কুঁড়ি কাব্য

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৪/১১/২০১০ - ৯:০৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সবার মাঝেই প্রসব বেদনা অনুভূত হয়। হয় না? হয়।

প্রসবের একটি বেদনা আছে, আছে আনন্দ। বেদনা শব্দটা আগে বললাম কারণ, শুরুতেই শুরু হয় বেদনা, আনন্দ আসে তারপর। অবশ্য আরো খানিক পিছনে ফিরে গেলে সেখানেও ‘আনন্দ’কে দেখা যায়। সেটি নিষিক্ত হওয়া মুহুর্তের আনন্দ। সেই থেকে যদি ধরি তাহলে বেশ ছন্দময় একটি বাক্য পাওয়া যায়; আনন্দ-বেদনা-আনন্দ।

সৃষ্টির আনন্দ, পাওয়ার আনন্দ। সামনে পিছে দু’দিকেই সৌখিক একটি ব্যাপার স্যাপার। তবে আমার ক্ষেত্রে সমীকরণটা আরেকটু দীর্ঘ। ছন্দটাও আরো বাঙ্ময়। আনন্দ দিয়ে শুরু হয়ে বেদনায় যার শেষ। মানে, আনন্দ-বেদনা-আনন্দ-বেদনা। এ একটি বিয়োগান্ত ছড়া।

যা বলতে চাইছি - বেদনা, প্রসবের বেদনা। প্রসবের বেদনা সব ক্ষেত্রেই এক। যখন থেকে ভ্রুণটি পৃথিবীর মুখ দেখতে উন্মুখ হয় - হাঁসফাঁস করে, তখন থেকেই।

একটি মা’র ভেতর যেমন ভ্রুণ তৈরী হয়, তেমনটি সবার ভেতরও কি নয়? ধরি একজন লেখক,অথবা একজন চিন্তাশীল কেউ কিংবা চিন্তিত একজন; যিনি কিনা সমস্যার অথৈ সাঁয়রে হাবুডুবু খাচ্ছেন নিয়ত। যতক্ষণ পর্যন্ত তাঁর ভেতর থেকে সেই ভ্রুণ পরিণতির দিকে না যায় ততক্ষণ কি তিনি নিজের ভেতরে বেদনা অনুভব করেন না?

তেমনিভাবে ভাবতে গেলে সব ভ্রুণই আবার দেখতে এক-অভিন্ন। যদিও কোন কোন ভ্রুন দেখা যায়, কোনটি যায় না।

যেমন আমার বেলায়। আমারটি পষ্ট দেখা যায়, যখন আমি কুঁড়ি থাকি। তখন আমাকে দেখতে কোন মায়ের গর্ভের ভ্রুণের মতই কি মনে হয় না? ধীরে ধীরে যখন সে বড় হয়, কেমন কুণ্ডুলি পাকিয়ে থাকে, তখন কি দেখতে একই রকম মনে হয় না? পাপড়িগুলো ভেতরের দিকে কুণ্ডুলি পাকিয়ে জড়োসড়ো হয়ে থাকে, ঠিক মাতৃগর্ভে ভাসমান শান্ত প্রাণটির মতন?

তেমনি প্রত্যেকের প্রসবকালীন মুহুর্তগুলো আমার কাছে একই মনে হয়। জরায়ু ছিন্ন ভিন্ন করে বের হয়ে আসার আগ পর্যন্ত মাতৃগর্ভের ভ্রুণটি যেমন ছটফট করে, আমার ক্ষেত্রেও তাই। আমারটি তেমন করে খেয়াল হয় না। কারণ, আমার প্রসব প্রক্রিয়াটি মনুষ্যের চাইতে অধিক ধীর গতিতে সম্পন্ন হয়। এত ধীরে আর কারো হয় না বোধ হয়। নাকি হয়?

বারবার খেই হারিয়ে ফেলছি। বলতে চাইছি বেদনার কথা। প্রসব বেদনা। আমার মনে হয় সব রকম প্রসবের বেদনাই এক। একটি ক্লিনিকের বারান্দার জানালা হতে আজ ভোররাতে আমি দেখতে পাচ্ছিলাম, এক মায়ের প্রসবকালীন মুহুর্ত। তাঁর সেই ক্ষণের কষ্ট দেখে তখনই আমার মনে হয়েছিল, এ সেই কষ্ট, কিছুক্ষণ আগে আমি নিজেই যার মুখোমুখি হয়েছিলাম।

প্রচণ্ড ঝাঁকি দিয়ে কলি হতে যখন এক একটি পাপড়ি নিজেকে মেলে ধরতে শুরু করছিল, তখন আমার সর্বাঙ্গে কষ্টের নীল রঙ বাষ্প হয়ে বের হচ্ছিল, যেমনটি ওই মুহুর্তে সেই মায়ের বেলায় ঘটছিল। যখন আমার ভেতর হতে এক একেকটি পাপড়ি আকাশ দেখছিল, তখন আমার মনে হচ্ছিল, যেন নাভিমূলে তীব্র টানে কেউ আমাকে বিদীর্ণ করছে।

সেই মাকে দেখে আমার খু্বই হিংসে হচ্ছে এখন। তার বেদনা আর আনন্দের চাইতে যে আমার সমীকরণ কিছুটা দীর্ঘ। কথাটা এজন্যেই বলছি, সেই মাকে দেখেছি এত কষ্ট সহ্য করে যাকে সে পৃথিবীর মুখ দেখিয়েছে তাকে দেখে দেখেই বাকী জীবন পার করার একটা স্বপ্ন দেখতে সে শুরু করেছিল তখনই।

কিন্তু আমারতো আর সে সুযোগ নেই। সকাল হলেই যে কোন এক সৌন্দর্য পিপাসু তাঁর সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্যে আমাকে ছিনিয়ে নিয়ে যাবে নির্মম হাতে। তারপর ফুলদানিতে আমাকে সাজিয়ে দিয়ে আপন মনে ভাববে, ‘পুষ্প আপনার জন্য ফোটে না।’

নাসির উদ্দিন খান

email:


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

অভিনন্দন!

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ মুর্শেদ ভাই।
ভাল থাইকেন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।