জেমস বন্ড হচ্ছে ব্রিটিশদের প্রধান দুটা গোয়েন্দা সংস্থার একটি, MI6-এর এজেন্ট। ১৯৫৩ সনে ক্যাসিনো রয়াল প্রকাশের মধ্য দিয়ে ইয়ান ফ্লেমিং বিশ্বের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন বন্ডকে। সেদিন সম্ভবত ফ্লেমিং চিন্তা করেন নি একদিন বন্ড এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠবে সারা বিশ্বে। বন্ডকে নিয়ে ফ্লেমিং ১২টা উপন্যাস এবং দুটা গল্পগ্রন্থ প্রকাশ করেন। পরবর্তিতে তাঁর মৃতু্যর পর আরো বেশ কয়েকজন লেখক বিভিন্ন সময়ে বন্ডকে নিয়ে উপন্যাস এবং গল্প লিখেছেন যার অধিকাংশই প্রধানত চলচিত্রের জন্যে। ইংল্যান্ডের ইয়ন প্রডাকশন্স বন্ডের অফিসিয়াল চলচিত্র নির্মাতা যারা ক্যাসিনো রয়াল বাদে অন্য সবগুলো উপন্যাস এবং বন্ড চরিত্র ব্যবহার করার সত্ব অর্জন করে ৫০-এর দশকে। পরবর্তিতে ১৯৯৯ সনে ক্যাসিনো রয়ালের সত্ব অর্জনের মধ্য দিয়ে পরিপূর্ণ ভাবে তারা বন্ডকে ঘরের ছেলে করে নেয়।
এবার ব্যক্তি বন্ডের ব্যপারে কিছু জেনে নেয়া যাক। বন্ডের জন্মদিন ১১ নভেম্বর ১৯২০। তবে একটি উপন্যাসে ১৯২৪ দেখানো হয়েছিল কিন্তু পরে ১৯২০ সনকেই প্রতিষ্ঠিত করা হয়। লন্ডনে বসবাসরত MI6-এর এই তুখোড় এজেন্টের কোড ০০৭। কোডের প্রথম দুইটা শূণ্য 'লাইসেন্স টু কিল' অর্থাৎ যে কাউকে যে কোন সময় হত্যার আইনগত অধিকার নিশ্চিত করার নির্দেশক। ২০০০ সনের এক জরিপে দেখা গিয়েছিল ০০৭ বিশ্বের সর্বাধিক আলোচিত সংখ্যা। একমাত্র 'ইউ অনলি লিভ টোয়াইস' ছাড়া অন্যসব উপন্যাসে বন্ড এই কোড ব্যবহার করেছে। 'ইউ অনলি লিভ টোয়াইস'-এ বন্ডের কোড ছিল ৭৭৭৭।
বন্ডের স্রষ্টা ইয়ান ফ্লেমিং-এর জন্ম প্রচণ্ড বনেদি এক পরিবারে। লন্ডনের সবচেয়ে অভিজাত এলাকা মেফেয়ারের এক বাড়িতে জন্ম এবং বেড়ে ওঠা এই লেখকের। যদিও লেখার শুরুতে বলেছি তিনি ছিলেন ইংরেজ; কিন্তু আসলে তার পরিবার এসেছে স্কটল্যান্ডের ডান্ডি থেকে। তার দাদা রবাটর্ ফ্লেমিং ছিল বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে স্কটল্যান্ডে প্রতিষ্ঠিত স্বনামধন্য এ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান রবাটর্ ফ্লেমিং এন্ড কোং এর প্রতিষ্ঠাতা। শেকড় স্কটল্যান্ডে থাকলেও ফ্লেমিং-এর বেড়ে ওঠা ইংল্যান্ডেই। পড়ালেখা করেছে ইংল্যান্ডের অভিজাত বোডর্িং স্কুল এটন কলেজে এবং পরে মিউনিখ এবং জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরে কর্মরত ছিলেন MI6 এর কতর্া ব্যক্তি হিসেবে। বুদ্ধিমান পাঠক হয়তো কিছুটা ধরে ফেলেছেন ইতিমধ্যে, কেন ফ্লেমিংকে নিয়ে এত কথা বলছি। বন্ডকে নিয়ে যখন উপন্যাস লিখতে শুরু করেন ফ্লেমিং, তখন মূলত তিনি নিজেকেই ফুটিয়ে তুলেছেন বন্ডের ভূমিকায়। আর সে কারণে বিভিন্ন উপন্যাসে বন্ডের ব্যক্তিজীবন যখন উঠে আসে, তখন হঠাৎ হঠাৎ অবাক হতে হয় ফ্লেমিং-এর ব্যক্তি জীবনের সাথে মিল খুঁজে পেয়ে।
ছবিতে জেমস বন্ডের লেখক ইয়ান ফ্লেমিং
স্রষ্টা থেকে আবার ফিরে আসছি সৃষ্টিতে। বন্ডের গল্প-উপন্যাসে M ছদ্মনামের আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে বন্ডের বস যার অধিনে সে কাজ করে চলেছে অক্লান্ত ভাবে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এবং বিভিন্ন জাতির সাথে। প্রতিটা উপন্যাস এবং চলচিত্রে M নামক এই চরিত্রের ভূমিকা ব্যাপক, অনেকটা অভিভাবকের মত। Q নামের আরেকটি চরিত্র রয়েছে যে বন্ডের কোয়ার্টার মাস্টার। বন্ড যে প্রচুক্তিগুলো ব্যবহার করে, সেগুলোর মূল কৃতিত্ব যায় Q-এর কাছে। সারা পৃথিবীতে বন্ড ছড়ি ঘুরিয়ে বেড়ায়, শুধু এই Q এর অফিস ছাড়া। এখানে বন্ডকে মাঝেমাঝেই নাজেহাল হয়ে যেতে হয়। লাইসেন্স টু কিল উপন্যাসে Q বন্ডতে তাচ্ছিল্য করে বলেছিল Q এর ব্রাঞ্চটা না থাকলে বন্ড কবেই মরে পটল তুলতো! আরেকটা চরিত্রের কথা না বললে সম্ভবত বন্ডের পরিচয় পরিপূণর্ ভাবে দেয়া হবে না। সেটা হলো মিস মানিপেনি। এই ভদ্রমহিলা M এর সেক্রেটারি। বন্ডের সাথে মানিপেনির রয়েছে এক অন্যরকম সম্পকর্। বন্ড জানে মানিপেনি বন্ডের প্রতি আকৃষ্ট, কিন্তু বন্ড পুরোপুরি ধরা দেয় না। সে ফ্লাটর্ করে বটে, কিন্তু কখনও তার থেকে বেশি এগিয়ে যায় না। বিভিন্ন উপন্যাসে এবং পরবতর্ীতে চলচিত্রে দেখা যায় বন্ড এই মানিপেনির উপরে প্রবলভাবে ভরসা করছে। বন্ডের সর্বশেষ চলচিত্রে একটা জায়গায় মানিপেনি বন্ডকে জিজ্ঞেস করে, ‘আমাকে কেন তুমি বিশ্বাস করছো?’ বন্ড উত্তর দেয়, ‘ইন্সটিন্ক্ট’।
প্রতিটা নামকরা চরিত্রেরই একটা বড় এ্যান্টোগনিস্ট তথা সুপারভিলেন থাকে। বন্ডও এর ব্যতিক্রম নয়। বন্ডের সবচেয়ে বড় শত্রু ছিল আর্নস্ট ব্লোফেল্ড। বন্ডের উপন্যাসে স্পেকটার বলে একটা সংগঠন রয়েছে যারা মূলত অপরাধী এবং সন্ত্রাসীদের একটা আন্তর্জাতিক সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের মধ্যমনি হচ্ছে ব্লোফেল্ড। বিভিন্ন উপন্যাসে এই সিন্ডিকেটের কার্যক্রম সম্পকর্ে ইঙ্গিত দেয়া হলেও প্রথম সরাসরি আত্মপ্রকাশ করে ১৯৬১ সনে প্রকাশিত থান্ডারবল উপন্যাসে এবং পরের বছরের ডক্টর নো-তেও। ব্লোফেল্ডের ডান চোখের উপরে একটা ট্রেডমাকর্ কাটা দাগ রয়েছে যদিও সব চলচিত্রে রূপায়নের সময় এই দাগটা সব সময় দেখানো হয় নি। এছাড়া তার সাথে থাকে তার প্রিয় পাসর্িয়ান বিড়াল। নিজেকে পৃথিবীর সব গুপ্তচর সংস্থার চোখ থেকে আড়াল করে রাখা এই অপরাধী নিজে কিন্তু দেখতে পায় সবাইকে। প্রচণ্ড অহংকারী, আত্মবিশ্বাসী এবং নিষ্ঠুর প্রকৃতির এই সুপারভিলেন নিজগুনেই যেন নিজেকে বন্ডের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল।
স্পেক্টার নামক সিন্ডিকেটের লোগো যেটা মূল উপন্যাসে ব্যবহার করা হয়েছে
বিভিন্ন পৌরানিক কাহিনীতে দেবতাদের যেমন বাহন থাকে, বন্ডেরও তেমন বাহন রয়েছে। স্বনামধন্য ইংরেজ কার নিমর্াতা প্রতিষ্ঠান এ্যাস্টন মাটর্িনের বিভিন্ন মডেলের কার বন্ডের বাহন হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। এ্যাস্টন মাটর্িন এবং বন্ড এতটাই একে অপরের পরিপূরক যে এই কার রীতিমত বন্ডের ট্রেডমাকর্ে পরিণত হয়েছে। এ্যাস্টন মাটর্িন ডিবি ফাইভ এখন পর্যন্ত বন্ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় কার। বন্ডের সাথে এই মডেলটা এতটাই মিশে গিয়েছিল যে এটাকে ‘বন্ড কার’ বলেই ডাকা হয়। পরে এ্যাস্টন মাটর্িন বন্ডের জন্যে আরো বিভিন্ন মডেল বানিয়েছে। সদ্য বানানো ডিবি টেন কারটা এই কার নিমর্াতা প্রতিষ্ঠান শুধু বন্ডের সর্বশেষ চলচিত্রের জন্যেই বানিয়েছে।
সদ্য মুক্তি পাওয়া স্পেক্টারে ব্যবহার করা এ্যাস্টন মাটর্িন ডিবি টেন। মাত্র ১০টা এই গাড়ি বানানো হয়েছে এবার।
সবশেষে যে কথাটা না বললে বন্ডের পরিচয় পুরোপুরি তুলে ধরা যাবে না, তা হচ্ছে বন্ডের পরিচয় দেয়ার ধরন! 'বন্ড, জেমস বন্ড' - এভাবেই যুগ যুগ ধরে বন্ড নিজেকে চিনিয়ে গিয়েছে পৃথিবীর কাছে।
১৯৬১ সনে ইয়ন প্রডাকশনস নামে একটা চলচিত্র নিমর্াতা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয় লন্ডনের পিকাডেলিতে। পরে তারা ১৯৬২ সনে প্রথম ডক্টর নো-এর মধ্য দিয়ে জেমস বন্ডকে চলচিত্রে আত্মপ্রকাশ করায়। এ পর্যন্ত ছয়জন অভিনেতা এবং এগারোজন পরিচালক বন্ডকে রুপালী পর্দায় তুলে ধরেছেন ২৪টা চলচিত্রে। এই চলচিত্রগুলোকে বলা হয় ‘অফিশিয়াল বন্ড মুভি’। এছাড়াও ভিন্ন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের অধিনে আরো দুটা চলচিত্র নিমর্িত হয়েছে বন্ডকে নিয়ে।
স্কটিশ অভিনেতা শন কনরি সর্বপ্রথম বন্ডকে চলচিত্রে তুলে ধরেন। ছয়টা অফিশিয়াল এবং একটা ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চলচিত্র সহ কনরি মোট সাতটা বন্ড চলচিত্রে অভিনয় করেন। এছাড়া ইংলিশ অভিনেতা রজার মুর সর্বাধিক সাতটা অফিশিয়াল বন্ড মুভিতে মূল ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। অন্যদিকে ইংলিশ পরিচালক জন গ্লেন সর্বাধিক পাঁচটা বন্ড মুভি পরিচালনা করেছেন। বন্ড চলচিত্রে প্রবল ভাবে ‘ব্রিটিশনেস’ চোখে পড়ে। ইংলিশ, স্কটিশ অথবা আইরিশ — এই তিন জাতি থেকেই বরাবর বন্ড অভিনেতাকে বেছে নেয়া হয়েছে। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল জজর্ লেজেনবি। এই অস্ট্রেলিয়ান অভিনেতা ১৯৬৯ সনে ‘অন হার মেজিস্টিস সিক্রেট সাভর্িস’ চলচিত্রে বন্ডকে রূপায়ন করেন। এই অভিনেতা ঐ একটা চলচিত্রেই সুযোগ পেয়েছিলেন। পরবতর্ীতে ১৯৭১ সনে শন কনোরি আবার ফিরে এসে বন্ডের চরিত্রটিকে ফুটিয়ে তোলেন ডায়মন্ডস আর ফরএভার-এ।
শন কনরি। প্রথম এবং এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সফল জেমস বন্ড।
ডোনাল্ড প্লেজেন্স এখন পর্যন্ত সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্লোফেল্ড হিসেবে সমাদৃত। ইউ অনলি লিভ টোয়াইস চলচিত্রে এই ইংলিশ অভিনেতা ব্লোফেল্ডের চরিত্রকে রূপায়ণ করেন। পরবতর্ীতে আরো বিভিন্ন অভিনেতারা ব্লোফেল্ড হলেও প্লেজেন্সকে ছাড়িয়ে যেতে পারে নি কেউ। ১৯৮১ সনে ‘ফর ইউর আইজ অনলি’ ছবিতে সর্বশেষ ব্লোফেল্ডকে দেখা গিয়েছিল। এরপর ৩৫ বছর বিরতীর পর রুপালী পদর্ায় আবার বন্ডের এই চরম প্রতিদ্বন্দ্বীকে দেখা যাবে সদ্য মুক্তি পাওয়া স্পেক্টারে। ক্রিস্টোফ ওয়াল্টজকে এবার নূতন ব্লোফেল্ড হিসেবে পদর্ায় দেখা যাবে।
ডোনাল্ড প্লেজেন্সকে দেখা যাচ্ছে ব্লোফেল্ড চরিত্রে ইউ অনলি লিভ টোয়াইস চলচিত্রে
বন্ড চলচিত্রের একটা গুরুত্বপূণর্ অংশ হয়ে রয়েছে বন্ড গালর্। বিভিন্ন সময়ে এই চরিত্রগুলো বন্ডের বন্ধু, শয্যাসঙ্গিনী অথবা সাহায্যকারী হয়েছে। হালের জেমস বন্ড চলচিত্রগুলোতে হ্যালি বেরি, রোজামন্ড পাইক, ইভা গ্রিন এবং অলগা কারেলিনকোকে বন্ড গালর্ হিসেবে দেখা গিয়েছে। সর্বশেষ বন্ড চলচিত্রে পঞ্চাশ পেরুনো সনামধন্য ইটালিয় অভিনেত্রী মনিকা বেলুচ্চি এবংফরাসি অভিনেত্রী লিয়া সেডু — উভয়কেই বন্ডের সান্নিধ্যে আসতে দেখা গিয়েছে।
ক্যাসিনো রয়ালে বন্ডগালর্ হিসেবে ইভা গ্রিনকে দেখা যাচ্ছে।
বন্ড মুভির আরেকটা বিশেষত্ব হচ্ছে গান। প্রতিটার শুরুতে একটা করে গান থাকবে এবং ব্যাকগ্রাউন্ডে থাকবে এনিমেশন। মুভি শেষে এই এনিমেশন আবার দেখলে বোঝা যায় যে গল্পের বিভিন্ন ঘটনার সংকেত দেয়া রয়েছে এই গানে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নামকরা শিল্পীরা বন্ড সং গেয়েছেন। ইংলিশ গায়িকা এ্যাডেলের লেখা এবং গাওয়া স্কাইফল গানটা শুধু জনপ্রিয়ই হয় নি, অস্কার, গ্র্যামি এবং গোল্ডেন গ্লোবের মত বড় বড় এ্যাওয়াডর্ও জিতে নিয়েছে।
বর্তমান বন্ড সিরিজের ওপেনিং ক্রেডিট সহ গানের লিঙ্ক ইউটিউব থেকে:
১) ক্যাসিনো রয়াল
২) কোয়ান্টম অব সোলেস
৩) স্কাইফল
সামগ্রিক ভাবে বন্ড চলচিত্র শুধু দর্শকদের হৃদয় জয় করেই থেমে থাকেনি বরং বন্ডের কর্মস্থল MI6-এর কর্তাব্যক্তিদেরও মন গলাতে সক্ষম হয়। ১৯৯৯ সনে মুক্তি পাওয়া ‘দ্যা ওয়ার্ল্ড ইজ নট এনাফ’ সর্বপ্রথম সরাসরি দক্ষিণ লন্ডনে অবস্থিত MI6-এর হেডকোয়ার্টারে শুট করার অনুমতি পায়। এই ছবিতে একটা বোমা বিস্ফরণের দৃশ্য ধারণ করার হয় যা মূল অফিসের ভেতরেই সঙ্ঘটিত হয়। যদিও প্রথমে ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আপত্তি তোলা হয়, তবে পরবর্তীতে পররাষ্ট্র সচিব রবিন কুকের হস্তক্ষেপে শুটিং সফল ভাবে সম্পন্ন হয়। এ ব্যাপারে কুক এভাবে মন্তব্য করেছিলেন, "After all Bond has done for Britain, it was the least we could do for Bond." এরপর একে একে ‘ডাই এ্যানাদার ডে’ এবং ‘ক্যাসিনো রয়াল’-এর একাংশের শুটিংও মূল হেডকোয়ার্টার বিল্ডিং-এ করা হয়। সর্বশেষ বন্ড মুভি স্পেক্টার শুটিং করা হয় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। এর মাঝে রোমের প্রাণকেন্দ্রে খুবই গুরুত্বপূণর্ এবং ব্যস্ত সড়কে কার চেজ করার শুটিং করা হয়। এখানে শুটিং করা একরকম অসম্ভব ছিল। কিন্তু রোমের মেয়র নিজে উদ্যোগ নিয়ে শুটিং-এর ব্যবস্থা করে দেন। শুধু জেমস বন্ডের শুটিং-এর জন্যে মেয়র ঐ ব্যস্ত প্রাণকেন্দ্র সম্পূণর্ বন্ধ করে দিয়ে শুটিং-এর ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।
লন্ডনে অবস্থিত MI6-এর হেডকোয়াটর্ার। সর্বশেষ মুভি স্পেক্টারেও এই বিল্ডিং-এর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
বন্ডের প্রথম ২২টা চলচিত্র বক্স অফিসে ৫ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। এই আয় বেড়ে ১০ বিলিয়নকে ছাড়িয়ে যায় যদি ইনফ্লেশনকে হিসেবে নেয়া হয়। এছাড়া বন্ডকে নিয়ে নিমর্িত আনঅফিশিয়াল চলচিত্র দুটাও প্রায় ছয়শ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। বন্ডকে নিয়ে তৈরী টিভি সিরিজ এবং রেডিও ড্রামা থেকেও আয় হয়েছে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার। ফলে এখন আর বন্ড শুধু গল্পের চরিত্রই নয়, রিতীমত আয়ের সোনার হরিণও! প্রতিটা বন্ড চলচিত্র মুক্তির আগে আগে বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপনে বন্ডকে যেভাবে ব্যবহার করা হয়, তা দিয়েও একটা আস্ত ছোটখাটো চলচিত্রর নিমর্ান ব্যায় উঠিয়ে নিয়ে আসা যায়।
এখন পর্যন্ত নিমর্ানের দিক দিয়ে বন্ডের সবচেয়ে ব্যয়বহুল চলচিত্র হচ্ছে কোয়ান্টম অব সোলেস যা দুইশ মিলিয়ন মাকর্িন ডলার ব্যয়ে নিমর্িত। এর পরপরই সবচেয়ে ব্যয়বহুল চলচিত্র স্কাইফল এবং ক্যাসিনো রয়াল। এই দুইটা ছবি বানাতে ব্যায় হয়েছে ১৫০ মিলিয়ন ডলারের উপরে। আয়ের দিক দিয়ে অবশ্য স্কাইফল এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ব্যাবসা সফল বন্ড চলচিত্র। মাকর্িন ডলারের হিসেবে এক বিলিয়নের উপরে আয় করেছে এই ছবিটা। তবে ধারণা করা হচ্ছে সর্বশেষ ছবি স্পেক্টার এই আয়কেও ছাড়িয়ে যাবে।
চলচিত্র সমালোচকদের কাছে বন্ডের ছবিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সফল ছিল শন কনরি অভিনীত প্রথম তিনটা ছবি — ডক্টর নো, ফ্রম রাশিয়া উইথ লাভ এবং গোল্ড ফিঙ্গার। রটেনটমাটোতে এই তিনটা ছবি ৯৬ শতাংশ ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে সমালোচকদের কাছ থেকে। এরপর ড্যানিয়েল ক্রেইগ অভিনীত ক্যাসিনো রয়াল ৯৫ শতাংশ ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে।
ক্যাসিনো রয়াল বন্ডের প্রথম হলেও ইয়ন প্রোডাকশন্সের হাতে এই উপন্যাসের সত্ব ছিল না। ফলে তারা বিশটা বন্ড চলচিত্র বানিয়ে ফেললেও প্রথম উপন্যাসটা অধরা থেকে যায়। ১৯৯৯ সনে ইয়ন এই উপন্যাসের কপিরাইট হস্তগত করে। তখনই ধারণা করা হচ্ছিল বন্ডকে নূতন ভাবে আত্মপ্রকাশ করতে দেখা যাবে। এছাড়া ২০০২ সনের ‘ডাই এ্যানাদার ডে’তে আইরিশ অভিনেতা এবং বন্ড ভূমিকায় চতুথর্ বারের মত আসা পিয়ারস ব্রসনান পঞ্চাশের কাছাকাছি ছিল। রজার মুরের ৫৮ বছর বয়সে বন্ড হওয়াটা দর্শক ভালো ভাবে নেয় নি। ব্রসনান তাই বয়সের বিষয়টা বিভিন্ন মিডিয়ায় তুলে বন্ড হিসেবে অবসরে যাবার কথা বলেন। ফলে ইয়ন তুলনামূলক ভাবে তরুণ একজনকে দিয়ে বন্ড সিরিজের রিবুটের কথা ভাবে।
ইংরেজ অভিনেতা ড্যানিয়েল ক্রেইগকে বন্ড হিসেবে বেছে নেয়ার পর বিভিন্ন মাধ্যমে সমালোচনা হতে থাকে। দর্শকদের মূল অভিযোগ ছিল আবেগহীন ড্যানিয়েল ক্রেইগকে কোন ভাবেই বন্ড হিসেবে মানায় না। তবুও ইয়ন তাকে নিয়েই বাজী ধরে এবং ক্যাসিনো রয়ালের মাধ্যমে বন্ড সিরিজকে রিবুট করে। এরপর কোয়ান্টম অব সোলেস এবং স্কাইফলের হাত ধরে ড্যানিয়েল ক্রেইগও তার পঞ্চাশের কাছাকাছি এসে নূতন বন্ড সিরিজের চতুথর্ ছবি স্পেক্টারের কাজ শেষ করেছে। ২৬ অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় কেবল বৃটেন এবং আয়ারল্যান্ডে মুক্তি দেয়া হয়েছে স্পেক্টার। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে ছবিটা সোমবার মুক্তি দিলেও এর এডিটিং শেষ হয়েছে শনিবার! মাত্র একদিনে পুরো বৃটেন এবং আয়ারল্যান্ডে বিতরণের কাজ শেষ করতে হয়েছে নিমর্াতা প্রতিষ্ঠান ইয়নকে।
সদ্য মুক্তি পাওয়া বন্ড মুভি স্পেক্টার এর পোস্টার
বন্ডের ভক্ত হওয়ায় বরাবরই আমি বন্ডের মুভি মুক্তির সাথে সাথে দেখে থাকি। এবারও মুক্তির কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ছবিটা দেখার টিকেট জোগাড় করতে পেরেছিলাম। সাড়ে সাতটায় মুক্তি পেয়েছে, আমি সোয়া নয়টার শো-এর টিকেট যোগাড় করে দেখতে যাই সর্বশেষ বন্ডকে।
স্পেক্টার প্রথম শটটাই একটা দুদর্ান্ত ‘ওয়ানার’। ওয়ানার হচ্ছে চলচিত্রের সেই লম্বা শট যেটা কোনরকম ভাবে বাধাগ্রস্ত হয় না। অথর্াৎ ক্যামেরা রোল করতে থাকে লম্বা সময় ধরে এবং অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অভিনয়ও করতে হয় কোন রকম বিরতী ছাড়া। স্পেক্টারের ওয়ানারটা খুবই জটিল ছিল। রাস্তা থেকে বাড়ি, সেখান থেকে লিফ্ট, লিফ্ট থেকে রুম, রুম থেকে বেড, বেড থেকে বারান্দা, বারান্দা থেকে বিভিন্ন বাড়ির ছাদে হেঁটে হেঁটে একটা নিধর্ারিত বাড়ির দিকে এগিয়ে যাওয়া। যারা চলচিত্রের নিমর্াণ নিয়ে পড়ালেখা করেন অথবা জানতে আগ্রহী, তাদের এই সিনটা ভালো লাগবে। তারপর যথারীতি একটা লম্বা ধাওয়া যা রোলার কোস্টারের মত চলতেই থাকে, চলতেই থাকে; যতক্ষণ না শেষ দৃশ্যে পৌঁছাচ্ছি আমরা।
তবে এতে এটা ভাবার কোন কারণ নেই যে হয়তো এই রোলার কোস্টার রাইডে ছবির গল্প দূর্বল হয়ে পড়েছে। বরং টানটান উত্তেজনায় গল্প এগিয়ে গিয়েছে; কখনও সেখানে আবেগ এসেছে, কখনও কৌতুক। বিবিসি ওয়ানের টেলিভিশন সিরিজ শার্লক যারা দেখেছেন, তারা এন্ড্রু স্কটকে চিনে থাকবেন। শার্লকের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে জিম মরিয়টির ভূমিকায় অভিনয় করেছে এই আইরিশ অভিনেতা। স্পেক্টারে এন্ড্রু স্কট একটা গুরুত্বপূণর্ চরিত্রে অভিনয় করেছে। শুরু থেকেই তার চাপে M তটস্থ। আর এদিকে বন্ড এ্যাস্টন মাটর্িন ডিবি টেন নিয়ে হাওয়া হয়ে গিয়েছে রোমের উদ্দেশ্যে। কিন্তু কেন বন্ড ছুটছে? এর উত্তর পেতে গল্পের কিছুটা গভীরে ঢুকতে হবে। সাথে এটাও উল্লেখ করে দিচ্ছি, যারা আগের তিনটা ছবি দেখেন নি, তাদের জন্যে গল্প বুঝতে একটু সমস্যা হতে পারে। এর একটা ইঙ্গিত ছবির শুরুতেই দেয়া হয়েছে গানের সাথে এনিমেশনে। চারটা বন্ড চলচিত্রের বিভিন্ন ছবি এবারের এনিমেশনে উঠে এসেছে। ৪৭ বছর বয়সের ড্যানিয়েল ক্রেইগ ইঙ্গিত দিয়েছে বন্ড হিসেবে এটা তার শেষ ছবি হতে পারে। যেভাবে চারটা মুভির একটা পূণর্াঙ্গ সমাপ্তি টানা হলো স্পেক্টারে, তাতে এটা এই রিবুটেরও শেষ ছবি হতে পারে।
তবে যদি এটা এই রিবুটের শেষ মুভি হয়, তাহলে কষ্ট লাগবে ক্রিস্টফ ওয়াল্টজের জন্যে। আগেই বলেছি এবারের ছবিতে ৩৫ বছর পর ব্লোফেল্ড ফিরে আসছে। ক্রিস্টফ ওয়াল্টজ এই সুপরভিলেনের চরিত্রে যথারীতি দুদর্ান্ত অভিনয় করেছে। দেখে মনে হয়েছে এই সুপারভিলেনকে সম্ভবত আরো একবার ছড়ি ঘোরানোর সুযোগ দিবে নিমর্াতারা। আর সেকরণেই এখনও আশা করতে ভালো লাগছে ড্যানিয়েল ক্রেইগও সম্ভবত আরেকবার ফিরে আসবে বন্ডের ভূমিকায়।
স্পেক্টারে মনিকা বেলুচ্চির ছোট একটা রোল এবং ফরাসি অভিনেত্রী লিয়া সেডুর বন্ড গালর্ হিসেবে দারুণ অভিনয় রয়েছে। মেক্সিকো, মরোক্ক, ইটালি, অস্ট্রিয়া এবং ইংল্যান্ড সহ বিভিন্ন দেশের দারুণ দারুণ লোকেশনে শুট করা হয়েছে সর্বশেষ বন্ড মুভি। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আড়াই ঘণ্টার এই ছবিটা এক মুহূর্তের জন্যে বিরক্ত লাগে না বা ঝুলে যায় নি। বরং এত বড় সময় ধরে টানটান উত্তেজনায় বন্ডের এগিয়ে যাওয়া চিত্রনাট্য লেখকের কৃতিত্ব।
রিবুটের পর চারটা চলচিত্রের মাঝে স্পেক্টারকে কোথায় রাখছি আমি, এ প্রশ্ন করা হলে উত্তরে বলবো, ক্যাসিনো রয়াল আমার কাছে সেরা ছিল এবং এখনও আছে। স্পেক্টারকে তার পরপরই রাখবো। প্রায় ৮৫ শতাংশ ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে ছবিটা রটেনটমাটোতে সমালোচকদের কাছ থেকেও। সবাই মোটামোটি একথা মেনে নিচ্ছে যে স্পেক্টার হচ্ছে রিবুটের পর প্রথম পূণর্াঙ্গ বন্ড মুভি যা আগের সিরিজগুলার ঐতিহ্য সব দিক থেকে তুলে ধরেছে। অতএব আগামী ছয় নভেম্বর মুক্তির সাথে সাথে সিনেমায় গিয়ে টিকেট কেটে মুভিটা দেখে ফেলতে দেরী করবেন না কিন্তু!
জেমস বন্ড প্রকাশিত হচ্ছে গত পঞ্চাশ বছর ধরে, প্রথমে ইয়ান ফ্লেমিং-এর হাতে এবং পরে চলচিত্রের মধ্য দিয়ে। এত লম্বা সময় ধরে বিশ্বের বুকে রাজত্ব করার পরও বন্ডের জনপ্রিয়তা আজও অটুট। ২৪টি চলচিত্র নির্মিত হবার পরও বন্ডের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি এতটুকু বরং যেন বেড়ে চলেছে দিনদিন! এখনও মানুষ প্রবল আগ্রহে অপেক্ষা করে বন্ডের নুতন চলচিত্রের জন্য, ডাবল-ও-সেভেনের ঝলক দেখার জন্য, রুপালী এ্যাস্টন মার্টিনের গতির ঝড়ের জন্য এবং সেই জনপ্রিয় সংলাপ শোনার জন্য - 'বন্ড, জেমস বন্ড'। একেই সম্ভবত বলে ‘কিংবদন্তি’!
পুনশ্চ: সবগুলো ছবি হয় উইকিমিডিয়ায় ক্রিয়েটিভ কমন্সে প্রকাশিত অথবা বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত যা পাঠকের জন্যে ডাওনলোড করে ব্যবহারের অনুমতি দেয় রয়েছে। তবে কোন ছবিই সচলায়তনে আপ করা নয়। সব ছবি স্ব স্ব সাভর্ারে রয়েছে। সচলায়তনে শুধু লিঙ্ক করা হয়েছে।
মন্তব্য
ব্যাপারটা হইল যে- মাসুদ্রানা পড়ার পর বন্ড পুলাডারে কেমুন জানি পাইনসা লাগে।
যাক গিয়া, নিয়াজ ভাই, মাসুদ্রানার কোন বইতে স্পেক্টারের কাহিনির ছায়া পামু?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
হা হা হা। তাতো বটেই।
মৃত্যুবাণ-এ স্পেক্টারের কিছুটা ছায়া আছে
টুইটার
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
সম্প্রতি থান্ডারবল পড়ছি। মাসুদরানা পড়ি নাই, তাই বন্ড পড়তে সিরাম লাগছে। ফেসবুকে একটা পোস্ট ঘুরছিল, "তোমার হাতের কাছে যেই বইটা আছে, তার ৪৫ পৃষ্ঠা খুলে অমুক লাইনটা পড়ো, সেটাই তোমার জীবনের সামারি"। থান্ডারবলের ৪৫ পৃষ্ঠায় ব্লোফেল্ড এক বিশ্বাসঘাতককে খুন করে নিস্পৃহ ভাবে কিছু একটা ডায়লগ দিচ্ছে। নিজের লাইফের সামারি নিয়ে ভাবিত এখন।
কাচচা বাচচা নিয়ে বন্ড মুভি দেখার সুযোগ হয় না। পিচ্চির দখলে টিভি। তাই কম্প্রোমাইজ হচ্ছে Special Agent Oso। ডিজনির বাচ্চাদের এই কার্টুনের প্রত্যেকটা পর্বের নাম বন্ডের সিনেমা গুলার নামের অনুকরণে, ভিতরে বড়দের জন্য নির্দোষ কিছু হিউমার ঢুকানো আছে, যে পিচ্চির সাথে বসে দেখা যায়। IMDB এর রিভিউটা যথার্থ।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
হাসতেই আছি.... সেই রকম জীবনের সামারি
বাচ্চাদের নিয়ে বন্ড মুভি দেখা আসলেই বিব্রতকর। স্পেক্টারে আবার দুই দুই জন বন্ড গালর্!
Special Agent Oso টা দেখবো দেখি। আমার বৌ আবার পিচ্চিদের মুভি/কাটর্ুন খুব পছন্দ করে। তাকে বললে সে ডাওনলোড করে ফেলবে সিজন ধরে
টুইটার
চমৎকার রিভিউ। বন্ড এর ব্যাপারে এত কিছু জানতাম না। আপনাকে ধন্যবাদ।
ফাহমিদুল হান্নান রূপক
লেখাটা লিখতে অনেক সময় লেগেছে, অনেক তথ্য যা জানা ছিল তা আবার ক্রসচেক করতে হয়েছে। তাই পড়ে ভালো লাগলে কষ্ট সার্থক হবে।
টুইটার
চমৎকার লেখা হয়েছে। খালি ভাবি ইস যদি মাসুদ রানাকে নিয়ে ভালো মুভি করা যেত!
____________________________
আমার কাছে মনে হয় বাংলা সাহিত্যে মাসুদ রানা সবচেয়ে দূভর্াগা ক্যারেক্টার। যেভাবে ব্যোমকেশ, ফেলুদা, হিমু, মিসির আলিরা লাইম লাইটে এসেছ, মাসুদ রানা সেই এক্সপোজারটা পায় নি। রানার বিচরণ তাই শুধুই সেবার পাঠকদের মাঝে সীমাবদ্ধ রয়ে গিয়েছে। অথচ রানার মৌলিক উপন্যাসগুলো দিয়ে দারুণ দারুণ মুভি বানানো সম্ভব। তরুণ পরিচালকরা যদি বিষয়টা ভেবে দেখতো, তাহলে দর্শক হিসেবে আমরাও চমৎকার কিছু থ্রিলার মুভি পেতে পারতাম।
টুইটার
ঝেড়ে কাশুন প্রফেসর। আপনি কি রানাকে কানা বানাতে চান?
ভেবে দেখুন, অনন্ত জ্বলিল করছেন মাসুদ রানা, সোহেল রানা করছেন রাহাত খান, (মান্না বাইচা নাই, থাকলে সোহেলের পার্টে দেখা যাইত), সোহানা/রূপা/ইলোরা হিসাবে ধরেন মাহি/ববি/মিম। কবীর চৌধুরীর বদলে মিশা সওদাগর। গগল চরিত্রে ডিপজল। কেমন লাগছে, হুমম??
তারচেয়ে, কল্পনাকে বইয়ের পাতাতেই থাকতে দিন। যে যার মতন ভেবে নেব।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
সব অভিনেতা সিলেকশন ঠিক আছে, এখন সিনেমার স্ক্রিপ্ট রাইটার হিসেবে আপনি আর ডিরেক্টর হিসেবে আমি এলেই এক্কেবারে পারফেক্ট - হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ কমেডি হয়ে যাবে!
____________________________
বন্ডের অনেক অজানা কথা জানা হল। অনেক ধন্যবাদ নিয়াজ ভাই।
এই লিস্টে আরেক ব্রিটিশ লেখিকা আগাথা ক্রিস্টির এরকুল পোয়ারোর নামও মনে হয় যুক্ত হতে পারে, নিয়াজ ভাই।
।।।।।।
অনিত্র
আমরা যারা থ্রিলারের ফ্যান, তাদের কাছে মিস মার্পল এবং এরকুল পোয়ারো বিশেষ কিছু এবং অবশ্যই এই তালিকায় যুক্ত হবার যোগ্য। আমি সাধারণ পাঠক যারা তাদের জন্যে একবাক্যে চেনে এমন তিনটা নাম বলতে চেয়েছি মাত্র।
টুইটার
দারুন লেখা। বন্ডের ব্যবহৃত গ্যাজেটগুলা নিয়াও একটা লেখা নামাইয়া ফালান। ইন্টারেস্টিং হওয়ার কথা। দাবি জানাইয়া গেলাম। হোমস আর ড্রাকুলা নিয়াও লেখার দাবি জানাই।
নতুন সিনেমাটা দেখতে হবে। কিন্তু আপনের কথায় মনে হইলো আগের তিনটা আবার দেখতে হইবো। আর নতুনটার জন্যতো মহান পাইরেটরাই ভরসা। দেখা যাক, ভালো প্রিন্টে কবে নাগাদ দেখতে পারি। শুভেচ্ছা।
স্বয়ম
নতুন মন্তব্য করুন