স্বভাব যায় না ম'লে

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি
লিখেছেন প্রকৃতিপ্রেমিক (তারিখ: রবি, ১৯/০৮/২০০৭ - ১০:৩০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মানুষ ম'লে কী খায়? উত্তরবঙ্গের যে জায়গায় আমার জন্ম, এটি সে অঞ্চলের একটি অতি প্রচলিত ধাঁধা।

আঞ্চলিক রীতিতে ম'লে অর্থ 'মরলে' অর্থাৎ মারা গেলে। তাহলে প্রশ্নটা হল, 'মানুষ মারা গেলে কী খায়?'

মানুষ মরলে তো কিছুই খায়না। কিন্তু যদি "ম'লে" শব্দটা যদি সঠিকভাবে চিন্তা করা হয়, যেমন 'মানুষ মলে কী খায়?' অর্থাৎ মানুষ ডলা দিয়ে কী খায়, তাহলে উত্তর হবে-- মানুষ ডলে তামাক খায়। তামাক পাতা হাতের তালুতে নিয়ে মলে খায়।

স্বভাব যায়না ম'লে তেমনি একটি বহুল প্রচলিত প্রবচন যা অল্পবিস্তর নয়, ব্যাপকভাবেই বাংগালীর উপর উপর প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। নিজে অন্তত একবার এমন পরিস্থিতি সামনে থেকে দেখেছি।

কানাডার যেখানে আমি বাস করি সেখানে 'ভাগ্য' নামে একটি রেস্টুরেন্ট আছে। সঙ্গত কারণেই আসল নামটি দেয়া হলনা। সেই 'ভাগ্য' রেস্টুরেন্টে খাওয়ার ভাগ্য আমার হয়েছিল। খাবার খুবই সুস্বাদু, অনেকবারই গিয়েছি। এখনো যাই। কিন্তু বিসমিল্লায় গলদ বলে একটা কথা আছে। আমার অভিজ্ঞতা অনেকটা সেরকমই।

আমাদের রাহা ভাই (আসল নাম নয়), গান বাজনা নিয়ে থাকেন। খুবই মজার, দিল খোলা সাদাসিদে মানুষ। 'ভাগ্য' রেস্টুরেন্টের প্রথম দিনের ঘটনা। রাহা ভাই তার কলিগকে নিয়ে লাঞ্চ করতে গিয়েছেন। আমরা এক টেবিলে আর উনারা দু'জন আরকটা টেবিলে বসেছেন। তাদের সাথে আমাদের অবস্থান বিপ্রতীপ কোণের মত।

দূর্ভাগ্যক্রমে রাহা ভাইও ঐদিনই প্রথম গিয়েছেন। আমরা তন্দুরী চিকেন আর কড়াই গোস্ত নিয়েছি। দোকানী চাচার ছেলেই বললেন এগুলো নিতে। রাহা ভাই তার কলিগকে বিরিয়ানি খাওয়াবেন বলে বিরিয়ানির অর্ডার দিলেন। অর্ডার দিয়ে বসে আছি আর পাপড় চিবুচ্ছি। মাঝে মাঝে ঠান্ডা পানির গ্লাসে চুমুক দিচ্ছি।

একসময় চাচা দুই টেবিলেই খাবার সার্ভ করলেন। আমরা শুরু করেছি। কিন্তু বিরিয়ানি দেখে রাহা ভাইয়ের মখটা চুপসে গিয়েছে। দূর থেকে এক নজর দেখে ওটাকে বিরিয়ানি মনে হল না। মনে হল খিচুড়ি রেঁধে পানি দিয়ে ঘুটা দেয়া হয়েছে। আমরা খেয়ে চলেছি। রাহা ভাই চাচাকে ডাকলেন এবং খুবই শান্তশিষ্ট ভাবে যা জিজ্ঞেস করলেন তা এরকম:

রাহা: চাচা, এটাতো বিরিয়ানি না, এর মনে হয় অন্য কোন নাম দিতে হবে
চাচা: বিরিয়ানি না হলে অন্য খানে যাইয়া খাও। এখানে আসছ কেন? (লক্ষ্য করুন উনি কিন্তু তুমি করে বলছেন)

রাহা: না সেটা তো কথা না। আমি বলছি এটা তো বিরিয়ানি হয় নাই।
চাচা: তুমি আমারে বিরিয়ানি করা শিখাইতেছ? আমি ১৮ বছর হয় এই ব্যবসা করি। তুমি আর এই দোকানে আসবানা।

রাহা: কেন? আমি কোথায় আসব না আসব সেটা আপনি বলতে পারেন না (খুবই শান্ত ভাবেই বললেন)
চাচা: (রেগে গিয়ে) তুই আর এই দোকানে আসবি না। তোর মত কাস্টমার আমার দরকার নাই। বেয়াদব। মুরুব্বীদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তাও জানিস না।

এদিকে আমরা অত্যন্ত বিব্রত, কারণ রাহা ভাই আমাদের পরিচিত। সবচেয়ে বড় কথা উনার কলিগ বাংলাদেশী না হলেও উনি অল্প অল্প বাংলা বোঝেন। তো চিন্তা করেন, কী অবস্থা!

রাহা ভাই টেবিল থেকে উঠে দাঁড়িয়েছেন। ওনার অপমান দেখে আমার মেজাজ খুবই খারাপ। কিন্তু কী করব বুঝতে পারছিলাম না। এই মুহূর্তে কী করা উচিত তাও বুঝতে পারছি না। আমি রাহা ভাইকে বলি আপনি পুলিশ ডাকেন। তিনি বলেন, এসব করে দেশের দোকানের দূর্ণাম, থাক।

উনি বিল পরিশোধ করে চলে যাওয়ার সময় বলছেন, চাচা যাই, আর আসবনা আপনার দোকানে। উত্তরে চাচা যা বললেন তা এই দেশে বসে শুনতে হবে আমি ভাবতেও পারিনি। উনি বললেন, আরেকবার আসলে পা ব্যবহার করে তাকে বের করে দিবেন। শুনে লজ্জায় আমি এতটুকু হয়ে গেলাম। প্রবাসে এসেও এই আচরণ দেখে আমার মনটাই খারাপ হয়ে গেল। আস্তে করে বিল পরিশোধ করে আমরা বেরিয়ে এলাম।


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

যেমন ইচ্ছে লেখার আমার সচলায়তনের পাতা। খাইছে

অতিথি এর ছবি

আপনার জায়গায় আমি হলে গুগল ম্যাপসে ঐ নসীব রেস্টুরেন্টের লোকেশনসুদ্ধু তুলে দিতাম,হারামজাদা চাচা মিয়ার একটা শিক্ষার দরকার।

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

চাচা মিয়ার পক্ষে তো কোনো সাক্ষ্য নাই।
হঠাত্ করে চাচা মিয়া তো ক্ষেপে যাওয়ার কারণ দেখি না। কোনো পূর্ব -ইতিহাস আছে নাকি?
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

চাচা মিয়ার সাক্ষ্য তো আমিই। আমি তো তার খাবারের প্রশংসা করেছিই--এখনো যাই সেখানে। কিন্তু তার মেজাজ খুবই খারাপ। খাবার খেয়ে প্রশংসা করতেই হবে। কোন কিছুই বলা যাবে না, তাহলেই ভাল।

পুর্ব-ইতিহাস থাকতেও পারে। সেটা জানি না।

............
যত বড় হোক সে ইন্দ্রধনু দূর আকাশে আঁকা
আমি ভালবাসি মোর ধরনীর প্রজাপতির পাখা

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।