বৃটেন এবং আয়ারল্যান্ড-এ উচ্চ শিক্ষা –২ (কোর্স, ডকুমেন্ট প্রস্তুতি এবং আবেদন)

নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী (তারিখ: বিষ্যুদ, ০২/০২/২০১২ - ১০:৪৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গত পর্বে লিখেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে। এ পর্বেও ঘুরে ফিরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম আসবে। তবে এবার আমার মূল উদ্দেশ্য থাকবে বিভিন্ন কোর্স, ডকুমেন্ট প্রস্তুতি এবং আবেদন করার নিয়ম নিয়ে আলোচনা করা।

কী পড়তে চান?

এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রশ্ন। প্রথমে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি কী পড়তে চান। আপনার সিদ্ধান্ত আপনার ক্যারিয়ার পাথ-এর উপর নির্ভর করা উচিত। আপনি যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে চান বা গবেষণায় ক্যারিয়ার গড়তে চান তাহলে পিএইচডি হয়তো আপনার মূল লক্ষ্য হবে। আবার ডাক্তার হতে হলে আপনার লক্ষ্য অন্য রকম হবে। যারা কর্পোরেট জগতে আছেন, তারা হয়তো এমবিএ করতে চাইবেন। তবে দিন শেষে আপনাকেই ঠিক করতে হবে কী করবেন। এ বিষয়ে মাহবুব মুর্শেদ ভাই-এর লেখা একটা সুন্দর আর্টিকেল রয়েছে। আপনাদের সাথে শেয়ার করছি (পড়তে ক্লিক করুন)।

এবার আমি বৃটেন এবং আয়ারল্যান্ডে বিভিন্ন ডিগ্রী নিয়ে আলোচনা করছি। আপনি হয়তো লক্ষ্য করবেন আলোচনার একটা বড় অংশ জুড়ে থাকবে টিউশন ফিস এবং ডিগ্রীর সাথে সম্পৃক্ত সম্ভাব্য স্কলারশিপ। এর কারণ আমাদের শিক্ষিত সমাজের বৃহত্তর জনগোষ্ঠি এসেছে মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে। ১৫ থেকে ২০ লক্ষ টাকা টিউশন ফিস দিয়ে ছেলেমেয়েকে পড়ানো একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে শুধু কঠিনই নয়, কখনও কখনও অসম্ভবও। তাই আমার আলোচনায় আমি স্কলারশিপকে সব সময় গুরুত্ব দেয়ার চেষ্টা করবো।

যারা মাস্টার্স পর্যায়ে পড়তে চান তাদের জানা প্রয়োজন বৃটেন এবং আয়ারল্যান্ডে এই ডিগ্রীটা দুই ধরনের। একটাকে বলা হয় ‘টট মাস্টার্স’ (Taught Masters) অর্থাৎ কোর্স বেইজড মাস্টার্স এবং অন্যটা ‘রিসার্চ মাস্টার্স’ অথবা ‘মাস্টার্স বাই রিসার্চ’ যা কিনা গবেষণা ভিত্তিক মাস্টার্স প্রোগ্রাম। টট মাস্টার্স একটি এক বছর মেয়াদী প্রোগ্রাম যা করতে আপনাকে ছয় থেকে আটটি কোর্স করতে হবে এবং একটা ডিজার্টেশন করে ডিফেন্স করতে হবে। অধিকাংশ কোর্স শুরু হয় সেপ্টেম্বরে এবং চলে মে পর্যন্ত। মে-এর পর আপনি হাত দেবেন ডিজার্টেশনের কাজে এবং সামারের বন্ধে শেষ করে পরবর্তী সেপ্টেম্বরের আগে আগে জমা দিতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে এই নিয়মের এদিক-সেদিক হতে পারে তবে এটাই মূলত ট্রেন্ড। আপনি যদি এই ডিগ্রী নিতে মনস্থির করে থাকেন, তাহলে আগেই বলে দেয়া ভালো আপনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে পূর্ণ স্কলারশিপ পাবেন না। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছোট ছোট কিছু স্কলারশিপ দেয় যা দুই হাজার থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত হয়ে থাকে এবং সেগুলোও সব কোর্সের জন্যে সব সময় থাকে না। মূল কথা, এ ধরনের কোর্স করতে চাইলে আপনার পকেটের অবস্থা ভালো হতে হবে অথবা আপনাকে অসাধারণ মেধাবী হতে হবে যাতে আপনি খুবই কমপিটিটিভ স্কলারশিপগুলোয় ফাইট করে ছিনিয়ে নিতে পারেন আপনার স্বপ্ন পূরণের চাবি।

দ্বিতীয় যে মাস্টার্সটার কথা বলেছি সেটা হলে গবেষণা ভিত্তিক মাস্টার্স। বৃটেনে এ ধরনের মাস্টার্স করতে হলে আপনাকে চার থেকেপাঁচটা কোর্স করতে হবে এবং একটা বড় মাপের থিসিস জমা দিতে হবে। ‘বড় মাপের’ বলার কারণ এই থিসিসটা অবশ্যই টট মাস্টার্সের ডিজার্টেশনের থেকে শক্তিশালী এবং গভীর হতে হবে। তবে অধিকাংশ ব্রিটিশ বিশ্বিবদ্যালয়ে এই মাস্টার্স এক বছরের। কেউ কেউ স্কলারশিপও দিচ্ছে তবে সংখ্যায় সেটা কম। এজন্যে আপনাকে বিশ্ববিদ্যালয় খুঁজে নিতে হবে যেখানে আপনার পড়াশোনার বিষয়ের উপর গবেষণা হয় এবং তারা স্কলারশিপ দিচ্ছে। অর্থাৎ সব সময় মনের মত কম্বিনেশন নাও হতে পারে। তবে তাতে মন খারাপ করার কিছু নেই। মনে রাখবেন, ব্রিটিশ আইলস-এ স্কলারশিপ নিয়ে মাস্টার্স পর্যায়ে পড়াটাই ভাগ্য। আসলে মাস্টার্স পর্যায়ে স্কলারশিপ দেয়াকে এরা কিছুটা অর্থের অপচয় মনে করে। এ সময় ছাত্রছাত্রীরা তুলনামূলক ভাবে কাঁচা থাকে এবং তাদের রিসার্চের মান ততটা ভালো হয় না। তাই এরা পিএইচডি পর্যায়েই স্কলারশিপ দেয়াটা নিরাপদ মনে করে। তৃতীয় পর্বে এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত আলোচনা করবো।

বৃটেন এবং আয়ারল্যান্ডের টট মাস্টার্স একই ধরনের। আইরিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও স্কলারশিপ দেয় না। বরং তারা এক কাঠি উপরে। স্কলারশিপ পেইজে বড় বড় করে লিখে রাখে ‘টট মাস্টার্সের জন্যে আমরা কোন স্কলারশিপ দেই না’। কিন্তু রিসার্চ মাস্টার্সে এরা স্কলারশিপের পথটা বেশ ভালোই উন্মুক্ত রেখেছে। আইরিশদের রিসার্চ মাস্টার্সটা ব্রিটিশদের মত না। এদের রিসার্চ মাস্টার্স আসলে পিএইচডির প্রথম দুই বছর। আপনাকে কোন কোর্স করতে হবে না। শুধুই থিসিস। সব পিএইচডি স্টুডেন্টও মাস্টার্সের ছাত্র হিসেবে ঢোকে। প্রথম দুই বছরের মধ্যে আপনাকে ঠিক করতে হবে আপনি ট্রান্সফার করে পিএইচডি-তে যাবেন নাকি মাস্টার্স থিসিস সাবমিট করবেন। পিএইচডি করতে চাইলে ‘ট্রান্সফার রিপোর্ট’ জমা দিয়ে (এবং একসেপ্টেড হলে) পিএইচডি রেজিস্টারে চলে যাবেন। এর এক বছর পর আপনি পিএইচডি থিসিস সাবমিট করতে পারবেন। আর যদি মাস্টার্স করতে চান তাহলে ট্রান্সফার রিপোর্টের পরিবর্তে পূর্নাঙ্গ মাস্টার্স থিসিস জমা দিতে হবে। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, মাস্টার্স থিসিসটা প্রকৃতই বেশ বড় হতে হবে। আপনি একজন পিএইচডি স্টুডেন্টের অন্তত দুই বছরের কাজ জমা দিচ্ছেন। থিসিসের কলেবর এবং গভীরতা ব্যাপক হওয়া জরুরী। তবে আশার কথা হচ্ছে, এই মাস্টার্সের জন্যে এরা অনেক স্কলারশিপ দেয় যা তৃতীয় পর্বে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

যারা এমবিএ করতে চান তাদের জন্যে দুঃসংবাদ আছে। বৃটেন এবং আয়ারল্যান্ডে এমবিএ-এর টিউশন ফিস সবচেয়ে বেশী। ‘বেশী’ শব্দটা শুধু বেশীই না, রীতিমত অকল্পনীয় বেশী। কোন স্কলারশিপও নেই। লন্ডনে এমবিএ-এর জন্যে সবচেয়ে নাম করা প্রতিষ্ঠান ‘লন্ডন বিজনেস স্কুল’ যা ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের একটি কলেজ। ফিনান্সিয়াল টাইমসের র‍্যাঙ্কিং-এ স্কুলটি এমবিএ-এর জন্যে পরপর তিনবার বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচিত হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন এমবিএ র‍্যাঙ্কিং-এ স্কুলটা সব সময়ই সেরা দশে থাকে। তবে যাদের ব্যাকগ্রাইন্ড বিজনেস স্ট্যাডি কিন্তু এত টাকা খরচ করে এমবিএ করতে চান না, তারা স্যোশাল সায়েন্সের কোন বিষয়ে এমএসসি করতে পারেন। এক্ষেত্রে লন্ডন স্কুল অব ইকোনোমিক্স এবং স্কুল অব এশিয়ান এন্ড অরিয়েন্টাল স্টাডিজ (SOAS, উচ্চারণ সোয়াস) খুবই ভালো দুটো প্রতিষ্ঠান। গবেষণায় এদের পারফরমেন্স খুব ভালো না হলেও টট মাস্টার্সের জন্যে এরা বিশ্ববিখ্যাত। এদের থেকে যদি মাস্টার্স অব সায়েন্স ইন ফিন্যান্স অথবা একাউন্টিং বা এ ধরনের কোর্স করেন সেটা আপনার ক্যারিয়ারে এমবিএ-এর থেকে কোন অংশে কম ভূমিকা রাখবে না; কিন্তু ফিসটা কিছুটা সহনীয় হবে। এছাড়া এমবিএ করার আরেকটা উপায় হচ্ছে কলেজের মাধ্যমে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ ডিগ্রী নেয়। ব্রিটিশ আইলস-এ দুই বছর কলেজ শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকায় আমি দেখেছি ইউনিভার্সিটি অব ওয়েলস ইন্সটিটিউট অব কার্ডিফ, ইউনিভার্সিটি অব গ্লস্টার এবং হেরিয়ট-ওয়াট বিশ্ববিদ্যালয় এ ধরনের প্রোগ্রাম পরিচালনা করে। তবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই দেখে নেয়া দরকার কলেজটা কেমন। কোন এ্যাজেন্টের কথা শুনবেন না। কলেজগুলোকে বিক্রি করাই তাদের কাজ। তাই তারা সব সময়ই নিজ নিজ কলেজকে ভালো বলবে। এক্ষেত্রে গুগল হবে আপনার সেরা ভরসা। সার্চ করে কলেজ সম্পর্কে খোঁজ নিন। তারপর ঠিক করুন কী করতে চান।

সব শেষে পিএইচডি। আপনি যদি ঠিক করেই ফেলেন যে ‘পারমানেন্ট হেড ড্যামেজ’ করতে চান তাহলে আপনাকে এখন আর তেমন কিছু বলার নেই। আপনার জন্যে সুখবর হচ্ছে স্কলারশিপ হাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আপনার জন্যে অপেক্ষা করছে! রিসেশনের কারণে সেই ভান্ডারে কিছুটা ঘাটতি দেখা দিয়েছে বটে কিন্তু তবু এখনও সুযোগে আছে। যথা সময়ে আপনাকে এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানানো হবে।

ডকুমেন্ট তৈরী করা

আমি সব সময় জোর দেই এ কাজটা সবার আগে করার জন্যে। এমন কি বিশ্ববিদ্যালয় খোঁজারও আগে। এর পেছনে আমার যুক্তি প্রধানত এই যে, কিছু কিছু ডকুমেন্ট ভালো ভাবে তৈরি করতে সময় লাগে। কখনও কখনও এক বা দেড় বছরেরও বেশী! সেজন্যে সচেতন ভাবে এ কাজটা আন্ডারগ্র্যাড শেষ করার আগে থেকেই শুরু করতে হবে। অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন, বিশ্ববিদ্যালয় না খুঁজেই কাগজ তৈরি করবো? কোন কাগজ লাগবে সেটা জানবো কী করে? খুবই যুক্তিসঙ্গত প্রশ্ন। তবে আপনি জেনে খুশি হবেন, কিছু কিছু ডকুমেন্ট পৃথিবীর সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যে কমন। ঐ ডকুমেন্টগুলো আমরা আগে থেকে প্রস্তুত করতে শুরু করতে পারি। এরপর কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন সুনির্দিষ্ট চাওয়া থাকলে সেটা পূরণ করা যাবে।

ডকুমেন্ট তৈরীর কাজটা আমি শেষ থেকে শুরু করছি। অর্থাৎ সবার শেষে যে ডকুমেন্টটা লাগবে সেটা তৈরীর কাজ শুরু করতে বলছি আমি সবার আগে। কেন বলছি সেটা আমার পুরো লেখাটা পড়লেই বুঝতে পারবেন।
রেফারেন্স লেটার। একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট। সাধারণতঃ দুটো রেফারেন্স লেটার জমা দেয়া বাধ্যতামূলক। তবে কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় তিনটা রেফারেন্স লেটারও চেয়ে থাকে। আমারা প্রায়ই যেটা করে থাকি তা হলো, যখন প্রয়োজন পড়ে তখন সিনিয়ার দুজন স্যারের কাছে গিয়ে রেফারেন্স লেটার চাই। অধিকাংশ সময় স্যার বলেন, “তোমরা লিখে নিয়ে এসো। আমি একটু দেখে-টেখে সাইন করে দেব”। তারপর আমরা নিজেরা লিখে স্যারকে দেই। স্যার সাইন করে দেন। কিন্তু পুরো প্রক্রিয়াটা এমন হতো না যদি না আমরা আগে থেকেই সচেতন হই এ বিষয়ে। আপনার আন্ডারগ্র্যাডের শেষ বছর যখন চলবে, তখন কয়েকজন শিক্ষককে আপনার রেফারী হিসেবে মনে মনে চিন্তা করুন। তাদের একজনের আন্ডারে আপনার ফাইনাল প্রজেক্ট অথবা থিসিস অথবা ইন্টার্নিটা করুন। এই কয়েকজন শিক্ষকের সাথে নিয়মিত আপনার আপডেট শেয়ার করুন। যদি সম্ভব হয় তাদের সাথে কো-অথর হিসেবে পেপার পাবলিশ করুন। দেখবেন আপনি যখন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করবেন তখন এই শিক্ষকরাই নিজেদের মূল্যবান সময় ব্যয় করে আপনার জন্যে রেফারেন্স লেটার লিখে দেবেন। প্রয়োজনে তারা আপনার পোটেনশিয়াল সুপারভাইজারের কাছে আপনার বিষয়ে ইনফরমাল রিকোম্যান্ডেশনও দেবে। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

IELTS বৃটেন এবং আয়ারল্যান্ডে পড়তে আসার জন্যে বাধ্যতামূলক। তবে পরীক্ষাটা খুব একটা জটিল কিছু না। দেশে অনেককে দেখেছি রীতিমত কোচিং করে প্রস্তুতি নিতে। আমার ব্যক্তিগত অভিমত সেটার তেমন প্রয়োজন নেই। কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত সাতটা সিডি সহ বই রয়েছে। সেগুলোর কয়েকটা বা সবগুলো নীলক্ষেত থেকে কিনে বাসায় বসে নিয়মিত অনুশীলন করাই IELTS-এ ভালো স্কোর তোলার জন্যে যথেষ্ট। অতি সিরিয়াসরা পরে কিছু মডেল টেস্টও দিয়ে দেখতে পারেন। তবে এর জন্যে অতিরিক্ত সময় এবং অর্থ ব্যয় করা আমার কাছে একটা প্রায় মূল্যহীন পরীক্ষাকে বেশী গুরুত্ব দেয়া মনে হয়। মনে রাখবেন বিজ্ঞান এবং বিজনেস স্ট্যাডিজ এর বিষয়ের জন্যে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬.৫ স্কোর করা বাধ্যতামূলক। শুধু কেম্ব্রিজ এবং অক্সফোর্ডে কমপক্ষে ৭.৫ চাচ্ছে। এর বেশী পেলে ক্ষতি নেই। তবে কম হয়ে গেলে সমস্যা। তাই ৬.৫ যেন অবশ্যই পান, সেভাবে প্রস্তুতি নিন। উল্লেখ্য, যারা আইন পড়তে চান তাদের জন্যে স্কোরটা একটু বেশী চাওয়া হয়। তবে সেটা অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ৭.৫ এর বেশী নয়।

আপনি যে বিষয়েই পড়তে চান না কেন পাবলিকেশন্স খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আন্ডারগ্র্যাডে অন্তত একটা ইন্টারল্যাশনাল কনফারেন্স পেপার থাকা বেশ বড় প্লাস পয়েন্ট। আর যারা মাস্টার্স করে পিএইচডি করার কথা ভাবছেন তারা কনফারেন্সের পাশাপাশি বিভিন্ন জার্নালেও চেষ্টা করুন পেপার পাবলিশ করার। এক্ষেত্রে একটা সাজেশন দেব, মূলতঃ যারা পিএইচডি এবং রিসার্চ মাস্টার্স করবেন তাদের। সেটা হলো, আপনার ফাইনাল প্রজেক্ট অথবা থিসিসকে ভিত্তি করে পেপার বানান। কাজের মাঝে একটা কনসিসটেন্সি রাখুন। ‘স্টেটমেন্ট অব পারপাস’ বলে একটা ডকুমেন্ট বানাতে হয় যা আমরা একটু পরেই দেখবো। সেটা লেখার সময় বেশ কাজে দেবে। সেখানে আপনি দেখাতে পারবেন আপনি একটা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছিলেন, সেটা সফল ভাবে শেষ করেছেন থিসিস করে এবং সব শেষে সেটার স্বীকৃতি পেয়েছেন পেপার পাবলিশের মধ্য দিয়ে। আর ভুলবেন না আপনার শিক্ষকদের কো-অথর হিসেবে রাখতে। এতে আপনার এ্যাপ্লিকেশনে যখন কেউ চোখ বোলাবে সে দেখতে পাবে আপনি যাদের কাছে পড়ালেখা করেছেন, যাদের আন্ডারে বিভিন্ন প্রজেক্ট-এ গবেষণা করেছেন, থিসিস করেছেন, তাদের সাথে আপনার পেপার পাবলিশ হয়েছে এবং তারাই আপনার রেফারেন্স লেটার দিয়েছে।

একটা ভালো ‘এ্যাকাডেমিক সিভি’ বানানো খুবই প্রয়োজন। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের বেশ আগেই বানিয়ে নিতে হবে কারণ পিএইচডি বা রিসার্চ মাস্টার্সের জন্যে আপনাকে প্রফেসার খুঁজতে হবে। তখন এই সিভিটা ইমেইল করে তাদের দিতে হবে। মনে রাখবেন আমরা চাকরীর জন্যে যে সিভি বানিয়ে থাকি এ্যাকাডেমিক সিভি সেটার থেকে কিছুটা ভিন্ন হবে। এখানে আপনার ডিগ্রী, এ্যাওয়ার্ড, প্রজেক্ট, পাবলিকেশনস এবং টিচিং এক্সপেরিয়েন্স সবার উপরে দেবেন। আপনি গবেষণার জন্যে কতটা উপযোগী সেটা সিভি খুলেই যেন বোঝা যায়। একজন প্রফেসার আপনার সিভিটাকে খুব বেশী হলে ৩০ সেকেন্ড সময় দেবে প্রাথমিক বিবেচনার জন্যে। অর্থাৎ শুধু চোখ বোলাবে। তাই আপনার ভালো দিকগুলো হাইলাইট করুন যাতে সেই ৩০ সেকেন্ডে তার চোখে পড়ে। রেফারেন্স দিন সেই দুজনের যাদের সাথে আপনি আন্ডারগ্র্যাড থেকে ভালো সম্পর্ক রেখে ছিলেন। যদি তাদের প্রফেসার ইমেইল করে, তারা যেন ভালো ভাবে রিপ্লাই দেয় সেই পরিস্থিতি আগে থেকেই আপনাকে তৈরী করে নিতে হবে। এছাড়া আপনার কাজগুলো ওয়েবে পাবলিশ করুন। যদি আপনাকে গুগুলে সার্চ করা হয় তাহলে যেন পাওয়া যায় সেটা নিশ্চিত করুন। আপনার থিসিসের একটা কপি ওয়েবে রাখুন। academia.edu রিসার্চারদের স্যোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট। সেখানে আপনার উপর প্রোফাইল খুলে বিস্তারিত লিখে রাখুন। পুরো ব্যাপারটা ইম্প্রেশন তৈরী করা। আপনার সিভি হচ্ছে সূচনা এবং সেখান থেকে ধীরে ধীরে আপনার কাজ সম্পর্কে জানতে পারা। উল্লেখ্য, এগুলো পিএইচডি এবং রিসার্চ মাস্টার্সের জন্যে দরকার। টট মাস্টার্সের জন্যে একটা ভালো মানের সিভি হলেই চলবে। এমবিএ-তে আবেদন করতে চাইলে আপনার প্রফেশনাল এক্সপেরিয়েন্সটায় জোর দেবেন। বৃটেন এবং আয়ারল্যান্ডের ভালো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এক থেকে তিন বছরের এক্সপেরিয়েন্স চেয়ে থাকে এমবিএ ডিগ্রীতে ভর্তির জন্যে।

যাইহোক, এতক্ষণে আপনি মোটামোটি আপনার সব প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট তৈরি করে ফেলেছেন, একটা বাদে। যে ডকুমেন্টটা বাদ পড়েছে সেটা হলো ‘স্টেমেন্ট অভ পারপাস’ বা সংক্ষেপে SoP অথবা কোথাও কোথাও বলা হয় ‘পার্সোনাল স্টেটমেন্ট’। আসলে দুটো একই। আপনার নিজের উপর একটা রচনা লেখাই এখানে মূল উদ্দেশ্য। ধরুন আপনি কম্পিউটার সায়েন্সে পিএইচডি করতে চান। তাহলে এই রচনায় আপনাকে দেখাতে হবে আপনি কেন নিজেকে একজন কম্পিউটার সায়েন্স-এর পিএইচডি পজিশন পাবার যোগ্য মনে করেন। আপনার এ্যাকাডেমিক ফলাফল, গবেষণা, প্রকাশিত পেপার এবং অন্যান্য যেসব অর্জন রয়েছে সবকিছুকে অত্যন্ত সুন্দর করে, ভাষার মাধুর্য দিয়ে সাজিয়ে এই রচনায় সংযুক্ত করতে হবে। তবে কোন তালিকা দেয়ার চেষ্টা করবেন না, পেপারের লিস্ট দেবেন না এবং লেখাটা যেন উৎকৃষ্ট রচনা হয় সে বিষয়ে বিশেষ নজর দেবেন। এজন্যে ইন্টারনেটের সাহায্য নিতে পারেন। গুগলে সার্চ দিয়ে দেখতে পাবেন SoP লেখার ট্রিকস এবং টেকনিক নিয়ে বিভিন্ন ওয়েব সাইট আলোচনা করছে। লেখা শেষে কোন বড় ভাই যাঁরা বাহিরে পড়ছেন, তাঁদের দেখিয়ে নিলে একটা ফাইনটিউন হয়ে যাবে। আমি নিজে যখন পিএইচডি-এর জন্যে আবেদন করছিলাম তখন আমার SoP এর অবস্থা খুব খারাপ ছিল। আমি আজ কৃতজ্ঞতার সাথে জানাচ্ছি আমি যখন আমার SoP-টা রাগিব ভাইয়াকে দেখিয়েছিলাম, তিনি ভুল সংশোধন করে দিয়ে সাজেশন দিয়েছিলেন এবং দুটো লিঙ্ক দিয়ে সেখান থেকে আরো বিস্তারিত সাহায্য নিতে বলেছিলেন। আমিও আপনাকে বিশেষ ভাবে জোর দিয়ে বলবো লিঙ্ক দুটো যেন দেখেন - লিঙ্ক ১ এবং লিঙ্ক ২

এছাড়া আপনার আর যা যা লাগবে তা হলো, এ্যাকাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট এবং সার্টিফিকেট। ট্রান্সক্রিপ্ট এর মূল কপি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলে আনবেন। তারপর সেটাকে স্ক্যান করে নিতে হবে। মূল সার্টিফিকেট না পাওয়া গেলে প্রভিশনাল সার্টিফিকেট দিয়েই কাজ চালাতে হবে। সেটাও স্ক্যান করে নেবেন। যদি এর মধ্যে IELTS এর ফলাফল চলে আসে তাহলে সেটাও স্ক্যান করে নিন। না আসলেও সমস্যা নেই। এটার জন্যে আবেদন থামিয়ে রাখবেন না। মনে রাখবে দ্রুত আবেদন করা খুবই জরুরী স্কলারশিপের জন্যে। কেননা আপনি স্কলারশিপের আবেদন তখনই করতে পারবেন যখন আপনি অফার লেটার পাবেন। এই অফার লেটার দুই ধরনের হয়, কন্ডিশনাল এবং আনকন্ডিশনাল। IELTS এর স্কোর জমা না দিলে কন্ডিশনাল অফার দেবে যা দিয়ে স্কলারশিপের জন্যে আবেদন করা যাবে। এরপরও যদি আর কোন ডকুমেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চায়, সেটা আপনি আবেদন করার সময়ই বানিয়ে নিতে পারবেন। বিশেষতঃ পিএইচডি এর জন্যে একটা রিসার্চ প্রোপোজাল চাইতে পারে। সেটা আপনি সুপারভাইজারের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে বানিয়ে নিতে পারবেন পরে।

আবেদন

মনে রাখবেন বৃটেন এবং আয়ারল্যান্ডের সব বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন এ্যাপ্লিকেশনকে প্রাধান্য দেয়। বৃটেনে কেম্ব্রিজ, অক্সফোর্ড এবং সম্ভবত গত কয়েক বছর ধরে লন্ডন স্কুল অব ইকোনোমিক্স এপ্লিকেশন ফিস নিচ্ছে। এছাড়া অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় এ্যাপ্লিকেশন ফিস নেই। তবে আইরিশ বিশ্বাবিদ্যালয়গুলোতে গড়ে ৫০ ইউরো করে এপ্লিকেশন ফিস নেয়া হয় যা নন-রিফান্ডেবল। আবেদনের জন্যে বৃটেনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব ওয়েব সাইটে আবেদনের লিঙ্ক পাবেন। সেটা খুঁজে পাবার সহজ উপায় হলো Prospective Student সেকশনে যান। তারপর Apply Online জাতীয় লিঙ্ক বা ট্যাব খুঁজুন। সেটাও না পেলে Apply Online কথাটা বিশ্ববিদ্যালয় ওয়েব সাইটের সার্চ বারে লিখে সার্চ দিন। এরপরও যদি না পান তাহলে ‘info@ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটের এ্যাড্রেস’ (অথবা contact) বরাবর ইমেইল করুন। তারাই সাহায্য করবে।

যারা টট মাস্টার্স বা এমবিএ-তে আবেদন করতে চান তারা সব ডকুমেন্ট তৈরী করে অনলাইন এপ্লিকেশন খুলে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে ফর্ম পূরণ করুন। তারপর ডকুমেন্ট আপলোড করার একটা অংশ পাবেন। সেখানে আপনার সিভি, স্টেমেন্ট অব পারপাস, ট্রান্সক্রিপ্ট, সার্টিফিকেট, IELTS এর ট্রান্সক্রিপ্ট (যদি হাতে থাকে) ইত্যাদি আপলোড করুন।

তারপর আপনার শিক্ষকদের অফিশিয়াল ইমেইল এ্যাড্রেস অন্তর্ভূক্ত করে তাঁদের রেফারেন্স সেকশনে যুক্ত করুন। সাথে সাথে তাঁরা একটা ইমেইল পাবেন। তাঁদের আগে থেকেই অবহিত করুন যে আপনি অমুক বিশ্ববিদ্যালয়ের অমুক কোর্সে ভর্তি হতে চাচ্ছেন। সেখান থেকে তাদের কাছে ইমেইল যাবে। তাদের কিছুটা সময় দিন যাতে তারা রেফারেন্স লেটার লিখতে পারেন। মনে রাখতে হবে তাঁরা সাধারণত ব্যস্ত থাকেন। শুধু আপনার জন্যে সময় বের করে লেটার লেখা তাদের জন্যে সব সময় সহজ হয় না। তাই ধৈর্য্য ধরা উচিত।
সব শেষে আপনি অফিশিয়ালি এ্যাপ্লিকেশনটা সাবমিট করুন। এরপর নিয়মিত চোখ রাখুন। আপনাকে সাধারণত একটা পাসওয়ার্ড দেয়ার কথা। সেটা দিয়ে আপনি লগ ইন করে এ্যাপ্লিকেশনের আপডেট চেক করতে পারবেন। রেফারেন্স লেটার জমা দেয়া হয়েছে কিনা, সেটাও সেখান থেকে দেখতে পারা যাবে।
যারা আইরিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদন করতে চান, তারা http://www.pac.ie –তে গিয়ে এক সাথে বেশ কয়েকটা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে পারবেন। যাদের নাম ওখানে তালিকাভূক্ত নেই, তাদের অনলাইন এ্যাপ্লিকেশন ফর্ম নিজস্ব ওয়েব সাইটে পাবেন।

যারা পিএইচডি বা রিসার্চ মাস্টার্স করতে চান তাদের জন্যে আবেদনের প্রক্রিয়াটা একটু ভিন্ন। বৃটেনের রিসার্চ মাস্টার্সটা কিছুটা টটের মতই। হয়তো একজন সুপারভাইজার খুঁজে নিতে হতে পারে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম পড়ে নিন প্রথমেই। তারপর আবেদন করুন। কিন্তু আইরিশ রিসার্চ মাস্টার্স এবং দুই দেশের পিএইচডি এর জন্যে আপনাকে রিসার্চগ্রুপ এবং সুপারভাইজার খুঁজে নিতে হবে প্রথমে। এটা আইরিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে এটা না করলে আপনি আবেদনই করতে পারবেন না। আগে একজন সুপারভাইজার আপনাকে একসেপ্ট করবে, তারপর আপনি আবেদন করতে পারবেন। কিন্তু বৃটেনে প্রক্রিয়াটা তেমনটা নয়। এখানে সুপারভাইজার না পাওয়া গেলেও আবেদন করা যায়। কিন্তু সুপারভাইজার খুঁজে আবেদন করলে সব কিছু অনেক দ্রুত হয়। এ বিষয়ে আমার তিক্ত ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা রয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব এডিনবরায় আবেদন করেছিলাম। আমার আবেদন তারা রিজেক্ট করে। সেখানে উল্লেখ করেছিল আমার জন্যে তারা সুপারভাইজার খুঁজে পায় নি। পরে আমি একজন সুপারভাইজার খুঁজে তাঁকে দিয়ে ডিপার্টমেন্টকে বলালে তারা আমাকে অফার লেটার দেয়। তখনই বুঝেছিলাম সুপারভাইজার আসলেই বড় একটা রোল প্লে করে।

আরেকটা বিষয়ের জন্যে সুপারভাইজার খোঁজা জরুরী। বৃটেনে পিএইচডি এর জন্যে যখন আবেদন করবেন তখন আপনাকে একটা রিসার্চ প্রোপোজাল বা সামারি জমা দিতে হয়। ATAS বলে একটা সার্টিফিকেট নিতে হয় ভিসার জন্যে। সেটা নিতে হলে অফার লেটারে এই সামারিটা থাকতে হয়। সেজন্যে সুপারভাইজার খুঁজে নিলে এই সামারিটা আপনি তার সাথে আলোচনা করে লিখতে পারবেন।

কীভাবে সুপারভাইজার খুঁজবেন? প্রথমে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট পেইজে। সেখানে রিসার্চ ট্যাবের আন্ডারে গ্রুপ পাবেন। সেই গ্রুপ থেকে আপনার রিসার্চ ফিল্ডের গ্রুপে ঢুকুন। তারপর সেখান থেকে কোন কোন প্রফেসার, সিনিয়র লেকচারার এবং লেকচারার রয়েছে তাদের প্রোফাইল দেখুন। সবার একটা করে পেইজ থাকে সাধারণত। এই পেইজটা আরেক ভাবেও খুঁজে পাওয়া যায়। ডিপার্টমেন্টের পেইজে ‘পিপল’ বা ‘স্টাফ’ নামে লিঙ্ক থাকলে সেখানেও পাবেন।

যখন প্রফেসারদের পেইজ পেয়ে যাবেন, তখন সেগুলোয় ভালো করে চোখ বুলিয়ে নিন। তারপর আপনি যাদের যাদের রিসার্চ এরিয়াতে কাজ করতে আগ্রহী, তাদের ইমেইলগুলো নোট করুন। প্রয়োজনে এক্সেলে একটা ফাইল খুলে নিন। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের চার-পাঁচজন প্রফেসারকে এক সাথে মেইল করবেন না। কয়েকটা বিশ্ববিদ্যালয় ঠিক করুন। তারপর প্রতিটা থেকে একজন করে নিয়ে মেইল করুন। মেইলটা সংক্ষিপ্ত করুন। আপনার সিভিটা এ্যাটাচ করে দিন। সুস্পষ্ট ভাবে মেইলে জানান আপনি কোন এরিয়াতে পিএইচডি করতে ইচ্ছুক। ইমেইল করার পর হয়তো দেখবেন বেশ কিছুদিন কেটে গিয়েছে কিন্তু কেউ রিপ্লাই দেয় নি। হতাশ হবেন না। অন্য প্রফেসারদের ইমেইল করুন। শুধু মনে রাখবেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক প্রফেসারকে এক সাথে মেইল করবেন না। প্রফেসাররা মাঝে মাঝে কলিগদের ভর্তি হতে আগ্রহী ছাত্রদের থেকে আসা মেইল ফরোয়ার্ড করে দেয়। তখন যদি দেখে আপনি সবাইকেই একই কথা লিখেছেন, তাহলে ডাবল টাইমিং করা অবস্থায় দুই গার্লফ্রেন্ডের কাছে ধরার খাবার মত অবস্থা হবে।

যদি কোন প্রফেসার রিপ্লাই দেয়, তার সাথে আলোচনা শুরু করুন। ধীরেধীরে দেখতে পাবেন তিনি আপনাকে ভর্তির আবেদনের ডকুমেন্ট তৈরী করতে সাহায্য করছে। স্টেটমেন্ট অব পারপাস রিভিউ করে দিচ্ছে এবং রিসার্চ প্রপোজালও বানিয়ে দিচ্ছে। অনেক প্রফেসার সরাসরি আপনার শিক্ষকদের সাথে কথা বলতে চাইতে পারে। ডাবলিন সিটি ইউনিভার্সিটিতে আমি একটা স্কলারশিপ সহ ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলাম। তখন আমার স্যারের সাথে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসার বেশ কয়েকটা মেইল চালাচালি করেছিলেন। মজার ব্যাপার আমি এর কিছুই জানতাম না। আমার সিভি থেকে মেইল এ্যাড্রেস নিয়ে তিনি এটা করেছিলেন। তারপর আমাকে সেই প্রফেসার জানিয়ে ছিলেন তিনি আমাকে স্কলারশিপ দিতে আগ্রহী। আরো পরে আমি আমার স্যারের কাছ থেকে এই ঘটনাটা শুনেছিলাম। সেজন্যে বলছি, শিক্ষকদের সাথে সম্পর্ক ভালো রাখুন এবং আপনার আপডেট তাঁদের জানান। যদি কোন প্রফেসার তাঁদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে তাহলে যেন তাঁরা আপনার বিষয়ে পজেটিভ কিছু বলতে পারে।

সবশেষে সাধারণ নিয়মের মধ্যে থেকে আবেদন করুন। কার আন্ডারে আবেদন করছেন সেটা ফর্মে উল্লেখ করুন। এজন্যে নির্ধারিত ফিল্ডই থাকবে। এছাড়া যেসব বিশ্ববিদ্যালয় এ্যাপ্লিকেশন ফিস নেয় তাদের ক্রেডিটকার্ডের মাধ্যমে ফিস জমা দিতে পারবেন। এক্ষেত্রে একটা সাজেশন দেব। বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা পাঠানো যেহেতু সমস্যা, তাই বড় ভাই যারা বাহিরে পড়ছেন বা চাকরী করছেন তাদের সাহায্য নিন। তাদের অনুরোধ করুন টাকাটা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে দিয়ে দিতে এবং আপনি তাদের বাংলাদেশের বাসায় টাকাটা দিয়ে আসুন। আমি নিজে এভাবে কয়েকজনকে সাহায্য করেছি।

তারপর অপেক্ষার পালা। অফার পাবার অপেক্ষা। অধিকাংশ স্কলারশিপের জন্যে আপনি অফার পাবার পর আবেদন করতে পারবেন। সে বিষয় নিয়ে লিখবো এই সিরিজের আগামী পর্ব।

২ ফেব্রুয়ারী ২০১২
গ্লাসগো, যুক্তরাজ্য


মন্তব্য

স্বপ্নাদিষ্ট এর ছবি

এক বছর আগে এইরকম পোস্টের জন্য কত্ত খুঁজেছি! পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। চলুক

-স্বপ্নাদিষ্ট
=======================
যে জাতি নিজের ভাগ্য নিজে পরিবর্তন করে না, আল্লাহ তার ভাগ্য পরিবর্তন করেন না।

নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী এর ছবি

পরের পর্ব পুরোটাই থাকবে স্কলারশিপ নিয়ে। পড়ার আমন্ত্রণ রইলো।

আশফাক আহমেদ এর ছবি

চলুক

-------------------------------------------------

ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ।

মূর্তালা রামাত এর ছবি

পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম....

মূর্তালা রামাত

নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী এর ছবি

আশা করি উইক-এন্ডে লিখে শেষ করতে পারবো।

স্বাধীন এর ছবি

আগের পর্বটাও পড়েছি, এটাও পড়লাম। বেশ শ্রমসাধ্য এবং কার্যকরী একটি লেখা। আশা করি নুতন এপ্লিকেন্ট অনেকেই উপকৃত হবে এই লেখা হতে।

নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী এর ছবি

নূতন যারা পড়েতে আসতে চান তাদের কথা ভেবেই লিখছি। খুব খারাপ লাগে যখন দেখি এ্যাজেন্টরা তাদের উল্টাপাল্টা কথা বলে প্রতারিত করে। তাই সচেতনতা বাড়াতে এই পোস্ট।

ধূসর জলছবি এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ ,খুবই দরকারি একটা লেখা । চলুক

নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী এর ছবি

আপনাকেও ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা।

আজহার এর ছবি

আগেরটার মতো জ্বালাময়ী।

পরেরটার জন্য বইসা আছি.........

নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী এর ছবি

অনুপ্রেরণা পেলাম হাসি

পরের পর্ব লিখতে দুদিন সময় লাগবে। তবে চেষ্টা করবো সোমবারের মধ্যে প্রকাশ করতে।

ভালো মানুষ এর ছবি

উত্তম জাঝা!

নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ।

নির্ঝরা শ্রাবণ এর ছবি

নিয়াজ ভাইয়া,
অসংখ্য ধন্যবাদ লেখাটার জন্য। আমরা যারা বাইরে পড়তে যাবার দিবাস্বপ্নে বিভোর তাদের জন্য এই লেখাটা অনেক কাজের......... একেবারে পরীক্ষার চোথার মত খাইছে

নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী এর ছবি

লেখাটা থেকে উপকার পেলে আমিও আমার কষ্টটা সার্থক মনে করবো। শুভ কামনা রইলো।

বুড়া এর ছবি

সোমবার থেকে অপেক্ষা করছি। পিএচডি নিয়ে বিস্তারিত লিখলে উপকৃত হই।

নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী এর ছবি

নিজের পিএইচডির চাপে লেখাটা শেষ করা হয় নি সময় মত। তবে আজ ঠিক করেছিলাম এক বসায় শেষ করবো তৃতীয় পর্ব। শেষ পর্যন্ত তাই করেছি। এই মাত্র পোস্ট করলাম। আশা করি প্রয়োজনীয় তথ্য পাবেন সেখানে।

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

চলুক অসাধারণ।

ডকগুলো নিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু করে দিতে হবে দেখছি...........


_____________________
Give Her Freedom!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।