দেখা হইলো চক্ষু মেলিয়া - ২

নীলম এর ছবি
লিখেছেন নীলম [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ৩০/০১/২০১৩ - ৬:০৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সিলেট থেকে শ্রীমঙ্গলের দূরত্ব ৮৭ কিলোমিটার। আমরা সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে শ্রীমঙ্গল থেকে রওনা হলাম। সারাদিন পিক-আপের ছাদে বসে হৈ-হুল্লোড় করে ঘুরে বেড়ালেও সন্ধ্যার পরের বাতাসে তা বেশ কঠিন হয়ে উঠছিল। আমাদের শীতবস্ত্র ভর্তি ভারী ব্যাগ দেখে মুচকি হেসে দিনের বেলায় শীত অবশ্য উধাও হয়ে গিয়েছিল। সকল শীতবস্ত্রের ব্যবহার তাই আমরা সন্ধ্যার পরের এই পিক-আপ ভ্রমণেই করছিলাম। যাই হোক, ঘন্টা দুয়েক শীতে কাঁপাকাঁপি করে আমরা পৌঁছে গেলাম সিলেট। এবারে উঠলাম বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের রেস্টহাউসে।

বান্ধবীর বাবার কল্যাণে থাকা-খাওয়ার বেশ সুব্যবস্থা ছিল এখানে। রেস্টহাউসের টিভি রুমের দখল নিতে গিয়ে পরিচয় হলো নিজের বিশ্ববিদ্যালয়েরই এক বড় ভাইয়ের সাথে। আরো পরিচয় হলো সেখানকার চীফ ইঞ্জিনিয়ার আঙ্কেলের সাথে। বেশ রসিক মানুষ, ভালো গল্প জুড়ে দিলেন আমাদের সাথে। তার দুই মেয়ে নাকি আমাদের চেয়ে বয়সে কিছুটা বড়। তারা এখানে থাকে না। গল্পে বোঝা গেল বেশ মিস করেন তিনি মেয়েদের। ঘুরে বেড়ানোর এই দিকটা আমার বেশ ভালো লাগে। নৌকার মাঝি চাচা থেকে শুরু করে সরকারী চাকুরে চাচা সবার সাথেই বেশ গল্প জমিয়ে ফেলা যায়। ঢাকায় এই সুযোগটা সবসময় হয় না। গল্প করার চেয়ে কেন জানি রিকশাওয়ালা আমাকে ঠকিয়ে পাঁচ টাকা বেশি নিয়ে ফেললো কিনা সেদিকেই মন পড়ে থাকে।

পরদিন সকাল ন’টার মধ্যে আমরা তৈরি হয়ে নিলাম। আজকের গন্তব্য লালাখাল হয়ে জাফলং। গাড়ি আসতে দেরী হওয়ায় আমরা রেস্টহাউসের বাইরে বেরিয়ে এলাম। আগের রাতে এসে পৌঁছনোয় এটার আশেপাশে সেভাবে খেয়াল করা হয়নি। দেখলাম রেস্টহাউসের সামনে বেশ সুন্দর ঘাট বাঁধানো পুকুর। শীতের সকালের রোদে এই পুকুরে ঘাটে বসে বেশ আয়েশ করে চা পান পর্ব সেরে নিলাম আমরা।

এরপর শুরু হল যাত্রা। বেশ সুন্দর গল্প করতে করতে যাচ্ছি আমরা। এক ঘন্টা পার হয়েছে কি হয়নি, ড্রাইভার জানালেন গাড়ি নষ্ট। এতে করে আর যাওয়া যাবে না। বান্ধবী মালিহা ছিল শ্রীমঙ্গল আর সিলেটে যাতায়াত এবং থাকার ব্যবস্থার দায়িত্বে। সে বিভিন্ন জায়গায় ফোন করে জানালো আরেকটা গাড়ি আসছে। তবে আমাদেরকে এখানেই গাড়ি না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কি আর করা! আশেপাশে কি আছে না আছে সেসব আবিষ্কারে লেগে গেলাম আমরা। জায়গার নাম দেখলাম চিকনাশুল। সেখানে শুনলাম একটা চা ফ্যাক্টরী আছে। লোকজনকে জিজ্ঞেস করে করে সেটার সন্ধানেই হাঁটতে থাকলাম।

সবার দিক নির্দেশনায় জানা গেল যে ফ্যাক্টরী আমরা খুঁজছি সেটা সামনে। কিন্তু কত সামনে এটা কিছুতেই বোঝা যাচ্ছিল না। সামনে যাচ্ছিতো যাচ্ছি-ই। পথে একটা ছোট জঙ্গল, ছোট টিলা, ছোট্ট একটা পুকুর ভর্তি শাপলা ফুল এসবই আবিষ্কার করে ফেললাম কিন্তু চা ফ্যাক্টরী আর পাই না। অবশেষে দেখা মিললো কাঙ্খিত ফ্যাক্টরীর। জানা গেল একে আজকে শুক্রবার এবং আমরা অনুমতি নিয়ে আসিনি। তাই এর ত্রিসীমানায় আমরা প্রবেশ করতে পারবো না। অগত্যা শাপলা ফুল দেখতে সেই পুকুরেই চলে গেলাম।

বেশ খানিকক্ষণ ঘোরাঘুরি, চা-বিস্কুট খাওয়ার পরে আরেকটা গাড়ি এসে গেলো। সেটাতে চড়ে ঠিক হলো দেরি যখন হয়ে গিয়েছে তখন আগে জাফলং ঘুরে ফেরার পথে লালাখাল হয়ে আসবো। পথে তামাবিল গিয়ে একটা আবশ্যিক ছবি তুলে নিয়ে আবার ছুটতে থাকলাম জাফলং এর দিকে। আমিসহ আমাদের মধ্যে অনেককেই জাফলং প্রবলভাবে আকর্ষণ করছিল। আমরা জাফলং এর এমন কিছু ছবি দেখেছিলাম আর গল্প শুনেছিলাম যে প্রত্যাশার পারদ বেশ উঁচুতে উঠে গিয়েছিল। যদিও আজ পর্যন্ত কখনই বাংলাদেশ আমাকে হতাশ করেনি। উত্তরে তেঁতুলিয়ার সোনালী গমক্ষেত থেকে শুরু করে দক্ষিণের সুনীল সেন্ট মার্টিন সবাই আমাকে কোন না কোনভাবে মুগ্ধ করেছে। তারপরেও জাফলং এর ব্যাপারে কেমন অন্যরকম একটা উত্তেজনা কাজ করছিল।

তবে ২০১৩ সালের জানুয়ারী মাসে আমরা যে জাফলং দেখলাম তা ছিল এরকম ধূলি-ধূসরিত-

এরকম লোকে-লোকারণ্য-

ফলে এরকম নোংরা-

এবং এভাবে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো পাথর-

প্রথমবারের মত বাংলাদেশ আমাদেরকে মুগ্ধ করতে ব্যর্থ হলো। এমনিতেই শীতকাল হওয়ায় ডাউকিতে পানি ছিল কম এবং চারপাশে সবুজের সেই আধিক্য ছিল না। তার উপর জানুয়ারী মাসের এক শুক্রবারে অনেকেই চলে এসেছিলেন (মাঝি চাচার মতে লাখখানেক মানুষ!) জাফলং এ পিকনিক করতে। সবচেয়ে হতাশাজনক ছিল চারিদিকের নোংরা পরিবেশ। ততক্ষণে সবাই মিলে জায়গাটা এতোটাই নোংরা করে তুলেছিলেন যে আমাদের একবার পানিতে নামতে ইচ্ছাও করলো না। এবং তার উপরে ছিল বিএসএফ এর তদারকি। ‘ইয়ে গুড়িয়া, হাট যাও। ইয়ে ইন্ডিয়া হে।’

এই অবস্থায় মাত্র আধা ঘন্টা সেখানে কাটিয়ে আমরা উঠে এলাম দুপুরের খাবার খেয়ে নিতে। অনেক খাবারের দোকানই দেখলাম সেখানে। তবে আমরা ঠিক নৌকার ঘাটের কাছেই একটা হোটেলে খাবার সেরে নিলাম। তেমন একটা ভালো খাবার না অবশ্য। যাই হোক, বেশ মন খারাপ করেই পিক-আপে চড়ে বসলাম। শুরু হলো লালাখালের উদ্দেশ্যে যাত্রা। মূল সড়ক থেকে কিছুটা ভেতরে গিয়ে ১৫-২০ কিলোমিটারের মত কাচা রাস্তা পেরিয়ে যেতে হয় লালাখালের নৌকার ঘাটে। সিলেট থেকে জৈন্তাপুর যাওয়ার পথে সারী নদীর ঘাট থেকেও নৌকায় করে লালাখালে যাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে নৌকার খরচ একটু বেশি পড়ে। যাই হোক, ওখানে নেমেই আমরা চটপট লেগে গেলাম নৌকা ঠিক করার কাজে। এখানে নৌকার ভাড়া যা চাইবে তার অর্ধেক থেকে দরাদরি শুরু করা ভালো। এক ঘন্টার জন্য সাড়ে চারশ’ টাকায় নৌকা ঠিক করে আমরা উঠে পড়লাম।

লালাখাল তার সৌন্দর্য দিয়ে দিনের প্রথমভাগের দুঃখ অনেকটাই ভুলিয়ে দিতে সক্ষম হল। স্বচ্ছ নীল পানিতে আর চারদিকের সবুজে লালাখালকে মনে হচ্ছিল আমাদের থাইল্যান্ড।


আমরা ছাড়া আর দু’ একটা ছোট ছোট গ্রুপ ছিল। বলতে গেলে জাফলং এর তুলনায় তেমন কোন মানুষই ছিল না এখানে। মনে হচ্ছিল কোন এক নির্জন দ্বীপে বুঝি চলে এসেছি।

হাত-পা জমিয়ে দেয়ার মত বরফ-শীতল পানিতে পা ডুবিয়ে, বালুতে লাফালাফি করে, লালাখালের নিদর্শনস্বরুপ ছোট্ট ছোট্ট পাথর কুড়িয়ে, বেশ কিছু ছবি উঠে বেলা ডোবার সাথে সাথে আমরা আবার নৌকায় উঠে পড়লাম।

এখানকার ঘাটে নাজিমগড় রিসোর্টের একটা রেস্টুরেন্ট আছে। নাম রিভার কুইন। যেখানে কিছু একটা খাবার অর্ডার করলেই আপনি ভেতরে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পাবেন। সেখানে এসে আমরা চা-নাস্তা করলাম। ভেতরে খানিকক্ষণ ঘুরেও বেড়ালাম। এবার আবার পিক-আপে চড়ে সোজা সিলেটে।

পরের দিনটায় আমরা একটু ঢিলেঢালা প্ল্যান করে রেখেছিলাম। সকাল দশটার দিকে নাস্তা সেরে চলে গেলাম শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। উদ্দেশ্য বিশ্ববিদ্যালয়টাও ঘুরে দেখা আবার পুরনো বন্ধু-বান্ধবদের সাথেও দেখা করা। আগেই শুনেছি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ভাষ্কর্যের বিরুদ্ধে জামাত-শিবিরের তৎপরতার কারণে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেশ জোরদার করা হয়েছে। তাই গেটে যখন গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞেস করা হল আমরা কার সাথে দেখা করতে যাচ্ছি তখন তেমন অবাক হলাম না। সুচেতা তার এক বন্ধুর নাম বলাতে সাথে সাথেই আমাদের ভেতরে ঢুকতে দেয়া হল। বন্ধু-বান্ধব যাদেরকে খবর দেয়া হয়েছে তারা কেউ তখনো ক্যাম্পাসে এসে পৌঁছয়নি। তাই আমরা নিজেরাই খুঁজে খুঁজে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে চলে গেলাম।

বেশ উঁচু এক টিলার উপরে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার। অনেক সিঁড়ি টপকে উপরে উঠে একসময় আমরা পৌঁছলাম সেখানে।

শহীদ মিনারে ফোটোসেশন চলাকালীন সময়েই সুচেতার বন্ধু (যার পরিচয় দিয়ে আমরা ক্যাম্পাসে ঢুকেছি!) এসে উপস্থিত হল। তারপর তার দিক-নির্দেশনায় আমরা পুরো ক্যাম্পাস ঘুরে দেখতে শুরু করলাম। জানলাম শাবিপ্রবি'তেই রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লাইব্রেরী। এর মাঝেই চলে এলো আমারও ছোটবেলার বান্ধবী। যার সাথে দেখা হল পুরো একযুগ পরে! রাজশাহীতে একইসাথে স্কুলে পড়েছি। ক্লাস সিক্সে উঠে দু'জনই বাবার চাকরীর কারণে চলে গিয়েছি দুই শহরে। এতোদিন পরে আবার দেখা। দু'জনই দু'জনকে আমরা খুব একটা বদলাইনি বলে সার্টিফিকেট দিলাম। বান্ধবীর সাথে গল্প আর শাবিপ্রবির ওয়াই-ফাই চালিয়ে যাচ্ছিলাম সমান তালে। এর মাঝে আরো অনেকেরই বন্ধু-বান্ধব এসে হাজির হল। সবাই সবার সাথে গল্পগুজব গ্রুপ ফটোসেশন শেষে তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ফিরে এলাম রেস্ট হাউসে।

দুপুরের খাবার সেরে ব্যাগ গুছিয়ে আবার পিক-আপে। এবারে গন্তব্য সুনামগঞ্জ। ভ্রমণের সবচেয়ে আনন্দময় সময় কেটেছে এই সুনামগঞ্জেই। যেমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তেমনি আতিথেয়তা। বাংলাদেশকে নিয়ে গর্ব বেড়ে গেছে আরো কয়েক গুণ। সেসব গল্প আর ছবি তুলে রাখলাম পরের পর্বের জন্য।

( সব ছবি তুলেছে মানে লেখায় অর্ধেক ভাষা দিয়েছে সুচেতা সেগুফতা এবং সামিহা সামরোজ মুমু)


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

ছবিগুলো দারুণ এসেছে, লেখাটাও তথ্যবহুল এবং মজার।

চলুক। পরের পর্বের অপেক্ষায়।

ফারাসাত

নীলম এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

শাপলা ফুলের ছবিটা অসংখ্যবার দেখার মত সুন্দর এসেছে

চলুক

নীলম এর ছবি

ধন্যবাদ। হাসি
এটা আমার বান্ধবী সুচেতা সেগুফতার তোলা। সিলেটে গিয়ে এবার প্রাণভরে শাপলা ফুল দেখেছি।

স্যাম এর ছবি

ভাল লেগেছে দুই পর্বই - আরো একটু তথ্য যোগ করলে ভবিষ্যতে যারা যাবে তাদের জন্য ভাল হত - যেমন সিলেট থেকে জাফলং যেতে কত সময় লাগে - এরকম টুকিটাকি কিছু।

নীলম এর ছবি

ধন্যবাদ, স্যাম দা। হাসি
পরের পর্বে এদিকে খেয়াল রাখবো।

উদ্ভ্রান্ত পথিক এর ছবি

-আমি গতবছর গেছিলাম জাফলং, লাউয়াছড়া। গিয়ে একেবারে হতাশ :(। জাফলং দেখে অনেক খারাপ লাগছে। ছোটোবেলায় যে সৌন্দর্য দেখছিলাম তার কিছুই নাই বলতে গেলে।
-লালাখাল যাওয়া দরকার একবার।
-লেখা এবং ছবিতে লেখা -গুড়- হয়েছে

---------------------
আমার ফ্লিকার

নীলম এর ছবি

ধন্যবাদ, ভাইয়া।
আমরা যা দেখলাম এবার জাফলং এ। পুরা কান্নাকাটি করার মত চেহারা বানায়ে ফেলছিলাম সবাই। লালাখাল দেখে আসেন। বেশ সুন্দর।
দুইটা বাদে সব ছবিই সুচেতার তোলা। হাসি

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

হ্যাঁ, দেখতেন যদি ষাট-সত্তর দশকের জাফলং ! আমি দেখেছি। আর বছর দুয়েক আগে গিয়েছিলাম। সত্যি, একটা সুন্দর দর্শনীয় স্থানকে যে কিভাবে মেরে ফেলা হলো, জাফলং হচ্ছে তার উদাহরণ।
ছবি এবং বর্ণন ভাল লেগেছে। আর ভাল লেগেছে তারুণ্যের উচ্ছলতা।
ভাল থাকুন। আনন্দে থাকুন।

নীলম এর ছবি

হ্যাঁ, অনেকেই যাওয়ার আগে বলেছিলেন যে এখন আর সেই জাফলং নেই। ভেবেছিলাম কতই আর খারাপ হবে, জাফলং-ই তো। কিন্তু যা দেখলাম তার জন্য একদমই প্রস্তুত ছিলাম না।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে পড়ে মন্তব্যে করার জন্য। হাসি

নীলম এর ছবি

হ্যাঁ, যাওয়ার আগে অনেকেই বলেছিল এখন আর সেই আগের জাফলং নেই। ভেবেছিলাম কতই আর খারাপ হবে, জাফলং-ই তো। কিন্তু গিয়ে যা দেখলাম তার জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলাম না।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে পড়ে মন্তব্য করার জন্য। হাসি

মেঘা এর ছবি

গত পর্বে বলেছিলাম না আমার আপু সিলেট গ্যাস ফিল্টে চাকরী করে? আপুর অফিস হচ্ছে চিকনাগুলে। চা বাগান শেষ হলেই গ্যাস ফিল্ডের এরিয়া। ওখানে পাশাপাশি দুটো চা বাগান আছে। একটা হলো খান টি ইস্টেট আর আরেকটা হলো হাবিব নগর টি ইস্টেট। হাবিব নগর টি ইস্টেটের সাথে টি ফ্যাক্টরি আছে। গত সেপ্টেম্বরে এইসব কিছু ঘুরে দেখে এসেছিলাম। ফ্যাক্টরির ভেতরে যেয়ে চা বানানোর প্রসেস দেখেছিলাম। খুব চমৎকার একটা অভিজ্ঞতা ছিল সেটা। তবে খুব কম সময় নিয়ে যেয়ে আসলে কিছুই দেখা সম্ভব না ওখানে। অনেক বড় জায়গা। আমি সাথে গেলে না হয় গ্যাস ফিল্ডও দেখিয়ে দিতাম সেই ফাঁকে খাইছে

এবার বেশি ছবি যোগ হয়েছে তাই দেখেও শান্তি পেলাম। লেখা সুন্দর। জাফলং এর অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে দেখা যায়! ২০১১ তেও এতো বাজে ছিল না। তবে আবার এখনো লালাখাল দেখা হয় নি মন খারাপ দেখি এই বছর যেভাবেই হোক আরেকটা ট্যুর দিতেই হবে!

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

নীলম এর ছবি

আরে, হ্যাঁ, হ্যাঁ ওখানে একটা গ্যাস ফিল্ডের সাইনবোর্ডও দেখেছিতো! বাহ, কেমন মিলে গেল। চা ফ্যাক্টরী ভেতরে শুনেছি খুব সুন্দর একটা গন্ধ পাওয়া যায়। সত্যি নাকি? এসব দেখতেতো আবার যেতে হবে।

লালাখাল দেখে আসেন তাড়াতাড়ি। এখনতো ভয় হয় কবে না জানি জাফলং এর মতো অবস্থা হয়ে যায়। মন খারাপ

মর্ম এর ছবি

গ্যাসফিল্ডের ভেতরের রাস্তায় বানরেরা মাঝে মাঝে বৈকালিক ভ্রমনে বেরোয়! মেইন গেটের কাছেই রাস্তার উল্টোপাশে একটা টিনের দোচালা ঘর, ওটাই চিকনাগুল পোস্ট অফিস

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

ঘুরাঘুরি খুব ভালো পাই, আফসোস আমি ঘুরতে গেলেই জন্মের প্যাঁচ লাগে।
শুধু ঘুরতে না যা করতে যায় তাতেই প্যাঁচ লাগে। মন খারাপ
এইসব কারনেই দেশে থাকতে তেমন ঘুরাঘুরি করতে চাইলেও করা হয়নি। বিভিন্ন কারনে আটকে গেছিলাম।
খুব খুব খুব ইচ্ছে আছে দেশে যেয়ে, দেশের আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়ানোর।

তোমার ঘুরাঘুরির গল্প খুব ভালো লাগছে আপু।
তোমার বন্ধুদের মত বন্ধুদের নিয়ে আমারও উচ্ছল সময় কাটাতে ইচ্ছে করছে। ইয়ে, মানে...

পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম। চলুক ঘুরাঘুরি, চলুক লেখালেখি। হাসি

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

নীলম এর ছবি

আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, আপু। হাসি

এদিক দিয়ে বেশ সুবিধা পেয়েছি আমি। আসলে দু-তিনজন অতি উৎসাহী থাকলে বাকি আরো অনেককে রাজী করিয়ে বেশ ঘুরতে বেরিয়ে পড়া যায়। আর আমরা যেটা দেখলাম ঘুরতে ঘুরতে, মেয়েরা দল বেঁধে এরকম ঘুরে বেড়ালে নিরাপত্তা নিয়ে অতটা সমস্যা হয় না। এখনো পর্যন্ত অধিকাংশ সময়ই দেখেছি মানুষ বেশ সমীহের দৃষ্টিতে দেখছে এবং যথাসাধ্য সাহায্য করতে চেষ্টা করছে।

আমাদের শুধু একবার ষ্টেশনে যাওয়ার পথে একজনের ব্যাগ ছিনতাই হয়েছিল যে ব্যাগে আবার ছিল আটজনের টিকেট! তারপরেও অবশ্য অনেক কিছু করে যেতে পেরেছিলাম আমরা। দেঁতো হাসি

যাই হোক, এবার দেশে এসে সব প্যাঁচ খুলে বেরিয়ে পড়ুন। হাসি

শিশিরকণা এর ছবি

লালাখালটাও ধ্বংস হবার আগেই দেখে আসতে হবে। আমরা বাঙ্গালিরা এমন কেন?

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

নীলম এর ছবি

আসলেই, আপু, আমরাতো ঠিক করেছিলাম ফিরে এসে কাউকে আর কোন সুন্দর জায়গার কথা বলবো না। বাংলাদেশ যে কত সুন্দর এটা বাংলাদেশের মানুষ যত কম জানবে ততই মঙ্গল। তারপরেও সচলের পাঠকদের উপর পূর্ণ আস্থা থাকায় এখানে লিখেই ফেলেছি।
অনেক ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। রিস্ক না নিয়ে তাড়াতাড়ি লালাখাল দেখে ফেলুন। হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

ধরি, ধন্যবাদ এক টাকা- যার আট আনা আপনার, আর বাকী চার আনা করে সেগুফতা আর মুমুর জন্য। (স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিসট)

নীলম এর ছবি

হাহা! ধন্যবাদ যথাস্থানে পৌঁছে দেয়া হবে। হাসি

শাফায়েত এর ছবি

জাফলং এ বর্ষাকালে গিয়েছিলাম, তাও সন্ধ্যাবেলায়, অন্ধকারে নৌকায় চড়তে দারুণ লেগেছিলো। কিন্তু শীতকালে গিয়ে আমার এক বন্ধু আপনার মতোই হতাশ হয়ে এসেছে। লালাখালে যেতে হবে পরেরবার সিলেটে গেলে।

যারা কোথাও ঘুরতে যাবেন তাদের প্রতি একটা অনুরোধ, প্লিজ ময়লাগুলো নির্দিষ্ট জায়গা ছাড়া ফেলবেননা।

নীলম এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

এই ছোট্ট কাজটুকুতে কেন যে সবার এতো অনীহা বুঝি না।

অদ্ভুত মেয়েটি এর ছবি

ছবিগুলা খুব সুন্দর
আহ কবে যে এভাবে ঘুরে বেড়াবো!!!!
খুব ভাল লাগল পড়তে

নীলম এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

অতিথি লেখক এর ছবি

বেশ সুন্দর জায়গা
(মুহাম্মাদ সারফারাজ হুসাইন)

নীলম এর ছবি

পুরো বাংলাদেশই আসলে অনেক সুন্দর। হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

মানুষের কোলাহল প্রকৃতিকে নষ্ট করে দিচ্ছে। পাহাড় ও নদীর একাত্মতা দেখতে হলে পার্বত্য জেলাগুলো সেরা।

অবুঝ শিশু

নীলম এর ছবি

পার্বত্য জেলাতেই একটু কম যাওয়া হয়েছে। সামনে ইচ্ছে আছে ওদিক থেকে একবার ঘুরে আসার।

অতিথি লেখক এর ছবি

জাফলং নিয়ে ছবির সাথে বর্ণনা দারুন লাগলো। আমরা আসলেই সব কিছুকে খুব সহজে নষ্ট করতে খুব পারদর্শী। ২০০২ সেন্টমার্টিন আর ২০১৩ এর সেন্টমার্টিন এর সৌন্দর্য অনেক অনেক ব্যবধান। সেখানেও অসংখ্য মানুষ আর তাদেরি অবহেলায় যেখানে সেখানে ময়লা বিসর্জন সেন্টমার্টিন এর পরিবেশকে করে ফেলেছে দূষিত আর অপরিছন্ন। ঠিক একি অবস্থা কেওকারাডংর। ২০১০ গিয়ে দেখলাম প্রকৃতি আর মেঘের মিলনমেলা আর ২০১২তে গিয়ে দেখি কেওকারাডং এর চূড়ায় মানুষের নিবাস। খুলে বসেছে থাকার আর খাওয়ার হোটেল। রেগে টং

লালখাল আমার যাওয়া হয়নি, আপনার ছবি দেখে বুঝলাম একবার হলেও যেতে হবে। লালখালের সবগুলো ছবি খুব ভালো হয়েছে, তবে প্রথমটি অন্যমাত্রার। ছেলেবেলার একটা দীর্ঘ সময় সিলেট কেটেছে আমার, তাই চা বাগান, ছোট ছোট নদী-খাল এগুলো খুব আপন আমার। আপনার লেখা ভালো হয়েছে, আরো ভালো আশা করি। ভালোথাকবেন।

মাসুদ সজীব

নীলম এর ছবি

আবারো ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। হাসি

কেওক্রাডং এর আগের সৌন্দর্য দেখিনি বলেই হয়তো কেওক্রাডং এর হোটেল আমাকে খুব একটা বদার করেনি। তবে মানুষের যেখানে সেখানে আবর্জনা ফেলাটা খুবই ডিপ্রেসিং লাগে।

অতিথি লেখক এর ছবি

মন্তব্য আপনার দৃষ্টিগোচর হয়েছে এতো তাড়াতাড়ি সেটাই আনন্দদায়ক। নাফাখুম কি যাওয়া হয়েছে? না গিয়ে থাকলে প্ল্যান করে ফেলুন যাওয়ার। আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

মাসুদ সজীব

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।