রবীন্দ্রসঙ্গীত ও সুবিনয় রায় নিয়ে গালগল্প এই বেলা সেরে নেয়া যাক!
রবীন্দ্রসংগীতের গায়কী নিয়ে রচিত দ্বিতীয় অধ্যায়টি নিয়ে বিতর্কের অবকাশ রয়েছে। সুবিনয় রায় সমগ্র রবীন্দ্রসংগীতকে ৩ টি পর্যায় বা ধারায় বিভক্ত করেছেন, যথাঃ
১। হিন্দুস্থানী শাস্ত্রীয় সংগীত প্রভাবিত রচনা,
২। বাংলার লোকসংগীত ও কীর্তন প্রভাবিত রচনা, ও
৩। স্বকীয় সৃষ্টিমূলক সংগীত রচনা (original creative composition)।
পাঠক লক্ষ্য করবেন, এখানে পাশ্চাত্যের সুর ভাঙা গানগুলোর কোন আলাদা বিভাগ রাখা হয় নি।
শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ভাঙা গানগুলোর গায়কী নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিনের। এই গানগুলোর গায়কীতে আলাপ, বিস্তার, বোল-বাঁট, সরগম, বোলতান, তান, দুন, ত্রিগুণ, চৌদুন ইত্যাদি লয়কারী করা যাবে কিনা তা নিয়ে বিদ্বৎসমাজে রয়েছে তীব্র মতবিভেদ। একদল বলছেন মূলগানের গায়কীর সব অঙ্গ রক্ষা করে গাইতে হবে, অন্য দল বলছেন হিন্দীগান ভাঙা হলেও এগুলো রবীন্দ্রসঙ্গীত তো বটে, তাই রবীন্দ্রসঙ্গীতের আদর্শ বা পদ্ধতি অনুসারেই হিন্দীভাঙা গানগুলি গাইতে হবে।
এ প্রসঙ্গে লেখক রবীন্দ্রনাথকে উদ্ধৃত করেছেন, “ ... হিন্দুস্থানী সঙ্গীতকে আমরা শিখব পাওয়ার জন্য, ওস্তাদী করবার জন্য নয়।”- সুবিনয় রায়ের মতে – এই কথাটা কবি তাঁর হিন্দীভাঙা গানের মাধ্যমে কার্যে পরিণত করেছেন। লেখক আরো বলছেন, “ তাঁর ‘হিন্দীভাঙা’ গানগুলি স্বাধীনভাবে তান-বোলতান-বিস্তার সহকারে গাইবার নির্দেশ তিনি কোনোদিন কাউকে দিয়েছিলেন কিনা তা বলা শক্ত; এবং তিনি কোনোদিন এইভাবে গানগুলি গেয়েছেন বলেও জানা যায় না।”- এ প্রসঙ্গে প্রথমেই প্রশ্ন আসে, রবীন্দ্রনাথ নিষেধ করেছেন কি কোথাও? দ্বিতীয় সাহসী প্রশ্নটি আসে, রবীন্দ্রনাথ তান করতে পারতেন কি? সত্যজিৎ রায় তাঁর একটা প্রবন্ধে লিখেছিলেন, “ তান জিনিসটা তিনি বাদ দিয়েছিলেন, তার একটা কারণ বোধহয় এই যে সেটা তাঁর আয়ত্ত ছিল না।”
এরপর সুবিনয় রায় আরো বলছেন, “ কবির জীবদ্দশায় তৎকালীন গুটিকয়েক ‘ওস্তাদীভাবাপন্ন’ গুণীজন তাঁর সামনেই উপরিউক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করে তাঁর গান গাইবার সময় অল্পস্বল্প আলাপ-বিস্তারের ব্যবহার করতেন। তাতে বাহ্যিক ভাবে হয়তো তিনি কখনো আপত্তি প্রকাশ করতেন না। শোনা যায় হিন্দীভাঙা গান সম্পর্কে গায়কের সুরুচি অনুসারে সংযত ও সংক্ষিপ্ত আলাপ বা বিস্তার তিনি কোনো কোনো সময় অনুমোদনও করেছেন। কিন্তু সাধারণভাবে বলতে গেলে এইসব বাহাদুরি তিনি কখনোই সমর্থন করতেন না।” লেখক আশঙ্কা করেছেন কবির বর্তমানে তাঁরই তত্ত্বাবধানে ছোটখাটো তানকর্তব পরীক্ষামূলকভাবে প্রচলিত ছিল। সেগুলো আজকের দিনে চালু করতে গেলে স্বাধীনতার অপব্যববহার হয়ে রবীন্দ্রসংগীত গায়কীর বৈশিষ্ট্য বিলোপের আশঙ্কায় তিনি বিচলিত।
সুবিনয় রায়ের এই মনোভাব কতটা যৌক্তিক আর কতটা গোঁড়ামি সেটা খোলা মনে বিচার করে দেখা উচিত। প্রথমত, তান-বোলতান-বাঁট-বিস্তার ইত্যাদি খেয়াল গানের অঙ্গ কি শুধুই ওস্তাদি? শুধুই বাহাদুরি? এর মধ্যে সৌন্দর্য নেই? ফৈয়াজ খাঁ সাহেবের গানে যে কাব্য ও নাট্যগুণ ছিল –তা ক’জন শ্রেষ্ঠ রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীর গানে পাওয়া যায়? তানকর্তব কি শুধুই ওস্তাদি আর বাহাদুরি? সালামত-নাজাকত তানকে মেকানিক্যাল ওস্তাদির পর্যায়ে নিয়ে যেতেন প্রায়ই কিন্তু একই কথা কি বড়ে গুলাম আলীর ক্ষেত্রেও খাটবে? যে লোকটি মেঘের গর্জন, বৃষ্টির বর্ষণ, সমুদ্রের ঢেউয়ের ওঠা পড়া, পাখির ওড়া, ফ্যান চালু ও বন্ধ হওয়া, গাছের পাতা নড়া ইত্যাদি প্রায় সব কিছুকেই গানে ও তানে প্রকাশ করতে পারতেন- সেই বড়ে গুলাম আলীকে খাঁ সাহেবকে এরা কিভাবে বিবেচনা করবেন? আগ্রা ঘরানায় উস্তাদ ফৈয়াজ খাঁ সাহেব ও তাঁর শিষ্য পণ্ডিত শ্রীকৃষ্ণ রতনজনকর খেয়াল গানের বন্দিশের মেজাজ অনুযায়ী আলাদা আলাদা বিন্যাসে আলাপ, বোলবাঁট, বোলতান ও তান করতেন। রবীন্দ্রনাথ ফৈয়াজ খাঁ সাহেবের গানে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে বলেছিলেন, “আমার এতগুলো বছর আজ কেড়ে নিল গো লোকটা।” রবীন্দ্রনাথ নিজে ছিলেন আধুনিক। গোঁড়ামিকে তিনি প্রশ্রয় দিতেন না। তিনি কিন্তু বলেইছেন যে, প্রতিভাবানকে তিনি স্বাধীনতা দিতে রাজি, সাধারণ মানের গাইয়েকে নয়। তবু আজও আমরা দেখছি, কিছু রবীন্দ্র-উন্নাসিক রশীদ খান বা অজয় চক্রবর্তীর মাপের শিল্পীর গানও মেরিট দিয়ে বিচার না করে স্রেফ একটু নাড়িয়ে-চাড়িয়ে গাওয়ার অপরাধে বাতিল করে দিচ্ছেন। এদের আদৌ কোন সঙ্গীতবোধ আছে কিনা কে জানে? মনে হয় না, রবীন্দ্রনাথ ফৈয়াজ খাঁ, রতনজনকর, বড়ে গুলাম আলী, রশিদ বা অজয়ের মাপের গাইয়েদের স্বাধীনতা দেবার ব্যাপারে কোন আপত্তি করতেন। “আজি কমল মুকুল দল খুলিল,” “রাখো রাখো রে,” “সুখহীন নিশিদিন” ইত্যাদি গানে অজয় চক্রবর্তী যে মোডিফিকেশন করেছেন- তাতে একদল গেল গেল করে উঠলেও কাব্যের কোথায় কী ক্ষতি হয়েছে কেউ দেখাতে পারেন নি!
সুবিনয় রায়ের মতে, “ রবীন্দ্রনাথের যে- কোন পর্যায়ের গান রচনানৈপুণ্যে, কথাসুরের সমন্বয়ে, কাব্যমাধুর্যে ও ভাবগভীরতায় এতই সমৃদ্ধ ও এতই সম্পূর্ণ যে, এর মধ্যে আলাপ বিস্তার তানকর্তবের অবতারণা নিতান্তই অপ্রাসঙ্গিক ও নিছক বাহুল্য বলেই মনে হয়।” তিনি উদাহরণ দেন আমরা তো “ মহারাজ একি সাজে এলে” গানটি শুনতে চাই, বেহাগে সাদ্রা শুনতে চাই না। কিন্তু কেউ যদি কাব্য ঠিক রেখে সাদ্রা অঙ্গে গাইতে পারেন তবে কেন তাকে বাধা দেওয়া হবে সে প্রশ্নের উত্তর কোথায়? কারণ রবীন্দ্রনাথ কিন্তু এভাবে গাওয়া যাবে না- সে কথা কোথাও বলেননি।
রবীন্দ্রনাথের ধ্রুপদাঙ্গের গান ছায়ানটের কল্যাণে এখনো বেশ জনপ্রিয় এবং ধ্রুপদ সত্যি বলতে বাংলাদেশে একমাত্র রবীন্দ্রসঙ্গীতেই কঙ্কালসার হয়ে বেঁচে আছে। ধ্রুপদের বিভিন্ন অঙ্গ সম্পর্কে সুবিনয় রায়ের মত- “...গান শুরু করার আগে তোম দেরে নেতে দিরে রেনে নে না প্রভৃতি শব্দের সাহায্যে আলাপ করা, স্বরবিস্তার করা, এবং দূন ত্রিদূন চৌদূন আড়ি দেড়ি কু-আড়ি অতীত অনাঘাত প্রভৃতি ছন্দের ও লয়ের নানা রকম কসরৎ দেখানো। এগুলিও রবীন্দ্র-ধ্রুপদে ব্যবহার করা যায় সন্দেহ নেই; কিন্তু এদের আধিক্য ঘটলে কথার স্বাভাবিক উচ্চারণের পথে পদে পদে বাধার সৃষ্টি হওয়ার ফলে গানের কাব্যাংশ কলুষিত হতে থাকে- যা রবীন্দ্রসংগীতে কোনো মতেই বাঞ্ছনীয় নয়... গানের আলাপ ও গানের মধ্যে রাগবিস্তার এগুলিও রবীন্দ্রসংগীতে বিজাতীয় বলেই মনে হয়; তাই এগুলি এড়িয়ে যাওয়াই শ্রেয়।”- দেখা যাচ্ছে এসবই সুবিনয় রায়ের ব্যক্তিগত উপলব্ধি বা ‘মনে হওয়া।’- কিছু প্রশ্ন মনে অবশ্যই জাগে, প্রথমত,আলাপ হিন্দুস্থানী সঙ্গীতের, বিশেষত ধ্রুপদের প্রাণ। আলাপ যে গানে ‘বিজাতীয়’ সে গানকে রবীন্দ্র-ধ্রুপদ’ বা ধ্রুপদাঙ্গ বলার যৌক্তিকতা কী? আলাপবিহীন সঙ্গীত আর যাই হোক ধ্রুপদ নয়! দ্বিতীয়ত, ধ্রুপদে স্বরবিস্তার বলে কোন পরিভাষা ব্যবহৃত হয় না। বিশেষত, রবীন্দ্রনাথ যে ঘরানার অনুসারী –সেই বিষ্ণুপুরে একেবারেই নেই। ডাগর পরম্পরায় আলাপের মধ্যে সরগম করার রীতি ছিল তবে বোল বা সরগমের সাহায্যে ‘স্বরবিস্তার’ ধ্রুপদ গানে, বিশেষত বিষ্ণুপুরী ধ্রুপদে ছিল বলে শুনিনি। হালে গুন্দেচা বন্ধু মাঝে মাঝে দেড়গুণ, দ্বিগুণ, ত্রিগুণ, চৌগুণ এর প্রচলিত লয়কারীর বাইরে এসে খানিকটা খেয়াল ধাঁচের বিস্তার করছেন বটে কিন্তু তাকেও ঠিক স্বরবিস্তার বলা যায় কিনা –সেটা ভেবে দেখতে হবে। বিষ্ণুপুরী ধ্রুপদে আলাপ সেরে কম্পোজিশনটা এক-দু বার গেয়ে তারপর পুরো স্থায়ী, পুরো অন্তরার কথা নিয়ে দ্বিগুণ-ত্রিগুণ লয়কারী করা হত। স্বরবিস্তার কথাটাই ধ্রুপদে ব্যবহার হয় না, যদিও বোল-বাঁট স্বরবিস্তারেরই একটি পদ্ধতি। সঙ্গীত সমালোচনায় রীতিবিরুদ্ধ পরিভাষা ভ্রান্তির জন্ম দেয়।
সুবিনয় রায় রবীন্দ্র-ধ্রুপদের গায়নপদ্ধতি সম্পর্কে ৭ টি প্রস্তাব দিয়েছেন, তার সার সংক্ষেপ হলঃ
১। তানপুরার সাথে মার্জিত অলঙ্কারের প্রয়োগে গাওয়া
২। কণ্ঠস্বরের দৃঢ়তা ও মাধুর্য বজায় রাখা, কম্পন একেবারে বর্জন করা।
৩। স্বাধীনভাবে রাগের আলাপ, স্বরবিস্তার প্রভৃতি সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে যাওয়াই শ্রেয়।
৪। লয়কারী না করলে রবীন্দ্র-ধ্রুপদের অঙ্গহানি হয় না। নেহাতই প্রয়োজনে ঢিমা লয়ের চৌতাল বা সুরফাঁকতালের গানে সাবধানে স্থায়ী বা অন্তরার দ্বিগুণ করা চলতে পারে।
৫। সর্বদা হাতে তাল রেখে গাইতে হবে কারণ মৃদঙ্গ বা পাখোয়াজবাদক সর্বক্ষণ না ছন্দের রেলা,পড়ন,বোল বাজাতে থাকবেন যার ফলে তাল হারিয়ে যেতে পারে।
৬। রবীন্দ্র-ধ্রুপদের বিশেষ অনুভুতিটি শ্রোতার মনে জাগিয়ে তুলতে হবে।
৭। কিছু ধ্রুপদ যোগ্য শিক্ষকের কাছে শিখতে হবে।
এখানে ১ এবং ২ প্রস্তাব দুটি যথার্থ এবং উপকারী, ৩ যৌক্তিক ভাবেই বিতর্কিত, ৪ সম্পর্কে বলব উচ্চারণ ও ভাব ঠিক রেখে কেউ করতে পারলে সব লয়কারীই বৈধ, ৫ প্রসঙ্গে বলব গায়কের হাত-পা বেঁধে মৃদঙ্গবাদককে অত স্বাধীনতা দেবার কারণ কি? তা ছাড়া রবীন্দ্রনাথ তো তালের স্থান তথা সম-ফাঁক ইত্যাদিকে তেমন গুরুত্ব দিতেন না। ছন্দটাই তাঁর কাছে মুখ্য ছিল। গায়ককে তো পায়ে পাথর বেঁধে চলতে হবে, তবে মৃদঙ্গ বাদককেও কেন নয়?
এরপর ধামার গানের গায়কী সম্পর্কে ধ্রুপদের রীতিই মোটামুটি বজায় রাখতে বলা হয়েছে। লেখক বলেছেন যে, ধামারে প্রায়ই বোলতান, সরগম প্রভৃতির ব্যবহার হয়ে থাকে যা ধ্রুপদে নিষিদ্ধ। - ধামারে বোলবাঁট বহুলভাবে প্রযুক্ত হয়,কিন্তু বোলতান কদাচ নয় সরগম ও কাউকে করতে শুনিনি। ধামার থেকেই আগ্রা ঘরানায় খেয়ালে বোল-বাঁট আমদানি করা হয় এবং বোলতান খেয়ালে আগ্রার দান। এটাকে মুদ্রণ-প্রমাদ বলেই ধরে নিচ্ছি।
তেমনি খেয়াল ভাঙা রবীন্দ্রসঙ্গীতের গায়ন প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, স্বাধীন আ-কারের তান, বোলতান ইত্যাদি কোনভাবেই অনুমোদনযোগ্য নয়। এগুলি রবীন্দ্রনাথের সংগীত রচনার এবং তার গায়কীর আদর্শবিরুদ্ধ কাজ। রবীন্দ্রনাথ সরাসরি নিষিদ্ধ না করা সত্ত্বেও এহেন উগ্র নিষেধাজ্ঞাকে “বাবু যত বলে, পারিষদ দলে বলে তার শতগুণ” – গোত্রীয় ব্যাপার বলে ধরে নেয়া যায়! খেয়ালভাঙা গানের গায়কী প্রসঙ্গে সুবিনয় রায়ের প্রস্তাবগুলো সংক্ষেপে- তানপুরার ব্যবহার, নিষ্কম্প কণ্ঠ, তালিম, প্রথমে মধ্যলয়ে গেয়ে পরে লয় একটু বাড়িয়ে গাওয়া, তবলার সঙ্গতে এবং মাত্রার গঠন ঠিক রেখে গাওয়া, স্বাধীন তান-বোলতান, সরগম, বিস্তার প্রভৃতি সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে যাওয়া এবং গানের শেষে তেহাই করে শেষ করা একেবারেই উচিত নয়, হিন্দুস্থানী খেয়ালগান নয়- হিন্দুস্থানী খেয়ালের আদর্শে রচিত একটি রবীন্দ্রসংগীত শুনলাম, এই অনুভূতিটি যেন শ্রোতার মনে জাগে- সেদিকে যত্নবান হতে হবে, অল্পস্বল্প হিন্দুস্থানী খেয়াল গান শিক্ষা করা ভালো। প্রথম দুটি প্রস্তাবে অবশ্যই সহমত। কিন্তু তান-বোলতান- বিস্তার সম্পূর্ণ বর্জন করলে তাকে কি যুক্তিতে খেয়ালের আদর্শে রচিত গান বলা হবে? খেয়ালের আদর্শ কি? খেয়াল গানের জন্মই হয়েছিল ধ্রুপদের কঠিন নিগড় থেকে একটু স্বাধীন হবার জন্য রাগের মূল কাঠামোটাকে ঠিক রেখে।
হিন্দী টপ্পা ও টপখেয়াল ভাঙা গানগুলোর ক্ষেত্রে লেখক কিছু অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপদেশ দিয়েছেন। এই গানগুলি প্রায়ই তাল ছাড়া গাওয়া হয় কারণ তালে গাওয়া ভীষণ কঠিন ব্যাপার। এক্ষেত্রে লেখকের উপদেশ হল দীর্ঘ অভ্যাসের মাধ্যমে এগুলো তালে গাইতে পারলে খুবই ভালো,না পারলে তাল ছাড়া গাওয়া যেতে পারে। এ জাতীয় গানগুলো হচ্ছে টপ্পাঙ্গের ‘কে বসিলে আজি,’ হৃদয় বাসনা পূর্ণ হল,’ ‘এ পরবাসে রবে কে –ইত্যাদি। এগুলো মধ্যমান তালে গেয়, মধ্যমান বস্তুত তিনতালের একটি বিলম্বিত আড়ছন্দের রূপ। তেমনি টপখেয়াল অঙ্গের গান “চিরসখা হে ছেড়ো না, একি করুণাময়, এ মোহ আবরণ ইত্যাদি আড়াঠেকা বা একতালে গেয়। আড়াঠেকাও বস্তুত তিনতালের একটি বিলম্বিত আড়ছন্দ।
ঢালাগান গুলো হচ্ছে রবীন্দ্রনাথের রচিত টপ্পা অঙ্গের কাব্যসঙ্গীত যেগুলো তাল ছাড়া বা ঢালালয়ে গাওয়া হয়। এই ধরনের গানগুলিকে লেখক বলেছেন ‘রবীন্দ্র-টপ্পা।’ এই গানগুলো লেখকের মতে কোন তালে বেঁধে গাওয়া উচিত নয়। এই গানগুলোর স্বরলিপি সম্পর্কে সুবিনয় রায় বলছেন, “ স্বরলিপি থেকে তুলে এই গানগুলি শিক্ষা করা অসম্ভব। প্রকৃতপক্ষে এইসব গানের স্বরলিপি তৈরি করাও দুঃসাধ্য কাজ।” এ গোত্রের গানের উদাহরণঃ আজি যে রজনী যায়, আমি রূপে তমায় ভোলাব না, তবু মনে রেখ, সার্থক জনম আমার, তোমায় নতুন করে পাবো বলে ইত্যাদি। এই গানগুলোর তাল নেই বলে কেবল মাত্রাকে আশ্রয় করে স্বরলিপি লেখা হয়, তাছাড়া দানাযুক্ত অলঙ্কারগুলো সরগম দিয়ে প্রকাশ করা লেখকের মতে মহা সমস্যার বিষয়। বস্তুত, সচল স্বর বা শ্রুতির কারণে উপমহাদেশের সঙ্গীতকে কখনোই সরগম দিয়ে পুরোপুরি প্রকাশ করা যায় না। সরগম দিয়ে শুধু কাঠামোটা দেখানো যায়। অথচ কিছু লোক সরগমটাকেই উচ্চাঙ্গের সঙ্গীতের একমাত্র লক্ষণ বলে মনে করেন!
ভানুসিংহের পদাবলীর উচ্চারণের ক্ষেত্রে কার্যকর পরামর্শ দিয়েছেন লেখক। তার মধ্যে য’ এর উচ্চারণ “ইয়’ না করার নির্দেশ অন্যতম। কারণ ব্রজবুলিতে ‘য’ এর উচ্চারণ বাংলার অনুরূপ, সংস্কৃতের নয়। রবীন্দ্রনাথের বিস্তৃত আধুনিক কাব্যসঙ্গীতের গায়নের কোন দিক-নির্দেশনা এ গ্রন্থে স্থান পায় নি।
তৃতীয় অধ্যায়ে রবীন্দ্রসঙ্গীতে যন্ত্রের ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করেছেন। আমরা লক্ষ্য করেছি সব যুগেই একদল বেরসিক গানটা কেমন গাওয়া হয়েছে সেটা নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে যন্ত্রসঙ্গীত নিয়ে মারামারি শুরু করেন। আমার দেশোয়ালী দাদু জর্জদাকে নিয়ে বিশ্বভারতীর অযৌক্তিক ও অনৈতিক বাড়াবাড়ি সঙ্গীতের ইতিহাসে কলঙ্ক হয়ে থাকবে। অমর হয়ে থাকবেন দেবব্রত তাঁর অসামান্য বেস গলা, অনুভবী গায়কী আর দৃপ্ত প্রতিবাদী সত্ত্বার জন্য। হালে ‘ক্ষ’ নামে একটি প্রবাসী ব্যান্ড “আমার সোনার বাংলা” বা আমাদের জাতীয় সঙ্গীতটি গাওয়ার পর এর পক্ষে-বিপক্ষে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। রক্ষণশীলরা তীব্রভাবে আক্রমণ করেছেন এর আবহসঙ্গীতে গীটার প্রভৃতির ব্যবহার নিয়ে। অনেকে আবার অন্ধভাবে এই গায়কীকে সমর্থন করেছেন। কিন্তু কেউই বলেননি যে, এই গানের যন্ত্রসঙ্গীতই ছিল সুন্দর, গায়কী অসাধারণ কিছু নয়, উচ্চারণ ত্রুটিমুক্ত নয়। যেমন প্রথম কথা- খাদের সুরগুলো গলায় ঠিক লাগেনি, এক্ষেত্রে পিচটা ১ বা ২ নোট চড়িয়ে গাওয়া যেত। দ্বিতীয়ত, উচ্চারণ- অন্তে হসযুক্ত শব্দের উচ্চারণ অধিকাংশ গাইয়েই ভুল করেন। টেইল-ড্রপিং এর ভয়ে হসটা খুব প্রখর হয়ে কানে বাজে যেমন, তখন "নদীর কূলে" হয়ে যায় "নদীরে কূলে!" হসযুক্ত জায়গাগুলো একটু মীড় দিয়ে উচ্চারণ করাটাই সংস্কৃত ও বাংলা আবৃত্তির রীতি- সেটা সঠিক হলে কিন্তু ভীষণ সুন্দর লাগে,মীড় থাকবে অল্প কিন্তু তবুও টেইল-ড্রপিং হবে না, আবৃত্তিশিল্পীরা সবাই এটা জানেন। গায়িকা অধিকাংশ জায়গায় সঠিক উচ্চারণ করেছেন, কিন্তু এটুকু আমার কান এড়ায়নি! তৃতীয়ত, মরি হায় অংশে সুরটা একটু বদলে গেয়েছেন এবং আড়িতে নিয়েছেন- সেটা নিয়ে অনেকেই কিন্তু বলতে পারেন- তাহলে এই ধাঁচের সুরে নিজে গান লিখে গাইলেই হয়! শুধু শুধু একটি সুন্দর আবহসঙ্গীতের বিরূপ সমালোচনা করে অপরিশীলিত ও স্বল্পচর্চিত( মন্দ বলছি না কিন্তু!) গায়কীকে বাজার করে দেয়া হল! এই উগ্র ব্যক্তিদের জন্য সুবিনয় রায়ের এই উক্তিটিই যথেষ্ট- “ বাউল ভাটিয়ালি প্রভৃতি গানে বাঁশী ও দোতারা, সাধারণ দ্রুতছন্দের গানে গীটার বা সেতারের vamping বা ঝালা ইত্যাদি রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশনে যথেষ্টই সহায়তা করে এবং উপরিউক্ত বিশেষ শ্রেণীর গানগুলির বৈশিষ্ট্যসকল পরিস্ফূট হয়ে পরিবেশন অত্যন্ত সুখশ্রাব্য হয়ে ওঠে।” তালযন্ত্রের ক্ষেত্রে ধ্রুপদাঙ্গের গানে পাখোয়াজ, খেয়াল ও অন্যান্য গানে তবলা, কিছু ব্রহ্মসঙ্গীত ও কীর্তনাঙ্গের গানে খোল ইত্যাদির ঠেকায় সংযত ও মৃদু আওয়াজে বাজানোর কৌশলকে লেখক গুরুত্ব দিয়েছেন যাতে তালযন্ত্র গানের কথাকে ব্যাহত না করে। গানের আবহসঙ্গীত নিয়ে আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, গানের মুড অনুযায়ী যে কোন যন্ত্র ব্যবহারে কোন নিষেধাজ্ঞা থাকাটা উচিত নয়। বহু এক্সপেরিমেন্ট হবে তার মধ্যে কিছু ভালো হবে, কিছু মন্দ হবে। ভালোটাকে বাছাই করার ক্ষমতা থাকতে হবে। আমি মনে করি ক্লাসিক্যাল বা ফোক গীটার রবীন্দ্রসঙ্গীতে অত্যন্ত সাহায্যকারী এবং সুখশ্রাব্য একটি যন্ত্র। কারণ এটা একই সাথে সুর এবং রিদম দুটোই দেয়। শেষ অধ্যায়ে আছে স্বরলিপি নিয়ে নাতিবৃহৎ আলোচনা।
সুবিনয় রায় রবীন্দ্রসঙ্গীতের সবচেয়ে সম্মানিত পুরুষ শিল্পী যাঁর গান বোদ্ধা এবং সাধারণ শ্রোতা উভয় মহলেই জনপ্রিয়। বলা বাহুল্য উভয় মহলে জনপ্রিয় পুরুষ শিল্পী রবীন্দ্রসঙ্গীতে বিরল। বোদ্ধাদের মধ্যে খাণ্ডার এবং উদার দুইই আছে। যেমন খাণ্ডারগণ হেমন্ত বা কিশোর কুমারের অনবদ্য গলায় রবীন্দ্রসঙ্গীতকে নাকচ করলেও কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো উচ্চ স্তরের শিল্পী কিন্তু তাঁদের অকুণ্ঠ প্রশংসাই করেছেন। সুবিনয় রায়ের গায়কীর শক্তি ও তাঁর মতবাদের উৎস শৈলজারঞ্জন মজুমদারের শিক্ষা। মূলত শৈলজারঞ্জন মজুমদারই রবীন্দ্রসঙ্গীতকে হিন্দুস্থানী সঙ্গীত, লোকসঙ্গীত ইত্যাদির মত সঙ্গীতের এক পৃথক শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং এর জন্য বিশিষ্ট একটি গায়নশৈলীর প্রয়োজনীয়তার কথা তাঁর বিভিন্ন প্রবন্ধে ব্যক্ত করেন। সুবিনয় রায়ের কণ্ঠেও গুরুরই প্রতিধ্বনি শুনতে পাওয়া যায়। সুবিনয় রায়ের সততা ও নিষ্ঠা মুগ্ধ হবার মত। তাঁর বইতে তিনি নিজের সারা জীবনের সঙ্গীত সাধনা ও পরিবেশনা উপলব্ধ জ্ঞান ও বিশ্বাস অত্যন্ত সৎভাবে বিবৃত করেছেন –তা নিয়ে কোন দ্বন্দ্বের অবকাশ নেই। কিছু গোঁড়ামিকে উনি প্রশ্রয় দিয়েছেন যেগুলো যৌক্তিক নয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে যে, এই গ্রন্থে বিবৃত সীমাবদ্ধতাগুলো মেনে নিয়েই সুবিনয় রায় শ্রোতাদের মন জয় করেছিলেন। কাজেই ব্যক্তিগতভাবে উগ্র রক্ষণশীল কিছু মতবাদের বিরোধিতা করলেও আমি মনে করি সুবিনয় রায়ের রবীন্দ্রসংগীত সাধনা” সমস্ত রবীন্দ্রসংগীতপ্রেমী শ্রোতা ও শিল্পীদের অবশ্য পাঠ্য।
মন্তব্য
ভালো লাগলো,সংগীত নিয়ে টেকনিক্যাল লেখা খুব কম পাওয়া যায়,সবাই শুধু ভালো লাগা/ খারাপ লাগাটাই প্রকাশ করে।সংগীতের টেকনিক্যাল টার্মগুলি একটু করে বললে ভালো হয়।নিজে একটু-আধটু গানের সাথে যুক্ত আছি,কিন্তু কিছু জিনিসের কনসেপশন ক্লিয়ার না । যেমন-- মীড়,গমক এগুলো।
ওস্তাদ রশীদ খান,পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর রবীন্দ্র-উন্নাসিকতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ইচ্ছে করছে।শুনেছি,মেহেদি হাসানও নাকি এই দলের? উনি রবীন্দ্র-সঙ্গীত নিয়ে প্রশনের উত্তরে নাকি বলেছিলেন,"ইয়ে রবীন্দ্রসংগীত ক্যায়া চিজ হোতা হ্যায়!"
লেখা চলুক
ধন্যবাদ।
আপনার সঙ্গীতচর্চার বিষয় এবং কোন ধরনের গানবাজনার চর্চাকরেন সেটা জানালে আমার সুবিধা হবে।
অজয় বা রশিদ রবীন্দ্র উন্নাসিক নন মোটেই। আর রবীন্দ্র-উন্নাসিকতার মানেটাও আপনি উলটো করেছেন! রবীন্দ্র উন্নাসিক বলতে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের কিছু রবীন্দ্র-মৌলবাদী প্রতিক্রিয়াশীল আঁতেলকে বুঝিয়েছি যাঁরা রবীন্দ্রসঙ্গীত ও রবীন্দ্রসাহিত্য ছাড়া আর কোন সঙ্গীত বা সাহিত্যকে পাতে তোলার যোগ্য বলেই মনে করেন না!
মেহেদী হাসান সাহেব এমন কিছু বলেছিলেন বলে জানা নেই। আপনি রেফারেন্স দিলে ভালো হয়। এটা উনি এমনি জানতে চেয়েও বলে থাকতে পারেন।
রেফারেন্স দিতে পারলাম না।আড্ডায় শোনা কথা।আর আমার ঘরানা উচ্চাঙ্গ ও রক দুটোই।ছোটবেলা থেকে ক্ল্যাসিকেল শিখেছি,এখন ক্যাম্পাসে পোলাপাইন মিলে রক ব্যান্ড ফেঁদে বসেছি।দুটো ধারার সঙ্গীতের সাথেই যুক্ত থাকায় একটা জিনিস বুঝতে পেরেছি,যারা ক্ল্যাসিকেল করেন,তারা রক দুচোখে দেখতে পারেন না,আর রকবাজরা ক্ল্যাসিকেল;তানকে দেখে অর্থহীন বিলাপ হিসেবে।বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মাঝে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত প্রীতি তো দূরের কথা,বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।আবার আমাদের বাপ-কাকাদের প্রজন্ম "ব্যান্ডের গান" এর নাম শুনলেই কিংবা ড্রামস,লিড গিটার শুনলেই দূর দূর করেন।কোথাও একটা সমন্বয়ের অভাব হয়ে গেছে।
নিজে একটু গানবাজনা করার চেষ্টা করি। মূলতঃ রবীন্দ্রসঙ্গীত। তবে সবই শখের বশে। সবিনয় রায়ের গান খুব পছন্দ করি।
সঙ্গীতের একাডেমিক জ্ঞান নেই বললেই চলে। তারপরও আপনার লেখাটি পড়ে ভালো লাগছে।
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
সঙ্গীত কখনোই একাডেমিক শিক্ষার উপজাত নয়। এটা সহজাত সুরের উপলব্ধি ও তার কণ্ঠে বা যন্ত্রে বাস্তবায়নের ব্যাপার? ভাই কবে কোথায় একটা গানের আড্ডার আয়োজন করা যায়? রবীন্দ্রসঙ্গীত ও আধুনিক বাংলা গানের কর্ড বাজাতে সক্ষম গিটারিস্ট খুবই বিরল। তেমন কাউকে পেলে সোনায় সোহাগা। নইলে খালি গলায়!
বিভিন্ন ধরনের রবীন্দ্রসঙ্গীতের কথা বলেছেন। গুটিকয় উদাহরণও দিয়েছেন, কিন্তু আরো উদাহরণ থাকলে সাধারণ পাঠক হীসাবে উপকার হতো। যেমন, কোনটা টপ্পা, কোনটা খেয়াল ভাঙা গান। এগুলো। নাম দিয়ে দিলেই, ইন্টারনেট থেকে জোগাড় করে নিতাম।
আর অজ্ঞতাবসত অনেক টার্মও আমার অচেনা। যেমন মীড়, তান, এমনকি ধ্রুপদ!! এই লেখা পড়তে গিয়ে উইকিপিডিয়া থেকে কিছু কিছু জিনিস সম্পর্কে জানলাম। কিন্তু বাংলায় একটা ভালো টিউটোরিয়াল লিখতে পারেন পরবর্তীতে। মোটামুটি সব ধরণের ইন্ডিয়ান ক্লাসিক্যাল সংগীত ই ইউটিউবে পাওয়া যায়। কিন্তু একটা গাইডেড ট্যুর থাকলে ভালো হতো।
এই লেখা সূত্রে নেট ঘাটতে গিয়ে চমৎকার একটা ডকুমেন্টারী পেলাম ধ্রুপদের উপর।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ধন্যবাদ।
আপনার আগ্রহ দেখে খুব ভালো লাগল। আজকাল মনে হয় সুরবধির মানুষের সংখ্যা খুব বেড়ে গেছে।
ধ্রুপদ নিয়ে একটা ডিটেইলড এবং সহজবোধ্য লেখার অনুরোধ করেছে আমার বাল্যবন্ধু অমিত দত্তরায়। গতবার বেঙ্গলে উদয় ভাওয়ালকরের গান শুনে উন্মাদ হয়ে গেছে!
তান কথাটা টান থেকে এসেছে। তবে প্রচলিত কথায় আমশ্রোতারা যেটাকে 'টান' বলে অর্থাৎ হাই অক্টেভের কোন সুরে বহুক্ষণ দাঁড়ানো- সেটা তান নয়। তান হচ্ছে নানা পদ্ধতির স্বরবিন্যাস যেগুলো বেশ দ্রূত গতিতে গাওয়া হয়। তবে খুব ভালো তানও অশিক্ষিত কানে অর্থহীন আ-আ বলে মনে হবে। সঙ্গীতের মধ্যে শুধু কথার অর্থ খুঁজতে যাওয়াটা সাঙ্গীতিক বোধের অভাব সঞ্জাত।
মীড় হচ্ছে সহজ কথায় স্বর থেকে স্বরান্তরে গড়িয়ে যাওয়া, লাফিয়ে যাওয়া নয়! বস্তুত মীড়ই বাকি সব অলঙ্কারের জনক। যেমন গমক বা সূত ইত্যাদিও আসলে যথাক্রমে গলায় ও যন্ত্রে প্রকাশিত অতিদ্রূত মীড়।
ধ্রুপদ নিয়ে আপনি মণি কৌলের এই অসামান্য ডকুমেন্টারিটা দেখুন। ভালো লাগবে। আমিও আবার দেখব।
অলঙ্কারগুলো সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান পাবেন এই লিঙ্কেঃ
http://www.itcsra.org/alankar/alankar.html
এইরকম প্রচুর লেখা দরকার। আপনি নিয়মিত না লিখলে কে লিখবে?
অনেক কাজ করতে হবে।
রাজীবদার সঙ্গে দেখা হলো না এবার। জানুয়ারিতে দেখা হবে আশাকরি।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
প্রিয় নজু ভাই,
নিয়মিত এসব ছাইপাঁশ পড়ার ও আলোচনার রসিক লোক পাই না- তাই লিখি না!
আলোচনার যোগ্যতা নাই, তবে পড়তে পড়তে কিছুটা জ্ঞানী যখন হবো তখন নিশ্চয়ই আলোচনাও করবো। পড়ার উপায় তো করে দেন...
একদিনে হবে না, আস্তে আস্তে হবে নিশ্চয়ই
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
নজু ভাই, আমরা সবাই কি রাজনীতিতে পণ্ডিত? সাহিত্যে পণ্ডিত? বিজ্ঞানে পণ্ডিত? চলচ্চিত্রে পণ্ডিত? নাট্যশাস্ত্রে জ্ঞানী? না! তা সত্ত্বেও সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু কোন কারণে আমাদের সঙ্গীতালোচনা এখন শুধুই হাতে গোনা রক ব্যান্ড, এ, আর রেহমান বা মোহিত চৌহান এর মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।
কোর মিউজিক নিয়ে কেউই নতুন কিছু করছে না!
অলয়, এইসব পড়ার আর আলোচনা করার মানুষ ঢের আছে বৈকি। শুধু লিখে যান হাত খুলে। আপনার দুই পর্ব এখনও পড়ে শেষ করতে পারিনি। আসছি শীঘ্রই। কিন্তু ওই যে বললাম, রসিক মানুষ আরও আছে। আছে আপনার মতন কোন লেখার অপেক্ষায়। আপনি অসাধারণ একটা কাজ করছেন। এমন আলোচনা শোনার জন্য অনেকেই কান পেতে রয়েছে। তাঁদের বঞ্চিত কেন করবেন? ভাল কাজের মুল্য সবসময় তাৎক্ষণিক হয়না। সেতো আর আপনাকে বলতে হবেনা নিশ্চয়ই। আপনি সঙ্গীত নিয়ে লিখুন আরও। আমরা অপেক্ষা করছি, করব।
তেমন লোকদের একটা বাস্তব আড্ডা গড়ে তোলা যায় কি? গানের আড্ডা?
নতুন মন্তব্য করুন