তারা দুই বন্ধু।
দুইজনেরই জীবনে অনেক কিছু করার শখ ছিলো, শেষমেশ সেসব শখের কিছুই করতে না পেরে তারা ছকে বাঁধা জীবনে অভ্যস্ত হয়ার চেষ্টা করে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অফিস করে, বাসায় ফেরে তারপর ঘুমায়। আবার পরের দিন যায় অফিসে। তাই প্রতি সপ্তাহ শেষে দুই বন্ধু এই নিরামিষ জীবনের হতাশা দূর করতে বার-এ যায় চিবিয়ে একদম ছিবড়ে করে ফেলা জীবনটায় সাময়িক উত্তেজনা আনতে।
এমনই এক সপ্তাহান্তে ওরা অনেক রাতে বাড়ি ফিরছিলো। দুইজনেরই বাসা কাছাকাছি। রাত একটু বেশি হয়ে গিয়েছিলো আর কেন জানি ওরা একটু বেশিই গিলে ফেলেছিলো সেদিন। রাস্তায় কিছু কুকুরের এলোমেলো ঘুরোঘুরি, ঘুম ঘুম চোখে নিয়নের লাইট আর রাত-প্রহরীর হুইসেল ছিলো ওদের সঙ্গী। ছেঁড়া কাঁথার মত মেঘের ফাঁক গলে হঠাৎ হঠাৎ বের হওয়া ঘষা চাঁদওয়ালা রাতের আকাশকে সাক্ষী রেখে সেইসব দিনরাত্রির এলোমেলো গল্প করতে করতে ওরা এগুতে থাকে গন্তব্যের দিকে।
বাড়ির কাছাকাছি এক জায়গায় পার হতে হয় একটা দুর্গন্ধময় গলি। থমকে থাকা ভারী কটু গন্ধে নিশ্বাস আটকে আসে। অবশ্য এসব ওদের খেয়াল করার মতো পরিস্থিতি ছিলো না। ওরা হাঁটতে থাকে। এমন সময়ে একজন ধপাস করে আছাড় খায়। হাচড়েপাচড়ে উঠে দেখে রাস্তায় গর্তের ছড়াছড়ি।
আরো কিছু সময় যায়। মাতাল দুইজন স্খলিত পায়ে এগোয় তাদের গন্তব্যের দিকে। একটু পর অবাক করা ব্যাপার দ্যাখে দুজনেই। দ্যাখে, কয়েক শ, না কয়েক হাজার মার্বেলের মতো জিনিস গড়ায় আসছে তাদের দিকে তাদেরকে ঘিরে তাদের দিকে তাদের ছাড়িয়ে চলে যাচ্ছে গলির আরেক মাথায়। ভাবখানা যেন গলিটা ঢালু। ওরা অবাক হয়ে দেখে এইগুলো তাদের সেই শৈশবের খেলার মার্বেল। চেনা যায়। ওরা চেষ্টা করে কিন্তু একটাও ধরতে পারে না। মাটিতে শুয়ে পড়েও ধরতে যায়, পারে না।
ওরা সামনে আগায় আরো। সামনে ওদের অবাক করে দেয় আরো এক আজব ব্যাপার! রাস্তার ধারে ড্রেনে দেখে ভেসে যাচ্ছে দুইটা গিটার। একজন অবাক হয়ে চিৎকার দিয়ে উঠে, "আরে এইটা তো আমার গিটার। ড্রেনে ভেসে যায় কেন?"
বিহবল দুই জনেই গিটারগুলা ধরতে যায় কিন্তু পারেনা। ওদের ইচ্ছে-অনিচ্ছের সুরগুলো ভেসে চলে যায় সব। ওরা চিন্তায় পরে যায়। কী হচ্ছে এসব?
ওরা কেমন যেন হিসেব মিলাতে পারে না। মাথা নাড়তে নাড়তে আরো সামনে এগিয়ে যায়। গলির মাথায় ময়লা-আবর্জনা ভর্তি ডাস্টবিন। একদম উপচে পড়ছে যেন। হঠাৎ দ্যাখে মাছের কাঁটা, কলার ছোকলা, খাবারের উচ্ছিষ্টের সাথে রাজ্যের হাড়-গোড়। এক সময়ে এই হাড়গুলোই চিৎকার দিয়ে উঠে কেমন যেন কান্নার মতো করে! দুজনের কাছেই খুব পরিচিত লাগে এই কান্না। ওরা বুঝে ফেলে এগুলো ওদেরই এক সময়ের দেখা স্বপ্নগুলো। সময় আর বাস্তবতার নিষ্ঠুর বুলডোজারে চাপা পড়ে শেষকালে এই স্বপ্নগুলোর ঠাঁই হয়েছে ডাস্টবিনে। আঁকড়ে ধরতে চায় দুজনেই তাদের আকাঙ্ক্ষাগুলোকে। সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। ওরা পারে না ধরতে।
ওরা বুঝতে পারে না শত চেষ্টাতেও কেনো ধরতে পারছে না নিজেদের সকল আকাঙ্খিত জিনিসগুলোকে। বুঝে যায় কিছু করার নাই। না চাইলেও ওরা মেনে নেয়। তারপর টলতে টলতে গলিটা পার হয়ে ফিরে যায় নিজেদের বাড়িতে।
তাদের এই সব ব্যাপারগুলো ঐ গলির তিন তলা থেকে খেয়াল করে আরেকজন পুরোটা সময় ধরে। খুব একচোট হেসে নেয় সে। কী তামশা করলো মাতাল দুইজন। ভাবে, "মোটেও আমি ওদের মতো বোকা না। বাস্তববাদীতা আমার শক্তি। কখনোই এমনটা হবে না আমার সাথে। ওদের মতো আটকে পড়ার পরিণতি আমার জন্যে না। মদ খেয়ে যত্তোসব মাতলামি করে এরা। আমি এরকম না। গোল্লায় যাক ছেলেগুলো।"
এইসব ভাবতে ভাবতে সে নিজের রুমে ফিরে যায় ঘুমাতে। ভাবে, "অনেক হাসলাম আজ। আর না। এখন বাতি নিভিয়ে ঘুমানোই ভালো।" শুতে যাবার সময় খেয়াল করে এক অদ্ভুত ব্যাপার।
তার এতদিনের পরিচিত রুমের দরজা-জানলা কেমন যেন অন্যরকম ঝাপসা। পরিচিতির লেশমাত্র পেলো না সে। হাত বাড়িয়ে পাশের টেবিলে রাখা অ্যালার্ম ঘড়িটা ধরতে যায়। শত চেষ্টাতেও ধরতে পারেনা।
কোনও এক অজানা ভয়ে এই শীতের রাতেও ঘেমে যায় তার শরীর। যে রুমটাকে এতদিন নিজের ভাবতো সেখানে নিজেকে আবিষ্কার করে এক আজব ঘষা কাঁচের বেলুনের মাঝে। সেই বেলুনে গড়াতে গড়াতে বিছানা থেকে নামতে গিয়ে এই প্রথম সে ভয় পায়!
আস্তে আস্তে তার দম বন্ধ হয়ে আসে।
আর ঠিক তখনই আকাশে ছেঁড়া কাঁথার মত মেঘের ফাঁক গলে হঠাৎ বের হয় সেই বহু পুরোনো ঘষা চাঁদ।
আরও একটিবার !
মন্তব্য
এক্টা জ্যাতা লেখা দিবি? তোর পিলিজ লাগে! তুই শালা মানুষরে নষ্টালজিক কইরা দ্যাস!!! মর!!!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
ভালো লাগলো আপনার ছবির শানে নুযূল।
ডার্ক টোনটা ভালো লাগলো।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
ডার্ক টোন আমারো ভাল্লাগে !
-অতীত
মাতাল হইলেও আসলে মাতাল হওন যায় না
মাতাল হইলেও ফটগফুর হওন যায় না
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ছবি দুটো না থাকলেও এটা একটা চমৎকার গদ্য হয়েছে। গল্প বলতেও আমার আপত্তি নেই। লোকে ছবি তুলতে থাকলে ছবি ভালো হবার সাথে সাথে লেখার হাতও ভালো হয়ে যায় বোধহয়, নয়তো সচলের ফট্গফুররা এতো ভালো গদ্য লেখে কীভাবে? কবি ফট্গফুরও আছে। নিশ্চয়ই এর কোন কার্যকারণ আছে!
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আপনার এই মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই ভাইয়া !
অদ্ভুত!
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
হ...পুরাই অদ্ভুত !
না, দুঃস্বপ্নে পাওয়া !
লেখাটা কি স্বপ্নে পাওয়া?
দারুন হয়েছে।
.........
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা
লেখা দিন দিন ভালো হচ্ছে
...........................
Every Picture Tells a Story
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া !
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
খুব ভাল লাগলো, পড়তে এবং ছবিগুলোও।
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
অনেক ধন্যবাদ তারেক ভাই !
ওয়াও!
লেখা আর দ্বিতীয় ছবি দুইটাই ভয়াবহ সোন্দয্য!!
প্রথম ছবিটা আমি দেখতে পারতেসি না কোনোভাবেই।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
অনেক ধন্যবাদ !
ব্রাউজার রিফ্রেশ করে অথবা অন্য ব্রাউজার ইউজ করে দেখেন। দেখতে পাওয়ার কথা !
পাণ্ডবদার সাথে একমত, ছবি তোলার হাত আর লেখার হাত মনে হচ্ছে সমানুপাতিক!
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
লও একগাদা
ভালু পাইলাম। আইজ সারাদিন সচলে ঢুঁ মারার কপাল হয় নাই, তাই মেজাজ খ্রাপ যে তোর এই লেখাটা দেখতে বহুতি দিরং হইছে। যাউজ্ঞা, আলাপের সময়ের থিকা এখন বেশি মজা পাইলাম। এক্সিকিউশনটা জুশ।
অটঃ আমার ছবির ক্রেডিট কো??? এক্কেলে গুলি কইরা দিমু ... ... ...
==========================================================
ফ্লিকার । ফেসবুক । 500 PX ।
থেঙ্কু থেঙ্কু !
অটঃ এই ছবি তোমার আপ করার কথা ছিলো,তুমি তো করলা না তাই আমি প্রাইভেট কইরা আপাইসি।আর ছবির কনসেপ্ট, থিম, মডেল,ক্যাম্রা, যায়গা, প্রসেসিং সব কিছু আমার। আগে আমারে ক্রেডিট দেও !
দিলাম ... দুই হাত, দুই পা ভইরা দিলাম ... ল ...
==========================================================
ফ্লিকার । ফেসবুক । 500 PX ।
দেশী গথিক?
ঠিক গথিক না, তবে একটু সাইকেডেলিক ফ্লেভার আনার চেষ্টা করসি আর কি...
খাইছে!
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
কও কি? কে খাইসে? কি খাইসে?
পড়লাম
বুঝলাম
উদাস হইলাম
ভাবলাম
মন খারাপ করলাম
মন ভাল ও করলামঃ)
এটাই তর লেখার বৈশিষ্ট্য।........ভাবায়।
দারুণ!!
--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।
গল্প এবং ছবি, দুটোই ভালো লেগেছে।
চরম বর্ণনা। এক জীবনে পানি বড়ই ভালু পাইতাম।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
নতুন মন্তব্য করুন