বইটা বহুদিন আগে বাংলাদেশের এক নামজাদা রবীন্দ্রগেঁড়ের বাসায় দেখেছিলাম। পাতা উলটে বুঝেছিলাম যে, রবীন্দ্রসঙ্গীত গায়নরীতির প্রায়োগিক দিকটি নিয়ে বইটা লেখা। কিন্তু সেই বিশিষ্ট রবীন্দ্রগেঁড়েটি বই ইত্যাদি ধার করলেও ধার দিতে চান না, দিলে যদি তাঁর চে’ বেশি শিখে ফেলে? এরপর প্রায় এক যুগ কেটে গেল। বাংলাদেশের তিন তিনটি বড় শহরের প্রায় সবগুলো পুস্তক বিপণীর কোনটিতেই বইটির সন্ধান পেলাম না। অর্ডার দিয়েও লাভ হল না কোন। বোধহয় আউট অফ প্রিন্ট! কিছুদিন আগে একটি ক্লান্তিকর ১৮ ঘণ্টার শিফট সেরে এসে সকালে একটু ঘুমের চেষ্টা করছি, এমন সময়, রাজীবদার ফোন – উনি বাংলাদেশে এসেছেন এবং সুবিনয় রায়ের “রবীন্দ্রসঙ্গীত সাধনা” এবং সুরেশ চক্রবর্তীর “সুধাসাগর তীরে” ও “স্মরণবেদনার বরণে আঁকা” বই তিনটি আমার জন্য জেরক্স করিয়ে এনেছেন। সাথে আছে আরেকটি বিরল গ্রন্থ বিমলাকান্ত রায়চৌধুরীর “ভারতীয় সঙ্গীতকোষ।” – চাতক পেল ধারাজল, তাও মেঘ না চাইতেই! কারণ আমি বইগুলো চেয়ে তাঁকে ফেসবুকে মেসেজ দিলেও সময়াভাবে তিনি জবাব দেন নি। তাই তিনি মনে করে নিয়ে আসবেন- সে আশা করিনি! সুবিনয় রায়ের বইটি অনন্য, কারণ রবীন্দ্রসঙ্গীতের গায়নরীতি নিয়ে এটিই একমাত্র বই। রবীন্দ্রসঙ্গীতের কাব্য, নন্দনতত্ত্ব, ভাবনা, সুরের বিশ্লেষণ, শিল্পীদের জীবনী নিয়ে অনেক বই থাকলেও কেউই ব্যবহারিক দিকগুলো নিয়ে আলোকপাত করেননি। গানবাজনা একটি পুরোপুরি প্রায়োগিক বিষয়। কিন্তু প্রায়োগিক বিষয়েরও ভাষাগত বর্ণনা সম্ভব এবং প্রয়োজনীয়, অনেকটা প্র্যাকটিক্যাল ম্যানুয়ালের মত। পাশ্চাত্য সঙ্গীতের প্রতিটি আঙ্গিক নিয়ে এমন অজস্র বই আছে, তাই ওদের সমঝদারি সাচ্চা। সুবিনয় রায়ের লেখা তাঁর অসামান্য সুরেলা গায়কী ও গায়নরীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হলেও অবিসংবাদিত কিছু নয়। সুবিনয় রায় তাঁর সারাজীবনের চর্চা ও অভিজ্ঞতা থেকে অত্যন্ত কার্যকর কিছু পরামর্শ দিয়েছেন কণ্ঠ ও গায়কী এবং সেইসঙ্গে রবীন্দ্র-গানের সাথ-সঙ্গত ও আবহসঙ্গীত প্রসঙ্গে। কিন্তু কিছু বিষয়ে গোঁড়ামি ও যুক্তিহীনতা প্রকাশিত হয়েছে। বইটিতে রবীন্দ্রনাথের রাগসঙ্গীত-ভাঙা গানগুলো এবং ঢালাগানের গায়নপদ্ধতি বিশেষভাবে বর্ণিত হয়েছে এবং সব জায়গায় লেখকের মতামত যুক্তিযুক্ত না হলেও তা গায়কদের জন্য পথপ্রদর্শক। ভানুসিংহের পদাবলী নিয়ে কিছু কথা থাকলেও বইটির সীমাবদ্ধতা হচ্ছে যে, এখানে রবীন্দ্রনাথের পরিণত বয়সের ‘আধুনিক কাব্যগীতি’ –যা রাগসংগীতের নিয়মের অনুসারী নয় এবং পাশ্চাত্য ও লোকসঙ্গীত ভাঙাগান - এই ধাঁচের গানগুলোর কণ্ঠপ্রক্ষেপণ, উচ্চারণ ও গায়কী প্রসঙ্গে একটি কথাও নেই। বইটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ তানপুরার ব্যবহার, স্পষ্টোচ্চারণ, অকম্পিত স্বরোচ্চারণ, দ্রূত ছন্দের গানে গিটার ও সেতার ব্যবহারের পরামর্শ ইত্যাদি।
আলোচ্য গ্রন্থে সুবিনয় রায়ের শ্রেষ্ঠ অবদান তানপুরা যন্ত্রটির গুরুত্ব সম্পর্কে সঙ্গীতশিক্ষার্থীদের সচেতন করা। প্রথম অধ্যায়ের প্রাথমিক সঙ্গীতসাধনা অধ্যায়টির সূচনা পর্বেই রয়েছে তানপুরার ব্যবহার। লেখকের মতে – “তানপুরার সাহায্যে সঙ্গীতচর্চা করলে দুটি সাক্ষাৎ সুফল পাওয়া যায়; প্রথমত, এতে কণ্ঠস্বরের তীক্ষ্ণতা(Keenness) ও অনুনাদ (resonance) বৃদ্ধি পায়, দ্বিতীয় বিভিন্ন স্বরগুলিকে সুদৃঢ় ও নিখুঁতভাবে কণ্ঠে প্রকাশ করবার ক্ষমতা লাভ করা যায়।” প্রসঙ্গত বলে রাখি বাংলাদেশে তানপুরা যন্ত্রটির ব্যবহার সঙ্গীতশিক্ষার ক্ষেত্রে চূড়ান্তভাবে অবহেলিত। পুরুষ কণ্ঠের তানপুরা তো প্রায় পাওয়াই যায় না। এখানে এখনো অনেকেই হারমোনিয়ম বাজাতে পারাটাকেই সঙ্গীতশিক্ষার পরাকাষ্ঠা মনে করেন। হারমোনিয়ম বস্তুত একেবারে প্রাথমিক সঙ্গীতশিক্ষার্থীদের জন্য সহজে স্বরগুলো চিনতে সাহায্য করে। কিন্তু হারমোনিয়ামের সাহায্য ছাড়া যিনি সুরে গাইতে পারেন না, তিনি কোনভাবেই সুগায়ক নন। কারণ ভালো কণ্ঠ যন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল নয়। তানপুরায় শুধু মাত্র সুরের আবহটা পাওয়া যায় এবং সুরে নিখুঁতভাবে মেলানো তানপুরা থেকে রাগসঙ্গীতে ব্যবহৃত প্রতিটি শ্রুতি পাওয়া যায় যেগুলো হারমোনিয়ম, পিয়ানো, অর্গ্যান বা কি বোর্ডে অনুপস্থিত। কাজেই তখন সত্যিকার অর্থেই সুরের পরীক্ষা দিতে হয় গায়ককে। এভাবে খালি গলায় নিখুঁত গাইবার অভ্যেসটাও গড়ে ওঠে। পদার্থবিদ্যার দৃষ্টিকোণ থেকে বললে, তানপুরার তারের কম্পন থেকে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ওভারটোন নির্গত হয় বলে এই আবহ গলা ও কানকে ভীষণভাবে সুরেলা করে তোলে এবং সঙ্গত কারণেই রাগসংগীতে এই যন্ত্রটি অপরিহার্য। হারমোনিয়ম অভ্যস্ত গলায় ভৈরোঁর অতিকোমল আন্দোলিত রেখাব, তোড়ির ঈষৎ চড়া কোমল রেখাব এবং শ্রীর আরো চড়া কোমল রেখাব সঠিক স্থানে প্রকাশ করা অসম্ভবই বলা চলে। দুঃখজনকভাবে দেখা যায় বহু বছর গান শিখেও এদেশে অনেকেই ঠিকভাবে তানপুরা বাঁধতে বা বাজাতে জানেন না। ঢাকায় যাদুঘরে পণ্ডিত অরুণ ভাদুড়ির কনসার্টে জনৈক ব্যক্তি শেষদিকে তানপুরার প্রথম দুটো তার বাজিয়ে যন্ত্রটির প্রতি নিজের অজ্ঞতা ও অশ্রদ্ধা প্রকাশ করেছেন। আবার এঁরাই লোকে গিটার বাজিয়ে রবীন্দ্রনাথ নজরুলের গান করলে ক্রুদ্ধ হন, লোকে ক্লাসিক্যাল গানবাজনা শোনে না বলে অভিযোগ করেন। অথচ তাঁরা একবারও ভাবেন না যে, তাঁদের নিজেদের শিল্পের প্রতি যেটুকু শ্রদ্ধা ও আত্মনিবেদন আছে, তার চেয়ে অনেক বেশি পরিশ্রম ও আত্মনিবেদন থাকে একজন গিটার ও রক শিল্পীর- আঙুল কেটে তারা শেখেন, মাত্র এক-দেড় ঘণ্টা বাজিয়েই তাঁরা ক্লান্ত হন না!
রবীন্দ্রসংগীতোপযোগী কণ্ঠ গড়ে তোলার জন্য সুবিনয় রায় কতকগুলো কার্যকর পরামর্শ দিয়েছেন- যেমন- সরগম, পালটা, হামিং ইত্যাদি। তাছাড়া রবীন্দ্রসঙ্গীতে বেশি প্রযুক্ত রাগগুলোর সম্যক শিক্ষার ওপর জোর দিয়েছেন। রাগসঙ্গীতে অর্থাৎ ধ্রুপদ, ধামার, খেয়াল, টপ্পা ও ঠুমরীতে ব্যবহৃত প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ তালের প্রচলিত ঠেকার ( ঠেকা- তবলার অলংকার বর্জিত সাধারণ বোল, পাখোয়াজের ক্ষেত্রে একে থপিয়া বলে) পাশাপাশি বিষ্ণুপুর ঘরানায় প্রচলিত ঠেকাও এখানে দেয়া আছে। রবীন্দ্রনাথ বেশ কয়েকটি নতুন তালের প্রচলন করেছিলেন যেমন ঝম্পক(৫ মাত্রা), ষষ্ঠী(৬ মাত্রা, ২/৪ ছন্দ), রূপকড়া, নবতাল, ৫/৫ ছন্দের ১০ মাত্রার তাল, একাদশী ও নবপঞ্চ তাল(১৮ মাত্রা)। প্রতিটি তালের সঠিক ঠেকার উল্লেখ বইটির একটি সম্পদ।
বইটির দ্বিতীয় অধ্যায় বহুচর্চিত, বিতর্কিত এবং স্পর্শকাতর বিষয় অর্থাৎ “রবীন্দ্রসংগীতের গায়কী।” সুবিনয় রায় গায়কীর সংজ্ঞা দিয়েছেন, “ ভারতীয় সংগীতের কোনো একটি বিশেষ শাখার সাধনায় ও তার পরিবেশনে যে সকল মূলগত আদর্শ বা পদ্ধতি অনুসরণ করে চললে সেই সংগীত শাখার স্বরূপ ও বৈশিষ্ট্য সকল ফুটে ওঠে, সেগুলিই হল সেই সংগীতশাখার গায়কী বা গায়ন পদ্ধতি। এই অর্থেই বর্তমান আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখা হচ্ছে। প্রথমত, রবীন্দ্রসংগীতের গায়কী বা গায়ন পদ্ধতি বলতে আমরা কী বুঝি? খুব স্পষ্ট কথায় সংক্ষেপে বলতে গেলে রবীন্দ্রনাথের রচিত গানগুলি, তাঁর ইপ্সিত ও তাঁরই প্রবর্তিত সংগীত পদ্ধতি অনুসারে পরিবেশন করা- এটাই হল রবীন্দ্রসংগীতে গায়কীর আদর্শ।”
প্রথমেই কণ্ঠস্বর। এ প্রসঙ্গে সুবিনয় রায় অত্যন্ত যৌক্তিকভাবেই অনুনাদ, স্বরপ্রকাশে স্বাভাবিকত্ব ও স্বচ্ছন্দতা- এই তিনটি গুণের কথা বলেছেন। অত্যধিক অনুকরণের ফলে অস্বাভাবিক ও কৃত্রিম কণ্ঠস্বরের কথাও তিনি উলেখ করেছেন। অলংকার প্রসঙ্গে পরিমিতির গুরুত্ব আলোচিত হয়েছে। লেখকের ভাষায়-“ রবীন্দ্রগায়কীর প্রভাবে হিন্দুস্থানী সংগীতের অলংকারগুলি যেন নতুন রূপ ধারণ করে। অলংকারগুলির এই স্বতন্ত্র রূপদানের ক্ষমতা অর্জন করতে হবে। কেবলমাত্র হিন্দুস্থানী শাস্ত্রীয় সংগীতের অনুশীলনের দ্বারা অলঙ্কার সমূহের প্রয়োগ ক্ষমতা যিনি অর্জন করেছেন, তাঁর পক্ষে এ কাজ চট করে সম্ভব নয়।” অর্থাৎ শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অলঙ্করণের কথার ভাব অনুযায়ী মোডিফিকেশনের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
শ্রুতি হচ্ছে ভারতবর্ষের সঙ্গীতের প্রাণ এবং শ্রুতির কারণেই বিশ্বসঙ্গীতের দরবারে সবচেয়ে সুরেলা গানবাজনার মুকুটের দাবিদার ভারতবর্ষের সঙ্গীত অর্থাৎ রাগসঙ্গীত, লোকসঙ্গীত,কাব্যসঙ্গীত ইত্যাদি। - অবশ্য তা সুরে গীত ও বাদিত হলে, বেসুরো হলে সেটার কৌলীন্য যাই হোক না কেন, সেটা সঙ্গীত নয়! ব্যাপারটা সহজ করে বলি অনভিজ্ঞদের জন্য, যাঁরা জানেন তাঁরা উপেক্ষা করবেন। কড়ি-কোমলে মিলে একটা সপ্তক বা ক্রোম্যাটিক স্কেলে বারোটা স্বর থাকে। বিশ্বের সব গানবাজনাকেই এই ১২ টা স্বরের মধ্যেই ধরা যায়। কিন্তু উপমহাদেশের সঙ্গীতে এই ১২ টির ফাঁকে ফাঁকে স্যান্ডুইচড হয়ে আছে আরো ১০টি সূক্ষ্ম স্বর বা ওভারটোন। এগুলোর শাস্ত্রীয় নাম শ্রুতি। শ্রুতির চুলচেরা বিশ্লেষণ ও ফ্রিকুয়েন্সির ভাগ দেখিয়েছেন অনেক পণ্ডিত। তাত্ত্বিক বিভাগের চেয়ে গেয়ে বা বাজিয়ে শ্রুতি প্রকাশের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেছিলেন উস্তাদ বড়ে গুলাম আলী খাঁ সাহেব। সেটাই সমর্থনযোগ্য, কেননা সঙ্গীত আবশ্যকভাবেই প্রয়োগমুখী বিদ্যা। এই শ্রুতিগুলো শুধুমাত্র কণ্ঠে এবং বোয়িং ও প্লাকড তারযন্ত্রেই প্রকাশ করা সম্ভব। এবং শ্রুতির প্রকাশ নির্ভর করে রাগানুকূল স্বরোচ্চার বা ইন্টোনেশনের ওপর। শ্রুতির সাথে কণ বা স্পর্শস্বরের ভূমিকা অবিচ্ছেদ্য। গ্রেস নোট পাশ্চাত্যের সঙ্গীতে থাকলেও রাগ সঙ্গীতের জ্যান্ত বা সচল স্বর পৃথিবীর আর কোন সঙ্গীতে পাওয়া যায় না। এ কারণেই ভৈরব, ভৈরবী, তোড়ি, শ্রী, মারবা(উচ্চারণ ওয়া) প্রতিটি রাগের কোমল ঋষভ বিশিষ্ট, ঠিক তেমনি দরবারী ও কাফির কোমল গান্ধারেও রয়েছে শ্রুতির পার্থক্য। রবীন্দ্রসংগীতে শ্রুতির সঠিক ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আরো বলে রাখি হিন্দুস্থানী সঙ্গীত পদ্ধতির ২২ শ্রুতির বিভাজনের সঙ্গে স্বরবিতানের শ্রুতির বিভাগের পার্থক্য রয়েছে। হিন্দুস্থানী পদ্ধতিতে সা, মা, পা প্রত্যেকে ৪ শ্রুতির স্বর, ঋষভ ও ধৈবৎ ৩ শ্রুতির এবং গান্ধার ও নিষাদ ২ শ্রুতির স্বর। তাই সুবিনয়বাবুর উল্লেখিত ‘অতিতীব্র’ নিষাদ ( শুদ্ধ নি ও সা’ এর মধ্যবর্তী শ্রুতিগুলি) হিন্দুস্থানী পদ্ধতিতে নেই। সম্ভবত মূর্ছনার পরিবর্তনের কারণে এটা হয়েছে। অতি ও অনুকোমল শব্দদুটির প্রয়োগেও জটিলতার জন্ম হয়েছে। সুবিনয়বাবু ‘অতি’ বলতে একটু চড়ার দিকে এবং অনু বলতে কোমলস্বরের চেয়ে একটু খাদের দিকে বুঝিয়েছেন। কিন্তু আমরা তার উল্টোটাকে যুক্তিযুক্ত মনে করি এবং প্রচলিত প্রথাও তাই। অতিকোমল বলতে অতিরিক্ত কোমল বা কোমল স্বরের চেয়েও কোমলতর শ্রুতিকে বোঝায়। যেমন ভৈরব রাগের অতিকোমল রেখাব এর স্থান সা এর ঠিক পরেই এবং সাধারণ কোমল রেখাবের ঠিক আগে। তেমনি ‘অনু’বলতে কোমল স্বরের অনুবর্তনকারী কিন্তু শুদ্ধ বা চড়ি সুরের ঠিক আগের শ্রুতিকে বোঝায়। তীব্র স্বরের ক্ষেত্রে ‘অতি’ শব্দের অর্থ উলটে যাবে, কারণ তখন অতি তীব্র মধ্যম বলতে তীব্রমধ্যমের চেয়েও অতিরিক্ত তীব্র মধ্যমকে বোঝাবে। এই জটিলতার কারণ কি তা কে জানে? পণ্ডিত রবিশঙ্করের কুমারপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ওপর রাগের কারণও কি এই জটিলতা নাকি? রবশঙ্কর শ্রীর রেখাবকে বলেছেন অতিকোমল, অথচ শ্রী রাগের কোমল্ রেখাব সবচেয়ে চড়া শ্রুতি। তবে কি রবিশঙ্করও ‘অতি’ শব্দটি চড়া অর্থে ব্যবহার করেছিলেন? বেতারে হারমোনিয়াম বর্জনের ফলে শ্রুতির প্রয়োগে উন্নতি হয়েছিল বলে লেখক মত প্রকাশ করেছেন।
উচ্চারণ রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রাণ। অনেকেরই ধারণা রবীন্দ্রসঙ্গীতের একটি বিশিষ্ট উচ্চারণভঙ্গী আছে যেটা মূলত ‘আ’ কার গুলোকে একটু ‘অ’ আর আ এর মাঝামাঝি করে উচ্চারণ করা। অনেকেই মনে করেন রবীন্দ্রসঙ্গীত মোটা গলায় ভালো মানায়। কেন মনে করেন জানি না কারণ গান সুরেলা গলায় ভালো মানায়- সে গলা মোটা না চিকন সে চিন্তা ব্যক্তিগত রুচিতে গুরুত্বপূর্ণ হলেও সাঙ্গীতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সম্পূর্ণ গুরুত্বহীন। অ-ঘেঁষা আকার উচ্চারণ করলে গলাটা কৃত্রিমভাবে একটু মোটা শোনায়। সম্ভবত এ কারণেই এই বিকৃতির জন্ম এবং এটাকেই অনেকে ভুল করে রবীন্দ্রসংগীতের উচ্চারণরীতি ভেবে শুদ্ধ উচ্চারণের বারোটা বাজাচ্ছেন। বেশ কয়েকজন বিখ্যাত গায়ক গায়িকারও কিঞ্চিদাধিক এই দোষ ছিল। লেখক বলছেন, “ অনেকে মনে করেন, রবীন্দ্রসংগীতে একটি বিশেষ ধরণের উচ্চারণ-ভঙ্গি আছে, যেটা বিশেষ ভাবে শিক্ষণীয়। কথাটা সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করা চলে না। উচ্চারণের মধ্যে পূর্বোক্ত স্বরবর্ণ ব্যঞ্জনবর্ণের বাঁধাধরা নিয়মকানুন ছাড়াও একটা ব্যক্তিগত দিক আছে।” অত্যধিক অনুকরণের ফলে উচ্চারণে কৃত্রিমতা এবং নিজস্ব স্বাভাবিক উচ্চারণের ক্ষমতা হারানো সম্পর্কে লেখক আমাদের সতর্ক করে দেন। অতীতের শিল্পীদের অনেক উচ্চারণই আমাদের কানে উদ্ভট ঠেকে। যেমন “বিমল আনন্দে জাগোরে’ জ্ঞান গোঁসাই গেয়েছেন "বিমল য়ানন্দে" ইত্যাদি। সেকালের কথা বলার উচ্চারণ কেমন ছিল তার নমুনা আমরা শুনতে পাই না। রবীন্দ্রনাথের নিজের উচ্চারণ প্রায় এখনকার মতোই ছিল। রবীন্দ্রনাথের স্বকণ্ঠের গান যেমন, “তবু মনে রেখো,” আমার শেষ পারাণির কড়ি, “ওগো কাঙাল আমারে কাঙাল করেছ ইত্যাদির উচ্চারণরীতি আধুনিক উচ্চারণ রীতির মতই। তবু মনে রেখোতে “একদিন যদি” র উচ্চারণে প্রথমবার “য়্যাকদিন’ হয়ে গেছে কিন্তু বোঝা যায় যে ওটা শব্দটাকে সুরে রাখতে গিয়ে দুর্ঘটনাক্রমে হয়ে গেছে। বাকি তিনবারের উচ্চারণ নিখুঁত আধুনিক উচ্চারণ। তাঁর গেয়ে, নেয়ে ইত্যাদি যে একটু ‘গেইয়ে’, ‘নেইয়ে’ এমন লেগেছে সেটার জন্য তাঁর সরু কণ্ঠ ও বাচন ও গায়নভঙ্গী দায়ী। তারপরও বলতে হবে যে চল্লিশ-পঞ্চাশ এমনকি ষাটের দশকের গোড়াতেও রবীন্দ্রনাথের মত আধুনিক উচ্চারণ বিরল ছিল। পঙ্কজ মল্লিক এবং হেমন্তের প্রথম যুগের গান শুনলে রবিঠাকুরকেই নবীনতর মনে হয়! যদিও উচ্চারণে বাচিক আধুনিকতা হেমন্তবাবুই পরবর্তীতে এনেছেন। তবে কবিকণ্ঠের অন্ধজনে দেহ ‘আলো’টা কিন্তু 'য়ালো' হয়ে গেসল! তবে আধুনিক কালে ওয়াতিফ ওয়াসলাম( কারণ তার প্রতিটা আ কার রকিং হয়ে ওয়া হয়ে যায়!) বা তাহসানের আলো আলো আমি কখনো যদি “ওয়ালো ওয়ালো ওয়ামি কখনো খুঁজে পাবো না" – ইত্যাদির তুলনায় সেটা এমন কোন বিকৃতি ছিল না! আমরা কিন্তু ওগুলোকে সেকেলে বলি আর এসব বিকৃতিকে ‘রকিং’ বলি! সত্যি বলতে এগুলো সবই বিকৃতি এবং বর্জনীয়। যাই হোক, সুবিনয় রায় অত্যন্ত উদারতার পরিচয় দিয়ে বলেন," রবীন্দ্রসংগীতে এবং অন্যান্য কাব্যধর্মী বাংলা গানে কথার উচ্চারণ জিনিসটা বিবর্তনশীল (evolutionary)। যুগের হাওয়ার সঙ্গে, রুচি পরিবর্তনের সঙ্গে, জনসাধারণের শিক্ষাদীক্ষা ও শিল্পচেতনার উন্নতিসাধনের সঙ্গে গানে কথার উচ্চারণভঙ্গির পরিবর্তন ঘটেছে এবং হয়তো আরো ঘটবে। বিভিন্ন যুগের শিল্পীদের কণ্ঠজাত উচ্চারণভঙ্গি ও উচ্চারণপদ্ধতির মাধ্যমেই উচ্চারণের পরম্পরা প্রবর্তিত হয়ে এসেছে।” শ্বাসনিয়ন্ত্রণ এবং রবীন্দ্রসাহিত্যের চর্চার গুরুত্ব নিয়ে উপকারী আলোচনা বইটিকে আরো কার্যকর করেছে।
চলবে।
[লেখাটি বিশিষ্ট ভাষাতাত্ত্বিক ও সঙ্গীতবোদ্ধা রাজীব চক্রবর্তীকে উৎসর্গ করা হল।]
মন্তব্য
পদার্থবিদ্যা না বলে শব্দবিদ্যা বলা ভালো মনে হয়।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
ধন্যবাদ।
বইটির প্রসঙ্গে প্রায় এক যুগ আগের ওই ঘটনার উল্লেখ দরকার ছিল। অন্তত আমার কাছে।
গেঁড়ে শব্দটি এখানে আঁতেল অর্থে ব্যবহৃত।
শব্দবিদ্যা কি পদার্থবিদ্যার অন্তর্গত নয়? শব্দবিদ্যা লিখলে আরো স্পেসিফিক হত -সেটা ঠিক।
ইউটিউবে এই সংক্রান্ত ভালো ভিডিও নেই। আপনি এই লিঙ্কে গিয়ে বেসিকগুলোঝালিয়ে নিতে পারেনঃ
http://itcsra.org/
এ সংক্রান্ত আগ্রহ জাগলে গান-বাজনার সাথে সরাসরি যুক্ত হতে পারলেই সবচেয়ে ভালো।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
লেখাটি বেশ সময় নিয়ে পড়লাম। রবীন্দ্রসংগীতের এই বিষয়গুলো জানা ছিল না।
রাসিক রেজা নাহিয়েন
অসাধারণ লেখা, আরেকটু সহজবোধ্য করার জন্য কি ছবি ব্যবহার করা যায়? শ্রুতিগুলির অবস্থান যদি পিয়ানো কী গুলোর মাঝে মাঝে কোথায় বসবে বলা যেত তাহলে অনেকেই বুঝে যেত, তানপুরার ম্যাপটাও সম্ভব হলে কিন্তু দেয়া যেত, তাতে আমার মত পাঠক, যারা একটু আধটু থিওরী জানে তারা চট করে ধরে ফেলত!!!
ধন্যবাদ।
শ্রুতির ম্যাপিং আসলে বীণার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। গীটারেও চেষ্টা করলে সম্ভব। তানপুরার গুঞ্জনে শ্রুতিগুলো মিশে থাকে। ওই এইচ, এস, সির ফিজিক্সে যেটা পড়েছেন- তেমনই। ওগুলো হচ্ছে সূক্ষ্ম উপসুর। ভবিষ্যতে ওগুলো নিয়ে লেখার চেষ্টা করব। কিন্তু আমার কি যোগ্যতা আছে এই ব্যাপারগুলো নিয়ে লেখার? কিছুই তো শিখতে পারি নি।
রবীন্দ্রসংগীতের গায়কী'র ব্যাপারে আমার একটা টোটকা পদ্ধতি আছে। আমি 'লাবণ্য পূর্ণপ্রাণে' গানটা দশ জনের কণ্ঠে যোগাড় করেছি। শিল্পীরা হচ্ছেন ঋতু গুহ, সুবিনয় রায়, স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত, অনিরুদ্ধ ঘোষাল, ইন্দিরা দাশ, জয়তী চক্রবর্তী, কবিতা কৃষ্ণমূর্তি, মোহন সিং, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা আর অজয় চক্রবর্তী। পর পর এই দশ জনেরটা শুনে বোঝার চেষ্টা করেছি কোনটা 'আমার' কাছে রবীন্দ্রসঙ্গীত মনে হলো। দেখলাম এক হিসাবে সুবিনয় রায় (আইন-কানুন বিচারে) আরেক হিসাবে কবিতা কৃষ্ণমূর্তি (স্পিরিট বিচারে)। অবশ্য স্পিরিট বিচারে অনিরুদ্ধ ঘোষালও পাশ মার্ক পান। আগেই বলেছি পদ্ধতিটা টোটকা। সুতরাং এখানে পাত্রাধার তৈল আর তৈলাধার পাত্র বিতর্ক করার দরকার নেই।
"সেই সংগীত শাখার স্বরূপ ও বৈশিষ্ট্য সকল ফুটে ওঠে" এই বাক্যে যদি আমরা আস্থা রাখি তাহলে প্রথিতযশা অনেক রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীর গায়কীই আর সঠিক থাকে না। আমি সুবিনয় রায়ের এই উক্তি জানার আগে থেকেই এই প্রকার মতে আস্থা রাখি। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমার হিসাবে প্রয়াত শিল্পীদের মধ্যে দেবব্রত বিশ্বাস, কলিম শরাফী, জাহিদুর রহিম, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সুবিনয় রায়, সুচিত্রা মিত্র ছাড়া আর কারো কণ্ঠের সকল রবীন্দ্র সঙ্গীত ঋজু, আস্থা-ইনটিগ্রিটি-ডিগনিটি সম্পন্ন সঙ্গীত মনে হয় না। জীবিত ও প্রয়াতদের একটা বড় অংশের রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনলে মনে হয় নাঁকি কান্না, মেরুদণ্ডহীন, অপদার্থদের গান। এই দল নিজেদেরকে আবার একটা বিশেষ ঘরাণা'র বলে দাবী করেন। গানের বাণী'র মর্মার্থ যাদের মর্মে পশে না, নিজের চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তন ও আধুনিকতাকে যারা গ্রহন করতে পারে না তাদের আউটপুট এমনই হবার কথা। এতে বাংলাদেশ-ভারতজুড়ে কেবল দলাদলি, খেয়োখেয়ি বেড়েছে - রবীন্দ্রসঙ্গীতের সঠিক চর্চ্চা বাড়েনি। যাকগে, ছোট মুখে বড় কথা আর না বলি।
"অনেকে মনে করেন, রবীন্দ্রসংগীতে একটি বিশেষ ধরণের উচ্চারণ-ভঙ্গি আছে, যেটা বিশেষ ভাবে শিক্ষণীয়।" এই বাক্যে যারা আস্থা রাখেন তাদের জন্য করুণা। পূর্বোক্ত খেয়োখেয়ির দলের মধ্যে এসব ধারণা বিদ্যমান। বাক্যস্থিত পদসমূহের মধ্যে কোন পদে কীরূপ জোর দিতে হবে সেটা বাক্যের সার্বিক অর্থের ওপর নির্ভর করে। এই জোরের হেরফেরের জন্য উচ্চারণের পার্থক্য হয় না। pronunciation, tone, prosody'র পার্থক্য না বুঝলে তো মুশকিল! শব্দের বানান পরিবর্তিত না হওয়া পর্যন্ত উচ্চারণে পরিবর্তন হবার কোন উপায় নেই।
লেখকের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনাপূর্বক একটা অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে বলছি। সবার সঙ্গীতশিল্পী হবার দরকার নেই, তবে সবার সঙ্গীত শেখার দরকার আছে। বিদ্যালয়ে, বিশেষত মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত সঙ্গীতের প্রাতিষ্ঠানিক চর্চ্চার ব্যবস্থা থাকা উচিত। ছোটবেলা থেকে রবীন্দ্র-নজরুল-দ্বিজেন্দ্র-অতুলপ্রসাদ-রজনীকান্ত-লালন-হাসন-আবদুল করিমদের মতো সঙ্গীতকারদের গান শেখালে, শোনালে, অর্থ বুঝিয়ে দিলে ভবিষ্যত প্রজন্মে অজকূলের সংখ্যা হ্রাস পাবে।
সঙ্গীতের ওপর বিষয়ভিত্তিক লেখা আসুক। তাতে তুমুল আলোচনা হোক।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
প্রথমেই বলে রাখছি পাণ্ডবদা, আমাকে কিছু গান দিতে হবে আপনার। বিশেষত, জাহিদুর রহিম এবং আবদুল আহাদ। অনিরুদ্ধ ঘোষালের গানও আমি শুনিনি।
ব্যক্তিগতভাবে আমি রবীন্দ্রসঙ্গীত পছন্দ করি আমার দেশোয়ালি দাদু জর্জদা, হেমন্ত, কলিম শরাফী, অশোকতরু এবং অবশ্যই কিশোর কুমারের গলায়। কিশোরের গলায় "বিধির বাঁধন কাটবে তুমি" ভুলতে পারি না। সুবিনয় রায়ের প্রথম দিককার রেকর্ডগুলো দুর্দান্ত। সুচিত্রা মিত্রের গান বেশি স্পর্শ করে, কণিকা, নিলীমার গান ভালো লাগে- কিন্তু সব গান না। কবীর সুমন এবং অজয়ের গলায় কিছু গান, রশিদ খাঁর গলায় "যে রাতে মোর দুয়ারগুলি"-র ভিন্ন রূপ অসাধারণ।
আসলে রবীন্দ্রসঙ্গীতের বিশেষ গায়কীটা শৈলজার স্কুলিং থেকে এসেছে। লেখার উপসংহারে সেটা নিয়ে আলোচনা করব।
ক্ষমাপ্রার্থনা অবান্তর, বিষয়টি অপ্রাসঙ্গিক তো নয়ই বরং রীতিমতো প্রয়োজনীয় একটি উদ্যোগ। শিক্ষা-দীক্ষায় উন্নত দেশগুলোতে সঙ্গীতশিক্ষাকে স্কুলগুলোতে খুবই গুরুত্ব দেয়া হয়। পাশ্চাত্যের শিক্ষিত লোকেরা কিন্তু হার্মোনি, অর্কেস্ট্রা, কাউন্টার, কমপ্লিমেন্ট, বেস, টেনর, ব্যারিটোন, সোপ্রানো- ইত্যাদি সবই রীতিমত বোঝেন। আমরাই শুধু ভৈরব, পূরবী, ইমন, বেহাগের নামে অর্থহীন "আ-আ-" শুনি। এর জন্য দায়ী কুশিক্ষা এবং অন্ধ অনুকরণ। অজকূল বেড়ে যাচ্ছে। ভীমসেনজির গানের চেয়ে যখন সোনু নিগমের ইদানীংকার ন্যাকামি এবং মিহি গলায় তারস্বরে চীৎকারের গান আমার ছোট ভাইয়ের ভালো লাগে- তখন হতাশ লাগে। কিন্তু গায়ের জোরে কি আর ভালো সুর-সংস্কৃতিকে প্রমোট করা যায়? সঙ্গীতশিক্ষার মান বাড়লে এ অবস্থার পরিবর্তন হবে।
অনেক ধন্যবাদ- তুমুল আলোচনার জন্য। বইটা পড়েছেন?
এটা মনে হয় একটু অতিকথন হয়ে গেল। সঙ্গীত বিভাগ এবং সঙ্গীত থেকে পাশ করা ছাত্রদের অবস্থা পশ্চিমে (অন্ততঃ আমেরিকায়) কিন্তু খুব একটা ভাল না; চাকরির অভাবে এসব ছাত্রদের অনেকেই এখন ট্র্যাক চেঞ্জ করে অন্যান্য পেশায় চলে যাচ্ছে। আর হাইস্কুলে সঙ্গীতের গুরুত্ব নির্ভর করে ছাত্রসংখ্যার ওপর। যে সেমিস্টারে ছাত্র কম থাকে, সেই সেমিস্টারে সঙ্গীতের ওপর কোর্স পড়ান হয় না।
এটা হয়ত ৫০ বছর আগে সঠিক ছিল, এখন অতোটা না। অপেরা দর্শকশ্রোতাদের মধ্যে অর্ধেকের বেশী হল ষাটোর্ধ বয়সের নারীপুরুষ। তরুণদের আকৃষ্ট করার জন্য এখন অপেরাগুলিতে নানারকম কারিগরি গিমিকের আশ্রয় নেয়া হয়, যা আসলে আরও distracting। এসব গিমিক দেখতে যেয়ে মানুষ সঙ্গীতের দিকে মনোযোগ কম দেয়।
পশ্চিম বলতে শুধু মার্কিনীদের বুঝলে সেইটা একটা সমস্যা বটে। আর স্কুলে গুরুত্ব দেয়া হয় কি হয় না সেটার সাথে পাশ করে কে কতো টাকা কামালো সেটার সম্পর্ক নাই।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
আমাদের বাংলা ইংরেজীর মতো সংগীত এবং অংকন পশ্চিমে বাধ্যতামূলক একটি বিষয়। ধরা যাক একটি শিশু পিয়ানো বাজাতে আগ্রহী কিন্তু তার অভিবাকের সে যন্ত্রটি কেনার সাধ্য নেই। সে শিশুটি নাম মাত্র মাসিক ভাড়ায় যন্ত্রটা তার বাড়িতে রাখতে পারবে যত বছর তার প্রয়োজন তত বছর। প্রায় বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণার পার্যায়ে পরে এদের সংগীত শিক্ষা। শেখার পরে কে কী করবে সেটা তার ব্যাপার। কিন্তু রাষ্ট্র সংগীত শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক রেখেছে।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
বাধ্যতামূলক সংগীত শিক্ষার পক্ষে নই আমি।
সংগীত মনের জন্য দরকার, কিন্তু সবাই তো সংগীতে প্রতিভা (বা আগ্রহ) নিয়ে জন্মায় নি।
আমি অনেক অনলাইন ফোরামে (ইউএস) দেখেছি, একটা বাদ্য যন্ত্রকে তারা চিহ্ণিত করেছে ছোটবেলায় টর্চার ইকুইপমেন্ট হিসেবে। পরবর্তীতে তারা সংগীতে বিরাগ নিয়েই বড় হয়েছে, কেবল নামকাওয়াস্তে বাধ্যতামূলক অংশটা পালন করে গিয়েছে।
শুভেচ্ছা
ধন্যবাদ। আমি নিজেও কিন্তু বাধ্যতামূলক করার কথা বলি নি। পাণ্ডবদাও কিন্তু বাধ্যতামূলক করতে বলেননি। ব্যবস্থা করতে বলেছেন।
কুমারপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় সন্দেহ করেছেন যে, ছেলেবেলায় কালোয়াতীর রেয়াজের ঠেলায় অতীষ্ঠ হয়েই নাকি বেসুরো ঔরঙ্গজেব সঙ্গীতচর্চা নিষিদ্ধ করেছিলেন!
পাশ্চাত্যের সঙ্গীতশিক্ষা এবং ভয়েস কালচারের মান খুবই উন্নত।
ভাই আমি কিন্তু সঙ্গীতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর বিষয়ে কোন কথা বলি নি। আমি বলেছি স্কুল লেভেলে সঙ্গীতচর্চার উন্নত ব্যবস্থার কথা, যেটা পাণ্ডবদা সাজেস্ট করেছেন। সেটা তো উন্নত দেশগুলোতে খুব ভালোই থাকে বলে জানি। এই মুহূর্তে লিঙ্ক দিতে পারছি না বলে দুঃখিত- বেশ কিছু স্টাডি বলছে সঙ্গীতচর্চা সাধারণ শিক্ষার মান বাড়ায়। আমার ছোট্ট কাজিন তো অস্ট্রেলিয়াতে রীতিমতো ব্যালে ও পিয়ানোর তালিম পাচ্ছে। চর্চা না থাকলে তো মনে হয় না, বাঙালি বাপ-মা এসব শেখাতেন! সঙ্গীত বাধ্যতামূলক করার কথা আমরা কেউই বলি নি। উন্নত ব্যবস্থা রাখার কথা বলেছি।
আপনার দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর দেবার মত তথ্য-উপাত্ত আমার কাছে নেই। আদ্ধেকের বেশিই ঘাটের মরা? কোন রেফারেন্স থাকলে দিন, পড়ে উপকৃত হব। ইউরোপে বা অস্ট্রেলিয়াতে তো শুনেছি ক্লাসিক্যাল বেশ জনপ্রিয় তরুণদের মাঝে। অবশ্য শোনা কথার কোন মূল্য নেই।
ধন্যবাদ।
আমার কাছে রেফারেন্স নেই; ইউরোপ এবং আমেরিকার বিভিন্ন শহরে অপেরা দর্শন এবং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০-৩০ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথোপকথনের অভিজ্ঞতা থেকে বলেছিলাম।
খুব প্রয়োজনীয় লেখা। অনেক কিছু জানতে পারলাম।
আমার কিছু পছন্দের গান কেবল সুবিনয় রায়ের কণ্ঠেই শুনেছি। অনেক প্রতিষ্ঠিত শিল্পীকে অনুরোধ করেও গান গুলো গাওয়ানো সম্ভব হয়নি। অথচ সবাই রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী।
আমরাও আবেগে মাঝে মাঝে কখনো কখনো নিজের সুর ও কথায় রবীন্দ্র সংগীত গেয়ে ফেলি। সেটাও দোষের, আমি মনে করি। তার পরেও আমাদের মতো বাথরুম সিংগারদের ক্ষমা করা যায়। কিন্তু কষ্ট পাই যখন নিজস্বতা যোগ করতে গিয়ে উচ্চারণ, সুর গানের কথার পুরো মিনিং না বুঝে অযথা বা বেঠিক কথার (শব্দের) উপর চাপ-বল-জোড় দেন অনেক প্রতিষ্ঠিত শিল্পী।
ঠিক যেভাবে গানের কথা লেখা আছে সেভাবে উচ্চারণ করটা কেন এত কঠিন!
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
ধন্যবাদ!
কেন সেভাবে উচ্চারণ করাটা কঠিন কেন হবে?
রবীন্দ্রসঙ্গীতের সঠিক আবৃত্তি জানাটা দরকার- আমার মতে রকসহ যে কোন কাব্যসঙ্গীতের ক্ষেত্রেও শুদ্ধ উচ্চারণ ভীষণভাবে দরকার।
@অর্ণব পাল,
সুন্দর লিঙ্ক দিয়েছেন। আসলে শ্রুতি উপলব্ধির ব্যাপার। তবে অবশ্যই বৈজ্ঞানিক জ্ঞানেরও গুরুত্ব আছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সঠিক শ্রুতি গাওয়া ও বাজানো।
আমি দুটোই পছন্দ করি। রক ছেড়ে ক্লাসিক্যালে এসেছি, ছাড়ার কারণটা আর কিছুই না, একেবারে সূক্ষ্ম সুরগুলো রকদুরস্ত গলায় আসতে চায় না। তবে আমি ভালো গান মাত্রই ভালোবাসি। জাতভেদ করি না! আপনার মত সঠিক।
দুর্দান্ত পোস্ট!
পরের পর্বগুলোর অপেক্ষায় রইলাম।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ধন্যবাদ।
শিগগিরই পাবেন। তারপরই আলোচনা জমবে ভালো!
শিক্ষা-দীক্ষায় উন্নত দেশগুলোতে সঙ্গীতশিক্ষাকে স্কুলগুলোতে খুবই গুরুত্ব দেয়া হয়। পাশ্চাত্যের শিক্ষিত লোকেরা কিন্তু হার্মোনি, অর্কেস্ট্রা, কাউন্টার, কমপ্লিমেন্ট, বেস, টেনর, ব্যারিটোন, সোপ্রানো- ইত্যাদি সবই রীতিমত বোঝেন। আমরাই শুধু ভৈরব, পূরবী, ইমন, বেহাগের নামে অর্থহীন "আ-আ-" শুনি।
ভৈরব, পূরবী, ইমন, বেহাগ নিয়ে স্বরসাধনা কি আপনার কাছে কম শিক্ষাসন্মত বলে মনে হয়? আমার তো মনে হয়, আমাদের সঙ্গীতের যে ঐতিহাসিক ধারা অনুসরণ করেই নিজস্ব নিয়মের বাঁধনেও যে স্বতস্ফুর্ততার অলঙ্করণ, পাশ্চাত্য সঙ্গীতে সেটি নেই বললেই চলে। আমাদের নিজেদের সমৃদ্ধ ভান্ডারকে অবহেলা করে আমরা কেবলই পাশ্চাত্যে চমকের দিকে হাত বাড়াই, আমার মনে হয়, আমাদের বড়ো সমস্যা সেখানেই।
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
ওমা তা কেন হবে? আমি কি তাই বললাম নাকি? আমি তো আফসোস করছি যে, আমরা নিজেদের অমূল্যরতন চিনতে পারলাম না।
আমি আসলে সঙ্গীত ভালোবাসি। জাতবিচার করি না। কিন্তু অবশ্যই নিজেকে বেশি করে খুঁজে পাই রাগসঙ্গীত বা আমাদের লোকসঙ্গীত ও কাব্যগীতিকেই। আমি যখন কোন ব্যাকরণই জানতাম না, তখনও ভাটিয়ার রাগ আমায় কাঁপিয়ে দিয়েছিল- মাত্র ৭-৮ বছর বয়সে! কিন্তু পাশ্চাত্যের ক্লাসিক্যাল থেকে শুরু করে রক পর্যন্ত সব ধরনের সঙ্গীত থেকে ভালো জিনিস নিয়ে আমাদের সঙ্গীতধারাকে বৈচিত্র্যময় করে তোলার প্রয়াসও ভালো লাগে। কিন্তু বাংলা গান ও উচ্চারণটাকে একেবারেই বাংলা গান মনে না হওয়াটা আমার কাছে কিম্ভুৎ লাগে। আমি 'র' কে "ড়" উচ্চারণ করাটা ঘৃণা করি।
তবে আমাদের সঙ্গীতশিক্ষায় বিজ্ঞানের প্রয়োগ খুব কম হয়েছে। কোমরজলে দাঁড়িয়ে গলা সাধা, অবৈজ্ঞানিক টোটকা, ভুল পদ্ধতিতে কণ্ঠপ্রক্ষেপণ ইত্যাদি কিন্তু আমাদের সঙ্গীতচর্চায় খুব বেশি করে প্রচলিত। টক খেলে গলা নষ্ট হয় না। বেশি টক একসাথে খেয়ে এসিডিটি হলে তখন সাময়িকভাবে গলাটা একটু কর্কশ লাগতে পারে,কিন্তু সেটা কখনোই স্থায়ী কিছু নয়। এই বিষয়গুলো কিন্তু অধিকাংশ সঙ্গীতশিক্ষক হয় জানেন না, নয় বলেন না!
পুরা কোপানি। এ লেখাটাতে মন্তব্য করার জন্য প্রায় দুবছর পর লগিন করলাম
শ্রুতির বিষয়টা সহজে এভাবে বোঝা যায়:
১. শব্দের দুটো দিক: পিচ (সহজ করে বললে কম্পাংক) , আর তীব্রতা। আমাদের কানের (এবং মস্তিষ্কের) গড়ন এমন যে, কোন একটা শব্দের সাথে তার দ্বিগুণ কম্পাংকের আরেকটা শব্দ ভালো বা আরামাদায়ক (কনসোনেন্ট) শোনায়। উদাহরণ, কিবোর্ডের মাঝামাঝি যে A (440Hz) তার সাথে সাথে পরবর্তী A (880Hz) এক সাথে টিপে বাজালে কানে ভালো লাগে।
পৃথিবীর প্রায় সব কালচারে আদি কাল থেকে এ বিষয়টি স্বীকৃত, যেটা অক্টেভ নামে পরিচিত। সমস্যা হলো, দুটো কম্পাংক দিয়ে তো আর বেশী কিছু প্রকাশ করা যায় না, এর মাঝামাঝিগুলোকে ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়। এখন অক্টেভকে কয়ভাগে ভাগ করা হবে সেটা নিয়ে বিশাল বিতর্ক হয়েছে। পিথাগোরাস বিশ্বাস করতেন ভাগগুলো এমনভাবে করতে হবে যেন সেটা পূর্ণসংখ্যার অনুপাত হয়। অক্টেভের অনুপাত ১:২, এর পরের ভাগ হতে পারে ২:৩; সে যুগের বায়ু/তার বাদ্যযন্ত্রঅলারাও এটাকে ভালো মনে করত, এতে চোঙা বা তারের দৈর্ঘের অনুপাত দিয়ে কাজ সারা যেত।
আমাদের প্রায় সব ফোকগান ২:৩ অনুপাতের বাদ্যযন্ত্রের। পূর্ণসংখ্যার অনুপাতে তৈরী স্কেলকে বলে জাস্ট ইনটোনেশন। প্রচলিত বাঁশিতেও এই সিস্টেম বিদ্যমান।
পূর্ণসংখ্যার অনুপাত ভিত্তিক সিস্টেমের একাধিক সমস্যা আছে, সেটা বোঝাতে গেলে বিরাট ব্যপার হয়ে যাবে। এটার একটা বিকল্প হলো, এখনকার প্রচলিত ১২-নোটের স্কেল যেটাকে ক্রোমাটিক স্কেল বলে। এতে কম্পাংকের অনুপাত ব্যবহার করা হয় না। বরং কম্পাংককে ২-ভিত্তিক লগে নিয়ে সমান ভাগে ভাগ করা হয়। প্রচলিত সব ফ্রেটযুক্ত বাদ্যযন্ত্র যেমন, গিটার, কিবোর্ড এ ধরনের স্কেল অনুসরণ করে।
ভারতীয় (হিন্দুস্থানী) সিস্টেমে অক্টেভকে ২২ টি নোটে ভাগ করা হয়, যেগুলোকে মোটা কথায় শ্রুতি বলে। কর্ণাটকি সিস্টেমে সম্ভবত ধরা হয় ১৬ টি নোট। এই ২২ বা ১৬টির মধ্যে ১২-নোটের স্কেলের সবগুলো নোটই বিদ্যমান (তর্ক সাপেক্ষে); বিভান্ত্রি এড়াতে পশ্চিমা সিস্টেমে এ বাড়তি নোটগুলোকে মাইক্রোনোট বলা হয়।
প্রচলিত ফ্রেটেড যন্ত্রে যেখানে ১২নং ফ্রেটে অক্টেভ পাওয়া যায়, সেখানে স্বাভাবিকভাবেই ১৬ কিংবা ২২ নোট বাজানো যায় না (স্ট্রিং বেন্ড করে যদিও টেকনিক্যালি বাজানো সম্ভব)। একটু দামী কিবোর্ডে এটা করা যায়, কণ্ঠেতো অবশ্যই করা যায়। ফ্রেটহীন তার যন্ত্রেও করা যায়।
২২-নোটের সিস্টেম যে ভারতীয় উপমহাদেশে অনন্য সেটা পুরোপুরি ঠিক না। আরবি সিস্টেমে ২৪, এমনকি ওয়েস্টার্ন ৪৬-মাইক্রোনোটও শুনেছি রক মিউজিক প্রায় পুরোটাই ৫-নোটের স্কেলের উপর দাঁড়িয়ে
লগ করে তারপর সমান করে ভাগ করার বড় সুবিধা হলো মিউজিকের ট্রানসপজিশন, যেটা জাস্টইনটোশনে সম্ভব না। সহজ করে বললে, C স্কেলের কোন গানে, বাঁশী যোগ করতে গেলে সেটা C ( জাস্ট ইনটোশনের) হওয়া আবশ্যক।
আগ্রহীদের জন্য মুনশী রইসউদ্দীনের বই থেকে শ্রুতি গুলো তুলে দিলাম: (কোমল/কড়িগুলোর অবস্থান আমার অনুমান- নি সমসময় বিব্রতকর)
আলমগীর ভাই, কী যে ভালো লাগতেছে! আপনি আবার লিখলে অনেক ভালো হতো।
আপনারে তো চিনলাম না ভাই
ধন্যবাদ, তথ্যবহুল আলোচনার জন্য। খুবই ভালো বলেছেন।
ভারতীয় সঙ্গীতে কেউ কেউ ৬৪টি, কেউ কেউ শতাধিক শ্রুতির কথা বলেন। ৬৪ শ্রুতি প্রায় প্রতিষ্ঠিত মত। কিন্তু মোটামুটিভাবে এই ২২ টি শ্রুতি বিভিন্ন সময়ে গুণীজনে গেয়ে ও বাজিয়ে দেখিয়েছেন। এমনকি আমার মত অধমও কালেভদ্রে এক আধটা শ্রুতি লাগিয়েও ফেলতে পারে। আরব্য সঙ্গীত বা ওয়েস্টার্ন মিউজিকে শ্রুতির এই গোত্রের প্রয়োগ আমি পাই নি। তবে থাকতে পারে। আপনি কি রেফারেন্স দিতে পারেন? একটু পড়ে এবং শুনে দেখব। আরব্য টিউন যেসব শুনেছি সবই ভৈরবীর প্রকারভেদ। পাঞ্জাবের সমগ্র লোকগীতি ভৈরবীর ওপর দাঁড়িয়ে।
আলোচনা চলুক।
Harry Partch লিখে ইউটিউবে সার্চ মারেন। কিছু নমুনা পাবেন।
এটার সাধারণ নাম ইকুয়েল টেম্পারমেন্ট: যার মধ্যে ১২-নোট, ৫-নোট স্কেলগুলো পড়ে।
নতুন মন্তব্য করুন