‘স্যার, আমি ঘুমানোর সময় পাই না !’

নিলয় নন্দী এর ছবি
লিখেছেন নিলয় নন্দী [অতিথি] (তারিখ: শনি, ২০/০৬/২০১৫ - ৪:৫১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১.
মাস কয়েক আগের ঘটনা। আমার এক সহকর্মী দু্টি ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে এসে হাজির হলেন। ‘আপনার সাথে একটু কথা বলবে’ বলে আমার সামনে তাদের বসিয়ে দিয়ে সরে গেলেন তিনি। আমি ছেলেদুটির মুখের দিকে তাকালাম। কত আর, ১৫-১৬ বছর বয়স হবে। দু চোখে কৈশোর পেরোনোর আভা কিন্তু কী এক অব্যক্ত হতাশায় তাদের মুখ ঢেকে গেছে। আমি হেসে বললাম চা খাবে কি না। ওরা বিব্রত হয়ে মাথা নাড়ল- কিছু খাবে না। নাম জানতে চাইলাম। ওরা নাম বলল। জানলাম, রাজধানীর নামকরা একটা স্কুল থেকে এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। ওদের প্রাথমিক জড়তা কাটাতে নানা কথা বলে সহজ করতে চেষ্টা করলাম। শেষে জানতে চাইলাম আমার কাছে আসার উদ্দেশ্য কী? আগের মতোই বিব্রতভঙ্গীতে তারা জানাল ওদের একজন গল্প লেখে আর অন্যজন কবিতা। আমাকে দেখাতে নিয়ে এসেছে কেমন হচ্ছে।
তরুণদের লেখার প্রসঙ্গে আমি বরাবরই উৎসাহী। খুব আগ্রহ নিয়ে তাদের লেখা পড়লাম। উল্লেখ করার মতো তেমন কিছু নয়। প্রারম্ভিক কাঁচাভাব আছে লেখায়। খানিকটা উৎসাহ দিয়ে লেখার এক আধটা ত্রুটি ধরিয়ে দিয়ে বললাম, ‘তোমাদের আরো অনেক বই পড়তে হবে।’ তারা কিছুটা ভরসা পেয়ে বলল, ‘ স্যার, আমরা তো বাইরের বই পড়ার সময় পাই না।’
‘সময় পাও না ! কেন? কী কর সারাদিন?’
এই একটি প্রশ্নেই যেন ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেল। দু’ জনের মধ্যে কে কার আগে কথা বলবে তাই ঠিক করতে না পেরে হিমসিম খেয়ে গেল ওরা। বিছানা থেকে ওঠে ভোর পাঁচটায় কিংবা সম্ভব হলে তার আগে। সারা দিনের রুটিনের যে ফিরিস্তি তারা দিল সেটা লিখতে গিয়ে আমি নোটখাতা বের করলাম কিন্তু বিস্ময়ের ধাক্কায় আর এগোতে পারলাম না। শুধু প্রাইভেট টিচারের কাছে পড়া, স্কুলে ছোটা, স্কুলের ভেতরে কোচিঙ্গে পড়া, স্কুলের হোমওয়ার্কের পাহাড় বাসায় নিয়ে এসে শেষ করা, আবার নামকরা কোচিঙ্গে ক্লাস করতে ছোটা, সেই কোচিঙ্গের পড়া বাসায় এসে শেষ করা- এই নিয়ে সারা দিনের সব কটা ঘন্টা ব্যয় হয়ে যায়। দম নেয়ারও সময় নেই। এত কিছুর পরেও বাবা-মায়ের কাছ থেকে প্রতিদিন শুনতে হয় কেন তাদের রেজাল্ট আরো ভালো হয় না। জানতে চাইলাম, ‘তোমরা টিভি দেখ কখন? খেলতে যাও কখন? বন্ধুদের সাথে সময় কাটাও কখন? বাবা-মায়ের পাশে গিয়ে বসো কখন?’
হয়তো ভাবল আমি মজা করছি, এক রাশ দুঃখ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইল দু’ জনে। আমার গুরুতর রকমের একটা আশংকা হলো। জানতে চাইলাম, ‘তোমরা ঘুমাও কখন?’
উত্তরে একজন মাথা নামিয়ে চুপ করে থাকল। অন্যজন ফিসফিস করে বলল, ‘স্যার, আমি ঘুমানোর সময় পাই না !’
সত্যিকার অর্থে, না ঘুমিয়ে মানুষের পক্ষে বেশি দিন বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। আমি আবারও জানতে চাইলাম, ‘ঘুমাও কখন তোমরা?’
‘স্যার, মাঝেমধ্যে দুটো ক্লাসের মাঝে একটু সময় পাই। ওই সময়ে একটু ঘুমাই। লাইব্রেরিতে যাই, সেখানেও সময় বের করে নিয়ে একটু ঘুমাই।’
প্রবল বেদনায় আমি নির্বাক হয়ে গেলাম। একজন সন্তানের কাছে তার সবচেয়ে ভরসার স্থল তার বাবা-মা। সেই বাবা-মা ভেবে নিয়েছেন সন্তানের জন্য ভালো স্কুল আর নামকরা কোচিঙ্গের বন্দোবস্ত করাই তাদের প্রধান কাজ। বিনিময়ে ওরা দেবে পরীক্ষার ফল। সন্তানকে প্রতিযোগিতার দৌড়ে তুলে দিয়েই বাবা-মা খুশি। ওদের জীবন থেকে যে জীবনীশক্তি হারিয়ে যাচ্ছে সেটা দেখার দায়িত্ব তবে কার? আমাকে সহানুভুতিশীল হয়ে উঠতে দেখে ওরা ভারী গলায় আরো কী সব বলতে চাইছিল কিন্তু যে সহকর্মীটি এই ছেলেদুটিকে নিয়ে এসেছিলেন তিনি দ্রুত এসে ওদের তুলে নিয়ে গেলেন। তিনি বুঝতে পারছিলেন অভিযোগ জানানোর আর কোন জায়গা নেই বলে ওরা আমাকেই আঁকড়ে ধরতে চাইছে।
আমি নিশ্চুপ হয়ে বসে রইলাম। আমার সামনে দু টুকরো কাগজে ফুটে আছে কবিতা আর গল্প। যেন বৃষ্টিহীন রুক্ষ মাটিতে আলগোছে ফুটে ওঠা দুটো সবুজ চারা।

২.
কেউ কি বলতে পারবেন, দ্বিতীয় শ্রেণীর একজন পড়ুয়াকে স্কুল থেকে দেয়া বইয়ের তালিকায় সর্বোচ্চ বইয়ের সংখ্যা কত? ৬? ১০? ১২? উত্তর হচ্ছে, ১৯টি। অন্তত আমার চোখের সামনে এক নমুনাকে আমি ১৯টি বইয়ের তালিকা হাতে ঘুরতে দেখেছি।
রাজধানীর অন্য স্কুলের খবর জানি না, আমার ভাগ্নীর হাতে যে তালিকা আছে তাতে ১৯টি বইয়ের নাম আছে। ভবিষ্যতে ২৪টি বই দেখলেও আশা করি কেউ অবাক হবেন না। আমি পরীক্ষা করবার জন্য ভাগ্নীকে বলেছিলাম সে ১৯টি বইয়ের নাম আমাকে মুখস্ত লিখে দিতে পারবে কি না। সে ১৮টি লিখতে পেরেছে।
এই সেই তালিকা :
1. Elementary Science
2. New Oxford Modern English Workbook
3. New Oxford Modern English Course book
4. Fun with Grammar
5. Pupil Grammar
6. English for Today
7. Elementary Math
8. New Number World
9. Religion
10. Computer Fast Forward
11. Spelling and Dictation
12. Draw and Colour
13. How to Draw
14. Bangladesh Social Studies
15. English Language Grammar
১৬. ব্যাকরণ ও রচনা
১৭. আমার বাংলা বই
18. English Dictionary

প্রশ্ন হচ্ছে, ছয় বা সাত বছরের একটি শিশু ঠিক ক’টা বইয়ের ধকল সামলাতে পারে? রাজধানীর কোনো কোনো স্কুলে প্রথম শ্রেণীতে ১৩টি পর্যন্ত পাঠ্যবই পড়ানো হচ্ছে। আর নার্সারি ক্লাসে রয়েছে ৮ বা তারও অধিক পাঠ্যবই। এমন সব লেখকের দেশি-বিদেশি বই পড়ানো হয় যা শিশুরা আত্মস্থ করতে পারবে কিনা সে ব্যাপারে স্কুল কতৃপক্ষের কোন মাথাব্যথা নেই। এত বই কি পড়ানোর জন্য? নাকি প্রকাশকের সাথে স্কুল কর্তৃপক্ষের বিশেষ ঘনিষ্ঠতার ফল? এর পরোক্ষ ভোগান্তিতে পড়ছে স্কুল পড়ুয়া শিশুরা।

আমার ভাগ্নীকে দেখি। স্কুল এবং স্কুলের বাইরে বাসায় বসে দিন-রাত পড়াশোনা ছাড়া আর কোনো কিছু করার সুযোগ নেই তার। আগে ছবি আঁকার ঝোঁক ছিল বলে আঁকার স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়া হয়েছিল। এখন সেখান থেকে সরে আসতে হয়েছে। বাইরে খেলাধূলো করার কোন সুযোগ নেই। স্কুল থেকে বাসায় এলে হোমওয়ার্ক আর পড়া তৈরি করতে দিন পার হয়ে যায়। সন্ধ্যার পরও বসতে হয় পড়ার জন্য। সবচেয়ে আতংকের মধ্যে থাকতে হয় পরীক্ষা নিয়ে। পরীক্ষার্থী আর তার মায়ের ভয়াবহ দূর্গতির নাম হচ্ছে পরীক্ষা। পরীক্ষার্থী যতই প্রাইভেট টিউটরের কাছে পড়ুক না কেন, তাকে সম্পূর্ণ তৈরি করে দেবার দায়িত্ব তার মায়ের। পরীক্ষার্থী এক নম্বর কম পেলেও সেই জবাবদিহিতা তার মাকে করতে হবে। দেখেশুনে মাঝেমধ্যে আমার মনে হয়েছে এইসব বাচ্চারা পরীক্ষায় নেমেছে তাদের মায়ের সম্মান বাঁচাতে।
কোন বই ক্লাসে লাগবে আর কোনটা লাগবে না সেটা বোধহয় এইটুকু মাথায় তারা বুঝে নিতে পারে না। আবার এক একটা বিষয়ের সঙ্গে রয়েছে একাধিক খাতা। স্কুলে যাওয়ার সময় তাদের ব্যাগের ওজন বহন করতে অভিভাবকদেরও হিমসিম খেয়ে যেতে দেখেছি। খোঁজ নিয়ে দেখলাম বাচ্চারা সর্বোচ্চ তেরো কেজি পর্যন্ত ব্যাগের ভার বহন করে। ভাগ্নী যখন ভারী বইয়ের ব্যাগ আর জলের বোতল নিয়ে স্কুলের তিনতলার সিঁড়ি বেয়ে ওঠে আমি বাইরের দরজায় আশংকা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। ওজন করে দেখেছি। ওইটুকু শরীরে সাত-আট কেজির ব্যাগ চাপিয়ে দিয়েছে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা। আমাদের ভবিষ্যৎ কী?

৩.
শিক্ষাই নাকি জাতির মেরুদণ্ড। চিকিৎসাবিজ্ঞানে বলে শিশু বয়সে কেউ যদি ভারী কিছু বহন করতে থাকে তো তার মেরুদণ্ড ক্ষতিগ্রস্থ হবে সবার আগে। এরপর চাপ পড়বে ফুসফুসে। অল্প বয়সে ফুসফুস আঘাতপ্রাপ্ত হলে তার ফল হবে দীর্ঘমেয়াদী। এ ছাড়াও নিয়মিত ভারী ব্যাগ বহন করার ফলে কাঁধে আঘাত পেয়ে স্পন্ডালাইটিস হয়ে যেতে পারে। হাঁটুর অস্থিক্ষয়জনিত সমস্যা হতে পারে। বাড়ন্ত বয়সে শারীরিকভাবে দূর্বল হওয়াতে শিশু অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে যে কোনভাবেই।
যুক্তরাষ্ট্রের পেন স্টেট ইউনিভার্সিটি ও জন হপকিনস ইউনিভার্সিটির বিশেষজ্ঞরা শিশুদের মানসিক চাপ সম্পর্কে এক গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন। প্রতিবেদনটি ছাপা হয়েছে এপেটাইট সাময়িকীতে। তাতে দেখা যায়, শিশুর ওপর মানসিক চাপ তার মোটা হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। এই স্থূলতা থেকে অন্যান্য রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। শিশুর প্রবল মানসিক চাপ পরবর্তী জীবনে যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে তা থেকে সে আর মুক্তি পায় না। যে শিক্ষাব্যবস্থার জন্য সে দায়ী নয় তার প্রতিফল বয়ে বেড়াতে হয় বাকি জীবন ধরে।

৪.
ছবি আঁকার খাতা দূরে ছড়িয়ে পড়ে থাকে। রংপেন্সিলগুলোর অর্ধেকই হারিয়ে গেছে। ভাগ্নীকে এখন আর ছবি আঁকতে দেখি না। আমার মনে পড়ে দুটি ছেলের কথা যারা লিখতে চেয়েছিল গল্প আর কবিতা। তাদের লেখার খাতাও বোধহয় জানালার ধারে এমনি করে খোলা পড়ে থাকে।
ভাগ্নীকে দেখলাম অংক খাতার পাশে ঘুমিয়ে পড়েছে। তাকে ঘুমানোর সময় না দিলে সে কী করবে? এই শহরের শিশুরা আমাদের কাছে খেলার মাঠ চেয়েছে, আমরা দিতে পারি নি। তারা চেয়েছে নিজেদের শখ পূরণের জন্য একান্ত কিছু সময়, আমরা তাও দিই নি। এখন তারা আমাদের কাছে ঘুমানোর জন্য একটু সময় চায়।
তাদের এই চাওয়াটুকুও আমরা পূরণ করতে পারছি না।

ছবি: 
13/02/2012 - 9:57পূর্বাহ্ন

মন্তব্য

নিলয় নন্দী এর ছবি

লেখাটা সেই অর্থে সচলের জন্য লিখি নি। সদ্য একটা পত্রিকার জন্য লেখা। সচলের মাপে লিখতে গেলে আরো ভেবেচিন্তে লিখতাম। তবে আমার অভিজ্ঞতাটা সচলের পাঠককের কাছে পৌঁছে দিতে চাইছি।

হিমু এর ছবি

গন্ধমাদনের মতো ওজস্বী স্কুলব্যাগের অত্যাচার নিরসন করা যায় এভাবে:

বাচ্চাদের বইগুলো ছাপাতে হবে ভিন্নভাবে। প্রতিটি অধ্যায় আলাদা ফর্মায় ছাপিয়ে সব ক'টা অধ্যায়কে পাঞ্চ করে একটা ফোল্ডারে ঢোকাতে হবে, সে ফোল্ডারটাই বই হিসাবে বিক্রি হবে। বাচ্চারা স্কুলে যে অধ্যায় পড়ানো হচ্ছে, সেটা ফোল্ডার থেকে খুলে ব্যাগে নিয়ে স্কুলে যাবে। আর স্কুলের খাতা স্কুলেই লকারের ভেতরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে স্কুল কর্তৃপক্ষকে। বাচ্চারা কেবল অধ্যায়গুলো, একটা গল্পের বই আর খাবার-পানি নিয়ে স্কুলে যাবে। ফিরে আসবে বন্ধুদের সঙ্গে লেনদেন করা গল্পের বই ব্যাগে ঢুকিয়ে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বইয়ের গন্ধমাদন তৈরি হবার কতগুলো কারণ আছে। সেগুলো নিরসন করা না হলে এই সমস্যার সমাধান হবার উপায় থাকলেও সম্ভাবনা নেই। বইয়ের সংখ্যা বাড়ার কারণঃ

১. বেসরকারি স্কুলগুলোর কারিকুলাম যারা তৈরি করে তাদের খুব কম জনের এই ব্যাপারে পড়াশোনা ও প্রশিক্ষণ আছে। বাকি সবগুলো এই ব্যাপারে আকাট মূর্খ। তারা মনে করে যতো বেশি বই ততো বেশি ভালো পড়াশোনা।
২. ক্লাসে যতো বেশি বই সেই স্কুল ততো বেশি ভালো - প্রচুর স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবক চিন্তায় এমন একটা গ্রাম্যতা ধারণ করে।
৩. অনেক স্কুলে কিছু মহাপণ্ডিত আছে যারা শিশুশিক্ষা বিষয়ে নিজেদেরকে বিদ্যাদিগ্‌গজ মনে করে। এরা কিছু বই লেখে যা ঐ স্কুলের বাচ্চাদের কিনতে ও পড়তে বাধ্য করা হয়।
৪. অনেক স্কুলে কমিশনখোর শিক্ষক-কর্মকর্তা থাকে যারা লেখক/প্রকাশকের কাছ থেকে কমিশন খেয়ে চার/পাঁচটা আজাইরা বই বুকলিস্টে ঢুকিয়ে দেয়।

বইয়ের অধ্যায় আলাদা আলাদা করে ছাপিয়ে ফোল্ডার হিসেবে বিক্রি করলে বইয়ের দাম শুধু বাড়বেই না, সাথে প্রতি সপ্তাহে বই হারাবে। স্কুল কর্তৃপক্ষ ক্লাস টেস্ট নেবার খাতাগুলো নিজেদের কাছে রাখে। এর বাইরে ক্লাসওয়ার্ক আর হোমওয়ার্কের খাতা বাচ্চাদের সাথে থাকে। ক্লাসওয়ার্কের খাতা স্কুলে রাখলে বাচ্চারা বাসায় গিয়ে পড়বে কী, আর হোমওয়ার্কের খাতা স্কুলে রাখলে বাচ্চারা বাসায় গিয়ে লিখবে কী?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

হিমু এর ছবি

হোমওয়ার্কের খাতা স্কুলে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে হয় কেন?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

হোমওয়ার্কের খাতা দুই সেট। আগের সপ্তাহে কাজ দেয়া হোমওয়ার্কের খাতা রবিবার জমা দিতে হবে, এবং সেদিন আগে দেখে রাখা পুরনো কাজের খাতা ফেরত দেয়া হবে। সুতরাং প্রতিদিন একসেট হোমওয়ার্কের খাতা বাড়ি থেকে স্কুলে যাচ্ছে আর এক সেট স্কুল থেকে বাড়িতে আসছে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মরুদ্যান এর ছবি

আমি ক্লাস ৪ পর্যন্ত পড়েছিলাম লিটল জুয়েলসে, ক্লাসেই সব পড়িয়ে দিত, বেশির ভাগ খাতা পত্র স্কুলে থাকত কাবার্ডে। জীবন কঠিন হয়ে গেল আইডিয়ালের মত জেলখানাতে যখন ক্লাস ফাইভে ঢুক্লাম। ক্লাসে কিছুই পড়ায়না ঠিক মতন খালি প্রাইভেটে দৌড়াও মন খারাপ

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

হিমু এর ছবি

স্কুলের বাচ্চাদের কথা বাদ দিলাম, কতো মিষ্টি মিষ্টি স্কুলের মিস খাতা কাটতে গিয়ে সন্ধ্যাগুলি পণ্ড করছে মন খারাপ

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আমার পরিবারের প্রায় সব নারী সদস্য জীবনের কোন না কোন সময় স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন/আছেন। আমি তাঁদেরকে দেখেছি সারা বছর ধরে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পর ঘন্টার পর ঘন্টা কেবল হোমটাস্ক, ক্লাসওয়ার্ক, ক্লাস টেস্ট, হাফইয়ার্লি, ফাইনালের খাতা দেখে জীবনের সোনার দামের সময়গুলো মাটি/গোবরের দামে বিকিয়ে দিতে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

শিশিরকণা এর ছবি

হোমওয়ার্কের খাতারই বা কি দরকার। আলগা পৃষ্ঠায় হোমওয়ার্ক করে নিয়ে গেলে কি হয়? পরে যে যার মতো করে ফোল্ডারে কি বাধাই করে গুছিয়ে রাখলো। আমাদের স্কুলে ক্লাস পরীক্ষা হতো একটা খাতা থেকে ছেঁড়া পৃষ্ঠায়। আর হোমওয়ার্ক, ক্লাসওয়ার্ক কি পরীক্ষা সব কিছুর শুরুতেই নিজের নাম, স্কুলের নাম, ক্লাস রোল নাম্বার আর তারিখ লিখতে হত হেডার হিসেবে, সাথে বিষয় এর নাম টাইটেল, যাতে খাতা থেকে ছিড়ে হারিয়ে গেলেও খুঁজে পাওয়া যায়।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

হিমু এর ছবি

যে যার বাচ্চার স্কুলের ব্যাগের ওজনের ছবি (দাঁড়িপাল্লা বা যান্ত্রিক/ইলেকট্রনিক পাল্লায়) তুলে একটা ক্যাম্পেইন কি শুরু করা যায়?

শিশিরকণা এর ছবি

হতে পারে, সাথে যদি দেখানো যেত এই ওজনের বিনিময়ে জ্ঞান কতটুকু অর্জিত হচ্ছে, আরও ভালো হত।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

"Education is what remains after one has forgotten what one has learned in school." - Albert Einstein


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

স্পর্শ এর ছবি

একমাত্র সমাধান প্রতিটা স্কুলে বাবা-মা দের জন্য বাধ্যতামূলক ওয়ার্কশপ আয়োজন করা। যেখানে বাচ্চাকে পড়াশুনা করানোর এবং মানসিক সাপোর্ট দেওয়ার ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সেই প্রশিক্ষণ কারিকুলামের উপর বাবা মাদের পরীক্ষা হবে। সেই পরীক্ষা পাস করতে পারলে তার সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করা হবে। নাইলে না। অর্থাৎ প্রাথমিক বা নার্সারী শ্রেনীর ভর্তি পরীক্ষা বাচ্চাদের নেওয়া হবে না নেওয়া হবে বাবা-মা/অভিভাবকদের। কারন অভিভাবক ঠিক থাকলে যে কোনো শিশুই যেকোনো ভালো স্কুলে ভালো পারফর্ম করবে।

এছাড়া স্কুলের পাঠ্যসূচির আকার স্বাভাবিক করার ব্যাপারে সরকারকে হস্তক্ষেপ করতে হবে।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

অতিথি লেখক এর ছবি

এই পরীক্ষার বিষয়বস্তু কী হবে? বাবা-মা তো মনে করেন তারা নামী স্কুলের বেতন, বই-খাতা, প্রাইভেট টিউশনি - ইত্যাদির মাধ্যমে তাদের সন্তানদেরকে সর্বোচ্চ সাপোর্ট দিচ্ছেন; বিনিময়ে তারা আশা করেন সর্বোৎকৃষ্ট ফল, এবং ব্র্যাগিং রাইট। আমি তো মনে করি বাবা-মাকে এটা বোঝানো উচিৎ যে সন্তানের একটা নিজস্ব জীবন আছে; তারা তাদের নিজের স্বপ্ন দেখে এবং দেখবে। বাবা-মায়ের "ব্যর্থতা" এবং অপূর্ণ স্বপ্ন পূরণ করার দায়িত্ব সন্তানের না - এই বোধ বাবা-মায়ের মাথায় ঢোকানো না গেলে ওয়ার্কশপ/পরীক্ষা চূড়ান্ত বিচারে কোন ফল বয়ে আনবে না।

Emran

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

স্পর্শ, আগে দরকার শিক্ষক, শিক্ষাপ্রশাসকদের প্রশিক্ষণ। শিক্ষা, বিশেষত বাচ্চাদের শিক্ষা, একটা হাইলি টেকনিক্যাল বিষয়। এই বিষয়ে প্রশিক্ষণবিহীন লোকজন দিয়ে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা চলছে। স্কুলের টেক্সটবইগুলো খুলে দেখো, বেশিরভাগ বই আবর্জনায় পূর্ণ। কারিকুলাম, টিচিং মেথড, অ্যাসেসমেন্ট প্রসেস নিয়ে সারা দেশে যা চলছে সেটাকে মাৎস্যন্যায় বললেও কম বলা হবে। স্কুল, শিক্ষক, শিক্ষাপ্রশাসক, টেক্সটবুক, কারিকুলাম, টিচিং মেথড, অ্যাসেসমেন্ট প্রসেস - এগুলো ঠিক না করলে কোন কর্মশালা কোন কাজে দেবে না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মরুদ্যান এর ছবি

চলুক

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

নীড় সন্ধানী এর ছবি

বিষয়টি নিয়ে আমি অনেকদিন যাবত বিরক্ত। লিখেওছিলাম একাধিকবার। যদিও জানি এসব বলা টলায় মনের ঝাল একটু মিটলেও কোন কাজ হবে না। যারা এসবের সিদ্ধান্ত নেয় তারা আমাদের কথায় কান দেবে না। আমার সন্তান স্কুলে ভর্তি হবার আগে আমিও জানতাম না শিক্ষার নামে কিরকম একটা অনাচার শিশুদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। আপনি যে তালিকা দিলেন সেই তালিকা আমার সন্তানেরও(দুয়েকটা বই এদিক সেদিক হবে)। এই বইগুলো না পড়লে ওই শিশুর কী ক্ষতি হবে, কিংবা ইংরেজি বই একটা পড়লে শিশুটা মূর্খ হয়ে যাবে কিনা বুঝি না। সরকারী স্কুলে তো একটা বইই পড়ানো হয়। তাহলে সরকারী স্কুলের বাচ্চার সাথে এই বেসরকারী বাচ্চাদের মধ্যে একটা আরোপিত পার্থক্য তৈরী করা হচ্ছে কিনা, সেই পার্থক্য সমাজে কোন বৈষম্য তৈরী করছে কিনা। করলেও সমাজের কোন সমস্যা আছে কিনা। অথবা সমাজ সেই পার্থক্যটাই চায় বলেই অধিক বই দিয়ে বাচ্চার মাথা মগজ ঘাড় পিঠ ভারী করে তুলছে কিনা। এরকম হরেক জাতের ভাবনা মাথায় ঘুরপাক খায়।

সত্যি বলতে কি মেজাজ চড়ে যায়। আমি মাঝে মাঝে ভাবি আমার বাচ্চাদের এত ওজনদার বই থেকে মুক্তি দিয়ে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে এনে আমার মতো মূর্খ বানিয়ে রেখে দেবো। আমি দুনিয়াদারীতে যেটুকু চরে টরে খাই সেটা ক্লাস প্রতি এক বই ইংরেজি পড়েই। স্কুলের দশ ক্লাসের কোনটাতে একটার বেশী বই পড়তে হয়নি আমাদের। বাকী বিষয়গুলোর কথা নাই বললাম।

শিক্ষামন্ত্রী সাবকে অনেক কথা বলতে শুনি। কিন্তু শিশুদের এই বিদঘুটে শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কোনদিন কিছু বলেন না। আর অভিভাবকদের একটা শ্রেনী বাচ্চাদের বিদ্যাসাগর বানাবার প্রকল্পে বাচ্চার জীবনকেই বলি দিতে প্রস্তুত।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

শিক্ষামন্ত্রী সাবকে অনেক কথা বলতে শুনি। কিন্তু শিশুদের এই বিদঘুটে শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কোনদিন কিছু বলেন না।

- উনি এই ব্যাপারে কিছু বলেন না, কিন্তু করেন। উনি এই স্কুলগুলোতে পড়ুয়া বাচ্চাদের ফি'র ওপর প্রথমে ৪.৫% হারে এবং এখন ৭% হারে মূল্য সংযোজন কর আরোপের ব্যবস্থা করেছেন। এর মানে বুঝতে পারছেন? সরকার এই স্কুলগুলোকে স্কুল বলে স্বীকারই করে না। সরকার এগুলোকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ছাড়া আর কিছু ভাবে না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

একজন সন্তানের কাছে তার সবচেয়ে ভরসার স্থল তার বাবা-মা। সেই বাবা-মা ভেবে নিয়েছেন সন্তানের জন্য ভালো স্কুল আর নামকরা কোচিঙ্গের বন্দোবস্ত করাই তাদের প্রধান কাজ। বিনিময়ে ওরা দেবে পরীক্ষার ফল। সন্তানকে প্রতিযোগিতার দৌড়ে তুলে দিয়েই বাবা-মা খুশি।

মন খারাপ

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

আয়নামতি এর ছবি

চলুক... মন খারাপ

তানিম এহসান এর ছবি

’ছোট ছোট শিশুদের শৈশব চুরি করে গ্রন্থকীটের দল বানায় নির্বোধ...’ --- নচিকেতার এই গানটা বহু আগেই গাওয়া, প্রাসঙ্গিকতার শুরু মনে হয় তখনি।

এই প্রজন্মগুলো বেড়ে উঠছে রোবটের মত। লেখাটা খুব ভাল লাগলো।

আবদুর এর ছবি

আরো একটা বিষয় আছে সেটা হচ্ছে সরকারী প্রাইমারী স্কুলের স্বল্পতা। আমি চট্টগ্রাম শহরে বসবাস করি, আমার ইচ্ছা ছিল আমার সন্তানকে সরকারী প্রাইমারী স্কুলে দেবো কিন্তু প্রাইমারী স্কুল খুঁজতে গিয়ে দেখি আমার নিকটতম সরকারী প্রাইমারী স্কুলের দূরত্ব আমার বাসা হতে মাত্র তিন কিমি যেখানে আমার বাসার আধা কিমি এর মধ্যে অন্তত্য ডজন খানেক কেজি স্কুল আছে। তাই বাধ্য হয়ে কেজি স্কুলে দিয়েছি। আমার মতো আরো অনেককে পেয়েছি যারা তাদের সন্তানকে সরকারী প্রাইমারী স্কুলে দিতে চায় কিন্তু স্কুল স্বল্পতা ও দূরত্বের কারণে দিতে পারেন না, তাই বিষয়টি আমাদের শিক্ষা কর্মকর্তারা ভেবে দেখলে আমাদের সন্তানদের মঙ্গল হবে আশা করা যায়। তবে উনাদের ভেবে দেখার সময় হবে কিনা এই ব্যাপারে আশাবাদী হতে পারিনা

আবদুর

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সরকারি প্রাইমারি স্কুলের সংখ্যা সম্ভবত দ্বিগুণ তিনগুণেরও বেশি করতে হবে। তবে এখন যেগুলো আছে সেগুলোর কী দশা সেটা একবার সেখানে গিয়ে স্বচক্ষে দেখে আসবেন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

আবদুর এর ছবি

মানছি যা আছে তাদের দশা খারাপ, অবশ্যই খারাপ বা আগেযে ভালো ছিল এমনও নয় কিন্তু ওখানে শৈশবে বিদ্যা সাগর বানানোর আজগুবি বিড়ম্বনা নেই, তাই শিশুরা হেসে খেলে পড়তে পারে। তাছাড়া মা-বাবা একটু নজর দিলে ভালো ফলাফল করাও সম্ভব।আমরাতো এই প্রাইমারীতে পড়েই মানুষ, কই কোন সমস্যাতো দেখিনা।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আমাদের সময় থেকে এখন প্রতিযোগিতা বহু বহু গুণে বেড়েছে। প্রতিদিন সেটা বাড়ছে। সরকারি প্রাইমারি থেকে বের হওয়াদের মধ্যে খুব খুব কম জন সেই প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে। জেনেশুনে নিজের সন্তানকে একটা আনইভেন প্রতিযোগিতায় কী করে ঠেলে দেই!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

এক লহমা এর ছবি

সিকি শতাব্দী আগে পশ্চিমবঙ্গ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলাম কয়েক বছর কাটিয়ে দেশে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে নিয়ে। ফেরা সম্ভব হয়নি নানা কারণে। এই কারণগুলির মধ্যে একটি বড় কারণ ছিল আমাদের সন্তান যে শিক্ষাব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সে ব্যবস্থাটির প্রতি আকর্ষণ। ব্যবস্থাটি সবসময় খেয়াল রেখেছে পড়ুয়াটির বয়স কত। একটা অসুবিধা ছিল যেটা বাবা-মা হিসেবে আমরা কিছুটা সমাধান করতে পারতাম, করেওছিলাম। ওদের বইয়ের সংখ্যা খুব বেশী ছিল না। প্রতিটি বিষয়ের একটি করেই বই। চমৎকার বই সব। তবে বইগুলির ওজন ছিল। আমরা তাই তাকে দুই 'সেট' বই কিনে দিয়েছিলাম। একটা 'সেট' সে বাড়িতে রাখত আর একটা রাখত তার স্কুল-এর 'ভল্ট'-এ। ফলে ব্যাগ-এ করে গন্ধমাদন বয়ে বেড়াতে লাগত না।

ওদের সমস্ত পড়াটা ওদের বেড়ে ওঠার সাথে সাথে চাপ বাড়িয়েছিল ধীরে ধীরে, প্রথম শ্রেণী থেকেই অনন্ত চাপের মধ্যে ডুবিয়ে দেয়নি। আর, গোটা শিক্ষা পদ্ধতিটায় সবসময় একটা জিনিষ খেয়াল রাখা হত যে পড়ুয়ারা যেন পড়ার চাপে খেলার কি নিজের পছন্দ মত শিল্পচর্চার সময় থেকে বঞ্চিত না হয়। একটা সময় আমাদের দাঁতে দাঁত চেপে প্রতিটি দিন লড়ে যেতে হয়েছে এ পরবাসে টিঁকে থাকার, নিজেদের মানিয়ে নেওয়ার জন্য। সে লড়াইয়ের সময় আমাদের বিরাট শক্তি আসত সন্তানের লেখা-পড়ার সুন্দর ব্যবস্থা জোগাড় করা গেছে এই আনন্দ থেকে। সরকারী বিদ্যালয়ে প্রাক-মহাবিদ্যালয় জীবন, তারপরে চারটি বছর বেসরকারী মহাবিদ্যালয়ে তাদেরি দেয়া বৃত্তি, আর সবশেষের চার বছরে ব্যাঙ্ক ও সরকারী ঋণ-সহায়তায় উচ্চশিক্ষার পাট শেষে সে এখন একটি চমৎকার তরতাজা বুদ্ধিদীপ্ত তরুণ মানুষ যার জ্ঞানের পরিধির মধ্যে তার পাঠ্যবইয়ের বিষয়গুলি ছাড়াও আরও অজস্র কিছু রয়েছে। বাব-মা হিসেবে আর কি-ই বা চাইবার থাকতে পারত আমাদের! আমরা অশেষ কৃতজ্ঞ একসময়ের পরবাস, পরে স্বেচ্ছায় বেছে নেয়া নিজ-দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

এনকিদু এর ছবি

... উচ্চশিক্ষার পাট শেষে সে এখন একটি চমৎকার তরতাজা বুদ্ধিদীপ্ত তরুণ মানুষ যার জ্ঞানের পরিধির মধ্যে তার পাঠ্যবইয়ের বিষয়গুলি ছাড়াও আরও অজস্র কিছু রয়েছে। বাব-মা হিসেবে আর কি-ই বা চাইবার থাকতে পারত আমাদের! আমরা অশেষ কৃতজ্ঞ একসময়ের পরবাস, পরে স্বেচ্ছায় বেছে নেয়া নিজ-দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি।

চলুক


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

এনকিদু এর ছবি

বেশ গুরুত্বপূর্ন একটা দিক আপনি মনে করিয়ে দিয়েছেন - পাঠ্য বিষয়ের পরিমাণ যেন শিশুর বয়সের সাথে সঙ্গতীপূর্ন হয়। মূল লেখায় বইপত্রের তালিকাটা:

1. Elementary Science
2. New Oxford Modern English Workbook
3. New Oxford Modern English Course book
4. Fun with Grammar
5. Pupil Grammar
6. English for Today
7. Elementary Math
8. New Number World
9. Religion
10. Computer Fast Forward
11. Spelling and Dictation
12. Draw and Colour
13. How to Draw
14. Bangladesh Social Studies
15. English Language Grammar
১৬. ব্যাকরণ ও রচনা
১৭. আমার বাংলা বই
18. English Dictionary

এর মধ্যে 'বিষয়' আছে ৮ টি: বিজ্ঞান, ইংরেজি, গণিত, ধর্ম, কম্পিউটার, চিত্রকলা, বাংলা, বাংলাদেশের সমাজ। মাত্র ৮ টি বিষয়ের জন্য ১৮ টি বই অবশ্যই বাহুল্য। তবে বাহুল্য টা ইচ্ছাকৃত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, পাণ্ডবদার মন্তব্যে কমিশন খাওয়ার ব্যপারটা এসেছে তাই আমি আর নতুন করে বললাম না। বইয়ের তালিকা থেকে ১৮ কে সবার আগে বাদ দিয়ে দিলেও শিশুর খুব বেশি ক্ষতি হওয়ার কথা না। 'নামকরা' স্কুলে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করার জন্য অভিধান ক্লাসরুমে থাকা উচিত। প্রয়োজন মনে করলে বাড়িতেও এক কপি রাখা যায়। প্রতিদিন ঐ জিনিস বয়ে বেড়ানো লাগবেনা। ১৬, ১৭ মিলিয়ে একটা বই হতে পারে। আমি নিজে ৯ কে অপ্রয়োজনীয় মনে করি, কিন্তু অন্য অনেকেই এটা বাদ দিতে পছন্দ করবেননা হয়ত। ইংরেজির উপর দেখা যাচ্ছে ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ১৫ মোট ৬ টা বই। প্রত্যেকটা বই থেকে হয়ত অংশবিষেশ পড়ান হয়। পাঠ্য বিষয়গুলো সহজেই একটা অথবা দুইটা বইয়ের মধ্যে ঢুকে পরতে পারে। একই ভাবে ৭, ৮ মিলেও একটা বই হতে পারে।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

নিলয় নন্দী এর ছবি

অভিধানটি অবশ্য তাকে বয়ে বেড়াতে হয় না সেটা বাসায় থাকে।
কিন্তু বুক লিস্টে ছিল বলে দিয়েছি এখানে।
আর বইয়ের সংখ্যাও কিন্তু ১৯টি। আরেকটা বইয়ের নাম সে মনে করতে পারেনি।
আমি চাইছিলাম তার পাঠ্যবইয়ের নাম সে মনে রাখতে পারে কিনা জানতে।

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

অতিথি লেখক এর ছবি

গ্রন্থকীটের দল আর কত নির্বোধ বানাতে চায় ! সুন্দর শিশু মুখগুলিতে কত না আতঙ্ক আর কষ্ট লুকিয়ে থাকে। কিন্ডারগার্ডেনগুলোর এই অসুস্থ চর্চার বিরুদ্ধে অভিভাবক জনমত গড়ে তোলা চাই। চাই আরো লেখালেখি।

রাজর্ষি

মেঘলা মানুষ এর ছবি

আমাদের সমাজটাই অসুস্থ প্রতিযোগিতায় ভরপুর। সেটা উপচে এসে পরেছে শিশুদের শিক্ষা ব্যবস্থায়।

আমি একদিন অনেক কষ্ট করে জেগেছিলাম, রাত ১২ বাজলে ঘড়ির কাঁটা এক হবে -সেটা দেখব। তখন আমি ক্লাস সেভেন পড়তাম। এখন, তৃতীয় শ্রেণী পড়ুয়া বাচ্চার কাছে শুনলাম তাকে নাকি প্রতিদিন ১২টা / সাড়ে ১২টা পর্যন্ত পড়তে হয়। মন খারাপ

অতিথি লেখক এর ছবি

মন খারাপ মন খারাপ স্কুলের বাচ্চাদের নাকি ট্যাব দেয়া হবে, শুনছি এখন। উদ্যোগটা সত্যি হলে ভালো, তবে তাতে না হয় ব্যাগের ওজন কমবে কিন্তু স্কুল, কোচিং-এই সময়গুলোর সমণ্বয় করা হবে কীভাবে?

দেবদ্যুতি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।