অ
স্বাস্থ্য সকল সুখের মূলে এবং স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য দুপুরের খাবারের পর একটু ঘুমানো উচিত এই কথাটা আজকে আমার মনে পড়ল বিকেল সাড়ে চারটায়। যদিও মনে ছিল সন্ধ্যা ছয়টায় গোয়েন্দা ঝাকানাকা ও তার দলবল তাদের অভিযান শুরু করবে তাও হাতে মেলা সময় আছে ভেবে স্বাস্থ্য মোটাতাজাকরণ প্রকল্পের উদ্দেশ্য একটা ঘুম দিলাম এবং ঘুম থেকে উঠে টের পেলাম সোয়া ছয়টা বাজে।
এরপর এগার নাম্বার বাসে যখন শাহবাগে পৌছলাম তখন আরেকবার অবাক হবার পালা কারণ আজকে মেলার লাইন চলে এসেছে ছবির হাট পর্যন্ত। মিনিট পাঁচেক পর্যবেক্ষণের পর বুঝলাম এই লাইন দিলে আর আটটার আগে মেলায় পৌছানো হবে না। আর খ্রাপ ছেলেদের মত সবসময় লাইন দেওয়াও ঠিক না তাই এইবার টিএসসির দিক দিয়ে না গিয়ে ঢুকলাম দোয়েল চত্বরের দিক দিয়ে। ঐদিকে দেখি কোন লাইন নাই, পুরাই ফাকা। ধীরে সুস্থে মেলার ঢুকার সময় দেখি এক বাঁশিওয়ালা দোল দোল দুলনি রাঙ্গা মাথায় চিরুনি সুরটা বাজাচ্ছে বাঁশিতে এবং গেটের সামনে দাঁড়ানো এক পুলিশ মাথা দুলিয়ে এই সুরের সাথে আস্তে আস্তে গাইছে- দোল দোল দুলনি রাঙ্গা মাথায় চিরুনি। হঠাৎ কী মনে হল ঢুকার সময় সে পুলিশের দিকে ফিরে বললাম, ভাই গানটা ভাল গাচ্ছেন। কথা শুনে পুলিশ মনে হয় লজ্জা পেল, আমার কথা শুনে বলে- থ্যাংকু ভাই। পুলিশের থ্যাংকুর মত বিরল জিনিস পকেটে নিয়ে ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বুঝলাম আজকে মেলায় সময়টা ভাল যাবে
আ
মেলায় ঢুকার পরেই হাজির হলাম শিববাড়ির সামনে। হাজির হয়েই দেখি বিশাল এক সচল বাহিনী। কে কে আসছে জানতে চাইয়েন না তাইলে নতুন একটা পোস্ট লেখা লাগবে। তবে নতুন অনেককেই দেখলাম যাদের আগে কখনো দেখি নাই, প্রশ্ন করে জানা গেল ঝাকানাকার মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষ্যে হাজির হয়েছে পাঠক গোষ্ঠীর অনেকে। হাসিব ভাই প্রশ্ন করল এত দেরি হল কেন? আমি বললাম, আগের অভিজ্ঞতা থেকে দেখছি সাধারণত সচলের বইয়ের মোড়ক উন্মোচন এত আগে আগে শুরু হয় না কিন্তু গোয়েন্দা ঝাকানাকা এই বুড়ো বয়সেও যে এত সময় মেনে চলবে কে জানত? যাই হোক আশরাফ ভাইয়ের থেকে গোয়েন্দা ঝাকানাকার বইটা নিয়ে উলটে পালটে দেখা শুরু করলাম, ভিতরের পৃষ্ঠা আর ঝকঝকে তকতকে ছাপা দেখে ভাল লাগল। ঠিক করলাম পিচ্চি কাজিন যারা কমিকস পড়ে এদের ঝাকানাকার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। এর মধ্যে পিছন দিকে এক সচল বড়ভাই দেখি বড়দের কমিকস আর ছোটদের কমিকস এইসব বিষয়ে নানা কথাবার্তা বলছে, জ্ঞান অর্জন ফরয বলে জ্ঞান অর্জনের জনইয় কান পাতলাম। আমাদের জ্ঞান বাড়ানোর আর সুযোগ পাওয়া গেল না কারণ সেখানে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল
ই
আজকে মেলায় প্রচুর ভীড় ছিল প্রায় সারাক্ষণ ধরেই। সপ্তাহে প্রায় প্রতিদিন মেলায় আসা হয় তাই আজকে আর ভীড় ঠেলে তেমন একটা বই দেখা হল না। বলা যায় আজকে খালি আড্ডাই হয়েছে মেলার বিভিন্ন জায়গায়। তাই আজকের গল্প প্রায় পুরাটাই আড্ডা নিয়ে।
মেলায় আড্ডা দেওয়ার ভাল জায়গা গুলোর একটা হল বাংলা একাডেমির পুকুর ঘাটটা। এখানে বেশ অনেকক্ষণ ধরেই আজকে একটা আড্ডা হল। মেলা ধূমপান মুক্ত বলে আজকাল অনেকে সিগ্রেট খেতে এখানে চলে আসে। তবে এখানে আসার পর আমাদের বিড়িখোড় সম্প্রদায় টের পেল তাদের কাছে সিগ্রেট নাই তাই এমনি এমনি আড্ডা শুরু হল। আস্তে আস্তে বেশ কয়েকজন এসে দল ভারি করায় দলটা তখন বেশ স্বাস্থ্যবান। পাশের রাস্তাটা দিয়ে যাওয়া আসার সময় সবাই দেখি একবার দেখে যায় কী হচ্ছে এখানে। নানাজনে নানা বিষয়ে কথা বলা শুরু করল। এর মধ্যে হাসিব ভাই দেখি ঝাকানাকার একটা বই নিয়ে ল্যাম্পপোস্টের আলোয় পড়ছে এটা দেখে আমাদের অনেকের বুয়েট পড়ুয়া নায়ক শাকিব খানের কথা মনে পড়ে গেল। একদিকে ওডিন ভাই, আশরাফ ভাই আর অফিস পালাতক আরেক সচল কী এক রক ব্যান্ড নিয়ে গল্প করার মাঝেই গল্প ঘুরে গেল পাইরেটস অব দ্যা ক্যারিবিয়ান আর জ্যাক স্প্যারোর দিকে। এর মধ্যে স্পর্শ ভাই আর তার একটু পরে সুহান মিয়াও চেহারা দেখিয়ে গেল। অদ্রোহ এর মধ্যে বাংলা একাডেমির ছাদের কথা বলতেই মনে পরল এইবার মেলার প্রায় এগার দিন চলে গেলেও বাংলা একাডেমির ছাদে এখনো উঠা হয় নি। ক্যাম্পাসের শুরুর দিক গুলোতে মেলাতে আসলে এখানে বেশ আড্ডা হত কিন্তু এইবার এতদিনে এখনো একবারো যাওয়া হয় নি। মানুষের সাথে সাথে হয়ত তাদের আড্ডার জায়গা গুলোও পরিবর্তন হয় আস্তে আস্তে।
ঈ
আজকে মেলায় এসেছিল বাঘাদা ওরফে সবুজ বাঘ, ভাবী আর বাঘ কন্যা কাজলরেখা। মেলার মধ্যে হাটাহাটি করে আমরা কয়েকজন বসে ছিলাম একাডেমির ঘোষণা মঞ্চের সামনের সিড়িতে। এর মধ্যে কাজলরেখা তার বাপ মা সহ হাজির হল সেখানে। এসেই সে বাপের কোল থেকে নেমে লাফঝাপ শুরু করল খালি পায়ে। বাঘাদা কে জুতা কই জিজ্ঞস করতে জানা গেল পিচ্চি জুতা পরতে ইচ্ছুক না। এর মধ্যে বাঘাদা পিচ্চির দৌড়ঝাপ থামাতে একবার নিরীহ একটা হুংকারো দিলেন তবে কন্যা তাতে তেমন একটা গা করল না। দুনিয়াজুড়ে এই গিয়ানজাম থামাতে বাঘাদা যখন ভূতের কথা বললেন থামের আড়ালে লুকিয়ে থাকা কাজলরেখা তাতেও তেমন একটা সায় দিল না, বুঝা গেল কন্যা বড়ই বিজ্ঞানময়। এর মধ্যে আমার হাতে থাকা আশরাফ ভাইয়ের গোয়েন্দা ঝাকানাকার বইটা তার দিকে এগিয়ে দিতেই বইয়ের ঝকমকে রং পিচ্চির মনযোগ আকর্ষন করল বলে মনে হয়। চুপচাপ দাঁড়িয়ে সে একবার আমাকে আরেকবার বইটা দিকে তাকিয়ে পর্যবেক্ষণে ব্যস্ত হল। ছোটোকালে বাবা-মা আমাকে শিখিয়ে দিয়েছিল অপরিচিত কেউ কিছু দিলে না নিতে এবং তারা অতি অবশ্যই ছেলেধরা। তাই ছোটকালে অপরিচিত যে কেউ কিছু দিতে চাইলেই তখন তাকে ছেলেধরা বলে সন্দেহ হত। কাজলরেখাও সম্ভবত আমাকে ছেলেধরা ভেবে আবার অন্যদিকে দৌড় দিল। এইসব দেখে আমরা তখন গভীর মনযোগে কন্যা আর পিতা কে পর্যবেক্ষণে ব্যস্ত। এরমধ্যে দেখি হঠাৎ করে পিচ্চি কাগজ নিয়ে পাশে পাশে সাজিয়ে রাখছে। আমরা ভাবলাম এইবার বুঝি কাজলরেখা বসবে কিন্তু কাগজ গুলোর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হঠাৎ করে এগুলোর উপর সে লাফানো শুরু করল। এইসব কান্ড দেখে হাসতে হাসতে আশরাফ ভাই একটা সত্য কথা বলল, দুনিয়াতে সবচাইতে আনপ্রেডিক্টেবল বুদ্ধিমান প্রাণি হচ্চে বাচ্চারা।
উ
সাড়ে আটটার দিকে বই কিনার শখ হল তারেক ভাইয়ের অতএব তারেক ভাই, সবজান্তা ভাই, আমি আর অদ্রোহ মিলে হাটা দিলাম গরীবের ভরসা বাংলা একাডেমির দিকে। একাডেমির বিক্রয় কেন্দ্রের সামনে এসে দেখি বিক্রয় কেন্দ্র বন্ধ হতাশ হয়ে উলটা ঘোরার আগেই চোখ পরল ভিতরে, দেখি লীলেন্দা আর ভাবী ভিতরে দাঁড়ানো আর বাইরের কলাপসিবল গেট আটকানো। ঘটনা কী বুঝার জন্য ভিতরে উঁকি দিতেই বুঝলাম শেষ ক্রেতা হিসেবে লীলেন্দা বই কিনেছেন আর তার সাথে হিসেব কিতাব মিলাচ্ছে বিক্রয় কেন্দ্রের লোকজন। কী বই কিনলেন প্রশ্ন করতেই লীলেন্দা বলে সব নাকি ফোকলরের উপর বই। দাম কত প্রশ্ন করতেই বলে ৯০০ টাকার উপ্রে। বাংলা একাডেমিতে ৯০০ টাকা দাম তোলা শক্ত কাজ তাই আবার কী কী বই কিনছে সেটার দিকে উঁকি দিলাম। তখন অবশ্য অন্য দোকান খোলা ছিল তবে পকেটে টাকা ছিল না তাই আজকের মত বই কেনা প্রজেক্টের সেখানেই সমাপ্তি।
ঊ
মেলা শেষে বাড়ি ফিরার সময় এক প্রকাশনীতে কাজ করা এক বড় ভাইয়ের সাথে গল্প হল। জানা গেল এইবার বেঁচা বিক্রি বেশ ভাল তবে বই চুরির সমস্যাটার কথা শোনা গেল। আজকেই নাকি দোকান থেকে চার পাঁচটা বই চুরি হয়েছে। স্টলে সব সময় তিন চারজন লোক থাকলেও শুক্রবার ভীড় বেশি থাকে। ক্রেতা সেলফ থেকে একটা বই দেখাতে বললে বা ক্যাশমেমো লেখার সময় সামনের দিকে নজর রাখা সম্ভব হয় না তখন যায় কিছু বই। আবার অনেকে নাকি পড়ার ভান করে আস্তে সটকে পরে। আজকে নাকি একজন বই পড়ার ভান করে আস্তে আস্তে অনেকদূর চলে গিয়েছিল, দৌড়ে গিয়ে ধরতেই বলে অমনযোগী হয়ে বইটা হাতে চলে এসেছে। আবার একজন নাকি স্টলে আজকে এসে আবদুল মান্নান সৈয়দের "মাধুকরী" খোজ নিয়েছিল, এই নামে আবদুল মান্নান সৈয়দের কোন বই নেই বরং বুদ্ধদেব গুহর বই আছে বলতে নাকি খোজকারির মুখখানা দেখার মত হয়েছিল।
ঊ
শেষবেলায় আসার সময়ও দেখি প্রচন্ড ভীড়। হাটতে হাটতে পরীবাগের মুখে কোঞ্চিপার চাচীর দোকানে চা খেতে গিয়ে দেখি আরেক রঙ্গ, বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে দোকানের সব বেঞ্চ হাওয়া করে দিয়েছে পুলিশ। হয়ত খেলার সময় রাস্তার পাশের এই দোকান গুলোই হাওয়া করে দিবে। হীরক রাজার দেশের কথা মনে পরল, গরীবেরা দেশের সম্মান নষ্ট করে তাই যন্তর মন্তর দিয়ে সব গরীব হাওয়া করব আমরা। অবশ্য এত রাতে এইসব কথার মানে কী, তার থেকে বরং ঘুমান আর ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখেন- হীরকের রাজা ভগবান।
মন্তব্য
আমার বইবিভ্রাটের কাহিনি বাদ গ্যাসে ।
--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।
এত লেট করে ছাড়েন কেন লেখাটা। পড়ার জন্য বসে ছিলাম।
যথারীতি
লেখা সেরকম হৈছে।
যথাসময়ে না এসে খালি খাওনের টাইমে আইছেন বইলা দিক্কার
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
যাক খাওয়াটাতো মিস করসনাই
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
নতুন মন্তব্য করুন