেও নেমে এসেছে অন্ধকার। সেই অন্ধকার বাড়ি পার হয়ে যায় নায়েব সুবেদারের রিকশা।
নিজের বাড়িটির মতোই অথবা এই সেনানিবাসটির মতোই অথবা এই গোটা দেশটার মতোই খালেদ মোশাররফ নিজেও তখন ভীষণ অন্ধকারে। মাত্র ক’দিন আগেই অভ্যুত্থান করে সেনাপ্রধান জিয়াকে বন্দী করেছেন, সফল বিপ্লবের সুফলে নিজে এখন দেশের সেনাপ্রধান, প্রেসিডেন্ট তখন বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম। যদিও এই মুহূর্তে বঙ্গভবনে মিটিং চলছে রাষ্ট্রপতি সায়েম নাকি সেনাপ্রধান খালেদ, কে হবেন প্রধান সামরিক কর্মকর্তা, তবুও দেশের সর্বময় ক্ষমতা বস্তুত এখন খালেদের হাতেই। বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় ৪ নেতার হত্যাকারী খন্দকার মোশতাক ফিরে গেছে আগামসী লেনের বাড়িতে। তাকে ঘিরে থাকা ফারুক, রশীদ, ডালিমের শক্তিবলয় ততোদিনে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। ভয়ঙ্কর ট্যাঙ্কগুলোও পোষ মেনে ফিরে এসেছে সেনানিবাসে। খালেদের সামনে তখন আর কেউ নেই ক্ষমতাধর। ক্ষমতার সবগুলো আলো যদিও এখন খালেদকে ঘিরে, তবু তিনি ঘোর অন্ধকারেই আছেন। জানতেই পারছেন না এইমাত্র তার বাড়িটি পাশ কাটিয়ে চলে গেলো সেনাবাহিনীর যে নায়েব সুবেদার মাহবুবর রহমান, তিনিই আর মাত্র একটু পরেই ঘটাবেন বাংলাদেশের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ এক সামরিক অভ্যুত্থান। যা আমূল বদলে দেবে বাংলাদেশের রাজনীতি ও সামরিক ইতিহাস। থেমে যাবে খালেদ মোশাররফের জীবনের চাকাও!
খালেদ মোশাররফের বাড়ি পার হয়ে রিকশা পৌঁছলো সিওডির সিক্রেট কমান্ড পোস্টে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ফার্স্ট ইঞ্জিনিয়ার্স এর ১২০০ সৈন্য এখানে উপস্থিত থাকার কথা জিরো আওয়ারে। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে আধাঘন্টা পরেও সেখানে কারো কোনো খবর নেই। এসময় হাবিলদার বারেক এসে জানালো সর্বনাশ হয়ে গেছে। ২২ বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যরা আগেই আঁচ করতে পেরে ফার্স্ট ইঞ্জিনিয়ারের সব সৈন্যকে অস্ত্রমুক্ত করে বন্দী করে ফেলেছে! এই অসহায় পরিস্থিতিতে যখন করণীয় ভেবে পাওয়া যাচ্ছিলো না, তখন নায়েক আব্দুস ছামাদ এসে খবর দিলো বন্দী করার সময় ১৭জন সৈনিক অস্ত্র নিয়ে সিওডির পাশের জঙ্গলে আত্মগোপন করতে পেরেছে। জানা গেলো ফার্স্ট ইঞ্জিনিয়ারের ১২০০ সৈনিক তো বটেই, ফায়ার ওপেন করতে পারলে ২২ বেঙ্গলের সাধারণ সৈনিকরাও অস্ত্রগার ভেঙ্গে যোগ দেবে এই বিদ্রোহে। কারন তারাও তো সাধারণ সিপাহীই, বঞ্চিত নিপীড়িত সাধারণ সিপাহী।
নায়েব সুবেদার মাহবুব গেলেন জঙ্গলে পলাতক ১৭ সৈনিকের কাছে। তাদেরকে দুভাগে ভাগ করে নির্দেশ দিলেন দুই পাশ দিয়ে ক্রল করে সিওডি মেইন গেটের পাশের জঙ্গলে অপেক্ষা করতে। আর তিনি নিজে একা এগিয়ে গেলেন সিওডি মেইন গেটের দিকে। সেখানে পাহারারত সৈন্য এসে নায়েব সুবেদার মাহবুবকে স্যালুট দিতেই তিনি রাইফেল কেড়ে নিয়ে গার্ডকে হ্যান্ডসআপ করালেন। আর সঙ্গে সঙ্গে দুপাশে জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা সৈন্যরা খোলা গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে কোয়ার্টার গার্ডের ৫০ সৈন্যকে আত্মসমর্পনে বাধ্য করলেন। অস্ত্রাগার দখল করে মাহবুবের নেতৃত্বে যখন প্রথম ফায়ার ওপেন করে ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বরের বিপ্লবের সূচনা হলো, তখন দেখা গেলো আত্মসমর্পনকারী সৈনিকেরাও বিদ্রোহীদের দলেই যোগ দিয়েছে!
শুরু হলো ৭ নভেম্বরের বিপ্লব। সিপাহী বিপ্লব। বহু আগেই এরকম একটি বিপ্লবের স্বপ্ন দেখেছিলেন নায়েব সুবেদার মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে কিছু সাধারণ সৈনিক। সেই স্বপ্ন থেকেই ১৯৭৩ সালের ১ জানুয়ারী ঢাকা সেনানিবাসের বালুঘাটে হাবিলদার বারীর ৫০৪ নম্বর বাড়িতে গঠিত হয় ‘বাংলাদেশ রেভুলোশনারি আর্মি ও সুইসাইড কমান্ডো ফোর্স‘। এই দলটিরই দীর্ঘদিনের চেষ্টায় এই সিপাহী বিপ্লব।
*ছবি: নায়েব সুবেদার মাহবুবর রহমান লিখিত 'সৈনিকের হাতে কলম' বই থেকে
*কৃতজ্ঞতা: শওকত হোসেন মাসুম
মন্তব্য
৭৩ সালে এবং ৭৫ সালে এই গ্রুপের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে কী কী পার্থক্য ছিল?
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
ইন্টারেস্টিং ব্যাপার বলি, ৭ নভেম্বর বিপ্লবের মূল কৃতিত্ব কর্ণেল তাহের আর জাসদের। জাসদের মূল দাবী বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র আর তাহেরের মূল দাবী উৎপাদনমুখী সেনাবাহিনী। কিন্তু ৭ নভেম্বরে যখন বিপ্লব হইলো আদতে, সেই ১২ দফা দাবীতে এসব কিছুই নাই। মূলত সেনাবাহিনীতে সাধারণ সৈনিকদের দাবী দাওয়াই মূখ্য। বেহাত বিপ্লব?
এগুলো নিয়ে কিছু ইন্টারেস্টিং পর্যবেক্ষণ আছে। পরবর্তী পর্বগুলোতে আসবে আশাকরি এগুলো।
তথ্য যেসব বই থেকে নিয়েছি, সেগুলোর একটা তালিকা থাকবে শেষে। কৃতজ্ঞতার লিস্টিও।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
বিপ্লব কখনোই হাতে ছিল না কারও। ফৌজি মাথা থেকে রাজনৈতিক কর্মকান্ড চালানো যাবে এই হঠকারী ভুল পূর্বধারণার উপর দাঁড়িয়ে দেশের কল্যাণ হবার কথা না। সেটা হয়ও নাই।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
দুর্দান্ত একটা ধারাবাহিক হতে চলেছে। নতুন তথ্য/বিশ্লেষণ বের হয়ে আসবে মনে হচ্ছে।
- ৫ তারিখে পদত্যাগ করে নিজের বাসভবনে ফিরেন রাত সারে এগারোটার দিকে। কিন্তু তাকে কি ‘গৃহবন্দী’ করা হয়েছিল?
দুঃখিত, ভুলটা কিভাবে যেন রয়ে গেছিলো, ঠিক করে দিয়েছি। অনেক ধন্যবাদ। গৃহবন্দী তো ছিলোই না উল্টো তাহেরের আগেই রেডিও স্টেশনে গিয়ে হাজির নতুন স্বপ্নে বিভোর হয়ে!
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
জুইত কইরা বসলাম। এই পর্ব ব্যক্তিগত ব্লগে নিয়া আরেক কিস্তি দিবেন নাকি?
..................................................................
#Banshibir.
আপনার কথাটা প্রথমে ধর্তারি নাই। এইবারে পার্লাম। আর, তাই পুরা সমর্থন জানাইলাম।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
কবি বলেছেন ধৈয্যনং অধ্যয়নং তপ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
পোস্টাইলাম তো হপায়... কয়ডা দিন যাইতে দেন। আমি কি আপনের মতো নাকি? পরের পর্ব অবশ্যই আসিবে
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আমার জন্য একেবারেই অচেনা পাঠ।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
যতো পড়ি, এই সময়টাকে ততোই অচেনা মনে হয়। মানুষগুলোকেও...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
– ‘প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক’ হবে।
– ফিরে গেছে না, তার গন্তব্য নাজিমউদ্দিন রোডে না পাঠিয়ে তাকে সসম্মানে আগামসিহ্ লেনে পৌঁছানোর সুযোগ দেয়া হয়েছিল।
– পালায়নি, খালেদ মোশার্রফ এবং অন্যান্যরা তাদেরকে নিরাপদে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।
– এটা ঠিক বলেছেন। পুরোটা সময় তিনি ঘোর অন্ধকারে ছিলেন, এবং যা করা উচিত ছিল তা করেননি, শেষে বেঘোরে খুন হন।
জাসদ গ্রুপ, জিয়ার গ্রুপ, মাহবুবের গ্রুপ, মোশতাকের গ্রুপ সবাই বলে ‘সিপাহী জনতার বিপ্লব’। অথচ যা কিছু ঘটেছে সেগুলোকে সামরিক অভ্যুত্থান ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। ঐ রাতে কোন গ্রুপের কর্মকাণ্ডে সিভিলিয়ানদের অংশগ্রহন ছিল না। কোন গ্রুপের দাবিনামায় সাধারণ মানুষের জন্য কোন চাওয়াও ছিল না। সব সামরিক শাসক রাজনৈতিক সরকারকে উৎখাত করে যেমন সাধারণ জনগণের অনুরোধের দোহাই দেয়, এখানেও তেমন সশস্ত্র সামরিক গ্রুপগুলো সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে তাতে ‘জনতা’র রঙ লাগিয়েছে। জনবিচ্ছিন্ন তথাকথিত বিপ্লব তাই শেষে একজন সামরিক একনায়ককে ক্ষমতায় বসিয়েছে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
বিপ্লবে জনতার অংশগ্রহণও ছিল! বাংলাদেশের আপামর জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে দশ-বার জন পথচারীকে রাস্তায় শো-ডাউনরত ট্যাঙ্কের উপরে চড়ে দাঁত কেলিয়ে ছবি তুলতে দেখা গেছে।
দাঁত কেলানো লোকজনকে তৎক্ষনাত 'বিপ্লব' সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে পরিষ্কার হয়ে যেতো তারা এই সম্পর্কে আদৌ কিছু জানেন কিনা, নাকি 'আলু পোড়া' খেতে এসেছেন, নাকি 'সাপের খেলা' দেখতে এসেছেন। ঢাকা সেনানিবাস ছাড়া আর কোন সেনানিবাসের সৈনিকেরা বিপ্লবে অংশ নিয়েছিল? চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, বগুড়া, সাভারের মতো বড় বড় সেনানিবাসে কি কিছু ঘটেছিল? বিপ্লব যদি জনতারই হয় তাহলে সারা দেশে তার বহিঃপ্রকাশ কই? দুপুর হতে না হতে তো সব নিয়ন্ত্রণ জেনারেল জিয়ার হাতে চলে গিয়েছিল, তাহলে এই তথাকথিত 'জনতা' কি 'জিয়ার সৈনিক'?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
উহু, আলুপোড়া বা সাপের খেলা দেখতে আসে নাই। ‘জনতা‘র অংশগ্রহণের ব্যাপারটা খুবই ইন্টারেস্টিং। সেখানে চলছিলো ভিন্ন খেলা, ভিন্ন রাজনীতি। ৭ নভেম্বর আলোচনায় এই প্রসঙ্গটা আগে কখনো আসে নাই সম্ভবত।
বিস্তারিত আসিতেছে
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
১২ দফা দাবীতে সাধারণ মানুষের কোনো দাবী তো ছিলোই না এমনকি জাসদের বা তাহেরের কোনো দাবীও ছিলো না। আর জনতা বলতে পরদিন যা মাঠে নামছে সেটা আসলে সম্পূর্ণই পরিকল্পিত একটা গোপন রাজনৈতিক সংগঠনের আয়োজনে!
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
১২-দফা দাবিনামা'র ১০ নং দাবি হচ্ছে, "যে সমস্ত সামরিক অফিসার ও জোয়ানদের বিদেশে পাঠানো হয়েছে তাদের দেশে ফেরত আনার ব্যবস্থা করতে হবে"। এখানে কাদের কথা বলা হচ্ছে সেটা বোধগম্য। দাবিতে কিন্তু তাদেরকে ফেরত এনে বিচার করার কথা বলা হয়নি।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
পরের পর্বের অপেক্ষায় নাজির।
আসিতেছে
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আমরা যারা আশির দশকের শেষের দিকে বা তারপরে জন্ম নিয়েছি তারা ৭১ এর পরের সময় নিয়ে নিজেদের আশপাশের লোকজনের কাছ থেকে শুধু রুপকথার গল্পই শুনেছি। যার মুল সুরটা এরকম যে ৭১ এর পর দেশ একদল জালিমের পাল্লায় পড়েছিল। মুজিবকে পরিবারসহ মেরে ফেলাটা ঠিক ছিলনা কিন্তু এছাড়া অন্যকোন উপায় ছিলনা। মুনতাসীর মামুনের 'বাংলাদেশি জেনারেলদের মন' পড়ার পর ততকালীন সেনাবাহিনীর উচ্চপদের কর্মরত অফিসারদের মানসিকতার একটা ধারনা পেলাম। কিন্তু সিপাহি বিপ্লব এর পেছনে সিপাহিদের ভূমিকার মূল্যায়ন চোখে পরেনি। অধীর আগ্রহে পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
-আতোকেন
ধন্যবাদ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
- এই সময়ে এবং তার কিছু পরে অর্ডিন্যান্স ডিপোতে ও ধারেকাছে প্রায় ১০ জন অফিসারকে হত্যা করা হয়। নায়েব সুবেদার মাহবুবর রহমানের লেখায় কি এই ঘটনার কথা এসেছে?
"সিপাহী সিপাহী ভাই ভাই, সুবেদারের উপরে অফিসার নাই", "সিপাহী সিপাহী ভাই ভাই, অফিসারদের রক্ত চাই" - এই শ্লোগানগুলো কোন গ্রুপ দিয়েছিল? নায়েব সুবেদার মাহবুবর রহমানের লেখায় কি এর উল্লেখ আছে?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
মাহবুব সাহেবরা বিপ্লব এসময়ে শুরু করবেন সে খবর অন্যান্য পার্টিও জানতো সম্ভবত। যে কারনে প্ল্যান করা বিপ্লব পাল্টে যায়, তাদের লোকজন যাওয়ার আগেই অন্যপার্টি গিয়ে জিয়াকে উদ্ধার করে ফেলে ‘গৃহবন্দীত্ব‘ থেকে। বিপ্লব হাতছাড়া হতে সময় নেয়নি। অফিসার কিলিং হয় পরদিন থেকে। ততোক্ষণে বিপ্লব সম্পূর্ণ বেহাত। অফিসারদের রক্তচাই স্লোগানও তখন থেকে শুরু।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
অফিসারদের রক্ত চাওয়ার শ্লোগান কিছুটা সময় পর থেকে হতে পারে, তবে অফিসার হত্যা শুরু হয়েছিল 'বিপ্লব' শুরুর প্রথম মুহূর্ত থেকে। অর্ডিন্যান্স ডিপো'র দায়িত্বে থাকা অফিসারদের প্রথমে হত্যা করা হয়।
লক্ষ করবেন, এখনো একটা নিষ্ঠুর মিথ্যাচার প্রচলিত আছে। 'বিপ্লব'-এর সোল এজেন্সী'র দাবিদার একটা গ্রুপ বলে, কোন রক্তপাত হয়নি। এই গ্রুপ অফিসার হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে কোন দায় স্বীকার করে না, অদৃশ্য প্রতিপক্ষকে দায়ী করে। তাদের প্রতিপক্ষ হিসাবে পরিচিত গ্রুপ (তারাও নিজেদেরকে 'বিপ্লব'-এর সোল এজেন্ট হিসাবে দাবি করে) বলে, তারা নিজেরা কোন হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটায়নি, বরং প্রথমোক্ত গ্রুপটি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ফলাফল, এই বিপুল হত্যাযজ্ঞের কোন বিচার হয়নি। আমরা বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের হবার কথা বলি, কিন্তু স্বাধীন দেশে 'বিপ্লব'-এর নামে সামরিক কর্মকর্তা ও সাধারণ নাগরিকদের এই নৃশংস হত্যার বিচার দাবি করি না।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
বিপ্লব একেবারে প্রথম প্রহর থেকেই বেহাত হয়ে গেছিলো। তিনটা গ্রুপ সক্রিয় ছিলো।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
এখানে তারিখটা ৬ তারিখ হবে মনে হয়। বিপ্লব শুরুর আগের রাত।
বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে জটিল পর্বটি নিয়ে কঠিন কাজটিতে হাত দেবার সাধুবাদ জানাই। পরের পর্বের অপেক্ষায়।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
অনেক ধন্যবাদ নীড়দা
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
প্রশ্নটা হয়ত অসংজ্ঞত, কিন্তু ১৯৭৫ এর বিপ্লবের জন্য ১৯৭৩ এ কেন একটা গ্রুপ তৈরী হল? মানে বঙ্গবন্ধুকে তো ৭৫ এ হত্যা করা হয়। তাহলে স্বাধীনতার পরই কি একটা বিপ্লবের জন্য দল তৈরী হচ্ছিল?
-বৃদ্ধ কিশোর
আশাকরি উত্তরগুলো পরবর্তী পর্বগুলোতে এবং প্রকাশিতব্য বইগুলোতে পাবেন। ধন্যবাদ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
খুব আগ্রহ নিয়ে পরের পর্বটার জন্য অেপেক্ষা করছি।
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
নতুন মন্তব্য করুন