উড়োজাহাজ উড়ছে তো উড়ছেই। কী আশ্চর্য একটা জিনিস! একটানা সাত ঘন্টা ধরে উড়ছে, তাও ক্লান্তি নেই। আমি কখনো ঝিমিয়ে, কখনো ঘুমিয়ে সময় কাটাচ্ছি। কখনোবা শুধুই বাইরের দিকে তাকিয়ে নিচের এবড়োথেবড়ো পাহাড়ি সৌন্দর্য দেখছি। ঢাকা ত্যাগের দুই-আড়াই ঘন্টা পরেই দুবাইতে নেমেছিলাম। দেড় ঘন্টার ট্রানজিট। এমিরেটস-এর আরেকটি প্লেনে উঠতে হবে। কোথায় কিভাবে যেতে হবে কিছুই জানিনা। দেশে থাকতে কে একজন বলেছিল শুধু ট্রানজিট লেখা ফলো করলেই হবে, ব্যাস। আমি তাই করেছি। অবশেষে একটা লাইনের পেছনে এসে থামলাম। সামনে একজন পুরুষ আর একজন মহিলা। তারা একসাথে। তাদেরকে যা জিজ্ঞেস করব তা দুয়েকবার প্র্যাকটিস করলাম। উত্তর শুনে নিশ্চিত হলাম এটাই লন্ডন যাওয়ার লাইন। সব ঠিকঠাক মত আছে ভেবে স্বস্তি পেলাম।
প্লেন থেকে বের হয়ে বোর্ডিং ব্রীজে পা রাখতেই তাপমাত্রা বুঝিয়ে দিল এটা দুবাই। এই সেই দুবাই যেখানে আসার জন্য মানুষ কত হাউকাউ করে। "দুবাই যামু, টাকা দেন, বাবাগো টাকা দেন" এরকম নাটকের সংলাপ তৈরী হয়। সবকিছু ঝকমকে, চকচকে-- যেমনটা আমি আশা করেছিলাম। এয়ারপোর্টের একটা অংশে কনস্ট্রাকশনের কাজ চলছিল। আমার কাছে আহামরি কিছু মনে হলনা।
দুবাইয়ের ট্রানজিট শেষে লন্ডনের পথে এই ক্লান্তিকর ভ্রমণ শুরু হয়েছে। আর তখনই প্লেনে আসলো সেই বিশেষ মুহূর্ত। এয়ার হোস্টেস কফি সার্ভ করছে। আমি দেশের মধ্যবিত্ত ঘরের সেকেলে ছেলে। দেশে তখনো হোটেল-রেস্তোরাঁয় নেসক্যাফের প্রচলন শুরু হয়নি। তাই বাসায় তো নয়ই, সারা জীবনেই হাতে গোনা কয়েকবারই কফি খাওয়া হয়েছে মাত্র। এয়ারহোস্টেস সবাইকে একটা করে ডিস্পোজেবল গ্লাস দিল। আমিও পেলাম। তারপর তাতে গরম কফি ঢেলে দিল। আমাকে জিজ্ঞেস করল "ক্রীম অর সুগার?" প্রশ্নটা আমি আসলে বুঝতে পারিনি। কিন্তু কিভাবে তা স্বীকার করি? আমি বলি "নাথিং"। এয়ার হোস্টেস কিছুটা অবাক হয়। বলে "আর ইউ শিওর?" "ইয়া", আমি উত্তর দেই।
ততক্ষণে বুঝে গিয়েছি উনি কী জানতে চাইছিলেন। উনি আসলে জানতে চাইছিলেন আমি কফির সাথে দুধের ক্রীম, নাকি চিনি নেব। কিন্তু একবার না করে আবার কিভাবে আমি চিনি চাই? ফলে যা হবার হল। আমি কালো কফি, দুধ বা চিনি ছাড়াই এমনভাবে চুমুক দিলাম যেন অমৃত পান করছি। এয়ার হোস্টেস চলে গেল। আমি কফি খেতেও পারছিনা আবার ফেলতেও পারছিনা। কারণ আমার পাশের সাদা ভদ্রলোক, তার সামনেই এই ঘটনা। একজন সাদার সামনে কিভাবে আমার বাঙালিত্ব প্রকাশ করি?
মন্তব্য
কফির সাথে আমি এমনিতেই চিনি বা দুধ খাই না।
এরকম পরিস্থিতিতে কিছু বুঝতে সমস্যা হলে নিসঙ্কোচে সহযাত্রিকে জিজ্ঞেস করা যায়। সবারই প্রথমবার বলে একটা কথা আছে। লজ্জার কিছু নেই। কোনো কিছু না জানা পাপ না। তবে এয়ারহোস্টেসদেরকে, বিশেষ করে মিডলইস্ট টু বাংলাদেশ ফ্লাইটে, নিজের না জানাটা জানতে না দেওয়াই ভালো। বটমলাইন হলো, আমরা কাস্টোমার আর তারা সার্ভিস দিবে। সুতরাং সঙ্কোচের কিছু নেই।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
আমার প্রথম বিদেশ যাত্রাটা ছিলো বেশ লম্বা। ভাবছি আমার অভিজ্ঞতাটাও লিখে ফেলবো কিনা
তা আর দেরী কেন? নামিয়ে ফেলুন। আগামী এক সপ্তাহে আমার তিনটি এসাইনমেন্ট ডিউ; আর এখন আমি ব্লগাইতেছি। কি করব? বাসায় বসলে বউ ঝামেলা করে। তাই ডিপার্টমেন্টে বসেই 'আকাম' করছি।
প্রকৃতিপ্রেমিক , লেখার সময় আমিও একেবারেই পাই না। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে লিখব ভাবি কিন্তু সামজিকতা আর সংসারের কাজেই বেলা শেষ। অসামাজিক হয়ে যেতে হবে তবে যদি সময় পাই
আমিও চা ক্রিম কিছু খাইনা। একেবারে কালো....
সেই অর্থে সেফ।
আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
শরমের কিছু নাই। এরকম সবারই একটু আধটু হয়!
আমার অভিজ্ঞতা তো আরো ভয়ংকর।
সেটা বলবো নে একসময়ে।
আমি প্রথমবার বাইরে থেকে ফেরার পথে দুবাই-ঢাকা রুটে টের পাই ইয়োরোপীয় আর বাংলাদেশিদের প্রতি এমিরেটস/দুবাইয়ের আচরণগত তারতম্যটা। দক্ষিণ এশীয়দের যাতায়াতের টার্মিনালে না আছে ভালোমতো বসার ব্যবস্থা, না আছে ঠিকমতো কিউ ধরার জায়গা। এক শ্রীলঙ্কান মহিলার পাশে বসেছিলাম কিছুক্ষণ, তিনিও এ নিয়ে মৃদু অভিযোগ করলেন। দুবাই এয়ারপোর্টের নিরাপত্তাকর্মীরা বেশিরভাগ পাকিস্তানি, তারা মাঝে মাঝেই যাত্রীদের নানাভাবে ধমকাধমকি করে (উর্দুতে)। প্লেনে ওঠার পর দেখলাম বেশিরভাগ দেশী ভাই ইংরেজি জানেন না, তাদের জন্য বাংলা জানা কোন এয়ারহোস্টেস বা স্টুয়ার্ডের ব্যবস্থাও নেই, এবং নানা ঝামেলার কারণে একটু পর পর এদিক সেদিক থেকে হাউকাউ শুরু হয়ে যায়। এক দয়ালু ইথিওপিয়ান এয়ার হোস্টেস সম্ভবত আমার চেহারার আদলে হাবসি ছাপ খুঁজে পেয়ে আমাকে যথেষ্ঠ সমাদর করলেন, তাঁর সৌজন্যে আমি আমার ঢাউস ওভারকোট হোস্টেসদের কেবিনেটে দিয়ে আরাম করে পথটুকু পার হলাম। রুটিন খাবার-পানীয় পরিবেশনের পর তিনি দু'বার কেবল আমাকেই জিজ্ঞেস করে গেলেন কিছু পান করতে চাই কি না। আমি তাঁর সমাদরস্পৃহার শতভাগ সুযোগ নিয়ে টম্যাটোর রস দিয়ে কাম্পারির মিশ্রণ বানাতে নিলাম দু'বারই। পাশের দুবাইঅলা দেশী ভাই আমাকে নিচু গলায় জিজ্ঞেস করলেন, "পরিচয় আছে নাকি এইটার সাথে?" আমি রহস্যময় হাসি দিলাম একটা, তিনি ছয়ফুট দুই ইঞ্চি লম্বা সেই আবিসিনিয় সুন্দরীর দিকে সন্দেহঘন একটা দৃষ্টি দিয়ে আমার দিকে তাকালেন, বুঝলাম আমার রুচির তারিফ করতে পারছেন না। মনে মনে ভাবলাম, আফ্রিকা যাওয়া দরকার, আমার তোবড়ানো ঘোরকৃষ্ণ সুরৎ যদি সেখানে কিছু কদর পায়!
হাঁটুপানির জলদস্যু
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
ওর দোষ দিয়া লাভ নাই। ও হিন্দি, ঊর্দূ বলতে পারে না। বুঝতেও যে খুবেকটা পারে, এমন না। তার উপর আসতেছিলো প্রথমবার। ওকে "হেই ম্যান, হেই ম্যান" করে ডাক দিয়ে হিন্দি/ঊর্দূতে কী জিজ্ঞেস করেছিলো।
বেশ যুদ্ধংদেহী মনোভাব নিয়া গেছে এইবার। ঐ ভদ্রলোক তার সামনে পড়লে কী হয় কওয়া যাইতাছে না!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
মজার লেখা পিপিদা! এটাতে কমেন্ট এত কম কেন?
একটু মজা করি......ঢাকা থেকে দুবাই দুই-আড়াই ঘন্টায় কিভাবে সম্ভব? আপনাদের সময় এমিরেটস এর প্লেনগুলা মনে হয় নতুন ছিল, তাই স্পিডও বেশী ছিল, তাই না?
দুবাই এয়ারপোর্টের সবচে' বড় সমস্যা হচ্ছে, এত বড় একটা এয়ারপোর্ট, কিন্তু স্মোকিং রুম মাত্র একটা। এক মাইল হেঁটে যাইতে হইত একটা সিগারেট খাওয়ার জন্য!
=======================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!
==========================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!
এই লেখায় আর মন্তব্য করতে ইচ্ছে করছেনা, পাছে আরো অনেকেই দেখে ফেলে
ঢাকা থেকে দুবাই তো আরো বেশী হবার কথা। কী জানি অনেক দিন পরে লিখেছিলাম তো, সেজন্য হতে পারে।
এখন ভোট দেবার ক্ষমতা হইছে, তাই ৫ দাগায় গেলাম
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
- জনগণ পোস্টে চা খাওয়ার কথা বলে "টি-ব্রেক"-এ চলে যায় পিপিদা, এইটা দেখে, শুনে, বুঝে আমরা অভ্যস্ত। কিন্তু প্লেনে বসে ব্ল্যাক কফি'র ব্রেক নিয়ে বেমালুম ভুলে গেলে ক্যামনে হবে? রিমান্ডে নেয়া লাগবে নাকি? জাকাজা (অধুনালুপ্ত) পরিষদ নিজের হাতে কেইস তুলে নিলে কিন্তু খবরাছে!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ক্রীম আর সুগার দুইটাই চাইলে কি আমার বাঙালিত্ব প্রকাশ পাবে?
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
আসলে ব্যাপারটা ঠিক বাঙালিত্বের নয় হয়তো। ব্যাপারটা এই চামড়ার। আমি চাইনি ওরা বুঝুক যে আমি ওর কথা বুঝিনি। সেটাই হয়তো প্রকাশের অক্ষমতার কারণে বাঙালিত্ব বুঝিয়েছি। আমি তো পুরা বাঙালি বা বাংলাদেশীদের প্রতিনিধিত্ব করিনা তাই আমার লেখা সিরিয়াসলি না নেয়াই ভালো
কফি ক্রীমার বাসায় ছিল না দেখে, আজকে কোল্ড কফি খাইলামঃ এক খাবলা বরফ, এক কাপ ঠান্ডা দুধ, এক চামচ ইন্সট্যান্ট কফি আর চিনি :D।
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
এখনও কফিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারলম না। কফি খাইলেও এত বেশি ক্রিম আর সুগার দেই যে ওইটা আর কফি থাকেনা।
আম্রিকা আসার সময় আমি হংকং হয়ে এসেছিলাম। এয়ারপোর্টা খুবই ভাল লেগেছিল। সুন্দর, সাজানো-গোছানো। একপাশে পাহাড় আরেক পাশে সমুদ্র। বড়ই মনোরম। ট্রানজিটে আটকে ছিলাম ছয় ঘন্টা। মোটেও বোরিং লাগেনি।
অনেক মজা পেলাম লেখাটা পড়ে। ভাল থাকবেন।
নতুন মন্তব্য করুন