রাষ্ট্র তবে ঘোষণা দিয়ে অস্বীকার করুক

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি
লিখেছেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর (তারিখ: মঙ্গল, ৩০/১০/২০০৭ - ১২:৫৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সারাবিশ্বে ইতিহাস হয় বিজয়ীদের ইতিহাস... আর একমাত্র এই বঙ্গদেশে সত্য ইতিহাস উদ্ধারে বিজয়ীদেরকেই আবারো যুদ্ধে নামতে হয়। হা খোদা।

গোলাম আজম, নিজামী আর মুজাহিদদের মুক্তিযুদ্ধকালীন কীর্তি নিয়ে নানাবিধ প্রমাণ দাখিলের চেষ্টা হচ্ছে কিছুদিন ধরে। যতটুকু পাওয়া গেছে তা নিয়েই এদেরকে ফাঁসিতে ঝোলানো যায় নিঃসন্দেহে। কিন্তু দেশের নানাবিধ আইন প্রয়োগ সংস্থা... যারা পান থেকে চুন খসলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্মানিত শিক্ষকদেরকেও গ্রেফতার করে জেলে ঢোকাতে ছাড়েন না... তারা আজ নিশ্চুপ। দেশের বিরুদ্ধে এত বড় অপরাধী মিথ্যাও তারা হজম করে বসে থাকেন।

একটা ব্যাপার খুব স্পষ্টভাবে চোখে লাগে। মুজাহীদের বক্তব্য নিয়ে যখন সারাদেশ তোলপাড় তখন রাষ্ট্র বা সরকার বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউ একটা টু শব্দও করেন না। অথচ আরিফ যখন একটা নিরীহ কার্টুন এঁকে ফেলেন... তখন তত্ত্বাধায়ক সরকারের উপদেষ্টাদের কর্মতৎপরতা দেখার মতো হয়... মতিউর রহমানকে পারলে কাঁধে করে বায়তুল মোকাররমে নিয়ে যান তওবা করাতে। আর রাষ্ট্রীয় একটা প্রতিষ্ঠানে বসে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এত বড় কথা বলার পরেও তারা চুপ থাকেন।

মুজাহীদের বক্তব্যের পরে সবাই সরব হলেও দুটো পক্ষ চুপ করে গেছে... একপক্ষ সরকার... আরেকপক্ষ জামাতে ইসলামী। এই মিলটাও খুব চোখে লাগে।

রাষ্ট্র বা সরকার যদি এই বক্তব্য শুনেও চুপ করে থাকে তাহলে আমরা ধরে নেবো যে মুজাহীদের এই কথাকে তারা মেনে নিয়েছেন। আর যদি মুজাহীদের এই বক্তব্য তারা মেনে নিয়ে থাকেন তাহলে রাষ্ট্রকে ঘোষনা দিয়ে দেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ সবকিছুকে অস্বীকার করতে হবে। কারন এ সবকিছুই একই সুতোয় গাঁথা। একটাকে অস্বীকার করে আরেকটাকে রাখা যাবেনা।
হয় রাষ্ট্র ঘোষনা দিক যে এই দেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ সব মিথ্যে অথবা ঘোষনা দিক যে দেশে যুদ্ধাপরাধী ছিলো, আছে। তাদের বিচার হওয়া প্রয়োজন। মুজাহীদ হান্নানদেরকে গ্রেফতার করুক রাষ্ট্রদ্রোহীতার অপরাধে।

আর যদি তা না করে তাহলে আমি নিশ্চিত... এই জাতি ঠিকই তার সঠিক ইতিহাস খুঁজে নেবে। যে নতুন জোয়ার তৈরি হয়েছে... তা খুব সহজে থামানো যাবেনা। সত্য ইতিহাস বের করে... যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করে তবেই এই জাতি ঘরে ফিরবে। অবশ্যই। জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে... সবাইকে একসাথে জাগতে হবে... সম্ভাব্য সবরকমভাবে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। অনলাইন পিটিশন করে... সংবাদপত্রে লেখালেখি করে... যে যেভাবে পারে। আমাদের যার যা আছে তাই নিয়ে আবার ঝাঁপিয়ে পরতে হবে এদের বিরুদ্ধে... জাতির পতাকা যে আবার খাঁমচে ধরেছে সেই পুরনো শকুন।

ছবি ক্যাপশন :
ইতালিয়ান সাংবাদিক ওরিয়ানা ফাল্লাচি বঙ্গবন্ধুকে খুব করে চেপে ধরেছিলেন ১৮ ডিসেম্বরে ঢাকা ষ্টেডিয়ামে কাদের সিদ্দীকি কর্তৃক রাজাকার নিধনকে তিনি অমানবিক বা বর্বর ভাবেন কি না। আমারও একটা সময় মনে হতো রাজাকারদেরকে এভাবে বেয়নেট দিয়ে না খুঁচিয়ে সিদ্দীকি সাহেব তাদেরকে আইনের হাতে তুলে দিলেই পারতেন। কিন্তু এখন মনে হয় তিনি কেন সেদিনই সবগুলো রাজাকার আল বদরকে এইভাবে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মেরে ফেলেননি। অমানুষের সাথে আবার কিসের মানবিকতা ?


মন্তব্য

কনফুসিয়াস এর ছবি

সরকারের এই চুপ করে যাওয়াটা আসলেই খুব রহস্যজনক। কয়েকজন মোল্লা কয়েকটা প্রথম আলো পুড়িয়েই দেশে মোটামুটি জেহাদ করে ফেললো, আর এতগুলো মানুষ যে মুজাহিদদের বিচার চাইছে, তার কোন প্রতিক্রিয়া নেই!

-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

কোনো সরকারই কখনো চুপ কইরা থাকেনাই। বরাবরই যুদ্ধাপরাধীদেরকে শেল্টার দিছে... ঘাদানিক যখন গণ আদালত বসাইলো তখন গোলাম আজমরে প্রটেকশন দিছে। এখন চুপ কইরা আছে... কিন্তু এইটা যখনই আন্দোলনে রূপ নিবো... পাবলিক যখন রাস্তায় নামবো তখন ঠিকই কার্ফূ্ জারী কইরা আপনেরে আমারে ধইরা লইয়া যাইবো। জামাতীগো কিছু কইবোনা। পাবলিক রাস্তায় নামলেই সেইটা ষড়যন্ত্র হয়... আর মোল্লারা রাস্তায় নামলে সেইটা ষড়যন্ত্র হয়না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলন আর প্রথম আলো বিরোধী মোল্লাদের আন্দোলনের রেজাল্ট দেখলেই সরকারের চেহারা পরিষ্কার বোঝা যায়। তাই তো বলি... এত ভণিতা না কইরা সবকিছুরে অস্বীকারই করুক সরকার। তারপরে দেখি আমরা দুই পয়সার মানুষেরা কি করবার পারি।।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অমিত আহমেদ এর ছবি

ঠিক!


ভালবাসি, ভালবাসি, ভালবাসি তোমায়!
ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

সবজান্তা এর ছবি

আজকের পেপারে ( জনকন্ঠে ) আইন উপদেষ্টার বক্তব্য দেখলাম, যার একটা পার্ট এমন ...


...তিনি বলেন যুদ্ধাপরাধীদের বিষয় খুব জটিল।এটা করতে গেলে অনেক কিছু করতে হবে।এতদিন পর এগুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা করা ঠিক না.........

কি বুঝলেন ? ক্যামনে কি ? চোখ টিপি
----------------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

কথাটা ঠিক একদম সেইরকম শুনাইতেছেনা ? নিজামীরা যেরম বলে ?

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

কনফুসিয়াস এর ছবি

অবশ্যই। এইরকম করেই কথাগুলা বলে এরা সবসময়।
দাঁড়ান, একটা পুরোন পোস্ট তুলি।
-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

সবজান্তা এর ছবি

আমার কাছে একটা চমৎকার ইউটিউব ভিডিওর লিঙ্ক ছিল ৭১ এর উপর। শেয়ার করবো ভাবছিলাম, পোস্ট করতে যেয়ে দেখি, ডিলিট হয়ে গেছে।

যাই হোক, যে জন্য বলা, সেই ভিডিও তে নিজামীও এই রকমই একটা ডায়ালগ দিছিলো।

জয়তু উপদেষ্টা !

------------------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

হবে না হবে না,এইভাবে হবে না।জামাতি পলিটিক্স এর পাল্স-স্টাইল ধরতে না পারলে একদিন পুরা মন্ত্রীসভাই ওদের হবে।আমরা শুধু আফসোস করি আর হাত-পা ছুড়ি।ওরা ঘরে ঘরে গিয়ে মটিভেশন করে।মটিভেশনের চেইন ফলো করে।কথা বলে-বই পড়ায়।মনিটরিং করে।একসময় চিন্তাধারা পরিবর্তন করে ফেলে।আমরা কেবল বড় বড় কথা বলি।পাড়ায় পাড়ায় এখন আর লাইব্রেরী নাই।পাঠচক্র নাই।স্বতঃস্ফুর্ত উল্লাসে কতজন এখন সংস্কৃতি চর্চা করে?এইসবের হিসাব মিলাতে না পারলে কোনদিন কিছু হবে না।

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

হাসান মোরশেদ এর ছবি

এই মুল্যায়ন টা আমারো ।
শেকড়পর্যন্ত সংস্কৃতি বদলানো দরকার ।
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অমি রহমান পিয়াল এর ছবি

একটু সংশোধন করি। কাদের সিদ্দিকী সেদিন রাজাকার মারেন নাই। মারছেন ভ্রষ্ট চারজন মুক্তিযোদ্ধাকেই। এরা দুজন বিহারী মেয়েকে তুলে নিয়ে যাচ্ছিল। পল্ট্নে ধরার পর সবার সামনে স্টেডিয়ামে বেয়নেট দিয়ে খুচিয়ে আর একটি করে গুলি করে মারা হয় তাদের উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মতিতে। এইটা নিয়া জামাত একটা ভিন্ন প্রচারণা চালাইছে অনেকদিন


তোর জন্য আকাশ থেকে পেজা
এক টুকরো মেঘ এনেছি ভেজা
বৃষ্টি করে এক্ষুনি দে তুই
বৃষ্টি দিয়ে ছাদ বানিয়ে শুই


তোর জন্য আকাশ থেকে পেজা
এক টুকরো মেঘ এনেছি ভেজা
বৃষ্টি করে এক্ষুনি দে তুই
বৃষ্টি দিয়ে ছাদ বানিয়ে শুই

অমি রহমান পিয়াল এর ছবি

সময় 18 ডিসেম্বর, বিকেল সাড়ে চারটা। কাদের সিদ্দিকী বঙ্গবন্ধুর বাসভবন 32 নম্বরের বাড়ি থেকে শেখ জামাল সহ রওনা দিয়েছেন এখনকার জাতীয় বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের উদ্দেশ্যে। বিজয়ের পর সেদিনই প্রথম সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের বিশাল সমাবেশ।
তাদের গাড়ি যখন পল্টনে মোড় নিয়েছে এমন সময় বিপরীত দিক থেকে ছুটে আসা দুটো ডাটসান গাড়ির ভেতর থেকে কিশোরী কণ্ঠে আর্তচিৎকার শোনেন তারা। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি দুটো ঘিরে ফেলে মুক্তিবাহিনীর অন্য সদস্যরা। দুজন যুবক দৌড়ে পালায়, ধরা পড়ে চার জন। ভীত সন্তস্ত্র কিশোরী দু'জনের কাছে যা জানা গেল, তারা অবাঙ্গালী। এই ছয়জন তাদের বাসায় লুটপাট চালিয়ে, নগদ 50 হাজার টাকা ও দুবোনকে তুলে নিয়ে যাচ্ছিল, আর তাদের বৃদ্ধ মোটর মেকানিক পিতাকে বেধে রাখা হয়েছে গাড়ির পেছনের বনেটে। ঠিকই দেখা যায় সত্যি বলছে মেয়েরা।
এরপর দুস্কৃতিকারি 4 জনকে জনসমুদ্রে পরিণত হওয়া স্টেডিয়ামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সদ্য স্বাধীন দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের আচরণ কেমন হওয়া উচিত সে নিয়ে বক্তব্য রাখেন কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান। এবং মঞ্চে তোলা হয় মেয়ে দুটোকে। তাদের বক্তব্য শোনার পর, জনতার কাছে রায় চাওয়া হয়- তারা সমস্বরে দাবি জানান মৃতু্যদন্ডের। পরে চারজনকে একটি করে গুলি ও বেয়নেট চার্জ করে শাসতি কার্যকর করে মুক্তিবাহিনী। ছবিতে বেয়নেট হাতে চার্জে যাচেছন স্বয়ং বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকি।
ছবিটি সরাসরি ধারণ করে বেশ কিছু বিদেশি মিডিয়ার প্রতিনিধিরা ও যথারীতি তুমুল সমালোচনার ঝড় তোলে। এবং দেশের বাইরে থাকা স্বাধীনতা বিরোধিরা একে ব্যবহার করে বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণায়।
তথ্যসূত্র : স্বাধীনতা '71 (কাদের সিদ্দিকী)


তোর জন্য আকাশ থেকে পেজা
এক টুকরো মেঘ এনেছি ভেজা
বৃষ্টি করে এক্ষুনি দে তুই
বৃষ্টি দিয়ে ছাদ বানিয়ে শুই


তোর জন্য আকাশ থেকে পেজা
এক টুকরো মেঘ এনেছি ভেজা
বৃষ্টি করে এক্ষুনি দে তুই
বৃষ্টি দিয়ে ছাদ বানিয়ে শুই

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

থ্যাঙ্কস পিয়াল ভাই... ভুল ভাঙলো...
তবে আল বদর সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি একই... অপরিবর্তিত।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

কাদের সিদ্দিকী সম্পর্কে সম্মানের ব্যারোমিটার শূন্য থেকে অনেকটা লাফিয়ে উঠলো ...তবে রেফঃটা কাদের সিদ্দিকী বাদে অন্য কারো বরাতে পেলে শক্ত হত

"শান্তি-বাহিনীর" শান্তি-মূলক(?) কর্মকান্ডের যথাযোগ্য মূল্যায়ন হোক অতি-স্বত্তর

~

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

অমানুষের সাথে আবার কিসের মানবিকতা ?

অন্য কোন ইস্যু হইলে হয়তো দ্বিমত পোষণ করতাম, কিন্তু এই বিষয়ে পুরাই সহমত। জামাতীদের দৌড় দিন-কে-দিন যে হারে বাড়তেছে, তাতে কইরা সামনে যে কী হবে, ভাবতেই ভয় লাগে!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।