খবরটা ছড়িয়েছে দাবানলের মত। পৃথিবীর অসংখ্য মানুষের অনুপ্রেরণা, ইতিহাসে প্রথম দুই পা-বিহীন প্রতিযোগী হিসেবে অলিম্পিকের মূল আসরে অংশ নেয়া দৌড়বিদ অস্কার পিস্টোরিয়াস তার মেয়েবন্ধুকে গুলি করে হত্যা করেছে দক্ষিণ আফ্রিকায় তার নিজের বাসায়। রিয়াল মাদ্রিদ আর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বহুল আকাঙ্ক্ষিত ম্যাচের খবরকে ছাপিয়ে পত্রিকায় পাতা দখল করে নিয়েছে পিস্টোরিয়াস। প্রথমে বলা হলো পিস্টোরিয়াসের বাসা থেকে ২৬ বছর বয়সী একজনকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে ধরে নিয়ে গিয়েছে। কিন্তু পরে যখন দেখা গেলো পিস্টোরিয়াসের বয়সও ২৬, তখন সবার টনক নড়ে। পরে পুলিশ নিশ্চিত করে ধরে নিয়ে যাওয়া মানুষটা আর কেউ না, খোদ অস্কার পিস্টোরিয়াস।
২০১২ সনের লন্ডন অলিম্পিকে স্বাভাবিক ও সুস্থ প্রতিযোগীদের সাথে একই কাতারে দাঁড়িয়ে ৪০০ মিটার দৌড়ে সেমিফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছে ছিল পিস্টোরিয়াস। এছাড়া ঐ বছরই প্যারা-অলিম্পিকে বিশ্বরেকর্ড সহ জিতেছে দুটা সোনা, একটা রূপা। এছাড়াও গত পাঁচ বছরে পিস্টোরিয়াসের আছে অসংখ্য সাফল্যের গল্প যার মধ্যে অন্যতম এ্যাথলেটিক্সে-এর মূল বিশ্বচ্যাম্পিয়ানশিপের রূপা। অথচ পিস্টোরিয়াসের বয়স যখন মাত্র ১১ মাস, তখন হাঁটুর খানিক নীচ থেকে দুই পা কেটে ফেলতে হয়েছিল। সে জন্মেছিল ফিবুলার হেমিমেলিয়া রোগ (পা না থাকা) নিয়ে যার কারণে তার শরীরে এই অপারেশন করতে বাধ্য হয় চিকিৎসকরা। কিন্তু পিস্টোরিয়াসের ছিল অদম্য মনোবল। কৃত্রিম পা নিয়েও সে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক মানুষের মত চলাফেরা করার চেষ্টা করতো। এমন কি প্যারা-অলিম্পিকেও পিস্টোরিয়াস দৌড়ায় এক পা বিহীনদের ক্যাটাগোরিতে। ওকে কেউ কেউ বলেছিল দুই পা ছাড়া লম্বা দৌড় দেয়া সমস্যা। তাই ছোট দৌড় ওর জন্যে উপযোগী বেশি। কিন্তু একগুয়ে পিস্টোরিয়াস বলেছিল তাহলে আমি লম্বা দৌড়ই দিব। একেবারে ৪০০ মিটারকে সে নিজের ইভেন্ট বানিয়ে নিয়েছে। কিন্তু সেটাও তার কাছে কম লাগছিল। তাই ২০০৮ সনেই দৌড়াতে চেয়েছিল অলিম্পিকের মূল ইভেন্টে স্বাভাবিক প্রতিযোগীদের সাথে। কিন্তু সেবার পিস্টোরিয়াসের দৌড়ানো হয়ে ওঠে নি যা শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়েছিল আরো চার বছর পর ২০১২ এর লন্ডন অলিম্পিকে। এছাড়া এক বছর আগেই ২০১১ এর এ্যাথলেটিক্সের বিশ্বচ্যাম্পিয়ানশিপে দক্ষিণ আফ্রিকা দলের হয়ে ৪০০ মিটার রিলে দৌড়ে রূপাও জিতেছে সে।
গতরাতে পিস্টোরিয়াসের দৌড়গুলো দেখছিলাম। কী অদ্ভুত দ্রততায় পিস্টোরিয়াস ছুটে চলে! দৌড় শেষে অন্যান্য প্রতিযোগীরা এসে জড়িয়ে ধরছে পিস্টোরিয়াসকে। নাহ, করুণা থেকে নয়। সম্মান থেকে। পড়ছিলাম ওকে নিয়ে লেখা বিভিন্ন আর্টিকেল। পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ মানুষের অনুপ্রেরণা এই অস্কার পিস্টোরিয়াস। কিন্তু হায়! আজ সকালেই ইউরোস্পোর্সের অনলাইন পত্রিকা খুলে দেখি পিস্টোরিয়াস কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছে কোর্টে দাঁড়িয়ে। আনুষ্ঠানিক ভাবে কোর্ট থেকে আজ ওর মেয়েবন্ধুকে হত্যার চার্জ চাপিয়ে দেয়া হলো কাঁধে। মাথা, বুক ও হাতে চারটা গুলি চালিয়ে নিজের ফ্ল্যাটেই হত্যা করেছে পিস্টোরিয়াস তার মেয়েবন্ধুকে, ঠিক ভ্যালেন্টাইন্স ডে-এর আগের রাতে।
প্যারাঅলিম্পিক ২০১২ এর ৪০০ মিটারের সোনা জয়ের দৌড়ঃ
অলিম্পিক ২০১২ (মূল আসর) এর ৪০০ মিটারের সেমিফাইনাল দৌড়ঃ
ধারণা করা হচ্ছে পিস্টোরিয়াসের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে। পিস্টোরিয়াসও কোর্টে কিছু বলে নি। শুধু কেঁদেছে। উপরে শেয়ার করা দৌড়ের একটা ভিডিওতে ভাষ্যকার বলছিল “গ্রেটেস্ট প্যারাঅলিম্পিক এ্যাথলেট”। কথাটা বারবার মনে পড়ছে। আসলেই তো তাই। পিস্টোরিয়াস নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে চেয়েছে সব সময়; এবং সেটা সে করেও দেখিয়েছে। অসম্ভবকে সম্ভব করা এক অদম্য মানুষ সে। কিন্তু এমন একজনের জীবনের এ রকম পরিণতি কেন হলো? এ প্রশ্নের উত্তর হয়তো পিস্টোরিয়াসই শুধু দিতে পারবে।
নিচে শেয়ার করা কান্নার ছবিটা দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, হায় পিস্টোরিয়াস, এ তুমি কী করলে?
(ছবিটা eurosport এর সৌজন্যে ওদেরই ওয়েব সাইট থেকে লিঙ্কের মাধ্যমে শেয়ার দেয়া। খবরের লিঙ্ক)
দ্রষ্টব্যঃ শাহবাগ আন্দোলন এবং ব্লগার থাবা বাবার মৃত্যুকে নিয়ে যে লেখাগুলো আসছে, সেগুলো যাতে আরো স্থান পায় প্রথম পাতায়, তাই লেখাটা সরিয়ে দিয়েছি প্রথম পাতা থেকে।
মন্তব্য
শাহবাগের এই জোয়ারের মধ্যেও দুটি খবর মাথায় কিছুটা হিট করল। একটা এই পিস্টোরিয়াসের কাহিনি আরেকটা রাশিয়ায় উল্কাপিন্ডের আঘাত।
হ্যা, আমারও একই অবস্থা।
টুইটার
দ্রষ্টব্যঃ শাহবাগ আন্দোলন এবং ব্লগার থাবা বাবার মৃত্যুকে নিয়ে যে লেখাগুলো আসছে, সেগুলো যাতে আরো স্থান পায় প্রথম পাতায়, তাই লেখাটা সরিয়ে দিয়েছি প্রথম পাতা থেকে।
টুইটার
নতুন মন্তব্য করুন