প্রথম বাংলা ইনপুট সিস্টেমের জনক সাইফুদ্দাহার শহীদের সাক্ষাৎকার - পর্ব ১/৩

বেতারায়তন এর ছবি
লিখেছেন বেতারায়তন (তারিখ: মঙ্গল, ২৭/০৪/২০১০ - ২:৩৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

দ্বিতীয় পর্ব
তৃতীয় পর্ব

ভূমিকা

অতি সম্প্রতি অভ্র-বিজয় বির্তকের সূত্র ধরে বাংলা কিবোর্ড লেআউট, কপিরাইট, প্যাটেন্ট, ট্রেডমার্ক সংক্রান্ত বাংলা কম্পিউটিংয়ের বিষয়গুলো উঠে এসেছে। সেই সূত্র ধরে বাংলা কম্পিউটিংয়ের বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের সাথে আলোচনা, ইতিহাস পুনরুদ্ধার এবং নতুন স্ট্যান্ডার্ড তৈরির সম্ভাবনা যাচাই করতে কিছু সাক্ষাৎকারের আয়োজন করেছে সচলায়তন। এই ধারায় আজ উপস্থাপন করা হচ্ছে সাইফুদ্দার শহীদের সাক্ষাৎকার।

সাইফুদ্দাহার শহীদ পেশায় যন্ত্রকৌশলী হলেও বেক্সিমকোতে চাকুরিরত অবস্থায় ১৯৮৩ সালের দিকে তাদের কম্পিউটার সিস্টেমের দায়িত্বে ছিলেন। তখন থেকেই তিনি বাংলা কম্পিউটিংয়ের উপর কাজ কর্ম শুরু করেন। ১৯৮৪ সালে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্দ্যোগে এবং খানিকটা ম্যাকিন্টোশ কর্পোরেশনের টেকনিক্যাল সহায়তায় ম্যাক কম্পিউটারের জন্য বাংলা ফন্ট যশোর, কিবোর্ড লেআউট শহীদলিপি এবং বাংলা ইন্টারফেইসে ম্যাক সিস্টেম ডেভলপ করেন। ১৯৮৫ সালে তিনি এই সিস্টেম ব্যবহার করে কম্পিউটারে প্রথম বাংলা চিঠি লেখেন তাঁর মাকে। এরপর ইউএনডিপিসহ প্রায় একশতটির মত প্রতিষ্ঠান তার এই সিস্টেম কেনে এবং ব্যবহার শুরু করে।

আলোচনা থেকে পরিষ্কারভাবে ভাবে প্রমাণিত হয় যে, সাইফ শহীদ বাংলা কম্পিউটিংয়ে প্রথম কিবোর্ডটি উদ্ভাবন করেছেন। যদিও পরবর্তীতে অনেকে ডেস্কটপ পাবলিশিং সফটওয়্যার নির্মাণ করে নিজেদের প্রথম উদ্ভাবক দাবি করেন, স্পষ্টত তাদের এই দাবি ভুল।

আশা করি সাইফ শহীদের সাথে এই আলোচনাটি অনেক ভুল ইতিহাসকে নির্মূল করবে।
প্রথম বাংলা ইনপুট সিস্টেমের জনক সাইফুদ্দাহার শহীদপ্রথম বাংলা ইনপুট সিস্টেমের জনক সাইফুদ্দাহার শহীদ

সাক্ষাৎকার
(এই ইন্টারভিউটি অনেকটা ইন্ট্যারএকটিভ ছিল। শহীদ অনেক প্রশ্নের উত্তর আলোচনা চলাকালীন জানিয়ে দিয়েছেন। তাই প্রশ্নের ধারা ক্রমান্বয়ে আসেনি। শুধুমাত্র স্ক্রিপ্ট তুলে দেয়া হচ্ছে। আশা করি আলোচনা শুনতে শুরু করলেই ধারাটি ধরতে পারবেন শ্রোতারা।)

মুর্শেদ: বেতারায়তনের পক্ষ থেকে আজ আমরা মুখোমুখি হয়েছি সাইফুদ্দাহার শহীদের। তিনি পেশায় প্রকৌশলী, এবং বাংলা কম্পিউটিঙের প্রথম প্রজন্মের একজন অন্যতম সফটওয়্যার নির্মাতা। আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে তিনি শহীদলিপি নামে একটি বাণিজ্যিক সফটওয়্যার নির্মাণ করেন। বাংলা কম্পিউটিং নিয়ে বিস্তারিত তথ্যের অভাবে আজ মূলধারার মিডিয়ায় লিপিবদ্ধ হচ্ছে ভুল ইতিহাস। আমাদের প্রয়াস এই তথ্যগত ত্রুটি দূর করে ইতিহাস সংশোধনের। এ কাজে আমাদের সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছেন সাইফুদ্দাহার শহীদ। তাঁর সাক্ষাতকার নিচ্ছেন সচল তাসনীম হোসেইন, হিমু ও এস এম মাহবুব মুর্শেদ। সচল এবং উইকিপিডিয়ান রাগিব হাসানের আমাদের সাথে থাকার কথা থাকলেও শেষ মুর্হুতে তিনি ব্যস্ততার কারনে সাক্ষাৎকারে যোগ দিতে পারবেন না জানান। ইমেইল পাঠানো রাগিব হাসানের প্রশ্নগুলো সংযুক্ত হয়েছে এখানে। প্রথমে একটি ডিসক্লেইমার দেয়া যাক: এই সাক্ষাৎকারটি রেকর্ড করা হচ্ছে। আপনাদের কারো আপত্তি থাকলে এখনই জানাতে পারেন। আর এই সাক্ষাৎকারের প্রশ্নগুলো আগে থেকে সাইফ শহীদ জানতেন না। শুরু করছি তাঁর সাথে এই সাক্ষাৎকার।

হিমু: জনাব শহীদ, আশির দশকের শুরুতে বাংলা কম্পিউটিং ঠিক কী অবস্থায় ছিলো? তখন ব্যবহারকারীর সংখ্যা কেমন ছিলো?

শহীদ:

মুর্শেদ: কোন সময়ে এবং কী পরিস্থিতিতে আপনি শহীদলিপি নির্মাণের উদ্যোগ নেন?

শহীদ:

হিমু: শহীদলিপি বাণিজ্যিকভাবে কতটা সফল ছিলো? কারা ব্যবহার করতো শহীদলিপি এবং বাংলা ম্যাক?

শহীদ:

মুর্শেদ: এটি কোন প্ল্যাটফর্মে কাজ করতো? বাংলা ম্যাক তৈরীতে অ্যাপল কর্পোরেশনের কোনো পৃষ্ঠপোষকতা ছিলো কি?

শহীদ:

হিমু: শহীদ লিপি প্রণয়নে কোন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছিল কি? শহীদলিপি তৈরির সময় টেকিনক্যাল চ্যালেঞ্জগুলো কি ছিল?

রেফারেন্স

১। সাইফুদ্দাহার শহীদের হোমপেইজ
২। গুগল সাইটে সংরক্ষিত শহীদলিপির বিস্তারিত
৩। ইয়াহু গ্রুপসে রক্ষিত কম্পিউটারে বাংলা লিপির ইতিহাস
৪। মার্চ ২০১০ এ মোস্তফা জব্বারের বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকার
৫। মেহদী হাসানের সাক্ষাৎকার


মন্তব্য

সাঈদ আহমেদ এর ছবি

শহীদ লিপি ও অভ্রকে নিয়ে ডিইলি স্টারে আজ প্রকাশিত একটি লেখা

http://www.thedailystar.net/newDesign/news-details.php?nid=136160

প্রযুক্তি হোক আর রাজনীতিই হোক, সব ইতিহাসেরই নিরপেক্ষ ও সঠিক সংরক্ষন প্রয়োজন। সচলকে ধন্যবাদ এ প্রক্রিয়ায় সক্রিয় থাকার জন্য।
-----------
"সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে"

-----------
চর্যাপদ

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এই উদ্যোগে বিরাট জাঝা দিয়ে গেলাম। ইতিহাসের সঠিক নির্মাণ চাই। কাগুর হাত থেকে মুক্তি চাই
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

এতদিন শুধু পেপার-প্রত্রিকায় পড়েছি শহীদলিপি সর্ম্পকে। বেতারায়ানকে ধন্যবাদ।

স্বপ্নদ্রোহ

মারুফ মনিরুজ্জামান এর ছবি

বাংলা নিয়ে মোস্তফা জব্বার সাহেব যে বিমাতাসুলভ আচরণ শুরু করেছেন- তাতে আসলে সবাই এগিয়ে এসে একটা কিছু করা দরকার- ওনার মত মানুষ এগিয়ে আসলে আমরা সবাই ওনার সাথে আছি- মুর্খ মানুষের কথায় কান না দিলেই হল - জনগন সাথে থাকলে ব্যবসায়ীর কথায় কিছু আসবে যাবে না-

ওনার কাছে যদি মেসেজ দেয়া যায়- তবে ওনার প্রতি অনুরোধ করব ওনার সব কাজ এবং পেপার গুলো প্রকাশের-

দ্রোহী এর ছবি

অতি চমৎকার উদ্যোগের জন্য সচলায়তনকে ধন্যবাদ।

শহীদলিপির নাম শুনেছিলাম কেবল। এই সাক্ষাৎকারের সুবাদে নতুন কতকিছু জানা হলো। পরবর্তী পর্ব দুটোর অপেক্ষায় রইলাম।

সাবিহ ওমর এর ছবি

কোচপানা...

অতিথি লেখক এর ছবি

অত্যন্ত প্রসংশনীয় উদ্যোগ। জনাব সাইফুদ্দাহার শহীদকে অসংখ্য ধন্যবাদ বাংলা টাইপিংএ তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য। আশা করি সচলায়তনের এই উদ্যোগ প্রকৃত সত্য উদঘাটনে সুদূর প্রসারী ভূমিকা রাখবে। জনাব শহীদের এই সাক্ষাতকার সংক্ষেপিত আকারে হলেও দৈনিক প্রত্রিকায় প্রকাশের অনুরোধ রাখছি যাতে আর বেশি মানুষ এ ব্যাপারে অবগত হতে পারেন।

রাব্বানী
mgrabbani[at]gmail[dot]com

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

চমৎকার উদ্যোগ চলুক
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

rhine anam এর ছবি

শুনে অনেক ভাল লাগল,একজন পাইওনিয়ার উনার মত এখন বিডিতে খুব ই জরুরী

আ.র.প. এর ছবি

সচলায়তনকে অসংখ্য ধন্যবাদ এই উদ্যোগের জন্য।

শরতশিশির এর ছবি

এত ভাল লাগলো শুনে যে বলার বাইরে। এ যেন বাবা-মামা-খালু-ফুপা, সব বসে যখন বৈঠকী গল্প করেন, সেরকম। সেইরকম আমেজ। ইশ, আমি এখন এইসব গল্প মিস করছি।

শহীদ আঙ্কেল-কে ধন্যবাদ স্মৃতির ঝাঁপি খুলে প্রথম বাংলা ইনপুট সিস্টেমের গল্প বলার জন্যে। আপনাদের গাইডেন্স আমাদের দরকার আছে, কাজেই আপনাদের মতো অনেকেই যারা বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পাইওনিয়ার, তাঁদের এভাবে একে একে সাক্ষাৎকার নেবার আসলে প্রয়োজন আছে মনে হয়। দেশ আজ সুবিধাবাদীদের দখলে, আর এঁনাদের মতো নিভৃতচারীরা কখনোই গায়ের জোর দেখাবেন না, তাই আমাদেরই তাঁদের খুঁজে খুঁজে তাঁদের 'গল্প' সংরক্ষণ করার দরকার আছে।

পুনশ্চঃ মুর্শেদ - পরের পর্বগুলোও তাড়াতাড়ি ছেড়ে দাও, আলাদা আলাদা শুনলে ট্র্যাক রাখতে অসুবিধা হয়। জানি কেন করছো, তবুও। হাসি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

আরিফ হাসান এর ছবি

সাইফ ভাই,
আপনাকে অজস্র সালাম। পাশাপাশি যারা আপনার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ওনাদেরকেও সাধুবাদ জানাই। সত্যিকার অর্থেই একটি মহৎ উদ্যোগ। পরবর্তী পর্বগুলোর অপেক্ষায় রইলাম। এই সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তো মনে হয় শুধু শহীদলিপি নয়, আপনার বর্ণাঢ্য জীবনের একটি চমৎকার একটি অধ্যায় উঠে আসবে বলেই বিশ্বাস। জয়তু, ফৌজিয়ান সাইফুদ্দাহার শহীদ।

অঃটঃ সিসিবি-তে ইচ্ছে করেই জিজ্ঞেস করিনি।তবে আজকে সচলে না করে পারছি না।রাবীন্দ্রিকদের দল ভারী করা বলে কথা.........আপনি কি বাবরেই লোক :‍‍‍-)?

বিবেকহীন বিবেক এর ছবি

এইভাবে একপর্বের মূলা ঝুলিয়ে রাখা চলবে না! জলদি বাকী পর্বগুলা পোস্ট করেন।

আর সাইফুদ্দাহার শহীদের মত লোকরা আজ কোথায়? তাঁরা কেন আজ আমাদের জাতিকে লিড করছেনা আইটি সেক্টরে?

হিমু এর ছবি

যে জাতি যেমন, সে তেমন নেতা পায়। আমাদের আইটিসেক্টরের লিডারদের চেহারা দেখে আমরা শিখে নিতে পারি, আমরা আইটির দৃষ্টিকোণ থেকে জাতিগতভাবে কেমন।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

দুঃখিত। পুরোটা প্রায় সোয়া একঘন্টার একটা সাক্ষাৎকার। ফাইলের আকার, সময়ের দৈর্ঘ্য বিবেচনা করে একসাথে পোস্ট করা সম্ভব হয়নি।

সাইফ শহীদ হচ্ছেন ভদ্র এবং সুশিক্ষিত প্রকৌশলী। বাংলাদেশের কিছু বেনিয়ারা গলার জোরে আইটি দখল করে আছেন। তাদের সাথে নিশ্চয়ই বৃথা গলাবাজী করতে যাবেন একজন সম্মানিত মানুষ।

আশার কথা হচ্ছে, আমরা এবার এগিয়ে এসেছি। টনক নড়েছে বিবিসির সহ অন্যান্য সংবাদপত্রেরও। সবাই মিলে ইতিহাসটাকে লিপিবদ্ধ করে ফেললে কেউ আর ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াতে পারবেন না। আর এখানটাতেই ব্লগ মাধ্যমের জয়।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির