আমার কাজটা খুব ঝঞ্ঝাটের। এক গ্রহ থেকে অন্য গ্রহে খনিজ পদার্থ আনা নেয়া করি। আজ থেকে শ’খানেক বছর আগের প্রযুক্তিতে চললে বোধহয় এক জীবন লেগে যেত গন্তব্যে পৌঁছতে। হাইপার ডাইভ প্রযুক্তিতে চলি বলে প্রায় হাজার বছরের পথ পার হই এক দিনে। তারপরও ভাল লাগে না। কোথায় সেই সিনর গ্রহ আর কোথায় এই মলানটেক ! ক্লান্তিতে দু’চোখ বুজে আসে। গাঢ় অন্ধকারের ভেতর দিয়ে আমি তাকাই স্ক্রিনে ভেসে ওঠা নটিরা গ্রহের দিকে। হ্যাঁ, এই গ্রহের মাটিতে নেমে একটু হলেও ঘরে ফেরার তৃষ্ণা মেটে আমার। ভীষণ অতিথিপরায়ণ এর অধিবাসীরা।
আমি চালাই কখনো নিজের জাহাজ, কখনো বা আমার প্রতিষ্ঠানের। আমার ওপর আস্থা আছে বলে তারা নতুন নতুন সব জাহাজ নির্দ্বিধায় আমাকে চালাতে দেয়। আমি আসা-যাওয়ার পথে সম্ভব হলেই নটিরায় নামি। মিথ্যে বলব না, এই গ্রহের একজনকে আমার ভারী ভালো লেগেছে। অবাক হয়েছি পৃথিবীবাসীদের মতোই তার কালো চুল দেখে। আমার পার্থিব জিভে অবশ্য ওর নামটা উচ্চারণ করতে পারি না। ঠেলেঠুলে বলে দেই- বানলা শীন।
যখন পৌঁছলাম, নটিরা গ্রহের আকাশে তখন দ্বিতীয় চাঁদ উঠেছে। আকাশ আর মাটি এক অদ্ভুত নীলচে আলোয় ভেসে গেছে। নটিরার অধিবাসীদের হাঁটাচলায় ধীরছন্দ। এ বোধহয় দ্বিতীয় চাঁদের প্রভাব। অনেকেই এক হাত তুলে আমাকে নীরবে স্বাগত জানাল। আমিও ধীর গতিতে হেঁটে পৌঁছলাম বানলার প্রাসাদে। আঁধার ঘর। মেঝে পর্যন্ত বিস্তৃত জানালার পাশে দাঁড়িয়ে সে চাঁদ দেখছিল। আমাকে দেখে বানলা মোহনীয় ভঙ্গিতে ঘুরে দাঁড়াল। তারপর মেলে ধরল তার গভীর দু’চোখ-
‘এতদিন কোথায় ছিলেন?’
সার্জেন্ট রিজি দু’হাতে ছাড়াতে চেষ্টা করলেন নিজের গলা। কোন ফল হলো না। মকবুলের লোহার মতো হাত দু’টি সাঁড়াশি হয়ে চেপে বসেছে গলায়। কাশবার চেষ্টা করেও একটু শ্বাস বের হলো না গলা দিয়ে। মকবুল কি জানালার বাইরে ফেলে দেবে তাঁকে?
২১৩৪ সাল থেকে পালিয়ে এসেছে চার খুনের আসামী মকবুল পাঠান। সোজা এসে আস্তানা গেড়েছে ২০১৩-তে। মিনিট দশেক আগেও মকবুলের ধারণা ছিল না হোটেলের এই কামরায় তাকে গ্রেপ্তার করতে ঢুকে পড়বেন সার্জেন্ট রিজি। দু’জন মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ছিল বেশ কিছুক্ষণ। কথা কাটাকাটিও হয়েছিল কিছুটা। রিজির মুহুর্তের অসতর্কতায় একটা পোর্সিলিনের প্লেট ছুড়ে তাঁর হাতের ইলেকট্রিক ব্লোগানটা মেঝেতে ফেলে দিয়েছে মকবুল। হাতাহাতির শুরুতেই রিজি বুঝতে পেরেছিলেন এ যাত্রায় আর টিকে থাকা যাবে না। মকবুলের শারীরিক শক্তি তাঁর তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। সে সম্ভবত রিজিকে জানালা দিয়ে ফেলে দিয়ে খুনের দায় এড়াতে চাইবে।
এদিক-ওদিক হাত বাড়িয়ে রিজি ভেজা লোমশ কী একটা হাতে পেলেন। মুঠোর মধ্যে সেটা ভরে নিয়ে মকবুলের কনুইতে ঠেকালেন তিনি, ‘তেলাপোকা !’
আকাশ ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠল মকবুল। রিজির গলা ছেড়ে দিয়ে নিজের কনুই নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল সে। নিমেষের মধ্যে পোর্সিলিনের প্লেটটা তুলে নিয়ে মকবুলের মাথায় ভাঙলেন সার্জেন্ট রিজি। আসামী ধরাশায়ী।
মেঝেতে বসে হাঁপাতে লাগলেন সার্জেন্ট। পকেটের মোবি ফোনটা বিপ বিপ শব্দে সংকেত দিচ্ছে। মেঝেতে ফোনটা রেখে হলোগ্রাফিক মুডে চালু করলেন তিনি। ‘হ্যাঁ, রেয়ান বলো !’
‘স্যার কি পেলেন মকবুলকে?’
‘পেয়েছি ! তুমি ঠিকই বলেছিলে রেয়ান। ব্যাটার পতঙ্গাতঙ্ক আছে।’
‘কী স্যার...?’
‘ভাগ্য ভালো, আসার আগে ওর পুরো মেডিক্যাল রিপোর্টটা দেখে এসেছিলাম। এত বড় দামড়া একটা লোক, তার নাকি এন্টোমোফোবিয়া। মকবুলকে তেলাপোকার ভয় দেখিয়ে ঘায়েল করেছি !’
‘কীভাবে স্যার?’
হাতের মুঠোয় থাকা জিনিসটার দিকে তাকালেন সার্জেন্ট রিজি। তাঁর হাতে একটা হাতলভাঙ্গা টুথব্রাশ ছাড়া আর কিছুই নেই !
মন্তব্য
ফারাসাত
ছিলাম তো আশেপাশেই
অনেক দিন পর লিখলেন!
facebook
হুম ! প্রায় পাঁচ মাস পরে।
এবার থাকব নিয়মিত।
প্রথমটা দারুণ
হেভি জোস, বিশেষ করে এক নম্বরটা।
..................................................................
#Banshibir.
ভীনগ্রহেও বনলতা সেন আছে দেখি
প্রথম গল্পের শেষ লাইন পড়ে আবার ব্যাক ট্র্যাক করে পেলামঃ
সিনর -> সিংহল
মলানটেক-> মালয় সাগর
নটিরা -> নাটোর
বানলা শীন -> বনলতা সেন
হেহেহে জোস!
রিক্তা
--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।
--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।
দূর ভাই ! দিলেন তো মেড ইজি বইটা খুলে !
নটিরার বানলা শীন
অনেকদিন পর লিখলেন। ভাল লিখিয়েরা এত কম লিখলে হয়!!
কন কী? আমিও তো আপনার লেখা বিশেষ ভালো পাই !
বিশেষ করে সেই সিন্ডারেলা লেখাটা অনেক দিন মনে থাকবে।
প্রথমটা বেশি ভাল লেগেছে।
তেলাপোকা! কি রিজি মুখে বললো? মকবুল গলা চেপে ধরে ছিল না?
দেখলেন? একমাত্র আপনিই এই গল্পটা নিয়ে মন্তব্য করলেন !
হ্যাঁ, রিজি মুখেই বলেছে। তবে সেটা ঠোঁট নেড়ে।
মজারু
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
দুটোই ভালো লেগেছে
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
ধন্যবাদ নীড়দা।
আমি ভেরিয়েশনের দিকে বেশি লক্ষ্য রাখি বলে দু রকম স্বাদের দুটো গল্প দিই।
পরে দেখি ইমব্যালান্সড হয়ে এক দিকে বেশি ভোট পড়ে যায়।
দেখি পরের পর্বে কী করা যায়।
জটিল লাগলো।
অলস সময়
মিষ্টিমুখ।
তেলাপোকা কিছু হইলো? জিনিস হইলো মাকড়সা
তাইলে বস আপনের অ্যারাচনোফোবিয়া আছে।
আমার ছিল ছোটবেলায়। কিভাবে সারল বলতে পারি না !
হ, আর বইলেন না। এইট লেগড ফ্রিকস নামে একটা ফালতু মুভি দেখতে বসছিলাম স্কারলেট জনসনরে দেখার জন্য। শেষে না পারি দেখতে না পারি উঠতে (ভয়েরও বোধহয় আকর্ষন থাকে)! আমার সাথের সবগুলা হাসতেছে আর আমি চোখমুখ শক্ত করে মনিটরের দিকে তাকিয়ে আছি । এর পর থেকে স্কারলেট জনসনরে দেখলেই আমার বুকে কাপন ওঠে, ভয়ে।
"জনোসনোফোবিয়া"
মেডিক্যাল হিস্ট্রিতে আপনিই প্রথম !
হাহাহা প্রথমটার তুলনা হয় না
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
থেংক্যু ! থেংক্যু !
চাল্লু
চাল্লু থাকবে।
শেষেরটা বেশি ভালো লাগছে।
আপনার সায়েন্স ফিকশন লেখা দেখলেই খুশি হয়ে যাই। অসাধারণ। আপনার প্রশংসা আপনার লেখার শুরু থেকেই করছি। প্রশংসা অপচয় হচ্ছে না!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
কী বলে কৃতজ্ঞতা জানাব? আপনারা পড়ছেন বলেই তো লেখার উৎসাহ পাচ্ছি !
এই সিরিজের প্রথম মন্তব্যকারী কিন্তু আপনিই।
বানলা শীন!!!
প্রথমটায় মজা পাইসি।
আর দ্বিতীয়টা ভালো লাগসে।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
দুটোই চমৎকার লেগেছে।
সঙ্গে থাকুন, আরো আসছে।
দুটোই চমৎকার!! সচলে ফেরার জন্য ধন্যবাদ
----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony
হ্যাঁ রনি, ওয়েল্কাম্ব্যাক !!!
প্রথমটা সেই রকম
হাতে গোনা যে কয়জনের লেখা দেখলেই পড়ে ফেলি, আপনি তার এক জন।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
ফিরে আসাটা সেরকম হইছে বস।
যদি ভাব কিনছ আমায় ভুল ভেবেছ...
_____________________
Give Her Freedom!
আচ্ছা !
ব্যাপক লাগল!
নতুন মন্তব্য করুন