আমার বয়স হয়েছে। একটা বয়স ছিলো, সেই বয়সটার চরিত্রই হয়তো বন্য ষাঁড়ের মতো। ক্ষেপে ফুঁসে উঠার গুণে অমিত তেজোদৃপ্ত। সে বয়স আমারও ছিল, এখন নেই। রক্তে তেজ নেই, গতিতে জড়তা থিতু হবার অপেক্ষায়। এখন অসঙ্গতি দেখলে প্রতিবাদী হই না, ব্যথা পাই। যা কিছু অশোভন মনে হয় নিজের কাছে, তা আর আমাকে ক্ষুব্ধ করে না, আহত কিম্বা বেদনার্ত করে।
দেখছিলাম মুন্নী সাহার উপস্থাপনায় আকবর আলী খানের একটি সাক্ষাতকার। না কোন রাজনৈতিক কিম্বা অর্থনৈতিক আলোচনা নয়। টক শো, সেও নয়। এইসব আলোচনা আমার মতো মূর্খ মানুষের জন্য যে নয়, মনে মনে বহু আগেই আমি তা কবুল করেছি। কিন্তু কবিতা নিয়ে যে আমার আগ্রহের কখনই কোন সীমা ছিল না।
জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’ কে নিয়ে হচ্ছিল সে আলোচনা। অর্থনীতির পণ্ডিত ব্যক্তিটি যে কাব্য নিয়ে আলোচনা করছেন, বোধকরি সেটাই ছিল অনুষ্ঠানটির চমক। আর ঠিক এমনই একটা সময়ে, যখন জীবনানন্দকে আমরা নতুন করে মূল্যায়ন করছি, আবিষ্কৃত হচ্ছে তাঁর নতুন নতুন সব গল্প-কবিতা-উপন্যাস।
অনুষ্ঠানের শুরুটা বেশ ভালোই লাগছিল আমার। আমার চিকিৎসক স্ত্রী যখন প্রসূতি বিদ্যার পেটমোটা বই থেকে ভুলক্রমে চোখ তুলে চশমার কাঁচ পরিষ্কার করতে করতে আনমনে গুন গুন করে গান ধরেন, আদর মাখা কণ্ঠে একটু খুনসুটি ফুটিয়ে বলেন, “কবি, আজ হলো কি কোনো পদ্মাবতী রচনা”, তখন যেরূপ ভালোলাগা আমায় ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়, ঠিক তেমনি আকবর আলি খানের কণ্ঠে জীবনানন্দের ‘বনলতা সেন’ নিয়ে আগ্রহী আলোচনা যেন বাতাসে ভালোলাগার রেণু ছড়িয়ে আমাকে করে তোলে ফুরফুরে।
চায়ের কাপে চুমুক দেই। অনেক মধুময় মনে হয় সময়টিকে। নেপথ্যে কেউ একজন আবৃত্তি করেন ‘বনলতা সেন’-এর প্রথম স্তবকটি,
হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধুসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন।
আদিগন্ত পথ আর পথ তাঁর সামনে। কখনো জলের কখনো স্থলের। তিন ভাগ জল আর এক ভাগ স্থলের পৃথিবীতে কখনো সমুদ্রে, কখনো বন্দরে কখনোবা নগরীর মাঝ দিয়ে বিছিয়ে দেয়া রাজপথ-জনপদে তাঁর পথের শরীর। তিনি হেঁটে যান, হেঁটে যান, হাঁটতেই থাকেন, হাঁটতেই থাকেন। কখনো ক্লান্ত পায়ের পথিক, কখনো তৃষ্ণার্ত চোখের নাবিক। কখনো সুদূর অতীতে, কখনো নিকট বর্তমানে। সময়ের গ্রন্থিতে শিথিলতা ছায়া ফেলে, মন্দালয়ে বয়ে যেতে থাকে অনাদিকালের এই স্ত্রোত। তিনি ‘হাঁটিতেছেন’ হাজার বছর ধরে। কোথায় তাঁর গন্তব্য, কি তাঁর অভীষ্ঠ, কতটা তাঁর অতৃপ্তি? যখন তিনি হাল ভেঙে দিশেহারা, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন, তখন যে অধরা মাধবী তাঁকে ‘দুদণ্ডের শান্তি’ দিলেন তিনি বনলতা সেন।
প্রথম যে অশ্লীলতাটুকু আমায় আহত করলো সেটি কুরূপে আবির্ভূত হলো ‘দু’দণ্ডের শান্তি’র ব্যাখ্যায়। ‘গণিকা গমনের রতি সুখ’ নাকি এই শান্তির ব্যাখ্যা। সিংহল সমুদ্র আর মালয় সাগরের কথকতায় তাঁর নাবিক রূপটি তো ইতিমধ্যেই পরিস্ফুট। তাছাড়া নারীসঙ্গবিহীন দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রায় নাবিকেরা কামার্ত থাকবেন, বন্দরে এসে দেহপসারিনীর উদোম বুকে মুখ ঘষে দু’দণ্ডের শান্তি খুঁজবেন, এই তো স্বাভাবিক। বুকের আচ্ছাদন তুলে কে কবে করেছিল মনের সুলুক সন্ধান! সেখানে তিনি যে কবি, কাম তাড়িত রক্তমাংসের মানুষ নন, অর্থনীতির শাস্ত্রে সে অনুসিদ্ধান্ত আজগুবি নয়তো কি। হায়, কোথায় রইল পড়ে ‘দুদণ্ডের শান্তি’ দেয়া তিন শব্দের মায়াবতী উচ্চারণ, ‘এতদিন কোথায় ছিলেন’। ততক্ষণে ক্ষণজন্মা আকবর আলি খান বলেই চলেছেন,
“এখন আমরা বুঝতে পারি, বনলতা সেন কেন কবিকে ‘দু’দণ্ডের’ শান্তি দিয়েছিল, বুঝতে পারি কেন কবির অভিসার ‘নিশীথের অন্ধকারে’ এবং ‘দূর অন্ধকারে’। এ পটভূমিতে দেখতে গেলে, ‘এতদিন কোথায় ছিলেন’ একটি সাধারণ প্রশ্ন নয়। বনলতা সেন যেন বলতে চাচ্ছে যে, সে ইচ্ছা করে রূপজীবার বৃত্তি গ্রহণ করেনি, তার জীবনে অনেক বড়ো ঝঞ্ঝা গেছে, সে দুঃসময়ে তার পাশে কেউ ছিল না। ‘এতদিন কোথায় ছিলেন’ একটি সৌজন্যমূলক প্রশ্ন নয়, এ হচ্ছে বিপর্যস্ত নারীত্বের আর্তনাদ।“
প্রেমের পারিজাত ফুল যখন অপ্রেমের বিষ্ঠায় গড়াগড়ি খাচ্ছিল, তখন আমার গা গুলিয়ে আসছিল বিবমিষায়, সুপেয় চা মনে হচ্ছিল ঘোড়ার পেশাব। (দ্বিতীয় পর্বে সমাপ্য)
মন্তব্য
জলদি ছাড়েন পরেরটা গুরু
অতীত
ছাড়ছি ভাই, একটু রয়ে সয়ে।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
পুরো ঘটনাটাই মাথার উপর দিয়ে গেলো।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
হ্যাঁ ভাই, মাথার উপর দিয়ে গিয়ে ভালোই হয়েছে। মাথা ব্যথার হাত থেকে রেহাই পেয়েছেন।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
দুনিয়াটাই কারাফ স্যার ... কুব কারাফ
আর কোন কুক্ষণে যে অশিক্ষিত মুন্নির চ্যানেলের নবটা ঘুরাইছিলেন
এম্নিতে 'নোনা মেয়েমানুষ' অর্থ কী?
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
"ঘাই হরিণী" মানেই বা কী?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
রোমেল ভাই, আপনি কি "বনলতা সেন" সংক্রান্ত আকবর আলী খানের প্রবন্ধগুলো পড়েছেন? না পড়ে থাকলে একটু সময় করে পড়ে নেবেন কি?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
সে প্রবন্ধগুলি বোধকরি ‘বনলতা সেন’ কে নিয়ে নয় বরং ‘লিঙ্গ ভিত্তিক বৈষম্যের অর্থনীতি’ নিয়ে। অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে আর যাই হোক কাব্যের সুবিচার হয় না।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
আমার তো ভাই দুনিয়াটাকে ভালোই লাগে। মুন্নী সাহাকেও অশিক্ষিত জ্ঞান করি না। ‘ক্যাম্পে’ নিয়ে জীবনানন্দের নিজেই সাফাইমূলক আলোচনা করে গেছেন। তাই ‘নোনা মেয়েমানুষ’ কিম্বা ‘ঘাই হরিনী’র মানে অনুমান করে নিতে বোধকরি আমাদের তেমন কষ্ট হয় না। 'ক্যাম্পে' নিয়ে দীর্ঘ আলোচনাও বোধকরি হতে পারে ক্লান্তিহীন। সেখানেই না হয় হোক ‘নোনা মেয়েমানুষ’ কিম্বা ‘ঘাই হরিনী’র সুলুক সন্ধান। তবে আমার পঠিত জীবনানন্দে যে কটি জায়গায় ‘নোনা’ শব্দটি ব্যবহৃত হতে দেখেছি উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে তার একটি উদ্ধৃত করি,
“বাতাসে ঝিঁঝিঁর গন্ধ― বৈশাখের প্রান্তরের সবুজ বাতাসে,
নীলাভ নোনার বুকে ঘন রস গাঢ় আকাঙ্ক্ষায় নেমে আসে;”
(মৃত্যুর আগে)
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
এখানে "নোনা" মানে আতা বা Custard Apple।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
হুম, তাহলে এর মানে কি?
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
মানুষের যখন হাতে গোনার মতো বাণ্ডল অব বিলস্ থাকেন, তখন মানুষ কয়েন গুনতে শুরু করে। আর কয়েন যখন গোনা শুরু হয় তখন পাবলিকরে জানান দেওয়ার জন্যে মানুষ ঝনাৎ ঝনাৎ শব্দ করে কয়েন গোনে। মনে হচ্ছে আকবর আলী খান স্যারের এবং মুন্নি সাহার হাতে অর্থনীতিবিষয়ক বিশেষ এজেণ্ডা ছিলো না তাই জীবনান্দকে নিয়ে পড়েছিলেন। বনলতা সেনকে 'মাগী' আর জীবনানন্দকে সেই সাথে 'মাগীখোর' বানানো স্যারের জন্যে আবশ্যক কিছু ছিলে না। স্যার একজন সক্রিয় বামপন্থী ছিলেন ছাত্রজীবনে, কারাবরণ করেছেন। সফল অর্থনীতিবিদ এবং মুক্তচিন্তার মানুষ বলেই তাকে জেনে এসেছি। কিন্তু এধরণের সাহিত্য সমালোচনার মোটিফ কিন্তু আমার দৃষ্টিকোন থেকে পরিষ্কার, আমিত্বের বিকাশ। এটা সাহিত্য সমালোচক হিসেবে স্যারের নামলিপ্সুতা মাত্র বলে আমার মনে হয়েছে। নাহলে সাহিত্য নিয়ে আলোচনা/সমালোচনা করার মতো বহু বিজ্ঞজন দেশে ভাত পাচ্ছেন না।
কথাটা যেহেতু পেশাব নিয়ে তাই বলার লোভ সম্বরণ করতে পারলাম না। দোষত্রুটি মার্জনীয়। স্যারের দু'টো লেকচার পেয়েছিলাম ডিইউতে। একটা লেকচার ছিলো ওয়েইস্ট ইন রিসোর্সেস (waste in resources)। অসাধারণ একটা লেকচার ছিলো এবং আজও মনে পড়ে যায়। স্যার আমেরিকার একটা ইউনিভার্সিটির একটা রিসার্চ প্রচেক্টের উদাহরণ টেনেছিলেন। ওই ইউনি একবার একটা প্রজেক্ট নেয়। ইউনির কাছ দিয়ে একটা নদী বয়ে গিয়েছিলো এবং একদল গরু প্রতিদিন সকালে ওই নদী সাঁতরে গ্রেইজিংএর জন্যে ওপার যেতো এবং বিকেলে আবার নদী সাঁতরে এপারে ফিরতো। ইউনি প্রজেক্ট নেয় যে সাতাররত অবস্থায় গড়ে কতো শতাংশ গরু পানির মধ্যে পেশাব করে দেয়। এর জন্য তারা মোটা অংকের ফাণ্ডিংও পায়, এক বছরের জন্যে। প্রজেক্টের ফাইনাল রিপোর্টে বলা হলো যে সাঁতাররত অবস্থায় গরুর মুত্রত্যাগ পর্যবেক্ষণ বিশেষ দূরুহ কাজ। এক বছরের অবজারভেশনে গরুর মুত্রত্যাগে কনসিসট্যান্সি পাওয়া যায়নি। কোনদিন ৫টা গরু মোতে তো পরের দিন ৬০টা গরু মোতে। আবার তার পরের দিন কোন গরুই মোতে না। আবার গরুর মুতের বুদ্বুদের সাথে ক্ষুরাঘাতে উদ্গত অক্সিজেনসৃষ্ট বুদ্বুদ গুলিয়ে যায়, ইত্যাদি। চুড়ান্ত রেকমেণ্ডেশন হলো সুষ্ঠু ফললাভের লক্ষ্যে এই প্রকল্পকে আরো এক বছরে এক্সটেনশন এবং ফাণ্ডিং করা হোক।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
ছোটো,
আমি কিন্তু আকবর আলি খান কিম্বা মুন্নী সাহাকে নিয়ে মাতিনি। অপরকে নিয়ে মাতামাতি আমার স্বভাব-বিরুদ্ধ, সেটি আমার গুণই হোক কিম্বা মুদ্রাদোষই হোক। 'বনলতা সেন'-এর ভুল পাঠে নিজের আহত হবার কথা বলেছি মাত্র।
তোমার নির্জলা কৌতুক ভালো লাগলো।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
যতদূর মনে পড়ে, আকবর আলি খান একসময়ে নাটোরের জেলা প্রশাসক ছিলেন। এত জায়গা ফেলে বনলতা সেন নাটোরের বনলতা সেন কেন, তা নিয়ে তাঁর কৌতূহল জাগ্রত হওয়াই স্বাভাবিক। তিনি অবসরে নাটোরের জেলা প্রশাসকদের পুরনো নোটস পড়তেন, সেখান থেকেই আবিষ্কার করেন, জীবনানন্দের বনলতার সমসাময়িক নাটোর খ্যাত ছিলো রূপোপজীবিনীদের কারণে। সে কারণেই তাঁর এই কনজেকচার একেবারে উড়িয়ে দেয়ার মতো নয়।
আকবর আলী খান ও আমি দুজনে ভিন্ন পথের পথিক। পথ ভিন্ন হলে কৌতুহলের ক্ষেত্রও যে ভিন্ন হবে তাই তো স্বাভাবিক। শুধু নাটোর নয়, নারায়ণগঞ্জ কিম্বা কেন্দুয়ার মতো সে সময়ের আরও অনেক জায়গাই খ্যাত ছিল রূপজীবিনীদের কেন্দ্র হিসেবে। তাই বলে কাব্যের আলোচনায় বনলতা সেনকে নান্দনিক কল্পলোক থেকে আটপৌরে আবহে নামিয়ে এনে শুধু রূপজীবিনী ভাবতে হবে কেন? কাব্যের রস আস্বাদন আর কঞ্জেকচার বোধকরি এক বিষয় নয়।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
বনলতা সেন রূপোপজীবিনী হলে কাব্যের রস আস্বাদনে সমস্যা কোথায়? বনলতা রইস ঘরের মেয়ে না হলে কি কবিতাটা মার খাবে?
আর বিকল্পগুলো চিন্তা করে দেখুন,
আমাকে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিলো নারায়ণগঞ্জের বনলতা সেন ...
অথবা,
আমাকে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিলো কেন্দুয়ার বনলতা সেন ...
হে হে, বুঝতেই পারছেন, কী যেন একটা সমস্যা হয়। এটা নিয়ে একটা গল্পের লিঙ্ক দিয়ে গেলাম।
হিমু সাহেব,
এই কবিতাটির আদ্যপান্ত কিন্তু 'বনলতা সেন' অধরা মাধবী থেকে গেছেন। কবি তাঁর মুখোমুখি বসে আছেন, মাঝখানে অন্ধকার যেন অপার রহস্যময়তা সৃষ্টি করে কল্পনাকে সূদূরপ্রসারী করেছে। চির আরাধ্য দয়িতার এই প্রতিমূর্তির কেবল একটিই রূপ, তাহলো সে পাখির নীড়ের মতো অনন্ত প্রশান্তির প্রতিরূপ। সমস্যাটা রূপজীবি নিয়ে নয়। রূপজীবি, বুদ্ধিজীবি কিম্বা তর্কজীবি হওয়াটা এখানে কাব্যের জন্য জরুরি নয়। সাব্লাইম হতে হলে যা কিছুই তিনি হোন না কেন তাতে বিমূর্ত প্রতিরূপ ফুটে ওঠাটাই জরুরি, জরুরি অনন্ত প্রশান্তির নীড় হয়ে ওঠা। তাই রইস ঘরের মেয়ে হলেও কবিতাটি মার খাবে।
মহাপয়ারে রচিত 'বনলতা সেনে'-এর প্রথম স্তবক এর মাত্রাবিন্যাস ৮+৮+৬। আপনার রচিত বিকল্প 'এক' এখানে আপনার গল্পের মতোই বমাল ধরা খাবে। বিকল্প 'দুই' অর্বাচীন পাঠকের কাছে কিছুটা ধোপে টিকেও যেতে পারে। তবে অক্ষরবৃত্তের এত সঙ্কুচিত হবার সামর্থ্যে সন্দেহ করি। আহা, কাব্যের রস যদি বাদুড়ে চাটা খেজুরের রস হতো তবে নিশ্চয় মজা করে খেতে পারতেন;)।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
রোমেল সাহেব, শব্দটা রূপোপজীবিনী, "রূপজীবি" নয়। আর কাব্যের জন্য বনলতা সেনের রূপোপজীবিনী হওয়া, বা না হওয়াও, জরুরি কিছু নয়। আকবর আলি খানের ব্যাখ্যা ছিলো কবিতায় বনলতা সেনের নাটোরিকা হওয়ার কারণ নিয়ে। সেটা বোধহয় আপনার কাব্যান্ধ চোখে ধরা পড়েনি। কবিতা তো বাদুড়ের পশ্চাদ্দেশ ফুঁড়ে বেরোয় না, মর্ত্যলোকীয় পশ্চাদপটও থাকে, তাই না? কবিতার পাঠক কবিতার রস পান করে কাব্যিক ঢেঁকুর তুলবেন বা কাব্যগন্ধভারাক্রান্ত বাতকর্ম ছাড়বেন, কবিতার গবেষক কবিতার পশ্চাদপট নিয়ে সম্ভব অসম্ভব নানা ব্যাখ্যা দাঁড় করাবেন, সব ব্যাখ্যা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না, বা হওয়ার দরকারও নেই।
মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান প্রণীত বাংলা থেসারাস 'যথাশব্দ'-এর ৯৬২ নং অনুচ্ছেদে 'রূপোপজীবিনী' ও 'রূপজীবা' দুই-ই আছে, অভিন্নার্থে। আমার চোখ যে 'কাব্যান্ধ' সে আপনি যথার্থই বলেছেন। বক্ষ্যমাণ লেখাটিতে সেটি কবুল করতে আমি এতটুকু কুণ্ঠিত হইনি। কেউ 'কাব্যান্ধ চোখ' নিয়েই তুষ্ট থাকবে আর কেউ অশ্রাব্য আউরিয়েও শান্তি পাবে না তাতে আর অবাক হবার কি আছে?
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
সেটাই তো! বাদুড়ে চাটা খেজুরের রসের শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্য।
আমি একটা জিনিস বুঝতে পারছি না, বনলতা সেন যদি একজন রূপোপজীবিনী হন, তাহলে সমস্যা কি?
যদি কবিতাটি নিছক শারীরিক সুখ বা ক্ষণিকের মোহ থেকে লেখা হয়, হতেই পারে। শুধুমাত্র শরীরি আকষর্ণ থেকে যদি কোন সম্পর্ক তৈরি হয়, তা হয়ত বেশিদিন টিকবে না, কিন্তু তাই বলে তা "অপ্রেমের বিষ্ঠা" হয়ে যায় না বলেই মনে করি।
সমস্যা ওখানেই, কারণ কবিতাটিতে শরীর আছে, কিন্তু নিছক শারীরিক সুখ কিম্বা ক্ষণিকের মোহ নেই। এই কবিতাসহ জীবনানন্দের যে কয়টি গল্প-কবিতা-উপন্যাসে বনলতা সেন এসেছেন, সবখানে তিনি যে রূপে আবির্ভূত তার সাথে রূপজীবিনীর কোনরূপ মিল খুঁজে পাই না। এই আলোচনায় নান্দনিক কল্পলোক থেকে বনলতা সেনকে আটপৌঢ়ে বাস্তবে টেনে নামানো হয়েছে, হত্যা করা হয়েছে কবিতাটির সাবলাইমিটি।
শুধুমাত্র শরীরি আকর্ষনের কারণে যে প্রেম অপ্রেমে পরিণত হয়েছে তা আমি বলিনি। বহু কবিতাই শুধুমাত্র শরীরি প্রেমের জোনাকি জ্বালিয়ে সাবলাইম হয়েছে, বোদলেয়ার তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। দুটি দৃশ্যপট কল্পনা করুন,
১। দীর্ঘদিন পর আপনি ভাঙা ভাগ্য নিয়ে ভূষণহীন মলিন দীন বেশে ফিরেছেন পাখির নীড়ের মতো প্রেমময় শান্তির কোলে। আপনাকে সেই শান্তির কোল প্রাণের আবেগে হৃদয়ের একুল ওকুল দুকুল ভাসিয়ে বরণ করে নিতে নিতে অস্ফুট অভিমানের ভেজা কন্ঠে বলছেন, "এতদিন কোথায় ছিলেন"।
২। পদস্খলনের পূর্ব থেকেই জীবনানন্দ বনলতা সেনকে চিনতেন, কিন্তু বহুদিন আর তার কাছে যান নি। পরে যখন যান তখন তার পদস্খলন হয়ে গেছে। তাই বনলতার ক্ষুব্ধ প্রশ্ন, "এতদিন কোথায় ছিলেন"।
দুটি দৃশ্যপটের কোনটি বেশী সাবলাইম হলো সে বিচার আপনার হাতেই ছেড়ে দিলাম। আমার সাথে আপনার মতের অমিল হতেই পারে। আমি মনে করি, জীবনানন্দের 'বনলতা সেন' নিছক একজন বিনোদবালা এ ধারণাটিই নিদারুণ বিরক্তির, স্থুল, দূরান্বয়ী ও নান্দনিক ধ্যানধারণা বিযুক্ত। সমগ্র জীবনানন্দে তাঁর এই রূপটি অনুপস্থিতও বটে। এই ভুলপাঠ তাই অপ্রেমের, অবশ্যই অপ্রেমের।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
বনলতা সেন বিষয়ে জানতে হলে বাধ্যতামূলকভাবে এইটা পড়তে হবে...
না পড়লে জীবন মিছা
দ্বিতীয় পর্বের অপেক্ষায়
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
এইটা কি দিলেন নজরুল ভাই
আপনে আগে কবি শফিকুলের কবিতা পড়েন নাই!
করছেন কী তাইলে এই জীবনে?
এক্ষণ সুইসাইড খান ছয়বার... তারপর "কবি শফিকুল ইসলাম" লিখে গুগুল মারেন... তেলেসমাতির দেখছেন কী?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
রোমেল ভাই, আপ্নে আগে অজেয় কবি শফিকুলের [url=http://bit.ly/hMb9Z3 ]প্যাঁচ[/url] ভাইঙ্গা লন, মুন্নি-আক্বর সিন্ডিকেটের মীমাংসা পরে করলেও চলব।
ভাই,
এইটা কি দেখাইলেন? ভাই, মাফ চাইছি আমার কুনো দুঃখ নাই। আমি আহত হই নাই তো, নিহত হইছি। আপনারা দয়া কইরা যদি শহীদ উপাধি এস্তেমাল করেন। লিঙ্কের কবি সাহেবকে দিয়া আপাতত ক্ষেমা দিবার চাই।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
নজরুল,
তোমার মুখে ফুলচন্দন পড়ুক, ভাই। আমার স্ত্রীর নাম লতা। এইবার হবে একখান কাব্যপ্রচেষ্টা। সারাজীবন তো গিন্নীর ভাষায় 'জি এফ এন' মানে 'গুড ফর নাথিং' থেকে গেলাম, এবার কলম খুলে লাগি। 'বনলতা' কিম্বা 'সুলতা' নয় স্রেফ 'লতা'। তোমরা প্রোমোট করবে তো!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
রোমেল ভাই, পড়লাম, অনেক কিছুই মাথার উপরে দিয়ে গেল (আমি কবিতা তেমন বুঝিনা, পড়িওনা, এমনকি এই "বনলতা সেন" কবিতাটাও আমি পুরোটা পড়িনি কখনো )
তবে এই
প্যারাটা চরম লাগলো।
অ.ট. আমাকে চিনেছেন?
------------------------------------------
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস
তবুও তো ভাই কারোরই নাই, একটুখানি হুঁশ।
ভাই,
যে মুহূর্তে আপনার মন্তব্যের জবাব লিখছি সেই মুহূর্তে স্ত্রী একখানা ইস্ত্রী হাতে ধরিয়ে দিয়ে বল্ল, "তুমি না ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, এই নাও ইস্ত্রী নষ্ট, জলদি ঠিক করো"। আমি বলি, "আমার স্ত্রী তো ভালই আছে, তাঁর আবার কি সমস্যা হল"।
অ.ট. চিনেছি ভাই, আপনি সেই ব্যক্তি যাকে সাঁকো নাড়াবার কথা বলতে মানা ;)। ফেসবুকে গতকালই তো আপনাকে যোগ করলাম, তাই না? তা মিথিলা কেমন আছে?
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
রোমেল ভাই, আপনার সেন্স অফ হিউমারের প্রশংসা করতেই হয়।
আর ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার হয়ে যদি একটা আয়রন ঠিক করতে না পারেন তাহলে ক্যাম্নে কী?
মিথিলা ভালো আছে।
------------------------------------------
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস
তবুও তো ভাই কারোরই নাই, একটুখানি হুঁশ।
কবিতা নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ শুনলেই কেমন একটা লাগে! কবি নিজের গভীর অনুভবে গভীর আনন্দে যা রচনা করেন "বনলতা সেন" সেরকমই একটা রচনা। সেখানে কবি শুধু ক্ষুধাতৃষ্ণাক্লান্তিকামনাবাসনাপীড়িত একটা সাধারণ লোক মনে হয় নন। সেখানে তিনি এইসব ছাড়িয়ে অন্যকিছু। মানুষ কেবল কোনো বিরল মুহূর্তে ক্ষণিকের জন্য যার দেখা পায়, আর যার জন্য সারাজীবন অপেক্ষায় থাকে। "নিমেষের তরে শরমে বাধিল মরমের কথা হলো না/ তাহারই লাগিয়া জীবন জুড়িয়া রহিলো মরমবেদনা"। শীর্ষেন্দু "পারাপার" এ যাকে বলেন-- পৌষের ফিনিকফোটা জোছনায় পূর্বজন্মের কথা মনে পড়ি পড়ি করেও যখন পড়ে না।
নইলে আরো কত কবিতাই তো তার আগে পরে মানুষের কাছে এসেছে, সেসব তো "বনলতা সেন" হয় নি! পাঠক নিজের গভীর অনুভবে যা ধরতে পারেন, অনেক সময় বা তখনই পারেন না, অনেকদিন পরে স্বপ্নের ভিতরে মায়াপালকের মতন হয়তো সেই কবিতার কিছু লাইন তাকে ছুঁয়ে দিয়ে যায়, তা কি আসলেই বিচার-বিশ্লেষণের জিনিস?
লেখার জন্য ধন্যবাদ, পরেরটুকু লিখুন তাড়াতাড়ি।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
বোন,
ভেবেছিলাম জোর যত কমই হোক না কেন নিজের শক্তিতেই বলী থাকবো। আর তাছাড়া আমি তো আর 'জব্বারের বলী' লড়তে নামিনি, আহত চোখের কিনারে একফালি ভ্রুকুঞ্চন ফুটিয়েছিলাম শুধু। তাতেই যে এত অনাসৃষ্টি হবে, ভাবিনি। আপনার মন্তব্য অযাচিতেই যে আমায় এমন আনুকূল্যের স্নেহধারায় সিক্ত করবে, প্রত্যাশা করিনি। আপনাকে কৃতজ্ঞতা।
'বনলতা সেন' কবিতার একটি খসড়ার সন্ধান মিলেছে। সেখানে শরীরি-প্রেমের উল্লেখ তো নেই-ই, এমনকি বিন্দুমাত্র উল্লেখ নেই নাটোরের। জীবনানন্দের আরো দুটি খসড়া কবিতা 'বনলতা সেন'-এ পরিণত ও পক্ব। একটির বহিরাঙ্গ, অন্যটির অন্তঃসার। শরীরে-অন্তরে 'বনলতা সেন' প্রচণ্ডভাবে আছেন কিন্তু শরীরী-প্রেমে ভীষণভাবে অনুপস্থিত। 'বনলতা' এই নামটির উল্লেখ পাওয়া যায় ১৯৩৩ সালে রচিত কারুবাসনা উপন্যাসেও, সেখানেও তিনি অধরা। তাছাড়া 'হাজার বছর শুধু খেলা করে' কবিতার শেষ চরণে, বনলতা সেনের নাম উচ্চারিত, অবশ্যই অধরা প্রতিমূর্তিটি বজায় রেখেই। (সূত্র : "শুদ্ধতম কবি", আব্দুল মান্নান সৈয়দ)।
আপনি লিখেছেন,
কারুবাসনায় আছে,
দেখুন, আটপৌরে সাধারণ বনলতা একবার দেখা দিয়ে বর্ণনার অসাধারণত্বে কেমন অধরা, অশরীরী, সুপারন্যাচারাল কিন্তু চিরপ্রত্যাশী হয়ে উঠেছে। নিঃসন্দেহে সাব্লাইম। আপনার মন্তব্যের সাথে কি দারুণ মিলে যায়। তাইতো সুচেতা মিত্র বলেন,
এত কাছে তবু এত দূরে, এই তো জীবনানন্দের টেকনিক। কালে কালে তাকে নিয়ে ব্যঙ্গবিদ্রূপ তো অনেক হয়েছে, আবার সেসবের গন্তব্যও হয়েছে হিমাগারে।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
কবিতা নিয়ে আপনার আলোচনা ভালো লাগে। আজকে ভালো লাগলো -
পরের পর্ব আসুক চট জলদি।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
পরের পর্বে কাউকেই ঝগড়া করবার সুযোগ দেব না।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
লড়ে যায় কাপুরুষ ডরে যায় বীর......
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
আরো অনেক গুণের সাথে শয়তানি হাসিমাখা এই মানুষটির রসবোধের বিমুগ্ধ ঈর্ষা করি!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
পরের পর্বের অপেক্ষায়…......
আ-সি-তে-ছে......
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
এইটা মিস করে যাচ্ছিলাম। পড়ে মন্তব্য করুমনে।
আচ্ছা...
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
এ কি শুনালেন, ভাই। পরের পর্বে আকবর আলী খানের লেখা ট্যাগ করা যায়না? পড়তাম।
লালন ভাই,
ইহা নিজ কানে শোনা। না রে ভাই, তাঁর লেখা আমার কাছে নাই। গতবছরের এপ্রিল কিম্বা মে মাসে তাঁর একখানা প্রবন্ধ বই একবার নেড়ে চেড়ে দেখার সুযোগ হয়েছিল। প্রতিপাদ্য ‘লিঙ্গ ভিত্তিক বৈষম্যের অর্থনীতি’। আমার তাতে কোনই আপত্তি ছিলো না। কিন্তু 'বনলতা সেন' প্রসঙ্গটি যখন অর্থনীতি পাঠের দেয়াল টপকে বর্ণিত টিভি অনুষ্ঠানে কাব্যপাঠের আলোচনায় এসে গড়ালো তখনই ঘটলো এই বিপত্তি। বোধকরি পাণ্ডব দা বইটির কপি সংরক্ষণ করেছেন। তিনি দয়াশীল হলে আপনার অভীপ্সাপূরণ সহজতর হবে।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
যতক্ষণ পর্যন্ত একটা কবিতা কবির ভেতরে জন্মের প্রক্রিয়াতে থাকে ততক্ষণ সে কবির একান্তই ব্যক্তিগত সম্পদ।
যখন সে প্রকাশিত হয় পাঠকদের সামনে, তখন সেটা আর কবির একার থাকেনা। তাতে জুড়ে যায় পাঠকের নিজস্ব চিন্তার বুদবুদ। এখন পাঠক মাত্রই চিন্তার ভিন্নতা থাকতেই পারে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই বুঝতে পারছি, আপনি পোষ্টে উল্লেখিত কবিতাটিকে বোধের কোন স্তরে রেখেছিলেন। সেখানে বিদঘুটে টোকা পড়ায় আপনি ব্যথিত হয়েছেন। সবার ভাবনার সাথে নাইবা মিল খেলো আপনার ভাবনার, কী আসে যায় তাতে? নাটোরের বনলতা সেন স্বমহিমাতেই তো থাকবেন যেমনটি এতটা বছর ছিলেন। নাকি তার আসন টলে যাবে বলুন? আমি গুছিয়ে লেখতে পারিনা ভাইয়া। কিন্তু বিশ্বাস করুন, আপনার ব্যথার ব্যাপারটা বুঝেছি। পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন।
ধন্যবাদ বোন!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
আকবর আলী খান ‘বনলতা সেন’কে নাটোরের সম্ভাব্য রূপজীবা হিসাবে তার ধারণার কথা বেশ ছোট পরিসরে প্রথমে বলেন তার বই পরার্থপরতার অর্থনীতি নামক বইতে (আমার পড়া অনুসারে)। গতরাতে তার নতুন বই ‘অন্ধকারের উৎস হতে’ পড়লাম। সেখানে তিনি ইতিহাস, ভুগোল, বৌদ্ধ-দর্শণের আলোকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন। বনলতা সেন কবিতার শব্দের তাৎপর্যভিত্তিক বিশ্লেষণ সমালোচনাও করেছেন। তার ধারণার পক্ষে ভুমেন্দ্র গুহের গবেষণারও রেফারেন্স এনেছেন। আমি বলব তিনি তার ধারণার স্বপক্ষে খুব শক্ত ভিত্তি দাঁড় করিয়েছেন। কোন বিশ্লেষণ যে ঠিক সেটা এখন আর জানা যাবে না। কিন্তু আমি আকবর আলী খানের বিশ্লেষণে মুগ্ধ হয়েছি। বলতেই হয় আকবর আলী খানের বিশ্লেষণ যদি ঠিক হয়, আমি জীবনানন্দের ব্যাপারে আমার মুগ্ধতা নতুন করে বাড়ল। কী উপমার ব্যবহার!!
আমি বলব আপনি পড়ে দেখতে পারেন। ব্যাখ্যা ভাল লাগবে। ব্যাখ্যাটা জানার পর মুগ্ধতাও বাড়বে।
আমি আপনার সাথে একমত।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আকবর আলী খানকে ডিফেন্ড করে আরেকটু লিখতেই হচ্ছে। জনাব খানের প্রথম বইতে বনলতা সেনের ব্যাখ্যা আমার কাছে খুব একটা গ্রহণযোগ্য ছিল না। ষষ্ঠ পাণ্ডবের মন্তব্যের সূত্র ধরে দ্বিতীয় বইয়ের সন্ধান পেলাম। এবং ব্যাখ্যাটা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠল।
আকবার আলী খান তার বইতে স্বীকার করে নিয়েছেন কবিতা কবি ও কবিতা পাঠকের জন্য, সমাজবিদ্যা সবার জন্য। আমি নিজে কবি কিংবা কবিতা পাঠক নই, তাই আমার চিন্তাভাবনা কিছুটা ভিন্ন হতেই পারে। আকবার আলী খানের দেয়া এই কবিতার ব্যাখ্যাটা কিন্তু নারীসঙ্গবিহীন দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রায় কামার্ত নাবিকের দেহপসারিনীর উদোম বুকে মুখ ঘষে দু’দণ্ডের শান্তি খোঁজার মত আপাত ‘স্থূল’ নয়। আনেক গভীর, অনেক দার্শণীক দৃষ্টিতে দেখা/লিখা।
রাতে যখন আমি সেই চ্যাপ্টার পুরোটা পড়ে শেষ করি, তখন আমার কাছে এই নতুন ব্যাখ্যার আলোকে এই কবিতাটাকে অনেক বেশি সমৃদ্ধ মনে হয়েছে। একটা প্রেমের কবিতার চাইতে এই বিষাদময় সচেতনভাবে বাছাই করা দুর্দান্ত সব উপমা/রূপকের আড়ালে ঢাকা এই কবিতাকে আমার অনেক বেশি ভাল লেগেছে। গভীর রাতে ব্যাখ্যাটা পড়ার কবিতাটা যখন কবিতাটা আবার পড়ি, গভীর বিষাদে ছেয়ে যায় মন...। অভিভূত হই জীবনানন্দের রূপকের ব্যবহার দেখে...।
(আরেকটা কথা, রূপজীবাদের আমারা, আধুনিক মানুষরা যে দৃষ্টিতে দেখছি প্রাচীন যুগে অন্য ভাবে দেখা হত... এটাও জনাব খানের ব্যাখ্যায় এসেছে।)
নতুন মন্তব্য করুন