• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

হাঁটিতেছি

রোমেল চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন রোমেল চৌধুরী [অতিথি] (তারিখ: সোম, ২৫/০৪/২০১১ - ৫:০৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

দ্বিতীয় পর্ব

অন্যান্য আরো অনেকেরই মতো জীবনানন্দকে ঠিকমত বুঝে উঠবার আগেই ‘বনলতা সেন’-এর সাথে আমার পরিচয়। সেই পরিচয়ে তারুণ্যের মুগ্ধতাই ছিল বেশী। সে বয়সের মুগ্ধতার একটা আলাদা চরিত্র আছে। সেই চরিত্রগুণে সহজেই ‘বনলতা সেন’ ‘জীবনানন্দ’কে ছাপিয়ে যান। আমার প্রথম সেই পাঠ ছিল নিতান্তই অর্বাচীন পাঠকের পাঠ। তাই কবিতাটির প্রথম চরণেই খটকা লেগেছিল। ‘হাঁটিতেছি’, একি বিশ্রী গুরুচণ্ডালী। পাড়াগাঁর কবি, হয়তো অশিক্ষিত গোছের কিম্বা দেখো গিয়ে জাতেই উঠে নি। তখন আমার ‘নতুন দা’ স্বভাব হয়েছে। বাক্যের ব্যায়ামকেই কবিতা ভেবে ভুল করি। মিছিলের শ্লোগানের সাথে কবিতার চরণের পার্থক্য জ্ঞান করি না। ছন্দজ্ঞান কেবল অন্ত্যমিলেই সীমাবদ্ধ। আরো কিছুদিন পরে যখন অক্ষরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত, স্বরবৃত্তের নাম জানলাম তখনো ওদের চাল চেনার ধৈর্য হয়নি। পয়ার আর মহাপয়ার সে তো অতিদূর সমুদ্র পারের সবুজ ঘাসের দেশ। তাই ‘হাঁটিতেছি’ না লিখলে যে মহাপয়ারের ৮+৮+৬ মাত্রাফের হয়, সেই বোধোদয় হতে হতে আরো খানিকটা সময় পেরুল।

ইতিমধ্যে একদিন কলেজ লাইব্রেরীতে সদ্য কেনা একগুচ্ছ বইয়ের ফাঁকে উঁকি দিতেই দেখি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর “কবিতার ক্লাস” ও আব্দুল মান্নান সৈয়দের “শুদ্ধতম কবি”-এর দ্বিতীয় সংস্করণ। তখনো লেজারে উঠেনি বইগুলো, এক্সেসন নম্বরও লাগেনি গায়ে। কলেজ লাইব্রেরিয়ান ছিলেন বাবার দূরসম্পর্কের আত্মীয় মানুষ। পিতৃরূপ স্নেহ করতেন আমাকে। আবদারের জোর একটু বাড়াতেই ঝুঁকির খাঁচায় নিজেকে বন্দী করেই বইদুটো দিয়ে দিলেন এক সপ্তাহের জন্য। নীরেন্দ্রনাথের সেই বই-ই আমাকে প্রথম ছন্দ চেনালো। আর “শুদ্ধতম কবি” শেখাল কিভাবে নিতে হবে কবিতার পাঠ। কিশোরী মেয়ের আর মৃদুভাষী স্ত্রীর মুখের কোণে ফুটে উঠা বঙ্কিম হাসির রেখা উপেক্ষা করে আজও আমি কতবার যে সন্তর্পণে ফিরে ফিরে আসি এই দুটি বইয়ের কাছে!

‘শুদ্ধতম কবি’ পাঠ করেই আমি প্রথম বুঝতে পারি ‘হাজার বছর’-এর মানে। ‘হাজার’ যে অসীমের সূচক, সংখ্যার সীমানা পেরিয়ে অনন্তকালের সুবিশাল দিগন্তে সুদূরপ্রসারী, এই পথ হাঁটার সূচনা যে অনাদিকালের কোন এক অঙ্কুর-প্রহরে, সৃষ্টির প্রথম প্রহর থেকে নিরবধি যে এই হেঁটে চলা, তা বোঝাতেই তো ‘হাঁটিতেছি’। বাংলা ক্রিয়াপদের দীনতা ঘুচিয়ে দেবার কি বিস্ময়কর প্রত্যয়। এভাবেই বোধহয় কবিতায় নতুন করে যৌবনা হয় ভাষার শরীর। আরো বুঝি, এই হাঁটা সাধারণ কোন হাঁটা নয়, প্রত্যাশা-তাড়িত শিল্পীর অনুসন্ধানী পদযাত্রা, আলো ও অন্ধকারের যুগপৎ বিস্তারের মধ্যদিয়ে চিরকাঙ্ক্ষিতের সুলুক সন্ধান।

পুরো চরণটি আবারো পড়ি, “হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে”, একটি চমৎকার অতিশয়োক্তি (hyperbole)। তিনভাগ জল আর একভাগ স্থলের পৃথিবীর পথ বর্ণনায় ‘সিংহল সমুদ্র’ আর ‘মালয় সাগর’-এর পাশাপাশি তাই ‘বিম্বিসার’ ও ‘বিদর্ভ নগর’-কেও এনেছেন। কালের যাত্রায় প্রায়শই ছুটে গেছেন অতীত থেকে আরো অতীতে, ধুসর জগত থেকে দূর অন্ধকারে। লক্ষ্য করুন, অন্ধকার এখানে একটি মুখ্য কারিগর। উদ্দীপনা ও অপার রহস্যময়তা সৃষ্টি করে সে। আমরা কবিতার শেষ চরণে এসে দেখবো যে, এই অন্ধকারই শুধু থেকে যায়, চির-আরাধ্য দয়িতার সাথে অন্ধকারেই মুখোমুখি বসতে হয়।

প্রথম স্তবকের চরণে চরণে ক্লাইম্যাক্স বেড়েই গেছে। অবশেষে ঘোষিত হয়েছে ‘আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন’। ছন্দ চয়নেও তিনি কি কুশলী দেখুন! এই স্তবকটি রচিত নিয়মিত মহাপয়ারে, যাতে করে ক্লাইম্যাক্সের একটি সরলরৈখিক ব্যাপ্তি ঘটে। পাঠকের আগ্রহ যাতে একটু একটু করে গগনবিহারী হয়। এই স্তবকে খুঁজে পাই দুটি ব্যঞ্জনা (allusion), ‘বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে’ ও ‘দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে’। এ দুটি ব্যঞ্জনা আমাদের সুদূর ও আচ্ছন্ন অতীতে টেনে নিয়ে যায়। সেইসাথে অনন্তকাল ধরে পথ হাঁটার ব্যাপারটিকে আরো প্রতিষ্ঠিত করে। ‘জীবনের সমুদ্র সফেন’ একটি রূপক (metaphor)। তরঙ্গের আঘাতে সমুদ্র যেমন সফেন, বেদনা ও ক্লান্তির আঘাতে জীবনও তেমনি আর্ত। এমনই একটি প্রচ্ছন্ন তুলনা পাঠকের কাছে নাবিকের অসহায়ত্ব, অবসন্নতা ও বিক্ষত অবস্থাকে সততার সাথে প্রতিফলিত করে।

দ্বিতীয় স্তবকে যাবার আগে জীবনানন্দের আরো কিছু প্রাসঙ্গিক চরণ পড়া যাক। তাহলে বনলতা সেনকে ঘিরে কবির ভাবনার বিবর্তন হয়তো কিছুটা স্পষ্ট হবে। (কারুবাসনার উদাহরণটি দিয়ে কলেবর বৃদ্ধি করলাম না। আগ্রহী পাঠক ইচ্ছে করলে এই রচনায় তুলিরেখার প্রতিমন্তব্যে একটু ঘুরে আসতে পারেন।)

১. একটি পুরনো কবিতা

আমরা মৃত্যু থেকে জেগে উঠে দেখি
চারদিকে ছায়া ভরা ভিড়
কুলোর বাতাসে উড়ে ক্ষুদের মতন
পেয়ে যায়-পেয়ে যায়-অণু পরমাণু শরীর।

একটি কি দুটো মুখ-তাদের ভিতরে
যদিও দেখিনি আমি কোনো দিন-তবুও বাতাসে
প্রথম গার্গীর মতো-জানকীর মতো হয়ে ক্রমে
অবশেষে বনলতা সেন হয়ে আসে।

এখানে বনলতা সেন এসেছেন মৃত্যুর পর, কুলোর বাতাসে যখন বিন্দু বিন্দু ক্ষুদের কণা উড়ে এসে তাঁর অবয়ব রচনা করে। কবি মৃত্যু থেকে জেগে উঠে তাঁর এই আধিভৌতিক প্রতিমূর্তি দেখতে পাচ্ছেন। শস্যের কণা থেকে গড়ে উঠছে তাঁর শরীর।

২. বাঙালি পাঞ্জাবি মারাঠি গুজরাটি

বনলতা সেন
তুমি যখন নদীর ঘাটে স্নান করে ফিরে এলে
মাথার উপর জ্বলন্ত সূর্য তোমার,
অসংখ্য চিল, বেগুনের ফুরের মতো রঙিন আকাশের পর আকাশ
তখন থেকেই বুঝেছি আমরা মরি না কোনো দিন
কোনো প্রেম কোনো স্বপ্ন কোনো দিন মৃত হয় না
আমরা পথ থেকে পথ চলি শুধু-ধূসর বছর থেকে ধূসর বছরে-
আমরা পাশাপাশি হাঁটতে থাকি শুধু, মুখোমুখি দাঁড়াই;
তুমি আর আমি।

কখনো বা বেবিলনের সিংহের মূর্তির কাছে
কখনো বা পিরামিডের নিস্তব্ধতায়
কাঁখে তোমার মাদকতাময় মিশরীয় কলসি
নীল জলের গহন রহস্যে ভয়াবহ
মাথার উপর সকালের জ্বলন্ত সূর্য তোমার, অসংখ্য চিল,
বেগুনফুলের মতো রঙিন আকাশের পর আকাশ।

এই কবিতাতে কাল ও ইতিহাস-চেতনা আরো সম্প্রসারিত হয়েছে। কবি আমাদের নিয়ে এসেছেন বেবিলনে ও পিরামিডের দেশে। এই বনলতা সেন কিন্তু অন্ধকারের নয়, আলোর। কিন্তু তবুও আছে পথ হাঁটা, ধূসর বছর থেকে ধূসর বছরে। আছে প্রেম ও স্বপ্নের অমরতার কথা, প্রেমিক-যুগলের চিরদিন বেঁচে থাকবার কথা।

৩. শেষ হল জীবনের সব লেনদেন

শেষ হল জীবনের সব লেনদেন
বনলতা সেন।

কোথায় গিয়েছ তুমি আজ এই বেলা
মাছরাঙা ভোলেনি তো দুপুরের খেলা
শালিখ করে না তার নীড় অবহেলা
উচ্ছ্বাসে নদীর ঢেউ হয়েছে সফেন,
তুমি নাই বনলতা সেন।

তোমার মতন কেউ ছিল না কোথাও?
কেন যে সবের আগে তুমি চলে যাও।
কেন যে সবের আগে তুমি
পৃথিবীকে করে গেলে শূন্য মরুভূমি
(কেন যে সবের আগে তুমি)
ছিঁড়ে গেলে কুহকের ঝিলমিল টানা ও পোড়েন,
কবেকার বনলতা সেন।

কত যে আসবে সন্ধ্যা প্রান্তরে আকাশ,
কত যে ঘুমিয়ে রবো বস্তির পাশে,
কত যে চমকে জেগে উঠব বাতাসে,
হিজল জামের বনে থেমেছে স্টেশনে বুঝি রাত্রির ট্রেন,
নিশুথির (নিশুতির) বনলতা সেন।

এই কবিতায় বনলতা সেনের রূপটি স্বকীয়তায় অনন্য। তবু তিনি মাছরাঙা, শালিখ, নদীর ঢেউ, সবার আগে চলে যান নিরুদ্দেশের পথে। কবির পৃথিবীকে শূন্য মরুভূমি করে দিয়ে। বিদায় নিয়েও বনলতা সেন বিদায় নেন না। এখানে লক্ষণীয় যে, মাছরাঙা, শালিখ, নদীর ঢেউ এসব প্রাকৃতিক অনুষঙ্গের সঙ্গে বনলতাও যেন প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছেন। তাই হিজল জামের বনে স্টেশনে যখন রাত্রির ট্রেন থেমেছে, কবির মনে হয়েছে বনলতা সেন যেন ফিরে এসেছেন।

৪. হাজার বছর শুধু খেলা করে

হাজার বছর শুধু খেলা করে অন্ধকারে জোনাকির মতো:
চারিদিকে চিরদিন রাত্রির নিধান (/পিরামিড-কাফনের ঘ্রাণ);
বালির উপরে জ্যোৎস্না-দেবদারু ছায়া ইতস্তত
বিচূর্ণ থামের মতো: দ্বারকার (/এশিরিয়);-দাঁড়ায়ে রয়েছে মৃত, ম্লান।
শরীরে ঘুমে ঘ্রাণ আমাদের- ঘুচে গেছে জীবনের সব লেনদেন;
মনে আছে? শুধাল সে-শুধালাম আমি শুধু 'বনলতা সেন?'

লক্ষ্য করুন, সেই বনলতা সেন আবার এসেছেন। এবার দ্বারকায়। আর হাজার বছরের পথ হাঁটা এখন শুধুই স্মৃতি। উজ্জ্বল কিম্বা ধারাবাহিক কোন স্মৃতি নয়, অস্পষ্ট, ম্লান, আবছা, ক্ষয়িষ্ণু, ছেঁড়া ছেঁড়া স্মৃতি ‘বিচূর্ণ থামের মতো’ ভঙ্গুর, অন্ধকারে জোনাকির মতো’ বার বার জ্বলে নিভে যাওয়া। আধিভৌতিক।

আশাকরি, ‘বনলতা সেন’-কে ঘিরে কবির ভাবনার বিবর্তন সম্পর্কে পাঠকের মোটামুটি একটা ধারণা হয়েছে। এই ধারণা স্মরণে রেখে পরবর্তী স্তবকে হোক আনন্দবিহার।

পাদটীকা :

কবিতার চরণগুলো আন্তঃজাল থেকে তুলে দেয়া। সঠিক হলো কিনা, মিলিয়ে দেখতে পারিনি সময়াভাবে। সময় পেলে শুধরে নেব আশা রাখি, অবশ্য তাতে করে খুব একটা আলোচনার ছন্দপতন হবে বলে মনে হচ্ছে না। আজ এ পর্যন্তই, কথা দিয়েছিলাম এই পর্বেই সমাপ্তি টানবো। শরীরে কুলালো না। দেখি, পরের পর্বে ইতি টানতে পারি কি না।


মন্তব্য

দিগন্ত বাহার() এর ছবি

(Y) (Y)

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

(ধইন্যা)

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

আলোচনা এবং উদ্ধৃতি, দুই'ই অসাধারন লাগলো ভাই।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

কবিতার আলোচনা কতটুকু আপনার মনে ধরার যোগ্য হয়েছে তা জানিনা, তবে উদ্ধৃতিগুলো নির্জলা জীবনানন্দীয়, তাই সেগুলো নিজগুণেই অসাধারণ। আমি বলছি না জীবনানন্দীয় হলেই অসাধারণ হবে, তবে এগুলো অসাধারণ। ধৈর্য নিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আশাকরি ভবিষ্যতেও পসন্দ বা অপসন্দ নিয়ে হলেও সাথেই থাকবেন।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

মুস্তাফিজ এর ছবি

চমৎকার আলোচনা

...........................
Every Picture Tells a Story

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

ধন্যবাদ মুস্তাফিজ ভাই। আলোচনা চালিয়ে যাবার প্রেরণা পেলাম।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

সম্রাট আকবরের দ্বীন-ই-ইলাহী ফ্লপ মেরেছিলো, পাব্লিক খায় নাই। :D
আমাদের অব সচিব আকবরের বনলতা সেন বিষয়ক ফতোয়াও পাব্লিক খাবে না। ;)
মাঝখানে আমাদের রোমেল ভাইয়ের ঘুম এবং আরাম দুই-ই হারাম। তবে আলোচনা ফলপ্রসু হয়েছে। =DX

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

রিটন ভাই,
পাবলিক বড়ই সেয়ানা। সে 'খাবার' ফেলে 'দ্বীন-ই-ইলাহী', 'ফতোয়া' এসব খেতে চায় না। ;)

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

তুলিরেখা এর ছবি

কাল রাতেই পড়ছিলাম জীবনানন্দের কবিতা "হাওয়ার রাত" আর আইজাক আজিমভের গল্প "নাইটফল"। কোথাও মিল নেই পৃথিবীর দুই প্রান্তের এই দুই মানুষের, কেউ হয়তো কারুর কথা জানতেনও না। অথচ এদের এই সৃষ্টি দুটি পড়ে শিরশির করে ওঠে গা, মনে হয় কোনো গভীর ভিতরে এমন মিল কী করে? "হাওয়ার রাত" এ একেবারে শেষে কবির হৃদয় যখন তারায় তারায় উড়ে চলেছে আর "নাইটফল" এর একেবারে শেষে যখন কখনো রাত্রি না দেখা মানুষের গ্রহ পড়েছে উপগ্রহের ছায়ায় (আড়াই হাজার বছরে একবার ঘটে), নেমেছে দীর্ঘ রাত আর ফুটে উঠেছে তিরিশ হাজার তারা! মানুষে পাগল হয়ে পথে বেরিয়ে আগুনে ধ্বংস করে দিচ্ছে তাদের সভ্যতা, জ্যোতির্বিদ আটন কাঁদতে কাদতে বলছে, "আমি জানতাম না, জানতাম না, নিজেদের ছয়টি সূর্য ছাড়া আর কোনো কথা আমি জানতাম না।" মনে পড়ে যায় শরদিন্দুর "মরু ও সংঘ", পিথুমিত্ত একেবারে শেষে মরুঝড়ে ডুবে যাবার আগে যখন বলছে " "তমসো মা জ্যোতির্গময়, সারাজীবন আমি অন্ধ ছিলাম, অন্তকালে চক্ষু দাও। "

জীবনানন্দ পড়তে যাই বারে বারে তার এই নক্ষত্রস্পর্শী রাতগুলোর জন্য।রাত্রির অনুষঙ্গ কতভাবে যে এসেছে এই মগ্ন কবির লেখায়। কতবার যে পড়লাম আপনার এই লেখাটা! প্রিয় পোস্টে নিয়ে গেলাম।

ভালো থাকবেন।

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

বোন,
আপনার কল্যানে "নাইটফল" গল্পটি পড়লাম। নেট থেকে নামিয়ে। উপন্যাসটি পড়ার জন্য মন উচাটন হয়ে আছে। আচ্ছা, এই গল্পের প্লট উপন্যাসে এসে মনে হয় আরও বিস্তৃত হয়েছে, তাই না?

জীবনানন্দ পড়তে যাই বারে বারে তার এই নক্ষত্রস্পর্শী রাতগুলোর জন্য। রাত্রির অনুষঙ্গ কতভাবে যে এসেছে এই মগ্ন কবির লেখায়।

যথার্থ বলেছেন। তাঁর আরেকটি অনুষঙ্গ আমাকে মুগ্ধ করে। সেটি হলো অন্ধকারের অনুষঙ্গ। কখনো তা 'প্রধান আঁধার' (আট বছর আগের একদিন), একান্তই মানসলোকী। কখনো মানসলোকের সম্পূর্ণ বিপ্রতীপ, চিত্রল ও বহির্লোকস্থ, 'সুকেশী অন্ধকার', যা 'সুর্য অস্তে চলে গেলে খোঁপা বেঁধে নিতে আসে' (১৯৪৬-৪৭), কখনো অনুপ্রাসের দোলায় দুলতে দুলতে এগিয়ে যাওয়া রূপকের পুর্বপদ, 'চুল তাঁর কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা' (বনলতা সেন)। তাই আব্দুল মান্নান সৈয়দ বলেন,

কিন্তু অন্ধকার আর তমসার প্রতিরূপ নয়, বিশেষ্য নয়, কোনো এক রহস্যময় অপার অর্থদ্যোতনায় বারংবার ব্যবহার করেছেন এই কবি (শুদ্ধতম কবি)।

ভালো থাকুন।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

আব্দুর রহমান এর ছবি

কবিতা ভালো লাগে, যারা কবিতা ভালোবাসেন তাদেরও ভালো লাগে।

"বাক্যের ব্যায়ামকেই কবিতা ভেবে ভুল করি। মিছিলের শ্লোগানের সাথে কবিতার চরণের পার্থক্য জ্ঞান করি না। ছন্দজ্ঞান কেবল অন্ত্যমিলেই সীমাবদ্ধ।"

মনে হল যেন আপনি আমার বর্ণনা দিচ্ছেন। আমি আজও নতুনদা, তবু ভালো লাগে কবিতা, বুঝে না বুঝে।

------------------------------------------------------------------
এই জীবনে ভুল না করাই সবচেয়ে বড় ভুল

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

চমৎকার লাগলো আপনার মন্তব্য। আজকের এই বেগের জগতেও মুমূর্ষু হয়েও আবেগ বেঁচে আছে। ভাবতেই ভালো লাগে। কন্ঠ আমাদের যত ক্ষীণই হোক, আসুন না অতি অস্ফুটে বিড় বিড় করে নিজেদের কানে কানে বলি, একান্তই নিজেদের জন্য।

যে কবিতা শুনতে জানেনা
সে দিগন্তের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে,
যে কবিতা শুনতে জানেনা
সে সূর্যকে হৃদপিণ্ডে ধরে রাখতে পারে না।
যে কবিতা শুনতে জানেনা
সে আজন্ম ক্রীতদাস থেকে যাবে।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

তাসনীম এর ছবি

চমৎকার।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

ধন্যবাদ, তাসনীম ভাই।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

কবিতা বিষয়ক আলোচনা পড়ি না, কবিতার স্বাদ মরে যায় :(
কবিতাই তো বুঝি না :(

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

তাইলে দূরে গিয়া মরি? ;)

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

আয়নামতি1 এর ছবি

চমৎকার লাগলো আলোচনা (Y)

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

ধন্যবাদ বোন, আলোচনা এগিয়ে নেবার প্রেরণা পেলাম।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

কুটুমবাড়ি [অতিথি] এর ছবি

চমৎকার। (Y)

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

ধন্যবাদ। গাঁয়ের লোক যেমনটি করে বলে, তেমনি করে বলি, "আর এক রাত (আরেক পর্ব, এই অর্থে) থেকে যান, কুটুম"।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

তিথীডোর এর ছবি

কবিতা ভাল্লাগে, কবিতাখোরদেরও বড় ভালু পাই।
কিন্তু দুঃখের কথা হলো--

কবিতাই তো বুঝি না

হ। :S

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

:)

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

রু (অতিথি)  এর ছবি

কাজের খুব চাপ যাচ্ছে। কাজের এক একটা ধাপ শেষ করতে পারলে সচলায়তন পড়ে নিজেকে পুরস্কার দেই। গোল এক্সিড করতে পারলে বাড়তি পুরস্কার হিসাবে কমেন্ট করি। এই লেখাটা দুইদিন আগে পড়েছিলাম, কমেন্ট করতে পারিনি, আজকে করছি। খুব ভালো লাগলো। কবিতা আমি খুব একটা বুঝিনা। এই লেখাটা পড়ে আমার এখন আফসোস হচ্ছে না বোঝার জন্য।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

আমরা কমবেশি সবাই অনুধাবনের একই স্তরে আছি, ভাই। আমি মনে করি, কবিতা বোঝার জন্য যে গুণটি বা মতান্তরে দোষটি থাকা সবচেয়ে জরুরী, তা হলো কবিতার জন্য অপার ভালোবাসা, অভিন্নার্থে, "কাবান্ধ" হওয়া। আসুন অনেক ভালোবাসা নিয়ে কবিতা পড়ি। যদি কখনো এই রহস্যময়ী যুবতী একটি বারের জন্যেও নেকাব সরিয়ে নেয়, এমন প্রতীক্ষার সুখে বুঁদ হয়ে।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

তিথীডোর এর ছবি

'যে কবিতা শুনতে জানে না
সে সন্তানের জন্য মরতে পারে না।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে ভালোবেসে যুদ্ধে যেতে পারে না।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে সূর্যকে হৃৎপিণ্ডে ধরে রাখতে পারে না।' :)

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

:)

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

ধুর, ছাইপাশ কি না লিখেছি ভাই! $)

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

পোয়েট অব এ ডিমাইজ এর ছবি

কী চমৎকারই না লেখেন!! (Y)

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

ধুর, ছাইপাশ কি না লিখেছি ভাই! $)

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

পোয়েট অব এ ডিমাইজ এর ছবি

আসুন অনেক ভালোবাসা নিয়ে কবিতা পড়ি। যদি কখনো এই রহস্যময়ী যুবতী একটি বারের জন্যেও নেকাব সরিয়ে নেয়, এমন প্রতীক্ষার সুখে বুঁদ হয়ে।

দারুণ বলেছেন ভাইয়া!!!

আর সময় পেলে এই কবিতাটি পড়বেন ভাইয়া। :)

আসমা খান, অটোয়া। এর ছবি

চমৎকার লেখা। ধন্যবাদ।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

(ধইন্যা)

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।