এ বছরের শুরুর দিকে স্বল্প ব্যয়ে সুস্বাস্থ্য সম্পর্কে বিভিন্ন দেশের কেস-স্টাডি নিয়ে সিরিজ লিখতে গিয়ে দিনা বালাবানোভা এবং তাঁর সহকর্মীরা উপসংহার টেনেছেন, “বাংলাদেশ স্বাস্থ্যখাতে প্রভূত উন্নতি করেছে। বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়াতে বাংলাদেশেই সর্বাধিক গড় প্রত্যাশিত আয়ু, সর্বনিম্ন ফার্টিলিটি-রেট এবং সর্বনিম্ন শিশু-মৃত্যুহার, যদিও প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবায় ব্যয় তুলনামূলকভাবে কম।
চীন, ভারত, পাকিস্তান এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে বিশ্লেষণ প্রকাশ করার পর আমাদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু বাংলাদেশ। আমাদের উদ্দেশ্য- বিশ্বস্বাস্থ্যের একটি বড় রহস্যের তদন্ত। এ শুধু অস্বাভাবিক সাফল্যের গল্প নয় নয়, এ গল্পে রয়েছে দুর্বলতা এবং প্রতিকূলতার কথাও। দেশটি সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা (Universal Health Care)-র দিকে অগ্রসর হতে গেলে এগুলো অতিক্রম করতে হবে।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে সাফল্যের মূল চালিকাশক্তি কী? প্রথমত, ইতিহাস। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং তার বিভীষিকা ও গণহত্যা মানুষকে এক জাতীয় নবজাগরণের উন্মেষ ঘটাতে বাধ্য করেছিল। একটি সামাজিক রূপান্তরের সূচনা ঘটেছিল। অধিকাংশ দেশেই স্বাস্থ্যসংস্কার ঘটেছিল কোন না কোন আদর্শিক পরিকল্পনার কাঠামো অনুসারে। কিন্তু এর পরিবর্তে বাংলাদেশ সরকার বহুমুখী উদ্যোগের অনুকূল পরিবেশ গড়ে তুলেছিল। এর অংশীদার হিসেবে NGO এবং বেসরকারী বিকশিত হবার সুযোগ করে দেয়া হয়েছিল। এই বহুমুখী উদ্যোগের ফলে সব গুলিয়ে যেতে পারত। কিন্তু এই ল্যানসেট সিরিজ দেখাচ্ছে যে, এই বহুমুখীতার ফল ইতিবাচক। সরকারের সদিচ্ছা এবং সেবাদানের ক্ষেত্রে পরীক্ষামূলক পদ্ধতির প্রতি নমনীয়তা স্বাস্থ্যখাতে দ্রূত উন্নতির ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।
দ্বিতীয়ত, গবেষণা। একটি প্রতিষ্ঠান- ICDDR,B পরিবার-পরিকল্পনা, টিকাদান এবং ডায়রিয়ার চিকিৎসায় পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করেছে, উদ্ভাবনের উন্মুক্ত সাংস্কৃতিক পরিবেশে। টিকাদান-কর্মসূচী, এলাকাভিত্তিক সাস্থ্যসংক্রান্ত জরিপ, মাতৃস্বাস্থ্য এবং যক্ষ্মার চিকিৎসায় উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করা হয়েছে। এসব উদ্যোগের কার্যকারিতার মূল্যায়ন সম্পন্ন হয়েছে। এসব গবেষণা থেকে স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য নির্ভরযোগ্য জ্ঞান অর্জিত হয়েছে।
তৃতীয়ত, সাম্য। উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সহজাত দক্ষতার কারণে সমবায়ভিত্তিক উদ্যোগ এবং অংশগ্রহণের ফলে দেশের গবেষণালব্ধ ফল ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশ দারিদ্র্য-বিমোচন ও নারীর উন্নয়নে অগ্রদূতের ভূমিকা রেখেছে। ক্ষুদ্রঋণ এবং শিক্ষাবিস্তারের মাধ্যমে নারীর সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ণ নিশ্চিত করা হয়েছে। সামষ্টিকভাবে এই উদ্যোগগুলোর ফলেই স্বাস্থ্যখাতে ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। একইসাথে নারী-পুরুষ-বৈষম্যও হ্রাস পেয়েছে।
সবশেষে, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা। স্বাস্থ্যখাতে বাংলাদেশের উন্নয়নে শুধু সৃজনশীলতা আর জনগণের ক্রমাগত প্রচেষ্টাই নয় বরং বৈদেশিক সাহায্যও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। এই সংস্কৃতি এখনো বিদ্যমান। এখনো মান-নিয়ন্ত্রণ, তত্ত্বাবধান নিম্নমানের, দুর্নীতি বহুলাংশে ব্যাপৃত এবং নির্দিষ্ট কিছু স্থানে অপ্রতুলতা রয়েই গেছে।
বাংলাদেশ অন্যান্য দেশকে কী শিক্ষা দিতে পারে? জনগণের সমবায়ভিত্তিক অংশগ্রহণ, নারী-পুরুষের সাম্য, এবং সর্বজনীন স্বাস্থ্যের জন্য প্রচেষ্টা অন্যান্য স্থানেও বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। এর একটা উদাহরণ হচ্ছে যক্ষ্মার চিকিৎসা। কম্যুনিটি হেলথ ওয়র্কারদের মাধ্যমে বাংলাদেশ যক্ষ্মার চিকিৎসার নিশ্চয়তা এবং ৯০% এর বেশি আরোগ্যের হার অর্জন করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকা ইতোমধ্যেই এইচ,আই,ভি এবং যক্ষ্মার চিকিৎসায় এই মডেল অনুকরণ করেছে।
বাংলাদেশের সাফল্যের অনেকটাই “সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা” পূরণ করাকে কেন্দ্র করে। যাহোক, মাতৃস্বাস্থ্য, শিশুদের অপুষ্টি, এবং প্রাথমিক চিকিৎসার প্রাপ্যতার ক্ষেত্রে সাফল্যের ভাগ তুলনামূলকভাবে কম। একটি ক্ষুদ্র দেশে বিপুল জনসংখ্যা, চরম দারিদ্র্য, অসমতা ইত্যাদি নিয়ে ভবিষ্যৎ-উড্বেগ অত্যন্ত গভীর। শহুরে মধ্যবিত্তদের মধ্যে ওবেসিটি বা মুটিয়ে যাবার প্রবণতা মহামারীর রূপ পরিগ্রহ করেছে। অনিয়ন্ত্রিত, নিম্নমানসম্পন্ন এবং অত্যন্ত ব্যয়বহুল প্রাইভেট প্র্যাকটিশনারদের ঢালাও উৎপাদনও বর্তমানে দুশ্চিন্তার কারণ।
এই সিরিজের শেষ নিবন্ধে স্বাস্থ্যখাতে উদ্ভাবনার দ্বিতীয় জোয়ার সৃষ্টির উদ্দেশ্যে পরিকল্পনা স্থান পাবে। এর উদ্দেশ্য হবে সর্বজনীন স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিশ্চিত করা। জানুয়ারি, ২০১৪ তে জাতীয় নির্বাচন। জলবায়ু পরিবর্তন, দ্রূত নগরায়ণ, দারিদ্র্য, অসাম্য এবং নিম্ন জীবনযাত্রার মান ও আয় – ইত্যাদি প্রধান রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের মানুষ অতীতে সৃজনশীলতা, অপ্রতিরোধ্যতা এবং শক্তির অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তাদের এই ধারা ভবিষ্যতেও ধরে রাখতে হবে।
[ আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মেঘনাদ সাহা, কুদরত-এ-খুদা –সবারই স্বপ্ন ছিল মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চার। অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে মাতৃভাষার ব্যবহারে এখনো অনেকেই লজ্জা পান বা বিদ্রূপ করেন। আমার এক সিনিয়র ভাই বাংলায় ডেভিডসনের মেডিসিন বইটি অনুবাদ করেছিলেন বলে ছাত্রদের অনেকেই তাঁকে ঠাট্টা করত। যেন বেচারা কোন মহাপাপ করে ফেলেছে! এই চর্চা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে ল্যানসেটের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ আমি অনুবাদের চেষ্টা করেছি। ত্রুটির জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। মূল প্রবন্ধের লিঙ্ক এখানে http://www.thelancet.com/journals/lancet/article/PIIS0140-6736%2813%2962294-1/fulltext?elsca1=ETOC-LANCET&elsca2=email&elsca3=E24A35F#]
মন্তব্য
স্বাস্থ্যখাতে আরও বড় একটা অর্জন তার সক্ষম এবং দক্ষ মানবসম্পদ। বাংলাদেশের প্রচুর পাবলিক হেলথ কর্মকর্তা দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে’র মাটিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বড় বড় সংস্থায়, দেশের ভেতর অনেকেই আছেন আন্তর্জাতিক সংস্থার শীর্ষ পর্যায়ে, এই মানুষগুলো’র অনেকের সাথে কাজ করার বিরল সুযোগ হয়েছে চাকুরী জীবনের শুরুতেই, তাদের নিষ্ঠা, পরিশ্রম আর কাজের প্রতি সততা দেখে আমি প্রেরণা পেয়েছি, শিখেছি। যতদূর শুনেছি, ল্যানসেটের এই রিপোর্টে ড: মুশতাক ভাইকে নিয়ে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন হয়েছে, তাঁর জন্য শ্রদ্ধা!
বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যে দেশের জন্মলগ্নেই বলতে গেলে গ্রাম পর্যায়ে স্বাস্থ্যকর্মী নিশ্চিত করা হয়েছিলো, বর্তমানে এটা আরও ব্যাপক। উন্নয়নশীল খুব কম দেশ আছে যারা স্থানিক পর্যায়ে কর্মী নিশ্চিত করতে পেরেছে। এই সূত্র ধরেই আরও একটু যোগ করতে চাই, ১৯৭৪ সালেই সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে আরএসএস (রুরাল সোশ্যাল সার্ভিসেস) প্রোগ্রামের মাধ্যমে প্রতিটি ইউনিয়নে ইউনিয়ন সমাজকর্মী নিয়োগ করা হয়, এই প্রোগ্রামের বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্যে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্যপ্রদান কার্যক্রম-ও ছিলো। এই আরএসএস প্রোগ্রামেই সর্বপ্রথম সুদ-মুক্ত মাইক্রো-ক্রেডিট শুরু করা হয় বাংলাদেশে, শুরুতে যা সুদমুক্ত ছিলো সেটা বর্তমানে সুদ নিয়ন্ত্রিত!
আমরা এগিয়ে যাই নিজ চেষ্টায়, সক্ষমতায় আর বিদেশী’দের কাছ থেকে তবু আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সবক নিতে হয় প্রতি পদক্ষেপে!
পোস্টে পাঁচতারা।
ধন্যবাদ তানিম ভাই।
মানবসম্পদ নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমি আসলে প্রবন্ধটি প্রায় হুবহু অনুবাদের চেষ্টা করেছি। তাই প্রাসঙ্গিক অন্য ব্যাপারগুলো টানি নি।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের প্রতি আপনার বা আমার ক্ষোভ জায়েজ- রাজাকারের মৃত্যুদণ্ড প্রসঙ্গে। বস্তুত, মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে যেসব যুক্তি দেয়া হয়- তারমধ্যে এক "নির্দোষের শাস্তির আশংকা" ছাড়া আর কোন যুক্তিই আদৌ ধোপে টেঁকে না। যাইহোক, স্বাস্থ্যখাতে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রাখার গুরুত্ব অপরিসীম। আপনি কি জানেন বেসরকারী মেডিকেল কলেজের অনুমোদনে কী পরিমান দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়ণ হয়েছে? কয়েকটি উদাহরণ দিচ্ছিঃ
১। বিশ্বসাস্থ্য সংস্থার মাননিয়ন্ত্রণ বিধি অনুযায়ী প্রতি শিক্ষার্থীর জন্য ৫টি করে শয্যা বরাদ্দ থাকতে হবে। অর্থাৎ ৫০ সিটের একটি মেডিকেল কলেজ খুলতে ন্যুনতম ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল থাকতে হবে। বলাই বাহুল্য এই হাসপাতাল হতে হবে টিচিং হসপিটাল বা টারশিয়ারি লেভেলের। ১০০ শিক্ষার্থীর অনুমোদন পেতে লাগবে ন্যুনতম ৫০০ বেডের হাসপাতাল। অথচ এই নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে চলছে জমজমাট ব্যবসা। গত ১ যুগে যেসব বেসরকারী মেডিকেল কলেজ অনুমোদন করা হয়েছে তারমধ্যে অধিকাংশই ১০০-১২০ বেডের! এবার নাকি ৬৫ বেডের ক্লিনিকও অনুমোদন করেছে মেডিকেল কলেজ হিসেবে! আমার নিজের কর্মস্থলে ১২০টা বেড মেরেকেটে, ইতোমধ্যে ১০০ ছাত্রের অনুমোদন পেয়ে গেছে, শুনছি ট্রেনিংও নাকি গণ্য হবে। একটা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোন গেস্ট কনসালট্যান্ট অনুমোদিত নয়, সবাইকে হতে হয় নিয়োগপ্রাপ্ত চাকরীজীবি। অথচ অনেক মেডিকেল কলেজই এখনও নামে "মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল" খুলে আড়ালে চালাচ্ছে গেস্ট কনসালট্যান্ট-নির্ভর রমরমা ক্লিনিক-ব্যবসা। এসব নিয়ে কিছু বললে চাকরীর ভয়, এমনকি প্রাণের ভয়ও নাকি দেখানো হয়! ল্যানসেট এই ভয়ংকর বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করে দায় সেরেছে।
২। অধিকাংশ নতুন বেসরকারী মেডিকেল কলেজে পর্যাপ্ত ল্যাব সুবিধা নেই। জেনারেল মেডিকেল কাউন্সিল, ইউ,কের অনুমোদন যেসব মেডিকেল কলেজে নেই বা যারা বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তালিকায় নেই- সেসব জায়গায় পড়ে খুব একটা উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নেই। তারপরও মানুষ টাকার বস্তা নিয়ে আসে!
তবে প্রথম সারির বেসরকারী মেডিকেল কলেজগুলো কিন্তু খুবই ভালো করছে। বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ, ইব্রাহীম মেডিকেল কলেজ, কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ, জহুরুল হক মেডিকেল কলেজ, কুমুদিনী মেডিকেল কলেজ, হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজ -ইত্যাদি তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
স্বাস্থ্যখাতে তরুণ চিকিৎসকদের যেভাবে বুটের তলায় পিষে ধ্বংসের কোঠায় ঠেলে দিয়েছেন কতিপয় নীতিনির্ধারক বৃদ্ধ-অধ্যাপক -তা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। সরকারী খাতের চেয়েও বেসরকারী খাতে তরুণ ডাক্তারদের ওপর শোষণ বেশি এবং এক্ষেত্রে কোনভাবেই বর্ষীয়ান অধ্যাপকগণ দায় এড়াতে পারেন না কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারাই মালিকপক্ষ। বেসরকারী খাতে প্রতিসপ্তাহে নামমাত্র বেতনে তরুণ ডাক্তারদের ৪৮ ঘণ্টা কলুর বলদের মত খাটানো হচ্ছে বাড়তি ৮ ঘণ্টার জন্য একটি পয়সা না দিয়ে। এ বিষয়ে তাদের আফিম গেলানো হয় -ডাক্তাররা শ্রম আইনের আওতায় পড়ে না, সারা পৃথিবীতেই ডাক্তারদের ডিউটি এমন, বিলেত-আম্রিকায় ডাক্তাররা বাড়িতেই যেতে পারে না, ২৪ আ'র রেসিডেন্সি ইত্যাদি, ইত্যাদি। বলাই বাহুল্য এগুলোর সবই মিথ্যাচার। প্রায় গোটা পৃথিবীতেই আর দশটা স্কিলড পেশার মত ডাক্তারিতেও সপ্তাহে ৫ দিনে ৩৫-৪০ ঘণ্টা কাজের পর ওভারটাইম কাউন্ট হয়। বাংলাদেশে এই উদ্ভট সর্বনিম্ন ৪৮ ঘন্টার রহস্য আর কিছুই না- কম ডাক্তার নিয়োগ দিয়ে কাজ চালানো। কর্পোরেট দুনিয়ায় এসব আকসার হয়। তবে আমাদের এখানে খুব বেশি। এই অবস্থার উন্নয়নে সত্যিই কিছু করা দরকার।
আপনার সাথে একমত।
এইসব দেখার জন্য বিএমডিসি বলে একটা প্রতিষ্ঠান আছে যাকে অচল করে রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি চেয়ার-টেবিল পর্যন্ত পৌঁছেছে বহু আগেই। ৪ বছর পাবলিক হেলথ সেক্টরে কাজ করেছি, দুর্নীতি কোন পর্যায়ে তা বলতে গেলে বিবমিষা চলে আসবে। শুধুমাত্র রাজনৈতিক নেতাদের দুর্নীতি নিয়ে আমরা হৈ-চৈ করি কিন্তু সরকারী আমলাতন্ত্র কিংবা এনজিও সেক্টরে যে পরিমাণ দুর্নীতি হয়, যতটা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে হয় তার তুলনা মেলা ভার।
আমি নিজে উন্নয়ন কর্মী, উন্নয়ন সেক্টরে দুর্নীতি নিয়ে কাজ হওয়া দরকার। সরকারী লোকজনের তবুও কিছু একাউন্টিবিলিটি থাকে, এনজিও সেক্টরে দুর্নীতি’র বেলায় সেটাও নেই, সবাই সব জানে কিন্তু তা নিয়ে ব্যক্তিগত পর্যায়ে নিজের কাছে লড়াই করে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই। বিদেশী যারা কাজ করতে আসে তাদের ভেতর দুর্নীতিপরায়ণ লোক থাকে প্রচুর। স্বাস্থ্যখাতে এই পরিমাণ দুর্নীতি’র পরেও আমরা যেভাবে এগিয়েছি, সেই দুর্নীতি যদি না থাকতো তাহলে কতটা এগিয়ে যেতাম ভাবতে পারেন?
বিশেষায়িত খাতগুলো’তে দলীয় রাজনীতি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া দরকার।
সত্যেন বসু বলেছিলেনঃ "যারা বলে যে বাংলায় বিজ্ঞানচর্চা করা সম্ভব নয়, তারা হয় বাংলা জানেন না, নতুবা বিজ্ঞান বোঝেন না"
লজ্জাবানেরা নির্দ্বিধায় অন্য কোনও দেশে গিয়ে সানন্দে মুড়ি খেতে পারেন,
এই নির্বোধদের কথায় কিছুমাত্র কান না দিয়ে এগিয়ে যান।
পরের পর্বগুলোর অপেক্ষায় থাকলাম, যদিও চিকিৎসাবিজ্ঞানের চ ও বুঝিনা,
আপনার সাবলীল ভাষা বুঝব ভেবে সাগ্রহে বসে থাকলাম, দেরি করবেন না যেন।
পুনশ্চঃ সভয়ে বলি, ল্যানসেটের গুরুত্ব সম্পর্কে দুলাইন লিখবেন কি? বুঝতে পারছি চিকিৎসা সংক্রান্ত ফিল্ডে এটি গুরুত্ববাহী। আমার মত আম-আদমী'র জন্য বলছিলাম আরকি।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ধন্যবাদ ভাই।
আসলে কতটা সাবলীল হয়েছে -বলতে পারবো না। কারণ বৈজ্ঞানিক নিবন্ধে মূলানুগ থাকার দায়টা ছিল। তবে অতিরিক্ত পরিভাষার ব্যবহার এড়িয়ে গেছি।
ল্যানসেট চিকিৎসাবিজ্ঞানের একটি খানদানী জার্নাল।
সহমত। এ বিষয়ে কিছু অদ্ভুত অভিজ্ঞতার কথা বলিঃ
ছাত্রজীবনে দেখেছি অধিকাংশ শিক্ষকই শুধু ইংরেজি টার্মগুলো ব্যবহার করে বাংলাতেই বলেন। তবুও নানা প্রসঙ্গে বাংলায় বিজ্ঞান চর্চাকে হেয় করে তাঁরা অশ্লীল আনন্দ পেতেন। এঁরা ইংরেজিতে লেকচার নিতেন না, কারণ ইংরেজি ভালো বলতে পারতেন না, বইএর মুখস্থ লাইনগুলোর বাইরে ইংরেজিতে বাক্য রচনা করতে গেলে ব্যাকরণগত ত্রুটিও দুর্লভ ছিল না অনেক অধ্যাপকের কাছেই! সত্যি বলতে, নাতিক্ষুদ্র মেডিকেল ক্যারিয়ারে ভালো ইংরেজি শুনেছি মাত্র ৪-৫ জন শিক্ষকের মুখে। সেটা দোষের না, কিন্তু ভালো ইংরেজি না জানা সত্ত্বেও বাংলার প্রতি এঁদের যে অবজ্ঞা- তা হৃদয়বিদারক। পুরোপুরি বাংলায় পড়ালে এদের জাত যেত! পুরোপুরি বাংলায় পড়ানো বলতে আমি বোঝাই বৈজ্ঞানিক শব্দগুলোকে অপরিবর্তিত রেখে বাক্যগুলো বাংলায় বুঝিয়ে বলা।
এই অশ্লীল আনন্দ পদার্থবিজ্ঞানের অনেক শিক্ষককেও পেতে দেখেছি, আমার ধারনা সব বিভাগেই কিছু পাওয়া যাবে। তবে আনন্দের কথা এ এম হারুন অর রশীদ স্যার পদার্থবিজ্ঞানের স্নাতক পর্যায়ের প্রায় সব কোর্সের বাংলা বই লিখে রেখেছেন। বাংলা একাডেমীতে পাওয়া যায়। অন্যান্য বিষয়ের বই সে অনুপাতে দেখিনি। আপনারা লিখে ফেলুন। শুভকামনা।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
লেখাটা পড়ে ভাল লাগল। বাংলাদেশের মত একটা দেশ এত প্রতিকুলতা পার হয়ে ভাল করছে দেখে ভাল লাগে।
ওয়াইফাই ক্যানসার
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
নতুন মন্তব্য করুন