পৌরুষ

রোমেল চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন রোমেল চৌধুরী [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ১৮/০৭/২০১২ - ১২:০০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গত পর্ব

“ও কোথায়?”, মিসেস উইলসন জিজ্ঞেস করেন গ্যারেজে নেমে এসে।

“উপরে ওর কামরায় গিয়েছে”, দ্বিগুণ জোশে সদ্য লাগানো পাঞ্চবলটির উপর প্রমাণ সাইজের একটা ঘুসি বসিয়ে বলেন মিঃ উইলসন, “তদারকি করেছিলে তো ঠিকঠাক? শক্ত করে ঠিকমতো লাগিয়েছে তো এটা?”

“দুপুরের খাবারের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে তো! ও এখন কামরায় কি করছে?”

“ও বলছিল, ওর কিছুটা বিশ্রামের প্রয়োজন।”

“মনে তো হচ্ছে তুমি খুব স্বস্তিতে আছো। তের-চৌদ্দ বছরের ছেলে, কোথায় ওর পেট জুড়ে খিদে থাকবে মস্ত হা করা দৈত্যের মতো। তা না টেবিলে যখন দুপুরের খাবার দেয়া হয়েছে, ও কিনা নিজের কামরায় বিশ্রাম নিচ্ছে।”
“দেখো, আমি কেমন সেটা আমি জানি...

“নিজের কামরায় শুয়ে আছে, বিশ্রাম করছে, এতই ক্লান্ত যে খাবার খেতে আসার শক্তিটুকু অবশিষ্ট নেই, তুমি ওকে সমস্ত চরাই-উৎরাই হিঁচড়ে নিয়ে বেরিয়েছ, ওর সবটুকু শক্তি নিংড়ে নিয়েছ, তোমার একটি মাত্র...”

“আমরা এমন কিছুই করিনি যা ওর বয়সী একটি ছেলের কাছ থেকে যৌক্তিকভাবে আসা করা যায় না।

“তুমি কিভাবে জানবে কতটুকু ওর জন্য পরিমিত”, মিসেস উইলসন দাবী করে বসলেন, তোমার ছেলেবেলায় তুমি তো ওরকম কিছু করনি। তাহলে তুমি কিভাবে জানবে যে কতটুকু পরিমিত...”

“দেখো, আমি আমার ছেলেবেলা কাটিয়েছি শুধুমাত্র পড়ালেখা করে। সবসময় শুধু পড়া, পড়া আর পড়া। সে সময় সবার মনকে রাহুর মতো গ্রাস করে রেখেছিল বেকার জীবনের বিভীষিকা আর শঙ্কা। আমাকে কখনও একটি বাইসাইকেল পর্যন্ত কিনে দেয়া হয়নি। আমি কখনও বক্সিং করিনি, কখনও নৌকা বাই নি, কখনও এমন কিছুই করবার সুযোগ পাইনি যা কিনা নিজের শরীর গঠনের জন্য সহায়ক হতে পারে। শুধুই কাজ, কাজ, কাজ। এই পরীক্ষায় পাশ দাও, তো ঐ সার্টিফিকেটটা নাও। হ্যাঁ, আমি...আমি সেগুলোর সবকিছু করেছি। এখন আমি সু-প্রশিক্ষিত। একটা নিরাপদ চাকুরী করছি। কিন্তু তুমি তো জানো কেউই আমাকে শরীর গঠনের জন্য উৎসাহ দেয়নি। আমি যখনই তা করতে চেয়েছি তারা আমাকে নিরুৎসাহিত করেছে।”

“বেশ তো তাতে কি হয়েছে? তুমি তো ঠিকই আছো...”

“অনুগ্রহ করো”, স্ত্রীর কথায় দ্রুত বাঁধা দিয়ে বলে উঠেন মিঃ উইলসন, “আমি ঠিক নেই আর তুমিও তা জানো। স্বাভাবিক উচ্চতার পুরুষের চাইতে আমি খাটো। আমার বুক সমতল আর আমি...”

“কি আবোল তাবোল বকছো, তুমি আমার চাইতে লম্বা, আর আমি...”

“এটা ঠিক জেনো, আমার কোন সন্তান আমার মতো এরকম রোগা শরীর নিয়ে বেড়ে উঠতে যাচ্ছে না...”

“না, এমন অতিরিক্ত খাটুনি সহ্য করতে না পেরে ওঁ নির্ঘাত হৃদরোগ বাধিয়ে বসবে, কারণ তোমার তো সেই সামান্য কাণ্ডজ্ঞানটুকু নেই যে...”

“তাঁর হৃদপিণ্ড শতভাগ সুস্থ আছে। তিন সপ্তাহও অতিক্রান্ত হয় নি ডাক্তার এসে ওকে সেসব পরীক্ষা করে গেছেন”

“বেশ, তাই যদি হবে তবে সে কেন এত বেশী ক্লান্ত হয়ে পড়ে? ওঁর বয়সের একটা ছেলে খাবার-ভর্তি টেবিলে হামলে না পড়ে কেন এখন বিছানায় পড়ে আছে?”

একটি ক্ষীণ ছায়া এসে খোলা দরজায় দুপুরের সূর্যের ঝলমলে আলোর খানিকটা আড়াল করে দাঁড়ালো। সেদিকে তাকিয়ে উইলসন দম্পতি একসাথে তাদের ছেলেকে স্বাগত সম্ভাষণ জানান।

“খিদে পেয়েছে মা, লাঞ্চ তৈরি?”

“তোমার অপেক্ষায়, হাত ধুয়ে খাবার টেবিলে আস”, গ্রেস উইলসনের মুখ আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে উঠে।

“বাবা শোন,” মিঃ উইলসন বলতে থাকেন, “তুমি যদি ওটাকে বাম হাত দিয়ে আঘাত করো আর ফিরতি পথে সেটাকে ডান হাত দিয়ে ধরে ফেল, তবেই সেটা হবে চমৎকার রিং ট্রেনিং।” পাঞ্চবলের উপরে আনাড়ি ভাবে দুটি ঘুসি ছুঁড়ে দিয়ে তিনি বলেন, “একেই বলে রাইট ক্রস।”

“ভালোই হলো, মজা করা যাবে এটা দিয়ে”, শান্ত দৃষ্টি ফেলে ছেলে যখন বাবার দিকে তাকালো, বাবা তখন নতুন কেনা দস্তানা দুটির আবরণ খসাচ্ছেন।

“নাও, এ দুটি পড়ে হাতে ফেল, এগুলি নিছকই ট্রেনিং গ্লোভস, তোমার হাতের মুষ্টি দুটোকে শক্ত করবার জন্য, পরে তুমি অবশ্যই একজোড়া আসল গ্লোভস পাবে। এগুলো শুধু পাঞ্চবলের উপর আঘাত করবার জন্যে ব্যবহার করবে। ”

“লাঞ্চ”, খাবার ঘর থেকে মিসেস উইলসনের গলার আওয়াজ শোনা গেল।

“দস্তানা হাতে ওটার উপরে একটা ঘুষি লাগাও তো দেখি”, সোৎসাহে বলে উঠেন মিঃ উইলসন।

“চলো খেতে যাই... ”

“চলো, তবে যাবার আগে অন্তত একটা ঘুসি। এ পর্যন্ত তোমাকে ওটার উপর একটিও ঘুসি লাগাতে দেখি নি”

ছেলে দস্তানা জোড়া হাতে নিলো। ডান হাতে একটি দস্তানা পড়ে পাঞ্চবলটির কেন্দ্রবিন্দু লক্ষ্য করে সতর্কভাবে একটি পরিমিত ঘুসি লাগালো। তারপর বললো, “চলো, এখন খেতে যাওয়া যাক।”

“লাঞ্চ!”

“আচ্ছা, আমরা আসছি...”

(চলবে)


মন্তব্য

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

তাড়াতাড়ি দেন পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

তাড়াতাড়ি জল মিশানো দুধ দিতে চাই না, ভাই।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

পড়ছি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

ওকে।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

কড়িকাঠুরে এর ছবি

আবার... মন খারাপ -
তাড়াতাড়ি- পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

সরি, সত্যিই সরি।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

বন্দনা এর ছবি

এমন কঠিন বাপজান ভালু পাইনা। পরের পর্ব আসুক রোমেলদা।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

ঠিক। এমন মা-ও কি ভালু পাবেন?

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

পড়তে শুরু করার সময় বুঝি নাই সিরিজ......সিরিজে আমি অতৃপ্ত থাকি। পরের পর্বের জন্য তাগিদ দেয়া গেল হাসি

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

এতদিনে সবটুকু এসে গেছে, চাইলে পড়ে নিতে পারেন।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

শাব্দিক এর ছবি

পড়ছি পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

ধন্যবাদ।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

ধন্যবাদ।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

অতিথি লেখক এর ছবি

পর্ব গুলি আরেকটু বড় করা যায়না???

মনের রাজা টারজান,

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

যায়। আপনার অভিমত আমলে নিয়ে শেষ পর্ব দীর্ঘ হলো।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

কাজি মামুন   এর ছবি

গল্পটি পড়তে দারুণ লাগছে! আচ্ছা, গল্পটি কি অণু ভাইয়ের বর্নিত 'ফ্রেড জিপসনের দ্য হাউণ্ড ডগ ম্যান' এর অনুবাদ?

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

না, গল্পটি বিখ্যাত আমেরিকান গল্পকার জন ওয়েইনের লেখা। গল্পটির নাম 'ম্যানহুড'।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

অতিথি লেখক এর ছবি

পড়ছি পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম
বেশ ঝরঝরে অনুবাদ।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

ধন্যবাদ।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

জুন এর ছবি

পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

যদি ভাব কিনছ আমায় ভুল ভেবেছ...

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

জুনের তদানীন্তন নাম কি? চোখ টিপি

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।