অ
নজু ভাই এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার পর সুহান মিয়া আমার নিকটতম প্রতিবেশী। একজন সৎ প্রতিবেশীর মত ছেলেটা ঠিক সন্ধ্যা ছয়টার সময় ফোন দিল, বলে- যাবেন নাকি আজকে বইমেলায়? চীনদেশে নাকি প্রবাদ আছে প্রতিবেশীর সাথে সুসম্পর্ক রাখা ফরয কাজ তাই আমিও আর না করলাম না। সাড়ে ছয়টায় রওনা দিলাম দুইজনে, আজকেও বাহন এগার নাম্বার বাস মানে দুই পা।
আ
শাহবাগের ফুলের দোকানগুলোর পাশ দিয়ে ছবির হাট পেরিয়ে সামনে আসতে আসতে দেখি একটু সামনে গাড়ি গুলো সাইড করে রাখা। মেলার দ্বিতীয় দিনে গাড়ির লাইন এতদূর আসায় একটু অবাক হলাম কারণ সাধারণত এত শুরুতে অথবা ছুটির দিন ছাড়া গাড়ির লাইন ছবির হাটের কাছে আসে না। এইসব দেখতে দেখতে আর ক্রিকেট নিয়ে কথা বলতে বলতে মেলায় ঢুকার মুখে দেখি আজকে রাস্তায় খাবার স্টল দিয়ে দিয়েছে, রীতিমত সামিয়ানা টাঙ্গিয়ে। বিরক্ত হয়ে যখন বললাম- ধুর্বাল, এই জায়গায় এইসব জিনিসের অনুমতি কে দেয় তখন সুহান একটা ভাল কথা বলল, বাংলাদেশে এইসব অনুমতি কেউ দেয় না কিন্তু পুলিশ টাকা নেয়।
ই
মেলায় কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করার পর ওডিন ভাইয়ের ফোন এল, উনি নাকি মেলায় ঢুকছেন। নজরুল মঞ্চের কাছে আসতে বলতেই একটু পরেই দেখি ওডিন দা সারেন্ডার স্টাইলে উপরে হাত তুলে দৃষ্টি আর্কষণ করছে। কাছে গিয়ে দেখি ব্যাগ থেকে লম্বা লম্বা কাগজ উকি দেয়, প্রশ্ন করে জানা গেল গোয়েন্দা ঝাকানাকার পোস্টার পাঠসূত্রের স্টলের জন্য। এইবার থ্রী স্টুজেস মিলে শুরু হল বই দেখা আর হাটাহাটি। কথা বলতে বলতেই হঠাৎ ওডিন'দা কে প্রশ্ন করলাম বাংলা একাডেমির ছাদে উঠছে কীনা? উত্তর আসল, না। মেলায় বছরের পর বছর অনেকেই আসে, বইপত্র কিনে, গল্পগুজব করে আবার চলেও যায় কিন্তু একটা জিনিস অনেকেই জানে না যে বইমেলাটা সবচেয়ে ভাল দেখা যায় বাংলা একাডেমির ছাদ থেকে। নজরুল মঞ্চের পাশ দিয়ে বাংলা একাডেমি বিল্ডিঙ্গের ভিতরে ঢুকে হাতের ডান পাশ দিয়ে উপরে উঠে গেলেই ছাদে যাওয়া যায়। উপরে কাঠের সিড়ি আছে। আমাদের ক্যাম্পাসের বন্ধুরা যখন মেলায় আসি তখন বেশি ভীড় থাকলে বা চুপচাপ আড্ডা দিতে চাইলে ছাদে উঠে যাই। উপর থেকে মেলাটা দেখতে বেশ সুন্দর লাগে। নিচের ভীড়, ধূলা, কোলাহল কিছুই থাকে না উপরে বরং উপর থেকে দেখা যায় শান্ত একটা মেলা যেখানে প্রচুর লোক ঘোরাঘুরি করছে আর যাদের অনেকের হাতে বই। উপর থেকে এইভাবে মানুষ দেখতে মজাই লাগে। সব শুনে ওডিন'দা বলল এরপরের দিন আসলে ছাদে উঠতে হবে আর সাথে ক্যামেরা আনতে হবে।
ঈ
ঘুরতে ঘুরতে থ্রী স্টুজেস যখন শুদ্ধস্বরের সামনে হাজির হলাম তখন দেখি সামনে ছোটখাট একটা ভীড়, কাছে গিয়ে দেখি হয়রান আবীর সাহেব স্পর্শ ভাইয়ের সাথে ছবি তুলছে আর তার থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়েব সামিয়া বেগম বিটিভির শিশুদের গানের স্টাইলে ডানে বামে নড়তে নড়তে সে দৃশ্য গভীর মনযোগের সাথে পর্যবেক্ষণে ব্যস্ত। এইসব হেজেমনি দেখে আমরা তিনজনে একটু দূরে সরে বাকি তিন জনকে পর্যবেক্ষণে ব্যস্ত হলাম। এর মধ্যে ওডিন'দা হয়রান আবীরের বই কিনে সেটা অটোগ্রাফের জন্য সামনে দিতে হয়রান দেখি সেখানে লিখছে- একচোখা ওডিন ভাইকে। একফাঁকে স্পর্শ ভাইয়ের সাথে ওডিন'দা বাতচিতে ব্যস্ত হতে সেখান থেকেই জানা গেল স্পর্শ ভাই নাকি আজকেই দেশে আসছে। এরপর আবার স্পর্শ ভাইয়ের ক্যামেরা দিয়ে ওডিন'দা, সুহান, হয়রান সাহেব আর আমি চারজন মিলে একটা ফটোসেশনে অংশ নিলাম।ছবি তোলার সময় সবাই সবার হাত কোথায় রাখবে এইটা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল, শেষে দেখি সবাই পাশের জনের কাধে হাত দেয় তবে বড় ভাইদের কাধে হাত দিতে নাই তাই হাতটা পকেটেই চালান করে দিলাম।
উ
একটু পরে হাটতে হাটতে সুহান বলে আজকে আজকে মেলা নাকি হট আর সংগে সংগে ওডিন'দা বলে- হ, মেলা আজকে অনেক সুন্দর। সুহান কিংবা ওডিন'দা কার মতো আমার চারচোখ না থাকায় ঠিক বুঝলাম না হটের সাথে সুন্দরের কী সম্পর্ক। এই দুই জিনিসের সম্পর্ক আবিষ্কারে ব্যস্ত হতেই ওডিন'দা প্রশ্ন করল- চাঁদের পাহাড় পড়ছি কিনা। উত্তর দিলাম, না। এইবার সুহান বলে- নিবিড় ভাই, কী আছে জীবনে পড়ে ফেলেন। এইসব কথাবার্তার মধ্যেই দেখি ওডিন'দা আমার হাতে একটা বইয়ের প্যাকেট ধরায়ে দিছে, খুলে দেখি চাঁদের পাহাড়
ঊ
আজকে মেলায় একটা জিনিস খেয়াল করলাম অনেক স্টলের কাজ এখনো অনেক বাকি। দুই একটা স্টল তো দেখি কোন কাজই হয় নাই, ডিসপ্লেতে কোন বই নাই। বাংলা একাডেমির আরেকটু শক্ত হওয়া উচিত এইসব জিনিসে। দুই দিন চলে গেল এখনো যদি ডিসপ্লেতে বই দিতে না পারে তাইলে কেম্নে কী? আবার জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের সামনে গিয়ে দেখি দোকানের ভিতর দুইজন যাওয়ার জন্য ব্যাগ গুছাচ্ছে। তখন বাজে মাত্র আটটা। সরকারি এইসব স্টলের উপর মাঝে মাঝে মেজাজ খারাপ হয়। এরা আগে আগে স্টল বন্ধ করে দিবে আবার বই চাইলে চরম বিরক্ত হয়ে বলবে নিজে খুঁজে নেন। নামকাওয়াস্তে মেলায় অংশ নেওয়ার থেকে মনে হয় অন্য একটা ভাল প্রকাশনীর জন্য জায়গা ছেড়ে দেওয়াই ভাল এদের। মেলায় আগে ছিল কীনা জানি না তবে এইবার নতুন দেখলাম সেটা হল লেখকদের আড্ডার জায়গা। ভাষা শহীদদের ভাস্কর্যের পিছনে করেছে জায়গাটা। আসা যাওয়ার পথে প্রায় খালিই দেখলাম, ঠিক করছি এর পরে বসতে ইচ্ছে করলে সোজা গিয়ে ঐখানে আরাম করে বসে পড়ব। কেউ যদি প্রশ্ন করে লেখক কীনা সংগে সংগে উত্তর দিব- আলবত লেখক। "বুলবুলের প্রেম" বইটা আমার লেখা
ঋ
ঘোরাঘুরির মাঝেই সবজান্তা ভাই আর অন্দ্রিলা আপুর সাথে দেখা হয়ে গেল। মুক্তধারার বইয়ের কথা শুনে দুইজনেই রওনা দিল সেদিকে আমরা থ্রি স্টুজেসও গেলাম সাথে সাথে। বহুত বহুত হাটা হাটি হইছে সারাদিন তাই আমরা তিনজন নজরুল মঞ্চে বসে দিন, দুনিয়া আর বালিকা এই তিন নিয়ে আলাপ শুরু করলাম। সবজান্তা ভাই আর অন্দ্রিলা আপু দেখি মুক্তধারা থেকে বই নাড়াচাড়া শুরু করছে। দূর থেকে দেখলাম চার পাঁচটা বই কিনার জন্য একপাশে রাখছে। একটু পরে সবজান্তা ভাই ফেরত আসতেই প্রশ্ন করলাম কী কী কিনলেন, তলস্টয়ের নাম শুনে আর কিছু না শুনেই দৌড় দিলাম। কাছে গিয়ে অন্দ্রিলা আপু কে জিজ্ঞেস করলাম তলস্টয়ের উপর কী কিনলেন? উনি বইটা এগিয়ে দিতেই তাড়াতাড়ি পাতা উলটানো শুরু করলাম। ভিতরে দেখি হায়াৎ মামুদ সম্পাদিত। তলস্টয়ের ছোট গল্প আছে কিছু তবে বেশির ভাগ তলস্টয়ের উপর বিখ্যাত লেখকদের লেখা। ভিতরে কাদের কাদের লেখা আছে শুনতে চান? দাড়ান একটা হাইলাইটস দেই- সমারসেট মম, রমা রলা, ভার্জিনিয়া উলফ, গোর্কি, বরিস পাস্তারনেক। আর বাকিদের নাম জানতে চাইলে কিনতে হবে। তবে আসল কথাটা বলে নেই আজকে এই বইটাও গিফট পাইছি, অন্দ্রিলা আপু দিছে। আহা, আজকাল্কার বড় ভাইবোনেরা দেখি নিদারুণ ভাল হয়ে যাচ্ছে
এ
মেলা থেকে বের হয়ে সব সময় কিছু খাওয়া দাওয়া হয়, আজকেও হইছে। তো সেইসব খাইতে খাইতে হঠাৎ আকতার ভাই আর মৃদুল ভাইয়ের সাথে দেখা হয়ে গেল। দুই জনেই সম্ভবত অফিস থেকে আসছিল, বাসায় যাওয়ার তাড়া ছিল তাই দুইজনেই চলে গেল। তবে যাওয়ার আগে জানা গেল আকতার ভাইয়ের প্ররোচনায় মৃদুল ভাইয়ের বই আসছে মেলায়।
ঐ
বহুত রাত হয়েছে তাই গুড নাইট, স্লিপ টাইট এবং ঘুমাতে ঘুমাতে যারা আজকে আসছেন তারা স্বপ্ন দেখেন কালকে আসবেন আর যারা এখনো আসতে পারেন নাই তারা স্বপ্ন দেখেন, এনশাল্লাহ একদিন না একদিন ঠিকি বইমেলায় পৌছে যাবেন
মন্তব্য
তন্ময়'দা আমার জন্য কেনা বইগুলো পোলাপান কারো হাতে দিয়েন্না। আমি দেশে এসে একসঙ্গে নেব।
ঐন্দ্রিলা, কেবল নিবিড়ের জন্যই বই কিনলা?! আমি কেউ না?!
নিবিড়, অনেক ধন্যবাদরে ভাই, সঙ্গে করে মেলায় নিয়ে যাবার জন্য।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
আমায় কে কে বই কিনে দেবে?
বইমেলার রোজনামচা হিসেবে সেরকম একটা লেখা হয়েছে ।
শুভ কামনা রইল ।
--------------------------------------------
আমার চারপাশ ডট কম
কোপা সামছু-২
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আজকা বিকালে মেলায় যামু
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
"নজু ভাই এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার পর সুহান মিয়া আমার নিকটতম প্রতিবেশী"
ক্যান আমারে চোখে পড়েনা? আমি কি সুহানের চেয়ে বেশি কালা? আর তোমার বাড়ি থেইকা সুহানের বাড়ি কি আমার বাড়ির থেইকা বেশি কাছে?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
হায়াত মামুদ সম্পাদিত তলস্তয়ের বইটার নাম প্রকাশনীটা কইলে একটু উপকৃত হইতাম। (না কইলে ঐন্দ্রিলা আপুর ঠিকানাটা জানাইলেও চলব )
- দিগন্ত
বইটা মুক্তধারার। তাড়াতাড়ি বইটা সংগ্রহ করেন কারণ খুব সম্ভবত আর বেশি কপি বাকি নেই
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
সিরিজটা মাঝ পথে বন্ধ হয়ে যাবে না সেই আশাবাদ জানিয়ে যাচ্ছি।
এবার মেলায় যাওয়া হবে কি না সেটাই বুঝতে পারছি না।
____________________________________________________________________
"জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক;
আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো
এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।"
পরের পর্ব কই? বইমেলার গল্প ভাল হচ্ছে। শেষের দশদিনে যাব ভাবছি।
যাবো আইজ বিকেলে ... বই কিনবোনা কসম, কিন্তু আড্ডা দিবো ...
==========================================================
ফ্লিকার । ফেসবুক । 500 PX ।
নতুন মন্তব্য করুন