পরম্পরার খোঁজে

রোমেল চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন রোমেল চৌধুরী [অতিথি] (তারিখ: শনি, ২৫/০৮/২০১২ - ৭:৫৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পিপাসা তোমার মিটবে কি আস্বাদে
সেই ভেবে ভেবে গোধূলি থিতোয় সাঁঝে
রঙিন মুখোশ ছুঁড়ে ফেলে নীল খাদে
জন্মালে ফের ক্লেদজ কুসুম মাঝে

চিবুকে তোমার আবীরের রাঙা লাল
ক্ষণিকের সুখে মেলে ধরে হিল্লোল
শিকে ঝলসানো মাংসের মতো কাল
পুড়িয়েছ যত বুড়ো কবিতার লোল

দ্যোতক-দ্যোতিত মিলে মিশে একাকার
তোমার পাত্র ছেঁড়াখোঁড়া তলাহীন
দেরিদা সেখানে হেবারমাসের সাথে
বিরোধাবসানে কাটায় রাত্রিদিন

শাশ্বতের বুকে ছুরি মেরে কে আবার
ক্ষণিক তৃপ্তি টেনে তুলে মায়া ফাঁদে
কালাহারি বুকে না পাওয়ার হাহাকার
থেমে থেমে রোজ একটু আধটু কাঁদে

আলস্যভরে আঁখি মেলে মাঝে মাঝে
মরা চোখে চাখো ফিকে নীলিমার নিশা
প্রাণের পেয়ালা লহমায় করে খালি
ঢেলে রাখো তাতে মিশকালো ঘন তৃষা

গাজোয়ালি ঢঙে লিখে রাখো ধারাপাতে
কতটা এগুলো সময়ের চ্যারিয়ট
বীতাধুনিকের আকাঙ্ক্ষা দিনে-রাতে
চুমুকে চুমুকে ভিজিয়ে নিচ্ছে ঠোঁট

বহুবাচনিক আহ্লাদে গড়ো যাকে
তাকে ভেঙে ফের টুকরো টুকরো করো
যে কুঁড়ি জেগেছে ফুকোর শিশ্ন-রসে
অবলীলাভরে গলা তার টিপে ধরো

ব্যাধের মতো ধেয়ে এলে পরিণতি
তোমাকে বাঁচাবে অলস আত্মরতি ?
জীবনের ক্লেদে ক্রমে ডুবে যেতে যেতে
কি করে ঠেকাবে পতনের অধোগতি ?


মন্তব্য

দিগন্ত বাহার* এর ছবি

চলুক

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

হাসি

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

চলুক

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

হাসি

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

শাশ্বতের বুকে ছুরি মেরে কে আবার

শাশ্-শোতো উচ্চারণ করলে মাত্রাবৃত্তে ছন্দপতন ঘটে। মাত্রা গুনলে, শাশ্বতের বুকে = ৭, ছুরি মেরে কে আ = ৬, বার = ২। বাকি কবিতা ৬,৬,২। অক্ষরবৃত্তের মতন এইটা যুক্তাক্ষরের ভার নিতে পারে না।

সুধীন দত্তের 'আত্মরতি', বিষ্ণু দের ঘোড়সওয়ারি, কোনোটাই উত্তারাধুনিকতার উপযুক্ত না। বোদলেয়ারের মতনই তারা পাঁড় মডার্নিস্ট।

দেরিদা-হেবারমাসের দ্বন্দ্বের মূলে ভাষা। ভাষাকেন্দ্রিক দর্শন কি সমাজ, ইতিহাস, রাজনীতি ইত্যাদি বুঝতে সাহায্য করে? আমার তো মনে হয় করে। কেউ একজন না বুইঝাই কৈছিল 'শব্দই ব্রহ্ম'। না 'বুইঝাই' আমরা সাধারণ সঠিক কথাটা কই, এইটা বুঝের বিষয়।

সুতরাং, কবিতা বুঝি কম। ফুকোকে বুঝতে হইলে, 'পাগলামির ইতিবৃত্ত' পড়তে হবে, আমার মতে। ছোট বই।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

রোমেল চৌধুরী এর ছবি


জল-কাদার মমতাময়ী পরিবেশে আজন্ম বসবাস করে বাঙালির জিহ্বা পেয়েছে গীতল উচ্চারণের সাবলীলতা। ক্ষেত্র বিশেষে উচ্চারণের আভিজাত্য ত্যাগ করে সে ছন্দের পতন ঠেকায়। তাই ‘শাশ্-শোতো’ সেখানে অবলীলায় ‘শাশত’ হয়ে পড়লে তেমন অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখা হয় না।


আধুনিক ও উত্তরাধুনিক ক্যারাভানের চাকার দাগ পরীক্ষা করে সেটাকে পশ্চিমের নিজস্ব ঘটনা বলেই মনে হয়। ফলে, মনে জাগে একটি খুবই প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন। ওই দুই ক্যারাভানের ঝা-ঝকঝকে ‘চাকার দাগের’ সাথে আমাদের দেশজ সাহিত্য-সংস্কৃতির ‘নগ্ন গেঁয়ো পদক্ষেপের’ সম্পর্ক কোথায়? উত্তররৈবিক ক্যারাভান অনুসরণ করে যে আধুনিক পদচ্ছাপ অবলোকন করি তার কতটুকু আমাদের দেশজ? কতটুকুই বা আমদানিকৃত পণ্যের মতো পশ্চিমের পোড়োজমির ঘ্রাণ বিকিরিত করে? দু’টি বিশ্বযুদ্ধের পর যে প্রখর পাখি ক্রমাগত ঠুকরে খেয়েছে মানুষের পোড় খাওয়া মূল্যবোধ, বাংলার মাটি বাংলার জলে তার উপস্থিতি একেবারেই অস্বীকার হয়ত করি না, তবে আধিপত্যে সন্দেহ করি। এলিয়টের পোড়োজমি তাই সুধীনে অতিশায়িত, জীবনানন্দে দেশজ রসে ফলবতী, অবচেতনে বিশ্বস্ত।


সুধীন ও বিষ্ণুকে পশ্চিম ধাঁচের মডার্নিষ্ট বলতে চাই। সুধীন তো নিজেই বলে গেছেন, “...আমার কাব্যজিজ্ঞাসায় আধার আধেয়ের অগ্রগণ্য”। —বাংলা সাহিত্যে নৈরাশ্যবাদের প্রথম প্রবক্তা সুধীন্দ্রনাথের কাব্যে অবিরল উপর্যুপরি নিখিল নাস্তির ঘোষণা। আমাদের মনে সংশয় হয় যে মন থেকে ঈশ্বরের ছায়া সরাতে না পেরেই কি অবিশ্বাসের ঘোষণায় তিনি এত উচ্চকিত? বিষ্ণু দে’র সাথে সুধীনের তফাৎ হচ্ছে বিষ্ণু দে মননের মুখোশ এঁটে রোমান্টিকতারই চর্চা করেছেন। আর বোদলেয়ার প্রসঙ্গে শার্ল দুব, ফ্রাসোয়া মারিয়াক কিম্বা টি এস এলিয়ট প্রমুখ জাঁদরেল সমালোচকগণ একমত যে, বোদলেয়ার গভীরতম অর্থে ধার্মিক ছিলেন। তবুও মনে হয়, ধর্মে স্থিতপ্রজ্ঞ ছিলেন না তিনি। বোদলেয়ের সচেতনভাবেই পাপচর্চা করেছিলেন এবং তা থেকে আনন্দ আহরণ করেছিলেন। বোদলেয়ারের ছিল ‘অরিজিনাল সিন’ বা ‘আদিম পাপ’। — তাঁরা যে পাঁড় মডার্নিষ্ট সে বিষয়ে সহমত রেখেই তাঁদের মাঝে বিরাজমান পার্থক্য সম্পর্কে অভিমত লিখলাম।


দেরিদা-হাইডেগার-হেবারমাসকে নিয়ে এত স্বল্প পরিসরের আলোচনায় তুষ্ট নই। শুধু প্রশ্ন রাখি, পরাতাত্ত্বিক পক্ষপুট থেকে কবিতার ভাষাকে মুক্ত করা আদৌ কি সম্ভব? হলে, কি করে? দেরিদার ‘শব্দব্রহ্ম’ নিয়ে ততটুকুই ভাবতে চাই, যতটুকু আমাকে তার বিনির্মাণ তত্ত্ব বুঝতে সহায়তা করবে। কারণ, দেশজ জারকরসে সিক্ত করে কখনো যদি বীতাধুনিক কবিতা রচনার প্রয়োজন অনুভূত হয়, তবে কোন পথে সংগত হবে যাত্রা, বিনির্মাণের নাকি বিনিশ্চিতির পথে, যাত্রারম্ভের পূর্বে পথিকের জন্য সেটি নির্ধারণ বোধকরি জরুরী ।


ফুকো ও চমস্কিকে নিয়ে লিখুন না। তাঁদের সমাজদর্শন বীতাধুনিক সাহিত্যের জন্য কোন সংকেত বহন করে, তাও তো জানা দরকার।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

১। অবজ্ঞা না।
২। সহমত।
৩। দ্বিমত নাই।
৪। একটু দৌড়ের উপ্রে আছি।
৫। ফুকোকে নিয়া লিখব, সামনেই।
ধন্যবাদ।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

কর্ণজয় এর ছবি

এই কবিতাটা কমপক্ষে বিশবার পড়লাম। (তার চেয়েও বেশি হবে) । কখনই পুরোটা নয়। কখনও দুই লাইন। কখনও চার লাইন। কখনওটা পড়ে গেছি পুরোটাই কিন্তু টের পেয়েছি আমি পড়ি নি কিছুই। তাও একবারে না। একটু পড়লাম। অনুভূতিটা হলো একটা অচেনা পাহাড়ি গ্রামে গেছি। মদ খেতে বসেছি। একটু পর পর আশ্চর্য সব দৃশ্য ভেসে আসছে। শব্দে - বাক্যে -

রঙিন মুখোশ
ছুঁড়ে ফেলে নীল খাদে

শিকে ঝলসানো মাংসের মতো কাল

গাজোয়ালি ঢঙে লিখে রাখো ধারাপাতে
কতটা এগুলো সময়ের চ্যারিয়ট ----------------

বহুবাচনিক আহ্লাদে

থেমে থেমে রোজ একটু আধটু কাঁদে

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

লিখবার পর আমারও তেমনি মনে হয়েছে। হয়ত কিছু লিখেছি, কিছুই হয়তো লিখিনি।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

রণদীপম বসু এর ছবি

জীবনের ক্লেদে ক্রমে ডুবে যেতে যেতে
কি করে ঠেকাবে পতনের অধোগতি ?

পতন তো অধোগতিরই হয়। কিঞ্চিৎ আরোপিত মনে হয়েছে। কেবল ছন্দ মেলানোর জন্যেই কি এই প্রচেষ্টা ! তারচে 'পতনের গতি' শব্দযুগলের আগে দুই মাত্রার একটা শব্দ ব্যবহার করেও এর সমাধান করা যেতো মনে হয়। তবে চূড়ান্ত বিচারের কবির সার্বভৌমত্বকে অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ করছি না।

আর কিছু কিছু চিত্রকল্প মাখানো পঙক্তি তো অসাধারণ লেগেছে ! যেমন-

প্রাণের পেয়ালা লহমায় করে খালি
ঢেলে রাখো তাতে মিশকালো ঘন তৃষা

অবশ্য গোটা কবিতাটাই তো চিত্রকল্পময় ! হা হা হা !!
কবিতাটা পড়ে সেই বোধটা আবারো জেগেছে যে, পাঠক হিসেবেও শব্দ-শিল্পের জ্ঞান থাকাটা জরুরি। নইলে অনেক কিছু মিস হয়ে যায়। নিজের ঘাটতিটাও একইসাথে কড়া নেড়ে গেছে এখানে।

অনেক ধন্যবাদ রোমেল।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

রণদীপম বসু,
দাদা, আপনার মতামত আমাকে অমোঘ নিয়তির মতো বড়বেশি প্রভাবিত করে। আমি এতবেশি প্রভাবিত হতে চাই না।

অ ট-- আপনার সাথে মুখোমুখি দীর্ঘ আলোচনায় তৃপ্ত হবার ইচ্ছে বহুদিনের।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

আমার পড়া আপনার কবিতার মধ্যে এটা অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিতাগুলোর মধ্যে একটা। একটি সুন্দর কবিতা দিয়ে দিন শুরু হলো।

পিপাসা তোমার মিটবে কি আস্বাদে
সেই ভেবে ভেবে গোধূলি থিতোয় সাঁঝে
রঙিন মুখোশ ছুঁড়ে ফেলে নীল খাদে
জন্মালে ফের ক্লেদজ কুসুম মাঝে

চিবুকে তোমার আবীরের রাঙা লাল
ক্ষণিকের সুখে মেলে ধরে হিল্লোল
শিকে ঝলসানো মাংসের মতো কাল
পুড়িয়েছ যত বুড়ো কবিতার লোল

দ্যোতক-দ্যোতিত মিলে মিশে একাকার
তোমার পাত্র ছেঁড়াখোঁড়া তলাহীন
দেরিদা সেখানে হেবারমাসের সাথে
বিরোধাবসানে কাটায় রাত্রিদিন

শাশ্বতের বুকে ছুরি মেরে কে আবার
ক্ষণিক তৃপ্তি টেনে তুলে মায়া ফাঁদে
কালাহারি বুকে না পাওয়ার হাহাকার
থেমে থেমে রোজ একটু আধটু কাঁদে

আলস্যভরে আঁখি মেলে মাঝে মাঝে
মরা চোখে চাখো ফিকে নীলিমার নিশা
প্রাণের পেয়ালা লহমায় করে খালি
ঢেলে রাখো তাতে মিশকালো ঘন তৃষা

গাজোয়ালি ঢঙে লিখে রাখো ধারাপাতে
কতটা এগুলো সময়ের চ্যারিয়ট
বীতাধুনিকের আকাঙ্ক্ষা দিনে-রাতে
চুমুকে চুমুকে ভিজিয়ে নিচ্ছে ঠোঁট--অসাধারণতম


_____________________
Give Her Freedom!

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

মৃত্যুময় ঈষৎ,
তোমার মন্তব্যের উত্তর আমার জানা নেই।
ব-হু-দি-ন লিখো না। শীঘ্রি তোমার লেখা পড়তে চাই।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

মৃত্যুময় ঈষৎ(অফ্লাইন) এর ছবি

লিখতে ভুলে গেছি মন খারাপ এ বেদনা জাগায়.....................

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।