“আমার মেয়েটা ছোট। তোমরা একজন একজন করে যেও।”
সময়টা ২০১৪। আবার জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এবার বিএনপি নির্বাচনে আসেই নি। কিন্তু নির্বাচন শেষ হবার সাথে সাথে শুরু হলো একই ধরনের হামলা। বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকা খবর দিতে লাগলো দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। কোথাও কয়েক দিনের কোলের বাচ্চাকে নিয়ে মা পালাচ্ছে, কোথাও হত-দরিদ্র মহিলার কোনক্রমে টিকিয়ে রাখা বাড়িটাকে গুড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে দুর্বৃত্তরা, আবার কোথাও হামলার তীব্রতায় টিকে থাকতে না পেরে এবং আরও ভয়াবহতার কথা ভেবে সর্বস্ব ফেলে রেখে হিন্দু পরিবারগুলো পালিয়ে যাচ্ছে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের দিকে। সময় পেরিয়েছে কিন্তু বাস্তবতা এতটুকু বদলায় নি।
একটু পেছনে ফিরে দেখা যাক এবার। ভারতের প্রবীণ নেতা জ্যোতি বসুর আত্মজীবনী ‘যতদূর মনে পড়ে’তে তিনি লিখেছিলেন,
১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্ট ভারতের ইতিহাসের এক কলঙ্কময় দিন। এই দিনে শুরু হয় ভ্রাতৃঘাতী দাঙ্গা। হিন্দু ও মুসলিম সাম্প্রদায়িকতাবাদী গোষ্ঠীগুলো দাঙ্গা শুরু করে। কিন্তু দাঙ্গার প্রধান উস্কানিদাতা ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসকরা।
হ্যাঁ, তখনও-এখনও। এই দাঙ্গা এবং হামলার পেছনে কাজ করে রাজনৈতিক এবং সাম্রাজ্যবাদী শাসকরা। ১৯৪৬-৪৭ সনের ঐ সময়টা পূর্ববঙ্গ, পশ্চিমবঙ্গ, পাঞ্জাব সহ ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ দাঙ্গা হয়েছিল। আর সেই দাঙ্গার সুযোগ নিয়ে এক পক্ষ আরেক পক্ষের উপর কখনও প্রতিশোধ, আবার কখনও স্বার্থ উদ্ধারের খেলায় মেতে উঠেছিল। সাংবাদিক হারুন হাবিবের লেখা একটা প্রবন্ধ থেকে জানা যায় যে ১৯৪১ সনে পূর্ববঙ্গে হিন্দু জনগোষ্ঠী ছিল ২৮ শতাংশ। যদিও লেখক সূত্র উল্লেখ করেন নি কিন্তু পরে খোঁজ করে আমি দেখেছি তথ্যটা Census of India 1941 থেকে নেয়া। দাঙ্গা পরবর্তী দেশ বিভাগের পর এই সংখ্যা কমে এসে দাঁড়ায় ২২ শতাংশে। যদিও আরও বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় এই সংখ্যাটা তুলনামূলক ভাবে বেশি ছিল। তবে তর্কের খাতিরে যদি আমরা ২২ শতাংশ ধরে নেই, তবুও দেখা যায় ১৯৪৭ থেকে ২০১০ পর্যন্ত আসতে হিন্দু সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা কমে নেমে এসেছে ৯.৫ শতাংশে। বাংলাদেশ ‘ব্যুরো অব স্ট্যাটেসটিকস’এর মতে ২০১১ সনে এসে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮.৫-এ। অথচ ঠিক এই সময়ে ভারত এবং ইসরাইলে মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কমেনি, বরং বেড়েছে। আরও গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রধান ধর্মের জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কমে যাবার ঘটনা মূলত ঘটেছে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশেই শুধু।
স্বাভাবিক ভাবেই এ তথ্যগুলো যে কোন সচেতন মানুষকেই বিচলিত করবে। নিজের ভিটা-মাটি ছেড়ে অন্য দেশে দেশান্তরিত হবার ইচ্ছে একজন মানুষের মনে কখন আসতে পারে, সেটা সহজেই অনুমেয়। যখন কোন বাবাকে বলতে হয় “আমার মেয়েটা ছোট। তোমরা একজন একজন করে যেও” তখন দেশের টান বা ভিটার টান খুবই নগণ্য হয়ে যায়। বেঁচে থাকার তাগিদে ঐ মানুষগুলো তখন দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়।
বাংলাদেশে হিন্দু জনগোষ্ঠী কমে যাবার ঘটনাটা যদি এক দিকের চিত্র দেখায় তাহলে অন্য দিকে রয়েছে ভয়াবহ আরও কিছু দৃশ্য। ২০০৪ সনে রাজশাহীতে বাংলা ভাই-এর উত্থান বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে জঙ্গিবাদের সূচনা করেছিল। ১ এপ্রিল ওসমান বাবু নামে ২৭ বছরের এক যুবককে জবাই করে হত্যা করা হয়েছিল। এরপর একে একে ৩২ জন মানুষকে এক বছরের মধ্যে হত্যা করে বাংলা ভাই এবং শায়খ আব্দুর রহমান। ত্রাস সৃষ্টির জন্য হত্যার পর লাশ গুলো উল্টা করে গাছে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হতো। ঠিক ওরকম সময়ে দৈনিক জনকণ্ঠের ফটো সাংবাদিক সেলিম জাহাঙ্গীর ঐ ভয়াবহ জনপদের এক বিরল সাহসী মানুষ হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেন যিনি সর্বপ্রথম বাংলা ভাইয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে একটা জিডি করেছিলেন। যদিও প্রথমে বলা হয়েছিল বাংলা ভাই মিডিয়ার সৃষ্টি কিন্তু এক বছরের মধ্যেই তাদের সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ বা সংক্ষেপে জেএমবি ৬৩ জেলায় বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দেয়। দিনটা ছিল ১৭ আগস্ট, ২০০৫। একই বছর ১৪ নভেম্বর তারা ঝালকাঠির সহকারী জেলা জজ সোহেল আহমেদ ও জগন্নাথ পাঁড়েকে হত্যা করে। বাংলাদেশের বিচার বিভাগের উপর এরকম আক্রমণ রীতিমত বাংলাদেশের অস্তিত্বের উপর আক্রমণ ছিল।
পরবর্তীতে বাংলা ভাই এবং শায়খ আব্দুর রহমানকে বিচারের আওতায় এনে ফাঁসি দেয়া হলেও তাদের আদর্শকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব হয় নি। আর সে কারণেই আমরা এখনও দেখি হুমায়ূন আজাদের মত মানুষকে চাপাতি দিয়ে কুপানো হয়, ব্লগারদের উপর আক্রমণ হয়, ব্লগার রাজীবকে সুপরিকল্পিত ভাবে হত্যা করে নির্লিপ্ত ভাবে সেটাকে ‘দ্বীনের দায়িত্ব পালন’ বলে উল্লেখ করে হত্যাকারী। একই কারণে আমরা আজ দেখতে পাই বাংলার বুকে হেফাজতে ইসলামের উত্থান যারা দাবী করে দেশ থেকে তারা সমস্ত নাস্তিক নিধন করবে।
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে কতটা উদার হয়েছে সেটা বিচার করতে গেলে আমাদের পদে পদে হতাশ হতে হবে। উদারতার কোন লক্ষণ তো ছিলই না, বরং আমরা ক্রমেই একটা ধর্ম নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্র ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি যেখানে ধর্ম হচ্ছে রাজনীতির বর্ম। মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহার করে ভোটের রাজনীতি দশকের পর দশক নিত্য-নূতন রূপ নিয়েছে। যেখানে বাংলাদেশের সংবিধানে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ আছে ধর্মকে রাজনৈতিক ভাবে অপব্যবহার করা যাবে না, সেখানে ধর্মই রাজনীতির সবচেয়ে বড় পণ্য হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। অনেকেই হয়তো জানেন না, আমাদের সংবিধানে বলা হয়েছে,
ধর্ম নিরপেক্ষতা নীতি বাস্তবায়নের জন্য
(ক) সর্ব প্রকার সাম্প্রদায়িকতা,
(খ) রাষ্ট্র কর্তৃক কোন ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদা দান,
(গ) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মীয় অপব্যবহার,
(ঘ) কোন বিশেষ ধর্ম পালনকারী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য বা তাহার উপর নিপীড়ন,
বিলোপ করা হইবে।
এছাড়াও আমাদের সংবিধানে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে,
আমরা অঙ্গীকার করিতেছি যে, যে সকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণোৎসর্গ করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল -জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার সেই সকল আদর্শ এই সংবিধানের মূলনীতি হইবে।
অথচ আমরা দেখতে পাই হেফাজতে ইসলাম যখন ‘নাস্তিক’ মারার হুমকি দেয় তখন তাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা হয় না; কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করে না। বরং রাজনীতিবিদরা তাদের থেকে দোয়া নিতে যায়। হেলিকপ্টারে হেফাজতে ইসলামের নেতাদের তাদের আনা-নেয়া করা হয়। হিন্দু ধর্মের মানুষদের দিনের পর দিন নির্যাতিত হতে দেখেও আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থা চুপ থাকে। যেন এগুলো স্বাভাবিক ঘটনা। এভাবেই চলতে থাকবে। আপনি-আমিও তাই চুপ আছি।
কিন্তু আর কত দিন? আপনি যদি নিজেকে ‘মুসলিম’ ভেবে নিরাপদ থাকবেন ভাবছেন, তাহলে বলবো ভুল করছেন। ১৯৭১ সনে প্রথমে হিন্দু জনগোষ্ঠী দিয়ে হত্যা-ধর্ষণ শুরু হয়েছিল বটে, কিন্তু অচিরেই তা ছড়িয়ে পড়েছিল সবার উপর। মনে রাখা জরুরী, সাম্প্রদায়িকতার বিষ যার মাঝে আছে, সে হিন্দু চেনে না, মুসলিমও নয়। সে বন্ধু চেনে না, শত্রুও নয়। তার কাছে তার চিন্তাই পৃথিবীর শেষ কথা। সেটা প্রতিষ্ঠা করতে প্রয়োজনে মাকেও বলি দিতে পারে তারা। ‘পারে’-ই বা কেন বলছি? দেশ তো মা-ই। তারা মাকে বলি দিচ্ছে। প্রতি নিয়ত।
তাই একটা সুন্দর এবং সমৃদ্ধশীল বাংলাদেশ গড়তে আমাদের সবাইকে এক হয়ে অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। একটা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার শপথ আমাদের আজই নিতে হবে, এই মুহূর্তে। আসুন, হিন্দু বা মুসলিম না হয়ে মানুষ হই। মানুষকে হিন্দু বা মুসলিম হিসেবে বিচার না করে, মানুষ হিসেবে বিচার করি। আসুন, বাংলাদেশকে একটি সুখি এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলি যেখানে সব ধর্মের সব মানুষ সমান অধিকার ভোগ করবে এবং শান্তিতে বাস করবে। রাজনীতিবিদরা যদি সেই বাংলাদেশ গড়তে এগিয়ে না আসে, তাহলে চলুন আপনি-আমি মিলেই সেই বাংলাদেশ গড়ি। আপনার-আমার সমন্বিত শক্তি কিন্তু কম নয়, একে তুচ্ছ ভাবার কারণ নেই। আমাদের দেশপ্রেমই আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাবে। জয় বাংলা।
মন্তব্য
ব্রিটিশ বেনিয়ারা ভারতবর্ষ ত্যাগের পুর্বে সাম্প্রদায়িকতার যে বিষ বৃক্ষ রোপন করে গেছে, তা আজ মহীরুহ। একটি ডাল ভাংলে বা দুটি পাতা ছিঁড়লেই তার বিনাশ সম্ভব নয়। প্রয়োজন সমুলে উৎপাটন করা। মৌলবাদ তোষণের ধারাবাহিক কর্মকান্ডে বাংলাদেশে আজ ধর্মীয় জঙ্গিবাদ সামাজিক/ প্রাতিষ্ঠানিক/ অর্থনোইতিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত। তাই শুধু বর্জন করলেই তাদের আর প্রতিহত করা সম্ভব নয়। সমাজের প্রতিটি পর্যায় থেকেই তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ প্রতিহত/নস্যাৎ করতে হবে; এবং তা শুরু করতে হবে মাদ্রাসা, স্কুল, কোচিং সেন্টার থেকে। কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রন করতে হবে মৌলবাদী মদদপুস্ট ব্যাঙ্ক, বীমা, ঊচ্চ শিক্ষালয়, এন জি ও, হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় স্থাপনা সহ ধর্মীয় রাজনীতি। সময় একদম হাতে নেই। অনেক দেরী হয়ে গেছে। এর পরও অপেক্ষা করলে সেই অপেক্ষার আর শেষ হবে না। তখন পাকিস্তান বা আফগানিস্তানের মত পশ্চিমাদের ড্রোন বা সামগ্রিক আগ্রাসনের শিকার হবার অপেক্ষায় থাকতে হবে!
---অভয়।
আমিও মনে করি দেরী অনেক হয়ে গেছে। তাই শুরুটা এখনই করতে হবে। আপনার সাথে এ বিষয়েও আমি একমত যে একটা ডাল বা পাতা ছিঁড়লে আসলে তেমন কিছু হবে না। এবার শেষ করতে হবে মূল থেকে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সূচনাটা কোথা থেকে করা যায়? আপনি যে পদক্ষেপ নেয়ার কথা বললেন (অবশ্যই খুবই ভ্যালিড পয়েন্ট), সেটা নিতে হলে সরকারের পক্ষ থেকে নিতে হবে। কিন্তু সেটা এই মুহূর্তে কতটুকু কী করা সম্ভব সে বিষয়ে আমি সন্দিহান। সেজন্য আমার মনে হয়, আন্দোলনের সূচনা ব্যক্তি পর্যায় থেকেই হোক। কিন্তু কঠোর ভাবে হতে হবে। গনজারণ মঞ্চের মত একটা জনমত গড়ে তুলতে পারলে সরকারকেও চাপ দেয়া যেতো।
টুইটার
আমি দেশ প্রেমিক, একথা হলপ করে বলতে পারব না। তবে, ‘দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা, কারো দানে পাওয়া নয়’- গানটি শুনলে আমার চোখ ভেঙ্গে পানি আসে। ‘পুর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে রক্ত লাল, রক্ত লাল, রক্ত লাল’- আমার লাল রক্তে আগুন ধরায়। অতি বৃদ্ধ সার্টিফিকেট না পাওয়া মুক্তি যোদ্ধার রিকশায় করে ভ্রমন শেষে ‘সার্টিফিকেটের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করিনি’-শুনে গর্বে বিস্ময়ে ব্যাস্ত রাস্তার মাঝখানে যানজট বাঁধিয়ে ছাতি টান করে দাড়িয়ে রিক্সাওয়ালাকে স্যালুট দিতে পারি। আমার বিশ্বাস খুজলে এখনো আমার মত লক্ষ যুবা পাওয়া যাবে যারা এখনো যুদ্ধে যেতে প্রস্তুত! অপেক্ষায় শুধু একজন সেনাপতির! অস্ত্র ও কৌশল ওদের কাছ থেকেই কেড়ে নেব। সেনাপতিকে শুধু বলতে হবে “ওদের অস্ত্র আর ওদের কৌশলেই, ওদের ধ্বংস কর”।
আশা করি বুঝতে পেরেছেন।
---অভয়।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
সমাজে তিন ধরনের মানুষ দেখতে পারছি এই মুহূর্তে, এক দল চোখে সাম্প্রদায়িকতার চশমা পরে আছে, তাই কিছুই দেখছে না। আরেক দল প্রতিবাদ করছে কিন্তু সংখ্যায় কম হওয়াতে সেই প্রতিবাদ খুব বেশি দূর যেতে পারছে না। আরেক দল আছে যারা এমনি এমনি চোখ বন্ধ করে আছে। তারা হচ্ছে এই তথাকথিত 'আমি তো মুসলিম, তাই আমি নিরাপদ' দলের লোক। এই দলটার যদি শুভ বুদ্ধির উদয় হতো, তাহলে অন্তত প্রতিবাদটা জোরালো করা যেতো। বাস্তবতা হচ্ছে, এদের শুভ বুদ্ধির উদয় হয়, তবে অনেক দেরীতে। ততক্ষণে সবার ক্ষতি হয়ে যায়। মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে পড়তে গিয়ে এই দলের মানুষের গল্প অনেক পড়েছি। এরা মুর্খের চেয়েও অধম।
টুইটার
সাম্প্রদয়িক সহিংসতার বিচার কি বাংলাদেশে কখনো হয়েছে? কখনো হয়নি, তাই এই আগুন দেওয়া আর লুটপাটের উৎসব বন্ধ হয়নি কখনো। সর্বশেষ পূর্বে বৌদ্ধ মন্দির পুড়িয়ে দিলো যারা তাদের বিচার কি হয়েছিলো? সবকিছুর বিচার এই দেশে কম বেশি হয় কিংবা হচ্ছে কিন্তু সাম্প্রদায়িক বিষয়ে সরকার সব সময় উদাসীন। সরকার কঠোর শাস্তির হুমকি দামকি দিবে, কিছু লোক দেখানে ক্ষতিপূরন, আর দুই চারদিন লেখালেখি হবে সোস্যাল মিড়িয়া আর পত্রিকায়। এই ঘটনার রেশ শেষ হওয়ার আগেই আরেকটি বিপর্যয়, আরেকটি বড় সহিংসতা এসে এটিকে ঢেকে দিবে। এইভাবেইতো চলছে যুগের পর যুগ।
আপনি মানুষের রাস্তায় নামার কথা বলছেন? আমি নিশ্চিত বেশিভাগ মসুলমান বাঙালিকে এই ঘটনা আঘাত করেনি, বেশিভাগ বাঙালি মসুলমান এখনো সাম্প্রদায়িক চিন্তা ভাবনার বাইরে যেতে পারেনি হোক সে লীগ, হোক সে বিম্পি, হোক সে বাম। আর জামাতের কথা বলার প্রয়োজন নেই। সাম্প্রদায়িক জায়গায় দাড়িয়ে প্রায় সবাই একি অবস্থানে বাংলাদেশে। কেউ গিয়ে আগুন দেয় আর কেউ দূর থেকে দেখে বলে
।
তাই সরকারের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি, এতবড় সহিংসতা ঘটে যাওয়ার ব্যর্থতা আওয়ামিলীগ সরকার এড়াতে পারে না। তবুও আমি ব্যাক্তিগত ভাবে মনেকরি এই ব্যর্থতাকে সরকার মুছে দিতে পারে অপরাধীদের কঠোর শাস্তি প্রদানের মাধমে। আমরা আশা করতে পারি যে সরকার সারা বিশ্বের ক্ষমতার লাল চক্ষুকে পেছনে ফেলে লক্ষ্যে অটুট থেকে যেভাবে কাদের মোল্লার ফাঁসি দিয়েছে ঠিক সেই একি দৃঢ় প্রত্যয়ে এই ঘটনার বিচার করবে আর দেশ থেকে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে উৎখাত করবে।
মাসুদ সজীব
মুক্তিযুদ্ধ বড় আশা বয়ে এনেছিল। এখন আর বিশেষ আশা করার রসদ খুঁজে পাই না। তবু পুরোপুরি আশা ছাড়তে পারিনি আজও!
কিন্তু আপনার মত আমিও মনে করি
"আপনি যদি নিজেকে ‘মুসলিম’ ভেবে নিরাপদ থাকবেন ভাবছেন, তাহলে বলবো ভুল করছেন। ১৯৭১ সনে প্রথমে হিন্দু জনগোষ্ঠী দিয়ে হত্যা-ধর্ষণ শুরু হয়েছিল বটে, কিন্তু অচিরেই তা ছড়িয়ে পড়েছিল সবার উপর। মনে রাখা জরুরী, সাম্প্রদায়িকতার বিষ যার মাঝে আছে, সে হিন্দু চেনে না, মুসলিমও নয়। সে বন্ধু চেনে না, শত্রুও নয়। তার কাছে তার চিন্তাই পৃথিবীর শেষ কথা।"
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
ছোট আকারে হোক, কিন্তু আসুন প্রতিবাদ শুরু করি। ফুলকি থেকেই একদিন দাবানল জ্বলবেএই আশা করে ফুলকিটুকু শুরু না করলে আগুনের চেহারাই দেখা যাবে না!!
____________________________
নতুন মন্তব্য করুন