রাইনের মারিয়া রিলকের কবিতা

রোমেল চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন রোমেল চৌধুরী [অতিথি] (তারিখ: শুক্র, ১১/০৩/২০১১ - ৪:১৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কবি রাইনের মারিকা রিলকে আমদের সবার কাছেই কমবেশি পরিচিত। “The Landscape of Love” তাঁর একটি নিটোল প্রেমের কবিতা। স্বল্পদৈর্ঘ এই কবিতাটির অনির্বচনীয় সুরেলা আবহ আমাদের মনে বিষণ্ণতা মাখা মুগ্ধ আবেশ ছড়ায়। নান্দনিক স্বচ্ছতায় স্নাত প্রথম চরণটিতে কবি যথার্থেই ‘Landscape’কে প্রেমের রূপক হিসেবে ব্যবহার করেছেন। ‘Again and again’ পুনরুক্তির মাঝে প্রেমের চিরচেনা রূপটিকে নতুন করে নতুন রূপে চিনে দেবার মাদকতাময় আহ্বান আছে। সেই সাথে 'however' শব্দটির মাঝে ফুটে আছে কবিতাটির সারল্য। কবিকে প্রেমের বিষণ্ণ চিত্রায়নেই আগ্রহী বলে মনে হয়। অন্ততঃ ‘churchyard’ ও ‘sorrowing names’ শব্দ দুটির ব্যবহার তেমনটাই সাক্ষ্যদান করে। হয়তো এ কারণে যে, ‘Our sweetest songs are those that tell our saddest thoughts’। ‘Silent abyss’ শব্দটি হয়ত প্রেমে পড়ারই রূপক। ‘গহ্বরের অতলান্ততা’, সে তো ‘প্রেমের গভীরতা’র সাথেই তুলনীয়। প্রেমে পড়ার ম্যাজিক মুহূর্তটিতে ‘কি জানি কি হয়’ এ ধরণের একটা দুরু দুরু হৃদকম্পন আছে, আছে রোমাঞ্চিত নীরবতা, আছে দ্বিধা থর থর কম্পন। তাইতো বর্ণিত ‘abyss’ টি ‘frighteningly silent’। প্রেমের গভীরতা বাড়ার সাথে সাথে ক্রমশ সকল আশংকা রূপান্তরিত হতে থাকে অনির্বচনীয় পুলকে, নির্ভরতার কোল ঘেঁষে খুঁজে পাওয়া অপার শান্তিতে, প্রাপ্তির সোনালি রোদ্দুরে ছোট ছোট ঢেউ তোলা মোহন সুখে। প্রাচীন বৃক্ষের শান্ত ও শীতল পরশে প্রেমিক যুগলের হাত ধরাধরি করে পাশাপাশি হেঁটে চলাতে সেই সুরটি অনুরণন তোলে। এরপর প্রেম হয় পরিণত, প্রস্ফুটিত, নানা বর্ণে বর্ণিল, নানা অভিজ্ঞানে বিস্তৃত। বোধকরি, সেজন্যই ফুলের বিছানায় শুয়ে থাকার মধ্যে পরিণত প্রেমের বর্ণিল ও সুবাসিত রূপটির প্রস্ফুটন দেখতে পাই। সবশেষে, কবি আকাশের অনন্তে তাকিয়ে থাকার মাঝে প্রেমের অফুরন্ত ও অনন্ত রূপটি বিম্বিত করে আমাদের চমৎকৃত করেন। পুরো কবিতাটি পাঠ করে আমার কেন জানি একটি কথাই মনে হতে থাকে। মৃত্যুর বিষণ্ণ থোকা থোকা নামফলকের মাঝে যে অনিবার্যতা পুনরুক্ত হয় সেই ক্যানভাসেই প্রেমকে মৃত্যুঞ্জয়ী করতে চেয়ে রিলকে যেন কাঁটার আঘাতে মৃত্যুর অবশ্যম্ভাবিতা জেনেও মেতেছেন গোলাপ বন্দনায়। কে জানে? আসুন, সকলে মিলে কবিতাটি পড়ি।

THE LANDSCAPE OF LOVE

Again and again, however we know the landscape of love
and the little churchyard there, with its sorrowing names,
and the frighteningly silent abyss into which the others
fall: again and again the two of us walk out together
under the ancient trees, lie down again and again
among the flowers, face to face with the sky.


মন্তব্য

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

বস, কবিতাটা পড়ে একদিকে স্বল্পমেয়াদে খুবই ভালো লাগলো কিন্তু অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদে অনেক ভাবনার খোরাক দিয়ে গেলো। তারপরও আমরা প্রকৃতির সন্তান, প্রকৃতির মাঝেই আমাদের বিলীন, অনিবার্য। মনে মনে খুট্‌-খাট্‌ করছিলাম-

বারংবার, যদিও জেনেছি সেখানে রয়েছে ভালোবাসার জমিন আর ছোট্ট দেবালয়,
সাথে বিষাদঘেরা তার নাম,
আর সেই শংকাজাগানীয়া নিরব অতল গহ্বর যেখানে সবাই নিমজ্জিত হয়;
আবারো, বারবার আমরা দুজন হেটে বেড়াই সেই প্রচীন বৃক্ষতলে,
বারংবার আকাশ পানে চেয়ে থেকে,
পুষ্পশয্যায় শায়িত হই।

অথবা,

বারংবার, যদিও জেনেছি সেখানে
একটি টুকরো ভালোবাসার জমিন
রয়েছে, সেখানে ছোট্ট এক উঠোনে
কোন্‌ ঘেষে এক দেবালয়ের সাকিন।

জেনেছো কি কভু নামখানি তার, বলো?
ও যে বিষাদমতি, সবাই তাকে চেনে।
তল খুঁজে যারা অতল অথই পেলো,
তাতেই ডুবলো নিদারূণ প্রলোভনে।

বুড়ো বটতলে ঘুরি হেঁটে হেঁটে চলো,
হাতে হাত ধরে যাতায়ত, চলে যাই,
বারবার আসি। ফুলেল শয্যা বলো
নেবে কি? নিতেই হবে যদিও না চাই।

আকাশের সাথে অপলক চোখে প্রীতি
কথা হতে রবে, কভু হবে নাগো ইতি।।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

রাতঃস্মরণীয় ভাই,
বাহ, ইনস্ট্যান্ট অনুবাদ ভালোই লাগলো তো! রিলকে কে নিয়ে একটি দীর্ঘ প্রবন্ধে তিনি যেভাবে 'জীবন অধ্যয়ন' করেছেন তার একটি আলোকসম্পাত করতে চেষ্টা করছি। হাতের কাছে রেফারেন্সের খুব অভাব। ইন্টারনেট থেকে পাওয়া তথ্য সবসময় রেফারেন্স হিসেবে সন্নিবেশনের মোক্ষলাভ করে না।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

তাসনীম এর ছবি

রোমেল ভাই, আপনার কাছ থেকে কবিতা পাঠ শিখছি...মুগ্ধতা নিয়ে।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

তাসনীম ভাই,
আমার পুজনীয় শিক্ষক মোহাম্মদ আলী স্যারের ক্লাস পাই বুয়েটের তৃ্তীয় বর্ষে এসে। পাওয়ার ইলেক্ট্রনিক্স। মুগ্ধ হয়ে তাঁর মনীষা দেখতাম। তাঁর কাছ থেকে সেই ক্লাশেই শুনি সেই অমোঘ সত্যভাষণ, 'কেউ কাউকে শেখাতে পারে না, শেখার সহজ পথগুলো বাৎলে দেয় শুধু। তাই পাঠদান নয়, শিক্ষকের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত শিক্ষার্থীদের মাঝে শেখার অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করা। মহাজগতের বিশাল পাঠশালায় আমরা সবাই একে অন্যের কাছ থেকে প্রতিমুহূর্তেই শিখছি। সেখানে কে কার কাছ থেকে শিখলো সেটি বরং উহ্যই থাকুক। তবেই না আমাদের জগতজোড়া পাঠশালা আনন্দে আনন্দে ভরে উঠবে। আপনার ও অন্য সবার কাছ থেকে কত শতগুণ বেশী শিখছি যে প্রতিমুহূর্তে!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

ফাহিম হাসান এর ছবি

আহা রিলকে! কী কাব্যময়!

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

সহহৃদয়!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

রোমেল ভাই,

লেখাটা এই লেখাটার অনুবাদের মতো মনে হলো।

রিলকে কি ইংরেজিতে লিখতেন? এক জায়গায় পেলাম এই কবিতার ইংরেজি অনুবাদক Stephen Mitchell;

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

লেখাটি অনেকাংশে ঐ লেখাটির অনুবাদ। আমার পুত্রের নাম রিলকে রেখেছি, অনেকেই তাতে ভুরু কুঁচকান। এই জেনে আমার এক শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ইন্টারনেটের এই লিঙ্কটি পাঠিয়েছিলেন। পড়ে খুব ভালো লেগে গেল। যতদূর জানি, তিনি অস্ট্রিয়ার কবি, লিখতেন জার্মান ভাষায়। এই কবিতার ইংরেজী অনুবাদকের নাম জানি না। আর রিল্কের সাথে আমার পরিচয় বুদ্ধদেব বসুর অনুবাদেই সীমাবদ্ধ।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

রিলকে-কে আদর।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

রিলকে কে আপনার শুভাশীষ পৌঁছে দেব!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এমনটাই তো চাই! আপনি সুর ধরিয়ে দিলেন, আর রাতঃস্মরণীয় গান গেয়ে ফেললেন!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

পান্ডবদা, মান্না দে'র এই গানটা শুনেছেন?-

কাহারবা নয় দাদ্‌রা বাজাও
উল্টোপাল্টা মারছো চাঁটি
শশীকান্ত তুমি দেখছি
আসরটাকে করবে মাটি।।

আমার অবস্থা প্রায়শঃই ওই শশীকান্তের মতো হয়ে যায়। হো হো হো

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

সাধু......সাধু......

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

একজন পাঠক এর ছবি

ভালো লাগলো।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

ধন্যবাদ

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভয়াবহ সুন্দর বস্‌ চলুক চলুক চলুক

-অতীত

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

হাসি

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

ভালো লাগলো!

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

ধন্যবাদ রেজা ভাই!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।