গত শনিবারের ঘটনা। সকাল থেকে আলস্যের কারণে বিছানা ছাড়া হচ্ছিল না। প্রথমতঃ উইকএন্ড, তার উপর প্রচণ্ড বৃষ্টি। ব্রিটিশ আইলস-এ বৃষ্টি প্রধানতঃ ঝিরঝিরে প্রকৃতির। কিন্তু গত কয়েকদিন আয়ারল্যান্ডের রাজধানী শহর ডাবলিনে সেটা রীতিমত মুশলধারে হতে শুরু করেছে। ফলে বিছানায় শুয়ে বৃষ্টির শব্দ শুনতে শুনতে একটা রোম্যান্টিক পরিবেশ উপভোগ করছিলাম। হঠাৎ মনে হলো একটু পত্রিকা পড়ি। কী হচ্ছে এই দেশে তার একটু খোঁজ খবর নেয়া দরকার।
ল্যাপটপটা ওপেন করে অনলাইন পত্রিকার পাতা খুলতেই বড় বড় হেডলাইন চোখে পড়লো – সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারকে উদ্দেশ্য করে ডাবলিনে ডিম এবং জুতা নিক্ষেপ। তিনি সকালে এসেছেন ডাবলিনে তার সদ্য প্রকাশিত গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন এবং অটোগ্রাফ প্রদান অনুষ্ঠানে অংশ নিতে। প্রথম ৩০০ ক্রেতাকে তিনি অটোগ্রাফ দেবেন। সেজন্যে তার ভক্তরা সকাল থেকে লাইন দিয়ে এখানকার অন্যতম বড় লাইব্রেরী “এসন”-এ ভিড় করে আছেন। তবে ভিড় অন্য আরেকটা দলও করেছিল। তারা হলো প্রতিবাদী একটা গোষ্ঠী যারা স্লোগান দিচ্ছিল টনি ব্লেয়ারকে ফিরে যাওয়ার। ইরাক যুদ্ধে তার ভূমিকার জন্যে এই প্রতিবাদ। প্রতিবাদের এক পর্যায়ে ব্লেয়ারের উপর তারা ডিম এবং জুতা নিক্ষেপ করে যদিও সেগুলো তাকে আঘাত করতে পারে নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ আয়ারল্যান্ডের প্রধান সড়ক ও' কনেল স্ট্রিট যান চলাচলের জন্য বন্ধ করে দেয় এবং ট্রামের রেড লাইনের সব ট্রামের যাত্রা বাতিল করে। এত ঝামেলা স্বত্বেও ব্লেয়ার হাসি মুখে বই-এর মোড়ক উন্মোচন করেন, অটোগ্রাফ দেন এবং নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড এবং ইরাকে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তার ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন যেটা তার গ্রন্থেও তিনি লিখেছেন। ব্লেয়ারের এই বক্তব্য নিয়ে পরে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা হয়েছে আয়ারল্যান্ডে, তবে সে ঘটনা এই লেখার সাথে সম্পর্কযুক্ত নয় তাই সেদিকে যাচ্ছি না। আমি ভাবছিলাম আর আফসোস করছিলাম যে আমার বাসার এত কাছে (ডার্ট তথা ডাবলিনের মেট্রো, টিউব যেটাই বলেন, তাতে ১২ মিনিটের রাস্তা) ব্লেয়ারকে ডিম-জুতা মারা হলো আর সে ঘটনা আমি দেখতে পারলাম না। কিছুদিন আগে আর্জেন্টিনা বনাম রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ডের খেলার সবচেয়ে দামী টিকেট কিনে একদম কাছ থেকে মেসিকে দেখে এসেছিলাম। আর এই ঘটনাতো পুরোপুরি ফ্রিতে। ইশ, এই সুযোগ জীবনে কি আর আসবে? যাহোক, একটা ভিডিও ক্লিপ লেখার শেষে সংযুক্ত করেছি। সেখান থেকে পরিস্থিতির কিছু চিত্র দেখা যাবে।
এরপর রবিবার শবে ক্বদর নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। সোমবার একটা কলেজে আমি ক্লাস নেই, সেখান থেকে ফিরে এসে রাতে যেই ল্যাপটপ ওপেন করে বসেছি, দেখি হিমু ভাই একটা লিঙ্ক শেয়ার করেছেন ফেইসবুকে। প্রথম আলোর সম্পাদকীয় বিভাগে “বাঘা তেতুল” ব্যানারে এ বিষয়ে একটি লেখা। লেখকের নাম সৈয়দ আবুল মকসুদ। বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের বিষয়ে আমার সুবিশেষ ধারণা নেই। তাই আমি ভদ্রলোককে চিনি না। লেখক পরিচিতিতে দেয়া রয়েছে তিনি গবেষক, প্রাবন্ধিক এবং কলাম লেখক। তাকে চেনার দৌড় আমার এতটুকুই।
লেখাটা পড়তে শুরু করলাম। লেখার শুরুতেই ধাক্কা খেলাম যখন লেখা দেখি “ঘটনাটি ঘটেছে আলফ্রেড নোবেলের এলাকায়: স্ক্যানডিনেভিয়ার এক মহানগরে”। আলফ্রেড নোবেল কবে আয়ারল্যান্ডে জন্মালো সেই হিসেব মেলাতে গিয়ে না হেসে পারলাম না। তাছাড়া পুরো লেখায় কোথাও কোন দেশে বা কোন শহরে ঘটেছে ঘটনাটা সে বিষয়ের উল্লেখ নেই। এলাকা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে স্ক্যানডিনেভিয়া, অথচ ঘটনা ঘটেছে ব্রিটিশ আইলস-এ। বুঝতে অসুবিধা হলো না স্ক্যানডিনেভিয়া এবং ব্রিটিশ আইলস যে ইউরোপের দুটো ভিন্ন ভৌগোলিক এলাকা সে বিষয়ে লেখকের কোন ধারণা নেই। তিনি আরো লিখেছেন, “অনুষ্ঠানে প্রবেশ করতেই পচা টমেটো ও ডিমেই যে তাঁর কাপড় নষ্ট হয়েছে তা-ই নয়, তাঁর কান, চোয়াল ও থুঁতনি ঘেঁষে মিসাইলের মতো ছুটে গেছে ছেঁড়া জুতা”। ব্লেয়ারকে উদ্দেশ্য করে ডিম মারা হয়েছিল বটে, তবে পঁচা টমেটো কোথা থেকে এলো? লেখকের কল্পনা প্রসূত? হতে পারে। তাছাড়া এই ডিমে ব্লেয়োরের কাপড় কখন নষ্ট হলো সেটাও ভেবে পেলাম না। সব পত্রিকাতেই লিখেছে ডিম-জুতা (ছেঁড়া জুতা নয় কিন্তু!) কোনটাই ব্লেয়ারকে আঘাত করতে পারে নি। বরং বিভিন্ন টিভি রিপোর্টে দেখলাম তিনি দিব্যি হাসি হাসি মুখে বই হাতে নিয়ে পোজ দিচ্ছেন। অথচ বাংলাদেশের একটা পত্রিকার সম্পাদকীয়তে এমন কথা কেমন করে এলো? এরা কি আদৌ কোন কিছু জেনে লিখে নাকি কান-কথা শুনে একটা কিছু লিখে ফেলে? লেখক নাকি গবেষক! পৃথিবীর সবচেয়ে সহজতম গবেষণা(!) তথা গুগল সার্চ দিলেও তিনি বিস্তারিত ঘটনাটা পেয়ে যেতেন। নাকি প্রথম আলোর কলাম লেখকদের “যেমন খুশি তেমন লেখার” অধিকার রয়েছে? প্রথম আলো কি সব কিছু বদলে দেয়ার স্লোগান দিয়ে সংবাদকেও বদলে দিতে শুরু করলো এখন?
লেখাটায় তীব্র ভাবে ব্লেয়ারকে আক্রমন করা হয়েছে। বুঝতে অসুবিধা হয় না লেখকের ব্লেয়ারের উপর রাগ রয়েছে যা সেখানে ঝরে পড়েছে। ইরাক যুদ্ধে ব্লেয়ারের ভূমিকায় আমি নিজেও অসন্তুষ্ট। তার দেশের মানুষরাও বিষয়টাকে ভালো ভাবে নেয় নি। তার সমালোচনা হতেই পারে। কিন্তু সেটা এমন ভাবে কেন যে ভুল তথ্য এবং কল্পনা মিশ্রিত বর্ণনায় হতে হবে? বদলে দাও, বদলে যাও স্লোগান নিয়ে প্রথম আলো কোন পথে হাঁটছে সেটা ভেবে দেখার এখন সময় এসেছে।
৭ সেপ্টেম্বর ২০১০
ডাবলিন, আয়ারল্যান্ড।
ঘটনার ভিডিও:
মন্তব্য
যাহা কিছু ভালু
তাহার সাথে প্রথম আলু
আলুতে পচন ধরেছে। এখনই রোগ সারাতে না পারলে এই আলু আর কেউ কিনবে না!
টুইটার
মজার ব্যাপার হচ্ছে, আসিফ জারদারি তার দেশের মানুষকে বন্যাজনিত সঙ্কটে ফেলে ইয়োরোপে প্রমোদভ্রমণে বেরোনোর পর লণ্ডনে উড়ুক্কু জুতার শিকার হয়েছিলো। আবুল্মক্সুদ সে ব্যাপারে বিলকুল নিরব।
ভাইয়ের অপমান ভাই কখনও প্রচার করতে পারে?
টুইটার
এই হলো মঞ্জিলে মক্সুদ।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
প্রথম আলোর অবস্থানটা আমার কাছে খুব ঘোলাটে মনে হয় সব সময়। তারা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বড় বড় কথাও বলে আবার যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষেও অবস্থান নেয়!
টুইটার
সেটাই। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার আগে আর কি কি করতে হবে সেটার একটা লিস্ট মক্সুদ সাহেবের দেয়া উচিত। তালিকার প্রথমে থাকবে " হাওয়া ক্যানু আদম বাবারে গন্ধম ফল খাওয়ালো, সেটার বিচার। বিচারে দোষী সাব্যস্ত হইলে শরিয়া মোতাবেক সাস্তি প্রদান। হ"
প্রথম আলু: বাংলাদেশের বাজারে কালো বাংলা ছাগলের একমাত্র পরিবেশক। তাদের আর কোথাও কোন শাখা নেই।
রিপাবলিক অফ আয়ারল্যান্ড কে বৃটিশ আইলস হিসেবে গন্য করা হয়? আপনি নিশ্চিত করতে পারেন।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
হাসান ভাই, "ব্রিটিশ আইলস"[১] শব্দটা একটা স্টাবলিষ্ট ভৌগোলিক এলাকা। এখানে যুক্তরাজ্য, রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ড, আইল অব ম্যান এবং চ্যানেল আইল্যান্ডস (জার্সি এবং গনজি) অবস্থিত।
[১] http://en.wikipedia.org/wiki/British_Isles
রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ডকে বাদ দিয়ে আরেকটা টার্ম ব্যবহার করা হয় যেটাকে বলা হয় "ব্রিটিশ আইল্যান্ডস"[২]। এটা একটা আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক এলাকা।
[২] http://en.wikipedia.org/wiki/British_Islands
টুইটার
ধন্যবাদ। আমি আসলেই জানতাম না।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
কালকে হিমুভাই'র লিঙ্ক থেকেই পড়ছিলাম, কিন্তু সমস্যাটা ঠিক ধরতারি নাই। এক্ষণ কিলিয়ার।
রাগিব ভাই'র চিলে কান নিছে, বাকিটা বানায়ে লিখলাম.. এরমতন ঘটনা। :(
- মুক্ত বয়ান
মকসুদ সাহেবের আরো কিছু বাণী নিয়ে যুদ্ধাপরাধী ও বুদ্ধিজীবী সিরিজের পরের পর্বে কিছু ভুক্তি ছিল। এইসব আবাল কলাম দেখে ইনারে নিয়ে আর কথা বাড়াতে ইচ্ছে না।
-----------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
বুদ্ধিরে জীবিকা করে খাইলে মাঝেমধ্যে একটু-আধটু বুদ্ধির ব্যভার নাহয় হলোই ! তাই বইলা।।।। হা হা হা ! বেশ মজা পাইলাম !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী,
আপনি ঠিকই বলেছেন। আবুল মকসুদ স্থান সংক্রান্ত তথ্যটি একেবারেই ভুল লিখেছেন। আমি প্রথম আলোতে লেখাটি দেখেই হোচট খেয়েছি। যে কোন কারণে তিনি তথ্যটি ঠিক লেখেন নি। সম্ভবত তিনি পরের সপ্তাহে বিষয়টি শুধরে দেবেন। তবে একথা ঠিক, আমাদের দেশে যে ক'জন করাম লেখক দলচর্চার বাইরে থেকে একটি বিষয়কে দেখে থাকেন তিনি তাদের অন্যতম। তার সবলেখার সাথে আমি একমত হয়তো হই না, তার পরেও তিনি সচেতনভাবে লেজুড়বৃত্তির বাইরে আছেন (এখন পর্যন্ত)। এজন্য আমি তাকে পছন্দ করি। আপনি সঠিত তথ্যটি বিস্তারিত পরিবেশন করায় আপনাকে ধন্যবাদ।
rabbani.khulna@gmail.com
রব্বানী সাহেব, দলচর্চার বাইরে থেকে কোনো কিছুকে দেখলেই সেটা সঠিক হয় না। আর মক্সুদ সাহেব দলচর্চার বাইরে আছেন, এটাও খুব শিশুসুলভ পর্যবেক্ষণ।
প্রথম আলোসহ সবগুলো পত্রিকাই একই নীতিতে চলে। নাম থাকলেই হলো, কোন মেরিটের দরকার পড়ে না লেখা ছাপাতে। সম্পাদক মনে হয় নিজেও পড়ে দেখে না পত্রিকায় কী ছাইছাতা ছাপা হচ্ছে।
________________________________________________
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
বাংলা ব্লগগুলা পত্রিকার পেশাদার কলম লিখিয়েদের ভাতে মারার তালে আছে দেখে ভালো লাগছে
আমার মনে হয় সচলের লেখকরা যখন কোন লেখা দেন, তারা সে পরিশ্রমটা করেন, যে গবেষনা এবং ওয়েব ও অন্যান্য সোর্সে ঘাটাঘাটি করেন, সেটার ১০ শতাংশও অনেক কলাম লেখক এখন আর করেন না। কাগজ-কলম নিয়ে বসে পড়েন কিছু লেখার জন্যে, সেটা ছাই-পাশ যাই হোক।
টুইটার
আলু পত্রিকার যা ইচ্ছে তাই গেলানোর দুঃসাহসিকতায় চিন্তিত। এদের ক্ষমতার ব্যাপ্তির মাত্রা কি পতনেরই আওয়াজ তুলছে?
রাশু
ghumontoshohoreঅ্যাটgmail.com
সম্ভবত তাই হতে যাচ্ছে। অথচ এক সময় এই পত্রিকাটা আমার খুব প্রিয় ছিল।
টুইটার
নতুন মন্তব্য করুন