১৯৪২ সাল। বিশ্বজুড়ে তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোল বাজছে। সবাই কথা বলছেন কিন্তু বাকরুদ্ধ নজরুল। যার সবচেয়ে বেশি কথা বলার কথা তিনি তখন ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে চারপাশে। তার জন্য চলছে হোমিওপ্যাথি আর আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা।
এ সময় তিনি মানসিক ভারসাম্যও হারিয়ে ফেলেন। নিভৃতে কাটতে থাকে নজরুল-এর জীবনের সুবর্ণ সময়। এভাবেই পার হয় ১০টি বছর। বাহান্ন সালে নজরুল চিকিৎসা কমিটি এবং তৎকালীন ভারতের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি সহযোগিতায় কবিকে পাঠানো হয় রাঁচির এক মানসিক হাসপাতালে। কবি চার মাস এখানে চিকিৎসাসেবা নেন। কিন্তু অবস্থার কোন উন্নতি না হওয়ায় ৫৩ সালের মে মাসে নজরুলকে লন্ডন পাঠানো হয় উন্নত চিকিৎসার জন্য। লন্ডনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রাসেল ব্রেইন, উইলিয়াম সেজিয়েন্ট এবং ম্যাককিস্ক তার রোগ নির্ণয়ের চেষ্টা করেন।
রাসেল ব্রেইনের মতে নজরুলের রোগটি ছিল দুরারোগ্য। তিনি তখন "ইনভল্যুশনাল সাইকোসিস" রোগে ভুগছিলেন। লন্ডনের লন্ডন ক্লিনিকে তাঁর এয়ার এনসেফালোগ্রাফি করানো হয়। জানা যায় তার মস্তিষ্কের নার্ভ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ড: ম্যাককিস্কের মত বেশ কয়েকজন চিকিৎসক ম্যাককিস্ক অপারেশনের সিদ্ধান্ত নিলেও ড: ব্রেইন এর বিরোধিতা করেন।
নজরুলের মেডিকেল রিপোর্ট ভিয়েনার বিখ্যাত চিকিৎসকদের দিয়ে যাচাই করানো হয়। জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসার্জন অধ্যাপক রোঁয়েন্টগেন ম্যাককিস্ক অপারেশনের বিরোধিতা করেন। ভিয়েনার চিকিৎসকরাও এই অপারেশনের ব্যাপারে আপত্তি জানান।
কবির শুভার্থীদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ি তাকে ভিয়েনার চিকিৎসক ডঃ হ্যান্স হফের অধীনে ভর্তি করানো হয়। ১৯৫৩ সালের ৯ ডিসেম্বর তার পরীক্ষা করানো হয়। পরীক্ষক ড. হফ-এর মতে, কবি পিক্স ডিজিজসে ভুগছিলেন। যার থেকে মুক্তি ছিলো অসম্ভব। ফলে নজরুলকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। কবি আর কথা বলেননি। বোবার মতো তাকিয়ে দেখেছেন তার দেখানো স্বাধীনতার পথে সবাই চলছেন নিরাপদে অথচ যে যার মতো।
মন্তব্য
নজরুল ভাই, শিরোনামটা কি বদলে দেয়া যায়? জানিনা কেন, ধাক্কামত লাগল!
একটা মানুষ, যাঁর কথা সুরে একটা জাতি বুঁদ হয়ে ছিল বছরের পর বছর, তাঁর জীবনের ৩৪ বছর কেটেছে কোন কথা না বলে- চিন্তা করতেই কেমন লাগে!
মুআজ্জিনের আযান শুনতে শুনতে পরম সুখে সময় কাটাতে থাকুন তিনি- স্রষ্টার কাছে এই প্রার্থনা।
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
মৃত্যুর পরেই তাঁকে নিয়ে রাজনীতিকরণ! হায় বাংলা! হায় দেশ!
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!
(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!
(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)
আহারে প্রিয় কবি আমার। সবটা প্রায় জানা ছিল। তারপরও আবার পড়ে মন খঅরাপ হল।
লেখাটা আরো বড় করে আরো অনেক কিছু লিখলে আরো ভালো লাগতো।
____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
লেখার জন্য ধন্যবাদ।
নজরুলের জীবনের একটা বড় সময় কেটেছে বাকরূদ্ধ অবস্থায়। সেই সময়টাতে তাঁর জীবন কেমন কেটেছে তা নিয়ে আমার অনেক কৌতুহল।
চিকিতসার পাশাপাশি নজরুলের শেষ জীবনের অন্যান্য বিষয় নিয়ে আপনি পারলে আরেকটা পোষ্ট দিন না।
কেন জানি ভয়াবহ তুখোড় মানুষগুলার পরিণতি ভয়াবহ রকমেরই হয়। যাদের দেবার থাকে অনেক তাদের থেকেই সময়ের অনেক আগে অনেক বেশী কিছু কেড়ে নেওয়া হয়। কি যে ভালবাসি নজরুলের গান!
দৃশা
নতুন মন্তব্য করুন