আমি পিতামাতার প্রথম সন্তান। তাহাদের দ্বিতীয় সন্তানটি ইতিমধ্যেই বিবাহের পাট চুকাইয়া ফেলিয়াছে। চেইন অফ কমান্ড ভাঙ্গিতে তাহার সাহসের অভাব তো দূরের কথা বিন্দুমাত্র দ্বিধাও কাজ করে নাই। সম্প্রতি তাহার একটি কন্যা সন্তান জন্মলাভ করিয়াছে। যদিও আমার পিতামাতা তাহাদের এই প্রথম সন্তানটিকে বহুপূর্ব হইতেই বিবাহ দেবার চেষ্টা করিয়া আসিতেছেন; এক্ষনে তাহাদের উপর যেন মহাকাশ ভাঙ্গিয়া পড়িল, তাহাদের ধৈর্যের বাঁধ যেন ভাঙ্গিয়া গেল। পুত্র আদৌ বিবাহ করিবে কিনা এই আশংকায় তাহারা তাহাকে কোনরকমে একটি বিবাহ দেবার জন্য উতলা হইয়া উঠিলেন। তাহাদের অস্থিরতা ক্রমে এমন পর্যায়ে পৌঁছাইল যে আত্মীয় স্বজন বিশেষ করিয়া আমার মাতা কে ‘পুত্রদায়গ্রস্ত মাতা’ বলিয়া আড়ালে-আব্ডালে ডাকিতে লাগিল।
সমস্যা হইল তাহাদের প্রথম পুত্রটি একে তালপাতার সেপাই তায় দেখিতেও কুদর্শন তাহার উপর কোন এক ভীমরতির বশে সম্প্রতি সে বহুজাতিক ব্যাংকের চাকুরি ছাড়িয়া দিয়া একটি অখ্যাত বেসরকারি গোয়ালে থুক্কু ফার্মে যোগদান করিয়াছে এবং একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খন্ডকালীন শিক্ষকতা করিতেছে। গুনাবলী বলিতে গেলে তাহার প্রায় কিছুই নাই – ফাঁকি দেয়া, চুরি করা, উপরি আয়, প্রমোশন পাইতে কাহাকেও ল্যাং মারিয়া ফেলিয়া দেওয়া, পয়সাকড়ির প্রতি কিঞ্চিত লালসা – এ সকলই তাহার মধ্যে অনুপস্থিত। উপরন্তু, ঘরের খাইয়া বনের মোষ তাড়াইবার একটি প্রবণতা তাহার মধ্যে বিদ্যমান। এমতাবস্থায় বিদগ্ধজনেরা ঘোর কলিতে এমনটি যে অসম্ভব নয় তাহা সাব্যস্ত করিলেন। সুতরাং সকল দিক হইতেই অপগণ্ড এই পুত্রটিকে বিবাহ দিতে যে বেশ বেগ পাইতে হইবে তাহাতে আর সংশয়ের কি আছে?! এমন ছেলের যেকোন বিবাহের প্রস্তাবেই সুব্হানাল্লাহ্ পড়িয়া ‘কবুল’ বলিয়া ফেলা উচিত। কিন্তু মড়ার উপর খাড়ার ঘায়ের মতন তিনি আবার “সাদামনের মানুষ” জাতীয় কাহাকেও খুঁজিয়া না পাইলে বিবাহ করিবেন না বলিয়া ধনুকভাঙ্গা পণ করিয়া বসিয়া আছেন। সাদা না হইলেও নিদেনপক্ষে off white তো হইতেই হইবে!
এমনি করিয়া দিন ভালই যাইতে ছিল, কিন্তু হঠাৎ একদিন একখানা প্রস্তাব আসিয়া উপস্থিত হইল। মেয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার, মেয়ের পিতাও অপর একটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর। প্রাথমিক পর্যায়ে পাত্র ও পাত্রীর জীবন বৃত্তান্ত ও ছবি চালাচালি এবং আদানপ্রদান চলিল অতঃপর সশরীরে দেখাদেখির পাটও চুকিয়া গেল। মেয়ের পরিবার রাজি, ছেলে ও ছেলের পরিবার রাজি, কাজীও রাজি – আসল রহস্য প্রকাশ পাইল, মেয়ে রাজি নয়! এত যে যজ্ঞ সমাপ্ত হইল তাহা সকলই মেয়ের অমতে হইয়াছে – এসকলই মুঠোফোনে সে পাত্রকে জানাইয়াছে। মেয়ের অমতে কিছুতেই বিবাহ করা চলেনা, সুতরাং পাত্র বিবাহ ভাঙ্গিয়া দিল। আর এদিকে পাত্রের পরিবারে সকলের মন আরও ভাঙ্গিয়া পড়িল! যাহাহউক সকলে কিছুদিন মুখ ভার করিয়া ঘরের মধ্যে ঘোরাঘুরি করিতে লাগিল যেন যত দোষ পাত্রঘোষ, তবে কিছুদিনের মধ্যে সকল কিছু আবার স্বাভাবিক হইয়া আসিল।
ইহার কিছুদিন পর আমি ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হইয়া পড়িলাম। সকলেই তখন সুযোগ বুঝিয়া বিবাহ না করিবার কুফল সমুহ সবিস্তারে বর্ণনা করিতে লাগিল এবং এক্ষনে একজন স্ত্রী থাকিলে কি কি সুবিধা পাওয়া যাইত তাহাও শোনা হইয়া গেল। অবস্থা গুরতর দেখিয়া আমার পিতামাতা খুলনা হইতে ছুটিয়া আসিলেন। আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হইল। কিছুদিন সেখানে স্যালাইনের সুঁইয়ের খোঁচা, ওষুধের গুতো আর বিশ্রামের কল্যণে সৃষ্টিকর্তার অশেষ করুণায় এডিস মশার মুখে ছাই দিয়া আস্তে আস্তে সুস্থ হইয়া উঠিলাম। এতদিন ঘোরতর অসুস্থতার কারনে বিবাহের বিষয়টি চাপা পড়িয়া ছিল কিন্তু তাহার হালে পুনরায় পানি পাইতে লাগিল। আমি যে এখনও পুরোপুরি সুস্থ হইনাই এবং কিছুদিনপর পুরো সুস্থ হইলে আমি যে বিবাহের ব্যাপারে সততার সাথে সক্রিয় এবং সচেষ্ট হইব তাহা পিতামাতা কে কোনরকম বুঝাইয়া খুলনা পাঠাইবার ব্যবস্থা করিলাম। তাহারাও বোধকরি শীঘ্রই শুভকাজ সম্পাদনের জন্যে সকল জায়গাতে গুপ্তচর লাগাইবার ষড়যন্ত্র করিয়া ঢাকা ত্যাগ করিলেন। তবে আমি তাহাদের কে যাহা কিছুই বোঝাইনা কেন মনের মধ্যে রবীন্দ্রনাথের একটি কবিতার শেষ দুটি লাইন ঘুরিতে লাগিল –
“বাকী অর্ধ ভগ্নপ্রাণ, আবার করেছে দান
খুঁজিয়া ফিরিতে সেই পরশপাথর”।
মন্তব্য
কিছু্তেই দুশ্চিন্তগ্রস্ত হইবেন না। প্রয়োজনে ইয়োগা চর্চা করিতে থাকুন। আশা হইতেছে পরশপাথরের শুভস্পর্শে অবশ্যই কোন না কোন সুবর্ণময়ীর দেখা পাইয়াই যাইবেন। কেননা সলিল সমাধিতে নিজেকে নিশ্চিন্তে উৎসর্গ করিবার মতো পাত্রীকারা অদ্যাবধি এই ধরাধাম হইতে নিশ্চিহ্ন হইয়া যায় নাই।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
যাক আশা আছে তাহলে
_________________________________________
তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ
আমি আজ চোর বটে!
বস ঘটনা আপনের হইলে, বিবাহ কইরেন না। এডিসে কামড়াইলে স্যালাইনের সূঁইয়ের খোঁচা আর অষুধের কেরামতিতে ভালো হইয়া যাইবার চান্স আছে। কিন্তু বিবাহ নামক ব্যামো হইতে কোনো আরোগ্য অদ্যবধি ডিসকভার / ইনভেন্ট হয় নাই।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আপনার এই মুল্যবান পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ। ভাবছি আমার সন্তানদেরকেও এই পরামর্শ দিয়ে যাবো ঃ-০
_________________________________________
তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ
আমি আজ চোর বটে!
দেখসেন? বউ থাকলে মশাও কামড়াইতে ভরসা পায় না।
আপনার অনাগতা শালির জন্যে ধূসর গোধূলি আগাম বুকিং দিয়েছে। হুঁশিয়ার।
হাঁটুপানির জলদস্যু
হা হা হা, নো প্রবলেম।
_________________________________________
তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ
আমি আজ চোর বটে!
চমত্কার বর্ণনা।
গল্প বলে মনে তো হয় না
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
একলা পথে চলা আমার করবো রমণীয়...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
হা হা হা, ধন্যবাদ!!!
_________________________________________
তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ
আমি আজ চোর বটে!
ভাই এত চিন্তায় কাম কি?
পুর ধর মার কাট থিওরি প্রয়োগ করেন।
বিয়া করে সুখে সংসার করেন।
ধুগোর কথায় কান দিবেন না।
লেখা অতি উত্তম হইছে।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
আপনার সর্বনাশা পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ
_________________________________________
তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ
আমি আজ চোর বটে!
লেখাটা ভালো লাগলো।
বি ডি আর ভাই আপনের ছড়াও কিন্তু লা জবাব...!!
_________________________________________
তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ
আমি আজ চোর বটে!
নতুন মন্তব্য করুন