আজ বিকেলটা যেন অন্য সব দিনের চেয়ে আলাদা। রাস্তাটা কেমন ধোঁয়া ধোঁয়া লাগছিল। গাড়ি থেকে নামতে যাচ্ছি, হঠাৎ মাথার কাছে ওয়েদার অ্যালার্ম বিপ বিপ করে বেজে উঠল। আমি বিল্ট-ইন ড্রাইভারের কাছে জানতে চাইলাম, ‘কী সমস্যা শোফার?’
‘স্যার এই মুহুর্তে বাইরের বাতাসে কার্বন পার্টিকেলের মাত্রা তিন শতাংশ বেড়ে গেছে,’ যান্ত্রিক কন্ঠে ড্রাইভার জানাল,‘আপনি যদি একটু অপেক্ষা করতেন তো ভালো হতো। রোড স্ক্যানারে দেখতে পাচ্ছি আট নম্বর রাস্তায় একটা এয়ার পিউরিফায়ারের গাড়ি চলে এসেছে। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে ওটা এখানে পৌঁছে যাবে।’
সরকারী এই সব পিউরিফায়ারের গাড়ির ওপর আমার কোন দিনই আস্থা ছিল না। ‘একটা অক্সি-মাস্ক দাও আমাকে। ’
মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রে উচ্চ পদের চাকরির সুবাদে আমি একটা প্রথম শ্রেনীর গাড়ি পেয়ে গেছি। নির্দেশ অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা এইসব গাড়ির নেই। অন্য কোন গাড়ি হলে পালটা যুক্তি দেখাত। ড্যাশ বোর্ডের একটা অংশ খুলে মাস্ক বেরিয়ে এলো। তবে শোফার আমার স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার দিকটা এড়িয়ে যেতে পারে না, বিনীতভাবে তার যান্ত্রিক কন্ঠে সে অনুরোধ করল, ‘স্যার অক্সি-মাস্ক সব সময় পুরো নিরাপত্তা দিতে পারে না। আপনি অপেক্ষা করলে পারতেন।’
‘তুমি কি বাড়ি স্ক্যান করে বলতে পারো অনী এখন কোন ঘরে আছে?’ আমি প্রসঙ্গ পালটাতে চাইলাম।
‘স্যার, ম্যাডাম এখন ঘরে নেই। পেছনের উঠোনে ইউক্যালিপটাস গাছ দুটোর নিচে বসে আছেন।’
এই গাড়িটাকে প্রোগ্রাম করা হয়েছে আমার শারীরিক সুবিধার কথা মাথায় রেখে, আমার মেয়ের নিরাপত্তার কথা মাথামোটা ডিজাইনাররা ভাবেনি। আমি ক্রুদ্ধ স্বরে নির্দেশ দিলাম, ‘গাড়ি গ্যারেজে ঢোকাও।’ মাস্ক মুখে লাগিয়ে দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম। বাতাসে বিষাক্ত পদার্থের মাত্রা যদি বেড়ে গিয়ে থাকে তো আমার প্রাপ্ত বয়স্ক শরীরে সইতে পারে, কিন্তু অনীর বয়স আট বছর মাত্র- ওকে দ্রুত ঘরে নিয়ে যাওয়া দরকার।
অন্য কোন দিন হলে অনী ‘বাবা-বাবা’ বলে ছুটে এসে আমার কোলে লাফিয়ে পড়ত। আজ বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যে পা দিয়ে আমার শরীর শিউরে উঠল। কিছু হয়েছে কি? সিকিউরিটি সিস্টেম সমস্যায় পড়েছে কোন? প্রধান দরজায় হাত দিতেই সেটা কড়কড় শব্দে খুলে গেল।
আমি চটপট সবগুলো ঘর পার হয়ে পেছনের উঠোনে এসে নামলাম। বিকেলের রোদ চিরে চিরে দিয়ে চলে যাচ্ছে উন্মক্ত বাতাস। ইউক্যালিপটাস গাছের পাতা উড়ে চলে যাচ্ছে এদিক ওদিক। আমার দিকে পেছন ফিরে মাথা নুইয়ে উঠোনের মাঝখানে বসে আছে অনী। আমি এসেছি এটা বুঝতে পারেনি এখনও ? এগিয়ে গিয়ে ওর কাঁধে হাত রাখলাম, ‘ওঠো মা, এখানে বসে কেন?’
চুলের ফাঁক দিয়ে আমার দিকে তাকাল মেয়েটা, ঘড়ঘড়ে পুরুষালী কন্ঠে বলে উঠল, ‘যখন বলছিলাম তখন তো কথা কানে ঢোকে নাই। এখন কথা বইলা লাভ কী?’
আমি হাত সরিয়ে ছিটকে উঠে দাঁড়ালাম। এ কন্ঠ কার? অনীর হতেই পারে না- সে কখনোই আমার সাথে এই ভাষায় কথা বলবে না। কিছুক্ষণের জন্য বোধহয় কথা বলতেও ভুলে গেলাম আমি।
‘আমারে তুই চিনিস না,’ আমার দিকে একটা আঙ্গুল তুলে লাল চোখজোড়া বড় করল অনী, ‘নিজের ব্যবস্থা আমি নিজেই করতে পারি।’
শেষ বিকেলের তীব্র হাওয়ায় অনীর মাথার চুলগুলো এদিক ওদিক উড়ছে। তার মুখে ফুটে উঠেছে শীতল এক টুকরো হাসি। তীব্র আতংক নিয়ে আমি তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
****
ডা. জিশান শা’নজর মিনিট পাঁচেক মাত্র আমার কথা শুনলেন তারপর এমন ভঙ্গিতে অন্য দিকে তাকাতে লাগলেন যেন আর কিছুই বুঝতে বাকি নেই। টেবিলের ওপর কলিং সুইচে চাপ দিতেই একজন পুরুষ নার্স এসে চেম্বারে ঢুকল। তার দিকে ফিরে চাপা গলায় ডা বললেন,‘কেস নাম্বার নাইন- ফাইল সেভেনটি সেভেন।’ নার্স লোকটা নির্বিকারভাবে বায়বীয় স্ক্রিনে আঙ্গুল বুলিয়ে কেসটা লিখে ফাইল সেভ করে বাইরে বেরিয়ে গেল।
পুরো ব্যাপারটা তাহলে কোডিঙের অন্তভুর্ক্ত। নয় নম্বর কেস কোন বিশেষ রোগের নাম আর অনীর নম্বর এখানে সাতাত্তর। এর আগে কি ছেয়াত্তর জন রোগি এই অসুখে এখানে ভর্তি হয়েছে? আমি হুইল চেয়ারে বসানো অনীর দিকে তাকালাম। ওর হাত দুটো স্ট্র্যাপ দিয়ে চেয়ারের হাতলের সাথে বাঁধা। গভীর অভিমান নিয়ে সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ওর ঠোঁটদুটো নড়ে উঠল। আমি শুনতে পেলাম না, তবে দেখলাম, ‘বাবা, খুলে দাও।’
ডা. জিশান অনীর তাকিয়ে খানিক্ষণ থুতনী চুলকালেন, ‘মেয়ের মা কোথায়?’
বছর তিনেক আগে অনীর মায়ের সাথে আমার ডিভোর্স হয়ে যায়। ত্রয়নার অভিযোগ ছিল আমি আমার ক্যারিয়ারের কথা ভেবে পরিবারকে বেশি সময় দেই না। পারিবারিক বন্ধন ব্যাপারটা আজকাল আর তেমন জরুরী কিছু নয়,তাই দিন পনেরোর মধ্যেই সব শেষ হয়ে যায়। ত্রয়নাকে যেতে দিলেও আমি অনীকে যেতে দেই নি। অনী নিজেও আমাকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারে না। শুনেছি ত্রয়না এখন কোন এক ছন্নছাড়া আর্টিস্টের সাথে থাকে। আমি সংক্ষেপে ডাক্তারকে ব্যাপারটা খুলে বললাম। তিনি সব শুনে মাথা নাড়লেন,‘মেয়ের মাকে আসতে বলুন। আপনাদের দুজনেরই ডিএনএ পরীক্ষা করতে হবে।’
‘এটা কি কোন জেনেটিকাল মানসিক রোগ ডাক্তার সাহেব?’
‘মানসিক রোগ তো নিশ্চয়ই। তবে জেনেটিকাল কিনা তা এখনই বলা যাবে না। আপনি একজন মহাকাশবিজ্ঞানী, আপনি জানবেন- মানুষ মহাকাশ সম্পর্কে এত কিছু জেনে ফেলেছে অথচ মানুষের মন সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না। আসলে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ মানসিকভাবে আলাদা।’ ডা. জিশান তার চেয়ারে হেলান দিলেন, ‘দেখেছেন তো, একই পরিবারের পাঁচটা বাচ্চা পাঁচ রকমের আচরণ করে? কেন করে? কারণ, এই পৃথিবীর বাস্তবতা-পাঁচজনের কাছে পাঁচ রকম। ইয়ে, আপনি এসকেপিজম বোঝেন?’
‘বাস্তবতা থেকে পালিয়ে বাঁচার কথা বলছেন?’
‘ঠিক তাই। আমার পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, অনীর এই অসুখটা হয়েছে এসকেপিজম থেকে। ছোটবেলা থেকে তো আপনি আপনার মেয়েকে দেখেছেন। আমি বলব, আপনি নিজেই হিসেব করে বের করুন আপনার মেয়ে ঠিক কোন কোন ক্ষেত্রে আঘাত পেয়ে শেষে বাস্তব পৃথিবী থেকে পালিয়ে বাঁচতে চাইছে।’
আমি অবাক হলাম,‘ওর এই উদ্ভট আচরণের সঙ্গে এসকেপিজমের সম্পর্ক কী?’
ডা. জিশান উঠে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন। জানালার কাচে কার্বন জমে কালচে হয়ে গেছে। হাত দিয়ে সেটা মুছতে চেষ্টা করলেন। ‘এই অসুখটাকে বলে মাল্টিপল পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার। ধরুন, পৃথিবীটা যেভাবে সাজানো আছে তা আপনার পছন্দ নয়। নিজের জীবনটাকে নিয়ে আপনি সুখী নন। এই অবস্থায় আপনার ভেতরে জন্ম নিতে পারে আরেক সত্তা। আপনার সচেতন মন হয়তো জানেই না, কীভাবে কখন নিজেকে ভেঙ্গে আপনি আরেকটি সত্তাকে নিজের ভেতরে স্থান দিয়েছেন।’
এক রাশ অবিশ্বাস নিয়ে আমি মাথা নাড়লাম, ‘এটা কীভাবে সম্ভব?’
‘আপনি ব্যস্ত মানুষ, হয়তো এসব নিয়ে পড়াশুনা করার সময় আপনি পান নি। গত চার শ বছরের হিসেব ঘেঁটে সারা পৃথিবীর হাসপাতালগুলো থেকে আমরা কয়েক হাজার এমপিডি রোগীর রেকর্ড যোগাড় করেছি। কেন জানেন?’ ডা জিশান টেবিলে ভর দিয়ে আমার দিকে ঝুঁকে পড়লেন, ‘এই মুহুর্তে আমাদের হাতে অনী সাতাত্তর নম্বর রোগী। এবং এই সংখ্যাটা ক্রমেই বাড়ছে।’
‘কেন ডা. জিশান? হঠাৎ এই রোগের প্রকোপ এত বেড়ে গেল কেন?’
ভয়াল কন্ঠে হেসে উঠল অনী। ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে ঘড়ঘড়ে গলায় বলল, ‘যা বলতেছি কর ব্যাটা, আমার বান্ধন খুইলা দে!’
আমি ডাক্তারের দিকে তাকালাম। তার কপালে ফুটে উঠেছে বিন্দু বিন্দু ঘাম। তিনি পানির গ্লাসের দিকে হাত বাড়ালেন।
****
নবীনগরের প্রায় পঁচিশ একর জায়গা নিয়ে তৈরি হয়েছে চাইল্ড সাইকো এসাইলাম নামের আধুনিক এক মানসিক হাসপাতাল। দ্বৈত সত্তা নামক উদ্ভট এই অসুখটি বাচ্চাদের মধ্যে ক্রমেই বাড়তে থাকায় সরকার বাধ্য হয়েছে আলাদা করে একটা হাসপাতাল স্থাপন করতে। বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে এটা কোন হাসপাতাল। আরো ছেয়াত্তর জন বাচ্চার সাথে অনীকে রেখে আমি বাসায় ফিরছিলাম, তখনই বুঝতে পারলাম বাচ্চার বাবা-মা ছাড়া আর অন্য কেউ এই এসাইলামের খবর জানে না। একবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি দাঁড়িয়েও যে বাচ্চার অসুস্থতা নিয়ে বাবা-মায়েরা এমন হীনমন্যতায়ে ভোগে তা আমার ধারণারও বাইরে ছিল। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব কী বলবে এই নিয়ে অভিভাবকেরা এতই চিন্তিত যে তারা কাউকে এই বিষয়ে কিছুই বলেন না। তার ওপর সরকার থেকে পরোক্ষভাবে ওই সব বাবা-মায়েদের জানানো হয়েছে যে এ ব্যাপারে মুখ খোলা হলে সব রকম আধুনিক সুযোগ সুবিধা থেকে তাদের বঞ্চিত করা হবে। অসুস্থ এক বাচ্চার বাবা এসাইলামের গেট থেকে ফিরছিল। আমি তাকে এই নিয়ে প্রশ্ন করলাম। লোকটা কেমন আমতা আমতা করতে লাগল।
‘আপনি তো সব জানেন। …আপনি তো সব জানেনই।’
‘দেখুন, আমার মেয়েকে আমি এখানে রেখে চলে যাচ্ছি,’ আমি ভিন্ন পথ ধরলাম, ‘যাদের সঙ্গে সে এখন আছে তাদের কেউই নিজের স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। আমাকে তো নিজের মানসিক স্বস্তির একটা ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে। সরকার কেন এ ব্যাপারটা চাপা দিতে তা চাইছে আমার জানা দরকার।’
ভদ্রলোক কিছুটা ভয় পেয়েছেন বলে মনে হলো। আমাকে তিনি সরকার-বিরোধী দলের বড় কোন সদস্য ভেবেছেন কিনা বুঝলাম না। তার সাথে কথা বলে জানলাম ক্রমবর্ধমান এমপিডি রোগীদের নিয়ে সরকার এখন বেশ ঝামেলায় পড়েছে। বাচ্চাদের শারীরিক এবং মানসিক নিরাপত্তার বিষয়টা বিরোধী দলের হাতে একটা বড় ইস্যু। মওকা বুঝে মানবাধিকার এবং শিশু অধিকারবিষয়ক সংগঠনগুলোও সরকারকে আরো চাপের মধ্যে ফেলবে। সর্বোপরি, জাতিসংঘের শিশুনিরাপত্তা বিষয়ক সংগঠনগুলো নতুন সব নিয়ম-নীতি তৈরি করেছে। তারা আবার বিপত্তিকর কোন প্রতিবেদন প্রকাশ না করে বসে তাই নিয়ে সরকারের ভেতরমহলে কানাঘুষো চলছে। সুতরাং যে কোন মূল্যে এই প্রসঙ্গ জনসাধারণের কাছ থেকে আড়াল করতে হবে। আমার মনে হলো রোগটা ছড়িয়ে পড়ার পেছনে পরোক্ষভাবে সরকারের কোন কমর্কান্ড জড়িত কি না সেটাও খতিয়ে দেখার বিষয়।
আমি বাসায় ফিরে প্রথমেই অফিসে ভিডিও মেল করে জানিয়ে দিলাম মেয়ের অসুস্থতার জন্যে পাঁচ দিনের ছুটি চাই। ফিরতি মেল আর ফোন করার সব রাস্তা বন্ধ করে দিলাম। নইলে এখুনি অফিস থেকে চার-পাঁচজন ফোন করে মেয়ের খবর জানতে চাইবে। আমি আসলে মাল্টিপল পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার নামক এই বিশ্রী রোগের মূলে পৌঁছতে চাইছি। এখন কেউ আমাকে বিরক্ত করুক তা চাই না।
অন্তর্জালের মহাসমুদ্র ঘেঁটে জানতে পারলাম এমপিডি মোটেই বর্তমান কালের কোন রোগ নয়। গত কয়েক শতক ধরেই মেডিকেল সায়েন্স এই রোগের সাথে মোকাবেলা করে আসছে। এবেরহার্ট গেমলিনকে বলা হয় এই রোগের প্রথম রোগী যাকে নিয়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানের কিছু নথিপত্র পাওয়া যায়। উনিশ শতকে লুইস ভিভে নামক এক লোককে নিয়ে সবচেয়ে বেশি গবেষণা করা হয়েছিল কিন্তু সেই সময় উল্লেখযোগ্য কোন ফলাফল আসেনি। ১৮৪০-এ এসেলস নামের এগার বছরের এক সুইস মেয়ের কথা জানা যায় যে ছিল প্যারালাইসিসের রোগী, কিন্তু প্রতিবার দ্বিতীয় সত্তার আবির্ভাবে সে হাঁটাচলা করতে পারত। ঘন্টা তিনেক পড়াশুনো করে বুঝতে পারলাম এখন অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের সহায়তা নিতে হবে। পারসোনাল ই-সেক্রেটারি রোহিনীকে বললাম পৃথিবীর খ্যাতনামা চিকিৎসকদেরকে আমার পরিচয় জানিয়ে একটা মিটিঙের আয়োজন করা যায় কিনা দেখতে।
সেদিনই রাত এগারোটার সময় আমার ভিডিও কনফারেন্স হলো শ্রীলঙ্কার চাইল্ড সাইকোলজিস্ট ডা. মৃদুলানাভন, হাঙ্গেরির নিউরো ফিজিশিয়ান ডা. এন্ড্রু বয়লার আর রাশিয়ার ব্রেন সার্জন ডা. ভ্লাদিমির তিখভের সাথে। রোহিনী পুরো কনফারেন্সটা রেকর্ড করে নিতে শুরু করল আমার হলো-রেকর্ডারে। তিনজন চিকিৎসকের সাথে আমার বক্তব্য সাজাতেই ব্যাপারটা দাঁড়াল এরকম:
১. ছোটবেলায় আমাকে আর ত্রয়নাকে লেখাপড়ার জন্য প্রচন্ড চাপ দেয়া হতো। ভোরবেলা ঘুমভাঙ্গা চোখে দেখতাম আমাকে স্কুলের পোষাক পরানো হচ্ছে। বাবা আমাকে ঘুমন্ত অবস্থায় কোলে করে স্কুলে নিয়ে যেতেন। লেখাপড়ার এই চাপ থেকে বাচ্চারা আজও মুক্তি পায়নি। জিনগতভাবে অনী এখন মানসিক অসুস্থতা বয়ে বেড়াচ্ছে। কয়েক প্রজন্ম ধরে তৈরি করা এই চাপ এখন ফল হয়ে বেরোতে শুরু করেছে।
২. বাবা-মায়ের দ্বন্দ কোন সন্তানই মেনে নিতে পারে না। এই সময়ের শিশুরা বাবা অথবা মা যে কোন একজনকে বেছে নিতে গিয়ে নিজের ভেতরে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। ফলে তারা বাস্তব পৃথিবী থেকে ছুটি চায়।
৩. আধুনিক যন্ত্রসভ্যতা অন্ধভাবে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে। বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে বিষাক্ত গ্যাস। মস্তিস্কে ঠিকভাবে অক্সিজেন না পৌঁছালে যে কোন ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে। শুধু এমপিডি রোগীর সংখ্যাই যে বাড়ছে তা নয়, নিশ্চিতভাবে অন্যান্য মানসিক বিকারে জনসাধারন পড়তে শুরু করেছে।
আমি রোহিনীকে বললাম সকালে একটা সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করতে। রোহিনীর স্বচ্ছ হলোগ্রাফিক চোখে কৌতুহল ফুটে উঠতে দেখলাম, যদিও মুখে কিছুই বলল না।
সকাল হতেই জনা পনের সাংবাদিক আমার বসার ঘরটা দখল করে নিল। আমি সবার সামনে আমার প্রাপ্ত তথ্য ও মতামতগুলো তুলে ধরলাম। তাদের তরুণ চোখে রাজ্যের প্রশ্ন। ‘স্যার, আপনি কি মনে করেন আপনি যা বলছেন তাই সত্যি?’
আমি একটু হেসে বললাম,‘সব ধারণা তো আমার একার নয়।’ ভিডিও কনফারেন্সের রেকর্ডটা চালিয়ে দিলাম। পুরোটা দেখে সবাই অবাক! অন্য দিকে সরকারী গোপনীয়তা কিভাবে ধরে রাখা হয়েছে দেখে আমিও অবাক হলাম। নবীনগরের চাইল্ড সাইকো এসাইলামের ব্যাপারটা একজন সাংবাদিকও জানেন না! মিনিট দশেকের মধ্যেই সংবাদ মাধ্যমগুলো বিষ্ফোরণ ঘটানোর নাটকীয়তা মিশিয়ে পরিবেশন করল খবরটা । আমি যথাসম্ভব দ্বিতীয় দফা সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়াটা এড়িয়ে গেলাম। দুপুর নাগাদ পেশাদার সাংবাদিক, দাঙ্গা পুলিশ আর কৌতুহলী সাধারন মানুষের বন্যায় ভেসে গেল নবীনগর এলাকা।
বিকাল পাঁচটার দিকে একটা ভিডিও মেইল পেয়েছি। মহাকাশ গবেষনা কেন্দ্রের এডমিন সেক্রেটারি আমাকে জানাচ্ছেন ‘কাজে অসামর্থতার পরিপ্রেক্ষিতে’ আমাকে আমার পদ থেকে অব্যহতি দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ আমার লোভনীয় সরকারী চাকরির এখানেই ইতি।
আমি প্রাণ খুলে হাসতে লাগলাম। আমার খুব ইচ্ছে হলো এই হাসিটার ভিডিও মেইল করে মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেই। কিন্তু সেটা ঠিক হবে না, গবেষনা কেন্দ্রের হর্তাকর্তারা সেটাকে গণ মাধ্যমে প্রকাশ করে দেখাবেন যে আমি আসলে মানসিকভাবে অসুস্থ। কথাটা আমি অস্বীকার করি না। বিষাক্ত পৃথিবী আমাদের সবাইকেই একটু একটু করে গ্রাস করে নিচ্ছে। সুস্থ থাকাটা এখন কতটাই বা সম্ভব?
****
আজ বিশ্বজুড়ে এমপিডির বিরুদ্ধে এই সামাজিক আন্দোলন ‘মুভমেন্ট সেভেনটি সেভেন’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার উদিয়মান শিল্পী সন্ডি সালেমের আঁকা অনীর হাসিমাখা মুখটা এই আন্দোলনের লোগো হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই তো সেদিন মন্ট্রিয়ল থেকে পাঁচ তরুণ আমাকে ফোন করে বলল, ‘কোন চিন্তা করবেন না স্যার। ভবিষ্যত প্রজন্মকে বাঁচানোর লড়াইয়ে আমরাই জিতব।’
আমি হেসে বলি,‘জিততে আমাদের হবেই। হেরে যাওয়ার কথা আমরা কখনো ভাবব না।’
মন্তব্য
মডারেটরের সাহায্য চাইছি। দুটো ছবি চলে এসেছে কেন জানি না।
দয়া করে একটা সরিয়ে দিন।
ঠিক আছে, সরাতে পেরেছি।
আসাধারন! নিলয়দা, এখন কিন্তু লোগটাই দেখা যাচ্চজে না।
আমি সাহারা খাতুনের কাছে কমপ্লেইন দিতে যাচ্ছি।
৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এর একটা হেস্তনেস্ত হয়ে যাবে।
জীবনের যে কোন এক জটিল দুর্ঘটনায়, (যাকে এখনো স্বপ্নে বলেই মনে হয়) পিডি ও সিজোফ্রেনিক পেশেন্টদের খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম।
আপনার লেখাটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু বেশ কিছু ভালো তথ্য এবং সামাজিক দৃষ্টিকোণ কিছুটা হলেও ছাপ ফেলে ফেলে এগিয়েছে।
শুভ কামনা
ভালো থাকুন।
লেখাটা সংক্ষিপ্ত?
আমার তো মনে হয়েছে যাঁরা আমার অনুগল্প পড়ে অভ্যস্ত তাঁরা এত বড় গল্প পড়বেনই না!
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
বিষয়টি এমন ব্যাপক নির্বাচন করেছেন যে গল্পের সাইজ যাই হোক তা ইলাস্টিক এর মতো ছোটই লাগবে। আর গল্পের বিস্তৃতি তার বিষয় এর উপরেই নির্ভর করে আর লেখকের লেখনীর যাদু
আপনি যতো বড়ো করে পেশ করবেন পাঠকের মনে হবে এইতো শুরু হলো তাতেই শেষ ??????
হিউম্যান সাইকোলজি আমার অন্যতম প্রিয় বিষয়।
আপনার 'কাছ থেকে দেখা'র অভিজ্ঞতা নিয়ে একটা পোস্ট আশা করছি।
সত্যি কথা হলো আমার পোষ্ট ছাপে না সচল
মনে হয় লেখার হাত খুবই খারাপ। কিন্তু নিজেকে নিজের কাছে শ্রেষ্ঠ মনে হয়
হিউম্যান সাইকোলজি আমার "বাঁচতে হলে জানতে হবে" টপিক হয়ে যায় তখন যখন ঐযে বলেছি দুর্ঘটনায় তাদের কাছে থেকে দেখে সব মিলে আর এর আগে বড় বোনের পাঠ্য সাইকোলজি বইখানার প্রতি ছিলো সীমাহীন আগ্রহ।
প্রখর ভাই, হাল ছেড়ে দিয়েন না। এক কাজ করতে পারেন। লেখা শেষ হওয়ার পর সচলে জমা না দিয়ে একদিন রেখে দিন। অন্যান্য কাজ করুন। রাতে আরেকবার পাঠক হিসেবে লেখাটা পড়ুন, অথবা বাসার কাউকে পড়ান। পাঠক হিসেবে আপনার লেখাটা কেমন লাগলো সেই বিচার করুন। বানান এর দিকে খেয়াল করুন, এমন না সচলের সব লেখায় বানান পুরোপুরি শুদ্ধ থাকে, কিন্তু চেষ্টা করুন প্রচলিত শব্দগুলোর বানান অন্তত যেন ঠিক থাকে। এর পর নিজে সন্তুষ্ট হলে সচলে জমা দিন, দেখবেন প্রকাশ হয়ে যাবে।
শুভ কামনা রইলো।
লেখা কিছু দিন ফেলে রাখার ব্যাপারটা কিন্তু খুবই কার্যকরী।
এ প্রসঙ্গে বঙ্কিমচন্দ্রের একটা লেখায় পড়েছিলাম কোন ধরনের লেখা কত দিন ফেলে রাখতে হবে।
দুঃখের বিষয় এই মুহুর্তে সেই লেখাটা হাতের কাছে নেই।
প্রখর-রোদ্দুর, চেষ্টা চালিয়ে যান।
প্রখর রোদ্দুর ভাই, সাফি ভাইয়ের কথা একবারে ঠিক। ছাপানোর আগে রিভাইস দিয়া দেখেন নিজের পছন্দ হয় কিনা। আমি আগ বাড়ায়া একটা বুদ্ধি দিয়া যাই, সচলের জন্য লিখতেসেন ঐভাবে লিখার দরকার নাই। আপনের ছোট ভাইর জন্য লিখতেসেন ঐ স্টাইলে লেখেন। লিখা যেন আপনি যেভাবে কথা বলেন তার কাছাকাছি থাকে।
ট্রাই করে দেখতে পারেন। আপনার পোস্ট পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।
..................................................................
#Banshibir.
এমপিডি নিয়ে মুভি দেখেছি, বই পড়েছি বলে আগেই জানা ছিল ব্যাপারটা। আপনার লেখনী ও বেশ।
কয়েকটা 'অসাম' মুভি আছে এমপিডি নিয়ে।
এই বিষয়ে কোন বই অবশ্য পড়া হয় নি।
খুব ভালো লাগলো লেখাটা। একটি শিশুর বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে পারিবারিক একটি সুন্দর পরিবেশের প্রয়োজনীয়তা অসীম। এক্ষেত্রে বাবা ম্যায়ের মধ্যে সুসম্পর্কের বিকল্প নেই।
গল্প বর্ণনা করার ধরণ চমৎকার লেগেছে। কিন্তু বিষয়বস্তু এমন, কাহিনী শেষ হয়ে যাওয়াতে ঈষৎ সংক্ষেপিত বলতে ইচ্ছা করছে।
স্টোরি টেলিঙের কৌশল যতটুকু জানি, তাতে বুঝেছি অনীর অসুস্থতার কারণ তিনটি উল্লেখ করার পরে পাঠকের আর গল্পের প্রতি আকর্ষণ থাকবে না। সুতরাং আগ্রহের সুতো ছিঁড়ে যাবার আগেই নটে গাছটা মূড়িয়ে ফেলতে হবে। তবে, বেশি সংক্ষিপ্ত হয়ে গেছে কি?
ইয়ে, তিনটি গ্রাফিক্সের সফটঅয়ার আর একটা মাথা খাটিয়ে লোগোটা বানালাম। কেউ কিচু বলচেন না যে
কিছু দেখতে পাচ্ছি না বলে
যে তিনটি কারণ দেখানো হয়েছে তার প্রতিটাকেই আমি শিশুদের সুস্থভাবে গড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় বলে মনে করি।
ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগল।
এই একটা জায়গাতে দাদা ব্যাপক মজা পাইছি! বুঝলুম, ডাক্তারের প্যাঁচাল শুইনা অনী আপুর মাথা পুরাই হট হইয়া গেছিল! পুরাই লুল!
পুরোটা পড়ার পর ক্যান জানি মনে হইতেছে, আমি এমপিডি রোগী (ফাইল নাম্বার সেভেনটি এইট)! বুঝতেছি না কিছু! ডা. জিশান-রে দেখান্ লাগবো! উনি বসেন কই? নবীনগর? :পি
লেখা মিঠা হইছে! তয়,অণুগল্প-ই টেস্টি!
গল্পের পটভূমি ২০৪০-৪৫ সাল।
আপনি আর কিছু দিন পরে মানসিক রোগী হন। ডা. জিশান তো এখন কার্টুন নেটওয়ার্ক নিয়ে ব্যস্ত।
অণুগল্প নেহায়েতই বাই-প্রোডাক্ট। তবে সেটাও পাবেন সময় হলেই।
****************************************
ভাল্লাইগছে
ধন্যবাদ উদাস দাদা।
ছবি আসেনা
এত জলদি শেষ করার কারণ কি? ভালোই তো চলতেসিল।
..................................................................
#Banshibir.
কাম সারছে রে ভাই ! এই বার লোগো গুম !
কই যাই?
জবাবে জোশ আছে জনাব, জব্বর জুতের হাসি পাইলাম
এমপিডি অথবা ডিআইডি আমার অসম্ভব আগ্রহের একটা বিষয় । এ পর্যন্ত এই ব্যপারে যত মুভি পেয়েছি দেখেছি, যত বই পেয়েছি পড়েছি। আপনি এটা নিয়ে লিখেছেন দেখে দারুণ লাগল। আর সবচেয়ে বড় কথা এমপিডি নিয়ে লিখলেও এ গল্পের স্বাদটা একটু আলাদা। দারুণ লাগল
থ্যাংক্যু !
ডিআইডি? এ্যাব্রিভিয়েশনটা একটু ক্লিয়ার করতে পারেন?
dissociative identity disorder । ইদানীং অনেকে এটাকে এই নামে ডাকে।
এইটা আপনার সেকেন্ড বেস্ট। বেস্ট হচ্ছে পন্ডিতের খরম
মানে... নামটা বোধহয় ছিল হরি পণ্ডিতের দিনলিপি।
তা জানি। কিন্তু আমার কাছে ঐটা পন্ডিতের খড়ম (আগেরবার এই বানান ভুল লিখছি)।
ভালো লাগলো।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
ভালো লাগলো। কিছু জানাও হলো বটে।
ভাই, লেখা ভালই হইছে, কিন্তু আপনার অণু গল্প গুলার তুলনায় কিছুই না, আপনার অণু গল্পে চিন্তার খোরাক থাকে বেশি, অণুগল্প ছাড়েন কিছু জলদি।
অণুগল্পগুলো একেবারে খেলার ছলে লেখা রে ভাই !
বরং গল্পগুলো লেখি অনেক যত্ন নিয়ে।
ছবিটা আরেকবার আপলোডিয়ে দিলাম।
দেখি আবার গুম হয়ে যায় কি না।
নিলয়দা, এবার গুম হয়নি।
গল্পটা দারুণ! ছবিটা খুব সুন্দর।আপনার আকা নাকি?
ছবি কো
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
সচলে যাঁরা রহস্য/গোয়েন্দা গল্প লিখছেন তাঁদের জন্য ভাল প্রশ্ন হতে পারে এটা !
দু'বার ছবি আপলোড করেছি, দু'বার গুম হয়েছে।
এই মুহুর্তে কিন্তু আমি ছবিটা দেখতে পারছি। নাকি এটা আমার চোখের ভুল?
সামান্য একটা ছবি নিয়ে এসব কী চলছে???
কইলেই হইলো? আপনি যে ছবিটা দেখতে পারছেন তার একটা প্রমাণ দেন দেখি অন্তত একটা স্ক্রিনশট? ঐ দেখেন নিচে, ছবি নিয়া হাহাকার।
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
কাল রাতে আপনার এই কমেন্ট পড়ার সময় ছবি ছিল। আজ সকালে নেই।
"মাঝে মাঝে তব দেখা পাই..."
একেবারে ছেলেমানুষি ব্যাপার হয়ে যাচ্ছে, এই নিয়ে আর কথা বলতে চাচ্ছি না।
খুল ডাউন
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
খুল্ডাউনেই আছি।
টেকনিকাল প্রবলেম ছাড়া আর কিছু না।
অফিসে দেখি না, অথচ বাসায় ল্যাপটপে দিব্যি দেখা যায় !!!
সচলের মন্তব্যে ছবি যোগ করাটা একটা হ্যাপার ব্যাপার। নয় তো আপনার কথা মতো স্ক্রিন শটই দিয়ে দিতাম। কেউ কি 'ইউআরএল দৈর্ঘ্য-প্রস্থ' বুঝিয়ে দিতে পারেন আমাকে?
গল্পটা দারুণ লাগল নিলয়দা।
তবে ছবি নাই ক্যান?
অলি বার বার ফিরে আসে, অলি বার বার ফিরে যায়।
যখন আসে পাই না দেখা,
তবু চলে গেলে লাগে ব্যাথা !!
আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যত নিয়ে এমনিতেই চিন্তায় আছি, আপনার গল্প সেই আশংকাকে আরো বাড়িয়ে দিল।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
৩/৪ বছর বয়সের শিশুদের জোর করে লেখাপড়ার দিকে ঠেলে দেয়াটা স্রেফ ব্যবসা ছাড়া আর কিছু না।
আপনি লক্ষ্য করুন, আপনার এলাকায় হয়তো হাজার দুয়েক ৩ বা সাড়ে ৩ বছরের শিশু আছে।
এদের বাবা-মাকে যদি বোঝানো হয় যে এখন থেকেই বাচ্চাকে স্কুলে পাঠাতে শুরু করুন, তারা স্কুলে গিয়ে পড়বে না শুধু খেলবে আর খেলার ছলে পড়াশুনার বিষয়টা বুঝে নেবে তাহলে ব্যবসার জন্য 'পন্য' যোগাড় করা হয়ে গেল।
এক সময় বাবা-মা অন্যদের দেখে প্রভাবিত হয়ে বাচ্চাকে স্কুলে পাঠাতে শুরু করেন। একবারের জন্যেও ভাবেন না শিশুর মানসিক বিকাশের জন্য যে পরিবেশ আর উপযুক্ত/প্রশিক্ষিত শিক্ষক এই সব স্কুলে দরকার তা আদৌ এখানে নেই।
আমি ভাবতেও পারি না নিজের বাবা-মা যদি এই আধুনিক শিক্ষার ফাঁদে পা দিয়ে সন্তানের বিপরীতে গিয়ে দাঁড়ায় তাহলে বাচ্চাটা যাবে কোথায় !
ছবি এখনো আসেনাইক্কা। গপ্প অসাম। তয় কথা হইল আমরা কম বেশি সবাই দ্বৈত স্বত্তার অধিকারী। অনেক ক্ষেত্রে বোধহয় দ্বৈত-তেও কুলায় না। একেক যায়গায় আমাদের একেক রূপ।
গল্পটা আসলে নির্দিষ্ট একটা মানসিক রোগ নিয়ে।
আপনি যেটা বলতে চাইছিলেন সেটা সুনীল তাঁর আত্মজীবনী 'অর্ধেক জীবন' -এ উল্লেখ করেছেন। একটু উদ্ধৃত করি:
"সেই ব্যক্তিকে খুশি করতে পারলেই আমার চাকরি হয়ে যাবে। বাবা যেন আশার আলো দেখতে পেলেন। এক রবিবার সন্ধ্যেবেলায় বাবা আর জ্যাঠাদের সাথে সুবোধ বালকের মতন আমি বেলেঘাটায় গেলাম সেই ব্যক্তিটির বাড়িতে। মানুষের কত রকম পরিচয় থাকে, প্রেমিকার চোখে আমি উদীয়মান কবি, কফি হাউসের বন্ধুদের কাছে কড়া সম্পাদক, প্রেসের মালিকের কাছে আমি চতুর প্রতারক, আর এখানে আমি ভিজে বেড়াল বেকার সেজে যাচ্ছি গুরুজনদের সাথে।"
(পৃষ্ঠা ১৮৩)
নতুন মন্তব্য করুন