যাইহোক, কেটে গিয়েছে আরো চার বছর। ২০১২ তে এসে ফেল্পস স্বয়ং খুব একটা আশা করে নি। আটের পরিবর্তে এবার সে ঠিক করে সাত ধরনের সাঁতারে অংশ নেবে। গত ২৮ জুলাই ৪০০ মিটার একক মেডলি সাঁতার দিয়ে শুরু হয় ফেল্পসের এবারের অলিম্পিক। চতুর্থ হিসেবে সাতার শেষ করে ফেল্পস। বারো বছর আগে ২০০০ সনে সর্বশেষ ফেল্পস অলিম্পিকে কোন সাঁতার থেকে পদক জিততে ব্যর্থ হয়েছিল; আর হলো এবার। পত্রিকার কলামে কেউ কেউ লিখলো ফেল্পস শেষ হয়ে গিয়েছে। এমন কি ফেল্পসকে দেখেও তেমনটাই মনে হচ্ছিল। ঠিক এমন একটা অবস্থা থেকে পরদিন ফেল্পস একটা রূপা জেতে। ৪০০ মিটার ফ্রিস্টাইল রিলেতে এ্যামেরিকার হয়ে দলীয় ভাবে পদকটা জেতে ফেল্পস। তবে এ্যামেরিকার চার সাতারুর মধ্যে ফেল্পসই সবচেয়ে দ্রুততম ছিল। ৩১ জুলাই ফেল্পস আবার একটা রূপা জেতে, এবার ২০০ মিটার বাটারফ্লাইতে। তবে সোনার দেখা পেতে ফেল্পসকে খুব একটা অপেক্ষা করতে হয় নি। ঐ দিনই ২০০ মিটার ফ্রিস্টাইল রিলে-তে দলীয় ভাবে জেতে এবারের অলিম্পিকের প্রথম সোনা। এই পদকটা এবারের আসরে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ এটা দিয়েই ফেল্পস সোভিয়েত ইউনিয়নের ল্যাতিনিনার ১৮ পদকের অলিম্পিক রেকর্ডকে টপকে যায়। আয়োজকরা ফেল্পসকে সোনা পরিয়ে দিতে খোদ ল্যাতিনিনাকেই আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে এসেছিলেন সেদিন। তারপর যা হলো, সেটা কেবল রুপকথায় সম্ভব। ফেল্পস একে একে জিতলো পরের তিনটা সোনাও। এখন সে অলিম্পিক ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সোনা জয়ী (১৮টা) এবং একই সাথে সবচেয়ে বেশি পদক জয়ীও বটে (২২টা – ১৮ সোনা, ২ রূপা এবং ২ ব্রোঞ্জ)।
ফেল্পস-এর এই সাফল্য শুধু ব্যক্তিগত পর্যায়েই সীমাবদ্ধ থাকে নি। বরং এর প্রভাব পড়েছে সাঁতারের পদক তালিকায়ও। ৩৪টা সোনার মধ্যে এ্যামেরিকা জিতে নিয়েছে ১৬টা সোনা। এরপরই আছে চীন যারা জিতেছে ৫টা এবং ফ্রান্স যারা জিতেছে ৪টা। এছাড়া নেদারল্যান্ডস, দক্ষিণ আফ্রিকা ও হাঙ্গেরি দুটো করে এবং তিউনিশিয়া, লিথিউনিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া জিতেছে ১টা সোনা। হ্যা, অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, সর্বশেষ নামটা “অস্ট্রেলিয়া”।
টেনিস ছিল এবারের অলিম্পিকে আমার ব্যক্তিগত পছন্দের খেলাগুলোর একটা। লন্ডনে বিভিন্ন স্থানে ঘোরার সময় আইফোন থেকে বিবিসি চালিয়ে খেলাগুলো লাইভ দেখেছি। দুর্দান্ত হয়েছে একেকটা ম্যাচ। এ্যামেরিকার সেরেনা উইলিয়ামসের শুরু দেখেই বোঝা যাচ্ছিল এবার কেউ তাকে থামাতে পারবে না। সিঙ্গেল এবং বোন ভেনাস উইলিয়ামসকে সাথে নিয়ে ডাবল – দুটোতেই অসাধারণ ছিল সেরেনা। অন্য দিকে রাশিয়ার মারিয়া শারাপোভাও ছিল দারুণ ফর্মে। সেকেন্ড রাউন্ডে গ্রেট বৃটেনের ১৮ বছরের লরা রবসনের সাথে শারাপভার খেলাটা ছিল খুবই উপভোগ্য। যদিও লরা হেরে যায়, কিন্তু ওর খেলা এখন ব্রিটিশদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে মেয়েদের টেনিসে একজন শক্তিশালী “ব্রিট” খুঁজে পাওয়ার। সে যাইহোক, স্বপ্নের ফাইনাল শেষ পর্যন্ত সেরেনা - শারাপভার মধ্যেই হয়েছিল। কিন্তু সেটা এতটাই এক তরফা যে খেলা শুরু হতে না হতেই শেষ! প্রথম সেট সেরেনা জেতে সরাসরি ৬-০ তে। পরের সেট জেতে ৬-১ এ। শারাপভাকে খুঁজেই পাওয়া যায় নি ফাইনালে।
ছেলেদের সিঙ্গেল ছিল এবারের উইম্বলডনের এ্যাকশন রিপ্লে। সুইটজারল্যান্ডের ফেডেরার কাছে উইম্বলডনের ফাইনালে হেরে যায় বৃটেনের মারি। ঘুরে ফিরে অলিম্পিকের ফাইনালে, তাও আবার উইম্বলডনের সেন্টার কোর্টেই মুখোমুখি হয় আবার ফেডেরার এবং মারি। ব্রিটিশরা আবারও আশায় বুক বেঁধে এসেছিল খেলা দেখতে। তবে এবার আর হতাশ হয় নি। আসলে এবারের অলিম্পিকে মারি ছিল সুপারফর্মে। শুরু থেকে সে একেক জনকে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে উঠেছে। কিন্তু ফাইনালে কতটা কী করতে পারবে সেটা নিয়ে খোদ ব্রিটিশদেরও সন্দেহ ছিল। কিন্তু ফেডেরারকে যেভাবে মারি ফাইনালে ৬-২, ৬-১ ও ৬-৪ এ উড়িয়ে দিল, তাতে অন্তত এটা বলা যায় মারির প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম জেতা খুব বেশি দূরে নেই। এদিকে, মিক্সড ডাবলে লরাকে সাথে নিয়ে মারিকে একটা ওয়াইল্ডকার্ড এন্ট্রি দেয়া হয়েছিল। সেটাতেও মারি ফাইনালে উঠেছিল কিন্তু ফেডেরার সাথে সিঙ্গেলের ফাইনাল খেলার পরপরই আবার মিক্সড ডাবলের ফাইনালে মেয়েদের বর্তমান নাম্বার ওয়ানের বেলারুশের সাথে ক্লান্ত মারি পেরে ওঠে নি। তাই ওটাতে রূপা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। তবে এ কথা জোর দিয়েই বলা যায়, দুটো ফাইনাল যদি পরপর না পড়তো তাহলে এই সোনাটাও মারির কাছ থেকে কেউ ছিনিয়ে নিতে পারতো না। এছাড়া মেয়েদের ডাবলে এ্যামেরিকার উইলিয়াম বোনেরা সোনা তুলে নেয়। ছেলেদের ডাবলের সোনাও গিয়েছে শেষ পর্যন্ত এ্যামেরিকার পকেটে।
সাইক্লিং-কে কেন বৃটেনের জাতীয় খেলা ঘোষণা করা হবে না, এ বিষয়ে যদি কোন দল বা মোর্চা দাবি তোলে, তাহলে সেটাকে অমূলক বলার উপায় নেই। বৃটেনকে চরম লজ্জার হাত থেকে বাঁচিয়েছে এই সাইক্লিং। যখন চীন এবং এ্যামেরিকা সহ অন্যান্য দলগুলো একেকর পর এক পদক জিতে চলেছিল, বৃটেন তখন ২০ নাম্বারে বসে আঙুল চুষছিল। এরপর হঠাৎ সাইক্লিং এবং রোইং - এই দুটো ইভেন্ট এক ধাক্কায় বৃটেনকে তিনে নিয়ে আসে। সাইক্লিং-এর মোট ১৮টা পদকের ৮টা পেয়েছে বৃটেন। আরো আটটা দেশ একট করে পদক নিয়েছে। এখনও বাকি আছে দুটো ইভেন্ট যেখানে অন্তত একটা সোনা বৃটেন পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
টেবিল টেনিস এবং ব্যাডমিন্টনে কেন অন্য দল খেলে এটা একটা বড় প্রশ্ন হতে পারে বটে! টেবিল টেনিসের ৪টা এবং ব্যাডমিন্টনের ৫টা সোনাই চীন নিয়েছে। ডাইভিং-এ ও একই কথা বলা যেত হয়তো, রাশিয়া একটা পদক নিয়ে বাগড়া বাঁধিয়েছে। ৮টা পদকের ৬টাই চীনের পকেটে গিয়েছে; আর একটা ইভেন্ট এখনও বাকি আছে। একই ভাবে আর্চারির ৪টা পদকের তিনটা নিয়েছে দক্ষিন কোরিয়া (একটা নিয়েছে ইটালি)।
এই ছিল এখন পর্যন্ত শেষ অথবা প্রায় শেষ হয়ে যাওয়া খেলা গুলো। তবে এখনও শেষ হতে বাকি আছে ট্র্যাক এন্ড ফিল্ডের খেলাগুলো, মারামারি তথা জুডো-বক্সিং এবং সাথে ফুটবল, হকি, বাস্কেটবল সহ অন্যান্য দলীয় খেলা। আগামী কাল এবং পরশু হবে প্রায় সব খেলার ফাইনাল; সাথে নেমে যাবে এবারের অলিম্পিকের পর্দা। তারপর ফিরে আসবো এই সিরিজের সর্বশেষ লেখা নিয়ে। লন্ডনে তোলা ছবি ও ঘোরাঘুরির গল্পও থাকবে ঐ পর্বেই।
মন্তব্য
কাল ফাইনাল ! কাল ব্রাজিল! হিপ হিপ হুররে
facebook
আমার ধারণা ফাইনালটা একতরফা হবে। ফুটবলে ব্রাজিলের আন্ডার-২৩ দলকে আটকে দেয়ার সাধ্য এই মুহূর্তে কারো নেই!
টুইটার
আপনার মুখে লন্ডনের রোদ পড়ুক! ডাবলিন আসবেন কবে? যেতে পারি ঐ দিকে, আর সামনে মাসের ২০ তারিখে লন্ডনে যাচ্ছি, থাকবেন নাকি?
facebook
লন্ডনের রোদ, আসলেই ফুলচন্দনের চেয়েও দামী
এখন তো আর ডাবলিন থাকি না। তাই বেড়াতে যাওয়ার ব্যাপারটা নিশ্চিত না। লন্ডন এলে গ্লাসগোটাও ঘুরে যেতে পারেন।
টুইটার
হায় ব্রাজিল. . . .
তবে সবার চোখ যার উপর ছিল সেই উসাইন বোল্টকেই আমার মনে হয়েছে এবারের অলিম্পিকের আসল হিরো। অলিম্পিক দেখার ফাঁকে ফাঁকে লন্ডন শহরটাও দেখা হয়ে যাচ্ছে। একটা ইভেন্টের হিটেও যদি আমরা উতরে যেতে পারতাম খুব আনন্দ হত।
অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।
ইচ্ছে করে এই পর্বে বোল্টকে আনি নি। বোল্ট এলে ফেল্পস-এর উপর থেকে আলো সরে যেতো। আগামী পর্বে ট্র্যাক এন্ড ফিল্ডের আলোচনায় বোল্টকে নিয়ে আসবো।
আমার মাঝে মাঝে মনে হয় আমাদের মূল অভাব সিরিয়াসনেসে। দৌড়ে যদি নাও পারি, তবু অনেক ইভেন্ট আছে যেখানে শারীরিক শক্তি তেমন প্রয়োজন হয় না। তেমন ইভেন্টে অন্তত একটা পদক বাংলাদেশ পেতে পারতো। উদ্যোগ নেয়ার কি কেউ নেই?
টুইটার
হ্যাঁ, উসইন বোল্টের 'ডাবল' জেতাটা (পরপর দুই অলিম্পিকে ১০০ ও ২০০ মিটার স্প্রিন্টে সোনা জিতে রেকর্ড করেছে) উপভোগ করেছি। সেই সাথে আপনার লেখাটাও। (আমি একজন খেলা পাগল মানুষ)।
শুভেচ্ছা রইলো
টুইটার
সবাই (কমেন্টেটর এবং টেনিস বোদ্ধা) বলছিল মারি-ফেদেরারের ম্যাচটা নাকি প্রশ্নবিদ্ধ?? ঠিক নাকি??
আমরা ম্যাচটা দেখার সময় মজা করে বলছিলাম জেমস-বন্ড নাকি খেলার আগের রাতে ফেদেরারের সাথে দেখা করেছে রাণীর কি এক বার্তা নিয়ে
পোস্টে ১ তারা বোল্টের কথা না বলার জন্য। বোল্টের কথা বললে সাড়ে ৫ তারা দিতাম
এই পর্বে বোল্টকে ইচ্ছে করে আনি নি। ট্র্যাক এন্ড ফিল্ড নিয়ে আগামী পর্বে লিখবো। সেখানে বোল্ট বন্দনাই মূখ্য থাকবে
টুইটার
উপভোগ করছি অলিম্পিক ও আপনার আপডেট। ধন্যবাদ।
__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;
অসংখ্য ধন্যবাদ।
টুইটার
আপনি অলিম্পিক আসরে যেতে না পেরেও দিব্যি লিখছেন দেখি, উৎপল শুভ্রর মত ক্রীড়াসাম্বাদিকদের খেদিয়ে আপনাকে নিলে অনেক ভাল হত!
বিবিসির কল্যানে সকাল-সন্ধ্যা অলিম্পিক দেখা হয়েছে। ২৪টা স্ট্রিমিং ওপেন ছিল এবার। টিভি দিয়ে এভাবে অলিম্পিক কভার করা আসলে সম্ভব নয়। আইপ্লেয়ার দিয়েই সেটা বিবিসির পক্ষে সম্ভব হয়েছে। আর সেকারণে আমিও ব্যস্ত ছিলাম কখনও ল্যাপটপে, কখনও আইফোনে
টুইটার
ঘচাং!
টুইটার
নতুন মন্তব্য করুন