• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

বিষাদের দিন

নীলম এর ছবি
লিখেছেন নীলম [অতিথি] (তারিখ: সোম, ০৪/০৩/২০১৩ - ৪:১১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ফেব্রুয়ারী মাসটা কেটেছে কেমন একটা ঘোর লাগা আনন্দে, উত্তেজনায়। আমরা পেরেছি। আমরা উচ্চকন্ঠে সবাই মিলে নিজেদের দাবী প্রকাশ করেছি। আমি থেকে প্রত্যেকটা মানুষ আমরা হয়ে গিয়েছি। প্রতিদিন এই আমরা একটু একটু করে আরো বড় হয়েছি। রাস্তায়-ঘরে-ক্লাসে-ব্লগে-ফেসবুকে সবাই একই কথা বলেছি। সবাই মিলে একই স্বপ্ন দেখেছি। বিয়াল্লিশ বছরের কলঙ্কমুক্তির স্বপ্ন। সবার ভেতরে দেখেছি অন্যরকম এক আত্মবিশ্বাস, প্রত্যয়ে দেখেছি দৃঢ়তা। যে ইতিহাসকে এতোদিন বিভিন্নভাবে দুমড়ে-মুচড়ে বিকৃত করার চেষ্টা চলেছে তাঁকে আমরা আবার তাঁরই রূপে সামনে নিয়ে এসেছি। আমরা দেখিয়েছি আমরা ভুলিনি। যখন আঘাত এসেছে সবাইকে একসাথে রুখে দাঁড়াতে দেখেছি। আমাদের কন্ঠস্বরকে বলিষ্ঠ হতে দেখেছি।

অনেক বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা চলেছে। আমরা বিভ্রান্ত হলেও আবার উঠে দাঁড়িয়েছি। চোখের সামনে জামাত-শিবিরের হায়েনাদেরকে দেখেছি আমাদের শহীদ মিনার গুড়িয়ে দিতে, জাতীয় পতাকা ছিঁড়ে ফেলতে। স্বাধীনতার বিয়াল্লিশ বছর পরে নিজের দেশে নিজের চোখের সামনে এসব হতে দেখেছি। দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করেছি। কোন সহিংসতায় যাইনি। আমরা বিচ্ছিন্ন হইনি। আমরা বুকের ভেতরে ঠিক জেনেছি শেষ হাসি আমরাই হাসবো। আমরা যখন এক হয়েছি তখন নিশ্চয়ই আমরা জিতবো। বাংলার ইতিহাস বলে একতাই আমাদের শক্তি। সেই একতার উপর বিশ্বাস রেখে গত একমাসে কোনদিন হতাশ হইনি।

তবে আজ হয়েছি। নিজের শহর বগুড়ার যে চিত্র টিভিতে দেখেছি আর মায়ের মুখে শুনেছি তাতে হতাশ না হয়ে পারিনি। তাহলে কি সত্যিই দেশের একটা অংশের সাথে আমরা এতোটাই বিচ্ছিন্ন? চাঁদে সাঈদিকে দেখা যাচ্ছে বলে এতো এতো মানুষকে ওরা এতো সহজেই ঘরের বাইরে বের করে নিয়ে এলো? যে সাধারণ মানুষ আমাদের পাশে আছে ভাবতাম সেই সাধারণ মানুষের একটা অংশ লাঠিসোটা নিয়ে শহরে চলে এলো মানুষের ঘরে আগুন দিতে? মানতে কষ্ট হচ্ছে। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। একটা ভন্ড, রাজাকারকে নিয়ে এমন উন্মাদনা! এমনকি আমার পাশের বাড়ির মানুষগুলো অবধি ভোর সাড়ে চারটায় রাস্তায় নেমে এসেছে চাঁদে সাঈদিকে দেখার জন্য। যারা হয়তো আমাদের পরিবারের অনেক সুখ-দুঃখের স্মৃতির সাক্ষী তাদের সাথে আমাদের এতোটাই মানুষিক দূরত্ব? এই প্রশ্নগুলো আজ সারাদিন মনের মধ্যে জটলা করেছে শুধু।

হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার কথা শুনেছি। কিভাবে বাড়িতে আগুন দিয়ে মানুষকে পথে বসিয়ে এর সূত্রপাত করা হয় তাও শুনেছি। এতোদিন সেগুলোকে ভেবে এসেছি মধ্যযুগীয় বর্বরতা। ভেবেছি আমরাতো অনেক দূর এগিয়ে এসেছি। '৪৭ এ দেশভাগের সময়কার ভয়াবহ ঘটনার পরেও আমাদের এখানে এখনো হিন্দু সম্প্রদায়ের এতো মানুষ বাস করেন ভেবে একসময় বেশ অবাকই হতাম।'৪৭ এসেছে, '৭১ এসেছে তারপরে আরো অনেক সময় এসেছে। এতোকিছু সহ্য করে যারা থেকে গেছেন ভাবতাম তাদের আর কিছু হওয়া সম্ভব না। বিশেষ করে এই ২০১৩ সালে এসে আমি যখন নিজের মায়ের হাতের রান্না আর মনীষার মায়ের হাতের লুচি/খিচুড়ি একইভাবে মিস করি তখন নিশ্চয়ই আর কিছু হবে না। অথচ তখনই অবাক হয়ে দেখি আমারই বান্ধবী রুদ্রাক্ষীর গ্রামের বাড়িতে আগুন দেয়া হয়। খবরে দেখি ভয়ে শাখা-সিঁদুর খুলে রাখছেন হিন্দু নারী। অনেকেই চলে যাচ্ছেন সীমান্তের ওপারে।

নিজেরই অস্তিত্বই বিপন্ন মনে হয় যখন ভাবি সত্যিই যদি হিন্দু জনগোষ্ঠীর সবাই সীমান্তের ওপারে চলে যেতে বাধ্য হয় তাহলে কি হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকে প্রতি বছরই ভেবেছি এবার পূজার ছুটিতে বাড়ি না গিয়ে কোথাও ঘুরতে যাবো। পারিনি। নিজের পরিবারের মতই চুম্বকের মত টেনেছে প্রিয় বান্ধবীদের পরিবার। একবার সাহস করে অবশ্য থেকেও গিয়েছিলাম। মনীষার বাড়ির লুচি আর মাধুরীর বাড়ির পায়েশের দুঃখ এতোটাই কাতর করেছিল যে এরপরে থাকি থাকি করেও আর কখনোই সাহসে কুলোয়নি। সেবার অবশ্য কিন্ডারগার্টেনের বান্ধবী ঠিকই দাওয়াত করে নাড়ু খাইয়েছিল। তবে বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে যাদের সাথে ঈদ-পূজা একসাথে পালন করেছি তাদেরকে কাছে না পাওয়ার দুঃখ ভুলাতে পারেনি।

আমার কাছে সমস্ত বাংলাদেশটা এমনই মনে হয়েছে। নিজের গ্রামে হিন্দু-মুসলিমের এমনই সখ্যতা দেখেছি। গ্রামে ঢুকতে প্রথমেই ছিল স্বপন কাকুর দোকান। ছোটবেলায় কখনও তার দোকান থেকে বাদাম উপহার না নিয়ে দাদার বাড়িতে পা রেখেছি বলে মনে পড়ে না। গ্রামের যেকোন মিলাদ-মাহফিলে যেমন তাদেরকে দেখেছি, তেমনি তাদেরও যেকোন উৎসব-আয়োজনে বাড়িতে থাকলে আমরাও গিয়েছি। জন্মের পর থেকে যে শহরেই থেকেছি, যে স্কুলেই পড়েছি দেখেছি এই একই দৃশ্যই। তাহলে যারা আজ আমার দেশের এইসব মানুষের ঘরে আগুন দিয়ে পথে বসায় তারা কোন বাংলাদেশের নাগরিক? বাংলাদেশের মৌলিক চেতনাগুলোর একটার সাথেও যাদের কোন সম্পর্ক নেই তারা কিভাবে এতোটা স্পর্ধার সাথে এ দেশের আলো-বাতাসে ঘুরে বেড়ায়?

সকাল থেকেই প্রচন্ড মন খারাপ। ঘুম ভেঙ্গেছে মায়ের ফোনে। শহরের মানুষের গুজবে আক্রান্ত হয়ে এমন কর্মকান্ডের খবরে। দুপুরের দিকে বাইরে বের হয়েছিলাম। ফাঁকা রাস্তাঘাট, প্রাণহীন এক ঢাকা। কেমন একটা থমথমে ভাব সবদিকেই। নিজের মনের কথা বলতে গেলে অন্তত একটা না একটা তীর্যক দৃষ্টি আঘাত হানছেই। দেশের বিভিন্ন জায়গার ধ্বংসযজ্ঞের খবর দেখে সারাদিন অনেক কিছু নিয়ে চিন্তা করেও কিছুই উদ্ধার করতে পারলাম না। শুধু মনের ভারই বাড়লো। লিখলে কিছুটা হালকা লাগতে পারে ভেবে লিখতে বসা। তবে লিখতে বসে দেখলাম ঠিকমত গুছিয়ে মনের কথা বলতেও পারছি না। শুধু মনে হচ্ছে আমাদের কোথাও একটা বড়সড় কম্যুনিকেশন গ্যাপ থেকে যাচ্ছে। আমাদের সরলপ্রাণ মানুষের সরলতার সুযোগ যেন প্রতিপক্ষ না নিতে পারে সেদিকে আমাদের আগে থেকেই সজাগ দৃষ্টি দেয়া উচিৎ ছিল। যেভাবেই হোক এ লড়াইয়ে টিকে থাকতে হবে। এ লড়াইয়ে জিততে হবে।


মন্তব্য

সৌরভ কবীর এর ছবি

কাল সকালে যখন আমি ডেইলি স্টারে পড়ছিলাম বাঁশের কেল্লার চাঁদের প্রচারণা সম্পর্কে খুব হাসি এসছিলো। অথচ ততক্ষণে যা হবার হয়ে গিয়েছে। জামায়াত-শিবির কোমলমতি শিশুকে ঢাল বানিয়ে লাশে পরিণত করলো। ভীষণ দুঃখ পেয়েছি।
অর্ণবের 'চাঁদ দেখে কেউ' গানে কেন যে সে লাশের কথা উল্লেখ করেছিলো কে জানে!

চাঁদ দেখে কেউ প্রখর বুদ্ধিমান
চাঁদ দেখে কেউ ভ্যাবাচ্যাকা কেউ বোকা...
চাঁদ দেখে শেষ লাশ পরে রাস্তায়
চাঁদ দেখে রাতে শেয়ালেরা ধরে গান

__________________
জানি নিসর্গ এক নিপুণ জেলে
কখনো গোধূলির হাওয়া, নিস্তরঙ্গ জ্যোৎস্নার ফাঁদ পেতে রাখে

নীলম এর ছবি

পরশু রাতে ফেসবুকে সবার ছবি দেখে দারুণ একচোট হেসে নিয়েই ঘুমেছিলাম, ভাইয়া। সকালে উঠে যা শুনতে হলো তাতে একেবারে হতভম্ব হয়ে গেছি।

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

:(
কিছু বলার নাইরে আপু।
মন খারাপ, প্রচণ্ড মন খারাপ।

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

নীলম এর ছবি

:(

মর্ম এর ছবি

আমাদের চোখ ফোটেনি এখনো।

শাহবাগের আন্দোলন আর তার পরের ঘটনাগুলোর একটা বড় উপকার করেছে আমাদের- হঠাৎ করেই আমরা জেনে অবাক হচ্ছি- পাশের অতি চেনা মানুষটাও আমাদের ঘোর অচেনা ছিল।

আমার মনে হচ্ছে পথ এখনো অনেক অনেক বাকি।

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

নীলম এর ছবি

ঠিক বলেছেন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।