জীবনের ভীড়ে-৪

নীলকান্ত এর ছবি
লিখেছেন নীলকান্ত (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৩/০৭/২০১৫ - ৬:২৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পর্ব চারঃ ব্লুবেরি

বিল।
গত ৩৫ বছর ধরে ব্লুবেরির চাষ করছে। প্রথমবার গাছ লাগানোর পর ৩ বছর লেগেছিল ফল ঘরে তুলতে। "মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ করিনি তখন। এতগুলো টাকা আর পরিশ্রম।"
"ভালবাসা আর ইচ্ছার কমতি ছিল না।" আমি উত্তরে বললাম। "ইয়াপ, প্যাসন অ্যান্ড উইল দ্যাটস অল আই হ্যাড।"

আমি এই প্রথম এধরনের কোন বাগানে। ছোটবেলায় মামাবাড়িতে ক্ষেত থেকে মরিচ তুলবার কথা মনে আছে। তাও অনেক ছোটবেলায় মা-বাবা আমাদের দুই ভাইবোনকে রেখে ভ্রমণে গিয়েছিলেন। পুরা স্বাধীন জীবন, সারাদিন মাঠে টইটই করে বেড়ানো।

সারাদিনের কাজ শেষে যখন বিলের বাগানে পৌছালাম, তখন বাজে প্রায় রাত ৭টা। এখানে সূর্য ডুবে ৯টায়, অথবা তারও পরে। পার্কিং এ থাকা শেষ গাড়িটা চলে গেলো আমাদের সামনে।

খুব যে সুন্দর জায়াগা তা কিন্তু নয়, কিন্তু অন্যরকম একটা আবেশ আছে। ছোটবেলার সেই মামাবাড়ির কথা মনে পোড়ে গেলো। হাইওয়ের ঠিক পাশেই বিলের বাগান। বাড়ি লাগোয়া। নাতিপুতিরা খেলাধুলা করছে। আর বিল একটা বই হাতে ছোট একটা মাচার নিচে টেবিলে। আমরা গেলে কিছুক্ষণ কথা বলে, একটা বেল্ট আর একটা বালতি ধরিয়ে দিল।
"ইফ আই সি দ্য টাংস আর ব্লু, আই উই আন্ডারস্ট্যান্ড ইউ হ্যাড আ গুড টাইম।" গাল ভরা হাসি বিলের। হাসিতে ক্লান্তির ছাপ।

আগে কখনো ব্লু-বেরি গাছ দেখিনি। বেরি সম্পর্কে একটাই জ্ঞান, গাছের উচ্চতার সাথে সাথে আঙ্গুর জাতীয় ফলের স্বাদ ভিন্ন হয়ে থাকে।

গাছপালা এমনিতেই কম চিনি, আসল কথা হচ্ছে কখনো চেনার চেষ্টা করিনি। গাছ, পাখি, মাছ, এগুলো কখনোই ওভাবে চেনা হয়নি। ইদানীং অবশ্য মনে হয়, একটু আধটু জানা মনে হয় খারাপ না।

হয়তো বেলা শেষ হয়ে আসায় বিল আমাদের সাথে এলো। মৌসুম শেষ প্রায়, যেকোনদিন বাগান বন্ধ করে দিতে পারে। বিল আসলে ফ্লোরিডার কৃষক। ফ্লোরিডার উত্তরে তার ৩ পুরুষের ভিটা, সেসব ছেড়ে সে এখানে। "এক জায়গায় বেশিদিন থাকা ঠিক না, একঘেয়ে লাগে।" বিল বলছিল। "এইখানে একঘেয়ে লাগে না?" আমি প্রশ্ন করায় উত্তর, "এই বয়সে একঘেয়ে লাগলেও কিছু করার নেই।"

বিলের ছেলেমেয়েরা পুরোদস্তুর শহুরে। গ্রীষ্মের ছুটি থাকায় সবাই বেড়াতে এসেছে। বিভিন্নজন বিভিন্ন দিকে।

আশেপাশের গাছগুলোতে কচি বেরি। সামনের দিকে নেই বললেই চলে। বিল গাছের উপরের অংশগুলো দেখালো। "ঐ পর্যন্ত হাত যায় না বিধায়, ওগুলো অনেক বড় আর মিষ্টি হয়।" বলেই সবচেয়ে উঁচু ডালটা আলতো করে নামিয়ে আনলো। "এই দেখো।"

বেরি তোলা শেষে যখন কাউন্টারে ফিরবো তখন প্রায় সূর্য ডুবিডুবি করছে। এক বালতি বেরির দাম হলো ৫ ডলার, যা বাজারে অকল্পনীয়। এখানে আর কৃষকের বাজারেরি খালি নগদ টাকা চলে, কৃষকের বাজারে অবশ্য আজকাল আইফোনের সাথে একটা করে কার্ডরিডার থাকে, যার সাহায্যে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে দাম চুকানো যায়।

বিলকে জিজ্ঞাসা করলাম, পরের সপ্তাহে আসবো কিনা। বিল জানালো পরের সপ্তাহে বন্ধ করে দেবে, কারণ মৌসুম শেষ। বিলকে বিদায় দিয়ে চলে আসলাম। হয়তো আবার আসা হবে, আগামী বছর।

ছবিঃ ব্লুবেরির বাগানে সূর্যাস্ত।

ছবি: 
16/04/2010 - 3:19অপরাহ্ন

মন্তব্য

শিশিরকণা এর ছবি

প্রতিটা পর্বের শিরোনাম একই না দিয়ে সাথে ১,২ ,৩,৪ করে ক্রম যোগ করে দিলে ভালো হয়। কোনতা পরেছি কোনটা পড়িনি, তাল হারিয়ে ফেলছি।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হ, মুইও তাই কই চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

দেবদ্যুতি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।