প্রতিশোধ

নিবিড় এর ছবি
লিখেছেন নিবিড় (তারিখ: মঙ্গল, ৩১/০৮/২০১০ - ১১:৩১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

দিন শেষের এই সময়টা বড় ক্লান্ত লাগে। সারাদিন অফিস, তারপর প্রায় এক ঘন্টার মত বাসে ঝুলে থাকা, গরম, মাথার ভিতর রাজ্যের যত চিন্তা- সব মিলিয়ে কেমন জানি গুলিয়ে যায়। অনেক সময় আর হিসেব ঠিক থাকে না। দু'টো লোক বেশি তুলবার জন্য বাসটা রিক্সাটার পিছনে মাথা ঢুকিয়ে দেয়। আবার সিগন্যাল পড়ে। আবার প্রায় দশ মিনিট। হঠাৎ মুখ দিয়ে গালি উঠে আসে- ঐ হারামজাদা ড্রাইভারের বাচ্চা, রিক্সার পিছনে না গেলে তোর হইত না। আশেপাশের সবাই ফিরে তাকায়, দুই একজন মৃদুস্বরে গলা মিলায়। কিন্তু সবাই ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকে। জানালা দিয়ে বাইরে তাকাই। বয়স হয়েছে। এখন আর আগের মত গলাবাজি সবসময় মানায় না কিন্তু দিন শেষে সব হিসাব ঠিক থাকে না।

হিসাব ঠিক থাকে না তাই সব গুলিয়ে যায়। বাড়ি থেকে হঠাৎ মেহমান আসছে, ভাল-মন্দ কিছু রান্নার প্রয়োজন। বাস থেকে নামার সময় বাঁ পকেটে লিস্টিটা অস্তিত্বের জানান দেয়। সপ্তাহের মাঝখানে বাজারের ঝামেলা, হইচই সব হিসাব আর উল্টোপাল্টা করে দেয়। লিস্টি মিলিয়ে ঘুরতে থাকি- কাঁররোল, পটল, ডানো ৪০০ গ্রাম, ধনিয়া, মাছ। দরদাম, হইচই। টাকার হিসেব মিলে না। সবকিছুর দাম খালি বাড়ছে। আচ্ছা শেষ কবে মাছ কিনতে গিয়ে কোন ঝগড়া হয় নি? নতুন বস শালা একটা হারামি। হাঁটুর বয়েসি কিন্তু ভাবখানা যেন দুনিয়ার সব বিষয়ে অভিজ্ঞ। ব্যাটা অফিসের বস তার মানে এই না যে তুই সবখানেই বেশি জানবি, উপদেশ দিবি। কিন্তু শালা তাও উপদেশ দিবে। আয়নায় নিজের চেহারা কি একবারও দেখেছে ছোকরা। হাঁটুর সমান বয়স। মাছ কাটুনি প্রশ্ন করে- স্যার, টুকরা ছোট হবে না বড়? বড়ই কর। মেহমান কে তো আর ছোট পিস দেওয়া যায় না। শালা লাঞ্চ আওয়ার শেষে প্রায় দিনই গল্প করবে। বাকি সবাই যায় তাই যেতে হয়। কথা শুনে সবাই একসাথে মাথা নাড়ায় যেন এটাই একমাত্র সত্য কথা।

সারাদিন অফিস শেষে বাসায় ফিরে আর ভাল লাগে না। দু'য়েকটা চ্যানেল ঘুরে নাটক টাটক দেখা, মাঝখানে হয়ত একবার খবর তারপর খাওয়া এরপর ঘুম। অন্য কিছু করার সময় কই। কিন্তু এখন তাও মাঝে মাঝে রাত জেগে খেলা দেখতে হয়। নাইলে লাঞ্চ আওয়ারে ব্যাটা হয়ত প্রশ্ন করে বসবে- "কালকে টেস্টটা দেখছেন? কি দারুণ সুইং করাল পাকিস্তানিরা দেখছেন? আমরা যে কবে এদের থেকে কিছু শিখব।" খেলাধূলা জিনিসটাই আমাকে কখনো খুব বেশি টানে নি। তারপরেও খেলা শেষে এনালাইসিস শুনে আর পরেরদিন খেলার পাতার থেকে ধার করে বলতে হয়- আমিরের আউট সুইং মারাত্মক। অবশ্য উপায় নেই। অফিসে বলাবলি হচ্ছে প্রমোশন সিলেকশনের মিটিংটা আগামী মাসেই নাকি হবে। এইবার হাইয়ের বাচ্চা কে টপকাতে না পারলে আর আশা নেই। লিস্টি থেকে এখনো মুরগী কেনা বাকি।

তাও ভাল শালা খালি পাকিস্তানের খেলা নিয়েই পাগলামি করে। নাহলে হয়ত সারা বছর খেলা দেখেই রাত কাটান লাগত। ব্যাটা বলে- " আরে পাকিস্তান কে সাপোর্ট না করে উপায় আছে! যেরকম আন প্রেডিক্টেবল। এরকমই তো একটা দল দরকার। কখনো হার কখনো জিত। কিন্তু দেখেন কোন জায়গা থেকে থেকে টিমটা জিতে আসে। পুরাই ১৮০ ডিগ্রি এবাউট টার্ণ। এই রকম জয় দেখলেই না মজা।" সামনে আরেকটা সিরিজ নাকি আছে, মানে আর তিন রাত। বাসা থেকে দেশি মুরগি নিতে বলছে। সামনের খাঁচা থেকে দুইটা নামাতে বলতেই দোকানদার বলে- নিয়েন না স্যার। আপনে বান্ধা কাস্টমার, আপনেরে ঠকামু না। এইগুলা দেশি না পাকিস্তানি মুরগি। দেখতে দেশির মতই কিন্তু একদম স্বাদ নাই। এইবার মনে দারুণ একটা হাসি আসে, অনেকদিন পর চান্স পাইছি। জোরে বলি- আরে এইগুলাই দাও। পাকিস্তানি গুলারে ভাল করে ছুইলা দাও।


মন্তব্য

রণদীপম বসু এর ছবি

হা হা হা ! নিবিড় হঠাৎ এমন খেপলো ক্যান ! দেখতে দেখতে ছেলেটা বুইড়া হইয়া গেলো !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

নৈষাদ এর ছবি

সহমত।

নিবিড় এর ছবি

রণদা আছেন কেমন? আসলে সন্ধ্যায় চ্যাটে এক জনের সাথে এই পাকিস্তানি ক্রিকেট নিয়ে কিছুক্ষণ কথা চালাচালি হইল তারপর থেকে মেজাজ খারাপ। কিছুই করার নাই তাই যা মনে আসে তাই লিখে দিলাম হঠাত করে। আর এত তাড়াতাড়ি বুড়া বানায়ে দিলে হবে কেমনে খাইছে


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

তিথীডোর এর ছবি

চলুক

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

নিবিড় এর ছবি
অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

ভাই নিবিড়, এই গল্পটা খুব বেশি ভালো লাগে নাই, তোমার অন্য গল্পগুলার তুলনায়। শুরু থেকেই মোটামুটি আন্দাজ করা যাচ্ছিল পরিণতি। কিন্তু সেইটা বড়ো কথা না। সব মিলায়েই কেন যেন সেভাবে টানে নাই এইটা। তবে তোমার লেখার হাত সম্পর্কে ধারণা আছে ভালোমতোই। নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, পরের লেখাগুলাতেই আবারও সেই "নিবিড়"কেই পাওয়া যাবে। হাসি

নিবিড় এর ছবি

অপ্র ভাই, আসলে এইটা রাগের হঠাত রাগের বশে লেখা, সেরকম ভাবনা চিন্তা করে লেখা না। যাই হোক আশা করি সামনে আর হতাশ করব না হাসি


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

অতিথি লেখক এর ছবি

"জোরে বলি- আরে এইগুলাই দাও। পাকিস্তানি গুলারে ভাল করে ছুইলা দাও। "

কঠিন হইসে... হাসি

----------------------------------
ধূসর স্বপ্ন, rupokc147 এট gmail ডট com

নিবিড় এর ছবি
অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

জিমেইল চেক কইরো। হাসি

আমার আগের মন্তব্যটারে সামান্য বদলাবো হয়তো এখন। গল্পটা দ্বিতীয়বার পড়ার পর মনে হইলো প্রথমবার ব্যাপারটা পুরা ধরতে পারি নাই। অফিসের পাকনা বসরে শায়েস্তা করতেসে, এমনটা মাথায় ছিল; কিন্তু শেষ লাইনটা, যেটা গল্পের পাঞ্চ লাইন, ওইটা দিয়া যে আরও অনেক কিছুই বোঝানো হইসে, এইটা ধরতে একটু টাইম লাগসে।

যাই হোক, "পাকিস্তানিগুলারে ভাল করে ছুইলা দাও" লাইনটা আসলেই ব্যাপক পছন্দ হইসে দেঁতো হাসি

নিবিড় এর ছবি

জিমেইল চেক করছি। ধন্যবাদ, অতীব ধন্যবাদ দেঁতো হাসি


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

এনকিদু এর ছবি

আয়োডিনের অভাব আছে। অনেকদিন তোমারে দেখিনা।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

নিবিড় এর ছবি

হুম, পরবর্তিতে আয়ডিন ঠিক করে দেওয়া হবে। আর আমিও দেখি না আপনারা বহু দিন হাসি


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

তার্মায়েরেবাপ থিম ছিলো নিবির্ভাই দেঁতো হাসি

ইক্টু মশ্লা মাইর‌্যা আবার্দিয়েন...

_________________________________________

সেরিওজা

নিবিড় এর ছবি
অনিন্দিতা চৌধুরী এর ছবি

পাকিস্তানি গুলারে ভাল করে ছুইলা দাও।

ঠিক।

নিবিড় এর ছবি
বাউলিয়ানা এর ছবি

হা হা হা...জটিল হৈছে।

চলুক

নিবিড় এর ছবি
মাহবুব লীলেন এর ছবি

হঠাৎ করে সংসার যন্ত্রণা নিয়ে নিবিড়?
ঘটনা কী?

নিবিড় এর ছবি

ভাইবা দেখলাম সংসার ধর্মের বয়স হয়ে গেছে তাই খাইছে


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

বইখাতা এর ছবি

ভালই তো! তবে নিবিড়, আরো একটু সময় যদি দিতে গল্পটাকে, তাহলে আমার মনে হয় আরো চমৎকার হতে পারতো।

নিবিড় এর ছবি

আসলেই বেশি তাড়াতাড়ি হয়ে গেছে। আইডিয়া মাথায় আসার থেকে সচলে পোস্ট আসার মধ্যবর্তি সময় মাত্র ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট হবে


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

ওডিন এর ছবি

তারপরেও

এইগুলাই দাও। পাকিস্তানি গুলারে ভাল করে ছুইলা দাও।
কথাটারে তীব্রভাবে পছন্দ কর্লাম।

______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

নিবিড় এর ছবি
দ্রোহী এর ছবি

হো হো হো

ভাল কইরে ছুইলে দেন।


কি মাঝি, ডরাইলা?

নিবিড় এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

লেখা ভাল লাগল। ছুইলে লবণ-মরিচ ও লাগানো দরকার। একটাই প্রশ্ন, পাকিস্তানিগুলারে খাওয়া কি নিরাপদ হবে? চোখ টিপি

সজল

নিবিড় এর ছবি
আয়নামতি [অতিথি] এর ছবি

বসের রাগ বেচারা মেহমানের উপর ঝাড়লেন! খুবই খ্রাপ কথা....

নিবিড় এর ছবি
সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হো হো হো

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।