জীবনের ভীড়ে-৫

নীলকান্ত এর ছবি
লিখেছেন নীলকান্ত (তারিখ: রবি, ২০/১২/২০১৫ - ১২:০৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অগোছালো এবং অসংলগ্ন

জীবনের ডিসেম্বর

জীবনের ডিসেম্বরগুলো সবসময় অদ্ভূত।

হয়তো বা শীতকাল বিধায়। এখন পর্যন্ত এমন কোন অঞ্চলে ডিসেম্বর কাটানো হলো না যেখানে ডিসেম্বর মানে গরমকাল।

প্রথমবারের মতো আমেরিকাতে ডিসেম্বর কাটানো। ছুটির ভাব সবর্ত্র, সারা শহরটা কেমন ফাঁকা। কলেজ টাউন হলে যা হয় আরকি। তার মধ্যে আবার বরফ পড়ে নাই। আমার বান্ধবী কেটি একবার বলছিল, "এইটা কোন জায়গা হইলো ক্রিসমাসে বরফ পড়ে না।" আমি সাথে সাথে বইলা উঠছিলাম, "এইটা যদিও একটা ফালতু শহর, আমার শহর ঢাকা অন্যরকম, ঐখানে ক্রিসমাস আর বরফ না থাকলেও তোমার ভাল লাগবে।" বেটি ভেংচি কাইটা কইলো, "তাইলে তুমি ছাড়ছো কিল্লাই?" আমি খালি মনে মনে কইলাম,"মানুষগুলার লাইগ্যা।"

তিনদিন ধরে বাড়ি যাই না। স্কুলে বসে এক অদ্ভূত জিনিস নিয়ে গবেষণা করি। আমার ৩ মাইল রেডিয়াসে পুলিশ আর বাস্তুহারা ছাড়া আর কেউ আছে বলে মনে হয় না এখন। স্কুলের এক বিল্ডিং এ এক রুমে বসে নিজস্ব গবেষণায়রত আমি এক গ্রাজুয়েট বিদ্যার্থী।

বাসার কথা হঠাৎ হঠাৎ মনে পড়ে। গরম ভাত, আলুসিদ্ধ, ডাল হয়ে গেছে ম্যাক এন চিজ, পিৎজা আর কোক।

পীড়া

স্কুল বন্ধ, কিন্তু গ্রাজুয়েট ছাত্রদের দেখা পাওয়া দুর্লভ বিষয় নয়। বিশেষত যারা রিসার্চ নিয়ে ব্যস্ত।
আমি একরকম রিসার্চ কে টাটা বাই বাই বলে দিয়েছি। একাডেমিক রিসার্চ অনেক দরকারি, কিন্তু সে বস্তু আমার জন্য নয়। অন্তত যতক্ষণ না আদতেই বুঝতে পারি, আসলে কি করতে চাইছি।

প্রশ্নটা যে সবাই ভাবে তা কিন্তু নয়। ল্যাবের একাধিক দুর্দান্ত রিসার্চরা কে জিজ্ঞাসা করলাম। একজন বললো এই হচ্ছে হট টপিক, আর একজন বললো, রিসার্চ না করলে প্রফেসর টেকা দিবে না, আর একজন বললো এই বিষয়টা আমার খুবই পছন্দের। আদতে কি হইতেছে ভিতরে তার মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝলাম না। তিনজন এক বিষয়ে একমত, "তোমার তা না বুঝলেও চলবে।"

আমিও একমত। সবকিছু বুঝার সবার কম্ম না। জিজ্ঞাসা করি, "কাজ তাহলে তো ভাল লাগে নাকি? জ্ঞানের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করছো যে?"
"একদমই না, কে করতে চায় এসব, কিন্তু কি করবো বলো, আমার 'টেকা', 'চাকরি', সিটিজেনশীপ', 'কিছু একটা পছন্দের' করা তো লাগবে নাকি?"

অনিচ্ছা সত্ত্বেও একমত না হয়ে পারলাম না। সত্যিই তো, আমি বা কি আঁটি ছিঁড়তে এইখানে এই ডিসেম্বরে? কোনটা আমার জন্য প্রযোজ্য? হয়তো বছর দেড়েক আগে উত্তর সবগুলোই হইতো। এখন উত্তর পাওয়া অনেক পীড়াদায়ক হয়ে পড়ছে। তাই সব ছেড়ে ছুড়ে ম্যারাথন মারা শুরু করবো ভাবতেছি।

জনতার বিজ্ঞানী

দিন দশেক আগে, আইএলটিএস দিলাম। সেখানে পঠন পরীক্ষাতে দিব্যি এক প্রবন্ধ দেওয়া, যার শিরোনাম অনেকটা, "কেন মানূষ বিজ্ঞানীদের বোঝে না" তো বেশ ভাল কথা। পুরো প্রবন্ধের সাথে একমত আমি। বিজ্ঞানীদের সবকিছু অতি সহজ ভাষায় লেখা উচিত, কারণ বিজ্ঞানের সাথে জীবন ও অজ্ঞানীদের পার্থক্য দিনকে দিন কমছে। বিজ্ঞানী যদি ঠিকমত না বুঝাইতে পারে, কাহিনী হইতেছে কি, মানুষ তার আবিষ্কার দৈনন্দিন জীবনে নাও ব্যবহার করতে পারে। পরের বিষয় হইতেছে, বিজ্ঞানীদের ভুল। বিজ্ঞানীদের ভুলগুলো বাসার চাল-ডালের হিসাবের ভুলের মতো হইতেই পারে, যদিও অনেক সূক্ষ্ম বিষয় তাতে জড়িত। সাধারণ মানুষের উচিত, সেগুলো আসলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখা। কিন্তু কে শুনবে এসব কথা? ১০ টা বৈজ্ঞানিক পত্রিকা অথবা গবেষণাপত্র হাতে নিয়ে পড়লে দশমিক ১ ভাগ বুঝতে পারলে নিজেকে অনেক জ্ঞানী মনে হয়। বাদ দিলাম পত্র-পত্রিকা, ওয়েবপেইজে মাইনষের কারবার বুঝতে গিয়ে মাথা খারাপ লাগে। আসলে করতেছেটা কি?

দেশ

এক বন্ধুর বিশাল বিপদ, টাকা লাগবে। দেশে টাকা আছে, কিন্তু দেশ থেকে নেওয়ার উপায় নাই। কেন? কারণ দেশ থেকে বাইরে টাকা পাঠানো অর্থ দুনিয়ার ক্যাচাল সহ্য করে, বড় অঙ্কের আক্কেল সালামী দিয়ে টাকা পাঠানো। ব্যাচারা দেশে ফেরার জন্য যাও একটু ভাবতেছিল, এই চিপায় তার বাংলাদেশে কাটানো পূর্ব-জীবনের সকল হয়রানি, ছোটখাট ঝুট ঝামেলার কথা মনে পড়ছে। সে আপাতত আর পাগলা গারদে ফেরত যাইতে রাজী না।


ভোর হবার অপেক্ষা

কেউ ফোন ধরেনি। গাড়ির সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে উপরে চলে এসেছি। রাত বাজে ১ টা। সোফাটাতে ঘুমিয়ে পড়বো, কয়েক রাত তো হলোই। গোসল করা দরকার।

গাড়ি স্টার্ট নিচ্ছে না। এই মুহূর্তে, শুধু শুধু কাউকে কল দেবার মানে নাই, নিরাপদ জায়গা ঠিকমতোই আছি। সকাল হলে কেউ না কেউ এসে সাহায্য করতে পারবে।

জীবনের ছোট ছোট ঝামেলাগুলো ঠেকাতে ঠেকাতে, বড় কোনকিছুতে নজর দেওয়া হয়ে ওঠে না। হয়তো কোনদিন হবেও না।

মাঝে মাঝে ঘুমাতে আবার আগে স্বপ্ন দেখি, কাল থেকে জীবন আর জীবিকার চিন্তা করতে হবে না।

ঘুমাতে যাই, এখন আসলেই ভোর হবার অপেক্ষা।


মন্তব্য

তিথীডোর এর ছবি

আম্রিকায় বসে আইএল্টিএস দিলেন? ইয়ে, মানে...

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

রানা মেহের এর ছবি

আহারে!

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

টুকরো টুকরো ঘটনাবলীর টুকটাক বর্ণনা পড়ে ভালো লাগলো।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।