ঈদে বাড়ি যাওয়ার গল্প

নিবিড় এর ছবি
লিখেছেন নিবিড় (তারিখ: শুক্র, ১০/০৯/২০১০ - ১২:৩২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ঈদের আর মাত্র একদিন বাকি। পরিচিত অনেকে ঢাকা ছাড়ছে, অনেকে ছাড়বে। সবাই বাড়ি যায়, বাড়ি। বাসে জ্যাম, ট্রেন দেরিতে ছাড়ে, স্টিমার ডুবে যাবার ভয়। তাও সবাই এই শহর ছাড়তে চায় কারণ হয়ত দূরে কোথাও কোন গ্রামে কিংবা কোন এক মফস্বলে কেউ অপেক্ষায় আছে। হয়ত তাই হাজার টা কষ্টের শেষেও সবাই অপেক্ষায় থাকে, বাড়ি যাবার অপেক্ষায়।

"বাড়ি" শুধু মাত্র এই একটা শব্দ এই শহরের মনস্তত্তের এক বিশাল দিক তুলে আনে। জিজ্ঞেস করুন, দেখবেন এই শহরের বেশির ভাগ মানুষের দু'টি ঠিকানা- বাসা এবং বাড়ি। বাসা কই? বাসাবো। বাড়ি কই? চট্টগ্রাম। ঠিক এইভাবে আমরা দু'টো শব্দ কে আলাদা করে ফেলি, আমাদের পরিচয় কে আলাদা করে ফেলি। হয়ত এই দুইটি শব্দের জন্য এই শহরে বছরের পর বছর থেকেও আমরা ঠিক নাগরিক হয়ে উঠি না কারণ আমাদের বাড়িতো এইখানে না, দূরে কোথাও কোন এক গ্রামে। আমার বাবা পড়াশোনার জন্য গ্রাম ছেড়েছিলেন প্রায় ৩৮ বছর আগে। এরপর আর প্রতি বছরের ছুটিছাটা ছাড়া স্থায়ীভাবে গ্রামে গিয়ে আর তার থাকা হয়ে উঠে নি। আমার মা জন্মের পরের কয়েক বছর ছাড়া প্রায় পুরো জীবনটাই কাটাল কোন না কোন শহরে। আমাদের ভাইবোনের জন্ম শহরে, বেড়ে উঠাও কোন না কোন শহরে। তারপরেও শহরটা আমাদের বাড়ি হতে পারে নি, বাসাই রয়ে গেল।

আরেকটু ছোট থাকার সময় প্রতি বছর এই ঈদের সময়টা আমি আর আমার ছোটবোন অপেক্ষায় থাকতাম বাড়ি যাবার। বাড়ি যাবার মেলা ঝামেলা কারণ আমাদের বাড়িতে সোজাসুজি যাবার কোন উপায় নেই কারণ জায়গাটার নাম সন্দ্বীপ। যেভাবেই যান, যেখান থেকেই যান সেখানে যাবার মেলা হ্যাপা। প্রথমে বাস ধরুন কিংবা ট্রেন ধরুন ভিড়, ধাক্কাধাক্কি, জ্যাম, অপেক্ষা আর ক্লান্তি সব মিলিয়ে চট্টগ্রাম পৌছুতে পৌছুতে বেলা প্রায় শেষ। এই বিকেলে সন্দ্বীপ যাবার আর কোন উপায় আর আপনার নেই, এই রাতটা আপনাকে অপেক্ষা করতেই হবে। তাই চলো মামা বাসা। খেয়াল করুন সেটাও কিন্তু বাসা। যাই হোক সেই পুরাতন হলুদ রঙের বেবিটেক্সি গুলো করে পুরাতন স্টেশন ছাড়িয়ে আগ্রাবাদ, লালখান বাজার, জিইসি পেরিয়ে তবেই মামার বাসা। তারপর সন্ধ্যায় ছোটদের কিছুটা গল্প, বেশিটা ছোটোছুটি তারপর তাড়াতাড়ি রাতের খাবার কারণ বেশ সকাল সকাল উঠতে হবে, স্টিমার ধরতে হবে।

সেই স্টিমার ধরা নিয়েও বহু রকম হিসেব নিকেশ। যখন ছাড়বে তখন জোয়ার থাকবে না ভাটা, যখন পৌছাবে তখনো জোয়ার থাকবে না ভাটা। উহু, ভাববেন না এই হিসেব অযথাই। দুই কূলেই জোয়ার থাকলেতো ভাল, এক কূলে থাকলেও চলে আর যদি দুই কূলেই ভাটা থাকে তাইলে কী হবে সেটা বুঝতে হলে আপনার কাদার মধ্যে দিয়ে হাটার অভ্যাস থাকতে হবে। এই হাটা ছোটখাট কিছু নয়, কখনো কখনো এই হাটা দুই তিন মাইলের বেশি। ভাবছেন এ বুঝি তেমন কোন কষ্ট নয় কিন্তু কাদায় প্রথম পা দেওয়ার সাথে সাথে যখন শরীরের হাটু পর্যন্ত কাদায় ডুবে যাবে তখন বুঝবেন জোয়ার ভাটার হিসেব কেন এত জরুরি। আমরা যারা ছোট তাদের কাদায় নামার অনুমতি নেই। তারা চড়বে বড়দের কার না কার কোলে না হয় ঘাড়ে। ছোটবোনও কোলে আমিও কোলে! এটা মানা যায় না তাই নিচে নামার জন্য জোরাজুরি করলে হয়ত বিরক্ত হয়েই একসময় নামিয়ে দিবে, ভাবখানা এমন দেখি কাদায় ব্যাটা কতক্ষণ হাটাহাটির শখ থাকে। নামার সাথে সাথেই বুঝে যাই না কাজটা ভাল করি নাই কিন্তু এখন আর উপায় নাই। কারণ পায়ে কাদা লেগে গেছে তাই কোলে চড়ার আর উপায় নাই, সেই সাথে ছোট বোনের থেকে একটূ বড় থাকতে গেলে এইটুকু কষ্ট করতেই হবে। একটু হাঁটার পরপরই বুঝতে বাকি থাকবে না এইখানে সোজাসুজি হাটা যাবে না, হাঁটার সময় পায়ের বুড়ো আঙ্গুল একটু বাকিয়ে তারপর পা কে মাটির সাথে কোণাকুণি করে ফেলতে হবে। পা তোলার সময়ও কোণাকুণি করে তুলতে হবে নাইলে উপায় নাই।

তবে এই কষ্টটুকু কমাতে চাইলে উপায় আছে। ডিঙ্গি নৌকা। ভাটার সময় কাদার ভিতর দিয়ে ঢেলে নিয়ে যায় যাত্রীদের এটা। না বুঝলে আবার বলি পুরা দুই তিন মাইল কাদার ভিতর দিয়ে এই নৌকা আপনাকে ঢেলে নিয়ে যাবে। আপনি নৌকায় বসে থাকবেন আর পনের বিশজন অমানুষিক পরিশ্রম করে নৌকাটা ঢেলে নিয়ে যাবে। তবে ভাড়া অবশ্যই বেশি এবং নৌকা কম থাকায় স্টিমার থেকে নামা সবাই কিন্তু এইখানে উঠার চান্স পাবে না। নৌকা যারা ঠেলছে তারা সুর করে কবিতার মত করে একটা গান বারবার গাইতে থাকে। গানের শুরুটা অনেকটা এরকম- হেইয়োরে, মারো টান, আল্লার নামে, নবীর নামে...। তবে একটু কান পেতে শুনলে আর মজা পাবেন কারণ গানের মধ্যে একি সাথে যেমন আল্লাহর নাম আসবে, নবীর নাম আসবে ঠিক তেমনি আসবে কিছু কিছু দেব দেবীর নাম। একটু বড় হয়ে যখন গানের কথাগুলো মনযোগ দিয়ে খেয়াল করলাম তখন বেশ অবাক হয়েছি। এখন অবশ্য তেমন একটা অবাক হই না কারণ এটা আমার বিষয় না এটা নৃতত্ত্বের বিষয় হাসি

অবশ্য কাদায় হাটুন, শুকনায় হাটুন কিংবা ডিঙ্গিতে উঠুন তার আগে আপনাকে আরেকবার নৌকায় উঠতে হবে। কারণ স্টিমার থেকেতো আপনাকে প্রথমে নামতে হবে। সেই স্টিমার গুলোর নাম হয়- রাঙ্গাবালি, মহেশখালি কিংবা আলাউদ্দিন। এই স্টিমার থেকে নামার ব্যাপারটা সবচেয়ে ভয়ংকর। এই পর্বে আসলেই সবসময় আমার চোখ-মুখ শক্ত হয়ে যায়, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায় কারণ পানিকে আমার দারুণ ভয়। শেষবার আসার সময়তো ভাবী হাসতে হাসতে শেষ কারণ নৌকায় উঠার পর আমার চেহারা নাকি হয়েছিল ফাঁসির আসামির মত। অবশ্য আমার কী দোষ একমাত্র আমিই যে সাতার জানি না।

এইসব স্টিমার, নৌকা, কাদা, ডিঙ্গি, হাঁটা পর্ব শেষ করে আপনি যখন ক্লান্তির শেষ সীমায় ঠিক তখন পৌছে যাবেন খাড়ির কিনারায়। এটা আসলে সন্দ্বীপ রক্ষা বাধ কিন্তু সবাই ডাকে খাড়ি। প্রায় বিশ ফুটের মত উঁচু তবে কাজের সময় এটা আর ঠিক থাকে না। তাই প্রতি বর্ষায় এটা ভাঙ্গে আর প্রতি শীতে আবার নতুন করে ঠিক করা হয়। অবশ্য কেউ কোন উচ্চবাচ্চ করে না এটা নিয়ে কারণ প্রতিবার ঠিক করা মানেই নতুন টেন্ডার, অনেক টাকা।

এই খাড়ির গোড়ায় আসলে প্রথমেই যে জিনিসটা আপনার নাকে প্রচন্ড ধাক্কা দিবে সেটা হল শুটকির গন্ধ। এই গন্ধটা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমি বুঝে যেতাম এসে গেছি আসল সন্দ্বীপ। আর সেখানে অপেক্ষা করছে রিক্সা। দাদাবড়ি থেকে পাঠানো রিক্সা এসে গেছে। প্রায় সময় রিক্সা নিয়ে আসত আলম ভাই। সাথে আর অন্য কয়েকজন কারণ এক রিক্সায় তো আর হবে না, চট্টগ্রাম থেকে এসেছি তো আমরা অনেকে। তো এই রিক্সাওয়ালা আলম ভাই কখনোই আমার নামটা ঠিক করে উচ্চারণ করতে পারত না। ডাকত- নেভি ভাই ভাল আছেন। আমি ক্ষেপে যেতাম তবে উপায় নেই নিবিড় শেষ পর্যন্ত নেভিই থেকে যেত। এমনকি কাজিনদের মাঝে আমার নামটাই হয়ে গেল নেভি, নেভি সিগারেট।

এরপর শুরু হত যাত্রার আসল অংশ, মজাদার অংশ। এ জার্নি বাই রিক্সা। সারি বেধে অনেকগুলো রিক্সা। আমাদের গ্রামের নাম মাইটভাঙ্গা। সে অনেক দূর। তাই চল আবার রিক্সা করে আর ঘন্টাখানেক। তবে চিন্তা নেই এই অংশে আপনার ক্লান্তি একদম দূর হয়ে যাবে। মাটির রাস্তা। আকাবাঁকা, কোথাও ভাঙ্গা। শেষ বিকেলে সেই সময়টায় যখন সূর্যের আলো মিষ্টি হতে হতে আস্তে করে সন্ধ্যায় মিলিয়ে যায় ঠিক সেই সময়টায় রিক্সা চলে আস্তে, মৃদু গতিতে। প্রথমে অনেক বড় বড় খালি মাঠ, ধান কাটা হয়ে গেছে বা হবে। এটাকে বলে চর। মানুষজন বড় কম। খালি যারা চাষের উপর নির্ভরশীল তারাই শুধু থাকে এ অংশে। আসলে উপায় নেই বলেই থাকে। কারণ ঘূর্ণিঝড়ের সময় মৃত্যুর পরিমাণ এ অংশেই বেশি। আর দ্বীপের এ অংশটাই সম্ভবত সবচেয়ে দরিদ্র। হঠাত হঠাত দেখা দেওয়া বাড়ি গুলো সে কথাই জানান দেয়। আমার অবশ্য এত সুক্ষ ব্যাপার স্যাপারে নজর দেওয়ার সময় নেই। আমি তখন চিন্তা করি আসার পথে কয়টা রিক্সাকে টপকে গেল আমাদের রিক্সা কিংবা বাড়িগুলোর সামনের সুপারি বা নারিকেল পাতা দিয়ে দেওয়া পর্দার আড়ালে কাদের দেখা যায়। আর বেশি বিরক্ত হলে প্রশ্ন করি- আর কতদূর যেতে হবে।

এরপর মিষ্টি আলো নিভে আসে, আসে করে আর রিক্সা তার মৃদু গতিতে এগোয়। আমি রিক্সা গুনি, বাড়িগুলোর সামনে থাকা কবর গুলোকে দাদির শিখানো নিয়ম অনুযায়ী সালাম দেই। আবার হিসেব করি আসার পথে কয় নেকি হল। নেকির হিসেব করতেই মগধরা গ্রাম পেরিয় যায়, পেরিয়ে যায় ধোপার হাট, এগিয়ে আসে মাদ্রাসা। মাদ্রাসার পুকুর টা পেরিয়ে ঠিক যখন একটা স'মিল আর তার সামনে পড়ে থাকা গাছের গুড়িগুলো দেখতে পাই ঠিক তখন আমার উত্তেজনা বেড়ে যায়। কারণ স'মিল মানেই আর কয়েকশ গজ পরেই বাড়ি। বাসা নয় বাড়ি। বাসা নয় বাড়ি বলেই হয়ত ঠিক এই সময় প্রথমবারের মত বড়রা উত্তেজিত হয়ে উঠে। অনেক সময় আমাদের থেকেও বেশি। এটা আমি ঠিক ঠিক টের পাই কারণ সারা রাস্তায় আমাকে কম কথা বলতে বললেও এই প্রথম বড়রা নিজেরাই কথা বলে উঠে। এক রিক্সা থেকে অন্য রিক্সায়। জানান দেয় বাড়ি এসে গেছে।

রিক্সাটা যখন শিবের হাটের তেমাথার একটু সামনেই ডানে মোড় নেয় তখন কেন জানি একটা অন্যরকম আনন্দ হয়। বাড়ির ছোটরা রাস্তার মাথায় অনেক আগে থেকেই দাড়ান থাকে কারণ চিটাগাং থেকে সবাই আসবে অনেকদিন পর। রিক্সা মোড় নেওয়ার সাথে সাথেই পিচ্চিদের কেউ না কেউ দৌড়াতে থাকে বাড়ির দিকে, খবর দিতে যে সবাই এসে গেছে। রিক্সা থেকেই আমরা দেখতে থাকি পিচ্চি দৌড়াচ্ছে। দেখতে দেখতে যখন রিক্সাগুলো ঠিক বাড়ির মাঝখানে এসে দাঁড়ায় ঠিক তখন বাড়ির সবাই বের হয়ে আসে- ফুফুরা, চাচীরা। এত এত লোক কে পায়ে ধরে সালাম করতে করতে কোমর ব্যাথা করে উঠে কিন্তু তারপরেও আনন্দ হয় অন্যরকম আনন্দ।

এই বছর আর বাড়ি যাওয়া হবে না ঈদে। আসলে গত বছর দুই তিন ধরেই আর যাওয়া হয় না। দাদী মারা যাওয়ার পর আস্তে আস্তে যখন সবাই চলে আসল এর পর থেকে আর তেমন একটা যাওয়া হয় না। তাই আমাদের এখনকার ঈদ হয় শহরে। বন্ধুরা থাকে, টিভি থাকে, কম্পু থাকে, নেট থাকে, ব্লগিং থাকে, সারাদিনের ঘোরাঘুরি থাকে কিন্তু তারপরে ঠিক কী যেন একটা থাকে না। কারণ ঈদের দিন আমরা আবার স্টিমারের কথা বলি, কাদার কথা বলি, হাটার কথা, রিক্সার কথা বলি। টেলিফোন থেকে টেলিফোনে সেই একই বার্তা যায়। আর ফোনে ফোনে কথা বলতে বলতে আমরা টের পাই আমরা আবার একবার পিছনে ফিরে যেতে চাই কারণ হয়ত এটা আমাদের বাসা আর ঐটা আমাদের বাড়ি।


মন্তব্য

রাশু [অতিথি] এর ছবি

খালি পেয়ে প্রথম মন্তব্য করলাম (থাকবেনা মনে হয়)।
এইবার পড়ে আসি...

রাশু
ghumontoshohoreঅ্যাটgmail.com

নিবিড় এর ছবি

প্রথমস্থান অধিকার করার জন্য অভিনন্দন খাইছে
তা পড়ে লেখা কেমন পাইলেন সেটা বলেন হাসি


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

বাড়ি নেই, তবে বাড়ি যাওয়ার আকুতি কেমন হয়, তা বুঝলাম হাসি

চলুক
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

নিবিড় এর ছবি

আপনি না কর্পোরেট আর কর্পোরেটদের বাড়ি থাকতে নাই জানেন না হাসি


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

গালিটা গায়ে মাখলাম না হাসি
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

নিবিড় এর ছবি
উদ্ভ্রান্ত পথিক এর ছবি

পইড়া লগাইতে বাধ্য হইলাম!!
অসাধারণ লাগলো স্মৃতিচারণ হাসি
---------------------
আমার ফ্লিকার

---------------------
আমার ফ্লিকার

নিবিড় এর ছবি

তোমারে অনেকদিন পর দেখলাম মিয়া। তা আছ কেমন?


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

মাহবুবুল হক এর ছবি

এই আনন্দটা কখনো পাওয়া হয় নি। আপনার লেখা পড়ে আমিও আমার ছোটবেলার ঈদ স্মরণ করার চেষ্টা করলাম আরেকটি লেখায়।
--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে লিখি কথা
আমি তো বেকার পেয়েছি লেখার স্বাধীনতা

--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।

নিবিড় এর ছবি

হুম, আসলে মনে হয় ছোট বেলার ঈদ গুলোই ভাল ছিল। তা লেখাটার লিংক দেন, পড়ি হাসি


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

ওডিন এর ছবি

ঢাকার মানুষ হওয়ার সমস্যা এইটাই। এই 'বাড়ি যাওয়া'র আনন্দটা কক্ষনো পাইলাম না।

স্মৃতিচারণ দারুণ লাগলো নিবিড়ভাই। আর ধন্যবাদ মনে করায় দেয়ার জন্য- সন্দ্বীপ এখনও যাওয়া হয়নাই। যাইতে হবে।

______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

নিবিড় এর ছবি

সমস্যা নাই, বেঁচে থাকলে একদিন ঠিক ঠিক যাওয়া হবে


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

রাশু [অতিথি] এর ছবি

বৈবাহিক কারনে একবার সন্দ্বীপ গিয়েছিলাম বছর খানেক আগে। আমি ঢাকার ছেলে। আমার সহধর্মীনির এর আদীনিবাস সন্দ্বীপ হলেও সেখানে যাবার কথা উঠলে বেচারি আঁতকে উঠে। নেহায়েত সদ্য বিবাহের জোশে ছিলাম বিধায় সন্দ্বীপ যাত্রা সহাস্য বদনে পার করেছি। আপনার যাত্রা-বিবরনের সাথে এখনো কোনো পার্থক্য নেই। এখনো জ়োয়ার না থাকলে নৌকা ঠেলে কাদা পেরিয়ে হয়ে ট্রলার ধরা, সেখান থেকে দীর্ঘ এবড়ো থেবড়ো পথ রিকশায়। প্রতি রিকশার ভাড়া ছিল ২০০ টাকা (আমার দেখা এ অবধি সর্বোচ্চ রিকশা ভাড়া), তবু খাটুনির তুলনায় কমই মনে হয়েছিল । বর্ষায় নাকি কাদার জন্যে দুজন লোক লাগে প্রতি রিকশার জন্য। একজন টানে, আরেকজন ঠেলে।তবে সমস্ত কষ্ট ভুলে গিয়েছিলাম আতিথেয়তার আতিশয্যে। হরেক রকম পিঠা, বড় বড় মাছ, মহিষের দই, টাটকা রসগোল্লা- বিপাকে পড়ে আমাকে একবেলায় দুবারও খেতে হয়েছিল (সে এক কাহিনী)!
সন্দ্বীপের একটি বড় জনগোষ্ঠী প্রবাসী। সেকারনে স্বচ্ছল পরিবারের সংখ্যার হারও বেশী। লোকজন ধার্মিক ও বেশ শান্তি প্রিয়, আস্থিরতা কম। যাতায়াত ব্যাবস্থার প্রতিকূলতার কারনে অনেকেই এখন চট্টগ্রামে চলে আসছে।
নৌকা ঠেলার গানে নবী-রাসূল এবং দেব-দেবীদের সহাবস্থান অবাক করছে না, সুন্দরবন অঞ্চলেও এরকম উদাহরন আছে। আপনার লেখা অনেক স্মৃতি মনে করিয়ে দিল।

রাশু
ghumontoshohoreঅ্যাটgmail.com

নিবিড় এর ছবি

আপনি তাইলে সন্দ্বীপ ঘুরে এসেছেন হাসি আসলে সন্দ্বীপ যাওয়ার সময় সবচেয়ে বড় সমস্যা হল এই যাতায়ত সমস্যা। তা এখন তো শহরগুলো থেকে ব্যান হয়ে যাওয়া পুরাতন হলুদ বেবিটেক্সিগুলোর কিছু কিছু সন্দ্বীপে চলে। সেগুলোতে অবশ্য সময় অনেক বাঁচে তবে উচু নিচু রাস্তায় যে পরিমাণ ঝাকুনির মধ্যে দিয়ে যেতে হয় তাতে পুরো শরীরের হাড্ডিগুলো মনে হয় স্থান পরিবর্তন করে ফেলে মন খারাপ
এখন অবশ্য গানে একসাথে নবী,রাসূল আর দেব দেবী দেখে অবাক হই না। অবাক হতাম ছোটকালে যখন নৃ্তত্ত্ব সম্পর্কে কোন ধারণা ছিল না। আরেকটা মজার জিনিস হল এই গানগুলো কিন্তু টাইমার হিসেবে কাজ করে। প্রতি লাইন শেষ হওয়ার সাথে সাথেই সবাই একসাথে ঠেলা দেয় হাসি


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

অদ্রোহ এর ছবি

আমাদের স্মৃতিগুলো ঈদের ওপর তিতিবিরক্ত বোধ হয়, ঈদ আসলেই সবাই তাদের নিয়ে টানাহেঁচড়া করে কিনা হাসি

আপনার সেই মামার বাসায় এখনো যাওয়া হয় নাকি? ও ভাল কথা, চাঁটগাইয়া মানুষ ভালো পাই :D।

আজি দুঃখের রাতে, সুখের স্রোতে ভাসাও তরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

নিবিড় এর ছবি

আমাদের স্মৃতিগুলো ঈদের ওপর তিতিবিরক্ত বোধ হয়, ঈদ আসলেই সবাই তাদের নিয়ে টানাহেঁচড়া করে কিনা
খাইছে
চট্টগ্রামে যাওয়া হয় বছরে দুই তিন বার কারণা আগের বাড়িগুলো এখন সব শহরে এসে বাসা হয়ে গেছে হাসি
আর আমিও ইস্পাহানির লোকদের ভালু পাই চোখ টিপি

মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

জাহামজেদ এর ছবি

আমি আমার বাড়িতে বসে বসে আপনার স্মৃতিচারণ পড়ছি। পড়ে ভালোই লাগলো।

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

নিবিড় এর ছবি

ধন্যবাদ জাহামজেদ। আশা করি বাড়িতে ঈদ ভাল কাটবে হাসি


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

তিথীডোর এর ছবি

ওঁয়া ওঁয়া

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

তিথীডোর এর ছবি

'এ ভ্রমণ আর কিছু নয়,
কেবল তোমার কাছে যাওয়া...'

পয়লা বারের মতো ঈদ করতে গ্রামের বাড়ি এলাম.. স্বজনদের ভিড়ে দারুণ কাটছে সময়!
ভ্রাতঃ, লিখে ফেলবো নাকি এ নিয়ে একটা আবজাব? খাইছে
এত গুছিয়ে বলতে পারবো না জেনেও??

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

জাহামজেদ এর ছবি

পড়ার অপেক্ষায় আছি...

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

নিবিড় এর ছবি

আবুল হোসেন লোক ভালু খাইছে
আর লিখে ফেলেন বাড়িতে অভিজ্ঞতা গুলো, পরে একসময় নিজের পড়তে ভাল লাগবে। আর অপেক্ষায় রইলাম লেখাটার।


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

প্রতিটি মানুষের ভেতরই বোধহয় একজন ইউলিসিস থাকে,ফেরার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে। সহজ নয় যদিও।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

নিবিড় এর ছবি

হুম ইউলিসিস সবাই হতে চায় কিন্তু আমরা বোধহয় জানি ইউলিসিসের মত আমাদের আর ফিরে যাওয়া হবে না হয়ত তাই এই স্মৃতিচারণ


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

নাম দিয়া কাম কি? এর ছবি

দারুণ লাগলো ভাই। আসলে অতীত স্মৃতিগুলো সবসময়ই সোনালি, কখনো ধূসর হয় না। আমি, আমরা, সবাই আমাদের অতীতে ফিরে যেতে চাই, কিন্তু পারি না।

নিবিড় এর ছবি
সাইফ শহীদ এর ছবি

খুব সুন্দর করে লেখা। মন ছুয়ে যায়।

সাইফ শহীদ

সাইফ শহীদ

নিবিড় এর ছবি
সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আমি তো জন্ম থেকে জ্বলছি ঢাকায়। গ্রামে একবারই মাত্র ঈদ করতে গেছিলাম। আমার গ্রাম অবশ্য ঢাকার পাশেই। গাজীপুর। তবু যাওয়া হতো কম।

আমাদের পাড়া মহল্লার দারুণ রঙচঙে ঈদ ছিলো... নামাজ পড়ে বন্ধুদের সঙ্গে মহল্লায় আড্ডাবাজী, বেছে বেছে যে বাড়িতে সুন্দরী মেয়ে আছে সেই বাড়িতে গিয়ে আন্টি ঈদ মোবারক বলে বসে পড়তাম। মহল্লায় সবাই সবার আত্মীয়। বিকেল হলে দল বেঁধে কোথাও ঘুরতে যাওয়া বন্ধুদের সঙ্গে। অনেক রাত পর্যন্ত আড্ডাবাজী...

মন্তব্যটা লিখতে লিখতে একটা মজার ব্যাপার লক্ষ্য করলাম। গতকাল বড়ভাই ফোন করেছিলো, তিন ভাইয়ের পরিবার একসঙ্গে ঈদ করার আমন্ত্রণ। আমি ফিরিয়ে দিলাম। আমি চরম অসামাজিক। ঈদে একা একা বাড়িতে বসে বসে ঘুমাই আর সিনেমা দেখি আর বই পড়ি। গতকাল ফেসবুকে একটা বাণী দিছি- আত্মীয় স্বজনের চেয়ে সিনেমার নায়িকা দেখা উত্তম হাসি
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নিবিড় এর ছবি

আপনার এত এত অভিজ্ঞতা। লিখেন, ঈদ নিয়ে কিছু লিখেন। কালকে সারাদিন তো ঘুমাবেন তার আগে এই রাতে একটা লেখা লিখে ফেলেন হাসি


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

অতিথি লেখক এর ছবি

পানি'র প্রতি আমার কি জানি কি টান আছে! তবু বাংলাদেশে নারকেল জিঞ্জিরা ছাড়া আর কোনো দ্বীপে যাওয়া হয়নি! সন্দ্বীপ যাবো একবার। আস্ত জেলা ভোলা'টাই বাকী আছে এখনো। "কত কি দেখার আছে বাকী"

কবে যে দেশে ফিরবো!!

কাজী মামুন

নিবিড় এর ছবি

হুম, দেশে ফিরলে নিশ্চয় সব দেখা হবে আস্তে আস্তে


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

অনিন্দিতা চৌধুরী এর ছবি

ছোটবেলা ঈদের সময় বার কয়েক গ্রামের বাড়ি গেছি। যাদের কাছে যেতাম তারা এখন আর কেউ নেই। তাই বহু বছর বাড়িতে ঈদ করা হয় না। এখন বাসায়ই ঈদ করি। তবে কর্মসূত্রে মাঝে কিছুদিন অন্য শহরে থাকায় ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফেরা মানুষদের মতো আমিও প্রায় যুদ্ধ করে নিজের বাসায় ফিরতাম। এটাই এখন বাসা আর বাড়ি দুটোই।

তবু ও মনে পড়ে কোন একদিন আমদের ও গ্রামে একট বাড়ি ছিল। যেখানে যাওয়ার একটা টান ছিল।

তোমার লেখা পড়ে আবার সেদিন গুলোর কথা মনে পড়ে গেল।
ভাল লাগল নিবিড়।

নিবিড় এর ছবি

হুম, আস্তে আস্তে হয়ত এই বাসা বাড়ি ব্যাপারটাই উঠে যাবে, আমরা আর বেশি নাগরিক হয়ে উঠব।


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

রেশনুভা এর ছবি

কাদায় হাঁটার এই উপায় আগে জানা থাকলে আমার আর বর্ষাকালে গ্রামের বাড়ীতে যায়ে কাদার ভিতর হাডুডু খেলা লাগতো না। তবে এরপরে মনে থাকবে।

আমাদের দাদাবাড়ীর সামনে একটা পুকুর আর বাঁশঝাড়। দেখলেই কেমন জানি লাগে। আপনার লেখা পড়ে বুঝলাম তখন নিজের ঠিকানাটা খুঁজে পাই বলেই হয়ত ওরকম লাগে।

চমৎকার।

নিবিড় এর ছবি
বাউলিয়ানা এর ছবি

ধ্যাত! এটা আমি একটা কাম করলাম! এত কাছে থেকেও কখনও সন্দ্বীপ গেলাম না। অনেক ইচ্ছা একবার যাই। দেখি বাক্স পেটরা নিয়ে রওনা হয়ে যাব একদিন।

স্মৃতিচারণ ভাল লাগসে। ঈদের শুভেচ্ছা রইল হাসি

নিবিড় এর ছবি

সাবধান বাক্স প্যাটরা কিন্তু কম রাখবেন কারণ কাদায় পরলে কেউ কিন্তু টেনে তুলবে না দেঁতো হাসি


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

দেবোত্তম দাশ এর ছবি

আমরা কত কিছুই চাই আবার কত কিছুই যে পাই না, শুভেচ্ছা রইলো অনেক
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !

------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !

নিবিড় এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

দারুন! পুরানো স্মৃতি মনে করিয়ে দিলেন। যুদ্ধ করে ট্রেনে গ্রামের বাড়িতে যাওয়া, তারপর নেমে রিকশায় অসীম সময় ধরে চলা। সাঁকো ধরে খাল পার হওয়া, আমি তখন প্রায় ফ্রিজড হয়ে পার হতাম!! এরকম নানা ধরনের মজার স্মৃতি আছে। এখন মনে হয় এগুলো আর অতিক্রম করতে হয় না। লিখব নাকি সেই সব দিনের কাহিনী? চিন্তিত

ঈদের শুভেচ্ছা রইল।

অনন্ত

নিবিড় এর ছবি

পড়ার জন্য ধন্যবাদ। লিখে ফেলুন একদিন সময় করে হাসি


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।