দুপুর বেলার চিক চিক করা রোদ্দুর আর শোঁ শোঁ হাওয়ার ভেতর দিয়ে হুলিয়া মাথায় নিয়ে একজন ছন্নছাড়া যুবক গ্রামে ফিরছে, মনে তার সহস্র প্রশ্নের ঝাঁক ঘুরছে অবিরত, কেউ তাঁকে চিনতে পারছে কি পারছে না, না কোন রাজনৈতিক নেতা, না কোন পরিচিত সাধারণ জন। সময় এতটাই পাল্টে নিয়েছে তাঁকে, বিক্ষুদ্ধ, টালমাটাল, অসাধারণ, বিস্ফোরণ্মুখ, অগ্নিঝরা, গর্ভবতী সময়। সেই অসাধারণ সময়ের এককোণে খুব সাধারণ কিছু ঘটনা ঘটছে বারহাট্টার ট্রেনে, স্টেশনে, পরিবর্তনহীন গ্রামের পথে-প্রান্তরে, নীল আকাশে আর সবুজে। যুবকের বুক থেকে উপচে পড়া অবাধ্য ভালোবাসার ঢেউ এসে ভাসিয়ে দিয়ে যাচ্ছে গ্রামের ভাঙা মেঠোপথ, কালো মাটির আল। একের পর এক রচিত হয়ে যাচ্ছে অদ্ভুত মায়াকাড়া কিছু দৃশ্যপট।
গ্রামটা পরিবর্তনহীন হলেও বাড়িটা কিন্তু অনেক বদলে গেছে, নিভৃত ঘরেও কিছু আগুনের স্ফুলিঙ্গ।
যুবক হারিয়েছে তার শৈশবের সব চিহ্ন, সময় এসে ছোবল দিয়ে নিয়ে গেছে যেন। আপাততঃ সেসব তার দূর স্মৃতির পাতায় মোড়া। সেখানে ছায়াপ্রদায়ী অশোক গাছ ছিল, প্রেম ছিল, ছিল রোমাঞ্চ এবং হাহাকার।
কি এই গ্রাম, কি এই বাড়ি? তবে কি বাড়িতে বাড়িতে এই পরিবর্তন গ্রামটাকে পাল্টে দেবার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে? কীভাবে পরিবর্তন আসবে? কোন পথে? একই প্রশ্ন ভিন্ন ভিন্ন সুরে বাজছে সবার মনে।
ঘাস-জঙ্গল-গর্ত-লতা-গুল্ম-আগাছার গাঢ় বন পেরিয়ে যুবক এসে বাড়িটার সামনে দাঁড়ায়।
আমি বাড়ির পেছন থেকে দরোজায় টোকা দিয়ে
ডাকলুম,— “মা’৷
বহুদিন যে-দরোজা খোলেনি,
বহুদিন যে দরোজায় কোন কন্ঠস্বর ছিল না,
মরচে-পরা সেই দরোজা মুহূর্তেই ক্যাচ ক্যাচ শব্দ করে খুলে গেলো৷
বহুদিন চেষ্টা করেও যে গোয়েন্দা-বিভাগ আমাকে ধরতে পারেনি,
চৈত্রের উত্তপ্ত দুপুরে, অফুরন্ত হাওয়ার ভিতরে সেই আমি
কত সহজেই একটি আলিঙ্গনের কাছে বন্দী হয়ে গেলুম;
সেই আমি কত সহজেই মায়ের চোখে চোখ রেখে
একটি অবুঝ সন্তান হয়ে গেলুম৷
কিন্তু কীভাবে পরিবর্তন আসবে? কোন পথে? যুবকের মুখের দিকে চেয়ে থাকা সারি সারি চোখ। সেখানে আলোর পিদিম হয়ে জ্বলছে বাংলার বিভিন্ন ভবিষ্যত৷ উৎকন্ঠিত সেইসব চোখে চোখে নামছে কালো অন্ধকার, যুবক চিৎকার করে কন্ঠ থেকে অক্ষম বাসনার জ্বালা মুছে নিয়ে বলছে:
আমি এসবের কিছুই জানি না,
আমি এসবের কিছুই বুঝি না৷
হে যুবক, সময় তোমাকে বঞ্চিত করে নি, তুমি জেনেছ বাংলার ভবিষ্যৎ। প্রশান্ত চিত্তে তাই জন্মদিনের শুভেচ্ছা গ্রহণ কর।
মন্তব্য
কী চমৎকার ব্যাপার! তাঁর জন্ম দিনে টাইগারদের পক্ষ থেকে অসাধারণ একটা উপহার পাওয়া
হয়ে গেলো!! ভালোলাগার কবিকে জন্মদিনের শুভকামনা।
আরেকটু লিখতে পারতেন কিন্তু ভাইয়া। অনেকদিন পর আপনাকে দেখে ভালো লাগলো
লেখাটার মধ্য দিয়ে দু'টো মেসেজ দেবার ছিল। একটি উচ্চারিত, অন্যটি অনুচ্চারিত। যতটুকু লেখেছি তাতে দুটোই দেয়া হয়েছে।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
সারা দুপুর কেটে গেল তাঁর কবিতা পড়ে।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এই ছোট্ট কিন্তু চমৎকার পোষ্টটিতে তাঁর জন্মদিনটি মনে করিয়ে দেয়ার জন্য। আমার থেকে সামান্য কিছু।
নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ
ফুলদানি
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
বেশ তো! সারা দুপুরের পড়া থেকে কবির কাব্যভাবনার ক্রমবিবর্তিত রূপটি আমাদের জানান। সেটি জানতে পারলে মন্দ হত না।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
অত জ্ঞান নেই। আর, পাঠ করি আন্তর্জালে যা হাতের কাছে পাই। কিছু ভাল লাগে ফিরে পড়ায়, কিছু নুতন আবিষ্কারে।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
আমাকে একবার ষষ্ঠ পাণ্ডব বলেছিলো, ব্লগের সুবিধে হলো যে লেখক পাঠকের মিথস্ক্রিয়ায় একটি রচনা মন্তব্যে-প্রতিমন্তব্যে পূর্ণতা পায়। তেমনি না হয় হতো। তবে তো অনেক জ্ঞানী হবার প্রয়োজন দেখছি না। আপনি লিখতেন, আলোচনায়-মন্তব্যে-প্রতিমন্তব্যে সেটা হৃষ্ট-পুষ্ট হতো!
আবৃত্তি যে ভালো লেগেছে সেটা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
তোমার এত্ত এত্ত গুণ ক্যান দা’ভাই? আবৃত্তি শুনছি। চমৎকার হয়েছে সত্যিই
দেবদ্যুতি
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
রোমেল ভাইয়ার আগে আমিই শুনে নিলেম দাদাই
চমৎকার নাটকীয়তা ফুটিয়েছো কিন্তু!
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
এক কালে নির্মলেন্দু গুণের কবিতার বিরাট ভক্ত ছিলাম। তখন তাঁর কাব্য সঙ্কলন 'নির্বাচিতা' কেনার জন্য বেশ চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পয়সার অভাবে পেরে উঠিনি। এরপর অনেকগুলো বছর ফেব্রুয়ারি আসলে 'নির্বাচিতা' কেনার চেষ্টা করে গেছি। প্রতি বছর এই বইটার দাম কেবল বেড়ে গিয়ে আমার জন্য একটা মুভিং টার্গেট হয়ে দাঁড়ায়। তারপর এক সময় আমার হাতে 'নির্বাচিতা' কেনার মতো যথেষ্ট পয়সা হয়, কিন্তু ততোদিনে 'নির্বাচিতা'র আবেদন আমার কাছে শেষ হয়ে যায়। আমার আর কোনদিনই 'নির্বাচিতা' কেনা হলো না।
আমার কাছে মনে হয়, একটা সময়ে গুণের কবিতা সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে চলেছে, কখনো কখনো সময়কে হারিয়ে দিয়ে বহু সামনে চলে গেছে। কিন্তু এখন তাঁর কবিতাকে অতীতের ভূত বলে মনে হয়। একান্তই ব্যক্তিগত মত, যে কেউ দ্বিমত পোষণ করতে পারেন।
গুণ সব্যসাচী লেখক। তাঁর মোট গদ্যের পরিমাণ বোধকরি তাঁর মোট পদ্যের পরিমাণকে ছাড়িয়ে গেছে। গুণের একটা অসাধারণ কিশোর উপন্যাস আছে - 'কালো মেঘের ভেলা' যাতে রফিকুন্নবীর দুর্দান্ত ইলাস্ট্রেশনও আছে। যারা পড়েননি, পড়ে দেখতে পারেন।
শুভ জন্মদিন হে কৈশোরের প্রিয় কবি! দীর্ঘায়ু হন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তুমিও এই পোস্টে আয়নামতির প্রথম মন্তব্যের জবাবটি দেখ।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
খুব বেশি কিছু পড়া হয়নি নির্মলেন্দু গুণের কবিতা কিন্তু শুভেচ্ছা জানানো আপনার লেখাটা ভালো লাগল খুব
দেবদ্যুতি
ধন্যবাদ, দেবদ্যুতি!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
দুনিয়া অদ্ভুত! একূল ভাঙে, ওকূল গড়ে। গতকাল রুদ্রেরও প্রয়াণ দিবস ছিল...
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ঠিক বলেছেন। সত্যানন্দ শুধু সাক্ষী থেকে যায়।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
নামকরণের সার্থকতা!!!
দেবদ্যুতি
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
প্রিয় কবির জন্মদিনে শুভকামনা, দীর্ঘায়ু হোন ভালোলাগার কবি। গুণের প্রিয় কবিতার কিছু অংশ
"জন্মের সময় আমি খুব কেঁদেছিলাম,
এখন আমার সবকিছুতেই হাসি পায় ।
আমি জন্মের প্রয়োজনে ছোট হয়েছিলাম,
এখন মৃত্যুর প্রয়োজনে বড় হচ্ছি"।
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
ভাল লাগলো ভাইয়া।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
ভাই, অনেকদিন পর আপনাকে পেয়ে অনেক ভাল লাগছে। প্রিয় কবির জন্মদিনে শুভকামনা। আপনার জন্যও মুঠো মুঠো শুভকামনা।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
তোমার মুঠোভর্তি শুভকামনা পেলাম, খুলে দেখি মুঠোভর্তি আশ্চর্য রোদ্দুর!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
আমি নির্মলেন্দু গুনের কবিতা পড়েছি অনেক দেরীতে। দেরীতে পড়ার কারণে আক্ষেপ হয়েছে আমার ঠিক বয়েসে এসব কবিতা কেন চোখে পড়লো না। এখনো পুরোনো সেই কবিতাগুলোতে চোখ বুলিয়ে আনন্দ পাই।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
কবির সারাটি জীবন অনেক অনেক বাঁক পেরিয়েছে। সেগুলো তাঁর কাব্যেও রেখে গেছে সুস্পষ্ট ছাপ। তাঁর রচিত কবিতাগ্রন্থগুলির নামের দিকে একনজর দৃষ্টি দিলেও এর কিছুটা বুঝে নিতে পারা যায়। নিচে একটি কালানুক্রমিক তালিকা দিলাম। কিছু আবিষ্কার করতে পারবেন বৈকি,
কবিতাগ্রন্থঃ
প্রেমাংশুর রক্ত চাই (১৯৭০)
না প্রেমিক না বিপ্লবী (১৯৭২)
কবিতা, অমিমাংসিত রমণী (১৯৭৩)
দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনী (১৯৭৪)
চৈত্রের ভালোবাসা (১৯৭৫)
ও বন্ধু আমার (১৯৭৫)
আনন্দ কুসুম (১৯৭৬)
বাংলার মাটি বাংলার জল (১৯৭৮)
তার আগে চাই সমাজতন্ত্র (১৯৭৯)
চাষাভুষার কাব্য (১৯৮১)
অচল পদাবলী (১৯৮২)
পৃথিবীজোড়া গান (১৯৮২)
দূর হ দুঃশাসন (১৯৮৩)
নির্বাচিতা (১৯৮৩)
শান্তির ডিক্রি (১৯৮৪)
ইসক্রা (১৯৮৪)
প্রথম দিনের সূর্য (১৯৮৪)
আবার একটা ফুঁ দিয়ে দাও (১৯৮৪)
নেই কেন সেই পাখি (১৯৮৫)
নিরঞ্জনের পৃথিবী (১৯৮৬)
চিরকালের বাঁশি (১৯৮৬)
দুঃখ করো না, বাঁচো (১৯৮৭)
১৯৮৭ (১৯৮৮)
যখন আমি বুকের পাঁজর খুলে দাঁড়াই (১৯৮৯)
ধাবমান হরিণের দ্যুতি (১৯৯২)
কাব্যসমগ্র, ১ম খণ্ড (১৯৯২, সংকলন)
কাব্যসমগ্র, ২য় খণ্ড (১৯৯৩, সংকলন)
অনন্ত বরফবীথি (১৯৯৩)
আনন্দউদ্যান (১৯৯৫ )
পঞ্চাশ সহস্র বর্ষ (১৯৯৫ )
প্রিয় নারী হারানো কবিতা (১৯৯৬)
শিয়রে বাংলাদেশ
ইয়াহিয়াকাল (১৯৯৮ )
আমি সময়কে জন্মাতে দেখেছি (২০০০)
বাৎস্যায়ন (২০০০)
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
নামের রাস্তায় নেমে
গায়ে ধূঁলো মেথে
এবার ঘুমুতে যাবো।
নতুন মন্তব্য করুন