মেহদী হাসান খানের সাক্ষাৎকার - পর্ব ১/২

বেতারায়তন এর ছবি
লিখেছেন বেতারায়তন (তারিখ: শনি, ২৪/০৪/২০১০ - ১০:১৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

দ্বিতীয় পর্ব

ভূমিকা

অতি সম্প্রতি অভ্র-বিজয় বির্তকের সূত্র ধরে বাংলা কিবোর্ড লেআউট, কপিরাইট, প্যাটেন্ট, ট্রেডমার্ক সংক্রান্ত বাংলা কম্পিউটিংয়ের বিষয় গুলো উঠে এসেছে। সেই সূত্র ধরে বাংলা কম্পিউটিংয়ের বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের সাথে আলোচনা, ইতিহাস পুনরুদ্ধার এবং নতুন স্ট্যান্ডার্ড তৈরির সম্ভাবনা যাচাই করতে কিছু সাক্ষাৎকারের আয়োজন করেছে সচলায়তন। এই ধারায় প্রথমেই থাকছে মেহদী হাসান খানের সাক্ষাৎকার।

সচলায়তন অভ্রকে সমর্থন করলেও বেতারায়তন সাক্ষাৎকারের সময় নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করেছে।

বাংলাদেশের মোবাইল ফোনে রেকর্ডিং কোয়ালিটি বেশ খারাপ আসে। তাই পুরো ইন্টারভিউটা শুনতে একটু অসুবিধা হয়। পাঠকের সাহায্যে এটির অনুলিখনের চেষ্টা করা হবে (ক্রাউডসোর্সিং)। একজন একটা প্রশ্ন মন্তব্যের করে পেস্ট করে জানান যে আপনি অনুলিখন শুরু করছেন। তারপর সেই মন্তব্যের জবাব হিসেবে আপনি অনুলিখিত অংশটুকু পোস্ট করে দিন। পরে সেটা মূল পোস্টের অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

মেহদী হাসান খানমেহদী হাসান খান

সাক্ষাৎকার

সাক্ষাৎকারের প্রথম অংশে নিচের প্রশ্নগুলো আলোচনা করা হয়েছে:

হিমু: আজ আমরা কথা বলছি অভ্র কিবোর্ড লেআউট সহায়ক সফটওয়্যারের ডেভলপার মেহেদী হাসানের সাথে। আড্ডার সঞ্চালনায় আছে হিমু এবং এস এম মাহবুব মুর্শেদ। প্রথমে একটি ডিসক্লেইমার দেয়া যাক: এই আড্ডাটি রেকর্ড করা হচ্ছে। আপনাদের কারো আপত্তি থাকলে এখনই জানাতে পারেন। আর এই আড্ডার প্রশ্নগুলো আগে থেকে মেহদী জানতেন না। শুরু করছি তাঁর সাথে এই সাক্ষাৎকার।

মুর্শেদ: মেহদী আপনার অভ্র প্রজেক্টটা নিয়ে বলুন। কীভাবে প্রজেক্টের আইডিয়া মাথায় আসে? কেন এমন একটি সফটওয়্যার সৃষ্টির কথা ভাবলেন? ওমিক্রন ল্যাবের জন্ম কীভাবে? ওমিক্রন ল্যাবের অন্যান্য সদস্য কারা?

মেহদী:
প্রজেক্টের আইডিয়া আসে ২০০৩ এ। তখন একুশে বইমেলায় বাংলা ইনোভেশন থ্রু ওপেন সোর্স, বায়োস নামে একটা সংগঠন তারা বাংলা নামে একটা প্রদর্শনী করে একুশে বইমেলাতে। তো এইখানে পুরো ইন্টারফেইসটা বাংলায় ছিল, বাংলায় লেখালেখিও করা যেত। তারা বাংলায় একটা ফন্টও বানিয়েছিলো নি... নামে। সেই ফন্টটা ইন্টারনেটে ছিল, সেটা বাসা থেকে ডাউনলোড করি। ডাউনলোড করে দেখি যে ওই ফন্ট ব্যবহার করার মত উইন্ডোজে কোন কিবোর্ড নেই। আমি যদি সরাসরি মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের ইনসার্ট ক্যারেক্টার থেকে তারপর ওই ফন্টের ক্যারেক্টারগুলা নিয়ে আসি তাহলে চমৎকার লেখা হচ্ছে কাজ হচ্ছে। কিন্তু সেই জিনিসটা আসলে অনেক ঝামেলার। সরাসরি ওইটাতে লেখার মত আমাদের কোন কিবোর্ড নেই। মানে শুধুমাত্র কিবোর্ডটা থাকলে উইন্ডোজে ইউনিকোডে আমরা বাংলা লেখতে পারতাম, অলরেডী একটা ফন্ট আছে। তারপরে, ওইটা নিয়ে কাজ শুরু করি। কীভাবে কিবোর্ড হুক করা যায়, তারপরে কীভাবে কিবোর্ড ... নামানো যায়। ওই ভার্সনটা করার পরে তারপরে আমি মাইক্রোসফটে একটা ইয়েতে, ভিজুয়্যাল ওপেন .. লেআউট আমি করি। ওরা দেখে, দেখার পর উৎসাহ দেয় তারপর থেকেই কাজটা আসলে [শুরু হয়]।

অমিক্রন ল্যাবের জন্ম অভ্রর সাথেই। কারন আমি যখন তাদের ফার্স্ট ই'টা [লেআউট সফটওয়্যারটা] পাঠিয়েছিলাম সেটা ছিল মেইলের সাথে এটাচ করা। সবজায়গায় তো এটাচ করে পাঠানো সম্ভব না। একটা ইএকজি ফাইল, বিপদ থেকে যায়। একটা সেন্ট্রাল সাইটের দরকার ছিল যেখান থেকে সবাই ডাউনলোড করতে পারবে বা টেস্ট করতে পারবে। তারপরেই এই ডোমেইন কিনে, প্রথমে একটা ফ্রী হোস্টিংয়ে ছিল। পরে আমরা একটা পেইড হোস্টিংয়ে যাই। ওখান থেকেই সাইটটা একই সাথে শুরু হয়েছে।

সদস্য বলতে, আপনি যদি মনে করেন অভ্র টিমে কারা আছেন। সেক্ষেত্রে ডেভলপার হিসাবে আছেন, সাপোর্ট টিমে আছেন, ডিজাইনার হিসাবে আছেন, ফন্ট ডেভলপার হিসাবে আছেন। ডেভলপার হিসাবে আছেন এম এম রিফাত উন নবী। ভিস্তা আর্ক ডট কম, ওই আপনার ফন্ট ফিক্সার, তারপরে আইকমপ্লেক্স, যে সফটওয়্যার গুলা ব্যবহার করে সবাই সেগুলা ওর বানানো। তারপরে ফন্ট ডেভলপার হিসেবে আছে সিয়াম। সিয়াম রূপালী যে ফন্টটা সেটা ওর বানানো। বলা যায় ফন্ট হিন্টিং করা। রূপালী ফন্টের উপরে ফন্ট হিন্টিং করেছে তাই রূপালী নামে রিলিজ দিয়েছে। আর ওর নতুন একটা ফন্ট আসছে, কালপুরুষ। তারপর আমাদের সাপোর্ট টিম আছে। একটা কমিউনিটি আছে। সাপোর্ট টিমে আছেন শাবাব মুস্তফা, বাংলাদেশ থেকে; ... ইন্ডিয়া থেকে। মডারেটর আগে অনেকে ছিলেন। এখন আপাতত এরা কাজ করছেন।

নতুন যে কাজ হচ্ছে, নতুন কাজের মধ্যে শব্দশুদ্ধির কথা সবাই জানেন। .. সাথে ইস্পিতা, মানে বাংলায় খুব রিলায়েবল ডিকশনারী তৈরীর জন্য আমরা কাজটা করছি। শব্দশুদ্ধির ইন্টারফেইসটার কাজ করে দিয়েছেন রাইয়ান কামাল। তারপরে এইখানে প্রজেক্টে, শব্দশুদ্ধি প্রজেক্টের এডিটর হিসেবে অনেকে কাজ করতেছেন। পরবর্তী ভার্সনের সাথে এদের নামও আসবে। কোন কন্ট্রিবিউশনই আসলে, মানে ছোট কন্ট্রিবিউশন হোক বড় কন্ট্রিবিউশন হোক, সবাইকে আসলে আমরা একই টিমের মধ্যেই ধরি।
অনুলিখন: এস এম মাহবুব মুর্শেদ

হিমু: অভ্রর আগে পরে প্রচুর লেআউট ভিত্তিক সফটওয়্যার, এছাড়া পূর্ণাঙ্গ এডিটর ভিত্তিক বাংলা সফটওয়্যারও এসেছে বেশ কিছু। অভ্রের সাফল্যের পেছনে রহস্যটা কী?

মেহদী:
প্রথমত আমি যেটা বলব, সেটা হচ্ছে গিয়ে, আপনি যখন একটা বাংলা লিখছেন, আপনাকে কেউ যখন কেউ জিজ্ঞেস করবে, মুর্শেদ ভাই বাংলাটা কিভাবে লিখলেন? আপনি তাকে সরাসরি বলে দিতে পারবেন, যে আমি অভ্র কি-বোর্ড দিয়ে লিখেছি। কারন আপনার ওই বাধাটা নেই, আইনগত বাধাটা নেই, যে অভ্র কি-বোর্ডটা আপনাকে কিনতে হবে। কেউ আপনাকে এই জিনিসটা জিজ্ঞেস করবেনা যে আপনি কি লাইসেন্স কিনেছেন নাকি কোন জায়গা থেকে অন্যভাবে ব্যবহার করছেন। এই একজন থেকে আরেকজনের রেফারেন্স পেয়েই মুলত অভ্র চলে এসেছে। আমাদের এখন পর্যন্ত কোনো বিজ্ঞাপন যায়নি, কোথাও কোনো প্রকারের কোনো বিজ্ঞাপন যায়নি। আর্টিকেল যে কয়টা এসেছে, সেকয়টা খুব লিমিটেড, মানে সফটওয়্যারটা, মানে…কিছুটা চিন্তা করেন…ব্যাপারটা হচ্ছে যে, যে সফটওয়্যারটা ডেভেলপ করা হচ্ছে, সেটা চিন্তা করেন, সে হিসেবে আর্টিকেল এখন পর্যন্ত যে কয়টা এসেছে সব লিমিটেড।মানুষজন একজন আরেকজনকে রেফার করেই এই প্রজেক্টটার দক্ষতা আনিয়েছে। আরেকটা হচ্ছে গিয়ে সফটওয়্যারটার প্রতিটা ক্ষেত্রে যে উন্নতি করা…সেটা…আমাদের কমিউনিটিটা খুব স্ট্রং।একেকজনের একেকটা সমস্যা, যারা ফেস করেন, তারা সেটা আমাদের ওখানে ফিচার রিকোয়েস্টের সেকশান আছে, ওখানে সবাই যার যা ফিচার দরকার সেটা ওখানে লিখতে পারেন। আমরা চেস্টা করি যে ফিচারগুলা যৌক্তিক সেগুলা সাথে দিয়ে দেবার জন্য। আসলে, আপনি এতদিন পরে অভ্রকে যা দেখছেন, সেটা আসলে শতশত মানুষের চাহিদাতেই এই ফিচারগুলো যোগ হয়েছে। মানুষজন দেখছেন, যে তারা যা চাচ্ছেন সেটাই পাচ্ছেন।সফটওয়্যারটাতে তারা সেক্ষেত্রে খুশি থাকছেন। আরেকটা কথা হচ্ছে গিয়ে ফোনেটিক লে-আউটটা, ফোনেটিক লে-আউটটা, এখন পর্যন্ত যা দেখছি, সবার কথাবার্তা শুনে প্রমানিত হয়েছে যে, লে-আউটটা সহজ। লেখার জন্য খুব সহজ। এবং আপনাকে যেহেতু দুটি কি-বোর্ড মুখস্ত করতে হচ্ছে না, দুটি কি-বোর্ড লে-আউট, একটা বাংলা একটা qwerty। আপনি একটা qwerty কিবোর্ড দিয়েই একই সাথে ইংরেজিতেও লিখতে পারছেন, বাংলাতেও লিখতে পারছেন। এটা একটা বেশ বড় ফ্যাসালিটি।

অনুলিখন: তৌফিক হাসান

মুর্শেদ: অভ্রের কোনো অনলাইন ভার্সন নেই কেন? মানে যেটা অনলাইনে ব্যবহার করা যাবে, আলাদা করে ইনস্টল করতে হবে না।

মেহদী:
ওয়েব ভার্সন এর কাজ আমরা শুরু করেছিলাম। ওটা অনেকদূর গিয়েওছিলো। কিন্তু আসলে একটা সীমাবদ্ধতা সবারই থাকে। আমার ব্যাকগ্রাউন্ড মেডিকেলের; আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি। তারপরে, রিফাত উন নবী, উনার আরো জব আছে। এভাবে আসলে ব্যাস্ততার কারনে কাজটা শেষ হয়নি। পরে আমরা যেটা দেখলাম যে সচলায়তন থেকে অভ্র'র একটা অনলাইন ভার্সন এর কাজ হচ্ছে। ওইটা অনেকদূর হয়েওছে যতদূর জানি। তারপরে উইকিপিডিয়ায় বাংলা লেখার একটা কাজ হয়েছিলো; সরাসরি ওয়েব ভার্সন এর কাজ। তো অন্যরা যেহেতু করছেন তখন আর আমরা ওইটা নিয়ে আগাইনি।

একইভাবে আর একটা কথা বলা যায়; আমাদের একটা কনভার্টার প্রোজেক্ট ছিলো। কিছুদিন আগে ওইটা টা আমরা আর রাখবো না বলে ঘোষনা দিয়ে দিয়েছি। কারন হচ্ছে যে, আর একটা বেশ ভালো কনভার্টার এসেছে। এটার কাজটা নির্বাচন কমিশনের করা, নাম নিকষ কনভার্টার। অভ্র কনভার্টার এর যে মূল সমস্যাটা ছিলো যে, এটা অনেক Slow; MS WORD এর একটা ফাইল কনভার্ট করতে প্রচুর টাইম নেয়। নিকষ কনভার্টারটায় সেই সমস্যাটা নেই। ভালো একটা Product অলরেডি চলে এসেছে এবং সেটা দিয়ে মানুষের উপকার হচ্ছে। এদিকে অভ্রের লোকবল কম, একসাথে এতগুলা Product মেইনটেইন করা সম্ভব হয় না। আর একটা Release দিতেও হাজারটা কাজ করা লাগে। নতুন প্রতিটা Release এই অত্যন্ত প্রেসার নিতে হয়। একটু নতুন কিছু, সেটা সবাইকে জানানো, বিভিন্ন মিরর সাইট আছে, সেই মিরর সাইটে সেগুলো আপলোড করা। এসব ঝামেলা সত্বেও আমরা চেষ্টা করি যে আমাদের রিসোর্সটা মিনিমাম একটা জায়গায় রাখতে যেখান থেকে আসলে ভালোমত সবাইকে সার্ভিসটা দেয়া যায়।

তবে ওয়েব ভার্সন টার দাবী মেইন যে কারনে ছিলো যে, অভ্র Windows এর জন্যে, Linux এর জন্যে নেই। Linux এ যারা ছিলো তারা মেইনলি দাবী করছিলো যে একটা ওয়েব ভার্সন হতে হবে, তাহলে আমরা Linux থেকেও লিখতে পারতাম। তো, Linux version আমরা একটা Release দিয়ে দিয়েছি, সেটা ওপেন সোর্স। গুগল কোড এ আছে সাইট প্রোজেক্ট টা; যে কেউ চাইলে ওটা নামিয়ে নিতে পারেন।

আর মানুষের Windows এর জন্যে তো আছেই। সেজন্যে আমরা ওয়েব ভার্সন টা আর আপাতত তৈরি করার প্রয়োজন দেখছি না।

অনুলিখন: অচল পয়সা

হিমু: একটি প্রকাশনা উপযোগী ভালো ফন্টের খুব দরকার। একুশে এবং আরও কিছু সংস্থা কিছু ফন্ট তৈরী করলেও প্রফেশনাল প্রিন্ট মিডিয়ার উপযোগী কিছু হয়নি কেন? আপনাদের এ ব্যাপারে পরিকল্পনা কী?

মেহদী:

মুর্শেদ: ইউনিকোডের কিছু সমস্যা এখনও বিদ্যমান। মূলতঃ র-যলা ইস্যু, খন্ড-ত ইত্যাদি এখনও সমাধান হয়নি। আপনারা এ ব্যাপারে কিছু করেছেন কী?

মেহদী:

হিমু: বর্তমানে আর কোন কোন প্রজেক্টের উপর কাজ করছেন? অমিক্রন ল্যাবের পরবর্তী চমক কী?

রেফারেন্স

এই বির্তক সংক্রান্ত তথ্য গুলো পাওয়া যাবে নীচের লিংকগুলো থেকে:
১। জনকণ্ঠের মোস্তফা জব্বারের যে লেখা থেকে বির্তকের সুত্রপাত
২। মেহদী হাসান খানের বক্তব্য
৩। গ্লোবাল ভয়েসেস অনলাইনে রেজওয়ানের রিভিউ
৪। প্রথম আলোর রিপোর্ট
৫। মোস্তফা জব্বারের হোমপেইজে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা
৬। অভ্র, বিজয়, পেটেন্ট বিষয়ে
৭। মার্চ ২০১০ এ মোস্তফা জব্বারের বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকার
৮। ইউটিউবে বিজয় সফটওয়্যারের কিছু অভ্যন্তরীণ কথা
৯। ওপেন সোর্সে অভ্র নিয়ে আলোচনা


মন্তব্য

দ্রোহী এর ছবি

চলুক

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

প্রয়োজন ছিলো এই সাক্ষাৎকারের। অভিনন্দন রইলো অভ্র টিমের সবার প্রতি।

অফটপিকঃ হিমু ভাইয়ের শুরুর কথাটা "কিসক্লেইমার" শুনলাম নাকি? চোখ টিপি

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

মুর্শেদ: মেহদী আপনার অভ্র প্রজেক্টটা নিয়ে বলুন। কীভাবে প্রজেক্টের আইডিয়া মাথায় আসে? কেন এমন একটি সফটওয়্যার সৃষ্টির কথা ভাবলেন? ওমিক্রন ল্যাবের জন্ম কীভাবে? ওমিক্রন ল্যাবের অন্যান্য সদস্য কারা?

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

প্রজেক্টের আইডিয়া আসে ২০০৩ এ। তখন একুশে বইমেলায় বাংলা ইনোভেশন থ্রু ওপেন সোর্স, বায়োস নামে একটা সংগঠন তারা বাংলা নামে একটা প্রদর্শনী করে একুশে বইমেলাতে। তো এইখানে পুরো ইন্টারফেইসটা বাংলায় ছিল, বাংলায় লেখালেখিও করা যেত। তারা বাংলায় একটা ফন্টও বানিয়েছিলো নি... নামে। সেই ফন্টটা ইন্টারনেটে ছিল, সেটা বাসা থেকে ডাউনলোড করি। ডাউনলোড করে দেখি যে ওই ফন্ট ব্যবহার করার মত উইন্ডোজে কোন কিবোর্ড নেই। আমি যদি সরাসরি মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের ইনসার্ট ক্যারেক্টার থেকে তারপর ওই ফন্টের ক্যারেক্টারগুলা নিয়ে আসি তাহলে চমৎকার লেখা হচ্ছে কাজ হচ্ছে। কিন্তু সেই জিনিসটা আসলে অনেক ঝামেলার। সরাসরি ওইটাতে লেখার মত আমাদের কোন কিবোর্ড নেই। মানে শুধুমাত্র কিবোর্ডটা থাকলে উইন্ডোজে ইউনিকোডে আমরা বাংলা লেখতে পারতাম, অলরেডী একটা ফন্ট আছে। তারপরে, ওইটা নিয়ে কাজ শুরু করি। কীভাবে কিবোর্ড হুক করা যায়, তারপরে কীভাবে কিবোর্ড ... নামানো যায়। ওই ভার্সনটা করার পরে তারপরে আমি মাইক্রোসফটে একটা ইয়েতে, ভিজুয়্যাল ওপেন .. লেআউট আমি করি। ওরা দেখে, দেখার পর উৎসাহ দেয় তারপর থেকেই কাজটা আসলে [শুরু হয়]।

অমিক্রন ল্যাবের জন্ম অভ্রর সাথেই। কারন আমি যখন তাদের ফার্স্ট ই'টা [লেআউট সফটওয়্যারটা] পাঠিয়েছিলাম সেটা ছিল মেইলের সাথে এটাচ করা। সবজায়গায় তো এটাচ করে পাঠানো সম্ভব না। একটা ইএকজি ফাইল, বিপদ থেকে যায়। একটা সেন্ট্রাল সাইটের দরকার ছিল যেখান থেকে সবাই ডাউনলোড করতে পারবে বা টেস্ট করতে পারবে। তারপরেই এই ডোমেইন কিনে, প্রথমে একটা ফ্রী হোস্টিংয়ে ছিল। পরে আমরা একটা পেইড হোস্টিংয়ে যাই। ওখান থেকেই সাইটটা একই সাথে শুরু হয়েছে।

সদস্য বলতে, আপনি যদি মনে করেন অভ্র টিমে কারা আছেন। সেক্ষেত্রে ডেভলপার হিসাবে আছেন, সাপোর্ট টিমে আছেন, ডিজাইনার হিসাবে আছেন, ফন্ট ডেভলপার হিসাবে আছেন। ডেভলপার হিসাবে আছেন এম এম রিফাত উন নবী। ভিস্তা আর্ক ডট কম, ওই আপনার ফন্ট ফিক্সার, তারপরে আইকমপ্লেক্স, যে সফটওয়্যার গুলা ব্যবহার করে সবাই সেগুলা ওর বানানো। তারপরে ফন্ট ডেভলপার হিসেবে আছে সিয়াম। সিয়াম রূপালী যে ফন্টটা সেটা ওর বানানো। বলা যায় ফন্ট হিন্টিং করা। রূপালী ফন্টের উপরে ফন্ট হিন্টিং করেছে তাই রূপালী নামে রিলিজ দিয়েছে। আর ওর নতুন একটা ফন্ট আসছে, কালপুরুষ। তারপর আমাদের সাপোর্ট টিম আছে। একটা কমিউনিটি আছে। সাপোর্ট টিমে আছেন শাবাব মুস্তফা, বাংলাদেশ থেকে; ... ইন্ডিয়া থেকে। মডারেটর আগে অনেকে ছিলেন। এখন আপাতত এরা কাজ করছেন।

নতুন যে কাজ হচ্ছে, নতুন কাজের মধ্যে শব্দশুদ্ধির কথা সবাই জানেন। .. সাথে ইস্পিতা, মানে বাংলায় খুব রিলায়েবল ডিকশনারী তৈরীর জন্য আমরা কাজটা করছি। শব্দশুদ্ধির ইন্টারফেইসটার কাজ করে দিয়েছেন রাইয়ান কামাল। তারপরে এইখানে প্রজেক্টে, শব্দশুদ্ধি প্রজেক্টের এডিটর হিসেবে অনেকে কাজ করতেছেন। পরবর্তী ভার্সনের সাথে এদের নামও আসবে। কোন কন্ট্রিবিউশনই আসলে, মানে ছোট কন্ট্রিবিউশন হোক বড় কন্ট্রিবিউশন হোক, সবাইকে আসলে আমরা একই টিমের মধ্যেই ধরি।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

বাংলা ভাষার প্রথম কিবোর্ড প্রনেতা সাইফুদ্দাহার শহীদের একটি ডিটেইলড সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে আজকে। প্রথম পাতা থেকে এই পোস্টটি সরে গেলেই সেটা পোস্ট করা হবে।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অতিথি লেখক এর ছবি

মুর্শেদ: অভ্রের কোনো অনলাইন ভার্সন নেই কেন? মানে যেটা অনলাইনে ব্যবহার করা যাবে, আলাদা করে ইনস্টল করতে হবে না।

অতিথি লেখক এর ছবি

মেহদীঃ

ওয়েব ভার্সন এর কাজ আমরা শুরু করেছিলাম। ওটা অনেকদূর গিয়েওছিলো। কিন্তু আসলে একটা সীমাবদ্ধতা সবারই থাকে। আমার ব্যাকগ্রাউন্ড মেডিকেলের; আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি। তারপরে, রিফাত উন নবী, উনার আরো জব আছে। এভাবে আসলে ব্যাস্ততার কারনে কাজটা শেষ হয়নি। পরে আমরা যেটা দেখলাম যে সচলায়তন থেকে অভ্র'র একটা অনলাইন ভার্সন এর কাজ হচ্ছে। ওইটা অনেকদূর হয়েওছে যতদূর জানি। তারপরে উইকিপিডিয়ায় বাংলা লেখার একটা কাজ হয়েছিলো; সরাসরি ওয়েব ভার্সন এর কাজ। তো অন্যরা যেহেতু করছেন তখন আর আমরা ওইটা নিয়ে আগাইনি।

একইভাবে আর একটা কথা বলা যায়; আমাদের একটা কনভার্টার প্রোজেক্ট ছিলো। কিছুদিন আগে ওইটা টা আমরা আর রাখবো না বলে ঘোষনা দিয়ে দিয়েছি। কারন হচ্ছে যে, আর একটা বেশ ভালো কনভার্টার এসেছে। এটার কাজটা নির্বাচন কমিশনের করা, নাম নিকষ কনভার্টার। অভ্র কনভার্টার এর যে মূল সমস্যাটা ছিলো যে, এটা অনেক Slow; MS WORD এর একটা ফাইল কনভার্ট করতে প্রচুর টাইম নেয়। নিকষ কনভার্টারটায় সেই সমস্যাটা নেই। ভালো একটা Product অলরেডি চলে এসেছে এবং সেটা দিয়ে মানুষের উপকার হচ্ছে। এদিকে অভ্রের লোকবল কম, একসাথে এতগুলা Product মেইনটেইন করা সম্ভব হয় না। আর একটা Release দিতেও হাজারটা কাজ করা লাগে। নতুন প্রতিটা Release এই অত্যন্ত প্রেসার নিতে হয়। একটু নতুন কিছু, সেটা সবাইকে জানানো, বিভিন্ন মিরর সাইট আছে, সেই মিরর সাইটে সেগুলো আপলোড করা। এসব ঝামেলা সত্বেও আমরা চেষ্টা করি যে আমাদের রিসোর্সটা মিনিমাম একটা জায়গায় রাখতে যেখান থেকে আসলে ভালোমত সবাইকে সার্ভিসটা দেয়া যায়।

তবে ওয়েব ভার্সন টার দাবী মেইন যে কারনে ছিলো যে, অভ্র Windows এর জন্যে, Linux এর জন্যে নেই। Linux এ যারা ছিলো তারা মেইনলি দাবী করছিলো যে একটা ওয়েব ভার্সন হতে হবে, তাহলে আমরা Linux থেকেও লিখতে পারতাম। তো, Linux version আমরা একটা Release দিয়ে দিয়েছি, সেটা ওপেন সোর্স। গুগল কোড এ আছে সাইট প্রোজেক্ট টা; যে কেউ চাইলে ওটা নামিয়ে নিতে পারেন।

আর মানুষের Windows এর জন্যে তো আছেই। সেজন্যে আমরা ওয়েব ভার্সন টা আর আপাতত তৈরি করার প্রয়োজন বোধ করছি দেখছি না।

--------
অচল পয়সা

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ধন্যবাদ!

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাইয়া, শেষ লাইন এ করছি শব্দটা অতিরিক্ত হিসেবে রয়ে গেছে! মুইছা দিয়েন। হাসি

----
অচল পয়সা

তৌফিক হাসান [অতিথি] এর ছবি

হিমু:
অভ্রর আগে পরে প্রচুর লেআউট ভিত্তিক সফটওয়্যার, এছাড়া পূর্ণাঙ্গ এডিটর ভিত্তিক বাংলা সফটওয়্যারও এসেছে বেশ কিছু। অভ্রের সাফল্যের পেছনে রহস্যটা কী?

মেহদীঃ
প্রথমত আমি যেটা বলব, সেটা হচ্ছে গিয়ে, আপনি যখন একটা বাংলা লিখছেন, আপনাকে কেউ যখন কেউ জিজ্ঞেস করবে, মুর্শেদ ভাই বাংলাটা কিভাবে লিখলেন? আপনি তাকে সরাসরি বলে দিতে পারবেন, যে আমি অভ্র কি-বোর্ড দিয়ে লিখেছি। কারন আপনার ওই বাধাটা নেই, আইনগত বাধাটা নেই, যে অভ্র কি-বোর্ডটা আপনাকে কিনতে হবে। কেউ আপনাকে এই জিনিসটা জিজ্ঞেস করবেনা যে আপনি কি লাইসেন্স কিনেছেন নাকি কোন জায়গা থেকে অন্যভাবে ব্যবহার করছেন। এই একজন থেকে আরেকজনের রেফারেন্স পেয়েই মুলত অভ্র চলে এসেছে। আমাদের এখন পর্যন্ত কোনো বিজ্ঞাপন যায়নি, কোথাও কোনো প্রকারের কোনো বিজ্ঞাপন যায়নি। আর্টিকেল যে কয়টা এসেছে, সেকয়টা খুব লিমিটেড, মানে সফটওয়্যারটা, মানে…কিছুটা চিন্তা করেন…ব্যাপারটা হচ্ছে যে, যে সফটওয়্যারটা ডেভেলপ করা হচ্ছে, সেটা চিন্তা করেন, সে হিসেবে আর্টিকেল এখন পর্যন্ত যে কয়টা এসেছে সব লিমিটেড।মানুষজন একজন আরেকজনকে রেফার করেই এই প্রজেক্টটার দক্ষতা আনিয়েছে। আরেকটা হচ্ছে গিয়ে সফটওয়্যারটার প্রতিটা ক্ষেত্রে যে উন্নতি করা…সেটা…আমাদের কমিউনিটিটা খুব স্ট্রং।একেকজনের একেকটা সমস্যা, যারা ফেস করেন, তারা সেটা আমাদের ওখানে ফিচার রিকোয়েস্টের সেকশান আছে, ওখানে সবাই যার যা ফিচার দরকার সেটা ওখানে লিখতে পারেন। আমরা চেস্টা করি যে ফিচারগুলা যৌক্তিক সেগুলা সাথে দিয়ে দেবার জন্য। আসলে, আপনি এতদিন পরে অভ্রকে যা দেখছেন, সেটা আসলে শতশত মানুষের চাহিদাতেই এই ফিচারগুলো যোগ হয়েছে। মানুষজন দেখছেন, যে তারা যা চাচ্ছেন সেটাই পাচ্ছেন।সফটওয়্যারটাতে তারা সেক্ষেত্রে খুশি থাকছেন। আরেকটা কথা হচ্ছে গিয়ে ফোনেটিক লে-আউটটা, ফোনেটিক লে-আউটটা, এখন পর্যন্ত যা দেখছি, সবার কথাবার্তা শুনে প্রমানিত হয়েছে যে, লে-আউটটা সহজ। লেখার জন্য খুব সহজ। এবং আপনাকে যেহেতু দুটি কি-বোর্ড মুখস্ত করতে হচ্ছে না, দুটি কি-বোর্ড লে-আউট, একটা বাংলা একটা qwerty। আপনি একটা qwerty কিবোর্ড দিয়েই একই সাথে ইংরেজিতেও লিখতে পারছেন, বাংলাতেও লিখতে পারছেন। এটা একটা বেশ বড় ফ্যাসালিটি।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ধন্যবাদ!

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অতিথি লেখক এর ছবি

আমরা আছি

Zahidul Islam এর ছবি

মেহেদি ভাইর জন্য শুভ কামনা থাকল।।

হঠাত করে এত বেশি জনপ্রিয়তা বিব্রতকর পরিস্তিতি তৈ্রী করতে পারে।

ভাল থাকবেন।

sujon এর ছবি

carry on MEHEDI VIA......u r proud of MYMENSINGH MEDICAL COLLEGE........

অতিথি লেখক এর ছবি

এই ইন্টারভিউটার খুব দরকার ছিল। হিমু-মামু ডুয়োকে ধন্যবাদ, আর মেহদী ভাইকেও ধন্যবাদ অবশেষে ইন্টারভিউ দিতে রাজি হবার জন্য।

কৌস্তুভ