সারাদিন কাজ শেষে বিকেল বেলা ক্লান্তি ভর করে। কাজ শেষে তাই গান খুজি ইউটিউবে। সামনের ভলিবল মাঠ থেকে ভেসে আসে শব্দ। জয় পরাজয়ের শব্দের ভিতর হালকা স্বরে গান চলে। পাশের রুমে চলে নাটকের প্র্যাক্টিস। এই সময় ফোন করে এক বন্ধু। বন্ধুর সাথে কথা বলতে বলতে শাহবাগের কথা আসে, অবাক হই, দীর্ঘশ্বাস বাড়ে
।
আজকাল নেটে ঠিক নিয়মিত না। ফেসবুকে আর বেশি অনিয়মিত। তারপরেও খবরটা চোখে পড়ে। রাতে শোয়ার আগে চোখে পড়ে সুহান আর মেহদী ভাইয়ের পোস্ট। ঘুম ঘুম চোখে শাহবাগের মিছিলে্র কথা পড়ি, ছবি দেখি। তারপর ঘুমের ভিতর আবার সব ভুলে যাই। সারাদিন ব্যস্ততা শেষে বিকেলে বন্ধুর ফোনে আবার ফিরে আসে শাহবাগ। শুনে শুনে কিছু কল্পনা করা বড় কঠিন। তাও বন্ধুর কথায় কল্পনা করি শাহবাগ আর তার উতসব মুখর পরিবেশ। সারা জীবন ভিড় থেকে দূরে থাকা নিরীহ বন্ধুর এই মানুষের ভীড় নিয়ে উচ্ছ্বাস বোঝার চেষ্টা করি। বুঝতে পারা আর না পারার মাঝামাঝি একটা জায়গায় আফসোস বাড়ে। এরকম একটা ঘটনা কে সামনে থেকে না দেখতে পারার আফসোস।
একটু পরে চার কলিগের আড্ডা বসে। একজন প্রশ্ন করে ঠিক আর কয়টা খুন ধর্ষণে জড়িত থাকলে ফাসি হবে? ঝালমুড়ি থেকে বাদাম বেছে বেছে খাই আর সবার কথা শুনি। আরেকজন বলে এই রায় কী নৈতিক পরাজয়? উত্তেজিত হাকিম ভাই টেবিল থাপড়ে কথা বলে যান। আমি কোন বিশ্লেষণে যাই না শুধু মনে মনে বলি এ বড় অন্যায়।
আড্ডা শেষে আলাউদ্দীনের সাথে বের হই। সারাদিনের ক্লান্তি আর এইসব হতাশা সন্ধ্যার নাস্তার সাথে হজম করব বলে বের হই। হঠাত সামনে দিয়ে মিছিল যায়। মিছিলের স্লোগান শুনে আলাউদ্দীন বলে- মিয়া ভাল করে শুন, কী বলে। আলবদর, রাজাকার এই মূহুর্তে বাংলা ছাড়। হঠাত করেই মনটা ভাল হয়ে যায়।
বরিশাল টাউন হলের সামনে মিছিলটা থামে। আমরাও থামি। জাতীয় পতাকা হাতে একদল ছেলে মেয়ে রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে পড়ে। আরেক দল তার পাশেই আগুন জ্বালে। আগুন কে ঘিরে গোল হয়ে দাঁড়ায় কেউ কেউ। আমরা রাস্তার উল্টেও দিক থেকে দেখি। জমা হয় আমাদের মত আর অনেক দর্শক। কেউ কেউ ছবি তুলে। দেখা দেখি আলাউদ্দীনের ক্যামেরা দিয়ে আমরাও যোগ দিই। মাইকে কেউ একজন কথা বলতে থাকে। আমরা দেখি আর দূর্বল ক্যামেরায় পটাপট ছবি তুলি। আগুন কে ঘিরে এর মাঝে গান গায় কেউ কেউ। একটা ভাল ক্যামেরা না থাকার জন্য আফসোস বাড়ে।
ভাল ক্যামেরার আফসোসের সাথে পাল্লা দিয়ে রাত বাড়ে। ফেরার রাস্তায় আমাদের সাথে থাকে গতকালের রায়, কাজের ক্লান্তি, রাতে ব্রাজিলের ম্যাচ। রিক্সায় ফিরতে ফিরতে আমরা সব আলোচনা করি। তার পরেও মনের ভিতরটা হালকা লাগে। জানি এইবার ফাসি হয় নি কিন্তু পরাজয় আমাদের নয়। আমার চোখে ভাসে আগুন কে ঘিরে থা্কা, পতাকা ধরে রাখা সেই সব ছেলে মেয়ে গুলো। কারণ এই আগুন পাখিরা যতক্ষণ আছে ততক্ষণ পরাজয় আমাদের নয়।
মন্তব্য
পুরা দেশ জাগছে। স্বতঃস্ফূর্তভাবে। এটাই সুযোগ। কালকে গিয়েছিলাম শাহবাগে। আজকেও। অন্যরকম এক ভালো-লাগা অনুভূতি হয় এসব দেখলে।
বইমেলায় মিস করি তোমাকে। ভালো আছো আশা করি।
কী অদ্ভুত ব্যাপার! একজন একজন করে কেমন দেখা হয়ে যাচ্ছে! কথা হয়নি হয়ত, তবু দেখা হতে ভাল লেগেছে!
আপনারা এখন লেখেন না কেন বলেন তো? মাঝে মাঝে পুরনোদের দেখা না পেলে নীড়পাতা কেমন বর্ণহীন লাগে!
ভাল থাকুন, সবসময়!
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
পুরো দেশ আজ জেগে উঠেছে! আইনের ফাঁক গলে আর কেউ যেন বেড়িয়ে যেতে না পারে।
--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি
নতুন মন্তব্য করুন