প্রথম পর্বঃ ঘরোয়া কথন
আমরা মিলেছিলাম এক ঘরোয়া আড্ডায়। বহু আগে থেকেই মনের টান আমাদের তাগাদা দিচ্ছিল, কিন্তু ব্যস্ততা ক্রুর জাল আমাদের করে রেখেছিল পরস্পর হতে বিচ্ছিন্ন। নিত্যদিনের জীবনযাপনের আটপৌরে চাহিদাগুলো আমাদের জীবনের অনেকটুকু মূল্যবান সময় নিপুন চুরি করে নিয়েছে। আমরা ব্যস্ত থেকেছি, অথচ কি করুণভাবে হয়ে পড়েছি জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন। সহস্র মানুষের ভীড়ে হেঁটেও হয়ে পড়েছি ভীষণ রকম একাকী। যে সময়টুকুতে জীবনের ওষ্ঠে ওষ্ঠ চেপে পান করা যেতো জীয়নরস, সে সময়টুকু অপব্যয় করেছি দৈনন্দিন খেরোর খাতার হিসেব মেলাতে। এইসব দীর্ঘশ্বাস আমাদের আলোচনার কফির কাপে তুফান তুলে। তুফান তুলতে তুলতে কী করে জানি না, সহসা সাগরের লঘুচাপের মতোই দিক পরিবর্তনের নেশায় প্রসংগান্তর ঘটায় জীবনানন্দে। জীবন ও আনন্দ বোধকরি চিরদিনের অধরা মাধবী। তাইতো আমাদের হাহাকারে, আমাদের অভিব্যক্তির পরতে পরতে, ফুটে উঠে সেই সওয়ারীর রেখাবলী; জীবনের ছুটন্ত ঘোড়া সে চেপে আছে ঠিকই, কিন্তু তার হাত না আছে লাগামে, পা না আছে রেকাবে। পরস্পরের থেকে বিচ্ছিন্ন জীবনের ক্লান্তি ও জনস্রোতের মধ্যে থেকেও এক ধরণের আত্মবিচ্ছিন্নতা আমাদের ঠেলে পাঠায় ‘আট বছর আগের একদিন’ এ। শীতল হতাশা আমাদের পড়িয়ে নেয়ঃ
জানি - তবু জানি
নারীর হৃদয় - প্রেম - শিশু - গৃহ - নয় সবখানি;
অর্থ নয়, কীর্তি নয়, স্বচ্ছলতা নয় -
আরো এক বিপন্ন বিস্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে
খেলা করে;
আমাদের ক্লান্ত করে;
ক্লান্ত - ক্লান্ত করে;
লাশকাটা ঘরে
সেই ক্লান্তি নাই;
তাই
লাশকাটা ঘরে
চিৎ হয়ে শুয়ে আছে টেবিলের 'পরে।
মনে পড়ে, আমার স্মৃতির শহর রংপুরের মেডিকেলের মোড় পেরিয়ে, জেলখানা পেরিয়ে, আরো একটু এগিয়ে সেই লাশকাটা ঘরের কথা। উড়নচন্ডী কিশোরবেলায় ঘাস, জঙ্গল, গর্ত, আগাছার মাঝে সেই চারকোণা লাল রংয়ের ভুতুড়ে ঘরটির পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে নীল ঔৎসুক্য ও শিরদাঁড়া বেয়ে নামা শীতল ভয়ের স্রোতে গা কাঁটা দিয়ে উঠতো আমার। সেই অনুভূতি আমাকে তাড়া করে ফিরতো রাতের দুঃস্বপ্নেও। কিন্তু তার অশরীরী এক অমোঘ আকর্ষণী ক্ষমতা ছিল। স্কুলের ছুটির ঘন্টা বাজার পর বাড়ী ফেরার পথে আমাকে বার বার সম্মোহিতের মতো টেনে নিয়ে যেত। আমার সে সময়ের বর্তমান থেকে বেশ খানিকটা সময় নিপুন চুরি করে আমাকে করত বিচ্ছিন্নতায় আক্রান্ত।
বধূ শুয়ে ছিলো পাশে - শিশুটিও ছিলো;
প্রেম ছিলো, আশা ছিলো - জোৎস্নায়, - তবু সে দেখিল
কোন ভূত? ঘুম কেন ভেঙে গেলো তার?
অথবা হয়নি ঘুম বহুকাল - লাশকাটা ঘরে শুয়ে ঘুমায় এবার।
আমার ও তো কতদিন মনে হয়েছে, দিনের পর দিন রাত জেগে পরীক্ষার পড়া তৈরি করতে করতে আমি ক্লান্ত হয়েছি। ভেবেছি, শেষ পরীক্ষাটা দিয়ে এসে একটা টানা লম্বা ঘুম দেব। প্রতিদিন বাজারের ব্যাগ টানতে টানতে আমার বাবা ক্লান্ত হয়ে ভেবেছেন, কোন এক ছুটির দিনে সংসারের ঘানি ঠেলা ভুলে থাকবেন; সারাদিন ধরে বিছানায় নিঃসাড় পড়ে থাকবেন একাকী। কেউ তাঁকে বিরক্ত করবে না। উনুন ঠেলতে ঠেলতে কখনো আমার মায়ের মুখে তেমন অনিকেত বাসা বেঁধেছিল কি না তা অবশ্যি আমি হলফ করে বলতে পারবো না। একটু বড় হয়ে পড়েছি, সব ছিল তবু সব ছেড়ে ছুঁড়ে সিদ্ধার্থ গেলেন নির্বাণের খোঁজে। কিন্তু সেখানে তো ছিল বিশ্ব-মানবতার মুক্তির বাণী। লাশকাটা ঘরে যিনি গেলেন তিনি তো একাকী নিলেন স্বেচ্ছামৃত্যুর কোলে প্রশান্তির শীতল ষ্পর্শ। দীর্ঘক্ষণ একাকী থাকার সুতীব্র বাসনায় জড়িয়ে নিলেন আঁধার ঘুঁজির বুক। শীতল হতাশা ও উষ্ণ আশার দোলাচলে দুলতে দুলতে আমরা পাঠ করে যাইঃ
শোনা গেলো লাশকাটা ঘরে
নিয়ে গেছে তারে;
কাল রাতে - ফাল্গুনের রাতের আঁধারে
যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ
মরিবার হলো তার সাধ।
আমরা সবিস্ময়ে লক্ষ্য করি যে ‘মরিবার হলো তার সাধ’। হতাশা বিলক্ষণ সাধের জন্ম দেয়। তবে কী এই অনুভূতিকে হতাশার (Depression) চাইতে বিচ্ছিন্নতাবোধ (Alienation) বলাই যথার্থ নয়? তবে কি জীবনানন্দ পরিবার, সমাজ, পরিমন্ডলের সাথে নিজেকে আর মেলাতে পারছিলেন না? ভাবতে পারছিলেন না কি নিজেকে সমাজের অংশ হিসেবে? বিরুদ্ধ সমাজের মুখে চেপে বসা লাগাম-নিয়ন্ত্রিত হয়ে নিরন্তর ছিন্ন ভিন্ন হচ্ছিলেন কি নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে? তাই কি বিচ্ছিন্ন হয়ে নিজেকে গুটিয়ে নেয়া একান্ত আপন বিবরে? লাশকাটা ঘর কি সেই নির্জন বিবরের হিমশীতল প্রতীক? একপাল শালিকের কিচিরমিচিরের মতো একরাশ ডাকাতিয়া প্রশ্নের দল আমাদের অস্তিত্বের কোকিলসুরকে আক্রান্ত করে। আমরা একে অন্যকে নীরব জিজ্ঞাসায় বিদ্ধ করি, তোমার কি কখনও মনে হয়েছে সাফল্যমন্ডিত জীবনের কোলাহল ছেড়ে সব ফেলে নীরবে নিভৃতে নিস্তব্ধতাকে আলিঙ্গন করতে, নিদেনপক্ষে লম্বা একটি ঘুম দিতে? সেই আকাংক্ষার বেদীমূলে রাখা নৈবেদ্যের ডালিতে কতটুকু ঠাঁই পেল বিছিন্নতাবোধের শেফালি, কতটুকুই বা হতাশার ঝরা বকুল?
'কোনোদিন জাগিবে না আর
জানিবার গাঢ় বেদনার
অবিরাম - অবিরাম ভার
সহিবে না আর - '
এই কথা বলেছিলো তারে
চাঁদ ডুবে চলে গেলে - অদ্ভুত আঁধারে
যেন তার জানালার ধারে
উটের গ্রীবার মতো কোনো-এক নিস্তব্ধতা এসে।
আহা কী মোহিনী নিস্তব্ধতা তুমি! তুমি ‘গাঢ় বেদনার অবিরাম অবিরাম ভার’ থেকে মুক্তি দাও। তারপর যন্ত্রণাময় জীবনের হতাশার ক্লেদে নিমজ্জিত থেকেও আমি শুনি মুক্তির আশা জাগানিয়া গান আত্মাহুতির বেহালা বাদনে। পরমুহূর্তেই তাই তো বলতে পারিঃ
তবুও তো প্যাঁচা জাগে;
গলিত স্থবির ব্যাং আরো দুই মুহূর্তের ভিক্ষা মাগে
আরেকটি প্রভাতের ইশারায় - অনুমেয় উষ্ণ অনুরাগে।
শীতল হতাশার কুয়াশা ঘেরা সকালের কোলে যেন কমলা রবির উষ্ণ আশার আলো। তাইতো, ‘মশা তার অন্ধকার সঙ্ঘারামে জেগে থেকে জীবনের স্রোত ভালোবাসে’। তাইতো, ‘রক্ত ক্লেদ বসা থেকে রৌদ্রে ফের উড়ে যায় মাছি’। তাইতো, ‘সোনালি রোদের ঢেউয়ে উড়ন্ত কীটের খেলা’। তাইতো মন অধিকার করে থাকে ‘ঘনিষ্ঠ আকাশ’ আর ‘বিকীর্ণ জীবন’। আমাদের মাঝে কেউ কেউ ‘আট বছর আগের একদিন’ কবিতাটিকে রবীন্দ্রনাথের ‘বিদায় রীতি’-র সাথে প্রতিতুলনা হিসেবে উপস্থিত করতে চান। তাঁদের দার্শনিক অণুবীক্ষণ সাব্যস্ত করে, দুটি কবিতারই কেন্দ্রীয় বিষয় মৃত্যুচিন্তা। দুই কবির মৃত্যুচিন্তার একটি সামগ্রিক চিত্র বিবেচনা করতে আমরা আমাদের আলোচনা শুধু এই দু’টি কবিতার পরিসরে এঁটে রাখতে চাই না। তাই সিদ্ধান্ত মানি, এবেলায় নয়, অন্য কোন বেলায় আমরা মেতে উঠবো এইরূপ আলোচনায়। রুচিশীল নারীর মতো তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে বুঝে নেব মরণের মসলিনে কেমন পাকা হলো চিন্তাসুতোর বনেদী বুনোট।
দ্বিতীয় পর্বঃ দুই কবির মৃত্যুচিন্তা (আসিতেছে)
তৃতীয় পর্বঃ জীবনানন্দে বাইনারী প্যারাডক্স (আসিতেছে)
মন্তব্য
ভীষণ ভাল লাগলো। এই কবিতাটা আমি যে কতবার পড়েছি! বিশেষ করে এই লাইনগুলো -
শোনা গেলো লাশকাটা ঘরে
নিয়ে গেছে তারে;
কাল রাতে - ফাল্গুনের রাতের আঁধারে
যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ
মরিবার হলো তার সাধ।
- এই লাইনক'টা আমার মাথার ভেতরে বোধহয় চিরস্থায়ীভাবে ঢুকে গেছে। করোটিতে গুন গুন করে করে আচমকা কখনও - স্থান কাল নির্বিশেষে। এমনকি একটা গল্পও লিখে ফেলেছিলাম একসময়!
ভাই,
ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনার অবস্থা তো দেখছি দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে রৌদ্র করোটিতে জেগে উঠা রক্তচক্ষু কোকিলের অনিকেত প্রথম গানের মতো। ষষ্ঠ পান্ডব দার উপদেশ আপনার জন্যেও অবশ্যপ্রযোজ্য। আর আপনার গল্পটিকে আমাদের জন্য অবমুক্ত করুন। রনদীপম দার সিগনেচার অনুসরণ করে বলি, "চিন্তারাজীকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহত্ব নেই।"
-----------------------------------
যে মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে
চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ — কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে;
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
লেখার স্টাইল ভালো লেগেছে, কনটেন্টও। তবে কবি হুঁশিয়ার! জীবনান্দ দাশ যে একটা নিরব অথচ ভয়ঙ্কর ঘাতকের নাম সেটা আপনার জানা আছে। এই ঘাতকের পাল্লায় নিজের রচনা পড়লে নিজের কবিতা লেখা কিন্তু শিকেয় উঠবে। যেমন আমার মাথায় একটা উদ্ভট চিন্তা খেলা করে যে, জীবনান্দ দাশের কবিতার mathematical formulation করা সম্ভব কিনা। মনে মনে কবিতাও ঠিক করে রেখেছি, খালি হাত দিতে সাহস হয় না (আমার কাব্যজ্ঞান আর গাণিতিকজ্ঞান শূন্যের কোঠায়)। আপনাকেও অমন রাস্তায় হাঁটতে দেখে শঙ্কা হয়। তবু সিরিজের পরের দুই এপিসোডের নাম দেখেই আমি উদ্বেলিত। নীড়পাতা থেকে এই পোস্টটা নামলেই পরের পর্ব আপলোড করে দিন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ষষ্ঠ পান্ডব দা,
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে!
আমি যে আমার সকল নিয়ে বসে আছি সর্বনাশের আশায়!
'প্যারাডক্স' কথাটির আভিধানিক অর্থ বোধকরি 'উদ্ভট' কিন্তু 'সত্য'। সেই অর্থে আমি বিশ্বাসে স্থির যে জীবনানন্দ দাশের কবিতার mathematical formulation করা সম্ভব । এ বিষয়ে আপনার সাথে দীর্ঘ মতবিনিময় করতে লোভ হচ্ছে। ই-মেলে কিম্বা ফোনে।
ও, এই ছিল মনে! খুন হবার জন্য আমাকে ঠেনে পাঠাচ্ছেন নির্জন সেই পথে, তাই না? পরবর্তী পর্বগুলোতে আরো কিছু মশলা দিয়ে অল্প আঁচে রাঁধবার কাজ বাকী। একটু সময় নিয়ে করতে চাই।
আপনার মন্তব্যে উৎসাহ বেড়ে গেল শতগুনে।
-----------------------------------
যে মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে
চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ — কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে;
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
১। প্রথমে আমার নিজের কান ধরে দশবার উঠ-বস করা উচিত দুই দুই বার জীবনানন্দ দাশের নামের বানান ভুল করার জন্য।
২। জীবনানন্দ দাশের কবিতার সাথে কবিতাপ্রেমী মানুষের সম্পর্ক আগুন আর পতঙ্গের মতো। সেখানে আমার মতো অকবি পুড়লে ক্ষতি নেই, আপনার মতো কবি পুড়লে ক্ষতি হয় বইকি। তাই এই হুঁশিয়ারী উচ্চারণ।
৩। যতদূর বুঝি paradox-এর সাথে অন্তর্গত বিরোধীতার নিবিড় সম্পর্ক আছে। এই অন্তর্গত বিরোধীতাকে যদি বাস্তব সংখ্যা আর কাল্পনিক/জটিল সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করা যায়, তাহলে এক ধরণের mathematical formulation-এর পথে যাওয়া যাবে মনে হয়। খুব নিশ্চিত না। তবে কিছু কিছু কবিতার প্যাটার্ন দেখে সন্দেহটা আরো গভীর হয়। আমি এই বিষয়ে আলোচনার যোগ্য পাত্র নই, তবে আপনার সাথে আলোচনা আমার অবশ্যই কাম্য। আমার প্রোফাইলে আমার ই-মেইল অ্যাড্ড্রেস পাবেন, সময় হলে টোকা দিতে পারেন।
৪। পরবর্তী পর্বের জন্য "অপেক্ষায় নাজির"।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আপনার আন্তরিকতায় আমি মুগ্ধ! শীঘ্রই যোগাযোগ হবে আশারাখি।
-----------------------------------
যে মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে
চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ — কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে;
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
অসাধারণ লেখা! পরবর্তী পর্বগুলোর অপেক্ষায় থাকলাম। তারা। আর ষষ্ঠ পাণ্ডবের কথা কিন্তু ৩৫০% সঠিক। সাবধান।
আখতার ভাই,
ধন্যবাদ, কিন্তু আমি যে আমার সকল নিয়ে বসে আছি সর্বনাশের আশায়! জীবনানন্দের ছুরিতে প্রাণ দেয়া যায় 'সুবিনয় মুস্তাফী' কবিতার ইঁদুরের মতো হেসে হেসে, মৃত কবি ভার্জিলের হাত ধরে ইনফেরনোতে প্রবেশের পূর্বে ৩৫ বছর বয়সে দান্তের পরিভ্রমনের মতো সুখকর হবে সেটি, হবে পরম সৌভাগ্যের!
-----------------------------------
যে মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে
চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ — কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে;
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
"তবে তুমি জেনে শুনে বিষ করিবে পান?"
জ্বী ভাই,
"প্রাণের আশা ছেড়ে সপেছি প্রাণ'
-----------------------------------
যে মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে
চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ — কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে;
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
অসাধারন লাগলো পড়তে! একরাশ মুগ্ধতা গ্রাস করলো ! জীবনানন্দ আর আপনার লেখা দুটোই!
- শাহেদ সেলিম
শাহেদ ভাই,
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার মন্তব্যে যে ভালোবাসা মিশে আছে, তা আমাকে মননের মধু যোগালো!
-----------------------------------
যে মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে
চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ — কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে;
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
একদম কিছু কমু না। জীবনানন্দের কবিতা বলে কথা!
হুম,
বুঝেছি, 'তাহাদের হৃদয়ের বোন' আপনাকে ডাকিতেছে!
-----------------------------------
যে মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে
চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ — কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে;
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
দারুণ লেখা
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
নজরুল ভাই,
ধন্যবাদ, যিনি নিখুঁত ব্লটিং পেপারের মতো সব ব্যথা শুষে নিয়ে আমাদের জীবনের মাঝে আনন্দের সরোবর তৈরি করে রেখে গেছেন নৈবেদ্য রাখি তাঁরই জন্য।
-----------------------------------
যে মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে
চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ — কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে;
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
বাহ!
-----------------------------------------------------------------------------------
...সময়ের ধাওয়া করা ফেরারীর হাত থিকা যেহেতু রক্ষা পামুনা, তাইলে চলো ধাওয়া কইরা উল্টা তারেই দৌড়ের উপরে রাখি...
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
বোন,
ধন্যবাদ!
-----------------------------------
যে মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে
চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ — কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে;
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
চমৎকার লেখা! খুব ভাল লাগল।
বোন,
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
-----------------------------------
যে মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে
চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ — কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে;
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
এককালে জীবনানন্দ পড়া শুরু করসিলাম।
এমনিই বিষণ্নতায় ভুগি, বসের কবিতা পড়লে হতাশা, বিষণ্নতা আরো বেশি করে জেঁকে ধরে। বসকে তাই গুডবাই জানিয়েছি।
আপনার লেখ কিন্তু দারুণ লেগেছে। বসের কবিতা আবার পড়তে ইচ্ছা করছে
---আশফাক আহমেদ
আশফাক ভাই,
তিনি তো আকাশ-নীল হয়ে ছড়িয়ে আছেন আমাদের সকলের আকাশে আকাশে। তাই তাকে চিরদিনের জন্য গুডবাই জানানো বোধকরি আপনার পক্ষে সম্ভব হবে না।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে!
-----------------------------------
যে মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে
চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ — কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে;
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
"তোমায় আমি দেখেছিলাম বলে
তুমি আমার পদ্মপাতা হলে;
শিশিরকণার মতন শূন্যে ঘুরে
শুনেছিলাম পদ্মপত্র আছে অনেক দূরে,
খুঁজে খুঁজে পেলাম তাকে শেষে।
জানি আমি তুমি রবে- আমার হবে ক্ষয়;
পদ্মপাতা একটি শুধু জলের বিন্দুর নয়।
এই আছে, নেই; এই আছে, নেই- জীবন চঞ্চল;
তা তাকাতেই ফুরিয়ে যায় রে পদ্মপাতার জল"
হায় জীবনানন্দ....
লেখায়
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
জীবনানন্দের পাদমূলে দেয়া নৈবেদ্যের তাজা ফুল এই উদ্ধৃতাংশ।
লজ্জিত প্রশ্নে হেসে কুটি কুটি হোয়ো না, 'জাঝা' মানে বুঝলাম না!
-----------------------------------
যে মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে
চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ — কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে;
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
"আট বছর আগে একদিন" কে কি কেবল মৃত্যুচিন্তা কিংবা বিষন্নতাবোধের কবিতা বলা যায়? গভীর জীবনবোধের কবিতাও কি নয় এটা
"তবুও তো পেঁচা জাগে ;
গলিত স্থবির ব্যাঙ আরো দুই
মুহূর্তের ভিক্ষা মাগে
আরো একটি প্রভাতের ইশারায় -
অনুমেয় উষ্ণ অনুরাগে ।
টের পাই যূথচারী আঁধারের গাঢ়
নিরুদ্দেশে
চারি দিকে মশারির ক্ষমাহীন
বিরুদ্ধতা ;
মশা তার অন্ধকার
সঙ্ঘরামে জেগে থাকে জীবনের
স্রোত ভালবেসে ।
রক্ত ক্লেদ বসা থেকে রৌদ্রে ফের
উড়ে যায় মাছি ;
সোনালী রোদের ঢেউয়ে উড়ন্ত কীটের
খেলা কত দেখিয়াছি ।
ঘনিষ্ট আকাশ যেন , কোন বিকীর্ণ
জীবন
অধিকার করে আছ ইহাদের মন ।;
দুরন্ত শিশুর হাতে ফড়িংযের ঘন
শিহরন
মরনের সাথে লড়িয়াছে ।''
বেঁচে থাকার কি অবিরাম আকুলতা? জীবনের কি মোহময় স্বাদ? পৃথিবীকে কি অদ্ভূত সুন্দর মনে হয় না?
যদিও অস্বীকৃতি আছে এই বলে যে
"যে জীবন ফড়িং এর দোয়েলের মানুষের সাথে তার হয় নাকো দেখা"
তারপরও. . . .
"অশ্বথের শাখা
করেনি কি প্রতিবাদ? জোনাকীর
ভিড় এসে
সোনালী ফুলের স্নিগ্ধ ঝাঁকে
করে নি কি মাখা মাখি ?
থুরথুরে অন্ধ পেঁচা এসে
বলে নি কি ‘ বুড়ি চাঁদ
গেছে বুঝি বেনো জলে ভেসে?
চমৎকার! —
ধরা যাক দুই একটা ইদুর এবার !’
জানায় নি কি পেঁচা এসে এ তুমুল
গাঢ় সমাচার ?
জীবনের এই স্বাদ – সুপক্ক যবের
ঘ্রাণ হেমন্তের বিকেলের -
তোমার অসহ্য বোধ হল;
মর্গে কি হৃদয় জুড়ালো
মর্গে – গুমোটে
থ্যাঁতা ইদুরের মত
রক্তমাখা ঠোটে !"
মৃত্যু অবধারিত, তাই মৃত্যু আসে। মৃত্যুতে জীবন যে পরাজিত হয় তাতো নয়। বরং সার্থক মৃত্যুতে জীবন পরিপূর্ণতা পায়। যে জীবনের সব রুপ রস ঘ্রাণ মেনে নিয়ে চলে যেতে পারে সে'ই তো শিল্প সৃষ্টি করে।
"তবুও এ মৃতের গল্প; - কোন
নারীর প্রণয়ে ব্যর্থ হয়
নাই ;
বিবাহিত জীবনের সাধ
কোথাও রাখেনি কোন খাদ ।
সময়ের উদবর্তনে উঠে আসে বধু
মধু - আর মননের মধু
দিয়েছে জানিতে;
হাঢ়াভাতের গ্লানি কোন
বেদনার শীতে
এ জীবন কোন দিন কেপে ওঠে নাই;
তাই
লাশকাটা ঘরে
চিৎ হয়ে শূয়ে আছে টেবিলের
‘পরে ।"
কিংবা
"হে প্রগাঢ় পিতামহী ,
আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হবো -
বুড়ি চাঁদটারে আমি
ক 'রে দেব
কালীদহে বেনোজলে পার;
আমরা দু'জনে মিলে শূন্য
ক'রে চ'লে যাব জীবনের প্রচুর
ভাঁড়ার ।"
বিষাদ নয় এ উচ্চারনগুলোতে আমি জীবনের উল্লাস খুজে পাই যা মৃত্যুকে অস্বীকার করেনা
(কবিতাংশগুলো একটা ব্লগ থেকে কপি করা, বানান কিংবা অন্য কোন ত্রুটি থাকলে দুঃখিত)
-সমুদ্র সন্তান
ভাই,
আপনার সুনিপুণ নিরীক্ষাকে সেলাম।
অবশ্যই, এতে কোন সন্দেহ নেই। আমি মনে করি জীবনানন্দ জীবন ও মৃত্যুকে একই মুদ্রার উল্টোপিঠে পরিপূরক হিসেবে অবলোকন করেছিলেন। তৃতীয় পর্বে অর্থাৎ 'জীবনানন্দে বাইনারী প্যারাডক্স' এ সেকথা গুছিয়ে লিখবো বলে আশারাখি!
আর মৃত্যু বিষয়ক আলোচনা দ্বিতীয় পর্বে হবে!
-----------------------------------
যে মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে
চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ — কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে;
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
নতুন মন্তব্য করুন